অপবিত্র পবিত্রবা – মযী, সহবাস, কুরআন, মাসজিদ, গোসল
অপবিত্র পবিত্রবা – মযী, সহবাস, কুরআন, মাসজিদ, গোসল >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ৮৩-১০৩ =২১টি
অনুচ্ছেদ- ৮৩ঃ বীর্যরস [মযী] সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ- ৮৪ঃ হায়িযগ্রস্থা স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা ও পানাহার করা
অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ সহবাসে বীর্যপাত না হলে
অনুচ্ছেদ- ৮৬ঃ একাধিকবার সঙ্গমে একবার গোসল করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ- ৮৭ঃ একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাসের পূর্বে উযু করা
অনুচ্ছেদ- ৮৮ঃ অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো
অনুচ্ছেদ- ৮৯ঃ অপবিত্র অবস্থায় পানাহার প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ৯০ঃ যে বলে, অপবিত্র ব্যক্তি উযু করিবে
অনুচ্ছেদ- ৯১ঃ অপবিত্র ব্যক্তির বিলম্বে গোসল করা
অনুচ্ছেদ- ৯২ঃ অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া
অনুচ্ছেদ- ৯৩ঃ জানাবাতের অবস্থায় মুসাফাহ করা
অনুচ্ছেদ-৯৪ঃ অপবিত্র ব্যক্তির মাসজিদে প্রবেশ প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ- ৯৫ঃ ভুলবশত কোন ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় সলাতে ইমামতি করলে
অনুচ্ছেদ- ৯৬ঃ কোন ব্যক্তির রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে
অনুচ্ছেদ -৯৭ঃ পুরুষের ন্যায় নারীদের স্বপ্নদোষ হলে
অনুচ্ছেদ – ৯৮ঃ যে পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করা যায়
অনুচ্ছেদ -৯৯ঃ জানাবাতের গোসল করার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-১০০ঃ গোসলের পর উযু করা
অনুচ্ছেদ-১০১ঃ গোসলের সময় মহিলার তাহাদের চুলের বাঁধন খুলবে কি?
অনুচ্ছেদ-১০২ঃ অপবিত্র ব্যক্তির খিত্বমী [এক ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ] মিশ্রিত পানি দ্বারা মাথা ধোয়া
অনুচ্ছেদ- ১০৩ঃ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রবাহিত বীর্যের হুকুম
অনুচ্ছেদ- ৮৩ঃ বীর্যরস [মযী] সম্পর্কে
২০৬. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার খুব বেশি মযী নির্গত হতো। এজন্য আমি গোসল করতাম, এমনকি [অত্যধিক গোসলের কারণে] আমার পিঠ ফেটে যেত [ব্যথা অনুভুত হতো]। তাই আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বিষয়টি অবহিত করলাম কিংবা কেউ তাঁকে বিষয়টি অবহিত করলো। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন এরূপ করো না। তোমার [লজ্জাস্থানে] মযী দেখিতে পেলে তা ধুয়ে নিবে এবং সালাতের উযুর ন্যয় উযু করিবে। তবে বীর্য নির্গত হলে গোসল করিবে। {২০৫}
সহিহঃ তার এ কথাটি বাদেঃ তবে বীর্য নির্গত হলে গোসল করিবে। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০৭. আল-মিক্বদাদ ইবনিল আসওয়াদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] তাঁকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে জিজ্ঞাসা করেন, কোন ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর নিকটবর্তী হলেই বীর্যরস নির্গত হলে তাহাঁর করণীয় কী? নবি [সাঃআ:] এর কন্যা আমার কাছে রয়েছে, সেজন্য আমি তাঁকে [] এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করিতে লজ্জাবোধ করছি। মিক্বদাদ [রাঃআ:] বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ তোমাদের কারো এরূপ অবস্থা হলে সে যেন তাহাঁর লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয় এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০৮. উরওয়াহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] মিক্বদাদ [রাঃআ:] কে বলিলেন, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। মিক্বদাদ [রাঃআ:] নবি [সাঃআ:] কে [মযী বের হলে করনীয় সম্পর্কে] জিজ্ঞাসা করলে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, সে যেন তাহাঁর পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ ধুয়ে নেয়।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২০৯. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি মিক্বদাদ [রাঃআ:] কে বললাম, অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ। মিক্বদাদ [রাঃআ:] হতে নবি [সাঃআ:] এর সূত্রে অন্য এক বর্ণনায় অণ্ডকোষের কথা উল্লেখ নেই।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১০. সাহল ইবনি হুনায়িফ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার অত্যধিক বীর্যরস নির্গত হতো। ফলে অধিকাংশ সময় আমি গোসল করতাম। অবশেষে আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর নিকট এ বিষয়ে জিজ্ঞাস করলাম। তিনি বললেনঃ বীর্যরস নির্গত হলে উযু করাই যথেষ্ট। আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল! কাপড়ে বীর্যরস লেগে গেলে কি করণীয়? তিনি বল্লেনঃ এক অঞ্জলি পানি নিয়ে কাপড়ের যে স্থানে মযী লেগেছে বলে মনে হইবে, ঐ স্থান হালকাভাবে ধুয়ে ফেললে যথেষ্ট হইবে।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। মযী নির্গত হলে গোসল ওয়াজিব নয়, উযু করা ওয়াজিব। তবে বীর্য বের হলে গোসল করা ওয়াজিব।
২। লজ্জাস্থান ধুয়ে মযী দূর করলেই মযীর অপবিত্রতা দূর হয়ে যায়। যেমনটি নবি [সাঃআ:] নির্দেশ দিয়েছেন।
৩। স্ত্রীর পিতা অর্থাৎ শ্বশুরের উপস্থিতে যৌন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্লেখ না করা মুস্থাহাব [পছন্দনীয়]। ৪। একজনের সংবাদ [খবরে ওয়াহিদ] গ্রহণযোগ্য। ৫। কাপড়ে মযী লেগে থাকলে তাতে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২১১. আবদুল্লাহ ইবনি সাদ আল-আনসারী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে জিজ্ঞাস করলামঃ কী কারণে গোসল ওয়াজিব হয়? এবং গোসলের [বা পেশাবের] পর পুরুষাঙ্গ থেকে নির্গত পানি [মযী] সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বলিলেন ঐ পানিকে বীর্যরস বলা হয়। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক লোকেরই বীর্যরস নির্গত হয়। বীর্যরস নির্গত হলে তোমরা লজ্জাস্থান ও অণ্ডকোষ ধুয়ে ফেলবে এবং সালাতের উযুর ন্যায় উযু করিবে।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৮৪ঃ হায়িযগ্রস্থা স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা ও পানাহার করা
২১২. হারাম ইবনি হাকীম থেকে তাহাঁর চাচার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ আমার স্ত্রী হায়িয অবস্থায় আমার জন্য কতটুকু হালাল? তিনি বলিলেন, পায়জামার উপরের অংশ তোমার জন্য হালাল। তিনি ঋতুবতী স্ত্রীকে নিয়ে একত্রে পানাহার করার কথা ও উল্লেখ করেন। অতঃপর শেষ পর্যন্ত হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। হায়িযগ্রস্তা স্ত্রীর কাপড়ের [পায়জামার] উপর দিয়ে স্বামীর জন্য মেলামেশা করা জায়িয। অর্থাৎ স্বামীর জন্য ঋতুবতী স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গ ব্যতীত সবকিছুর সাথে আনন্দ ভোগ করা বৈধ। তবে এরূপ অবস্তায় স্ত্রীর গুতাঙ্গের উপর কাপড় ফেলে রাখতে হইবে। তা আলোচ্য হাদীসসহ অন্য হাদীসে সুস্পষ্টভাবে এসেছে। ২। শরঈ হুকুম জানার জন্য লজ্জাকর বিষয়েও প্রশ্ন করা বৈধ। ৩। হায়িয অবস্থায় যৌন সম্ভোগ বর্জন করাই অতি উত্তম। এ আশঙ্কায় যে, হয়ত তা স্ত্রীর গুপ্তাঙ্গে মেলামেশার দিকে ধাবিত করিবে। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১৩. মুআয ইবনি জাবাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে জিজ্ঞাসা করলাম, ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রীলোক পুরুষের জন্য কতটুকু হালাল? তিনি বলিলেন, পায়জামার উপরের অংশ [হালাল]। তবে তা থেকেও বেঁচে থাকাও উত্তম। {২১২}
দুর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৫১১৫, মিশকাত ৫৫২। {২১২} ইমাম বাগাভী এটি মিসবাহুস সুন্নাহ [১/২৪৬, হাঃ ৩৮৫] গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, এর সানাদ মজবুত নয়। মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন এর সানাদে তিনটি দোষ আছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৮৫ঃ সহবাসে বীর্যপাত না হলে
২১৪. উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় লোকদের কাপড় চোপড়ের স্বল্পতার কারণে কেবল সহবাসে বীর্য নির্গত না হলে গোসল না করার অনুমতি প্রদান করেন। তবে পরবর্তীতে এরূপ অবস্থায় [বীর্যপাত না হলেও] তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন এবং গোসল ত্যাগ না করিতে বলেন।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, অর্থাৎ বীর্যপাত হলে গোসল করা। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১৫. উবাই ইবনি কাব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
মুফতীগন ফাতাওয়াহ দিতেন যে, কেবল বীর্য বের হলেই গোসল করিতে হইবে। এটা ছিল এক ধরনের বিশেষ সুবিধা। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় এ বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে তিনি গোসল করার নির্দেশ দেন।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেছেন, [স্ত্রীর] চার অঙ্গের মাঝখানে বসলে এবং এক যৌনাঙ্গ অপর যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দিলেই গোসল ওয়াজিব হইবে।
সহিহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২১৭. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেন, পানির জন্যই পানি ব্যবহার করিতে হইবে। [অর্থাৎ বীর্যপাত হলেই গোসল করিতে হইবে]। আবু সালামাহ [রাঃআ:] এরূপই করিতেন।
সহিহঃ মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে হাদিসসমুহ থেকে শিক্ষাঃ ১। সহবাস করলে [স্বামী স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্র হলে] গোসল করা ওয়াজিব, তাতে বীর্যপাত না হলেও। ২। সহবাসে বীর্যপাত না হলে তাতে গোসল না করার সুযোগ ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে তা রহিত করা হয়েছে। ৩। কোন একজনের লজ্জাস্থানের মাথা গুপ্তাঙ্গের অগ্রভাগে প্রবেশ করলেই গোসল ওয়াজিব। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৮৬ঃ একাধিকবার সঙ্গমে একবার গোসল করা সম্পর্কে
২১৮. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
কোন একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] সকল স্ত্রীদের নিকট গেলেন এবং একবারই গোসল করিলেন।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১ । কেউ তার একাধিক স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে এক সহবাসের পর আরেক সহবাসের পূর্বে গোসল করা ওয়াজিব নয়। যদিও সে একই রাতে একাধিক স্ত্রীর সাথে একাধিকবার সহবাস করে । আর এটি মোটেই এক সহবাসের পর আরেক সহবাসের জন্য গোসল করা মুস্তাহব হওয়াকে নিষেধ করে না। ২ । সামর্থ থাকলে একই রাতে অধিকবার সহবাস করা জায়িয । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৮৭ঃ একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাসের পূর্বে উযু করা
২১৯. আবু রাফি [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] একদিন তাহাঁর স্ত্রীদের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেক স্ত্রীর নিকটই গোসল করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনি সবশেষে একবার গোসল করলেই তো পারতেন? তিনি বলিলেন, এরূপ করাই অধিকতর পবিত্রতা, উৎকৃষ্টতা ও পরিচ্ছন্নতার পরিচায়ক।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২২০. আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, তোমাদের কেউ একবার সহবাস করার পর পুনরায় সহবাসের ইচ্ছা করলে সে যেন উযু করে নেয়।
সহীহঃ মুসলিম। এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১ । প্রত্যেক সহবাসের পূর্বে গোসল করা মুস্তাহাব । এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই । ২ । কেউ পুনরায় সহবাসের ইচ্ছা করলে উযু করে নেয়া জায়িয । ৩ । জুনুবী ব্যক্তি ঘুমের ইচ্ছা করলে হাত ধোয়া অথবা সালাতের উযুর ন্যায় উযু করা জরুরী । তাবে এসবের প্রত্যেক অবস্থায় গোসল করাই উত্তম । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৮৮ঃ অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানো
২২১. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা উমার ইবনিল খাত্তাব [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর কাছে আরয করিলেন যে, তিনি রাতে [প্রায়ই] অপবিত্র হন [এরূপ অবস্থায় করণীয় কি?] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ উযু কর এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নাও, তারপর ঘুমাও।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৮৯ঃ অপবিত্র অবস্থায় পানাহার প্রসঙ্গে
২২২. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] অপবিত্র অবস্থায় ঘুমানোর ইচ্ছা করলে সালাতের উযুর ন্যায় উযু করে নিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২৩. ইউনুস হতে যুহরী হইতে বর্ণিতঃ
ইউনুস হতে যুহরী সূত্রে একই সানাদে সমার্থবোধক হাদীস বর্ণিত আছে। তাতে একথাও রয়েছেঃ অপবিত্র অবস্থায় তিনি খাওয়ার ইচ্ছা করলে তাহাঁর উভয় হাত ধুয়ে নিতেন।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইউনুস থেকে ইবনি ওয়াহব ও হাদীসটিই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি খাওয়ার কথাটা আয়িশা [রাঃআ:]-এর বক্তব্য বলে উল্লেখ করিয়াছেন। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯০ঃ যে বলে, অপবিত্র ব্যক্তি উযু করিবে
২২৪. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] অপবিত্র অবস্থায় খানা খাওয়ার অথবা ঘুমাবার ইচ্ছা করলে উযু করে নিতেন।
সহীহঃ মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২৫. আম্মার ইবনি ইয়াসির [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] অপবিত্র ব্যক্তিকে উযু করে পানাহার করার অথবা ঘুমাবার অনুমতি প্রদান করিয়াছেন। আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] আবদুল্লাহ ইবনি উমার এবং আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআ:] বলেছেন, অপবিত্র ব্যক্তি খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করে নিবে।
দুর্বল। ইমাম আবু দাউদ বলেনঃ এ হাদীসে ইয়াহইয়া ইবনি ইয়ামার ও আম্মার ইবনি ইয়াসারের মাঝে এক ব্যক্তি রয়েছে। আর আলী ইবনি আবু ত্বালিব, ইবনি উমার, আবদুল্লাহ ইবনি আমর বলেনঃ জুনুবী খাওয়ার ইচ্ছা করলে উযু করে নিবে। {২২৪} তিরমিজি [অধ্যায়ঃ সালাত, অনুঃ উযু করে নিলে জুনুবী ব্যক্তির খাওয়া ও ঘুমানোর অনুমতি আছে, হাঃ ৬১৩], আহমদ [৪/৩২০] হাম্মাদ সূত্রে ইমাম তিরমিজি বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহিহ। আহমদ শাকির তিরমিজির উপর তার তালীক্ব গ্রন্থে হাদীসটির পরে আবু দাউদের কৃত বক্তব্য উল্লেখ করেন । অনুরূপভাবে উল্লেখ করেন ইমাম দারাকুতনীর বক্তব্যঃ ইয়াহইয়া আম্মারের সাক্ষাত পাননি, সানাদটি মুনকাতি। অতঃপর আহমদ শাকির বলন, আম্মার নিহত হয় সিফফিনে ৩৭ হিজরীতে। অতএব এটা অসম্ভব বা দূরের কথা নয় যে, তিনি ইয়াহইয়া ইবনি ইয়াসার এর সাক্ষাত পেয়েছেন। নাসিরুদ্দিন আলবানি একে দুর্বল বলেছেন । হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯১ঃ অপবিত্র ব্যক্তির বিলম্বে গোসল করা
২২৬. গুদায়িফ ইবনিল হারিস হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাঃআ:]-কে বললাম, আপনি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে জানাবাতের গোসল কখন করিতে দেখেছেন, রাতের প্রথমভাগে না শেষভাগে? আয়িশা [রাঃআ:] বলিলেন, তিনি কখনো রাতের প্রথম ভাগে গোসল করিতেন আবার কখনো রাতের শেষ ভাগে। আমি বললাম,
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহু আকবার!
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করিয়াছেন। আমি বললাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বিতর [সালাত] রাতের প্রথম দিকে আদায় করিতেন, না শেষদিকে? তিনি বলিলেন, কখনো রাতের প্রথমদিকে বিতর আদায় করিতেন আবার কখনো শেষ রাতে। আমি বললাম,
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহু আকবার!
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করিয়াছেন। আমি বললাম, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কুরআন তিলাওয়াত উচ্চৈঃস্বরে করিতেন না নিম্নস্বরে? তিনি বলিলেন, তিনি কখনো উচ্চৈঃস্বরে এবং কখনো নিম্নস্বরে তিলাওয়াত করিতেন। আমি বললাম,
اللَّهُ أَكْبَرُ
আল্লাহু আকবার!
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি এ ব্যাপারে প্রশস্ততা ও সহজতা দান করিয়াছেন।
সহীহঃ মুসলিমে এর প্রথমাংশ রয়েছে। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২২৭. আলী ইবনি আবু ত্বালিব [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, যে ঘরে মূর্তি, কুকুর অথবা অপবিত্র ব্যক্তি রয়েছে সেখানে মালায়িকাহ [ফেরেশতা] প্রবেশ করে না।
দূর্বল : জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৬২০৩ , হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২২৮. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কোনরূপ পানি স্পর্শ না করেই অপবিত্র অবস্থায় ঘুমাতেন।
সহিহ। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইয়াযীদ ইবনি হারুন বলিতেন, এ হাদীসটি [অর্থাৎ আবু ইসহাক্বের হাদীস] অনুমান নির্ভর। এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষা : ১ । জানাবাতের গোসল যথাশীঘ্র করা ওয়াজিব নয় । ২ । বিতর সলাত প্রথম ও শেষ রাতে উভয সময়েই আদায় করা জায়িয ।তবে কেউ শেষ রাতে ক্বিয়াম করলে তার জন্য শেষ রাতে আদায় করাই উত্তম । ৩ । কুকুর ও ছবি না রাখা । ৪ । বিলম্বে জানাবাতের গোসল করা ভাল কাজের প্রতিবন্ধক । ৫ । জুনুবী ব্যক্তির গোসল না করে উযু করে ঘুমানো জায়িয । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯২ঃ অপবিত্র অবস্থায় কুরআন পড়া
২২৯. আবদুল্লাহ ইবনি সালামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি এবং আমার সাথে আরো দুজন লোক আলী [রাঃআ:] -এর নিকট গেলাম। তাহাদের একজন আমাদের গোত্রের আর অন্যজন সম্ভবত বানু আসাদ গোত্রের। আলী [রাঃআ:] তাহাদের দুজনকে কোন কাজে পাঠালেন এবং প্রেরণের সময় বলিলেন, তোমরা দুজনেই শক্তিশালী। কাজেই তোমরা তোমাদের শক্তি দ্বীনের ক্ষেত্রে ব্যয় করিবে। অতঃপর তিনি পায়খানায় গেলেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে পানি চাইলেন। তিনি এক অঞ্জলি পানি হাতে নিয়ে [মুখ] মুছে কুরআন তিলাওয়াত করিতে লাগলেন। লোকেরা বিষয়টি আপত্তিকর মনে করলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] পায়খানা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের কুরআন পড়াতেন এবং আমাদের সঙ্গে গোশতও খেতেন। একমাত্র জানাবাত [গোসল ফরয হওয়ার অপবিত্রতা] ব্যতিত কোন কিছুই তাঁকে কুরআন থেকে বিরত রাখতে পারতো না। {২২৮}
দূর্বল : মিশকাত ৪৬০। হাদীস থেকে শিক্ষা : ১ । কেউ কোন সুন্নাত বিরোধী কাজ হতে দেখলে তার উচিত ঐ কর্মসম্পাদনকারীকে নিষেধ করা , ২ । ছোট অপবিত্র অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়িয । হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯৩ঃ জানাবাতের অবস্থায় মুসাফাহ করা
২৩০. হুযাইফাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা নবি [সাঃআ:] -এর সাথে তার সাক্ষাত ঘটলে তিনি হুযাইফাহর দিকে [মুসাফাহ করিতে] এগিয়ে আসলেন। তখন হুযাইফাহ [রাঃআ:] বলিলেন, আমি তো অপবিত্র অবস্থায় আছি। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ মুসলমান [কখনো] অপবিত্র হয় না বা অপবিত্র নয়।
সহিহ : মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৩১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মদীনার এক রাস্তায় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর সাথে আমার সাক্ষাত হয়। আমি তখন অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম। তাই আমি পিছনে হটে গিয়ে গোসল করে আসলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন হে আবু হুরাইরা! তুমি এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আমি বললাম, আমি অপবিত্র অবস্থায় ছিলাম বিধায় অপবিত্র অবস্থায় আপনার সাথে বসা অপছন্দ করলাম। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! মুসলমান [কখনো] অপবিত্র হয় না।
এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১ । জানাবাত এমন কোন অপবিত্রতা নয় যদদ্বারা জুনুবী ব্যক্তির সঙ্গে মুসাফাহ্ ও সাক্ষাতকারী অপবিত্র হয় । ২ । জুনুবী ব্যক্তির জন্য গোসলের পূর্বে স্বীয় প্রয়োজনীয় কাজে চলে যাওয়া জায়িয আছে, যদি সলাতের ওয়াক্ত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে । ৩ । মুসলমান পাক, তারা কোন অবস্থাতেই [প্রকৃত] অপবিত্র হয় না । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৯৪ঃ অপবিত্র ব্যক্তির মাসজিদে প্রবেশ প্রসঙ্গে
২৩২. জাসরাহ বিনতু দিজাজাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ [রাঃআ:] -কে বলিতে শুনিয়াছি, একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এসে দেখলেন, সহাবাদের ঘরের দরজা মাসজিদের দিকে ফেরানো। [কেননা তারা মাসজিদের ভিতর দিয়েই যাতায়াত করিতেন] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ এসব ঘরের দরজা মাসজিদ হতে অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। নবি [সাঃআ:] পুনরায় এসে দেখলেন, লোকেরা কিছুই করেননি এ প্রত্যাশায় যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাহাদের ব্যাপারে কোন অনুমতি নাযিল হয় কিনা। অতঃপর নবি [সাঃআ:] বের হয়ে তাহাদের আবারো বললেনঃ এসব ঘরের দরজা মাসজিদ হতে অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও। কারণ ঋতুবতী মহিলা ও অপবিত্র ব্যক্তির জন্য মাসজিদে যাতায়াত আমি হালাল মনে করি না।
দূর্বলঃ জঈফ আর-জামিউস সাগীর ৬১১৭, ইরওয়া ১৯৩, হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯৫ঃ ভুলবশত কোন ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় সলাতে ইমামতি করলে
২৩৩. আবু বাকরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] ফাজরের সলাত শুরু করে [হঠাৎ তা ছেড়ে দিলেন] আর লোকদেরকে হাতে ইশারা করিলেন যে, তোমরা সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। কিছুক্ষণ পর [ফারয গোসল করে] তিনি ফিরে এলেন। তখন তাহাঁর মাথা থেকে পানি ঝরে পড়ছিল। অতঃপর তিনি সলাত আদায় করালেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৩৪. হাম্মাদ ইবনি সালামাহ হইতে বর্ণিতঃ
হাম্মাদ ইবনি সালামাহ হতে উক্ত হাদীস একই সানাদ এবং একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। তবে তার বর্ণিত হাদীসের প্রথমাংশে রয়েছেঃ তিনি তাকবীরে তাহরীমা বলিলেন। আর শেষাংশে রয়েছেঃ তিনি সলাত আদায় শেষে বলিলেন, আমি ও মানুষ এবং আমি অপবিত্র ছিলাম। আবু হুরাইরার [রাঃআ:] বর্ণনায় রয়েছেঃ যখন তিনি সলাতের স্থানে দাঁড়ালেন এবং আমরা তাহাঁর তাকবীর ধ্বনি শুনার অপেক্ষা করছিলাম, তখন তিনি ওখান থেকে চলে গেলেন এবং যাওয়ার সময় বলে গেলেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান কর। মুহাম্মাদ ইবনি সীরীন নবি [সাঃআ:] -এর সূত্রে মুরসালভাবে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকবীরে তাহরীমা দিলেন, অতঃপর লোকদেরকে বসার জন্য ইশারা করে চলে গিয়ে গোসল করিলেন। এরূপই বর্ণনা করিয়াছেন মালিক, ইসমাঈল ইবনি আবু হাকিম হতে, তিনি আত্বা ইবনি ইয়াসীর হতে। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কোন এক সলাতের তাকবীর দিলেন। রাবী ইবনি মুহাম্মাদ নবি [সাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি তাকবীর বলিলেন।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৩৫. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা সলাতের জন্য ইক্বামাত দেয়া হলে লোকজন কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়ালো। অতঃপর রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এসে তাহাঁর নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ালেন। এমন সময় তাহাঁর স্মরণ হলো, তিনি গোসল করেননি। তিনি লোকদের বলিলেন, তোমরা যথাস্থানে অবস্থান কর। এ বলে তিনি ঘরে গিয়ে গোসল করে আমাদের নিকট ফিরে আসলেন, তখন তাহাঁর মাথা থেকে পানি ঝরে পড়ছিল। আমরা তখনও কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা ইবনি হারবের বর্ণনা। আইয়াশের বর্ণনায় আছেঃ তিনি গোসল করে আমাদের নিকট ফিরে আসা পযর্ন্ত আমরা ঐভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে তাহাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। এ অনুচ্ছেদের হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১ । জামাআতে উপস্থিত লোকদের ইমামের জন্য অপেক্ষা করা জায়িয । ২ । কেউ ভুলবশতঃ জুনুবী অবস্থায় মাসজিদে প্রবেশের পর তার অপবিত্রতার কথা স্মরণ হওয়া মাত্রই মাসজিদ হতে বের হয়ে যাবে । ৩ । যখন প্রকাশ পাবে যে, ইমাম অপবিত্র হওয়ার কারণে পবিত্র হওয়ার জন্য চলে গেছেন এবং পবিত্র হয়েই ফিরে আসবেন, তখন অন্য কাউকে তথায় ইমাম নিযুক্ত করিবে না । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৯৬ঃ কোন ব্যক্তির রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে
২৩৬. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] -কে এমন ব্যক্তি সর্ম্পকে জিজ্ঞাসা করা হল, যে ঘুম থেকে জেগে [বীর্যপাতের দরুণ কাপড়] ভিজা দেখিতে পায় অথচ স্বপ্নদোষের কথা তার স্মরণ হচ্ছে না। তিনি বলিলেন, তাকে গোসল করিতে হইবে। এটাও জিজ্ঞাসা করা হল যে, এক ব্যক্তির তার স্বপ্নদোষ হয়েছে বলে মনে পড়ছে, অথচ কাপড়ে কোন ভিজা দেখিতে পেল না। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন, তাকে গোসল করিতে হইবে না। উম্মু সুলাইম [রাঃআ:] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! নারীরাও [পুরুষের] অনুরূপ কিছু দেখিতে পেলে তাহাদেরও কি গোসল করিতে হইবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, নারীরা তো পুরুষের মতই।
হাসান : তবে উম্মু সুলাইম [রাঃআ:]-এর এ কথাটি বাদে : নারীরাও [পুরুষের] অনুরূপ কিছু দেখিতে, হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
অনুচ্ছেদ -৯৭ঃ পুরুষের ন্যায় নারীদের স্বপ্নদোষ হলে
২৩৭. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আনাস ইবনি মালিকের মা উম্মু সুলাইম আল-আনসারিয়্যাহ [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট এসে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ সত্যের ক্ষেত্রে লজ্জা করেন না! পুরুষের ন্যায় নারীরাও যদি ঘুমে ঐরূপ কিছু দেখে, তাহলে তাকে গোসল করিতে হইবে কিনা? আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, নবি [সাঃআ:] বলিলেন, হ্যাঁ, পানি দেখিতে পেলে তাকেও গোসল করিতে হইবে। আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, আমি উম্মু সুলাইমকে বললাম, তোমার জন্য দুঃখ হচ্ছে! পুরুষের ন্যায় নারীদের আবার স্বপ্নদোষ হয় নাকি? রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমার দিকে এসে বলিলেন, হে আয়িশাহ! তোমার ডান হাত ধুলিমলিন হোক। যদি এরূপই না হইবে, তাহলে সন্তান মায়ের আকৃতির হয় কি করে?
সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১ । মহিলাদের স্বপ্নদোষ হলে এবং বীর্য নির্গত হওয়ার আলামত পেলে তাহাদের জন্য গোসল করা ওয়াজিব । ২ । পুরুষের ন্যায় নারীদেরও স্বপ্নদোষ হয় । ৩ । কোন বিষয়ে শারঈ হুকুম জানা না থাকলে তা জিজ্ঞেস করা বৈধ । লজ্জা যেন এতে প্রতিবন্ধক না হয় । অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ – ৯৮ঃ যে পরিমাণ পানি দিয়ে গোসল করা যায়
২৩৮. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এক ফারাক পরিমাণ পানি সংকুলান হয় এমন একটি পাত্র থেকে পানি নিয়ে জানাবাতের গোসল করিতেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যুহরী থেকে মামার এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে রয়েছে আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, আমি ও রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] দুজনে একই পাত্র হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম। ঐ পাত্রে এক ফারাক পানি ধরত। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমদ ইবনি হাম্বাল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনিয়াছি, এক ফারাক হলো, ষোল রত্বল। আমি তাকে এটাও বলিতে শুনিয়াছি, ইবনি আবু যিব এর মতেঃ এক সা হচ্ছে পাঁচ রত্বল এবং এক রত্বলের এক তৃতীয়াংশ। আর যিনি আট রত্বল বলেছেন তা সুরক্ষিত [মাহফূয] নয়। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ইমাম আহমদ কে বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি আমাদের রত্বলের পাঁচ রত্বল এবং এক তৃতীয়াংশ দ্বারা সদাক্বাতুল ফিতর আদায় করিল, সে পূর্ণ ফিতরা দিল। লোকজন বলিল, সায়হানী [মাদীনাহর এক প্রকার খেজুর] তো [ওজনে] ভারী হয়। তিনি বলিলেন, সায়হানী কি উৎকৃষ্ট? তিনি বলিলেন, আমার তা জানা নেই। সহিহ। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ -৯৯ঃ জানাবাতের গোসল করার নিয়ম
২৩৯. জুবাইর ইবনি মুত্বইম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা তাঁরা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর নিকট জানাবাতের গোসল সর্ম্পকে উল্লেখ করিলেন। তখন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ আমি আমার মাথার উপর তিনবার পানি ঢেলে থাকি। এ বলে তিনি তাহাঁর দুহাতের দ্বারা ইশারা করে দেখিয়ে দিলেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪০. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] জানাবাতের গোসল করার সময় হিলাব তথা উটের দুধ দোহনের পাত্রের ন্যায় একটি পাত্র আনাতেন। অতঃপর উভয় হাতে পানি নিয়ে প্রথমে মাথার ডান দিকে ঢালতেন, তারপর বামদিকে। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার তালুতে ঢালতেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪১. জুমাই ইবনি উমাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার মা ও খালার সাথে আয়িশাহ [রাঃআ:]-এর নিকট গেলাম। তাহাদের একজন তাঁকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনারা কিভাবে গোসল করিতেন? আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] প্রথমে সলাতের উযুর ন্যায় উযু করিতেন, এরপর মাথায় তিনবার পানি ঢালতেন। তবে আমরা চুলের গোছার কারণে পাঁচবার পানি ঢালতাম।
খুবই দূর্বল। হাদিসের তাহকিকঃ খুবই দুর্বল
২৪২. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] যখন জানাবাতের গোসল করিতেন- সুলাইমানের বর্ণনা মতে- তখন প্রথমে ডান হাত দিয়ে বাম হাতে পানি ঢালতেন। আর মুসাদ্দাদের বর্ণনা মতে- তিনি উভয় হাত ধৌত করে ডান হাতে পাত্রের পানি ঢালতেন। অতঃপর উভয় বর্ণনাকারী এ বিষয়ে একমত হন যে, এরপর তিনি লজ্জাস্থান ধৌত করিতেন। মুসাদ্দাদ বলেন, [ডান হাতের পর] তিনি বাম হাতের উপর পানি ঢালতেন। আয়িশাহ [রাঃআ:] কখনো কথনো লজ্জাস্থানের কথা ইঙ্গিতে বর্ণনা করিয়াছেন। তারপর তিনি সলাতের উযুর ন্যায় উযু করিতেন। তারপর উভয় হাত পাত্রে ঢুকিয়ে [পানি নিয়ে] চুল খিলাল করিতেন। যখন তিনি দেখিতেন যে, সারা শরীরে পানি পৌঁছেছে অথবা শরীর পরিস্কার হয়েছে, তখন তিনবার মাথায় পানি ঢালতেন। সব শেষে অবশিষ্ট থাকলে তা নিজের গায়ে ঢেলে দিতেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৩. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] জানাবাতের গোসল করার ইচ্ছা করলে প্রথমে উভয় হাত কব্জি পযর্ন্ত ধুতেন, তারপর [শরীরের] গ্রন্থিসমূহ [যেমন বগল, কনুই, দুই রানের মধ্যবর্তী স্থান ইত্যাদি যেখানে ময়লা জমে থাকে অথবা লজ্জাস্থান] ধুতেন এবং তার উপর পানি বহাতেন। যখন উভয় হাত পরিস্কার হয়ে যেত তখন [ঘষার জন্য] দেয়ালের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেন।তারপর উযু শুরু করিতেন এবং মাথায় পানি ঢালতেন।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৪. শাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেছেন, তোমরা দেখিতে চাইলে আমি দেয়ালে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর হাতের চিহ্ন তোমাদের দেখিয়ে দিতে পারি; যেখানে তিনি জানাবাতের গোসল করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৫. মায়মূনাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] -এর জানাবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলাম। তিনি পানির পাত্র কাত করে ডান হাতে পানি ঢেলে তা দুবার বা তিনবার ধুলেন। এরপর লজ্জাস্থানে পানি ঢেলে তা বাম হাতে ধুলেন। তারপর মাটিতে হাত ঘষে ধুয়ে নিলেন, কুলি করিলেন, নাকে পানি দিলেন, মূখমন্ডল ও দুহাত ধুলেন। তারপর মাথায় এবং সমগ্র শরীরে পানি ঢাললেন। তারপর ঐ স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে উভয় পা ধুলেন। আমি [শরীর মোছার জন্য] তাঁকে রুমাল দিলাম। তিনি তা গ্রহণ করিলেন না বরং শরীর থেকে পানি ঝেড়ে ফেলতে লাগলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বিষয়টি ইবরাহীমকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, সাহবীগণ গামছা ব্যবহার করা অপছন্দ করিতেন না, বরং তাঁরা [গামছা ব্যবহার] অভ্যাসে পরিণত করা অপছন্দ করিতেন।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, মুসাদ্দাদ বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি দাউদকে জিজ্ঞাসা করলাম, গামছা ব্যবহার অভ্যাসে পরিণত হইবে বলেই কি সাহাবীগণ তা অপছন্দ করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ এরূপই। আমার কিতাবেও এরূপ [তথ্য] পেয়েছি। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৪৬. শুবাহ হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, ইবনি আব্বাস [রাঃআ:] জানাবাতের গোসল করার সময় ডান হাত দিয়ে বাম হাতে সাতবার পানি ঢালতেন। তারপর লজ্জাস্থান ধুতেন। একবার তিনি [গোসলের সময়] কতবার পানি ঢেলেছেন তা ভুলে গেলে আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি পানি কতবার ঢেলেছি? আমি বললাম, আমার তো জানা নেই! তিনি বলিলেন, তোমার মা না থাকুক! তুমি কেন মনে রাখলে না? অতঃপর তিনি সলাতের উযুর ন্যায় উযু করে সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিলেন এবং বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এভাবেই পবিত্রতা অর্জন করিতেন।
হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৭. আব্দুল্লাহ ইবনি উমার[রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফারয ছিল এবং জানাবাতের গোসল করিতে হতো সাতবার, কাপড়ে পেশাব লেগে গেলে তাও সাতবার ধুতে হতো। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] [এর সংখ্যা কমানোর জন্য] অবিরাম দুআ করিতে থাকেন। অতঃপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফারয করা হলো, জানাবাতের গোসল একবার এবং কাপড়ে পেশাব লেগে গেলে তা ধুতে নির্দেশ করা হলো একবার। {২৪৬}
২৪৬ আহমদ [২/১০৯, হাঃ ৫৮৮৪] আইয়ূব ইবনি জাবির সূত্রে। এর সানাদের আইয়ূব ইবনি জাবিরকে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে দুর্বল বলেছেস। আওনুল মাবুদে রয়েছেঃ একাধিক ইমাম সানাদের আবদুল্লাহ ইবনি উসামার সমালোচনা করিয়াছেন এবং তার সূত্রে বর্ণনাকারী আইয়ূব ইবনি জাবিরের হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ প্রত্যেক পশমের নীচে অপবিত্রতা রয়েছে। সুতরাং তোমরা প্রতিটি পশম [উত্তমরূপে] ধৌত কর এবং শরীর পরিচ্ছন্ন কর। {২৪৭}
দুর্বলঃ মিশকাত ৪৪৩, জঈফ আল-জামিউস সাগীর ১৮৪৭।ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আল-হারিস ইবনি ওয়াজীহ বর্ণিত হাদীসটি মুনকার এবং তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল।
২৪৭ তিরমিজি [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ জানাবাতের গোসল, হাঃ ১০৬, ইমাম তিনমিযী বলেন, এ হাদীসটি গরীব। আমরা হারিস ইবনি ওয়াজীহকে কেবল তার হাদীসেই চিনতে পেরেছি। তিনি একজন শায়খ, তিনি তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি নন], ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ প্রত্যেক লোমকূপে অপবিত্রতা রয়েছে, হাঃ ৫৯৭], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [১/১৭৫]। এর সানাদের হারিস ইবনি ওয়াজীহকে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে দুর্বল বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
২৪৯. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি জানাবাতের গোসলে একটি পশম পরিমাণ স্থান না ধুয়ে ছেড়ে দেবে, তাকে জাহান্নামে এরূপ এরূপ শাস্তি দেয়া হইবে। আলী [রাঃআ:] বলেন, এরপর থেকেই আমি আমার মাথার সাথে দুশমনি করি। এরপর থেকেই আমি আমার মাথার সাথে দুশমনি করি। তিনি তিনবার এরূপ বলিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, সেজন্যই আলী তার মাথার চুল কামিয়ে ফেলতেন।২৪৮
দুর্বলঃ ইরওয়া ১৩৩, জঈফ আল-জামিউস সাগীর ৫৫২৪।২৪৮ ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ প্রত্যেক লোমকূপে অপবিত্রতা রয়েছে, হাঃ ৫৯৯], দারিমী [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ যে ব্যক্তি জানাবাতের গোসলে এক চুল পরিমাণ জায়গা ভিজানো পরিহার করিল, হাঃ ৭৫১], আহমদ [১/৯৪১, ১০১, ১৩৩], বায়হাক্বী সুনানুল কুবরা [১/১৭৫] একাধিক সানাদে হাম্মাদ ইবনি সালামহ হতে, তিনি আত্বা ইবনি সায়িব হতে, তিনি জাযান হতে। হাফিয আত-তাখলীস গ্রন্থে [পৃঃ ৫২] বলেন, এর সানাদ সহিহ। কেননা এটি আত্বা ইবনি সায়িবের বর্ণনা। হাদীসটি তিনি হাম্মাদ ইবনি সালামাহ হতে সংমিশ্রণের পূর্বে শুনেছেন। কিন্তু বলা হয়, সঠিক হচ্ছে এটি আলী [রাঃআ:]-এর মাওকুফ বর্ণনা। আল্লাম শাওকানী নায়লুল আওতার গ্রন্থে [১/২৩৯] হাফিযের এ বক্তব্যের পরপরই বলেন, ইমাম নববী বলেন, দুর্বল। আত্বাকে সংমিশ্রণের পূর্বেই দুর্বল বলা হয়েছে। আর হাম্মাদের ব্যাপারে সন্দেহ আছে এবং সানাদের জাযানের বিরুদ্ধেও আলোচনা রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০০ঃ গোসলের পর উযু করা
২৫০.আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] গোসল করে দু রাকআত সালাত আদায় করার পর ফাজরের সালাত আদায় করিতেন। আমি তাঁকে গোসলের পর পুনরায় উযু করিতে দেখিনি।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১. ফাজর সালাতের পূর্বে দুরাকআত স্বলাত আদায় শারীআত সম্মত। ২. জানাবাতের গোসলের পর উযু ভঙ্গ না হলে পুনরায় উযু করার প্রয়োজন নেই। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০১ঃ গোসলের সময় মহিলার তাহাদের চুলের বাঁধন খুলবে কি?
২৫১. উম্ম সালামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জৈনক মুসলিম মহিলা-যুহাইরের বর্ণনা মতে, উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাথার চুল মজবুতভাবে বেঁধে রাখি [বা আমার মাথার চুল খুব ঘন], অতএব জানাবাতের গোসলের সময় আমি চুলের বাঁধন খুলে ফেলব কি? তিনি বলিলেন, তুমি তাতে তিন অঞ্জলি পানি ঢেলে দিলেই যথেষ্ট হইবে। যুহাইয়ের বর্ণনায় রয়েছে, তুমি তোমার চুলের উপর তিনবার পানি ঢালবে, তারপর সমগ্র শরীরে পানি ঢেলে দিবে; এতেই তুমি পবিত্র হইবে।
সহীহঃ মুসলিম। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৫২. উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, উম্মু সালামাহ্ [রাঃআ:] –এর নিকট একজন মহিলা আসল। তারপর উক্ত হাদীসের অনুরূপ। তাতে রয়েছেঃ তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:] –এর নিকট তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম- প্রথমোক্ত হাদীসের অনুরূপ। তবে তাতে রয়েছেঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন, প্রত্যেক অঞ্জলি পানি ঢালার সময় চুলের বেণী বা খোপা নিংড়ে নিবে।
হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
২৫৩. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমাদের কেউ জুনুবী হলে সে হাতে তিন অঞ্জলি পানি নিত। অর্থাৎ উভয় হাতে পানি নিয়ে মাথার উপর ঢেলে দিত। তারপর এক হাতে পানি নিয়ে শরীরের এক পাশে এবং অপর হাতে পানি নিয়ে শরীরের অন্য পাশে ঢেলে দিত।
সহীহঃ বোখারী। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৫৪. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, মাথার চুল কাপড়ে বাঁধা অবস্থায় আমরা গোসল করতাম। তখন আমাদের কেউ ইহরামবিহীন অবস্থায় এবং কেউ ইহরাম বাঁধা অবস্থায় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] –এর সাথে থাকতাম।
অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
২৫৫. শুরায়হ্ ইবনি উবায়িদ রহ. হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, জুবাইর ইবনি নুফায়ির আমাদেরকে জানাবাতের গোসল সম্পর্কে ফাতাওয়াহ দেন যে, সাওবান [রাঃআ:] তাহাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেনঃ একদা তাঁরা নবি [সাঃআ:] –এর নিকট এ সম্পর্কে ফাতাওয়াহ চাইলে তিনি বলেনঃ পুরুষ লোক তার মাথার চুল এমনভাবে ছেড়ে ধুয়ে নিবে, যাতে পানি চুলের গোড়ায় পৌঁছে যায়। তবে মহিলাদের মাথার চুল না খুললেও চলবে। তারা উভয় হাতে তিন অঞ্জলি পানি নিয়ে মাথায় ঢেলে দিবে।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১. জানাবাতের গোসলে চুল ছেড়ে দেয়া মহিলাদের জন্য ওয়াজিব নয়। বরং মাথায় পানি ঢালাই যথেষ্ট। ২. নবি [সাঃআ:] -এর স্ত্রীগণ জানাবাতের গোসলের সময় তাঁদের চুলের বেণী বা খোপা খুলতেন না। ৩. নারীদের জন্য মাথায় তিনকোষ পানি ঢালাই যথেষ্ট। অপবিত্র পবিত্রবা -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১০২ঃ অপবিত্র ব্যক্তির খিত্বমী [এক ধরনের ঔষধি উদ্ভিদ] মিশ্রিত পানি দ্বারা মাথা ধোয়া
২৫৬. আয়িশাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] খিত্বমী মিশ্রিত পানি দ্বারা জানাবাতের গোসল করিতেন এবং একেই যথেষ্ট মনে করিতেন, পুনরায় আর পানি ঢালতেন না।
দুর্বলঃ মিশকাত ৪৪৬। ২৫৫ বাগাভী এটি মাসাবীহুস সুন্নাহ [১/২১৭, হাঃ ৩০৬] গ্রন্থে বর্ণনা করে বলেন, এর সনদে একজন অজ্ঞাত লোক রয়েছে। যাকে সনদে বনী সুওয়াআর জৈনিক ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতের তাহক্বীক্বে শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ এর সনদ দুর্বল এবং উপরোক্ত শব্দে মাতানটি বাতিল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ১০৩ঃ স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রবাহিত বীর্যের হুকুম
২৫৭. ‘আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রবাহিত বীর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা বীর্য লাগার স্থানে ঢেলে দিতেন। অতঃপর আরেক অঞ্জলি পানি নিয়ে তা উক্ত স্থানে ঢেলে দিতেন।
{২৫৬} আহমদ [৬/১৫৩]। এর সানাদে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি আছে। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ভালভাবে পরিস্কার করণার্থে স্থলিত বীর্য বা বীর্যরসের উপর প্রয়োজনে একাধিকবার পানি ঢালা উচিত। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
Leave a Reply