অল্পে তুষ্টি , উপবাস, ভিক্ষাবৃত্তি ও দুনিয়াদারি ত্যাগ করা
অল্পে তুষ্টি , উপবাস, ভিক্ষাবৃত্তি ও দুনিয়াদারি ত্যাগ করা >> রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন
অল্পে তুষ্টি , উপবাস, ভিক্ষাবৃত্তি ও দুনিয়াদারি ত্যাগ করা
পরিচ্ছদঃ ৫৫- দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
পরিচ্ছদঃ ৫৬ -উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
পরিচ্ছেদ -৫৭ঃ অল্পে তুষ্টি , চাওয়া হতে দূরে থাকা
পরিচ্ছেদ -৫৮ঃ লোভ-লালসায় যে মাল পাওয়া যাবে তা নেওয়া জায়েয
পরিচ্ছেদ -৫৯ঃ স্বহস্তে উপার্জিত খাবার খাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে
পরিচ্ছদঃ ৫৫-দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
৪৬১. . ‘আমর ইবনে ‘আউফ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ একবার আবু উবাইদাহ ইবনে জার্রাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, তোমরা আবু উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।’’ তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করিবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না। বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১৫৮, ৪০১৫, ৬৪২৫, মুসলিম ২৯৬১, তিরমিজী ২৪৬২, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৭, আহমাদ ১৬৭৮৩, ১৮৪৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬২. আবু সাইদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রাসুলুল্লাহ সাঃআঃ মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৬৫, ৯২২, ২৮৪২, ৬৪২৭, মুসলিম ১০৫২, নাসাঈ ২৫৮১, ইবনু মাজাহ ৩৯৯৫, আহমাদ ১০৫৫১, ১০৭৭৩, ১১৪৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৩. উক্ত রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করিয়াছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে।’’
[মুসলিম ২৭৪২, তিরমিজী ২১৯১, ইবনু মাজাহ ৪০০০, আহমাদ ১০৭৫৯, ১০৭৮৫, ১১০৩৪, ১১১৯৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৪. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৩৪, ২৮৩৫, ২৯৬১, ৩৭৯৫, ৩৭৯৬, ৪০৯৯, ৪১০০, ৬৪১৩, ৭২০১, মুসলিম ১৮০৫, তিরমিজী ৩৮৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৪২, আহমাদ ১১৭৬৮, ১২৩১১, ১২৩২১, ১২৩৪৬, ১২৪৩৯, ১২৫৩৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৫. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০, তিরমিজী ২৩৭৯, নাসাঈ ১৯৩৭, আহমাদ ১১৬৭০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৬. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হইতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’। আর জান্নাতীদের মধ্য হইতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।’’
[মুসলিম ২৮০৭, আহমাদ ১২৬৯৯, ১৩২৪৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৭. মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আখেরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।’’
[মুসলিম ২৮৫৮, তিরমিজী ২৩২৩, ইবনু মাজাহ ৪১০৮, আহমাদ ১৭৫৪৭, ১৭৫৪৮, ১৭৫৫৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৮. জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করিবে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা কোনো জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমরা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি পছন্দ কর যে, (বিনামূল্যে) এটা তোমাদের হোক?’’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারণে দোষযুক্ত ছিল। এখন তো সে মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।’’
[মুসলিম ২৯৫৭, আবু দাঊদ ১৮৬, আহমাদ ১৪৫১৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৬৯. আবু যার্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী সাঃআঃ এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, ‘‘হে আবু যার্র! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্য হইতে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য তা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।’’
অতঃপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, ‘‘প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে ব্যয় করে। কিন্তু এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাতই কম।’’
তারপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।’’ এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে, কোনো শত্রু হয়তো নবী সাঃআঃ এর সামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।’’ সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) আমি বললাম, ‘আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম।’ সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি শব্দ শুনেছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘‘তিনি জিব্রাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।’ আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬২৬৮, ১২৩৭, ২৩৮৮, ৩২২২, ৫৮২৭, ৬৪৪৩, ৬৪৪৪, ৭৪৮৭, মুসলিম ৯৪, তিরমিজী ২৬৪৪, আহমাদ ২০৮৪০, ২০৯০৫, ২০৯১৫, ২০৯৫৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭০. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হইতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৩৮৯, ৬৪৪৫, ৭২২৮, মুসলিম ৯৯১, ইবনু মাজাহ ৪১৩২, আহমাদ ৭৪৩৫, ২৭৪১২, ৮৩৮৯, ৮৫৭৮, ৮৯২৭, ৯১৪৫, ২৭২২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭১. উক্ত সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘(দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমাদের মধ্যে যে নীচে তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকায়ো না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছ মনে করিবে না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৯০, মুসলিম ২৯৬৩, আহমাদ ২৭৩৬৪, ৯৮৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭২. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উত্তম পোশাক-আশাক ও উত্তম চাদরের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৮৮৭, ৭৪৩৫, তিরমিজী ২৫৭৫, ইবনু মাজাহ ৪১৩৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৩. উক্ত সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৪২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৪. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’’
[মুসলিম ২৯৫৬, তিরমিজী ২৩২৪, ইবনু মাজাহ ৪১১৩, আহমাদ ৮০৯০, ২৭৪৯১, ৯৯১৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৫. ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১৬, তিরমিজী ২৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৪১১৪, আহমাদ ৪৭৫০, ৪৯৮২, ৬১২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৬. আবুল আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃ এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।’’
[ইবনে মাজাহ প্রমুখ, হাসান সূত্রে, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৪৪নং) (ইবনু মাজাহ ৪১০২)হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৭৭. নু‘মান ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’
[মুসলিম ২৯৭৭, ২৯৭৮, তিরমিজী ২৩৭২, ইবনু মাজাহ ৪১৪৬, আহমাদ ২৪২৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৮. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলল্লাহ সাঃআঃ এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন যে, তখন একটা প্রাণীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ঘরে ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্তু যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০৯৭, ৬৪৫১, মুসলিম ২৯৭৩, তিরমিজী ২৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৫, আহমাদ ২৪২৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৭৯. উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারেসের ভাই ‘আমর ইবনে হারেস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর মৃত্যুর সময় কোনো দীনার, দিরহাম, ক্রীতদাস, ক্রীতদাসী এবং কোনো জিনিসই ছেড়ে যাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার উপর তিনি সওয়ার হইতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ করে গেছেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৪৬১, ২৭৩৯, ২৮৭৩, ২৯১২, ৩০৯৮, নাসাঈ ৩৫৯৪, ৩৫৯৫, ৩৫৯৬, আহমাদ ১৭৯৯০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮০. খাব্বাব ইবনে আরাত্ত্ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমরা আল্লাহর চেহারা (সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে (মদীনা) হিজরত করলাম। যার সওয়াব আল্লাহর নিকট আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের কেউ এ সওয়াব দুনিয়াতে ভোগ করার পূর্বেই বিদায় নিলেন। এর মধ্যে মুস‘আব ইবনে উমাইর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু; তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন এবং শুধুমাত্র একখানা পশমের রঙিন চাদর রেখে গেলেন। আমরা (কাফনের জন্য) তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর পা বেরিয়ে গেল। আর পা ঢাকলে তাঁর মাথা বেরিয়ে গেল। তাই রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, ‘‘তা দিয়ে ওর মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর ‘ইযখির’ ঘাস বিছিয়ে দাও।’’ আর আমাদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছেন, যাঁদের ফল পেকে গেছে। আর তাঁরা তা সংগ্রহ করছেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১২৭৬, ৩৮৯৭, ৩৯১৪, ৪০৪৭, ৪০৮২, ৬৪৩২, ৬৪৪৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮১. সাহল ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’
[তিরমিজী ২৩২০, ইবনু মাজাহ ৪১১০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮২. আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর যিক্র এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও তালেবে-,ইল্ম নয়।’’
[তিরমিজী ২৩২২, ইবনু মাজাহ ৪১১২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৮৩. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা জমি-জায়গা, বাড়ি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।’’
[তিরমিজী ২৩২৮, আহমাদ ৩৫৬৯, ৪০৩৮, ৪২২২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮৪. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এমতাবস্থায় যে, আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘এটা কী?’’ আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি ব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী ভাবছি।’’
[তিরমিজী ২৩৩৫, আবু দাঊদ ৫২৩৫, ইবনু মাজাহ ৪১৬০, আহমাদ ৬৪৬৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮৫. কা‘ব ইবনে ‘ইয়ায রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃকে বলতে শুনেছি; ‘‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল।’’
[তিরমিজী ২৩৩৬, আহমাদ ১৭০১৭) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৮৬. আবু ‘আমর ‘উসমান ইবনু আফ্ফান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নাবী সাঃআঃ বলেছেন: আদম সন্তানের তিনটি বস্তু ব্যতীত কোন বস্তুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাস করার জন্য একটি বাড়ি, শরীর আবৃত করার জন্য কিছু কাপড় এবং কিছু রুটি ও পানি। হাদীসটি তিরমিজী বর্ণনা করে বলেন, এটি সহীহ হাদীস।
আমি (আলবানী) বলছিঃ বরং হাদীসটি দুর্বল। এর সনদ দুর্বল হওয়ার দু’টি কারণ রয়েছে। ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (১০৬৩) এর দুর্বল হওয়ার কারণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। (১) বর্ণনাকারী হুরাইস ইবনুস সায়েব সম্পর্কে ইমাম আহমাদ বলেনঃ তার সমস্যা ছিল না কিন্তু তিনি উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু এর উদ্ধৃতিতে নবী সাঃআঃ হইতে এ মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, অথচ এটি নবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত হয়নি। আর সাজী তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। (২) দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এই যে, হাদীসটি আসলে ইসরাঈলী কোন এক ব্যক্তি হইতে বর্ণিত হয়েছে। দারাকুতনীকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেনঃ হুরাইস সন্দেহ্ করিয়াছেন। সঠিক হচ্ছে এই যে, হাসান ইবনু হুমরান কোন এক কিতাবী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ উক্ত নম্বরে।
হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
৪৮৭. আব্দুল্লাহ ইবনে শিখ্খীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি নবী সাঃআঃ এর নিকট এলাম, এমতাবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুমি খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথবা যা তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদকাহ করে (আখেরাতের জন্য) জমা রেখেছ।’’
[মুসলিম ২৯৫৮, তিরমিজী ২৩৪২, নাসাঈ ৩৬১২, আহমাদ ১৫৮৭০, ১৫৮৮৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৮৮. আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল হইতে বর্ণিতঃ
একদা এক ব্যক্তি নবী সাঃআঃকে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল।’’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, ‘‘যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার নিকট আগমন করিবে।’’
[হাদীসটিকে শাইখ আলবানী প্রথমে দুর্বল আখ্যা দিলেও তিনি পরবর্তীতে পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসেন এবং ‘‘সিলসিলাহ্ সহীহাহ্’’ গ্রন্থে (২৮২৭) সহীহ্ আখ্যা দেন। তিরমিজী ২৩৫০) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৮৯. কা‘ব ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘ছাগলের পালে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশী ক্ষতিকারক।’’
[তিরমিজী ২৩৭৬, আহমাদ ১৫৩৫৭, ১৫৩৬৭, দারেমী ২৭৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯০. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ একদা চাটাই-এর উপর শুলেন। অতঃপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে তার দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমি তো (এ) জগতে ঐ সওয়ারের মত যে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য) গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।’’
[তিরমিজী ২৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১১৬৯, আহমাদ ৩৭০১, ৪১৯৬) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৯১. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘গরীব মু’মিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।’’
[তিরমিজী ২৩৫৩, ২৩৫৪, ইবনু মাজাহ ৪১২২, আহমাদ ৭৮৮৬, ৮৩১৬, ২৭৭৯৩, ১০২৭৬, ১০২৫২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯২. ইবনে আব্বাস ও ইমরান ইবনে হুসাইন হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩২৪১, ৫১৯৮, ৬৪৪৯, ৬৫৪৬, মুসলিম ২৭৩৮, তিরমিজী ২৬০৩, আহমাদ ১৯৩১৫, ১৯৪২৫, ১৯৪৮০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯৩.ইমাম বুখারী হইতে বর্ণিতঃ
উক্ত হাদীসকে ইমরান ইবনে হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করিয়াছেন।
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯৪. উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, সেখানে অধিকাংশ নিঃস্ব লোক রয়েছে। আর ধনবানরা তখনো (হিসাবের জন্য) অবরুদ্ধ রয়েছে। অথচ দোযখীদেরকে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬, আহমাদ ২১২৭৫, ২১৩১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯৫. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে সত্য কথা যা কোন কবি বলেছেন, তা হল লাবীদ (কবির) কথা, (তিনি বলেছেন,) ‘শোনো, আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই বাতিল।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৮৪১, ৬১৪৭, ৬৪৮৯, মুসলিম ২২৫৬, তিরমিজী ২৮৪৯, ইবনু মাজাহ ৩৭৫৭, আহমাদ ৭৩৩৬, ৮৮৪০, ৮৮৬৬, ৯৪৪৪, ৯৫৯০, ৯৭২৪, ৯৮৭০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৫৬ -উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
৪৯৬. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
‘মুহাম্মাদ সাঃআঃ এর পরিজন তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪১৬, ৫৪২৩, ৫৪৩৮, ৬৪৫৪, ৬৬৮৭, মুসলিম ২৯৭০, তিরমিজী ২৩৫৭, নাসাঈ ৪৪৩২, ইবনু মাজাহ ৩১৫৯, ৩৩১৩, ৩৩৪৪, ৩৩৪৬, আহমাদ ২৩৬৩১, ২৩৮৯৯, ২৪১৪৪, ২৪৪৪১, ২৪৪৪২, ২৪৫২৬, ২৪৬৯৮, ২৫১০১৩, ২৫২২৩, ২৫২৯৭, দারেমী ১৯৫৯) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৪৯৭. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
, তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৫৬৭, ৬৪৫৮, ৬৪৫৯, মুসলিম ২৯৭২, তিরমিজী ২৪৭১, ইবনু মাজাহ ৪১৪৪, ৪১৪৫, আহমাদ ১৩৭১২, ১৩৮৯৯, ১৪০৪০, ২৪২৪৭, ২৪৯৬৩, ২৫৪৭৩, ২৫৫৪৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯৮. আবু সা‘ঈদ মাক্ববুরী হইতে বর্ণিতঃ
, একদা আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে (খেতে) ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪১৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৪৯৯. আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ কখনো (টেবিল জাতীয় উঁচু স্থানে) এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পাতলা (চাপাতি) রুটি খাননি। বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, আর তিনি কখনোও ভুনা (গোটা) বকরী স্বচক্ষে দেখেননি।
অবশ্য অন্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তিনি ঐ শ্রেণীর উঁচু স্থানে রেখে খাবার খেতেন। সুতরাং ঐভাবে খাওয়া অবৈধ নয়।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪২১, ৫৩৮৫, ৫৩৮৬, ৫৪১৫, ৬৪৫০, ৬৪৫৭, তিরমিজী ১৭১৮, ২৩৬৩, ইবনু মাজাহ ৩২৯২, ৩২৯৩, ৩৩৩৯, আহমাদ ১১৮৮৭, ১১৯১৬, ১১৯৬৫, ১৩১৯৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০০. নু‘মান ইবনে বাশীর রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে, সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’
[মুসলিম ২৯৭৭, ২৯৭৮, তিরমিজী ২৩৭২, ইবনু মাজাহ ৪১৪৬, আহমাদ ১৬০, ১৭৮৯২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০১. সাহ্ল ইবনে সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহ তা‘আলা যখন থেকে রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে (রসূলরূপে) পাঠিয়েছেন, তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত (চালুনে চালা) ময়দা দেখেননি। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর যুগে কি আপনাদের আটা চালার চালুনি ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে (রসূলরূপে) পাঠানোর পর থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত তিনি আটা চালার চালুনি দেখেননি।’ তাঁকে বলা হল, ‘তাহলে আপনারা আচালা যবের আটা কিভাবে খেতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা যব পিষে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার উড়ে যেত, আর যা অবশিষ্ট থাকত তা ভিজিয়ে খামীর বানাতাম।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪১৩, ৫৪১০, তিরমিজী ২৩৬৪, ইবনু মাজাহ ৩৩৩৫, আহমাদ ২২৩০৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০২. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কোন একদিন অথবা কোন এক রাতে (ঘর থেকে) বের হলেন, অতঃপর অকস্মাৎ আবু বাক্র ও উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) এর সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তিনি বললেন, ‘‘এ সময় তোমরা বাড়ী থেকে কেন বের হয়েছ?’’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। আমিও সেই কারণে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, যে কারণে তোমরা বের হয়েছ। তোমরা ওঠো (এবং আমার সঙ্গে চল)।’’ অতঃপর তাঁরা দু’জনে তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। তারপর তিনি এক আনসারীর বাড়ী এলেন। আনসারী সে সময় বাড়ীতে ছিলেন না। যখন তাঁর স্ত্রী নবী সাঃআঃকে দেখলেন তখন অভ্যর্থনা ও স্বাগত জানালেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে বললেন, ‘‘অমুক (আনসারী) কোথায়?’’ তিনি বললেন, ‘আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন।’ এর মধ্যে আনসারী এসে গেলেন। তিনি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ, আজ আমার (বাড়ীর) চেয়ে সম্মানিত মেহমান কারো (বাড়ীতে) নেই।’ অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং খেজুরের একটা কাঁদি আনলেন, যাতে কাঁচা, শুকনো এবং পাকা (টাটকা) খেজুর ছিল। অতঃপর আনসারী বললেন, ‘আপনারা খান এবং তিনি নিজে ছুরি ধরলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁকে বললেন, ‘‘দুধালো ছাগল জবাই করো না।’’ অতঃপর তিনি (ছাগল) জবাই করলেন। তাঁরা ছাগলের (মাংস) খেলেন, ঐ খেজুর কাঁদি থেকে খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। তারপর তাঁরা যখন (পানাহার করে) পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আবু বাক্র ও উমার (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)কে বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! নিশ্চয় তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করেছিল, কিন্তু এখন এ নিয়ামত উপভোগ করে নিজেদের (বাড়ী) ফিরে যাচ্ছ।’’
[মুসলিম ২০৩৮, তিরমিজী ২৩৬৯, ইবনু মাজাহ ৩১৮০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৩. খালেদ ইবনে উমাইর আদাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, একদা বাসরার গভর্নর উত্বাহ ইবনে গাযওয়ান খুতবাহ দিলেন। তিনি (খুতবায় সর্বপ্রথমে) আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘আম্মা বাদ! নিশ্চয় দুনিয়া তার ধ্বংসের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে এবং সে মুখ ফিরিয়ে দ্রুতগতিতে পলায়মান আছে। এখন তার (বয়স) পাত্রের তলায় অবশিষ্ট পানীয়র মত বাকী রয়ে গেছে, যা পাত্রের মালিক (সবশেষে) পান করে। (আর তোমরা এ দুনিয়া থেকে এমন (পরকালের) গৃহের দিকে প্রত্যাবর্তন করছ যার ক্ষয় নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের সামনের উত্তম জিনিস নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। কারণ, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, জাহান্নামের উপর কিনারা থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা ওর মধ্যে সত্তর বছর পর্যন্ত পড়তে থাকবে, তবুও তা তার গভীরতায় (শেষ প্রান্তে) পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নামকে (মানুষ দিয়ে) পরিপূর্ণ করে দেওয়া হবে। তোমরা এটা আশ্চর্য মনে করছ? আর আমাদেরকে এও জানানো হয়েছে যে, জান্নাতের দুয়ারের দু’টি চৌকাঠের মধ্যভাগের দূরত্ব চল্লিশ বছরের পথ। তার উপর এমন এক দিন আসবে যে, তাতে লোকের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকবে।
আমি (ইসলাম প্রচারের শুরুতে) রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে সাত জনের মধ্যে একজন ছিলাম। (তখন আমাদের এ অবস্থা ছিল যে,) গাছের পাতা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এমনকি (তা খেয়ে) আমাদের কশে ঘা হয়ে গেল। (সে সময়) আমি একখানি চাদর কুড়িয়ে পেলাম, অতঃপর তা আমি দু’টুকরো করে আমার এবং সা‘দ ইবনে খালেদের মধ্যে ভাগ করে নিলাম। তারপর আমি তার অর্ধেকটাকে লুঙ্গী বানিয়ে পরলাম এবং সা‘দও অর্ধেক লুঙ্গী বানিয়ে পরলেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের শাসনকর্তা হয়ে আছে। আর আমি নিজের কাছে বড় এবং আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
[মুসলিম ২৯৬৭, তিরমিজী ২৫৭৫, ইবনু মাজাহ ৪১৫৬, আহমাদ ১৭১২৩, ২০০৮৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৪. আবু মূসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাদের জন্য একখানি চাদর এবং একখানি মোটা লুঙ্গী বের করে বললেন, ‘এ দু’টি (পরে থাকা অবস্থা)তেই রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মৃত্যুবরণ করিয়াছেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩১০৮, ৫৮১৮, মুসলিম ২০৮০, তিরমিজী ১৭৩৩, আবু দাঊদ ৪০৩৬, ইবনু মাজাহ ৩৫৫১, আহমাদ ২৩৫১৭, ২৪৪৭৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৫. সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সাথে থেকে যুদ্ধ করি, তখন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, হুবলাহ গাছের পাতা ও এই বাবলা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকেই ছাগলের লাদির মত মলত্যাগ করতেন; যার একটি আরেকটির সাথে মিশত না।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৫৫, ৭৫৮, ৭৭০, ৩৭২৮, ৫৪১২, ৬৪৫৩, মুসলিম ৪৫৩, ২৯৬৬, তিরমিজী ২৩৬৫, নাসাঈ ১০০২, ১০০৩, আবু দাঊদ ৮০৩, ইবনু মাজাহ ১৩১, আহমাদ ১৫১৩, ১৫৫১, ১৫৬০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৬. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ দু‘আ করতেন, ‘‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাঃআঃ এর পরিবার-পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান কর।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৪৬০, মুসলিম ১০৫৫, তিরমিজী ২৩৬১, ইবনু মাজাহ ৪১৩৯, আহমাদ ৭১৩৩, ৯৪৬১, ৯৮৭৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৭. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, তিনি বলেন, সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! আমি ক্ষুধার জ্বালায় মাটিতে কলিজা (পেট) লাগাতাম এবং পেটে পাথর বাঁধতাম। একদিন লোকেরা যে রাস্তায় বের হয়, সে রাস্তায় বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নবী সাঃআঃ আমাকে অতিক্রম করা কালীন সময়ে দেখে মুচকি হাসলেন এবং আমার চেহারার অবস্থা ও মনের কথা বুঝে ফেলে বললেন, ‘‘আবু হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আমার পিছন ধর।’’ সুতরাং তিনি চলতে লাগলেন এবং আমি তাঁর অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি (নিজ ঘরে) প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি আমার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারা আমার জন্য অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। ঘরে এক পিয়ালা দুধ (দেখতে) পেলেন। তিনি বললেন, ‘‘এ দুধ কোত্থেকে এল?’’ তারা বলল, ‘আপনার জন্য অমুক লোক বা মহিলা উপঢৌকন পাঠিয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আবু হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আহলে সুফ্ফাদের ডেকে আন।’’ তাঁরা ইসলামের মেহমান ছিলেন, তাঁদের কোন আশ্রয় ছিল না। ছিল না কোন পরিবার ও ধন-সম্পদ বা অন্য কিছু। (সাদকাহ ও হাদিয়াতে তাঁদের জীবন কাটত।) তাঁর নিকট কোন সাদকাহ এলে তিনি সবটুকুই তাঁদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। তা থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর কোন হাদিয়া বা উপঢৌকন এলেও তাঁদের নিকট পাঠাতেন। কিন্তু তা থেকে কিছু গ্রহণ করতেন এবং তাঁদেরকে তাতে শরীক করতেন। (তিনি যখন তাঁদেরকে ডাকতে বললেন,) তখন আমাকে খারাপ লাগল। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘এই টুকু দুধে আহলে সূফ্ফাদের কী হবে? আমিই তো বেশী হকদার যে, এই দুধ পান করে একটু শক্তিশালী হতাম। কিন্তু যখন তাঁরা আসবেন এবং তিনি আমাকে আদেশ করলে আমি তাঁদেরকে দুধ পরিবেশন করব। তারপর আমার ভাগে এই দুধের কতটুকুই বা জুটবে!’ অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মান্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না। সুতরাং আমি তাঁদের নিকট এসে তাঁদেরকে ডাকলাম। তাঁরা এসে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আবু হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পিয়ালা নাও এবং ওদেরকে দাও।’’ সুতরাং আমি পিয়ালাটি নিয়ে এক একজনকে দিতে লাগলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। এইভাবে পরিশেষে নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে উপস্থিত হলাম। সে পর্যন্ত তাঁদের সবাই পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পিয়ালাটি নিয়ে নিজের হাতে রাখলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আবু হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘এখন বাকী আমি আর তুমি।’’ আমি বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘বসো এবং পান কর।’’ আমি বসে পান করলাম। তিনি আবার বললেন, ‘‘পান কর।’’ সুতরাং আমি আবার পান করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে পান করার কথা বলতেই থাকলেন। পরিশেষে আমি বললাম, ‘না। (আর পারব না।) সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করিয়াছেন, এর জন্য আমার পেটে আর কোন জায়গা নেই!’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘কৈ আমাকে দেখাও।’’ সুতরাং আমি তাঁকে পিয়ালা দিলে তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৩৭৫, ৬২৪৬, ৬৪৫২, তিরমিজী ২৪৭৭, আহমাদ ১০৩০১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৮. মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর মিম্বর এবং আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহার কক্ষের মধ্যস্থলে (ক্ষুধার জ্বালায়) বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর আগন্তুক আসত এবং আমাকে পাগল মনে করে সে তার পা আমার গর্দানের উপর রাখত, অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামি ছিল না। কেবলমাত্র ক্ষুধা ছিল। (যার তীব্রতায় আমি চৈতন্য হারিয়ে ফেলতাম!)’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৭৩২৪, তিরমিজী ২৩৬৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫০৯. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর বর্ম ত্রিশ সা’ (প্রায় ৭৫ কেজি) যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৬৮, ২০৯৬, ২২০০, ২২৫১, ২২৫২, ২৩৮৬, ২৫০৯, ২৫১৩, ২৯১৬, ৪৪৬৭, মুসলিম ১৬০৩, নাসাঈ ৪৬০৯, ৪৬৫০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৬, আহমাদ ২৩৬২৬, ২৪৭৪৬, ২৫৪০৩, ২৫৪৬৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১০. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘নবী সাঃআঃ যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর আমি নবী সাঃআঃ এর কাছে যবের রুটি ও (নষ্ট হওয়া) দুর্গন্ধময় পুরানো চর্বি নিয়ে গেছি। আমি তাঁকে (নবী সাঃআঃকে) বলতে শুনেছি যে, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি কোন খাদ্যবস্তু) থাকে না।’’ (আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) তখন তাঁরা মোট নয় ঘর (পরিবার) ছিলেন।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৬৯, ২৫০৮, তিরমিজী ১২১৫, নাসাঈ ৪৫১০, ইবনু মাজাহ ২৪৩৭, ৪১৪৭, আহমাদ ১১৫৮২, ১১৯৫২, ১২৭৫৭, ১৩০২৩, ১৩০৮৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১১. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪৪২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১২. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর বিছানা চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল খেজুর গাছের ছোবড়া।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৫৬, মুসলিম ২০৮২, তিরমিজী ১৭৬১, আবু দাঊদ ৪১৪৬, ৪১৪৭, ইবনু মাজাহ ৪১৫১, আহমাদ ২৩৬৮৯, ২৩৭৭২, ২৩৯৩০, ২৪২৪৭, ২৫২০১, ২৫২৪৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৩. ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে ছিলাম, ইতোমধ্যে এক আনসারী এলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। অতঃপর আনসারী ফিরে যেতে লাগলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘হে আনসারের ভাই! আমার ভাই সা‘দ ইবনে উবাদাহ কেমন আছে?’’ তিনি বললেন, ‘ভাল আছে।’ তারপর রাসূলুললাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কে তাকে (অসুস্থ সা‘দকে) দেখতে যাবে?’’ সুতরাং তিনি উঠে দাড়ালেন এবং আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। আমরা দশের কিছু বেশী ছিলাম। আমাদের দেহে জুতো, মোজা, টুপী এবং জামা কিছুই ছিল না। আমরা ঐ পাথুরে যমিনে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা সা‘দ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট পৌঁছে গেলাম। তার গৃহবাসীরা তাঁর নিকট থেকে সরে গেল, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাঁর সাহাবীগণ তাঁর নিকটবর্তী হলেন।
[মুসলিম ৯২৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৪. আবু উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’
[মুসলিম ১০৩৬, তিরমিজী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৫. আবু উমামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’
[মুসলিম ১০৩৬, তিরমিজী ২৩৪৩, আহমাদ ২১৭৫২)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৬. উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহস্বান আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’
[তিরমিজী ২৩৪৬, ইবনু মাজাহ ৪১৪১) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৫১৭. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল আ’স রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করিয়াছেন।’’
[মুসলিম ১০৫৪, তিরমিজী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৮. আবু মুহাম্মাদ ফাযালা ইবনে উবাইদ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে (যা পেয়েছে তাতে) পরিতুষ্ট আছে।’’
[তিরমিজী ২৩৪৯, আহমাদ ২৩৪২৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫১৯. ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’
[তিরমিজী ২৩৬০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৭, আহমাদ ২৩০৩, ৩৫৩৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২০. ফাযালাহ ইবনে ‘উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’
[তিরমিজী ২৩৬৮, আহমাদ ২৩৪২০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২১. আবু কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়র জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’
[তিরমিজী ২৩৮০, ইবনু মাজাহ ৩৩৪৯, আহমাদ ১৬৭৩৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৫২২. আবু উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা।
البذاذة হল সাদাসিধা বেশভূষা ব্যবহার করা এবং জাঁকজমক তথা আড়ম্বরপূর্ণ লেবাস বর্জন করা। আর التقحل হল শৌখিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করার সাথে রুক্ষ-শুষ্ক দেহ অবলম্বন করা। (এ উভয়ই মু’মিনের গুণ।)
[আবু দাঊদ ৪১৬১, ইবনু মাজাহ ৪১১৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২৩. আবু আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদেরকে (এক অভিযানে) পাঠালেন এবং আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আমাদের নেতা বানালেন। (আমাদেরকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল,) আমরা যেন কুরাইশের এক কাফেলার পশ্চাদ্ধাবন করি। তিনি আমাদেরকে পাথেয় স্বরূপ এক থলি খেজুর দিলেন। আমাদেরকে দেওয়ার মত এ ছাড়া অন্য কিছু পেলেন না। সুতরাং আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদেরকে একটি একটি করে খেজুর দিতেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনারা সেটা দিয়ে কী করতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা তা বাচ্চার চুষার মত চুষতাম, তারপর পানি পান করতাম। সুতরাং এটা আমাদের জন্য সারাদিন রাত পর্যন্ত যথেষ্ট হত। আর আমরা লাঠি দ্বারা গাছের পাতা ঝরাতাম, তারপর তা পানিতে ভিজিয়ে খেতাম।
আমরা (একবার) সমুদ্র উপকূলে পথ চলছিলাম, অতঃপর সমুদ্রতীরে বালির বড় ঢিবির মত একটি জিনিস দেখতে পেলাম। এরপর তার কাছাকাছি এসে দেখলাম যে, একটা বড় জন্তু, যাকে আম্বার (মাছ) বলা হয়।’ আবু উবাইদাহ বললেন, ‘এটা তো মৃত (ফলে তা আমাদের জন্য অবৈধ)।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘না (অবৈধ নয়) বরং আমরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর দূত এবং আল্লাহর পথে (বের হয়েছি) আর তোমরা (এখন) নিরুপায়, সেহেতু খাও।’
সুতরাং আমরা তিনশ’জন লোক একমাস তারই দ্বারা জীবনধারণ করলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা মোটা হয়ে গেলাম। আমরা ঐ জন্তুর চোখের গর্ত থেকে ঘড়া ঘড়া তেল বের করতাম এবং বলদের মত মাংসের ফালি কাটতাম। একদা আবু উবাইদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের মধ্য হইতে তেরো জনকে নিয়ে ঐ মাছের একটি চোখের কোটরে বসিয়ে দিলেন। আর তার পাঁজরের একখানি হাড় নিয়ে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমাদের সব চেয়ে বড় উটটার উপর হাওদা চাপিয়ে তার নীচে দিয়ে পার করে দিলেন। আমরা তার মাংস ফালি পাথেয় স্বরূপ সাথে নিলাম। অতঃপর যখন আমরা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর নিকট এলাম এবং তাঁর কাছে ঐ মাছের কথা আলোচনা করলাম, তখন তিনি বললেন, ‘‘তা জীবিকা ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য বের করেছিলেন। আমাদেরকে খাওয়ানোর মত তোমাদের কাছে তার কিছু মাংস আছে কি?’’ (এ কথা শুনে) আমরা তাঁর নিকট কিছু মাংস পাঠালাম, সুতরাং তিনি তা ভক্ষণ করলেন।
[মুসলিম ১৯৩৫, সহীহুল বুখারী শরীফ ২৪৮৩, ৫২৪৩, তিরমিজী ২৪৭৫, নাসাঈ ৪৩৫১, ৪৩৫২, ৪৩৫৩, ৪৩৫৪, আবু দাঊদ ৩৮৪০, ইবনু মাজাহ ৪১৫৯, আহমাদ ১৩৮৪৪, ১৩৮৭৪, ১৩৯০৩, ১৩৯২৬, ১৪৬২৯, মুওয়াত্তা মালিক ১৭৩০, দারেমী ২০১২)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২৪. আসমা বিনতু ইয়াযীদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর জামার হাতা ছিলো কব্জি পর্যন্ত। (তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
আমি (আলবানী) বলছিঃ এর মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। দেখুন ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ (২৪৫৮)। এর সনদের মধ্যে শাহ্র ইবনু হাওশাব নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তিনি মন্দ হেফ্য শক্তির কারণে দুর্বল। হাফেয ইবনু হাজার ‘‘আত্তাক্বরীব’’ গ্রন্থে বলেনঃ তিনি সত্যবাদী, বেশী বেশী মুরসাল এবং সন্দেহমূলক বর্ণনাকারী। আবু হাতিম ও ইবনু আদী প্রমুখও বলেছেন তার হেফ্য শক্তিতে দুর্বলতা ছিল।
[দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ হাদীস নং ৬৮৩৬]। হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস
৫২৫. জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম। সেই সময় এক খন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে এলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী সাঃআঃ এর নিকট এসে বললেন, ‘খন্দকের মধ্যে এক খন্ড পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাঙ্গতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘‘আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব।’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন। সে সময়ে তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও অনাহারে ছিলাম; তিনদিন কোন কিছুই খাইনি। নবী সাঃআঃ (এসে) একটি গাঁইতি হাতে নিয়ে পাথরের উপর আঘাত করলেন, ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকা রাশিতে পরিণত হল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বাড়ী যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন।’ (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ী পৌঁছে) আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘নবী সাঃআঃ এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখেছি, যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি?’ সে বলল, ‘আমার নিকট কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে।’
সুতরাং বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম এবং সে যব পিষে দিল। অতঃপর গোশ্ত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী সাঃআঃ এর নিকট এলাম। সে সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার ঝিঁকের উপর ছিল ও গোশ্ত প্রায় রান্না হয়ে এসেছিল। তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার (বাড়ীতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। ফলে একজন বা দু’জন সাথে নিয়ে আপনি উঠে আসুন।’ তিনি বললেন, ‘‘ কী পরিমাণ খাবার আছে?’’ আমি তাঁর নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, ‘অনেক এবং উত্তম আছে।’ অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত ডেকচি চুলা থেকে না নামায় এবং রুটি তৈরী না করে।’’ তারপর (সকলের উদ্দেশ্যে) তিনি বললেন, ‘‘তোমরা উঠ! (জাবির তোমাদেরকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছে।)’’ মুহাজির ও আনসারগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন)। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার সর্বনাশ হোক! (এখন কী হবে?) নবী সাঃআঃ তো মুহাজির, আনসার এবং তাদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন।’ তিনি (জাবেরের স্ত্রী) বললেন, ‘তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ (স্ত্রী বললেন, ‘তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন। আমাদের কাছে যা আছে তা তো আপনি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন।’ জাবের বলেন, তখন আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূর হল। আমি বললাম, ‘তুমি ঠিকই বলেছ।’) তারপর নবী সাঃআঃ উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘‘তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করো না।’’ এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে তার উপর গোশ্ত দিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি ও চুলা ঢেকে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে তৃপ্তি সহকারে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি (জাবেরের স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘এ তুমি খাও এবং অন্যকে উপহার দাও। কেননা, লোকদেরকে ক্ষুধা পেয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন পরিখা খনন করা হল, তখন আমি নবী সাঃআঃকে ভুখা দেখলাম। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার নিকট কোন (খাবার) জিনিস আছে কি? কেননা, আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত দেখলাম।’ সুতরাং সে একটি চামড়ার থলি বের করল, যাতে এক সা’ (আড়াই কিলো পরিমাণ) যব ছিল। আর আমাদের নিকট একটি গৃহপালিত ছাগলের বাচ্চা ছিল। আমি তা জবাই করলাম এবং আমার স্ত্রী যব পিষল। আমার (মাংস বানানোর কাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত) সেও যব পিষার কাজ সেরে নিল। পুনরায় আমি মাংস টুকরো টুকরো করে হাঁড়িতে রাখলাম। তারপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট যেতে লাগলাম। সে বলল, ‘আপনি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ ও তাঁর সাথীদের কাছে আমাকে লাঞ্ছিত করিবেন না।’ সুতরাং আমি তাঁর নিকট এলাম এবং চুপি চুপি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আমাদের একটি ছাগল জবাই করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যব পিষেছে। সুতরাং আপনি আসুন এবং আপনার সাথে কিছু লোক।’ এ কথা শুনে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ চিৎকার করে বললেন, ‘‘হে পরিখা খননকারীরা! জাবের খাবার তৈরী করেছে, তোমরা এসো।’’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাকে বললেন, ‘‘যে পর্যন্ত আমি না আসি, সে পর্যন্ত তুমি চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না এবং আটার রুটি তৈরী করিবে না।’’ অতঃপর আমি এলাম এবং নবী সাঃআঃও এলেন। তিনি লোকদের আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। পরিশেষে আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলাম (এবং তাকে সকলের আসার সংবাদ দিলাম)। সে আমাকে ভৎর্সনা করতে লাগল। আমি বললাম, ‘(এতে আমার দোষ কি?) আমি তো তা-ই করেছি যা তুমি আমাকে বলেছিলে।’ (যাই হোক) সে খমীর বের করে দিল। তিনি তাতে থুতু মারলেন এবং বরকতের দোআ করলেন। তারপর তিনি আমাদের ডেকচির নিকট গিয়ে তাতেও থুতু মারলেন এবং বরকতের দোআ করলেন। আর তিনি (আমার স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘একজন মহিলা ডাকো; সে তোমার সাথে রুটি তৈরী করুক এবং তুমি ডেচকি থেকে (মাংস) পাত্রে দিতে থাক, কিন্তু চুলা থেকে তা নামাবে না।’’
তাঁরা সংখ্যায় এক হাজার ছিলেন। জাবের বলেন, আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যে, ‘সকলেই খাবার খেলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কিছু অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। আর আমাদের ডেকচি আগের মত ফুটতেই থাকল এবং আমাদের আটা থেকে রুটি প্রস্তুত হইতেই রইল।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩০৭০, ৪১০১, ৪১০২, মুসলিম ২০৩৯, তিরমিজী ২৮৪২, আহমাদ ১৩৭৯৯, ১৩৮০৯, ১৪৬১০, দারেমী ৪২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২৬. আনাস ইবনে মালেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
[একদা আমার সৎবাপ) আবু ত্বালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমাকে আবু ত্বালহা পাঠিয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কোন খাবারের জন্য নাকি?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, ‘‘ওঠ।’’ সুতরাং তাঁরা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবু ত্বালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবু ত্বালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবু তালহা (আগে) গিয়ে রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রসুলুল্লাহ সাঃআঃ তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কি কি বলে (ফুঁক) দিলেন। তারপর বললেন, ‘‘দশজনকে আসতে বল।’’ তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া করলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে এবং বের হইতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা করে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে।
অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন করে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাঃআঃ এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন।
আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পটি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রসুলুল্লাহ সাঃআঃ কেন তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবু ত্বালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা! আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’ অতঃপর আবু ত্বালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪২২, ৩৫৭৮, ৫৩৮১, ৫৪৫০, ৫৬৮৮, মুসলিম ২০৪০, তিরমিজী ৩৬৩০, আহমাদ ১২০৮২, ১২৮৭০, ১৩০১৫, ১৩১৩৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৭২৫, দারেমী ৪৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৫৭ -অল্পে তুষ্টি, চাওয়া হইতে দূরে থাকা এবং মিতাচারিতা ও মিতব্যয়িতার মাহাত্ম্য এবং অপ্রয়োজনে চাওয়ার নিন্দাবা/পাশাদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ ৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করিবে। আমি তাদের নিকট হইতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।” (সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বের দুই পরিচ্ছেদে অধিকাংশ হাদীস পার হয়েছে। আরো কিছু হাদীস নিম্নরূপঃ-
৫২৭. আবু-হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনবত্তা নয়, প্রকৃত ধনবত্তা হলো অন্তরের ধনবত্তা।’’
ধনবত্তা।’’ (সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪৪৬, মুসলিম ১০৫১, তিরমিজী ২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ৪১৩৭, আহমাদ ৭২৭৪, ৭৫০২, ২৭৩৯১, ৮৮১৭, ৯৩৬৪, ৯৪২৫)
হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২৮. আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র ইবনুল ‘আস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করিয়াছেন।’’
[মুসলিম ১০৫৪, তিরমিজী ২৩৪৮, ইবনু মাজাহ ৪১৩৮, আহমাদ ৬৫৭২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫২৯. হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী সাঃআঃ এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করিবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করিবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হইতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হইতে উত্তম।) হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রসুলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’ তারপর আবু বাক্র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী সাঃআঃ এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। (‘ফাই’ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তুরমত যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে ‘মালে গনীমত’ বলা হয়।)
[ সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪২৮, ১৪৭২, ২৮৫০, ৩১৩৪, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪, ১০৩৫, তিরমিজী ২৪৬৩, নাসাঈ ২৫৩১, ২৫৩৪, ২৫৪৩, ২৫৪৪, ২৬০১, ২৬০২, ২৬০৩, আবু দাঊদ ১৬৭৬, আহমাদ ৭১১৫, ৭৩০১, ৭৩৮১, ৭৬৮৩, ৮৪৮৭, ৮৫২৬, ৮৮৭৮, দারেমী ১৬৫০, ১৬৫১, ১৬৫২, ১৬৫৩, ২৭৫০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩০. . আবু বুরদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘কোন যুদ্ধে আমরা নবী সাঃআঃ এর সাথে রওনা হলাম। আমরা ছিলাম ছ’জন। আমাদের একটি মাত্র উঁট ছিল। পর্যায়ক্রমে এক এক করে আমরা তার পিঠে আরোহন করলাম। (হেঁটে হেঁটে) আমাদের পা ফেটে গেল। আমার পা দু’খানাও ফেটে গেল, খসে গেল নখগুলো। এ কারণে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া বাঁধলাম। এ জন্য এ যুদ্ধকে ‘যাতুর রিকা’ (নেকড়া-ওয়ালা) যুদ্ধ বলা হয়। কেননা, এ যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দিয়ে পট্টি বেঁধেছিলাম।’’
আবু মূসা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত ঘটনা বর্ণনা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করি না।’ সম্ভবতঃ তিনি পছন্দ করতেন না যে, তাঁর কিছু আমল তিনি প্রকাশ করুন।
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৪১২৮, মুসলিম ১৮১৬) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩১. ‘আমর ইবনে তাগলিব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট মাল অথবা যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসা হল। অতঃপর তিনি তা বণ্টন করলেন। তিনি কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে ছাড়লেন। তারপর তিনি খবর পেলেন যে, যাদেরকে তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সুতরাং তিনি (ভাষণের প্রারম্ভে) আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘‘আম্মা বা‘দ! আল্লাহর কসম! আমি কাউকে দিই এবং কাউকে ছাড়ি। যাকে ছাড়ি সে আমার নিকট ঐ ব্যক্তি চেয়ে উত্তম, যাকে দিই। কিন্তু আমি কিছু লোককে কেবলমাত্র এই জন্য দিই যে, আমি তাদের অন্তরে অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করি এবং অন্য কিছু লোককে আমি ঐ ধনবত্তা ও কল্যাণের দিকে সঁপে দিই, যা আল্লাহ তাদের অন্তরে নিহিত রেখেছেন। তাদের মধ্যে ‘আমর ইবনে তাগলিব একজন।’’
আম্র ইবনে তাগলিব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর এ কথার বিনিময়ে লাল উঁট নেওয়াও পছন্দ করি না।’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ৯২৩, ৩১৪৫, ৭৫৩৫, আহমাদ ২০১৪৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩২. হাকীম ইবনে হিযাম রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর, মুসলিমের শব্দগুচ্ছ অধিকতর সংক্ষিপ্ত)
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪২৮, ১৪৭২, ২৭৫০, ৩১৪৩, ৬৪৪১, মুসলিম ১০৩৪)হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৩. আবু আব্দুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবু সুফয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমরা নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার নিকট কোন কিছু চাইবে, অতঃপর আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি আমার কাছ থেকে কিছু বের হয় (কাউকে কিছু দিই), তাহলে তাতে বরকত হবে না।’’
[মুসলিম ১০৩৮, নাসাঈ ২৫৯৩, আহমাদ ১৬৪৫০, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৯১, দারেমী ১৬৪৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৪. আবু আব্দুর রহমান ‘আওফ ইবনে মালিক আশজা‘ঈ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
, একদা আমরা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এর নিকট ৯ জন অথবা ৮ জন অথবা ৭ জন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর সাথে বায়‘আত করিবে না?’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা কিছু সময় পূর্বেই তাঁর সাথে বায়‘আত করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো আপনার সাথে বায়‘আত করে ফেলেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি রসুলুল্লাহর সাথে বায়‘আত করিবে না?’’ সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বিস্তার করলাম এবং বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার সাথে বায়‘আত করেছি। সুতরাং এখন কোন্ কথার উপর আপনার সাথে বায়‘আত করব?’ তিনি বললেন, ‘‘এ কথার উপর যে, তোমরা এক আল্লাহর উপাসনা করিবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করিবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়বে এবং আল্লাহর আনুগত্য করিবে।’’ আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না।” অতঃপর আমি (বায়‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখছি যে, তাঁদের মধ্যে কারো চাবুক যদি যমীনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না। (বরং স্বয়ং সওয়ারী থেকে নেমে তা উঠিয়ে নিতেন।)
[মুসলিম ১০৪৩, নাসাঈ ৪৬০, আবু দাঊদ ১৬৪২, ইবনু মাজাহ ২৮৬৭, আহমাদ ২৩৪৭৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৫. ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ করিবে যে,) তার চেহারায় কোন মাংস টুকরা থাকবে না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭৫, ৪৭১৮, মুসলিম ১০৪০, নাসাঈ ২৫৮৫, আহমাদ ৪৬২৪, ৫৫৮৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৬. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ মিম্বরের উপর আরোহণ করে বললেন এবং তিনি সাদকাহ ও ভিক্ষা করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। (এই সুযোগে) তিনি বললেন, ‘‘উঁচু হাত নিচু হাত চেয়ে উত্তম, আর দানকারীর হাত হচ্ছে উঁচু হাত এবং ভিক্ষাকারী হাত হচ্ছে নিচু হাত।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪২৯, মুসলিম ১০৩৩, নাসাঈ ২৫৩৩, আবু দাঊদ ১৬৪৮, আহমাদ ৪৪৬০, ৫৩২২, ৫৬৯৫, ৬০০৩, ৬৩৬৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮১, দারেমী ১৬৫২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৭. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা) অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’
[মুসলিম ১০৪১, ইবনু মাজাহ ১৮৩৮, আহমাদ ৭১২৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৩৮. সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায় হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’
[তিরমিজী, হাসান সহীহ) (তিরমিজী ৬৮১, নাসাঈ ২৫৯৯, ২৬০০, আহমাদ ১৯৬০০, ১৯৭০৭) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৫৩৯. ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’ (আবু দাউদ, তিরমিজী, হাসান সূত্রে)
[তিরমিজী ২৩২৬, আবু দাঊদ ১৬৪৫, আহমাদ ৩৫৮৮, ৪২০৭) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস
৫৪০. সাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ কথার জামিন হবে যে, সে লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’’ আমি বললাম, ‘আমি (এর জামিন)।’ সুতরাং সাওবান কারো নিকট কোন কিছু চাইতেন না। (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
[আবু দাঊদ ১৬৪৩, নাসাঈ ২৫৯০, ইবনু মাজাহ ১৮৩৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪১. . আবু বিশর ক্বাবীস্বাহ ইবনে মুখারেক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
একবার এক অর্থদন্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সাদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে ক্বাবীস্বাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়; (১) যে ব্যক্তি অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার যামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করিবে। (২) যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না এসেছে। (৩) যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে ক্বাবীস্বাহ অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।’’
[মুসলিম ১০৪৪, নাসাঈ ২৫৭৯, ২৫৯১, আবু দাঊদ ১৬৪০, আহমাদ ১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪২. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘এক গ্রাস ও দু’গ্রাস এবং একটি খেজুর ও দু’টি খেজুরের জন্য যে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় সে মিসকীন নয়। (আসলে) মিসকীন তো সেই, যার কাছে (অপর থেকে) অমুখাপেক্ষী হওয়ার মত মাল নেই এবং (বাহ্যতঃ) তাকে গরীবও বুঝায় না যে, তাকে সাদকাহ দেওয়া যাবে। আর সে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭৯, ১৪৭৬, ৪৫৩৯, মুসলিম ১০৩৯, নাসাঈ ২৫৭১, ২৫৭২, ২৫৭৮, আবু দাঊদ ১৬৩১, আহমাদ ৭৪৮৬, ২৭৪০৪, ৮৮৬৭, ৮৮৯৫, ৯৪৫৪, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৩৭, দারেমী ১৬১৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৫৮ -বিনা চাওয়ায় এবং বিনা লোভ-লালসায় যে মাল পাওয়া যাবে তা নেওয়া জায়েয
৫৪৩. . সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ আমাকে যখন কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, ‘আমার চেয়ে যে বেশি অভাবী তাকে দিন।’ (একদা) তিনি বললেন, ‘‘তুমি তা নিয়ে নাও। যখন তোমার কাছে এই মাল আসে, আর তোমার মনে লোভ না থাকে এবং তুমি তা যাচনাও না করে থাক, তাহলে তা গ্রহণ কর এবং তা নিজের মালের সাথে মিলিয়ে নাও। অতঃপর তোমার ইচ্ছা হলে তা খাও, নতুবা দান করে দাও। এ ছাড়া তোমার মনকে তাতে ফেলে রেখো না।’’
সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেন, ‘এ কারণেই (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ কারো কাছে কিছু চাইতেন না এবং তাঁকে কেউ কিছু দিতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করতেন না। (বরং গ্রহণ করে নিতেন।)’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭৩, ৭১৬৪, মুসলিম ১০৪৫, নাসাঈ ২৬০৫, ২৬০৬, ২৬০৭, ২৬০৮, আবু দাঊদ ১৬৪৭, আহমাদ ১০১, ১৩৭, ২৮১, ৩৭৩, দারেমী ১৬৪৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
পরিচ্ছদঃ ৫৯ -স্বহস্তে উপার্জিত খাবার খাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
৫৪৪. আবু আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে পাহাড় যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম; তারা তাকে দিক বা না দিক।’’ (বুখারী ও মুসলিম) [১]
[১] সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭১, ২০৭৫, ২৩৭৩, ইবনু মাজাহ ১৮৩৬, আহমাদ ১৪১০, ১৪৩২ হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪৫. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো কাঠের বোঝা সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে অনেক ভাল; সে দিক বা না দিক।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ১৪৭০, ১৪৮০, ২০৭৪, ২৩৭৪, মুসলিম ১০৪২, তিরমিজী ৬৮০, নাসাঈ ২৫৮৯, আহমাদ ৭২৭৫, ৭৪৩৯, ৭৯২৭, ৮৮৮৯, ৯১৪০, ৯৫৫৮, ৯৭৯৬, মুওয়াত্তা মালিক ১৮৮৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪৬. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘দাঊদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া খেতেন না।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৭৩, ৩৪১৭, ৪৭১৩, আহমাদ ২৭৩৭৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪৭. উক্ত রাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছুতোর (কাঠ-মিস্ত্রী) ছিলেন।’’
[মুসলিম ২৩৭৯, ইবনু মাজাহ ২১৫০, আহমাদ ৭৮৮৭, ৯০০৪, ৯৯২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
৫৪৮. মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদ্বিয়াল্লাহু হইতে বর্ণিতঃ
নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লার নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’
[সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৭২, ইবনু মাজাহ ২১৩৮, আহমাদ ১৬৭২৯, ১৫৭৩৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply