লাআন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান

লাআন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান

 লাআন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায় – ১০ঃ লাআন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান

পরিচ্ছেদ ০১. লিআনের [স্বামী এবং স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান করা] বৈধতা এবং এর বিবরণ পরিচ্ছেদ ০২. লিআনকারী স্বামী- স্ত্রীর মাহরানার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৩. গর্ভবতী স্ত্রীকে লিআন করা পরিচ্ছেদ ০৪. লিআনের কসম করার সময় পঞ্চমবারে আল্লাহ্‌র ভয় দেখান মুস্তাহাব
পরিচ্ছেদ ০৬. ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করার বিধান
পরিচ্ছেদ ০৭. নিজ সন্তানকে স্বীকৃতি দানের পর পুনরায় অস্বীকার করার ব্যপারে সতর্কীকরণ
পরিচ্ছেদ ০৮. সন্তান অস্বীকার করার ইঙ্গিত প্রদান

পরিচ্ছেদ ০১. লি`আনের [স্বামী এবং স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান করা] বৈধতা এবং এর বিবরণ

১০৯৪ – ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, অমুক ব্যক্তি [উআইমের `আজলানী] জিজ্ঞেস করে বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল ! [সাঃআঃ] আপনি কি মনে করেন, আমাদের কেউ যদি তার স্ত্রীকে ব্যভিচারে লিপ্ত পায় তবে সে কি করিবে? যদি সে এ কথা ফাঁস করে দেয় তাহলে তা বিরাট ব্যপার হয়ে যাবে। আর যদি চুপ থেকে যায় তাহলে তাকে এরূপ বিরাট ব্যপারে চুপ থাকতে হইবে। [কথা শুনে] নবী [সাঃআঃ] তাকে কোন উত্তর দিলেন না। এরপর আর একদিন সে এসে বলিল, যে আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তাতেই আমি আজ পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছি। অতঃপর আল্লাহ্‌ [এর সমাধানকল্পে] সূরা নূরের আয়াতগুলো অবতীর্ণ করিলেন। নবী [সাঃআঃ] তাকে ঐসব আয়াত পড়ে শুনালেন এবং তাকে উপদেশ দিলেন ও জানালেন যে, পরকালের শাস্তি থেকে ইহকালের শাস্তি অনেক হালকা । উআইমের [রাঃআঃ] বলিলেন – না, আপনাকে যিনি সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন তাহাঁর শপথ আমি তার উপর মিত্থ্যা বলছি না। তারপর নবী [সাঃআঃ] তার স্ত্রীকে ডাকলেন, অনুরূপভাবে তাকে উপদেশ দিলেন। সে বলিল না- সত্য সহকারে যে আল্লাহ্‌ আপনাকে পাঠিয়েছেন তাহাঁর শপথ। তিনি [আমার স্বামী] মিথ্যাবাদী । এরপর নবী [সাঃআঃ] পুরুষের চারটি সাক্ষী আল্লাহ্‌র শপথ যোগে গ্রহন আরম্ভ করিলেন তারপর দ্বিতীয় পর্যায়ে মেয়েটির সাক্ষ্য আল্লাহ্‌র কসম যোগে চারবার গ্রহন করে তাহাদের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ করে দিলেন। {১১৯৫}

{১১৯৫} বুখারি ৪৭৪৮, ৫৩০৬, ৫৩১১, ৫৩১৩, ৫৩১৪, মুসলিম ১৪৯৩, ১৪৯৪, তিরমিজি ১২০২, ১২০৩, নাসায়ী ৩৪৭৩, ৩৪৭৪, ৩৪৭৫, আবূ দাউদ ২২৫৭, ইবনু মাযাহ ২০৬৯, আহমাদ ৪০০, ৪৪৬৩, ৪৫৭৩, মালেক ১২০২, দারেমী ২২৩১, ২২৩২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০২. লি `আনকারী স্বামী- স্ত্রীর মাহরানার বিধান

১০৯৫ – ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লি`আনকারী স্বামী-স্ত্রীকে বলেছিলেন, আল্লাহই তোমাদের হিসাব নিবেন। তোমাদের একজন মিথ্যাবাদী। তার [মহিলার] উপর তোমার কোন অধিকার নেই। সে বললঃ হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার মাল ? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি যদি সত্যি কথা বলে থাক, তাহলে এ মাল তার লজ্জাস্থানকে হালাল করার বিনিময়ে হইবে। আর যদি মিত্থ্যা বলে থাক, তবে এটা তুমি মোটেই চাইতে পারনা, তুমি তো তার থেকে অনেক দূরে। {১১৯৬}

{১১৯৬} বুখারি ৪৭৪৮, ৫৩০৬, ৫৩১১, ৫৩১২, ৫৩১৩, ৫৩১৪, ৫৩১৫, মুসলিম ১৪৯৩, ১৪৯৪, তিরমিজি ১২০৩, নাসায়ী ৩৪৭৩, ৩৪৭৪, আবূ দাউদ ২২৫৭, ২২৫৮, ২২৫৯, ইবনু মাযাহ ২০৬৯, আহমাদ ৪৪৬৩, মালেক ১২০২, দারেমী ২২৩১/ হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৩. গর্ভবতী স্ত্রীকে লি`আন করা

১০৯৬ – আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, [গর্ভবতী স্ত্রীকে অপবাদ দেয়া হলে] তোমরা মহিলার উপর লক্ষ্য রাখ, যদি সন্তান পূর্ণ সাদা ও সোজা [বাঁকা নয়] হয় তাহলে তা তার স্বামীরই হইবে। আর যদি সন্তান সুর্মা মাখা চোখ ও কোঁকড়া চুল বিশিষ্ট [নিগ্রোদের] হয় তাহলে যার সাথে তার ব্যভিচারের অপবাদ দেয়া হয়েছে সন্তানটি তার হইবে। {১১৯৭}

{১১৯৭} মুসলিম ১৪৯৬, নাসায়ী ৩৪৬৮, আহমাদ ১২০৪২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৪. লি`আনের কসম করার সময় পঞ্চমবারে আল্লাহ্‌র ভয় দেখান মুস্তাহাব

১০৯৭ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক ব্যক্তিকে [লি`আনের কসম করার সময়] ৫ম বার তার হাত তার মুখে রাখবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন এটা [বিচ্ছেদকে ও মিথ্যাবাদীর শাস্তিকে] নিশ্চিতকারী।- এর রাবীগণ নির্ভরযোগ্য। {১১৯৮}

{১১৯৮} বুখারি ২৬৭১, ৪৭৪৭, ৪৩০৩, আবূ দাউদ ২২৫৪, ২২৫৬, তিরমিজি ৩১৭৯, আবূ দাউদ ২০৬৭, আহমাদ ২৪৬৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস পরিচ্ছেদ ০৫. লি`আনের মাধ্যমে স্বামী- স্ত্রীর পৃথক হয়ে যাওয়া

১০৯৮ – সাহ্‌ল বিন সা`দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দু`জন লি`আন বা পরস্পর অভিশাপকারীর ঘটনা সম্পর্কে বলেছেন, যখন তারা স্বামী–স্ত্রী তাহাদের লি`আন কার্য সমাধান করিল তখন পুরুষটি বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমি তার উপর মিত্থ্যা অপবাদ দিয়েছি বলে সাব্যস্ত হইবে-যদি আমি তাকে রেখে দিই। তারপর সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ লাভের পূর্বেই তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। {১১৯৯}

{১১৯৯} বুখারি ৪৩০, ৪৭৪৫, ৪৭৪৬, ৫২৫৯, ৫৩০৯, ৬৮৫৪, ৭১৬৫, মুসলিম ১৪৯২, নাসায়ী ৩৪০২, আবূ দাউদ ২২৪৫, ২২৪৮, ২২৫১, ইবনু মাযাহ ২০৬৬, আহমাদ ২২২৯, মালেক ১২০১, দারেমী ২২২৯। লি`আন করার সাথে সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ এমনটিতেই সংঘটিত হয়ে যায়, তালাক দেয়ার প্রয়োজন পড়েনা। সুতরাং সে লোকটি অজ্ঞতার কারনে যা করিয়াছেন তা বিধিসম্মত হয়নি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৬. ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করার বিধান

১০৯৯ – ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

কোন লোক নবী [সাঃআঃ] – এর নিকটে এসে বলিল, আমার স্ত্রী কোন স্পর্শকারীর হাতকে প্রত্যাখ্যান করে না। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাকে দূর করে দাও। সে বলিল, আমি ভয় করছি আমার অন্তর তার বাসনায় ঝুঁকে থাকিবে। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তাকে উপভোগ করিতে থাক। -রাবীগন নির্ভরযোগ্য।

ইমাম নাসায়ী অন্য সূত্রে ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে এরূপ শব্দে বর্ণনা করিয়াছেন-`নবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, তুমি তাকে তালাক দাও, সে বলিল, আমি তাকে ছেড়ে ধৈর্য ধারন করিতে পারব না, নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, তাহলে তাকে রেখে দাও।{১২০০}

{১২০০} আবূ দাউদ ২০৪৯, নাসায়ী ৩২২৯, ৩৪৬৪, ৩৪৬৫। শাইখ আলবানী সহিহ আবূ দাউদ ২০৪৯ গ্রন্থে একে সহিহ বলেছেন, সহিহ নাসায়ী ৩৪৬৪ গ্রন্থে এর সনদকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৭. নিজ সন্তানকে স্বীকৃতি দানের পর পুনরায় অস্বীকার করার ব্যপারে সতর্কীকরণ

১১০০ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি দু`জন লি`আনকারী সম্বন্ধে কুরআনের আয়াত নাযিল হবার সময় নবী [সাঃআঃ] –কে বলিতে শুনেছেন, যে নারী কোন সম্প্রদায়ের সাথে এমন বাচ্চাকে শামিল করে যে তাহাদের নয়, তার সাথে আল্লাহ্‌র কোন সম্পর্ক নেই এবং তিনি কখনো তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আর যে পুরুষ নিজের সন্তানকে চিনতে পেরেও অস্বীকার করলো, কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তার থেকে আড়ালে থাকিবেন এবং সমস্ত সৃষ্টিকুলের সামনে তাকে অপমান করবেন। -ইবনু হিব্বান একে সহীহ্‌ বলেছেন। {১২০১}

{১২০১} ইমাম সনআনী সুবুলুস সালাম ৩/৩০৫ গ্রন্থে বলেন, আব্দুল্লাহ বিন ইউনুস সাইদ আল মাকবুরী থেকে একাই বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদিস ছাড়া আব্দুল্লাহর অন্য কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। সুতরাং এর বিশুদ্ধতার বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। শাইখ আলবানী জঈফ আবূ দাউদ ২২৬৩, জঈফ নাসায়ী ৩৪৮১ গ্রন্থদ্বয়ে একে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

১১০১ – উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন সন্তানের প্রতি তার সন্তান হবার স্বীকৃতি এক মুহূর্তের জন্য দান করিবে সে তার ঐ স্বীকৃতিকে আর অস্বীকার করিতে পারবে না। -এ হাদিস হাসান ও মাওকূফ। {১২০২}

{১২০২} বাইকাকী আল কুবরা ৭ম খণ্ড ৪১১-৪১২ পৃষ্ঠা, এর সনদে মাজালিদ ইবনু সাঈদ রয়েছে, যাকে অনেকে জঈফ হিসেবে আখ্যায়িত করিয়াছেন। ইবনু হাজার আসকালানী তাহাঁর আত তাকরীবুত তাহযিব গ্রন্থে বলেছেন, তিনি শক্তিশালী বর্ণনাকারী নন, শেষ বয়সে তাহাঁর স্মৃতিশক্তি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ০৮. সন্তান অস্বীকার করার ইঙ্গিত প্রদান

১১০২ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

এক ব্যক্তি বলিল, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার স্ত্রী একটি কাল রং-এর পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার কিছু উট আছে কি? সে জবাব দিল হাঁ। তিনি বলিলেন, সেগুলোর রং কেমন? সে বললঃ লাল। তিনি বলিলেন, সেগুলোর মধ্যে কোনটি ছাই বর্ণের আছে কি? সে বললঃ হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, তাহলে সেটিতে এমন রঙ কোত্থেকে এল? লোকটি বলিল, সম্ভবত পূর্ববর্তী বংশের কারনে এমন হয়েছে। তিনি বলিলেন, তাহলে হইতে পারে তোমার এ সন্তান ও বংশগত কারনে এমন হয়েছে। {১২০৩}

মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে- সে তার সন্তানের রং কালো বলে অভিযোগ করার পর] সন্তানকে অস্বীকার করার ইঙ্গিত করেছিল। আর রাবী হাদিসের শেষাংশে বলেছেন, নবী [সাঃআঃ] সন্তানটিকে অস্বীকার করার অবকাশ তাকে দেননি।

{১২০৩} বুখারি ৬৮৪৭, ৭৩১৪, মুসলিম ১৫০০, তিরমিজি ২১২৮, নাসায়ী ৩৪৭৮, ৩৪৭৯, আবূ দাউদ ২২৬০, ইবনু মাযাহ ২০০২, আহমাদ ৭১৪১, ৭৭০২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

One response to “লাআন বা পরস্পরের প্রতি অভিশাপ প্রদান”

Leave a Reply