অসিয়ত নামা হাদিস অধ্যায় । এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করা।
অসিয়ত নামা হাদিস অধ্যায় । এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করা , এই পর্বের হাদীস =৯ টি (১০৫২-১০৬০) >> আল লুলু ওয়াল মারজান এর মুল সুচিপত্র দেখুন
পর্ব-২৫ঃ অসীয়াত
২৫/১. এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করা।
২৫/২. সাদাকাহ্র সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছা।
২৫/৪. ওয়াক্ফ
২৫/৫. ঐ ব্যক্তির অসীয়াত পরিত্যাগ করা যার কোন কিছু নেই যা সে অসিয়াত করিবে।
অসীয়াত
১০৫২. আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসীয়াতযোগ্য কিছু [সম্পদ] রয়েছে, সে দুরাত কাটাবে অথচ তার নিকট তার অসীয়াত লিখিত থাকিবে না।
[বোখারী, পর্ব ৫৫ : ওয়াসিয়াত, অধ্যায় ১, হাদীস নং ২৭৩৮; মুসলিম, পর্ব ২৫ : অসীয়াত, অধ্যায় আউয়ালুল কিতাব, হাঃ ১৬২৭] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
২৫/১. এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করা।
১০৫৩. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, বিদায় হাজ্জে একটি কঠিন রোগে আমি আক্রান্ত হলে, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমার খোঁজ খবর নেয়ার জন্য আসতেন। একদা আমি তাহাঁর কাছে নিবেদন করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ আমার উত্তরাধিকারী নেই। তবে আমি কি আমার সম্পদের দু তৃতীয়াংশ সদাকাহ করিতে পারি? তিনি বলিলেন, না। আমি আবার নিবেদন করলাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বলিলেন, না। অতঃপর তিনি বলিলেন, এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও বিরাট পরিমাণ অথবা অধিক। তোমার ওয়ারিসদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাহাদেরকে খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। আর আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময় প্রদান করা হইবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে [তারও প্রতিদান পাবে]। আমি নিবেদন করলাম, হে আল্লাহ্র রসূল [সাঃআঃ]! [আফসোস] আমি আমার সাথীদের হইতে পিছনে থেকে যাব? তিনি বলিলেন, তুমি যদি পিছনে থেকে নেক আমল করিতে থাক, তাহলে তাতে তোমার মর্যাদা ও উন্নতি বৃদ্ধিই পেতে থাকিবে। তাছাড়া, সম্ভবত, তুমি পিছনে [থেকে যাবে]। যার ফলে তোমার দ্বারা অনেক কাওম উপকার লাভ করিবে। আর অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীগণের হিজরত বলবৎ রাখুন। পশ্চাতে ফিরিয়ে দিবেন না। কিন্তু আফসোস! সাদ ইবনি খাওলার জন্য [এ বলে] আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর জন্য শোক প্রকাশ করছিলেন, যেহেতু মাক্কায় তাহাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
[বোখারী পর্ব ২৩ : জানাযা, অধ্যায় ৩৬, হাদীস নং ১২৯৫; মুসলিম, পর্ব ২৫ : অসীয়াত, অধ্যায় ১, হাঃ ১৬২৮] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১০৫৪. সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে নাবী [সাঃআঃ] আমাকে দেখিতে আসেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আল্লাহ্র নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেন।* তিনি বলিলেন, আশা করি আল্লাহ্ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার দ্বারা লোকদের উপকৃত করবেন। আমি বললাম, আমি অসীয়াত করিতে চাই। আমার তো একটি মাত্র কন্যা রয়েছে। আমি আরো বললাম, আমি অর্ধেক অসীয়াত করিতে চাই। তিনি বলিলেন, অর্ধেক অনেক অধিক। আমি বললাম, এক তৃতীয়াংশ। তিনি বলিলেন, আচ্ছা, এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও অধিক বা তিনি বলেছেন বিরাট। সাদ বলেন, অতঃপর লোকেরা এক তৃতীয়াংশ অসীয়াত করিতে লাগল। আর তা-ই তাহাদের জন্য জায়িয হয়ে গেল।
[বোখারী পর্ব ৫৫ অধ্যায় ৩ হাদীস নং ২৭৪৪; মুসলিম হাঃ ১৬২৮] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
২৫/২. সাদাকাহ্র সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছা।
১০৫৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী [সাঃআঃ] -কে বলিলেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি [মৃত্যুর পূর্বে] কথা বলিতে সক্ষম হলে কিছু সদাকাহ করে যেতেন। এখন আমি তাহাঁর পক্ষ হইতে সদাকাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি {ন
বী [সাঃআঃ]} বলিলেন, হ্যাঁ
।[বোখারী পর্ব ২৩ : জানাযা, অধ্যায় ৯৫, হাদীস নং ১৩৮৮; মুসলিম, পর্ব ২৫ : অসীয়াত, অধ্যায় ২, হাঃ ১০০৪] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
২৫/৪. ওয়াক্ফ
১০৫৬. ইবনি উমার[রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
উমার উব্নু খাত্তাব [রাদি.] খায়বারে কিছু জমি লাভ করেন। তিনি এ জমির ব্যাপারে পরামর্শের জন্য আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর নিকট এলেন এবং বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমি খায়বারে এমন উৎকৃষ্ট কিছু জমি লাভ করেছি যা ইতোপূর্বে আর কখনো পাইনি। আপনি আমাকে এ ব্যাপারে কী আদেশ দেন? আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি ইচ্ছে করলে জমির মূলসত্ত্ব ওয়াক্ফে রাখতে এবং উৎপন্ন বস্তু সদাকাহ্ করিতে পার। ইবনি উমার [রাদি.] বলেন, উমার [রাদি.] এ শর্তে তা সদাকাহ্ [ওয়াক্ফ] করেন যে, তা বিক্রি করা যাবে না, তা দান করা যাবে না এবং কেউ এর উত্তরাধিকারী হইবে না। তিনি সদাকাহ্ করে দেন এর উৎপন্ন বস্তু অভাবগ্রস্ত, আত্মীয়-স্বজন, দাসমুক্তি, আল্লাহ্র রাস্তায়, মুসাফির ও মেহমানদের জন্য। [রাবী আরও বলিলেন] যে এর মুতাওয়াল্লী হইবে তার জন্য সম্পদ সঞ্চয় না করে ন্যায়সঙ্গতভাবে খাওয়া ও খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। অতঃপর আমি ইবনি সীরীন [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট হাদীস বর্ণনা করলে তিনি বলেন, অর্থাৎ মাল জমা না করে।
[বোখারী, পর্ব ৫৪ : অধ্যায় ১৯ হাদীস নং ২৭৩৭; মুসলিম ২৫/৩ হাঃ ১৬৩৩] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
২৫/৫. ঐ ব্যক্তির অসীয়াত পরিত্যাগ করা যার কোন কিছু নেই যা সে অসিয়াত করিবে।
১০৫৭. ত্বলহা ইবনি মুসার্রিফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবদুল্লাহ্ ইবনি আবী আওফা [রাদি.]-এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, নাবী [সাঃআঃ] কি অসীয়াত করেছিলেন? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কিভাবে লোকদের উপর অসীয়াত ফার্য করা হলো, কিংবা ওয়াসিয়াতের নির্দেশ দেয়া হলো? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আল্লাহ্র কিতাব মুতাবিক আমাল করার জন্য অসীয়াত করিয়াছেন।
[বোখারী পর্ব ৫৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৭৪১; মুসলিম ২৫/৫ হাঃ ১৬৩৬] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১০৫৮. আসওয়াদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, সাহাবীগণ আয়েশা [রাদি.]-এর নিকট আলোচনা করিলেন যে, আলী [রাদি.] নাবী [সাঃআঃ] এর ওয়াসী ছিলেন। আয়েশা [রাদি.] বলিলেন, তিনি কখন তাহাঁর প্রতি অসীয়াত করিলেন? অথচ আমি তো আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-কে আমার বুকে অথবা বলেছেন আমার কোলে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। তখন তিনি পানির তস্তুরি চাইলেন, অতঃপর আমার কোলে ঢলে পড়লেন। আমি বুঝতেই পারিনি যে, তিনি ইন্তিকাল করিয়াছেন। অতএব তাহাঁর প্রতি কখন অসীয়াত করিলেন?
[বোখারী পর্ব ৫৫ অধ্যায় ১ হাদীস নং ২৭৪১; মুসলিম ২৫/৫ হাঃ ১৬৩৬] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১০৫৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলিলেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! অতঃপর তিনি কাঁদতে শুরু করিলেন, এমনকি তাহাঁর অশ্রুতে কঙ্করগুলো সিক্ত হয়ে গেল। আর তিনি বলিতে লাগলেন, বৃহস্পতিবারে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]-এর রোগ যাতনা বেড়ে যায়। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা আমার জন্য লিখার কোন জিনিস নিয়ে এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখিয়ে দিব। যাতে অতঃপর তোমরা কখনও পথভ্রষ্ট না হও। এতে সাহাবীগণ পরস্পরে মতভেদ করেন। অথচ নাবী [সাঃআঃ]র সম্মুখে মতভেদ সমীচীন নয়। তাহাদের কেউ কেউ বলিলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] দুনিয়া ত্যাগ করছেন? তিনি বলিলেন, আচ্ছা, আমাকে আমার অবস্থায় থাকতে দাও। তোমরা আমাকে যে অবস্থার দিকে আহ্বান করছো তার চেয়ে আমি যে অবস্থায় আছি তা উত্তম। অবশেষে তিনি ইন্তিকালের সময় তিনটি বিষয়ে ওসীয়ত করেন। [১] মুশরিকদেরকে আরব উপদ্বীপ হইতে বিতাড়িত কর, [২] প্রতিনিধি দলকে আমি যেরূপ উপঢৌকন দিয়েছি তোমরাও তেমন দিও [রাবী বলেন] তৃতীয় ওসীয়তটি আমি ভুলে গেছি।
[বোখারী পর্ব ৫৬ অধ্যায় ১৭৬ হাদীস নং ৩০৫৩; মুসলিম ২৫/৫ হাঃ ১৬৩৭] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১০৬০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ওফাতের সময় যখন ঘনিয়ে এলো এবং ঘরে ছিল লোকের সমাবেশ, তখন নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা এসো, আমি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দেই, যেন তোমরা পরবর্তীতে পথভ্রষ্ট না হয়ে যাও। তখন তাহাদের মধ্যকার কিছুলোক বলিলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রোগ-যন্ত্রণা কঠিন হয়ে গেছে, আর তোমাদের কাছে তো কুরআন মওজুদ আছে। আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। এ ব্যাপারে নাবী [সাঃআঃ]-এর পরিবারের লোকজনের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয় এবং তারা পরস্পর বাক-বিতণ্ডা করিতে থাকেন। তাহাদের কেউ বলিলেন, তোমরা তার নিকট যাও, তিনি তোমাদের জন্য কিছু লিখে দিবেন। যাতে তোমরা তাহাঁর পরে কোন বিভ্রান্তিতে না পড়। আবার কেউ বলিলেন অন্য কথা। বাক-বিতণ্ডা ও মতভেদ যখন চরমে পৌঁছল, তখন রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা উঠে চলে যাও।
উবাইদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিতেন, এ ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সহাবায়ে কিরামের জন্য কিছু লিখে দেয়ার ব্যাপারে তাহাদের মতবিরোধ ও চেঁচামেচিই মূলত প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
[বোখারী পর্ব ৬৪, অধ্যায় ৮৪, হাদীস নং ৪৪৩২; মুসলিম ২৫/৫, হাঃ ১৬৩৭] অসিয়ত নামা -এই হাদীসটির তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply