আজান ও ইকামত এর বর্ণনা, ইক্বামাতের জবাব, আযান এর দুআ

আজান ও ইকামত এর বর্ণনা, ইক্বামাতের জবাব, আযান এর দুআ

আজান ও ইকামত এর বর্ণনা, ইক্বামাতের জবাব, আযান এর দুআ >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ ২৭-৪৬ =২০টি

অনুচ্ছেদ-২৭ আযানের সুচনা
অনুচ্ছেদ-২৮ আযানের পদ্ধতি
অনুচ্ছেদ-২৯ ইক্বামতের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৩০ একজনের আযান ও আরেকজনের ইক্বামাত দেয়া
অনুচ্ছেদ-৩১ উচ্চৈঃস্বরে আযান দেয়া
অনুচ্ছেদ-৩২ ওয়াক্তের প্রতি খেয়াল রাখা মুয়াজ্জিনের কর্তব্য
অনুচ্ছেদ-৩৩ মিনারের উপর থেকে আযান দেয়া
অনুচ্ছেদ-৩৪ আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিনের ঘুরে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-৩৫ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ করা
অনুচ্ছেদ-৩৬ মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলিতে হয়
অনুচ্ছেদ-৩৭ ইক্বামাতের জবাবে কী বলিতে হইবে?
অনুচ্ছেদ-৩৮ আযান শুনে যে দুআ পাঠ করিবে
অনুচ্ছেদ-৩৯ মাগরিবের আযানের সময় যা পড়তে হয়
অনুচ্ছেদ-৪০ আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ
অনুচ্ছেদ-৪১ ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেয়া
অনুচ্ছেদ-৪২ অন্ধ ব্যাক্তির আযান দেয়া
অনুচ্ছেদ-৪৩ আযানের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া
অনুচ্ছেদ-৪৪ ইমামের জন্য মুয়াজ্জিনের অপেক্ষা করা
অনুচ্ছেদ-৪৫ তাস্‌বীব (আযানের পর নামাজের জন্য পুনরায় ডাকা) প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৪৬ নামাজের ইক্বামাত হওয়ার পরও ইমামের আগমনের অপেক্ষায় বসে থাকা

অনুচ্ছেদ-২৭ আযানের সুচনা

৪৯৮. আবুউমাইর ইবনি আনাস হইতে তার এক আনসারী চাচার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নামাজের জন্য লোকদের কিভাবে একত্র করা যায় সে সম্পর্কে চিন্তিত ছিলেন। তা দেখে কেউ পরামর্শ দিলেন, নামাজের সময় উপস্থিত হলে একটা পতাকা উড়ানো হোক। তা দেখে একে অন্যকে সংবাদ জানিয়ে দিবে। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট এটা পছন্দ হলো না। কেউ কেউ প্রস্তাব করিল, ইয়াহুদীদের ন্যায় শিঙ্গা-ধ্বনি দেয়া হোক। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এটাও পছন্দ করিলেন না। কারন তা ছিল ইয়াহুদীদের রীতি। কেউ কেউ নাকুস (ঘণ্টা ধ্বনি) ব্যবহারের প্রস্তাব করলে তিনি বলেনঃ ওটা নাসারাদের রীতি।আবদুল্লা ইবনি যায়িদ বিষয়টি নিয়ে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চিন্তার কথা মাথায় নিয়ে প্রস্থান করিলেন। অতঃপর (আল্লাহর পক্ষ হইতে) স্বপ্নে তাকে আযান শিখিয়ে দেয়া হলো। বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন ভোরে তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে বিষয়টি অবহিতকালে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কিছুটা তন্দ্রাছন্ন অবস্থায় ছিলাম। এমন সময় এক আগন্তক এসে আমাকে আযান শিক্ষা দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, একইভাবেউমার খাত্তাব (রাঃআঃ) ও বিশদিন আগেই স্বপ্নেযোগে আযান শিখেছিলেন। কিন্তু তিনি কারো কাছে তা (ব্যক্ত না করে) গোপন রেখেছিলেন। অতঃপর (আবদুল্লা ইবনি যায়িদের স্বপ্নের বৃত্তান্ত বলার পর) তিনিও তার স্বপ্নের কথা নাবী (সাঃআঃ) কে জানালেন। নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, তুমি আগে বললে না কেন? তিনি বলিলেন,আবদুল্লা ইবনি যায়িদ এ বিষয়ে আমার আগেই বলে দিয়েছেন। এজন্য আমি লজ্জিত। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ বিলাল! উঠো, এবংআবদুল্লা ইবনি যায়িদ তোমাকে যেরূপ নির্দেশ দেয় তুমি তাই করো। অতঃপর বিলাল (রাঃআঃ) আযান দিলেন। আবু বিশর বলেন, আবুউমাইর আমার নিকট বর্ণনা করেন যে, আনসারদের ধারনাআবদুল্লা ইবনি যায়িদ ঐদিন অসুস্থ না থাকলে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকেই মুয়াজ্জিন নিযুক্ত করতেন।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৮ আযানের পদ্ধতি

৪৯৯. আবদুল্লা ইবনি যায়িদ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখননাকুস (ঘণ্টা ধ্বনি) দিয়ে লোকদের নামাজের জন্য একত্র করার নির্দেশ দিলেন, তখন আমি স্বপ্নে দেখিতে পেলাম, এক ব্যক্তি হাতে ঘণ্টা নিয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর বান্দা! ঘণ্টাটি বিক্রি করিবে কি? লোকটি বলিলঃ তা দিয়ে তুমি কি করিবে? আমি বললাম, আমরা এর সাহায্যে লোকদের নামাজের জন্য ডাকবো। লোকটি বললো, আমি কি তোমাকে এর চাইতে উত্তম জিনিস অবহিত করব না? আমি বললাম, অবশ্যই। লোকটি বলিলঃ তুমি বলবেঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ;

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ।

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”

(অর্থঃ আল্লাহ মহান, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ, (দুবার) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই (দুবার), আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) আল্লাহর রসূল (দুবার), এসো নামাজের দিকে (দুবার), এসো সফলতার দিকে (দুবার), আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান ,আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই।)

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর লোকটি কিছুটা দূরে গিয়ে বলিল, যখন নামাজের জন্য দাঁড়াবে তখন বলবেঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

“আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশাহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশাহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ 

হাইয়্যাআলাস সালাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাস ফালাহ,

قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

اَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।”

অতঃপর ভোর হলে আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট উপস্থিত হয়ে স্বপ্নে দেখা বিষয়টি অবহিত করি। তিনি বললেনঃ এটা সত্য স্বপ্ন, ইনশাআল্লাহ। তুমি উঠো, বিলালকে সাথে নিয়ে গিয়ে তুমি স্বপ্নে যা দেখেছো তা তাকে শিখিয়ে দাও, যেন সে (ঐভাবে) আযান দেয়। কারন তার কণ্ঠস্বর তোমার কণ্ঠস্বরের চেয়ে উচ্চ। অতঃপর আমি বিলালকে নিয়ে দাঁড়ালাম এবং তাকে (আযানের শব্দগুলো) শিখাতে থাকলাম। বিলাল ঐগুলো উচ্চেঃস্বরে বলিতে লাগল।উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) নিজ ঘর থেকে আযান শুনতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ চাদর টানতে টানতে বের হয়ে আসলেন। এবং বলিলেন , হে আল্লাহর রসূল! ঐ মহান সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য নাবীরূপে পাঠিয়েছেন, আমিও একই স্বপ্ন দেখেছি। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই —-।

হাসান সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাঈদ ইবনিল মুসাইয়্যিব হইতেআবদুল্লা ইবনি যায়িদ সূত্রে যুহরী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর বর্ণনায়ও অনুরূপ রহিয়াছে। তাতে যুহরী সূত্রে ইবনি ইসহাক্ব বলেছেনঃ “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” (অর্থাৎ আল্লাহু আকবার চারবার বলেছেন)। সহিহ। অপরদিকে যুহরী সূত্রে মামার ও ইউনুস বলেছেনঃ “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” তারা আল্লাহু আকবার দুবার বলেছেন, চারবার বলেননি। সহীহঃ কিন্তু তাকবীরে তারবী (চার বার আল্লাহু আকবার) বলা অধিক সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৫০০. মুহাম্মাদ ইবনিআবদুল মালিক ইবনি আবু মাহযূরাহ হইতে তার পিতা সূত্রে ও দাদার হইতে বর্ণিতঃ

তিনি (আবু মাহযুরাহ (রাঃআঃ)) বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আযানের নিয়ম শিখিয়ে দিন। তিনি আমার মাথার সন্মুখ ভাগে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলিলেন, তুমি বলবেঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার

–উচ্চেঃস্বরে। এরপর কিছুটা নীঁচু স্বরে বলবেঃ

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ।

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ।

ফাযরের নামায হলে বলবেঃ

الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ 

আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম, আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম (ঘুমের চেয়ে নামায উত্তম-দুবার)

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০১. আবু মাহযূরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) সূত্রে উপরোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তাতে রয়েছেঃ

আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম, আসসলাতু খাইরুম মিনান-নাওম

الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ  الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ الصَّلاَةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ 

-(এটা) ফাজরের প্রথম আযানে (বলবে)।

ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মুসাদ্দাদের বর্ণনা এর চেয়ে বেশি স্পষ্ট। তাতে রয়েছেঃ তিনি আমাকে ইক্বামাতের শব্দগুলো দু দুবার করে শিখিয়েছেন।

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস-সালাহ, হাইয়্যাআলাস-সালাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার,

 لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আব্দুর রাযযাক্ব বলেন, নামাজের ইক্বামাত দেয়ার সময়

ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু , ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ

দুবার বলবে। নাবী (সাঃআঃ) আবু মাহযুরাহ (রাঃআঃ) কে বলিলেন, (আমি যেভাবে আযান ও ইক্বামাতের শব্দগুলো শিখালাম) তুমি কি তা ঠিকমতো শুনেছ? বর্ণনাকারী বলেন, আবু মাহযুরাহ তার কপালের চুলগুলা কাটতেন না এবং সেগুলোতে সিঁথিও কাটতেন না। কেননা নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর (এই চুলের উপর) হাত বুলিয়েছিলেন।

সহিহঃ তবে আবু মাহযুরাহ তার কপালের চুল কাটতেন না… এ কথাটি বাদে। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০২. আবু মাহযুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে আযানের শব্দ উনিশটি আর ইক্বামাতের শব্দ সতেরটি শিখিয়েছিলেন। আযানের শব্দগুলো হছেঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ 

হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ 

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,

هُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আর ইক্বামাতের শব্দগুলো হচ্ছেঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ 

হাইয়্যাআলাস-সলাহ, হাইয়্যাআলাস-সলাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,

قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৫০৩. আবু মাহযুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে আযানের শব্দগুলো শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তুমি বলোঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ।

তারপর কণ্ঠস্বর উঁচু করে আবার বলোঃ

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ,

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০৪. আবু মাহযূরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজে আমাকে অক্ষরে অক্ষরে আযানের শব্দগুলো শিক্ষা দিয়েছেন। তা হচ্ছেঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস সালাহ, হাইয়্যাআলাস সালাহ,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ, হাইয়্যাআলাল ফালাহ।

বর্ণনাকারী বলেন, তিনি ফাজরের (আযানে) বলিতেন,

আসসলাতু খাইরুম মিনান নাউম।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০৫. আবু মাহযূরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, স্বয়ং রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে অক্ষরে অক্ষরে আযান শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলিতেনঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ  اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ 

তারপর বাকী অংশআব্দুল আযিয ইবনিআব্দুল মালিক সূত্রে বর্ণিত ইবনি জুরাইজের হাদিসের অনুরূপ। মালিক ইবনি দীনারের হাদীসে রহিয়াছে, বর্ণনাকারী বলেন, আমি আবু মাহযুরাহর পুত্রকে বললাম, আপনার পিতা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে যেরূপ আযান শিখেছেন আমাকে তা বর্ণনা করুন। তিনি তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ……।

সহিহ, তাকবীরে তারবী সহকারে।

অনুরূপ জাফর ইবনি সুলাইমান-ইবনি আবু মাহযূরাহ-তার চাচা তার-দাদা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাতে রয়েছেঃ তারপর তারজী করিবে এবং উচ্চেঃস্বরে

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার”—বলবে।

মুনকারঃ মাহফুয হচ্ছে কেবল শাহাদাতাইনে তারজী করা।

হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

৫০৬. ইবনি আবু লায়লাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নামাজের অবস্থা পর্যায়ক্রমে তিনবার পরিবর্তিত হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমাদের মুসলমানগণ অথবা মুমিনগণ একত্রে জামাআতে নামায আদায় করাটা আমার কাছে আনন্দদায়ক। এমনকি প্রাথমিক অবস্থায় আমি চিন্তা করলাম, নামাজের সময় হলে মানুষদের ডেকে আনার জন্য ঘরে ঘরে লোক পাঠিয়ে দিব। এমনকি আমি এ ইচ্ছাও করলাম যে, নামাজের সময় উপস্থিত হলে কিছু লোককে দুর্গের উপর দাড়ঁ করিয়ে দিব যারা মুসলমানদের নামাজের জন্য আহবান করিবে। এমনকি তারানাকুস ঘণ্টা ধ্বনিও বাজালো বা বাজাবার উপক্রম করিল। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় এক আনসারী এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে উৎকণ্ঠিত দেখে আপনার কাছ থেকে ফিরে যাওয়ার পর (রাতে স্বপ্ন) এক ব্যক্তিকে দেখিতে পেলাম। লোকটি যেন দুটি সবুজ কাপড় পরে মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে আযান দিল। কিছুক্ষন বসে থাকার পর সে আবার আযানের অনুরূপ শব্দ উচ্চারন করিল (ইক্বামত দিল)। কিন্তুক্বাদ ক্বামাতিস সালাতু অতিরিক্ত বলিল। লোকেরা আমাকে মিথ্যাবাদী মনে না করলে আমি অবশ্যই বলব, আমি জাগ্রতই ছিলাম, ঘুমন্ত নয়। ইবনিল মুসান্নার বর্ণনায় আছে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই উত্তম স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তবেআমরের বর্ণনায়আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই উত্তম স্বপ্ন দেখিয়েছেন কথাটুকু নেই। তুমি বিলালকে আযান দেয়ার নির্দেশ দাও। তখনউমার (রাঃআঃ) বলিলেন, আমিও তার মত একই ধরনের স্বপ্ন দেখেছি। কিন্তু লোকটি আগেই বলে ফেলাতে আমি বলিতে লজ্জাবোধ করি।

ইবনি আবু লায়লাহ বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, প্রাথমিক পর্যায়ে কোন লোক মসজিদে এসে জামাআত হইতে দেখলে মুসল্লিদের কাছে নামায কয় রাকআত হয়েছে তা জিজ্ঞেস করত। অতঃপর ইশারায় তা জানিয়ে দেয়া হতো। তারপর তারা ঐ পরিমান নামায দ্রুত আদায় করে জামাআতে শামিল হত। ফলে তাহাঁর পিছনের মুক্তাদিদের অবস্থা পৃথক পৃথক হত। কেউ দাঁড়ানো, কেউ রুকুতে, কেউ বসা, আবার কেউ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাথেই নামাযরত অবস্থায় থাকত।

ইবনি মুসান্নাআমর ও হুসায়ন ইবনি আবু লায়লাহ সূত্রে বর্ণনা করেন, এমন সময় (জামাআত শুরু হওয়ার পর) মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) আসলেন। শুবাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি একথা হুসাইন থেকে শুনেছিঃ তিনি বলিলেন, আমি আপনাকে যে অবস্থায় পাবো, তারই তো অনুসরন করব। তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মুআয তোমাদের জন্য একটি সুন্নাত নির্ধারণ করেছে। তোমরাও সেরুপ করিবে।

বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাদীনাহয় পদার্পণ করে তাহাঁদের তিন দিন সিয়াম পালনের নির্দেশ দেন। অতঃপর রমাযানের সিয়াম ফারয (হওয়া সম্পর্কিত) আয়াত অবতীর্ণ হয়। সাহাবীগণ ইতোপূর্বে সিয়াম পালনের অভ্যাস না থাকায় সিয়াম পালনের বিধান তাহাঁদের জন্য কষ্টকর হয়ে পরে। কাজেই কেউ সিয়াম পালনে অক্ষম হলে মিসকিনকে খাদ্য আহার করাতেন। এমতাবস্থায় এ আয়াত নাযিল হলোঃ

 فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ

“তোমাদের মধ্যে কেউ রমাযান মাস পেলে সে যেন অবশ্যই সিয়াম পালন করে” —(সূরাহ বাক্বারাহ, ১৮৫)। এতে রোগী ও মুসাফিরকে অব্যাহতি দিয়ে অবশিষ্ট সবাইকে সিয়াম পালনের নির্দেশ দেয়া হলো। আমাদের সাথীরা আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেনঃ (ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায়) কেউ ইফতার করে আহার না করে ঘুমিয়ে পড়লে তার পক্ষে পরদিন সূর্যাস্তের পূর্বে কোন কিছু খাওয়া বৈধ ছিল না। একদাউমার (রাঃআঃ) সহবাসের ইচ্ছা করলে তার স্ত্রী বলিলেন, আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম।উমার ধারনা করিলেন, তার স্ত্রী বাহানা করছে। তাই তিনি স্ত্রী সহবাস করিলেন। অন্যদিকে জনৈক আনসারী (ইফতারের পর) খাদ্য চাইলে লোকেরা বলিল, অপেক্ষা করুন আমরা আপনার জন্য খানা তৈরী করছি। ইতোমধ্যে তিনি ঘুমিয়ে পরলেন। অতঃপর সকাল বেলা এ আয়াত অবতীর্ণ হলঃ

 أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ

“রোযার রাতে স্ত্রী সহবাস তোমাদের জন্য বৈধ করা হল।” (সূরাহ বাক্বারাহ, ১৮৭)

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০৭. মুআয ইবনি জাবাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নামাজের অবস্থা পর্যায়ক্রমে তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। অনুরূপ সিয়ামের অবস্থাও তিনবার পরিবর্তন হয়েছে। তারপর বর্ণনাকারী নাসর ঐরূপ দীর্ঘ হাদিস বর্ণনা করেন। ইবনিল মুসান্না কেবল বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে নামায আদায়ের ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, তৃতীয় অবস্থা এই যে, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাদীনাহয় পদার্পণ করার তের মাস যাবত বাইতুল মাক্বদিসের দিকে মুখ করে নামায আদায় করেন। অতঃপর আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করেনঃ

 قَدْ نَرَى تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ 

“আসমানের দিকে তোমার মুখ উত্তোলন আমরা লক্ষ্য করেছি। অতএব তোমার পছন্দের ক্বিবলার দিক আমি তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। এখন তুমি তোমার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে ফেরাও (সূরাহ বাক্বারাহ, ১৪৪)। এভাবে আল্লাহ তাহাঁর মুখ কাবার দিকে ফিরিয়ে দিলেন। ইবনিল মুসান্নার হাদিস এখানেই শেষ। আর যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন নাসর তার নাম উল্লেখ করে বলেনঃ অতঃপর আনসার গোত্রেরআবদুল্লা ইবনি যায়িদ (রাঃআঃ) আসলেন। তিনি উক্ত হাদীসে বলেনঃ স্বপ্নে দেখা লোকটি ক্বিবলাহর দিকে মুখ করে বললোঃ

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ,

أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ,

حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস-সলাহ দুবার,

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল ফালাহ দুবার।

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার,

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

অতঃপর কিছুক্ষন নীরব থেকে আবার দাঁড়িয়ে থেকে পূর্বের কথারই পুনরাবৃত্তি করিল। তবেআবদুল্লা ইবনি যায়িদ বলেন, লোকটি হাইয়্যাআলাল-ফালাহ বলার পর

 قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সলাতু ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ বাক্য

দুবার বলিল। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ এটা তুমি বিলাল কে শিখিয়ে দাও। অতঃপর বিলাল (রাঃআঃ) শিখানো শব্দগুলো দ্বারা আযান দিলেন।

এরপর বর্ণনাকারী সওম (রোযা) সম্পর্কে বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) প্রতি মাসে তিন দিন এবং আশুরার দিন সিয়াম পালন করতেন। অতঃপর আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেনঃ “তোমাদের উপর সিয়াম ফারয করা হলো যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফারয করা হয়েছিল, যেন তোমরা আল্লাহভীরু (মুত্তাকী) হইতে পারো। নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ রোগাক্রান্ত হলে অথবা মুসাফির হলে পরবর্তীতে তাকে এর ক্বাযা করতে হইবে। যারা সিয়াম পালনে সক্ষম (হয়েও সিয়াম পালন করে না) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার করাবে”—(সূরাহ বাক্বারাহ,১৮৩-১৮৪)। এতে কেউ ইচ্ছে হলে সিয়াম পালন করত, আর কেউ বা সিয়াম পালন না করে প্রতি সিয়ামের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে আহার করাতো। এটাই তার জন্য যথেষ্ট ছিল। (সিয়ামের প্রাথমিক অবস্থা এরূপই ছিল) অতঃপর এ বিধান পরিবর্তন করে আল্লাহ এ আয়াত নাযিল করলেনঃ “রমাযান হচ্ছে মহিমাম্বিত মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে যা মানব জাতির পথপ্রদর্শক, হিদায়াতের স্পষ্ট দলীল এবং (হাক্ব ও বাতিলের মধ্যে) পার্থক্যকারী। তোমাদের যে কেউ রমাযান মাস পেল সে যেন সিয়াম পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে সে পরবর্তী সময়ে তা ক্বাযা করে নিবে—(সূরাহ বাক্বারাহ ১৮৫)। এরপর থেকে রমাযান মাস প্রাপ্ত প্রত্যেক ব্যক্তির উপর সিয়াম ফারয হয়ে যায়। এবং মুসাফিরের জন্য এর ক্বাযা আদায় ফারয সাব্যস্ত হয়। আর ফিদয়ার ব্যবস্থা বিধিবদ্ধ হয় সিয়াম পালনে অপারগ বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের জন্য। সাহাবী সিরমাহ (রাঃআঃ) সারা দিন পরিশ্রম করেছিলেন। এরপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন।

সহিহ, প্রথম দিকে তাকবীরে তারবী সহকারে। ইরওয়াউল গালীল ৪/২০—২১। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৯ ইক্বামতের বর্ণনা

৫০৮. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল কে আযান জোড় ও ইক্বামাত বেজোড় সংখ্যায় বলার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। হাম্মাদ তার হাদীসে আরো বলেন, কিন্তু

 قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ বাক্যটি ছাড়া (অর্থাৎ এ বাক্যটি দুবার বলিতে হইবে)।

সহিহঃ বোখারি ও মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০৯. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

পুর্বোক্ত হাদিসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। ইসমাঈল বলেন, আমি এ হাদিস আইউবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, কিন্তু

 قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ (বাক্যটি জোড় সংখ্যায় বলবে)।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৫১০. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর যুগে আযানের শব্দগুলো দুবার করে এবং ইক্বামাতের শব্দগুলো একবার করে বলা হত। তবেক্বাদ ক্বামাতিস সলাহ বাক্যটি দুবার বলা হত। আমরা ইক্বামাত শুনলেই উযু করে নামায আদায় করতে আসতাম। শুবাহ (রাঃআঃ) বলেন, আমি আবু জাফর থেকে কেবলমাত্র এ হাদিসটি শুনিয়াছি।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৫১১. মসজিদেউরয়ানের মুয়াজ্জিন আবু জাফর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আমি মসজিদুল আকবারের মুয়াজ্জিন আবুল মুসান্না হইতে শুনিয়াছি , তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে শুনিয়াছি ………. অতঃপর পুরো হাদিস বর্ণনা করেন।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-৩০ একজনের আযান ও আরেকজনের ইক্বামাত দেয়া

৫১২ . আবদুল্লা ইবনি যায়িদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আযান প্রচলনের জন্য কয়েকটি বিষয়ের ইচ্ছা করেছিলেন। কিন্তু এর কোনটিই করেননি। অতঃপরআবদুল্লা ইবনি যায়িদকে স্বপ্নে দেখানো হলো। তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর কাছে এসে স্বপ্নের কথা জানালে তিনি বললেনঃ বিলাল কে শিখিয়ে দাও। তিনি বিলাল কে শিখানোর পর বিলাল (রাঃআঃ) আযান দিলেন।

আবদুল্লা (রাঃআঃ) বলেন, আমি স্বপ্নে আযান দেখেছি, সেজন্য আমিই আযান দিতে চেয়েছিলাম। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ আচ্ছা, তুমি ইক্বামাত দাও। {৫১১} {৫১১} আহমাদ (৯৪/৪২), দারাকুতনী (১/২৪৫) মুহাম্মাদ ইবনি আমর সূত্রে, এর সানাদ দুর্বল। সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি আমর ওয়াক্বিফী আনসারী দুর্বল বর্ণনাকারী, যেমনআত-তাক্বরীব গ্রন্থে আছে। তাকে আরো দুর্বল বলেছেন কাত্তান, ইবনি নুমাইর ও ইয়াইয়া ইবনি মাঈন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৩. আবদুল্লা ইবনি মুহাম্মাদ তার দাদাআবদুল্লা ইবনি যায়িদ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার দাদা (আবদুল্লা) ইক্বামাত দিলেন। {৫১২} {৫১২} পূর্বের হাদিস দেখুন হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫১৪. যিয়াদ ইবনিল হারিস আস-সুদাঈ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ফাজরের প্রথম আযান নাবী (সাঃআঃ) এর নির্দেশক্রমে আমি দিয়েছিলাম। আযান শেষে আমি বলিতে লাগলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি ইক্বামাত দিব? তিনি তখন পূর্ব দিগন্তে ভোরের আভা লক্ষ্য করে বললেনঃ না। ভোরের আলো প্রকাশ পাওয়ার পর তিনি বাহন থেকে নেমে পেশাব-পায়খানা সেরে আমার দিকে ফিরে এলেন। সাহাবীগণ তার সাথে মিলিত হলেন (চারপাশে উপস্থিত হলেন)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উযু করিলেন। বিলাল (রাঃআঃ) ইক্বামাত দিতে চাইলে আল্লাহর নাবী (সাঃআঃ) তাকে বললেনঃ সুদা গোত্রের ভাই আযান দিয়েছে। আর যে আযান দেয় সে-ই ইক্বামাত দিবে। অতঃপর আমি ইক্বামাত দিলাম। {৫১৩}

দুর্বলঃ ইরওয়া ২৩৭, যঈফাহ ৩৫। {৫১৩} তিরমিযী (অধ্যায়ঃ নামায অনুঃ আযানদাতা ইক্বামাত দিবে। হাঃ ১৯৯), ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ আযান, অনুঃ আযানের সুন্নাত, হাঃ ৭১৭) বায়হাক্বী (১/৩৯৯) তিনি বলেন, এর সানাদে দুর্বলতা আছে। সকলেই আবদুর রহমান ইফরীক্বী সূত্রে।আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ ইফরিক্বী দুর্বল। যেমন বলেছেন হাফিযআত-তাক্ববীর গ্রন্হে। ইয়াহইয়া ইবনি কাত্তান এবং অন্যরা তাকে দুর্বল বলেছেন। ঈমাম আহমাদ বলেন, আমি ইফরীক্বীর হাদিস লিখি না। ঈমাম বাগাভী ও ঈমাম বায়হাক্বীও হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩১ উচ্চৈঃস্বরে আযান দেয়া

৫১৫. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুয়াজ্জিনের কণ্ঠস্বর যতদুর পর্যন্ত যায় তাকে ততদুর ক্ষমা করে দেয়া হয়। তাজা ও শুষ্ক প্রতিটি জিনিসই (ক্বিয়ামাতের দিন) তার জন্য সাক্ষী হয়ে যাবে। আর কেউ জামাআতে হাজির হলে তার জন্য পঁচিশ ওয়াক্ত নামাজের সাওয়াব লিখা হয় এবং এক নামায থেকে আরেক নামাজের মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৬. আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন নামাজের আযান দেয়া হয়, তখন শাইত্বান সশব্দে হাওয়া ছাড়তে ছাড়তে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়, যেন আযানের শব্দ তার কানে না পৌঁছে। আযান শেষ হলে সে আবার ফিরে আসে। নামাজের ইক্বামাত দেয়া হলে সে আবার পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে যায়। ইক্বামাত শেষে সে আবার ফিরে আসে এবং মুসল্লীর মনে অহেতুক চিন্তার উদ্রেক করায় এবং বলে, উমুক কথা স্মরন করো। সে এমন কথা স্মরন করিয়ে দেয় যা তার চিন্তায়ই আসেনি। এমনকি মুসল্লী কখনো ভুলেই যায় যে, কত রাকআত নামায আদায় করেছে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম।আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩২ ওয়াক্তের প্রতি খেয়াল রাখা মুয়াজ্জিনের কর্তব্য

৫১৭। আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ঈমাম হচ্ছেন যিম্মাদার এবং মুয়াজ্জিন (ওয়াক্তের) আমানতদার।হে আল্লাহ! ঈমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দিন।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১৮. আবু হুরাইরাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন … পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ। {৫১৭}

{৫১৭} আহমাদ(২/৩৮২)। এর সানাদে আবু সালিহ সূত্রে আযানের হাদিস শ্রবণে সন্দেহ রহিয়াছে। তবে বিশুদ্ধ সানাদসমূহ দ্বারা তা পূর্বের হাদীসে গত হয়েছে। ইবনি খুযাইমাহ (৩/১৫)।

হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-৩৩ মিনারের উপর থেকে আযান দেয়া

৫১৯. বানু নাজ্জারের এক মহিলা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এর মসজিদের নিকটবর্তী আমার ঘরটিই ছিল সবচেয়ে উচুঁ। বিলাল (রাঃআঃ) ঘরের ছাদে উঠে ফাজ্‌রের আযান দিতেন। তিনি সাহরীর সময় (শেষ রাতে) সেখানে এসে বসতেন এবং সুবহে সাদিকের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তিনি শরীরের আড়মোড় ভেঙ্গে (বা হাই তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে) বলিতেন ঃ

হে আল্লাহ! আমি আপনার প্রশংসা করছি এবং কুরাইশদের ব্যাপারে আপনার কাছে সাহায্য চাইছি যেন তাহাঁদের দ্বারা আপনার দ্বীন কায়িম হয়। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি আযান দিতেন। বর্ণনাকারী আরো বলেন, আল্লাহর শপথ কোন রাতেই আমি বিলালকে এ কথাগুলো ত্যাগ করতে দেখিনি। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৪ আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিনের ঘুরে যাওয়া

৫২০. আওন ইবনি আবু জুহায়ফাহ তার পিতার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাক্কাহ্তে নাবী (সাঃআঃ) এর নিকট আসলাম। তিনি তখন লাল চামড়ার তৈরি ছোট তাঁবুতে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় বিলাল বের হয়ে এসে আযান দিলেন। আযানের সময় আমি তার মুখের দিকে লক্ষ্য করছিলাম যে, তিনি এদিক ওদিক মুখ ঘুরাচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) গায়ে ডোরাকাটা চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে এলেন।

সহীহঃ মুসলিম, বোখারি সংক্ষেপে। বর্ণনাকারী মূসা বলেন, আবু জুহায়ফাহ (রাঃআঃ) বলেন, আমি দেখলাম, বিলাল (রাঃআঃ)আবত্বাহ নামক স্থানে গিয়ে আযান দিলেন। তিনিহাইয়্যাআলাস-সলাহ, হাইয়্যাআলাল-ফালাহ পর্যন্ত পৌঁছালে স্বীয় ঘাড় ডানে-বামে ঘুরালেন, তবে শরীর ঘুরাননি। অতঃপর তাঁবু প্রবেশ করে একটি বর্শা বা ছড়ি বের করিলেন।.. এরপর বর্ণনাকারী মূসা হাদিসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। মুনকার। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য

অনুচ্ছেদ-৩৫ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে দুআ করা

৫২১. আনাস ইবনি মালিক (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আযান ও ইক্বামতের মধ্যবর্তী সময়ের দুআ কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৬ মুয়াজ্জিনের আযানের জবাবে যা বলিতে হয়

৫২২. আবু সাঈদ আল-খুদরী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলবে তোমরাও তদ্রূপ বলবে।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫২৩. আবদুল্লা ইবনি আমর ইবনিলআস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি নাবী (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনেছেনঃ তোমরা আযান শুনতে পেলে মুয়াজ্জিন যেরূপ বলে তোমরাও তদ্রূপ বলবে। তারপর আমার উপর দরূদ পাঠ করিবে। কেননা কেউ আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করলে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত বর্ষণ করেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ প্রার্থনা করিবে। ওয়াসিলাহ হচ্ছে জান্নাতের একটি বিশেষ মর্যাদার আসন, যার অধিকারী হইবেন আল্লাহর একজন বিশিষ্ট বান্দা। আমি আশা করছি, আমিই হব সেই বান্দা। কেউ আল্লাহর নিকট আমার জন্য ওয়াসিলাহ্‌ প্রার্থনা করলে সে আমার শাফাআত পাবে।

সহীহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫২৪. আবদুল্লা ইবনি আমর (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহর রসূল! মুয়াজ্জিন তো আমাদের উপর মর্যাদার অধিকারী হয়ে যাচ্ছে। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ মুয়াজ্জিনরা যেরূপ বলে থাকে তোমরাও সেরূপ বলবে। অতঃপর আযান শেষ হলে (আল্লাহর নিকট) দুআ করিবে। তখন তোমাকে তা-ই দেয়া হইবে (তোমার দুআ ক্ববুল হইবে)।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ

৫২৫. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনে বলেঃ

وَأَنَا أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً وَبِالإِسْلاَمِ دِينًا

ওয়া আনা আশ্‌হাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু, রাদীতু বিল্লা-হি রব্‌বান, ওয়া বিমুহাম্মাদিন রাসূলান, ওয়া বিলইসলা-মি দীনান, “এবং আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, এক আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ নেই। তাহাঁর কোন শারীক নেই, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) তাহাঁর বান্দা ও রসূল, আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে রসূল হিসেবে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।” – তাকে ক্ষমা করে দেয়া হইবে।

সহীহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫২৬. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মুয়াজ্জিনকে শাহাদাতের শব্দ উচ্চারণ করতে শুনলে বলিতেন, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমিও অনুরূপ সাক্ষ্য দিচ্ছি।

আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫২৭. উমার ইবনিল খাত্তাব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যদি মুয়াজ্জিনের

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার-এর জাওয়াবে

 اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে এবং

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর জওয়াবে

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আল্-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে এবং

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ এর জওয়াবে

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রসূলুল্লাহ বলে, অতঃপর

 حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ

হাইয়্যাআলাস্-সলাহ-এর জওয়াবে যদি

اَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, তারপর

حَىَّ عَلَى الْفَلاَحِ

হাইয়্যাআলাল-ফালাহ-এর জওয়াবে যদি

اَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ

লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, তারপর যদি

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এর জওয়াবে

اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার এবং

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ-এর জওয়াবে

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ

লা-ইলাহা ইল্লল্লাহ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

সহিহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৭ ইক্বামাতের জবাবে কী বলিতে হইবে?

৫২৮. আবু উমামাহ (রাঃআঃ) সূত্রে অথবা নাবী (সাঃআঃ) -এর কোন সাহাবী হইতে বর্ণিতঃ

বিলাল (রাঃআঃ) ইক্বামাত দিলেন। তিনি

قَدْ قَامَتِ الصَّلاَةُ

ক্বাদ ক্বমাতিস সলাহ বললে নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ

 أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا

“আক্বামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহ।”

আর নাবী (সাঃআঃ) ইক্বামাতের অবশিষ্ট শব্দগুলোর জওয়াব ঐরূপ দিলেন যেরূপ উমার (রাঃআঃ) বর্ণিত পূর্বোক্ত হাদীসে আযান সম্পর্কে বলা হয়েছে। {৫২৭}

দুর্বল ঃ ইরওয়া ২৪১। {৫২৭} বায়হাক্বীসুনানুল কুবরা (১/৪১১), নাসায়ীআমালুল ইয়াওমি ওয়াল লায়লাহ, (হাঃ ১০৩)। এর সানাদ দুর্বল। এতে শামের জনৈক অজ্ঞাত লোক রহিয়াছে। এছাড়া সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি সাবিত সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় শিথিল এবং শাহর ইবনি হাওশাব সত্যবাদী, কিন্তু তার বহু মুরসাল বর্ণনা ও সংশয় আছে। অনুরূপ রহিয়াছেআত তাক্বরীব গ্রন্থে। শায়খ আলবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে বলেনঃ এ সানাদটি খুবই নিকৃষ্ট। সানাদে মুহাম্মাদ ইবনি সাবিত দুর্বল। অনুরূপ শাহর ইবনি হাওশাব। তাছাড়া তাহাঁদের দুজনের মাঝে অবস্থিত ব্যক্তিটি অজ্ঞাত। ঈমাম বায়হাক্বীও হাদিসটি দুর্বল হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৮ আযান শুনে যে দুআ পাঠ করিবে

৫২৯. জাবির ইবনি আবদুল্লা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আযান শুনার পর নিম্নোক্ত দুআ পড়বে তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফাআত অবশ্যম্ভাবী ঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ

আল্লাহুম্মা রব্বি হাযিহিদ্ দাওয়াতিত্ তাম্মাতি ওয়াস্ সলাতিল ক্বায়িমাতি আতি মুহাম্মাদানিল্ ওয়াসিলাতা ওয়ালফাযীলাহ্ ওয়াবআসহু মাকামাম্ মাহমূদানিল্লাযী ওয়াআদ্তাহু। অর্থ ঃ হে আল্লাহ! এই পূর্ণাঙ্গ আহবান ও চিরন্তন নামাজের রব! আপনি মুহাম্মাদ (সাঃআঃ) -কে ওয়াসিলাহ ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করুন এবং তাকে আপনার প্রতিশ্রুত প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করুন।

সহীহঃ বোখারি। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩৯ মাগরিবের আযানের সময় যা পড়তে হয়

৫৩০. উম্মু সালামাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন আমি যেন মাগরিবের আযানের সময় এ দুআ পাঠ করি ঃ

 اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا إِقْبَالُ لَيْلِكَ وَإِدْبَارُ نَهَارِكَ وَأَصْوَاتُ دُعَاتِكَ فَاغْفِرْ لِي

আল্লাহুম্মা ইন্না হাযা ইক্ববালু লাইলিকা ওয়া ইদবারু নাহারিকা ওয়া আসওয়াতু দুআয়িকা ফাগফিরলী। অর্থ ঃহে আল্লাহ! এটা হচ্ছে আপনার রাত আসার সময়, আপনার দিন বিদায়ের মুহূর্ত এবং আপনাকে আহবানকারীর ডাক শোনার সময়। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। {৫২৯}

দুর্বল ঃ মিশকাত ৬৬৯। ৫২৯ তিরমিযী (অধ্যায়ঃ দাওয়াত, অনুঃ উম্মু সালামাহ্‌র দুআ, হাঃ ৩৫৮৯, ঈমাম তিরমিযী বলেন, এ হাদিসটি গরীব), বায়হাক্বী (১/৪১০), হাকিম(১/১৯৯) তিনি বলেন, এর সানাদ সহিহ, তবে বোখারি ও মুসলিম তার থেকে বর্ণনা করেননি। ঈমাম যাহাবীও তার সাথে একমত। মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ আলবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এর সানাদ দুর্বল। সানাদে আবু কাসীর অজ্ঞাত লোক। যেমনটি বলেছেন ঈমাম নাববী ও অন্যরা। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪০ আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ

৫৩১. উসমান ইবনি আবুলআস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে আমার সম্প্রদায়ের ঈমাম নিয়োগ করুন। তিনি বলেনঃ যাও, তোমাকে তাহাঁদের ঈমাম নিযুক্ত করা হলো। তবে দুর্বল মুত্তাকীদের প্রতি খেয়াল রাখবে এবং এমন একজন মুয়াজ্জিন নিয়োগ করিবে যে তার আযানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করিবে না।

সহীহঃ মুসলিম, মুয়াজ্জিন নিয়োগের কথাটি বাদে। হাদিস থেকে শিক্ষা ঃ মুয়াজ্জিনের জন্য আযানের বিনিময় গ্রহণ করা অপছন্দনীয় (অবশ্য এছাড়া অন্যান্য কাজের জন্য বেতন নেয়া যাবে। যেমন, মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখা, দেখাশোনা করা ইত্যাদি)। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪১ ওয়াক্ত হওয়ার আগে আযান দেয়া

৫৩২. ইবনি উমার (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা বিলাল (রাঃআঃ) সুবহে সাদিকের আগেই আযান দিলেন। নাবী (সাঃআঃ) তাকে পুনরায় আযান দেয়ার স্থানে ফিরে গিয়ে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেনঃ জেনে রাখ, বান্দা (বিলাল) আযানের সময় সম্পর্কে অমনোযোগী হয়ে পড়েছিল।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাম্মাদ ইবনি সালামাহ্‌ (রাঃআঃ) ছাড়া অন্য কেউ আইউব (রাঃআঃ) সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেননি। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৩৩. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

উমার (রাঃআঃ)-এর মাসরূহ নামক এক মুয়াজ্জিন ছিল। একদা তিনি সুবহে সাদিকের পূর্বেই আযান দিলেউমার (রাঃআঃ) তাকে (পুনরায় আযান দেয়ার) নির্দেশ দিলেন … তারপর অনুরূপ হাদিসটি বর্ণনা করেন।

সহিহ। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, হাম্মাদ ইবনি যায়িদ হইতেউবাইদুল্লাহ ইবনি উমার থেকে নাফি অথবা অন্য কারো সূত্রেও হাদিসটি বর্ণিত আছে। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, দারাওয়ার্দী,উবাইদুল্লাহ হইতে নাফি থেকে ইবনি উমার সূত্রে বর্ণনা করেন ঃউমার (রাঃআঃ)-এর মাসঊদ নামে একজন মুয়াজ্জিন ছিল। আর এটাই প্রথম কথার চাইতে অধিকতর সহিহ। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৩৪. বিলাল (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ ভোরের আলো এরূপ প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত তুমি আযান দিবে না। এই বলে তিনি তাহাঁর উভয় হাত (উত্তর ও দক্ষিণ দিকে) প্রসারিত করিলেন।

হাসান । ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, শাদ্দাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিলাল (রাঃআঃ)-এর সাক্ষাত পাননি। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪২ অন্ধ ব্যাক্তির আযান দেয়া

৫৩৫. আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি উম্মে মাকতুম (রাঃআঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -এর মুয়াজ্জিন ছিলেন। আর তিনি ছিলেন অন্ধ।

সহীহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৩ আযানের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া

৫৩৬. আবুশ-শাসা (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ)-সাথে মসজিদে ছিলাম। মুয়াজ্জিনআসরের আযান দিলে এক ব্যক্তি মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। আবু হুরায়রা্‌ (রাঃআঃ) বলেন, লোকটি আবুল ক্বাসিম (সাঃআঃ) -এর বিরুদ্ধাচারণ করিল।

সহীহঃ মুসলিম। হাদিস থেকে শিক্ষা ঃ মুমিন ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থানকালে আযানের পর মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়া জায়িয নয়। অবশ্যআলিমগণ বের হওয়ার এ হুকুমের বিষয়ে মতভেদ করিয়াছেন। কেউ একে মাকরূহ বলেছেন, আর কেউ বলেছেন হারাম।(তবে কারণ বশতঃ বের হওয়া দোষণীয় নয়। যেমন পেশাব-পায়খানা বা অন্য কোন প্রয়োজন যা সম্পন্ন করে তিনি জামাআতের পূর্বেই মসজিদে উপস্থিত হইবেন, অথবা পার্শ্ববর্তী কোন মসজিদে জামাআতের সাথে নামায আদায় করবেন ইত্যাদি। ওজর থাকলে এরূপ করা দোষণীয় নয়)। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৪ ইমামের জন্য মুয়াজ্জিনের অপেক্ষা করা

৫৩৭. জাবির ইবনি সামুরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বিলাল (রাঃআঃ) আযান দেয়ার পর অপেক্ষামান থাকতেন। তিনি যখন নাবী (সাঃআঃ) কে বের হইতে দেখিতেন, তখন নামাজের ইক্বামাত দিতেন।

সহীহঃ মুসলিম আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৫ তাস্‌বীব (আযানের পর নামাজের জন্য পুনরায় ডাকা) প্রসঙ্গে

৫৩৮. মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ইবনি উমার (রাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। এক ব্যক্তি যুহর কিংবাআসরের নামাজের জন্য তাসবীব (পুনরায় আহবান) করায় ইবনি উমার (রাঃআঃ) বলিলেন, চলো আমরা এখান থেকে বেরিয়ে যাই, কারণ এটা বিদআত।

হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪৬ নামাজের ইক্বামাত হওয়ার পরও ইমামের আগমনের অপেক্ষায় বসে থাকা

৫৩৯. আবদুল্লা ইবনি আবু ক্বাতাদাহ্ তার পিতা আবু ক্বাতাদাহ্ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন নামাজের ইক্বামাত দেয়া হয়, তখন আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা দাঁড়াবে না।

সহীহঃ বোখারি ও মুসলিম। মুআবিয়াহ ইবনি সালাম ওআলী ইবনিল মুবারাক ইয়াহ্ইয়াহ থেকে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছেঃ আমাকে না দেখা পর্যন্ত তোমরা শান্তভাবে (অপেক্ষা করতে) থাকিবে। সহীহঃ বোখারি আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪০. ইয়াহ্ইয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

একই সানাদে অনুরূপ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছেঃ যতক্ষন না তোমরা দেখবে, আমি বের হয়েছি। ঈমাম আবু দাউদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি বের হয়েছি, শব্দগুলো মামার ব্যতীত অন্য কেউ বর্ণনা করেননি। ইবনিউয়াইনাহও মামার সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতেওআমি বের হয়েছি কথাটি উল্লেখ নেই।

সহীহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪১. আবু হুরাইরাহ্‌ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর আসার সময় হলেই নামাজের ইক্বামাত দেয়া হত। নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্থানে আসার পূর্বেই লোকেরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করতেন।

সহীহঃ মুসলিম। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪২. হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সাবিত আল-বুনানীকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যে নামাজের ইক্বামাত হওয়ার পরও কথা বলেছিল। তিনি আনাস (রাঃআঃ) সূত্রে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, ইক্বামাত হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর নিকট আসে এবং তাকে (কথাবার্তায়) ব্যস্ত রাখে।

সহীহঃ বোখারি আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪৩. কাহ্‌মাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, মিনায় আমরা নামায আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলাম, কিন্তু তখনো ঈমাম বের হননি। এমতাবস্থায় আমাদের মধ্যকার কেউ কেউ বসে পড়ল। কুফাবাসী জনৈক শায়খ বলিলেন, কিসে আপনাকে বসিয়ে দিল? আমি বললাম, ইবনি বুরাইদাহ। তিনি বলেছেন, ইমামের জন্য এভাবে (দাঁড়িয়ে) অপেক্ষা করা নিস্প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমার শায়খআবদুর রহমান ইবনিআওসাজাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) আল-বারাআ ইবনিআযিব (রাঃআঃ) সূত্রে বর্ণনা করেন যে, আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর যুগে তাকবীরে তাহরীমা বলার পূর্বে নামাজের কাতারে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতাম। তিনি আরো বলেন, সম্মানিত মহান আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন এবং তাহাঁর মালায়িকাহ্‌ (ফেরেশতাগণ) দুআ করে থাকেন ঐ লোকদের জন্য যারা সামনের কাতারসমূহের দিকে ধাবিত হয়। আল্লাহর নিকট ঐ পদক্ষেপের চাইতে অধিক পছন্দনীয় পদক্ষেপ আর কোনটি নেই মানুষেরা যা কাতারবদ্ধ হবার জন্য করে থাকে। {৫৪২}

দুর্বলঃ মিশকাত ১০৯৫ {৫৪২} ইবনি মাজাহ (অধ্যায়ঃ নামায ক্বায়িম, অনুঃ সামনে কাতারের ফাযীলাত, হাঃ৯৯৭) দারিমী (১২৬৪), আহমাদ (৪/২৮৫, ২৯৬) ইবনি খুযাইমাহ (১৫৫১, ১৫৫৬। মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ আলবানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ এর সানাদে অজ্ঞাত ব্যাক্তি রহিয়াছে। তবে হাদিসের প্রথমাংশের ভিন্ন আরেকটি সানাদ রহিয়াছে, যা সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫৪৪. আনাস (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

(ইশার) নামাজের ইক্বামাত দেয়ার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মসজিদের কোণে এক লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। তিনি নামায শুরু করতে আসায় বিলম্ব করায় অপেক্ষমান লোকজন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে।

সহীহঃ মুসলিম হাদিস থেকে শিক্ষাঃ গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কোন কাজে ব্যস্ততার কারণে নামাযকে প্রথম ওয়াক্তের পর (কিছুটা) বিলম্ব করে আদায় করা জায়িয আছে। তবে সেরকম কিছু না হলে নামাজে বিলম্ব করা মোটেই ঠিক হইবে না। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আজান ও ইকামত -হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪৫. সালিম আবুন্‌ নাদর হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নামাজের ইক্বামাত বলার পর মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা কম দেখলে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নামায শুরু না করে বসে যেতেন। অতঃপর যখনই পূর্ণ জামাআতের মুসল্লীর সমাগম হইতে দেখিতেন তখন নামায আদায়ে দাঁড়াতেন। {৫৪৪}

{৫৪৪} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসটি মুরসাল। সালিম আবু নাসর ও ইবনি আবু উমাইয়্যাহ নির্ভরযোগ্য, প্রমানযোগ্য। তিনি মুরসাল হাদিস বর্ণনা করতেন। যেমনআত-ত্বাকরীর গ্রন্থে রহিয়াছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

৫৪৬. আলী ইবনি আবু ত্বালিব (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে পূর্বানুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। {৫৪৫}

{৫৪৫}আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদের আবু মাসউদ আনসারীকে হাফিযআত-ত্বাকরীব গ্রন্থে অজ্ঞাত (মাজহুল) বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণীত নয়


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply