অযুর সুন্নত সমূহ – হাত, কুলি, নাক, মাসাহ, পা ধোয়া ও দুআ
অযুর সুন্নত সমূহ – হাত, কুলি, নাক, মাসাহ, পা ধোয়া ও দুআ >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ৪৮-৬৭ =২০টি
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ উযুর শুরুতে বিস্মিল্লাহ বলা
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ যে ব্যক্তি হাত ধোয়ার পূর্বে তা [পানির] পাত্রে প্রবেশ করায়
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ নবি [সাঃআ:] এর উযুর বিবরণ
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়া
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ উযুর অঙ্গসমূহ দুবার করে ধোয়ার বর্ণনা
অনুচ্ছেদ- ৫৩ঃ উযুর অঙ্গসমূহ একবার করে ধোয়া
অনুচ্ছেদ- ৫৪ঃ কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার মধ্যে পার্থক্য করা
অনুচ্ছেদ- ৫৫ঃ নাক পরিষ্কার করা
অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ দাড়ি খিলাল করা
অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করা
অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ দু পা ধোয়া
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ মোজার উপর মাসাহ্ করা
অনুচ্ছেদ- ৬০ঃ মোজার উপর মাসাহ্ করার সময়সীমা
অনুচ্ছেদ- ৬১ঃ জাওরাবাইনের উপর মাসাহ্ করা
অনুচ্ছেদ- ৬২ঃ –
অনুচ্ছেদ- ৬৩ঃ [মোজার উপর] মাসাহ্ করার নিয়ম
অনুচ্ছেদ- ৬৪ঃ লজ্জাস্থানে পানি ছিটানো
অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ উযুর পর যে দুআ পড়তে হয়
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ যে ব্যক্তি একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করে তার বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ উযুর মধ্যে কোন অঙ্গের কোন অংশ শুকনা থাকলে
অনুচ্ছেদ-৪৮ঃ উযুর শুরুতে বিস্মিল্লাহ বলা
১০১. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ ঐ ব্যক্তির সলাত হয় না যে [সঠিকভাবে] উযু করে না এবং ঐ ব্যক্তির উযু হয় না যে তাতে আল্লাহর নাম নেয় না।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। পবিত্রতা ছাড়া সলাত শুদ্ধ হইবে না। এ ব্যাপারে ইজমা [ঐকমত্য] হয়েছে। ২। উযুতে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নাত। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০২. দারাওয়ার্দী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:]-এর হাদীসঃ “যে লোক উযুর সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে না তার উযু হয় না”।-এর ব্যাখ্যায় রবীআহ উল্লেখ করেন, যে লোক উযু ও গোসল করে, অথচ সে উযু দ্বারা সলাতের ও গোসল দ্বারা অপবিত্রতার গোসলের নিয়্যাত না করে, তার উযু ও গোসল [সঠিক] হয় না।
হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাকতু
অনুচ্ছেদ-৪৯ঃ যে ব্যক্তি হাত ধোয়ার পূর্বে তা [পানির] পাত্রে প্রবেশ করায়
১০৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ রাত্রে জাগ্রত হলে সে যেন নিজের হাত তিনবার না ধুয়ে [পানির] পাত্রে হাত ডুবিয়ে না দেয়। কারণ তার জানা নেই [ঘুমের অবস্থায়] তার হাত কোথায় রাত কাটিয়েছে।
সহীহঃ মুসলিম, বোখারী, তিনবার কথাটি বাদে। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] সূত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে। তবে তাতে দুই অথবা তিনবার করে হাত ধোয়ার কথা উল্লেখ আছে এবং এর সানাদে আবু রযীন নামক পূর্ববর্তী একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ নেই।
সহীহঃ তিনবার হাত ধোয়াই হচ্ছে অধিকাংশের মত। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৫.আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ তোমাদের কেউ যখন ঘুম থেকে জাগে, তখন তিনবার হাত না ধুয়ে যেন পানির পাত্রে তা না ডুবায়। কারণ, তার জানা নেই তার হাত কোথায় ছিল অথবা কোথায় ঘুরাফেরা করছিল।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫০ঃ নবি [সাঃআ:] এর উযুর বিবরণ
১০৬. উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআ:]-এর মুক্ত দাস হুমরান ইবনি আব্বাস হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআ:]-কে উযু করে দেখেছি। তিনি প্রথমে উভয় হাতে তিনবার করে পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেন। এরপর কুলি করিলেন, নাকে পানি দিলেন এবং তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর ডান হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুলেন, বাম হাতও অনুরূপ করিলেন। এরপর মাথা মাসাহ্ করিলেন। এরপর তিনবার ডান পা ধুলেন, বাম পাও অনুরূপ করিলেন। সর্বশেষে বললেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে আমি আমার এ উযুর ন্যায় উযু করিতে দেখেছি। অতঃপর তিনি [সাঃআ:] বলেনঃ যে ব্যক্তি আমার এ উযুর মত উযু করে দু রাকআত সলাত আদায় করিবে, যাতে তার মনে কোনরূপ পার্থিব খেয়াল ও খটকা আসবে না, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১০৭. হুমরান হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআ:]-কে উযু করিতে দেখেছি। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন। কিন্তু তাতে কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার কথা উল্লেখ নেই। তিনি তাতে বলেনঃ এবং তিনি তিনবার মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন, এরপর তিনবার দুপা ধুয়েছেন। অবশেষে বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে আমি এভাবে উযু করিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেনঃ এর চেয়ে কম করলে [অর্থাৎ দুই অথবা একবার করে ধুলেও] যথেষ্ট হইবে। এ হাদীসে সলাতের কথা উল্লেখ নেই।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১০৮. উসমান ইবনি আবদুর রহমান আত-তাইমী হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি আবু মুলায়কাহ্কে উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআ:]-এ উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে দেখেছি। তিনি [উসমান] পানি চাইলেন। একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি প্রথমে উক্ত পাত্র স্বীয় ডান হাতের উপর কাত করিলেন [অর্থাৎ ডান হাত ধৌত করিলেন]। এরপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে তিনবার কুলি করিলেন, তিনবার নাকে পানি দিলেন, তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, তিনবার ডান হাত ধুলেন, তিনবার বাম হাত ধুলেন, অতঃপর হাত ডুবিয়ে পানি নিয়ে মাথা ও কান মাসাহ্ করিলেন- উভয় কানের ভিতর ও বহিরাংশ একবার করে মাসাহ্ করিলেন। তারপর উভয় পা ধৌত করে বললেনঃ উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীরা কোথায়? রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এরূপই উযু করিতে দেখেছি।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, উসমান [রাঃআ:] সূত্রে বর্ণিত উযু সম্পর্কিত সহিহ হাদীসসমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাথা মাসাহ্ কেবল একবারই করিতে হয়। কেননা প্রত্যেক বর্ণনাকারী উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়ার কথা উল্লেখ করিয়াছেন। তারা প্রত্যেক বর্ণনায় বলেছেন, এবং মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন। কিন্তু মাথা মাসাহ্র কোন সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি; যেরূপ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কে করা হয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১০৯. আবু আলক্বামাহ্ হইতে বর্ণিতঃ
উসমান [রাঃআ:] উযুর পানি চাইলেন। পানি আনা হলে তিনি ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি নিয়ে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনবার কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। অন্যান্য অঙ্গ তিনবার করে ধুলেন ও মাথা মাসাহ্ করিলেন। অবশেষে উভয় পা ধুয়ে বলিলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এভাবেই উযু করিতে দেখেছি, যেরূপ তোমরা আমাকে উযু করিতে দেখলে।
অতঃপর বর্ণনাকারী যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ পূর্ণাংগ হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১১০. শাক্বীক ইবনি সালামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাঃআ:]–কে [উযুর সময়] উভয় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার তিনবার করে ধুতে এবং তিনবার মাথা মাসাহ্ করিতে দেখেছি। এরপর তিনি বলেছেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এরূপ করিতে দেখেছি।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ওয়াকী সূত্রে ইসরাঈলের বর্ণনায় রয়েছে, তিনি উযুর অঙ্গসমূহ মাত্র তিনবার করে ধুলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১১১. আবদু খাইর হইতে বর্ণিতঃ
আলী [রাঃআ:] সলাত আদায়ের পর আমাদের নিকট এসে পানি চাইলেন। আমরা বললাম, সলাত আদায় শেষে তিনি পানি দিয়ে কী করবেন? মূলত তাহাঁর উদ্দেশ্য ছিল আমাদেরকে [উযু] শিক্ষা দেয়া। কাজেই এক পাত্র পানি ও একটি তশ্তরী আনা হলো। তিনি পাত্র থেকে পানি নিয়ে ডান হাতে পানি ঢেলে উভয় হাত তিনবার ধুলেন, তারপর তিনবার কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনি এক অঞ্জলি পানি দিয়েই কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন এবং তিনবার ডান হাত ও তিনবার বাম হাত ধুলেন। তারপর পাত্রে হাত ডুবিয়ে একবার মাথা মাসাহ্ করিলেন। তারপর তিনবার করে ডান পা ও বাম পা ধুলেন। অতঃপর বলিলেন, যে ব্যক্তি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর নিয়ম জানতে আগ্রহী, [সে জেনে রাখুক] তা এরূপই ছিল।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১২. ‘আবদু খাইর হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাঃআ:] ফাজ্রের সলাত আদায় শেষে রাহবায় [কুফার একটি স্থান] গেলেন। সেখানে তিনি পানি চাইলেন। একটি বালক তাহাঁর জন্য এক পাত্র পানি ও তশ্তরী নিয়ে এলো। তিনি পানির পাত্রটি ডান হাতে নিয়ে বাম হাতে পানি ঢাললেন এবং উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। অতঃপর পাত্রে ডান হাত ডুবিয়ে তিনবার করে কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনি প্রায় পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তারপর মাথার সামনে ও পেছনে একবার মাসাহ্ করিলেন। অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৩. আবদু খাইর হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাঃআ:]-এর জন্য একটি চেয়ার আনা হলে তিনি তার উপর বসলেন। তারপর একটি পাত্রে পানি আনা হলে তিনি তিনবার তাহাঁর হাত ধুলেন, এরপর একই পানি দিয়ে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। … অতঃপর [পূর্বোক্ত হাদীসের] শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করিলেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৪. যির্ ইবনি হুবাইশ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আলী [রাঃআ:] হতে শুনেছেন, তাকে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর উযু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীস বর্ণনা করেন এবং বলেন, তিনি এমনভাবে মাথা মাসাহ্ করিলেন যে, পানি ঝরে পড়েনি। তিনি তিনবার করে উভয় পা ধুলেন। তারপর বলিলেন, এরূপই ছিল রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর উযু।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৫. আবদুর রহমান ইবনি আবু লায়লা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী [রাঃআ:]-কে উযু করিতে দেখেছি এভাবেঃ তিনি তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন, উভয় হাত ধুলেন তিনবার এবং মাথা মাসাহ্ করিলেন একবার। অতঃপর বললেনঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এভাবেই উযু করিয়াছেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৬. আবু হাইয়্যাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আলী [রাঃআ:]-কে উযু করিতে দেখেছি। তিনি প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধুয়েছেন, তারপর মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন এবং উভয় পা টাখনু পর্যন্ত ধুয়েছেন। অতঃপর বলেছেনঃ আমার আগ্রহ ছিল, তোমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর উযু [করার পদ্ধতি] দেখানো।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৭. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমার কাছে আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] এলেন। তিনি ইস্তিন্জার কাজ সম্পন্ন করে উযুর পানি চাইলেন। আমরা একটি পাত্রে পানি এনে তাহাঁর সামনে রাখলাম। তিনি বলিলেন, হে ইবনি আব্বাস! রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কিভাবে উযু করিতেন তা কি তোমাকে দেখাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। আলী [রাঃআ:] পাত্রটি কাত করে হাতে পানি ঢেলে হাত ধুলেন। এরপর ডান হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন, কুলি করিলেন, নাকে পানি দিলেন। এরপর উভয় হাত একত্রে পাত্রে ডুবিয়ে অঞ্জলি ভরে পানি নিয়ে মুখমন্ডলে নিক্ষেপ করিলেন [ধুলেন]। তারপর উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলি উভয় কানের সম্মুখভাগে [ভিতরে] ঘোরালেন, দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বারও এরূপই করিলেন। এরপর ডান হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কপালে ঢেলে দিলেন, তা তাহাঁর মুখমন্ডল গড়িয়ে পড়ছিল। এরপর তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন, মাথা মাসাহ্ করিলেন ও উভয় কানের পিঠ মাসাহ্ করিলেন। এরপর উভয় হাত একত্রে পাত্রে ডুবিয়ে পানি তুলে পায়ের উপর ঢাললেন, তখন তাহাঁর পায়ে ছিল জুতা। এরপর তিনি হাত দিয়ে পা ঘষলেন। অপর পায়েও অনুরূপ করিলেন। ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] বলেন, জুতা পরিহিত অবস্থায় এরূপ করা হয়েছিল কি? তিনি বলিলেন, জুতা পরিহিত অবস্থায়ই। আমি বললাম, জুতা পরিহিত অবস্থায়? তিনি বলিলেন, জুতা পরিহিত অবস্থায়ই। আমি বললাম, জুতা পরিহিত অবস্থায়? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ জুতা পরিহিত অবস্থায়ই।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, শায়বাহ হতে ইবনি জুরাইজ সূত্রে বর্ণিত হাদীস আলী [রাঃআ:] এর হাদীসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ হাদীসটির বক্তব্য হলোঃ তিনি একবার মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন। ইবনি ওয়াহ্ব হতে ইবনি জুরাইজ সূত্রে বর্ণিত হাদীস রয়েছেঃ তিনি মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন তিনবার।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১১৮. আমর ইবনি ইয়াহইয়া আল-মাযিনী হতে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদকে জিজ্ঞাসা করিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কিভাবে উযু করিতেন তুমি কি আমাকে তা দেখাতে পার? আব্দুল্লাহ ইবনি যায়িদ বলিলেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি উযুর পানি আনালেন। উভয় হাতে পানি ঢেলে ধৌত করিলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। এরপর তিনবার মুখ ধুলেন। এরপর দুবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর উভয় হাত দ্বারা মাথার সম্মুখ ভাগ থেকে পেছন দিক এবং পেছনের দিক থেকে সামনের দিক মাসাহ্ করিলেন। তিনি উভয় হাত মাথার সম্মুখভাগের ঐ স্থানে ফিরিয়ে আনলেন যেখান থেকে মাসাহ্ শুরু করেছিলেন। অবশেষে উভয় পা ধুলেন।
সহিহ: বোখারী ও মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১১৯. আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদ ইবনি আসিম হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, [এরপর] তিনি একই অঞ্জলি থেকে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার এরূপ করিলেন। হাদীসের বাকি অংশ পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ।
সহিহ: বোখারী ও মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২০. আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদ ইবনি আসিম আল-মাযিনী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর উযু দেখেছেন ব্যক্ত করে বর্ণনা করেনঃ তিনি হাতের অবশিষ্ট পানি দিয়ে নয় [বরং নতুন পানি দিয়ে] মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন এবং উভয় পা পরিষ্কার করে ধুয়েছেন।
সহীহঃ মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২১. মিক্বদাম ইবনি মাদিকারিব আল-কিনদী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর নিকট উযুর পানি আনা হলে তিনি উযু করিলেন। তিনি তিনবার উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন। এরপর তিনবার করে কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর তিনবার করে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। অতঃপর মাথা এবং উভয় কানের বাহির ও ভিতরভাগ মাসাহ্ করিলেন।
১২২. মিক্বদাম ইবনি মাদিকারিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে উযু করিতে দেখেছি। উযু করিতে করিতে যখন তিনি মাথা মাসাহ্ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন তার উভয় হাতের তালু মাথার সামনের অংশে রেখে পেছনের দিকে নিয়ে গেলেন। এমনকি তার উভয় হাত ঘাড় পর্যন্ত পৌঁছে গেল। অতঃপর তিনি উভয় হাত ঐ স্থানে ফিরিয়ে আনলেন, যেখান থেকে মাসাহ শুরু করেছিলেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৩. মাহমূদ ইবনি খালিদ ও হিশাম ইবনি খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। একই সানাদে ওয়ালীদও বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেছেন, তিনি উভয় কানের বাহির ও ভিতরের অংশ মাসাহ্ করিয়াছেন। হিশাম তার বর্ণনায় আরো বলেছেন, তিনি দুকানের ছিদ্রে স্বীয় আঙুল ঢুকিয়েছেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৪. আবুল আযহার মুগীরাহ ইবনি ফারওয়াহ ও ইয়াযীদ ইবনি আবু মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
একদা মুআবিয়াহ [রাঃআ:] লোকদের দেখাবার উদ্দেশে ঐভাবে উযু করিলেন, যেভাবে তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে উযু করিতে দেখেছিলেন। তিনি [উযু করিতে করিতে] যখন মাথা মাসাহ্ পর্যন্ত পৌঁছলেন, তখন বাম হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা মাথার তালুতে দিলেন। ফলে সেখান থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল অথবা পড়ার উপক্রম হলো। অতঃপর তিনি [মাথার] সামনে থেকে পিছনের দিকে ও পিছন থেকে সামনের দিকে মাসাহ্ করিলেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৫. মাহমূদ ইবনি খালিদ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ওয়ালীদ অনুরূপ সানাদে বর্ণনা করে বলেছেনঃ তিনি [মুআবিয়াহ] উযুর অঙ্গসমূহ তিনবার করে ধৌত করেন এবং উভয় পা ধৌত করেন কয়েকবার [গণনা ব্যতীত]।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১২৬ রুবাই বিনতু মুআব্বিয ইবনি আফরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের নিকট আসতেন। বর্ণনাকারী বলেন, একদা তিনি বললেনঃ আমার জন্য উযুর পানি ঢেলে দাও। বর্ণনাকারী রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর উযুর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, তিনি তিনবার উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত ধুলেন। তিনবার মুখ ধুলেন। একবার কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। তিনবার করে উভয় হাত [কনুই পর্যন্ত] ধুলে। মাথা মাসাহ্ করিলেন দুবার। [মাথা মাসাহ] প্রথমে পিছন দিক থেকে শুরু করিলেন, এরপর সামনের দিক থেকে। তিনি উভয় কানের বাহির ও ভিতরের অংশও মাসাহ্ করিলেন এবং তিনবার করে উভয় পা ধুলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১২৭. ইবনি আক্বীল হইতে বর্ণিতঃ
উপরোক্ত হাদীস কিছু অর্থগত পার্থক্যসহ বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে তিনি বলেছেনঃ তিনি তিনবার কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। {১২৬}
রুবাই বিনতু মুআব্বিয সূত্রে শায।
{১২৬} পূর্বের হাদীসে গত হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ শায
১২৮.রুবাই বিনতু মুআব্বিয ইবনি আফরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা তাহাঁর সম্মুখে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] উযু করিলেন। তিনি [উযুতে] চুলের উপরিভাগ থেকে শুরু করে প্রত্যেক পাশে নীচের দিকে চুলের ভাঁজ অনুযায়ী এবং চুলকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় রেখে পুরো মাথা মাসাহ্ করিলেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১২৯. রুবাই বিনতু মুআব্বিয ইবনি আফরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে উযু করিতে দেখেছি। তিনি মাথা মাসাহ্ করার সময় মাথার সামনের দিক, পিছন দিক, চোখ ও কানের মধ্যবর্তী স্থান এবং উভয় কান একবার মাসাহ্ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৩০. রুবাই [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] তাহাঁর হাতে যে পানি অতিরিক্ত ছিল তা দিয়ে মাথা মাসাহ্ করিয়াছেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৩১. রুবাই বিনতু মুআব্বিয [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] উযু করিলেন এবং উভয় কানের ছিদ্রে তাহাঁর হাতের দু আঙ্গুল প্রবেশ করালেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৩২. ত্বালহা ইবনি মুসাররিফ হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে তাহাঁর মাথা একবার মাসাহ্ করিতে দেখেছি। এ সময় তিনি ক্বাজাল” তথা মাথার পিছনের দিকে ঘাড়ের সংযোগস্থান পর্যন্ত পৌঁছান। মুসাদ্দাদ বলেন, তিনি সামনের দিক থেকে পিছন দিক মাসাহ্ করেন। এমনকি তিনি স্বীয় হাত দুটি দু কানের নিম্নভাগ থেকে বের করেন। {১৩১}
{১৩১} দুর্বল। মুসাদ্দাদ বলেন, আমি হাদীসটি ইহাহ্ইয়ার নিকট বর্ণনা করলে তিনি এটিকে মুনকার [প্রত্যাখ্যাত] বলেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনিয়াছি, লোকদের ধারণা, ইবনি উয়াহনা এটিকে মুনকার সাব্যস্ত করে বলেছেন, এর সানাদ কি এরূপঃ ত্বালহা তার পিতা হতে তার দাদা সূত্রে?
{১৩১} আহমদ {৩/৪৮১} আবদুল ওয়ারিস সূত্রে লাইস হতে। আত তাহযীব গ্রন্থে আছে: ইবনি হাজার বলেছেন, হাদীসে উল্লেখ আছে, বর্ণনাকারী বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে উযু করিতে দেখেছি। যদি তিনি ত্বালহা ইবনি মুসাররিফের দাদা হন তাহলে এক দলের মতে তিনি হলেন কাব ইবনি আমর। ইবনি কাওন দৃঢ়তার সাথে বলেন, তিনি হলেন আমর ইবনি কাব। যদি উক্ত ত্বালহা ইবনি মুসাররিফের ছেলে না হন তাহলে তিনি এবং তার পিতা দুজনেই অজ্ঞাত এবং তার দাদা সাহাবী হওয়াটা অপ্রমাণিত। কেননা তাকে এ হাদীস ছাড়া চেনা যায় না-{তাহযীবুত দাহযীব -৮/৩৯৮}। ইবনিল কাইয়্যিম বলেন, উসমান ইবনি সাঈদ দারিমী বলেছেন, আমি আলী ইবনিল মাদীনীকে বলিতে শুনিয়াছি, আমি সুফয়ানকে জিজ্ঞেস করলাম, লাইস হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন ত্বালহা ইবনি মুসাদ্দাদ বলেন, আমি হাদীসটি ইয়াহ্ইয়ার নিকট বর্ণনা করলে তিনি এটিকে মুনকার {প্রত্যাখ্যাত} বলেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনিয়াছি, লোকদের ধারনা, ইবনি উয়াইনাহ এটিকে মুনকার সাব্যস্ত করে বলেছেন, এর সানাদ কি এরূপ: তালহা তার পিতা হতে তার দাদা সূত্রে? মুসাররিফ হতে তার পিতা থেকে দাদার সূত্রে, তিনি নবি [সাঃআ:] -কে দেখেছেন- হাদীস।একথা শুনে সুফয়ান এটিকে অস্বীকার করিলেন এবং ত্বালহার দাদা নবি [সাঃআ:] -এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন এ কথা শুনে আশ্চর্য হলেন। আওনাল মাবুদে রয়েছে: সানাদের লাইস ইবনি আবু সুলাইম সম্পর্কে ইমাম আহমদ বলেন: মুযতারিবুল হাদীস। হাফিয বলেন: ইবনি হিব্বান বলেছেন, তিনি সানাদসমূহ পরিবর্তন করে ফেলেন এবং মুরসাল বর্ণনাগুলো মারফূ বানিয়ে দেন। তিনি নির্ভরযোগ্যদের সূত্র দিয়ে এমন কিছু নিয়ে আসেন যা তাহাদের হাদীসের অংশ নয়। ইয়াহইয়া ইবনি কাত্তান, ইবনি মাহদী, ইবনি মাঈন ও আহমদ ইবনি হাম্বাল তাকে বর্জন করিয়াছেন আর ইমাম নাববী তাহযীবুল আসমা গ্রন্থে বলেন: তার দুর্বলতার ব্যাপারে আলিমগণ ঐকমত্য পোষণ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
১৩৩. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে উযু করিতে দেখেছেন। বর্ণনাকারী পুরো হাদীস বর্ণনা করে বলেন, তিনি তিনবার করে [উযুর] প্রতিটি অঙ্গ ধৌত করেন এবং মাথা ও দু কান মাসাহ্ করেন একবার। {১৩২}
{১৩২} আবু দাউদ এটি এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এর সানাদের আববাদ ইবনি মানসূর সম্পর্কে হাফিয আত-তাকরীব গ্রন্থে বলেন: সত্যবাদী, তবে তাকে কাদরীয়া পন্থী বলা হয়, তিনি তাদলীস করিতেন এবং শেষ বয়সে তার স্মৃতি বিকৃত হয়ে যায়। হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
১৩৪. আবু উমামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি নবি [সাঃআ:]-এর উযুর বর্ণনা দিয়ে বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] নাকের সন্নিকটে অবস্থিত চোখের স্থানটুকুও মাসাহ্ করিতেন। {১৩৩}
দুর্বলঃ মিশকাত ৪১৬। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [সাঃআ:] বলেছেন, উভয় কান মাথার অংশ বিশেষ।* সুলাইমান ইবনি হার্ব বলেন, আবু উমামাহ্ এটি বলিতেন। কুতাইবাহ বলেন, হাম্মাদ বলেছেন, আমি অবহিত নই যেঃ উভয় কান মাথার অংশ বিশেষ –এ কথাটি নবি [সাঃআ:] -এর না আবু উমামাহ্।
সহিহ। {১৩৩} তিরমিজি {অধ্যায়: পবিত্রতা, অনু: কর্ণদ্বয় মাথার অংশ বিশেষ, হা:৩৭}, ইবনি মাজাহ {অধ্যায়: পবিত্রতা, অনু: দু কান মাথার অন্তর্ভুক্ত, হা: ৩৪৪}, আহমদ {৫/২৫৮, ২৬৪} হাম্মাদ ইবনি যায়িদ সূত্রে। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে সিনান এবং শাহর দুজনেই দুর্বল। * মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন: হাদীসটি সহিহ। অর্থ্যাৎ উভয় কান মাথার অংশ বিশেষ কথাটি সহিহ। চাই এখানে কথাটি নবি [সাঃআ:] -এর হোক বা আবু উমামাহর হোক। কেননা এ অংশটুকু একদল সাহাবী {রাযিআল্লাহু আনহুম} হতে মারফূভাবে বর্ণিত হয়েছে। যাদের মধ্যে ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] রয়েছেন। এর সানাদ সহিহ। এর বহু সূত্র রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ-৫১ঃ উযুর অঙ্গগুলো তিনবার করে ধোয়া
১৩৫. আমর ইবনি শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবি [সাঃআ:]-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! পবিত্রতা অর্জন [উযু] কিভাবে করিতে হয়? তিনি এক পাত্র পানি আনলেন। তারপর উভয় হাত কজ্বি পর্যন্ত তিনবার ধুলেন। এরপর তিনবার মুখমন্ডল ধুলেন। এরপর তিনবার উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন। এরপর মাথা মাসাহ্ করিলেন এবং উভয় শাহাদাত আঙ্গুলি কানে প্রবেশ করালেন। বৃদ্বাঙ্গুলি দিয়ে কানের বহিরাংশ মাসাহ্ করিলেন আর শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে কানের ভেতরের অংশ মাসাহ্ করিলেন। সবশেষে উভয় পা তিনবার করে ধুলেন। অতঃপর বললেনঃ এভাবেই উযু করিতে হয়। যে ব্যক্তি এর চেয়ে বেশি বা কম করিবে সে তো মন্দ ও জুলুম করিল। [বর্ণনাকারীর সন্দেহ] অথবা [তিনি বলেছেন] সে তো জুলুম ও মন্দ কাজ করিল। [অর্থ্যাৎ মন্দ ও জুলুম শব্দদ্বয় হয়ত আগে পরে করিয়াছেন]।
হাসান সহীহঃ তবে তার [আরবী] কথাটি বাদে। কেননা তা শায। মিশকাত ৪১৭ সমার্থক। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৫২ঃ উযুর অঙ্গসমূহ দুবার করে ধোয়ার বর্ণনা
১৩৬. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] উযুর অঙ্গসমূহ দুবার করে ধুয়েছেন।
হাদীস থেকে শিক্ষা: ইমাম নাববী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুসলিমগণ একমত যে, উযুর অঙ্গগুলো একবার একবার করে ধৌত করা ওয়াজিব, আর তিনবার করে ধৌত করা সুন্নাত।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৩৭. আত্বা ইবনি ইয়াসার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] আমাদের বলিলেন, তোমরা কি এটা পছন্দ করো যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যেভাবে উযু করিতেন তা তোমাদেরকে আমি দেখিয়ে দেই? অতঃপর তিনি এক পাত্র পানি চাইলেন। সেখান থেকে ডান হাতে এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কুলি করিলেন ও নাকে পানি দিলেন। তারপর এক অঞ্জলি নিয়ে উভয় হাত দ্বারা মুখমন্ডল ধুলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান হাত এবং অপর অঞ্জলি নিয়ে বাম হাত ধুলেন। তারপর এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা ফেলে দিলেন এবং মাথা ও উভয় কান মাসাহ্ করিলেন। তারপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে ডান পায়ের উপর ছিটিয়ে দিলেন, তখন তাহাঁর পায়ে ছিল জুতা। তিনি তার এক হাতে পায়ের উপরিভাগ এবং অপর হাতে জুতার নিম্নভাগ মাসাহ্ করিলেন। এরপর অনুরূপভাবে বাম পাও মাসাহ্ করিলেন।
হাসান, কিন্তু পা মাসাহ্ করার কথাটি শায। বোখারী, দু পা ও কান ধোয়ার কথা বাদে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৫৩ঃ উযুর অঙ্গসমূহ একবার করে ধোয়া
১৩৮.ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- এর উযু সম্পর্কে অবহিত করব না? অতঃপর তিনি উযুর [প্রত্যেক অঙ্গ] একবার করে ধুলেন।
সহীহঃ বোখারী অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৫৪ঃ কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার মধ্যে পার্থক্য করা
১৩৯. ত্বালহা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা হতে তাহাঁর দাদার সূত্র হইতে বর্ণিতঃ
আমি নবি [সাঃআ:] -এর নিকট এমন সময় গেলাম যখন তিনি উযু করছিলেন, উযুর পানি তাহাঁর মুখ ও দাড়ি গড়িয়ে তাহাঁর বুকের উপর পড়ছিল। আমি দেখলাম, তিনি পৃথকভাবে কুলি করিলেন এবং নাকে পানি দিলেন। {১৩৮}
{১৩৮} ১৩২ নং হাদীসের টিকায় এ সানাদ সম্পর্কে আলোচনা গত হয়েছে। আওনুল মাবুদে রয়েছে এর সনদ দুর্বল, এর দ্বারা দলীল প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৫৫ঃ নাক পরিষ্কার করা
১৪০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ উযু করে, তখন সে যেন স্বীয় নাকে পানি দিয়ে [পরিষ্কার করে] তা ঝেড়ে ফেলে দেয়।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪১. ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ দুবার অথবা তিনবার ভাল করে নাক পরিষ্কার করিবে।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪২. লাক্বীত্ব ইবনি সাব্রাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট আগত বনু মুসতাফিক্ব গোত্রের প্রতিনিধি দলটির নেতা ছিলাম আমি অথবা বলেছেন, আমি তাঁদের মধ্যেই ছিলাম। আমরা যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কাছে পৌছলাম তখন তাঁকে তাহাঁর ঘরে উপস্থিত পেলাম না, অবশ্য উম্মুল মুমিনীন আয়িশাহ [রাঃআ:]-কে পেলাম। তিনি আমাদের জন্য খাযিরাহ [এক প্রকার খাদ্য] তৈরীর আদেশ দিলেন। অতঃপর আমাদের জন্য তা তৈরী করা হলো এবং আমাদের সম্মুখে ক্বিনা [অর্থাৎ খেজুর ভর্তি একটি পাত্র] পেশ করা হলো। বর্ণনাকারী কুতাইবাহ “খেজুর ভর্তি পাত্র” কথাটি উল্লেখ করেননি। অতঃপর রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এসে বললেনঃ তোমরা কিছু খেয়েছো কি? অথবা তিনি বলিলেন, তোমাদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করিতে বলা হয়েছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! লাক্বীত্ব বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় এক রাখাল তাহাঁর মেষপাল খোঁয়াড়ে নিয়ে এলেন। আর সাথে একটি ছাগলের বাচ্চা ছিল, সেটি চিৎকার করছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] জিজ্ঞেস করলেনঃ হে উমুক! কি বাচ্চা জন্ম হয়েছে? সে বলিল, মাদী। তিনি বলেন, সেটির পরিবর্তে আমাদের জন্য একটি বকরী যাবাহ্ করি। অতঃপর [প্রতিনিধি দলের নেতাকে উদ্দেশ্য করে] বললেনঃ এমনটি মনে করো না যে, বকরীটি তোমার জন্য যাবাহ্ করছি। বরং আমাদের কাছে একশটি বকরী আছে। তাই আমরা এর সংখ্যা আর বাড়াতে চাই না। সেজন্যই কোন বাচ্চা জন্ম হলে আমরা সেটির পরিবর্তে একটি বকরী যাবাহ্ করি। লাকীত্ব বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমার একজন স্ত্রী আছে। সে অশ্লীলভাষী। তিনি বললেনঃ তাহলে তাকে ত্বালাক দাও। লাক্বীত্ব বলেন, আমার সাহচর্যে সে দীর্ঘ দিন অতিবাহিত করেছে এবং তার গর্ভজাত আমার একটি সন্তানও রয়েছে। তিনি বললেনঃ তবে তাকে উপদেশ দাও। তার মাঝে কল্যাণ থাকলে সে উপদেশ গ্রহন করিবে। জেনে রাখ, নিজের জীবন সঙ্গিণীকে ক্রীতদাসীদের মত প্রহার করিবে না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উযু সম্পর্কে অবহিত করুন। তিনি বলেনঃ পরিপূর্ণরূপে উযু করিবে, অঙ্গুলিসমূহ খিলাল করিবে এবং নাকে উত্তমরূপে পানি পৌছাবে, তবে সিয়াম রত অবস্থায় নয়।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। উযুতে দুহাত ও দুপায়ের অঙ্গুলিগুলো খিলাল করা ওয়াজিব। ২। রোযাদারের জন্য উযুতে নাকের [খুব] ভেতরে পানি পৌছানো অপছন্দনীয়। কেননা এতে পানি কন্ঠনালীর ভেতরে ঢুকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার ভয় আছে। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৩. আসিম ইবনি লাক্বীত্ব ইবনি সাব্রাহ হতে তার পিতার সূত্রে, , যিনি বনু মুনতাফিক্ব গোত্রের সর্দার ছিলেন হইতে বর্ণিতঃ
একদা তিনি আয়িশা [রাঃআ:]-এর নিকট আসলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পুর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, [আমরা] কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরই রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সেখানে মন্থর গতিতে আসলেন। উক্ত বর্ণনায় খাযিরাহ শব্দের স্থলে আসীদাহ শব্দ উল্লেখ রয়েছে।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৪.আবু আসিম হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি জুরাইজও এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তুমি উযু করার সময় কুলি করিবে।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৬ঃ দাড়ি খিলাল করা
১৪৫. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] উযু করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে [থুতনির নীচে] লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করিতেন এবং বলিতেনঃ আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৭ঃ পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করা
১৪৬. সাওবান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একটি ছোট সেনাদল প্রেরণ করিলেন। তারা [যাত্রা পথে] ঠান্ডায় আক্রান্ত হন। অতঃপর তারা যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট ফিরে আসলেন তখন তিনি তাহাদেরকে পাগড়ী ও মোজার উপর মাসাহ্ করার নির্দেশ দিলেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৪৭. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে উযু করিতে দেখেছি। তখন তাহাঁর মাথায় কিত্রী পাগড়ী ছিল। তিনি পাগড়ীর বাঁধন না ভেঙ্গে তাহাঁর হাত পাগড়ীর নীচে ঢুকিয়ে মাথার সম্মুখ ভাগ মাসাহ্ করিলেন। {১৪৬}
{১৪৬} ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ পাগড়ির উপর মাসাহ্ করা, হাঃ ৫৬৪]। এর দোষ হচ্ছে সানাদের আবদুল আযিয ইবনি মুসলিম। তার সম্পর্কে হাফিয আত-ত্বাকরীব গ্রন্থে বলেন, মাক্ববূল। আর আনাস সূত্রে বর্ণনাকারী আবু মাক্বাল অজ্ঞাত। যা ইবনি হাজার আত-ত্বাকরীব গ্রন্থে বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৮ঃ দু পা ধোয়া
১৪৮. মুসতাওরিদ ইবনি শাদাদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে উযুর সময় তাহাঁর কনিষ্ঠ আঙ্গুল দ্বারা পায়ের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করিতে দেখেছি।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৫৯ঃ মোজার উপর মাসাহ্ করা
১৪৯. আব্বাদ ইবনি যিয়াদ হইতে বর্ণিতঃ
উরওয়াহ ইবনিল মুগীরাহ ইবনি শুবাহ তাঁকে অবহিত করেন যে, তিনি তাহাঁর পিতা মুগীরাহ [রাঃআ:] কে বলিতে শুনেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাবুক যুদ্ধের সময় একদিন ফাজ্রের পূর্বে রাস্তা ছেড়ে একদিকে রওনা করিলেন। আমিও তার সাথে চললাম। নবি [সাঃআ:] তাহাঁর উট বসালেন এবং মলমূত্র ত্যাগ করিলেন। অতঃপর প্রয়োজন সেরে এলে আমি তাহাঁর হাতে পাত্র থেকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তিনি তাহাঁর জুব্বার আস্তিন থেকে দুহাত বের করিতে চাইলেন, কিন্তু আস্তিন সংকীর্ণ থাকায় জুব্বার নীচ থেকে হাত বের করে এনে উভয় হাত কনুই পর্যন্ত ধুলেন এবং মাথা মাসাহ্ করিলেন। তারপর মোজার উপর মাসাহ্ করিলেন। অতঃপর উটের উপর সওয়ার হলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হলাম। আমরা এসে দেখলাম, আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআ:]-কে ইমাম নিযুক্ত করে লোকেরা সলাত আদায় করছে। তিনি ওয়াক্ত মোতাবেকই সলাত শুরু করিয়াছেন। আমরা এসে আবদুর রহমানকে এমন অবস্থায় পেলাম যে, তিনি ফাজ্রের এক রাকআত আদায় করে ফেলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মুসলমানদের সাথে একই কাতারে আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআ:]-এর পিছনে সলাতের দ্বিতীয় রাকআত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। আবদুর রহমান সালাম ফিরালে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] অবশিষ্ট এক রাকআত সলাত আদায়ের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। নবি [সাঃআ:]-এর আগেই সলাত আদায় করে ফেলায় মুসলমানরা ভীত হয়ে পড়ল এবং অধিক পরিমাণে তাস্বীহ পাঠ করিতে লাগল। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সালাম ফিরিয়ে তাঁদের উদ্দেশে বললেনঃ তোমরা [ওয়াক্ত মোতাবেক সলাত আদায় করে] ঠিকই করেছো অথবা তোমরা ভালই করেছো।
সহীহঃ মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫০. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] উযুর সময় তাহাঁর কপাল মাসাহ্ করিলেন। তিনি উল্লেখ করেন, এ মাসাহ্ ছিল পাগড়ীর উপর। মুগীরাহ সূত্রে অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মোজা, কপাল এবং পাগড়ীর উপর মাসাহ্ করিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫১. উরওয়াহ ইবনিল মুগীরাহ ইবনি শুবাহ থেকে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে সফররত ছিলাম। সে সময় আমার সাথে একটি [পানির] মশক ছিল। তিনি তাহাঁর প্রয়োজনে [মলমূত্র ত্যাগের জন্য] বেরুলেন। অতঃপর ফিরে এলেন। আমি পানির মশক নিয়ে এগিয়ে গেলাম এবং তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত এবং মুখমণ্ডল ধুলেন। তারপর তিনি হাত দুটি বের করার ইচ্ছা করিলেন। তখন তাহাঁর গায়ে রোম দেশীয় সরু আস্তিন বিশিষ্ট পশমী জুব্বা ছিল। আস্তিন বেশি সংকীর্ণ হওয়ায় জুব্বা থেকে হাত বের করা সম্ভব হলো না। তাই তিনি তা খুলে নিচে রাখলেন। অতঃপর আমি তাহাঁর পা থেকে মোজাদ্বয় খোলার জন্য নিচে ঝুঁকলাম। তিনি বলিলেন, থাক, মোজা খুলো না। আমি পবিত্র অবস্থায়ই দুপায়ে মোজাদ্বয় পরেছি। তারপর তিনি মোজার উপর মাসাহ্ করিলেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫২. যুরারাহ ইবনি আওফা হইতে বর্ণিতঃ
মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [কাফেলার] পিছনে রয়ে গেলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পুরো ঘটনা বর্ণনা করিলেন। তিনি বলেন, আমরা এসে দেখলাম, আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাঃআ:] লোকদের ফাজ্রের সলাতে ইমামতি করছেন। তিনি নবি [সাঃআ:]-কে দেখিতে পেয়ে পিছনে সরে আসতে চাইলেন। তিনি ইশারায় তাকে সলাত আদায় চালিয়ে যেতে বলিলেন। মুগীরাহ [রাঃআ:] বলেন, আমি এবং নবি [সাঃআ:] আবদুর রহমানের পিছনে এক রাকআত আদায় করলাম। আবদুর রহমান সালাম ফিরালে নবি [সাঃআ:] দাঁড়িয়ে ছুটে যাওয়া অবশিষ্ট এক রাকআত সলাত আদায় করিলেন এবং এর অধিক কিছু করেননি।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআ:], ইবনি যুবাইর ও ইবনি উমারের মতে, কেউ ইমামের সঙ্গে বিজোড় রাকআত [আংশিক] সলাত পেলে তাকে দুটি সাহু সাজদাহ্ করিতে হইবে।
দুর্বল। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ মোজা পরিধানের পূর্বেই পবিত্রতা অর্জন করা জরুরী। যাতে মোজার উপর মাসাহ্ করা সহিহ হয়। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
১৫৩. আবু আব্দুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুর রহমান ইবনি আওফ যখন বিলাল [রাঃআ:]-কে নবি [সাঃআ:]-এর উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তখন তিনি তাহাঁর নিকট উপস্থিত ছিলেন। বিলাল [রাঃআ:] বললেনঃ তিনি পেশাব-পায়খানার জন্য বের হতেন। তখন আমি তাহাঁর জন্য পানি নিয়ে আসতাম। তিনি উযু করিতেন এবং পাগড়ী ও মোজার উপর মাসহ করিতেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৪.আবু যুরআহ ইবনি জারীর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা জারীর [রাঃআ:] পেশাব করিলেন। অতঃপর উযু করার সময় তিনি মোজার উপর মাসাহ্ করিলেন এবং বলিলেন, কিসে আমাকে মোজার উপর মাসাহ্ করা থেকে বিরত রাখবে? অথচ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে মাসাহ্ করিতে দেখেছি। লোকেরা বলিল, এটা তো সূরাহ মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেকার ঘটনা। জারীর [রাঃআ:] বলিলেন, আমি সূরাহ মায়িদাহ্ অবতীর্ণ হওয়ার পরই ইসলাম গ্রহণ করেছি।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৫৫. ইবনি বুরাইদাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
একদা [আবিসিনিয়ার বাদশাহ] নাজ্জাশী রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে একজোড়া কালো মোজা উপহার পাঠান। তিনি মোজাদ্বয় পরিধান করেন এবং উযুর সময় ওগুলোর উপর মাসাহ্ করেন।
হাসান। মুসাদ্দাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এটি দালহাম ইবনি সালিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদীসটি কেবলমাত্র বাসরাহ্র বর্ণনাকারীগণই বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
১৫৬. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মোজার উপর মাসাহ্ করিলেন। ফলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ভুলে গেছেন? তিনি বললেনঃ বরং তুমিই ভুলে গেছ। আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করার আদেশ করিয়াছেন।
দুর্বলঃ মিশকাত ৫২৪। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৬০ঃ মোজার উপর মাসাহ্ করার সময়সীমা
১৫৭. খুযাইমাহ ইবনি সাবিত [রাঃআ:] হতে নবি [সাঃআ:]-এর হইতে বর্ণিতঃ
তিনি [সাঃআ:] বলেছেন, মোজার উপর মাসাহ্ করার নির্দ্দিষ্ট সময় সীমা হচ্ছে মুসাফিরের জন্য তিন দিন আর মুক্বীমের জন্য একদিন একরাত। অন্য বর্ণনায় রয়েছেঃ আমরা তাহাঁর নিকট অতিরিক্ত সময় সীমা চাইলে তিনি অধিক সময় সীমাই অনুমোদন করিতেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৫৮. উবাই ইবনি ইমারাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে উভয় ক্বিবলাহ্র দিকেই সলাত আদায় করেছিলেন- তিনি বলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি কি মোজার উপর মাসাহ্ করব? তিনি বলেন, হ্যাঁ। উবাই [রাঃআ:] জিজ্ঞাসা করিলেন, একদিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ একদিন। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, দু দিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ দু দিনও। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন তিনদিন? তিনি বলেন, হ্যাঁ তিনদিন এবং তোমার যতদিন ইচ্ছা হয়। [অন্য বর্ণনায় রহিয়াছে] উবাই ইবনি ইমারাহ তাতে সাত দিন পর্যন্ত জিজ্ঞাসা করেছিলেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তার উত্তরেও বলেছিলেন, হ্যাঁ, তোমার যতদিন ইচ্ছা হয়।
দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদীসটির সানাদে মতভেদ আছে। এটি শক্তিশালী হাদীস নয়। ইবনি আবু মারিয়াম, ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইসহাক্ব, আস-সিলাহীনী এবং ইয়াহ্ইয়া ইবনি আইউব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] প্রমুখ বর্ণনাকারী এটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং এর সানাদ নিয়ে মতানৈক্য করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৬১ঃ জাওরাবাইনের উপর মাসাহ্ করা
১৫৯. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] উযুর সময় জাওরাবাইন এবং উভয় জুতার উপর মাসাহ্ করিয়াছেন।
সহিহ। ইমাম দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ হাদীসটি [মুনকার হওয়ায়] আবদুর রহমান বনু মাহ্দী এটি বর্ণনা করিতেন না। কেননা মুগীরাহ [রাঃআ:] সূত্রে প্রসিদ্ধ বর্ণনায় রয়েছেঃ নবি [সাঃআ:] মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করিয়াছেন। আবু মূসা আশআরী [রাঃআ:] সূত্রেও বর্ণিত আছেঃ নবি [সাঃআ:] উভয় জাওরাবের উপর মাসাহ্ করিয়াছেন। কিন্তু এর সানাদ মুত্তাসিল নয় এবং মজবুতও নয়।
হাসান। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অবশ্য আলী ইবনি আবী ত্বালিব, ইবনি মাসউদ, আল-বারাআ ইবনি আযিব, আনাস ইবনি মালিক, আবু উমামাহ, সাহল ইবনি সা’দ ও আমর ইবনি হুরাইস [রাঃআ:] প্রমূখ সাহাবীগণ তাঁদের উভয় জাওরাবের উপর মাসাহ করিয়াছেন। উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] এবং ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] সূত্রেও তা বর্ণিত আছে। সহীহঃ ইবনি মাসউদ, বারাআ, আনাস, ও হাসান হতেঃ আবু উমামাহ সূত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ অন্যান্য
অনুচ্ছেদ- ৬২ঃ –
১৬০. আওস ইবনি আবু আওস আস-সাক্বাফী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ওযুর সময় তার জুতাজোড়া ও দু’ পায়ের উপর মাসাহ্ করিয়াছেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৬৩ঃ [মোজার উপর] মাসাহ্ করার নিয়ম
১৬১. মুগীরাহ ইবনি শু’বাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করিতেন। বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ব্যতীত অন্যদের বর্ণনায় মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ মাসাহ করিতেন কথাটি রহিয়াছে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
১৬২. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের [মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার] উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে নীচের [তলার] দিক মাসাহ্ করাই উত্তম হত। অথচ আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে তাহাঁর [পায়ের] মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ মাসাহ্ করিতে দেখেছি।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৩. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাতে রহিয়াছে [আলী [রাঃআ:] বলেন] : আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে তাহাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করিতে দেখার আগে পায়ের তলার দিক ধৌত করাকে অধিক যুক্তি সঙ্গত মনে করতাম।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৪. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তাতে রহিয়াছে [আলী [রাঃআ:] বলেন] : ধর্মের মাপকাঠি যদি রায়ের [মানুষের মনগড়া অভিমত ও বিবেক-বিবেচনার] উপর নির্ভরশীল হত, তাহলে মোজার উপরিভাগের চেয়ে তলার দিক মাসাহ্ করাই অধিক যুক্তি সঙ্গত হত। অথচ নবি [সাঃআ:] তাহাঁর [পায়ের] মোজাদ্বয়ের উপরিভাগই মাসাহ্ করিয়াছেন।
সহিহ। হাদীসটি ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আমাশ হতে তাহাঁর [উপরোক্ত] সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রহিয়াছে [আলী [রাঃআ:] বলেন] : আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে তাহাঁর মোজার উপরিভাগ মাসাহ্ করিতে দেখার পূর্বে পায়ের তলার দিক ধৌত করাকে অধিক যুক্তিসঙ্গত মনে করতাম। ওয়াকী বলেনঃ এখানে উপরিভাগ দ্বারা বুঝানো হয়েছে [পায়ের] মোজাদ্বয়ের উপর। হাদীসটি আমাশ থেকে ঈসা ইবনি ইউনুসও ওয়াকীর অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবুস্ সাওদা হাদীসটি ইবনি আবদি খাইর হতে তাহাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন এভাবে : আমি আলী [রাঃআ:]-কে উযু করার সময় তাহাঁর দু পায়ের উপরিভাগ ধৌত করিতে দেখেছি। তিনি বলেছেন, যদি আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এরূপ করিতে না দেখতাম….। অতঃপর হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন। সহিহ। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৫. মুগীরাহ ইবনি শুবাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, তাবূক যুদ্ধের সময় আমি নবি [সাঃআ:]-কে উযু করিয়েছি। তিনি মোজাদ্বয়ের উপরিভাগ ও নিম্নভাগ মাসাহ্ করিয়াছেন।
দুর্বলঃ মিশকাত ৫২১। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি জানতে পেরেছি, সাওর হাদীসটি রাজা থেকে শোনেননি। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৬৪ঃ লজ্জাস্থানে পানি ছিটানো
১৬৬. সুফিয়ান ইবনি হাকাম আস-সাক্বাফী অথবা হাকাম ইবনি সুফিয়ান আস-সাক্বাফী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন পেশাব করিতেন, তখন উযু করে [লজ্জাস্থানে] পানি ছিটাতেন।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এ সানাদের ব্যাপারে সুফিয়ানের সাথে একদল বর্ণনাকারী ঐকমত্য পোষণ করিয়াছেন। তিনি বলেন, কারো মতে, এখানে হইবে- হাকাম অথবা ইবনি হাকাম। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৭. সাক্বীফ গোত্রের এক ব্যক্তি হতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে পেশাব করে আপন লজ্জাস্থানে পানির ছিটা দিতে দেখেছি।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৬৮. হাকাম অথবা ইবনি হাকাম হতে তাহাঁর পিতা হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] পেশাব করিলেন। অতঃপর উযু করে আপন লজ্জাস্থানে পানির ছিটা দিলেন।¬
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৫ঃ উযুর পর যে দুআ পড়তে হয়
১৬৯. উক্ববাহ ইবনি আমির হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর সাথে নিজেদের যাবতীয় কাজকর্ম করতাম এমনকি আমাদের উট চরানোর কাজও আমরা পালাক্রমে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতাম। একদা আমার উপর উট চরাবার পালা এলো সন্ধ্যায় উটগুলো নিয়ে আমি উটশালায় ফিরে এসে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে ভাষণরত অবস্থায় পেলাম। আমি শুনলাম, তিনি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলছেনঃ “তোমাদের মধ্যকার যে কেউ উত্তমরূপে উযু করে, অতঃপর দাঁড়িয়ে বিনয় ও একাগ্রতার সাথে দুরাকআত সলাত আদায় করলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।” একথা শুনে আমি বললামঃ বাহ্ বাহ্, এটা তো অতি উত্তম কথা! তখন [আগে থেকেই উপস্থিত] আমার সামনে বসা এক ব্যক্তি বলিলেন, হে উক্ববাহ্! এর আগে তিনি যা বলেছেন, সেটা আরও উত্তম। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখি তিনি হলেন উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:]। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আবু হাফ্স! সেটা কী? উমার [রাঃআ:] বলিলেন, আপনি এখানে আসার একটু আগেই নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যকার যে কেউ উত্তমরূপে উযু করার পর এরূপ বলেঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং তাহাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয় মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দাহ ও রসূল”- তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হয়। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে।
সহীহঃ মুসলিম অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৭০. উক্ববাহ ইবনি আমির আল-জুহানী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
উক্ববাহ ইবনি আমির আল-জুহানী [রাঃআ:] নবি [সাঃআ:]-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি তাতে উটশালায় কথাটি উল্লেখ করেননি। তিনি তাহাঁর বর্ণনায় উত্তমরূপে উযু করার পর আকাশের দিকে তাকিয়ে [দুআ পড়ার কথা] বলেছেন। তারপর বাকি অংশ মুআবিয়াহ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
{১৬৯} দারিমী [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হাঃ ৭১৬], আহমদ [৪/১৫০] আবু আক্বীল সূত্রে, নাসায়ী আমামুল ইয়াত্তমি ওয়াল লায়লাহ [হাঃ ৮৪] তিনি বলেন, আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন, সুওয়ায়িদ ইবনি নাসর ইবনি সুওয়ায়িদ। এর সানাদে একজন অজ্ঞাত লোক আছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৬ঃ যে ব্যক্তি একই উযুতে কয়েক ওয়াক্তের সলাত আদায় করে তার বর্ণনা
১৭১. আমর ইবনি আমির আল-বাজালী হইতে বর্ণিতঃ
বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ বলেন, তিনি হলেন আবু আসাদ ইবনি আমর। তিনি বলেন, একদা আমি আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:]-কে উযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলিলেন, নবি [সাঃআ:] প্রত্যেক সলাতের জন্যই [নতুনভাবে] উযু করিতেন। আর আমরা এক উযুতেই একাধিকবার সলাত আদায় করতাম।
সহীহঃ বোখারী। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৭২. সুলাইমান ইবনি বুরাইদা [রাঃআ:] হতে তার বাবা হইতে বর্ণিতঃ
সুলাইমান ইবনি বুরাইদাহ থেকে তাহাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] মাক্কাহ বিজয়ের দিন এক উযুতেই পাঁচ ওয়াক্ত সলাত আদায় করিয়াছেন এবং আপন মোজাদ্বয়ের উপর মাসাহ্ করিয়াছেন। [এ দৃশ্য দেখে] উমার [রাঃআ:] তাঁকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি আপনাকে এমন একটি কাজ করিতে দেখেছি, যা আপনি ইতোপূর্বে কখনো করেননি। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি ইচ্ছাকৃতভাবেই এরূপ করেছি।
সহীহঃ মুসলিম অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৬৭ঃ উযুর মধ্যে কোন অঙ্গের কোন অংশ শুকনা থাকলে
১৭৩. আনাস ইবনি মালিক [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি উযু করে নবি [সাঃআ:]-এর নিকট উপস্থিত হল। কিন্ত [উযুতে] তার পায়ে নখ পরিমাণ জায়গা শুকনা ছিল। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাকে বলিলেন, ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে আবার উযু করে এসো।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেছেন, এ হাদীসটি প্রসিদ্ধ নয়। এটি কেবল ইবনি ওয়াহ্হাব বর্ণনা করিয়াছেন। আর মাক্বিল ইবনি উবাইদুল্লাহ আল-জাযাবী আবু যুবাইর হতে, তিনি জাবির [রাঃআ:] হতে, তিনি উমার [রাঃআ:] হতে, তিনি নবি [সাঃআ:] হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছেঃ তিনি বলেছেন, ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে উযু করে এসো। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১. উযূর অঙ্গগুলি পূর্ণরূপে ধৌত করা ওয়াজিব। উযূতে যেসব অঙ্গ ধৌত করা ওয়াজিব সেসবের কোনটি ধৌত করা কেউ ছেড়ে দিলে, চাই তা অজ্ঞতা বা ভুল বশতঃ হোক না কেন তার পবিত্রতা অর্জন শুদ্ধ হইবে না।এ ব্যাপারে সকলে একমত। ২. হাদীসটি আরো প্রমাণ করে, অজ্ঞ লোককে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণের সাথে তালীম দিতে হইবে। ৩. জ্ঞানী ব্যক্তি কোন ভুল ও অন্যায় দেখলে তাতে নীরব থাকিবেন না বরং তা সংশোধন ও দূর করবেন। অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
১৭৪. হাসান বাসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
হাসান বাসরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে নবি [সাঃআ:] সূত্রে ক্বাতাদাহর অনুরূপ হাদীস বর্ণিত আছে।
{১৭৩} পূর্বেরটির ন্যায় এটিও সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ লিগাইরিহি
১৭৫. নবি [সাঃআ:]-এর জনৈক সহাবী হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] দেখলেন, এক ব্যক্তি সলাত আদায় করছে, অথচ তার পায়ের উপরিভাগে এক দিরহাম পরিমাণ স্থান শুকনো, [উযুর সময়] তাতে পানি পৌছেনি। নবি [সাঃআ:] তাঁকে পুনরায় উযু করে সলাত আদায়ের নির্দেশ দিলেন।
অযুর সুন্নত সমূহ -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply