অসিয়ত করার নিয়ম – এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করা প্রসঙ্গে।

অসিয়ত করার নিয়ম – এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করা প্রসঙ্গে।

অসিয়ত করার নিয়ম – এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করা প্রসঙ্গে >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ৫৫, অসিয়ত, অধ্যায়ঃ (১-১১)=১২টি

৫৫/১. অধ্যায়ঃ অসীয়ত প্রসঙ্গে
৫৫/২. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসদেরকে অন্যের নিকট হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে মালদার রেখে যাওয়া উত্তম।
৫৫/৩. অধ্যায়ঃ এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করা প্রসঙ্গে।
৫৫/৪. অধ্যায়ঃ অসীর নিকট অসীয়তকারীর কথাঃ তুমি আমার সন্তানাদির প্রতি খেয়াল রাখবে, আর অসীর জন্য কেমন দাবী জায়িয।
৫৫/৫. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তি মাথা দিয়ে স্পষ্টভাবে ইশারা করলে তা গ্রহণীয় হইবে।
৫৫/৬. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসের জন্য অসীয়ত নেই।
৫৫/৭. অধ্যায়ঃ মৃত্যুর প্রাক্কালে দান খয়রাত করা।
৫৫/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ ঋণ আদায় ও অসীয়ত পূর্ণ করার পর (মৃতের সম্পত্তি ভাগ হইবে)। (আন-নিসা : ১২)
৫৫/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ঋণ পরিশোধ ও অসীয়ত পূরণ করার পর (মৃতের সম্পত্তি বণ্টন করিতে হইবে)” (আন-নিসা ১১) এর ব্যাখ্যা।
৫৫/১০. অধ্যায়ঃ যখন আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওয়াক্‌ফ বা অসীয়ত করা হয় এবং আত্মীয় কারা?
৫৫/১১. অধ্যায়ঃ স্ত্রীলোক ও সন্তানাদি আত্মীয়ের মধ্যে কি?

৫৫/১. অধ্যায়ঃ অসীয়ত প্রসঙ্গে

এবং নাবী (সাঃআঃ) -এর বাণী, মানুষের অসীয়ত তার নিকট লিখিত থাকবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন তোমাদের কারো মৃত্যুকাল উপস্থিত হলে সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায় তবে তা ন্যায্য পন্থায় তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য অসীয়ত করার বিধান ….. পক্ষপাতিত্ব পর্যন্ত। (আল-বাকারা : ১৮০-১৮২) —– অর্থ–ঝুঁকে যাওয়া, পক্ষপাতিত্ব করা ——- ঐ ব্যক্তি, যে ঝুঁকে পড়ে, পক্ষপাতিত্ব করে।

২৭৩৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, কোন মুসলিম ব্যক্তির উচিত নয় যে, তার অসীয়তযোগ্য কিছু (সম্পদ) রয়েছে, সে দুরাত কাটাবে অথচ তার নিকট তার অসীয়ত লিখিত থাকবে না। মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীস বর্ণনায় মালিক (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর অনুসরণ করিয়াছেন। এ সনদে আমর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু উমর (রাদি.) -এর মাধ্যমে নাবী (সাঃআঃ) থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

২৭৩৯.আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর শ্যালক অর্থাৎ উম্মুল মুমিনীন জুওয়াইরিয়া বিনতু হারিসের ভাই আমর ইবনুল হারিস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাহাঁর মৃত্যুকালে তাহাঁর সাদা খচ্চরটি, তাহাঁর হাতিয়ার এবং সে জমি যা তিনি সদকা করেছিলেন, তাছাড়া কোন স্বর্ণ বা রৌপ্য মুদ্রা, কোন দাস-দাসী কিংবা কোন জিনিস রেখে যাননি।

২৭৪০. তালহা ইবনু মুসাররিফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু আবী আওফা (রাদি.) -এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, নাবী (সাঃআঃ) কি অসীয়ত করেছিলেন? তিনি বলেন, না। আমি বললাম, তাহলে কিভাবে লোকদের উপর অসীয়ত ফরয করা হলো, কিংবা অসীয়তের নির্দেশ দেয়া হলো? তিনি বলিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আল্লাহর কিতাব মুতাবিক আমল করার জন্য অসীয়ত করিয়াছেন।

২৭৪১. আসওয়াদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাহাবীগণ আয়েশা (রাদি.) -এর নিকট আলোচনা করিলেন যে, আলী (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) -এর ওয়াসী [১] ছিলেন। আয়েশা (রাদি.) বলিলেন, তিনি কখন তাহাঁর প্রতি অসীয়ত করিলেন? অথচ আমি তো আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে আমার বুকে অথবা বলেছেন আমার কোলে হেলান দিয়ে রেখেছিলাম। তখন তিনি পানির তস্তুরি চাইলেন, অতঃপর আমার কোলে ঢলে পড়লেন। আমি বুঝতেই পারিনি যে, তিনি ইনতিকাল করিয়াছেন। অতএব তাহাঁর প্রতি কখন অসীয়ত করিলেন?

[১] নাবী (সাঃআঃ) আলী (রাদি.) -এর জন্য খিলাফতের অসীয়ত করেছিলেন-এ দাবী আদৌ সত্য নয়। যার বাস্তব প্রমাণ হল অত্র হাদীসটি।

৫৫/২. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসদেরকে অন্যের নিকট হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে মালদার রেখে যাওয়া উত্তম।

২৭৪২. সাদ ইবনু আবু ওয়াক্‌কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) একবার আমাকে রোগাক্রান্ত অবস্থায় দেখিতে আসেন। সে সময় আমি মক্কায় ছিলাম। কোন ব্যক্তি যে স্থান থেকে হিজরত করে, সেখানে মৃত্যুবরণ করাকে তিনি অপছন্দ করিতেন। এজন্য তিনি বলিতেন, আল্লাহ রহম করুন ইবনু আফরা-র উপর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)! আমি কি আমার সমুদয় মালের ব্যবহারের অসীয়ত করে যাব? তিনি বলিলেন, না। আমি বললাম, তবে অর্ধেক? তিনি ইরশাদ করিলেন, না। আমি বললাম, তবে এক তৃতীয়াংশ? তিনি ইরশাদ করিলেন, (হ্যাঁ) এক তৃতীয়াংশ আর এক তৃতীয়াংশও অনেক। ওয়ারিসগণকে দরিদ্র পরমুখাপেক্ষী করে রেখে যাবার চেয়ে ধনী অবস্থায় রেখে যাওয়া উত্তম। তুমি যখনই কোন খরচ করিবে, তা সদকারূপে গণ্য হইবে। এমনকি সে লোকমাও যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে। হয়ত আল্লাহ তাআলা তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং লোকেরা তোমার দ্বারা উপকৃত হইবেন, আবার কিছু ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। সে সময় তার একটি মাত্র কন্যা ব্যতীত কেউ ছিল না।

৫৫/৩. অধ্যায়ঃ এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করা প্রসঙ্গে।

হাসান বাস্‌রী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যিম্মির জন্য এক তৃতীয়াংশের বেশি অসীয়ত করা বৈধ নয়। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তিনি যেন আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী যিম্মিদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তাদের মধ্যে ফয়সালা কর, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী। (আল-মায়িদাহ ৪৯)

২৭৪৩. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকেরা যদি এক চতুর্থাংশে নেমে আসত। কেননা, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, এক তৃতীয়াংশ এবং তৃতীয়াংশই বিরাট অথবা তিনি বলেছেন বেশী।

২৭৪৪. আমির ইবনু সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর পিতা সাদ ইবনু আবু ওয়াক্‌কাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে নাবী (সাঃআঃ) আমাকে দেখিতে আসেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকট দুআ করুন, তিনি যেন আমাকে পেছন দিকে ফিরিয়ে না নেন। [১] তিনি বলিলেন, আশা করি আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার দ্বারা লোকদের উপকৃত করবেন। আমি বললাম, আমি অসীয়ত করিতে চাই। আমারতো একটি মাত্র কন্যা রয়েছে। আমি আরো বললাম, আমি অর্ধেক অসীয়ত করিতে চাই। তিনি বলিলেন, অর্ধেক অনেক অধিক। আমি বললাম, এক তৃতীয়াংশ। তিনি বলিলেন, আচ্ছা এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশও অধিক বা তিনি বলেছেন বিরাট। সাদ (রাদি.) বলেন, অতঃপর লোকেরা এক তৃতীয়াংশ অসীয়ত করিতে লাগল। আর তা-ই তাদের জন্য জায়িয হয়ে গেল।

‎[১] অর্থাৎ যেখান হইতে হিজরত করে এসেছি সেখানে যেন আমার মৃত্যু না হয়।

৫৫/৪. অধ্যায়ঃ অসীর নিকট অসীয়তকারীর কথাঃ তুমি আমার সন্তানাদির প্রতি খেয়াল রাখবে, আর অসীর জন্য কেমন দাবী জায়িয।

২৭৪৫. নাবী (সাঃআঃ) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উতবা ইবনু আবু ওয়াক্‌কাস (রাদি.) তাহাঁর ভাই সাদ ইবনু আবু ওয়াক্‌কাস (রাদি.) -কে এই বলে অসীয়ত করেন যে, যামআর দাসীর ছেলেটি আমার ঔরসজাত। তাকে তুমি তোমার অধিকারে আনবে। মক্কা বিজয়ের বছর সাদ (রাদি.) তাকে নিয়ে নেন এবং বলেন, সে আমার ভাতিজা, আমাকে এর ব্যাপারে অসীয়ত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআহ (রাদি.) দাঁড়িয়ে বলিলেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। আমার পিতার বিছানায় তার জন্ম হয়েছে। তারা উভয়ই আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট আসেন। সাদ (রাদি.) বলিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে আমার ভাইয়ের পুত্র এবং তিনি আমাকে তার সম্পর্কে অসীয়ত করে গেছেন। আবদ ইবনু যামআ (রাদি.) বলিলেন, সে আমার ভাই এবং আমার পিতার দাসীর পুত্র। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন, হে আবদ ইবনু যামআহ! সে তোমারই প্রাপ্য। কেননা যার বিছানায় সন্তান জন্মেছে, সে-ই সন্তানের অধিকারী। ব্যভিচারীর জন্য রয়েছে পাথর। অতঃপর তিনি সাওদ বিনতু যামআ (রাদি.) -কে বলিলেন, তুমি এই ছেলেটি থেকে পর্দা কর। কেননা তিনি ছেলেটির সঙ্গে উতবা-র সদৃশ্য দেখিতে পান। ছেলেটির আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ হওয়া পর্যন্ত সে কখনো সাওদা (রাদি.)-কে দেখেনি।

৫৫/৫. অধ্যায়ঃ রুগ্ন ব্যক্তি মাথা দিয়ে স্পষ্টভাবে ইশারা করলে তা গ্রহণীয় হইবে।

২৭৪৬. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

এক ইয়াহূদী একটি মেয়ের মাথা দুটি পাথরের মাঝে রেখে তা থেঁতলে ফেলে। তাকে জিজ্ঞেস করা হল, কে তোমাকে এমন করেছে? কি অমুক, না অমুক ব্যক্তি? অবশেষে যখন সেই ইয়াহুদীর নাম বলা হল তখন মেয়েটি মাথা দিয়ে ইশারা করিল, হ্যাঁ। অতঃপর সেই ইয়াহূদীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর অবশেষে সে স্বীকার করিল। নাবী (সাঃআঃ) তার ব্যাপারে নির্দেশ দিলেন। তখন পাথর দিয়ে তার মাথা থেঁতলিয়ে দেয়া হলো।

[১] অর্থাৎ আমি যেখান থেকে হিজরত করে চলে এসেছি আল্লাহ তাআলা যেন সেখানে আমাকে মৃত্যু না দেন।

৫৫/৬. অধ্যায়ঃ ওয়ারিসের জন্য অসীয়ত নেই।

২৭৪৭. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদ পেত সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়ত। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাহাঁর পছন্দ মত এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুণ, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ, স্ত্রীর জন্য এক অষ্টমাংশ, এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।

৫৫/৭. অধ্যায়ঃ মৃত্যুর প্রাক্কালে দান খয়রাত করা।

২৭৪৮. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নাবী (সাঃআঃ) -কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তম সদকা কোনটি? তিনি বলেন, সুস্থ এবং সম্পদের প্রতি অনুরাগ থাকা অবস্থায় দান খয়রাত করা, যখন তোমার ধনী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থাকে এবং তুমি দারিদ্রের আশঙ্কা কর, আর তুমি এভাবে অপেক্ষায় থাকবে না যে, যখন তোমার প্রাণ কন্ঠাগত হইবে, তখন তুমি বলবে, অমুকের জন্য এতটুকু, অমুকের জন্য এতটুকু অথচ তা অমুকের জন্য হয়েই গেছে।

৫৫/৮. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর বাণীঃ ঋণ আদায় ও অসীয়ত পূর্ণ করার পর (মৃতের সম্পত্তি ভাগ হইবে)। (আন-নিসা : ১২)

উল্লেখ করা হয়েছে যে, শুরাইহ, উমর ইবনু আবদুল আযীয, তাউস, আত্বা ও ইবনু উয়ায়নাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) রোগগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণের স্বীকারোক্তিকে বৈধ বলেছেন। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, দুনিয়ার শেষ দিনে এবং আখিরাতের প্রথম দিনে উপনীত হওয়া মানুষ যে স্বীকারোক্তি করে তাই অধিক গ্রহণযোগ্য। ইবরাহীম ও হাকাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, উত্তরাধিকারী যদি ঋণ মাফ করে দেয়, তবে সে মুক্ত হয়ে যাবে। রাফি ইবনু খাদীজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অসীয়ত করেন যে, যে সকল মাল ফাযারিয়া গোত্রের তার স্ত্রীর ঘরে আবদ্ধ রয়েছে, তা যেন বের করা না হয়। হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, কেউ যদি মৃত্যুর সময় তার ক্রীতদাসকে বলে, আমি তোমাকে আযাদ করেছি তবে তা বৈধ। শাবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি কোন স্ত্রী মৃত্যুকালে বলে, আমার স্বামী আমার হক আদায় করে দিয়েছেন এবং আমি তা নিয়ে নিয়েছি, তবে তা বৈধ। কেউ কেউ বলেন যে, ওয়ারিস সম্পর্কে রোগাক্রান্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য নয়, কেননা তাতে তার সম্পর্কে কুধারণা হইতে পারে। অতঃপর ইস্‌তিহসান করে বলেন যে, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির আমানত, পুঁজি ও শরীকী ব্যবসা সম্বন্ধীয় স্বীকারোক্তি বৈধ। অথচ নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন যে, তোমরা খারাপ ধারনা থেকে বেঁচে থাক, কেননা খারাপ ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা।

কোন মুসলমানের মাল হালাল নয়; কেননা নাবী (সাঃআঃ) বলেছেন, মুনাফিকের আলামত হল-তার নিকট কিছু আমানত রাখা হলে সে তার খেয়ানত করে।

আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আমানত তার হকদারের নিকট অবশ্যই ফিরিয়ে দিবে”- (আন-নিসা : ৫৮)। এতে তিনি উত্তরাধিকারী কিংবা অন্য কাউকে নির্দিষ্ট করেননি। এই প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) নাবী (সাঃআঃ) থেকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

২৭৪৯. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেন, মুনাফিকের আলামত তিনটি। কথা বললে মিথ্যা কথা বলে, আমানত রাখলে খেয়ানত করে এবং প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে।

৫৫/৯. অধ্যায়ঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ “ঋণ পরিশোধ ও অসীয়ত পূরণ করার পর (মৃতের সম্পত্তি বণ্টন করিতে হইবে)” (আন-নিসা ১১) এর ব্যাখ্যা।

উল্লেখ রয়েছে যে, নাবী (সাঃআঃ) অসীয়তের পূর্বে ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন।

মহান আল্লাহর বাণীঃ “আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা আমানতসমূহ তার হকদারের নিকট ফিরিয়ে দিবে”- (আন-নিসা : ৫৮)। কাজেই নফল অসীয়ত পূরণ করার আগে আমানত আদায়কে অগ্রাধিকার দিতে হইবে। আর নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ স্বচ্ছলতা ব্যতীত সদকা নাই। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, গোলাম তার মালিকের অনুমতি ব্যতীত অসীয়ত করিবে না। নাবী (সাঃআঃ) বলেন, গোলাম তার মালিকের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণকারী।

২৭৫০. হাকীম ইবনু হিযাম (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর নিকট আমি সওয়াল করলাম, তিনি আমাকে দান করিলেন। আবার সওয়াল করলাম, তিনি আমাকে দান করিলেন। অতঃপর তিনি আমাকে বলিলেন, হে হাকীম! এই ধন সম্পদ সবুজ-শ্যামল, মধুর। যে ব্যক্তি দানশীলতার মনোভাব নিয়ে তা গ্রহণ করিবে, তাতে তার বরকত হইবে। আর যে ব্যক্তি প্রতীক্ষা কাতর অন্তরে তা গ্রহণ করিবে, তাতে তার বরকত হইবে না। সে ঐ ব্যক্তির মত যে খায়; কিন্তু তৃপ্ত হয় না। উপরের হাত নীচের হাতের চেয়ে উত্তম। হাকীম (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ পাঠিয়েছেন, আপনার পরে আমি দুনিয়া থেকে বিদায়ের আগে আর কারো কাছে কিছু চাইব না। অতঃপর আবু বকর (রাদি.) কিছু দান করার জন্য হাকীমকে আহব্বান করেন, কিন্তু হাকীম (রাদি.) তাহাঁর নিকট হইতে কিছু গ্রহণ করিতে অস্বীকার করেন। অতঃপর উমর (রাদি.) -ও হাকীম (রাদি.) -কে কিছু দান করার জন্য ডেকে পাঠান, কিন্তু তাহাঁর কাছ থেকেও কিছু গ্রহণ করিতে তিনি অস্বীকার করেন। তখন উমর (রাদি.) বলেন, হে মুসলিম সমাজ! আমি আল্লাহ প্রদত্ত গনীমতের মাল থেকে প্রাপ্য তাহাঁর অংশ তাহাঁর সামনে পেশ করেছি, কিন্তু তিনি তা নিতে অস্বীকার করিয়াছেন; হাকীম (রাদি.) তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত নাবী (সাঃআঃ) -এর পরে আর কারো নিকট কিছু চাননি।

২৭৫১. ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -কে বলিতে শুনিয়াছি তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্ববান এবং তোমাদের প্রত্যেককেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। শাসক হলেন দায়িত্ববান, তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হইবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্ববান এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। স্ত্রী তার স্বামীর ঘরের সম্পদের দায়িত্ববান, তার সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হইবে। গোলাম তার মালিকের ধন-সম্পদের দায়িত্ববান, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হইবে। রাবী বলেন, আমার মনে হয় তিনি এও বলেছেন যে, পুত্র তার পিতার সম্পদের দায়িত্ববান।

৫৫/১০. অধ্যায়ঃ যখন আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওয়াক্‌ফ বা অসীয়ত করা হয় এবং আত্মীয় কারা?

সাবিত (রাদি.) আনাস (রাদি.) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী (সাঃআঃ) আবু তালহাকে বলেন, তুমি তোমার গরীব আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। অতঃপর তিনি বাগানটি হাস্‌সান ও উবাই ইবনু কাবকে -কে দিয়ে দেন। আনসারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার পিতা সুমামা এর মাধ্যমে আনাস (রাদি.) থেকে সাবিত (রাদি.) -এর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন, বাগানটি তোমার গরীব আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। আনাস (রাদি.) বলেন, আবু তালহা (রাদি.) বাগানটি হাস্‌সান ও উবাই ইবনু কাব (রাদি.) -কে দিলেন আর তারা উভয়েই আমার চেয়ে তার নিকটাত্মীয় ছিলেন।

আবু তালহা (রাদি.) -এর সঙ্গে হাস্‌সান এবং উবাই (রাদি.) -এর সম্পর্ক ছিল এরূপঃ আবু ত্বালহা (রাদি.) নাম-যায়দ ইবনু সাহল ইবনু আসওয়াদ ইবনু হারাম ইবনু আমর ইবনু যায়দ যিনি ছিলেন মানাত ইবনু আদী ইবনু আমর ইবনু মালিক ইবনু নাজ্জার। (হাস্‌সানের বংশ পরিচয় হলোঃ) হাস্‌সান ইবনু সাবিত ইবনু মুনযির ইবনু হারাম। কাজেই উভয়ে হারাম নামক পুরুষে মিলিত হন। যিনি তৃতীয় পিতৃপুরুষ ছিলেন এবং হারাম ইবনু আমর ইবনু যায়দ যিনি মানাত ইবনু আদী ইবনু আমর ইবনু মালিক ইবনু নাজ্জার। অতএব হাস্‌সান, আবু তালহা ও উবাই (রাদি.) ষষ্ঠ পুরুষে এসে আমর ইবনু মালিকের সঙ্গে মিলিত হন। আর উবাই হলেন উবাই ইবনু কাব ইবনু কায়স ইবনু উবাইদ ইবনু যায়দ ইবনু মুআবিয়াহ ইবনু আমর ইবনু মালিক ইবনু নাজ্জার। কাজেই আমর ইবনু মালিক এসে হাস্‌সান, আবু তালহা ও উবাই একত্র হয়ে যায়। কারো কারো মতে নিজের আত্মীয়-স্বজনের জন্য অসীয়ত করলে তা তার মুসলিম পিতৃ-পিতামহের জন্য প্রযোজ্য হইবে।

২৭৫২. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আবু তালহা (রাদি.) -কে বলেন আমার মত হলো, তোমার বাগানটি তোমার আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে দাও। আবু তালহা (রাদি.) বলেন, আমি তা-ই করব হে আল্লাহর রাসুল! তাই আবু ত্ব..র হে বনূ আদী! তোমরা সতর্ক হও। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন যে, যখন কুরআনের এই লহা (রাদি.) তার বাগানটি তার আত্মীয়-স্বজন চাচাত ভাইয়ের মধ্যে ভাগ করে দেন। ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলেন, যখন এই আয়াতটি নাযিল হলঃ “(হে মুহাম্মাদ) আপনার নিকট-আত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দেন”– (শুআরা ১৪)। তখন নাবী (সাঃআঃ) কুরায়শ সম্প্রদায়ের বিভিন্ন গোত্রদের ডেকে বলিলেন, “হে বনূ ফিহআয়াত নাযিল হলঃ আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দিন”-(শুআরা ২১৪)। তখন নাবী (সাঃআঃ) বলিলেন, হে কুরায়শ সম্প্রদায়।

৫৫/১১. অধ্যায়ঃ স্ত্রীলোক ও সন্তানাদি আত্মীয়ের মধ্যে কি?

২৭৫৩. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন আল্লাহ তাআলা কুরআনের এই আয়াতটি নাযিল করিলেন, “আপনি আপনার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক করে দিন।” (শুআরা ২১৪)। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, হে কুরায়শ সম্প্রদায়! কিংবা অনুরূপ শব্দ বলিলেন, তোমরা আত্মরক্ষা কর। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করিতে আমি তোমাদের কোন উপকার করিতে পারব না। হে বনূ আবদ মানাফ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করিতে আমি তোমাদের কোন উপকার করিতে পারব না। হে আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করিতে আমি তোমার কোন উপকার করিতে পারব না। হে সাফিয়্যাহ! আল্লাহর রসূলের ফুফু, আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করিতে আমি তোমার কোন উপকার করিতে পারব না। হে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও। আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করিতে আমি তোমার কোন উপকার করিতে পারব না। আসবাগ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইবনু ওয়াহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)….. আবু হুরাইরা (রাদি.) থেকে হাদীস বর্ণনায় আবুল ইয়ামান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) -এর অনুসরণ করিয়াছেন।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply