অজুর পানি পাক না নাপাক – ফরয, পানি, কুকুর, বিড়াল, নবিয
অজুর পানি পাক না নাপাক – ফরয, পানি, কুকুর, বিড়াল, নবিয >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন
অধ্যায়ঃ ১, অনুচ্ছেদঃ ৩১-৪৭ =১৭টি
অনুচ্ছেদ- ৩১ঃ উযু করা ফরয
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ কোন ব্যক্তির উযু থাকাবস্থায় নতুনভাবে উযু করা
অনুচ্ছেদ- ৩৩ঃ যে জিনিস পানিকে অপবিত্র করে
অনুচ্ছেদ- ৩৪ঃ বুদাআহ নামক কূপ প্রসঙ্গে
অনুচ্ছেদ-৩৫ঃ পানি অপবিত্র হয় না
অনুচ্ছেদ-৩৬ঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা।
অনুচ্ছেদ-৩৭ঃ কুকুরের লেহনকৃত পাত্র ধোয়া।
অনুচ্ছেদ-৩৮ঃ বিড়ালের উচ্ছিষ্ট।
অনুচ্ছেদ- ৩৯ঃ স্ত্রী লোকের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দিয়ে [পুরুষের] উযু করা
অনুচ্ছেদ-৪০ঃ এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা
অনুচ্ছেদ-৪১ঃ সমুদ্রের পানি দ্বারা উযু করা
অনুচ্ছেদ-৪২ঃ নবিয [খেজুরের শরবত] দিয়ে উযু করা
অনুচ্ছেদ-৪৩ঃ কোন ব্যক্তি পায়খানা-পেশাবের বেগ চেপে রেখে সলাত আদায় করিবে কি?
অনুচ্ছেদ-৪৪ঃ উযুর জন্য যতটুকু পানি যথেষ্ট
অনুচ্ছেদ-৪৫ঃ উযুতে প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা
অনুচ্ছেদ-৪৬ঃ পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করা
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ তামার পাত্রে উযু করা
অনুচ্ছেদ- ৩১ঃ উযু করা ফরয
৫৯. আবুল মালীহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হতে তার পিতা সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেনঃ আত্মসাৎকৃত মালের দান এবং উযু বিহীন সলাত আল্লাহ ক্ববূল করেন না।
হাদীস থেকে শিক্ষা : ১। অবৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদ দান কলে তা ক্ববূল হয় না এবং তাতে নেকীও পাওয়া যায় না। ২। পবিত্রতা ছাড়া সলাত হয় না। এতে প্রমাণিত হয়, জানাযার সলাত, দু ঈদের সলাতসহ সমস্ত নাফল সলাত এর অন্তর্ভুক্ত। এতে আরো প্রমাণিত হয়, পবিত্রতা ছাড়া তাওয়াফও যথেষ্ট হইবে না। কেননা নবি [সাঃআ:] একেও সলাত বলেছেন। উযু সম্পর্কে যা জানা জরুরী :
[ক] উযুর সংজ্ঞাঃ উযুর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে স্বচ্ছতা। পরিভাষায় আল্লাহর নামে পাক পানি দিয়ে শারঈ পদ্ধতিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করা ও মাথা মাসাহ করাকে উযু বলে। উযুর ফারয চারটি। যথাঃ সম্পূর্ণ মুখ ধোয়া, কনুই পর্যন্ত হাত ধোয়া, মাথা মাসাহ করা ও টাখনু পর্যন্ত দু পা ধোয়া। এগুলো বাদে উযুর অবশিষ্ট সবই সুন্নাত। যেমন, কব্জি পর্যন্ত হাত ধোয়া, কুলি করা, নাকে পানি দেয়া, কান মাসাহ করা। [খ] উযু ভঙ্গের কারন : [১] পেশাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে দেহ থেকে কোন কিছু নির্গত হলে [যেমন পেশাব, পায়খানা, কৃমি, বায়ু, মযী, ইত্যাদি], বিভিন্ন সহিহ হাদীসের আলোকে জানা যায় যে, এটাই হচ্ছে উযু ভঙ্গের প্রধান কারন। [২] যেসব কাজ করলে গোসল ফারয হয় তা ঘটলে [৩] হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লে [৪] পর্দাহীন অবস্থায় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে [৫] উটের গোশত খেলে [৬] ইস্তিহাযার রক্ত বের হলে। শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি বলেন, ইস্তিহাযা ব্যতিত কম হৌক বা বেশী হৌক অন্য কোন রক্ত প্রবাহের কারনে উযু ভঙ্গ হওয়ার কোন সহিহ দলীল নেই। [৭] পেটের গণ্ডগোল, ঘুম, যৌন উত্তেজনা ইত্যাদির কারণের প্রেক্ষিতে কেউ উযু ভঙ্গ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহে পতিত হলে পুনরায় উযু করিবে। কিন্তু যদি কোন শব্দ, গন্ধ বা নিদর্শন না পান এবং নিজের উযুর ব্যাপারে নিশ্চিত থাকেন তাহলে পুনরায় উযু করার দরকার নেই। [সহীহুল বোখারী, সহিহ মুসলিম, সুনানু আরবাআ, আহমদ, দারিমী, মুয়াত্তা মালিক, তাহকিক মিশকাত-নাসিরুদ্দিন আলবানি ও অন্যান্য] অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কারো উযু নষ্ট হলে পুনরায় উযু না করা পর্যন্ত মহান আল্লাহ তার সলাত কবূল করেন না।
সহিহ : বোখারী ও মুসলিম। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬১. আলী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ সলাতের চাবি হচ্ছে পবিত্রতা। আল্লাহু আকবার বলে সলাত শুরু করার দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হারাম হয়ে যায়। আর সলাতের সালাম ফিরানোর দ্বারা পার্থিব সকল কাজ হালাল হয়।
হাদীস থেকে শিক্ষা : ১। তাকবীরে তাহরীমাহ সলাতের অংশসমূহেরই একটি অংশ [জুয]। ২। তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া সলাত আরম্ভ করা জায়িয নয়। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৩২ঃ কোন ব্যক্তির উযু থাকাবস্থায় নতুনভাবে উযু করা
৬২. আবু গুত্বায়িফ আল-হুযালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি ইবনি উমার [রাঃআ:]- এর নিকট ছিলাম। যোহরের আযান দেয়া হলে তিনি উযু করে সলাত আদায় করিলেন। আবার আসরের আযান দেয়া হলে তিনি পুনরায় উযু করিলেন। আমি তাকে নতুন করে উযু করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিতেনঃ যে ব্যক্তি উযু থাকাবস্থায় উযু করে, তার জন্য দশটি নেকি লিপিবদ্ধ করা হয়। {৬২}
দূর্বল : যইফ আল-জামিউস সাগীর ৫৫৩৬, মিশকাত ২৯৩। {৬২} – তিরমিজি [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, অনুঃ প্রত্যেক সলাতের জন্য উযু করা, হাঃ ৬৯, ইমাম তিরমিজি বলেন, এ সানাদটি দুর্বল], ইবনি মাজাহ [অধ্যায় : পবিত্রতা, অনুঃ উযু থাকতে উযু করা, হাঃ ৫১২], আবদ ইবনি হুমাইদ [৮৫৯] সকলেই আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ সূত্রে আবু গুতাইফ হতে, তিনি ইবনি উমার হতে। আয-যাওয়ায়িদ গ্রন্থে রয়েছে : হাদীসের মূল বিষয় বর্তায় আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ ইফরীক্বীর উপর। তিনি দুর্বল। এছাড়াও বায়হাক্বীর সুনানুল কুবরা [১/৬২, তিনি বলেন আবদুর রহমান ইবনি যিয়াদ ইফরীক্বী শক্তিশালী নন। আর আপনারা তো লক্ষ্য করিয়াছেন যে, হাদীসের মূল বিষয় তার উপরেই বর্তাচ্ছে। হাফিয আত তাক্বরীব গ্রন্থে বলেন, তিনি স্মরণশক্তিতে দুর্বল। মিশকাতের তাহক্বীক্বে আবু গুতাইফকে অজ্ঞাত বলা হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৩৩ঃ যে জিনিস পানিকে অপবিত্র করে
৬৩. আবদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার থেকে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:]-কে ঐ পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, যাতে পানি পান করার জন্য বন্য প্রাণী ও হিংস্র জন্তু আসা-যাওয়া করে। তিনি [সাঃআ:] বললেনঃ পানির পরিমাণ দু মটকা হলে তা অপবিত্রতা বহন করে না।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৪. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার থেকে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে উন্মুক্ত ময়দানে অবস্থিত পানি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করেন।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৬৫. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার পিতা আমার নিকট বর্ননা করেন যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ পানি দু কুল্লাহ [মটকা] পরিমাণ হলে তা অপবিত্র হয় না।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৩৪ঃ বুদাআহ নামক কূপ প্রসঙ্গে
৬৬. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]- কে জিজ্ঞেস করা হলো, আমরা কি [মদীনাহর] বুদাআহ নামক কূপের পানি দিয়ে উযু করিতে পারি? কূপটির মধ্যে মেয়েলোকের হায়িযের নেকড়া, কুকুরের গোশত ও যাবতীয় দুর্গন্ধযুক্ত জিনিস নিক্ষেপ করা হত। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ পানি পবিত্র, কোন কিছু একে অপবিত্র করিতে পারে না।
হাদীস থেকে শিক্ষা : অপবিত্র পড়ার কারণে পানির কোন একটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হয়ে গেলে তা পবিত্রতা থেকে বের হয়ে যায়। আলোচ্য হাদীসের উমূম [ব্যাপকতা] অন্য হাদীসাবলী দ্বারা খাস করা হয়েছে। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৬৭. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কে বলিতে শুনেছিঃ একদা তাঁকে বলা হয়, আপনার জন্য বুদাআহ কূপ থেকে পানি আনা হয়। অথচ তাতে কুকুরের গোশত, হায়িযের নেকড়া ও মানুষের ময়লা আবর্জনা নিক্ষেপ করা হয়। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, নিশ্চয় পানি পবিত্র, তাকে কোন কিছু অপবিত্র করিতে পারে না।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি কুতাইবা ইব্নে সাঈদকে বলিতে শুনেছিঃ আমি বুদাআহ কূপের নিকট অবস্থানকারীকে সেটির গভীরতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। জবাবে তিনি বলিলেন, যখন এ কূপের পানি বেশী হয়, তখন এতে পানি থাকে নাভির নিম্ন পরিমাণ ফলে আমি [ক্বাতাদাহকে] জিজ্ঞেস করলাম, পানি কম হলে [এর পরিমাণ কতটুকু হয়]? তিনি বলিলেন, হাটু পর্যন্ত।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি এর পরিমাণ নির্ধারণ করার জন্য আমার চাদর এর উপর বিছিয়ে দিয়ে পরিমাপ করি যে, এর প্রস্থ হচ্ছে ছয় হাত।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আরো বলেন, যে বাগানে বুদআহ কূপটি অবস্থিত, তার প্রবেশ দ্বার যিনি খুলে দিয়েছিলেন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি, কূপটির আগের আকৃতির কোন পরিবর্তন হয়েছে কি না? জবাবে তিনি বলিলেন, না আর আমি কূপের পানির রং [দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্তায় থাকার কারণে] পরিবর্তিত দেখেছি।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৫ঃ পানি অপবিত্র হয় না
৬৮. আব্দুল্লাহ ইব্নু আব্বাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -এর কোন এক স্ত্রী বড় একটি পাত্র থেকে পানি তুলে গোসল করে। এমন সময় রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] অবশিষ্ট পানি দ্বারা উযু অথবা গোসল করিতে আসলেন। স্ত্রী বলিলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল! আমি তো অপবিত্র ছিলাম। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলিলেন, পানি অপবিত্র হয় না।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৬ঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা।
৬৯. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে অতঃপর। সেই তো আবার সেখানে গোসল করে।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭০. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যেন বদ্ধ পানিতে পেশাব না করে এবং জানাবাতের গোসল না করে। {৭০}
হাসান সহিহ। {৭০} ইব্নে মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রটা, অনুঃ বদ্ধ পানিতে পেশাব করা নিষেধ, হাঃ ৩৪৪] আহমদ [২/৪৩৩] হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
অনুচ্ছেদ-৩৭ঃ কুকুরের লেহনকৃত পাত্র ধোয়া।
৭১. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেন, তোমাদের কারো পাত্রে কুকুর মুখ ঢুকিয়ে দিলে তা সাতবার ধুয়ে পবিত্র করিতে হইবে। তন্মধ্যে প্রথমবার মাটি দ্বারা [ঘষতে হইবে]।
সহিহ মুসলিম। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭২. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
উপরোক্ত হাদীসের সমার্থক বর্ণনাও আছে। তবে সেটি মারফু বর্ণনা নয়। তাতে এও রয়েছেঃ বিড়াল লেহন করলে তা একবার ধুতে হয়।
সহিহ মাওকুফ, মারফুভাবেও এটি সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ মাওকুফ
৭৩. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর নবি [সাঃআ:] বলেন, কুকুর কোন পাত্রে লেহন করলে তা সাতবার ধুয়ে নিবে। সপ্তমবার মাটি দ্বারা ঘষবে।
সহীহঃ কিন্তু সপ্তমবারে মাটি দ্বারা কথাটি শেষ। প্রথমবারে মাটি দ্বারা কথাটিই প্রধান্যযোগ্য।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আবু সালিহ, আবু রাযীন প্রমুখ বর্ণনাকারীগণ হাদীসটি আবু হুরায়রা্ [রাঃআ:] সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তারা মাটির কথা উল্লেখ করেননি। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৪. ইবনি মুগাফ্ফাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কুকুর হত্যার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর বললেনঃ মানুষ এবং কুকুরের কী হল? এরপর তিনি শিকারী কুকুর, বকরী ও শস্য পাহারার কুকুর পালনের অনুমতি দিলেন এবং বললেনঃ কুকুর কোন পাত্রে মুখ দিলে তা সাতবার ধুয়ে নিবে। আর অষ্টম বার মাটি দ্বারা ঘষবে।
সহীহঃ মুসলিম। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। প্রয়োজনে কুকুর প্রতিপালন জায়িয। যেমন শিকার, গবাদি পশু ও ক্ষেত পাহারার জন্য কুকুর পালন। ২। পাত্র সাতবার ধোয়া যায়িয। অতঃপর অষ্টমবার সেটিকে মাটি দ্বারা ঘষা বৈধ। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৩৮ঃ বিড়ালের উচ্ছিষ্ট।
৭৫. কাবশাহ বিন্তে কাব ইব্নে মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি ছিলেন আবু ক্বাতাদাহ [রাঃআ:]-এর পুত্রবধূ। তিনি বলেন, একদা আবু ক্বাতাদাহ [বাহির থেকে] আসলে আমি তার জন্য উযুর পানি দিলাম। এমন সময় একটি বিড়াল এসে তা থেকে পানি পান করিতে লাগল। আবু ক্বাতাদাহ বিড়ালের জন্যে পাত্রটি কাত করে ধরলেন। ফলে বিড়ালটি তৃপ্তি সহকারে পান করিল। কাবশাহ বলেন, আবু ক্বাতাদাহ দেখলেন, আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। তিনি বলিলেন, হে ভাতিজী! তুমি কি আশ্চর্যবোধ করছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা সর্বদা তোমাদের কাছে ঘুরাফেরাকারী প্রাণী।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। ঘরের চারপাশে ঘোরাফেরাকারী। বিড়াল পাক। ২। প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়া। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৭৬. দাউদ ইব্নে সালিহ ইব্নু দীনার আত-তাম্মার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে তাহাঁর মায়ের সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ
একদা তাহাঁর আযাদকারী মুনিব তাকে হারিসাহ্ [এক ধরনের খাদ্য] সহ আয়িশাহ [রাঃআ:]-এর নিকট পাঠালেন। তিনি গিয়ে দেখলেন, আয়িশাহ [রাঃআ:] সালাত আদায় করছেন। তিনি আমাকে ইশারা বলিলেন রেখে দাও। এমন সময় একটি বিড়াল এসে তা হতে কিছু খেয়ে ফেলল। আয়িশাহ [রাঃআ:] সালাত শেষে বিড়াল যেখান থেকে খেয়েছিল, সেখান থেকেই খেলেন। আর বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ বিড়াল অপবিত্র [প্রাণী] নয়, বিড়াল তো সর্বদা তোমাদের আশেপাশেই আনাগোনা করে থাকে। আর আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]–কে বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা উযু করিতে দেখেছি।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ- ৩৯ঃ স্ত্রী লোকের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দিয়ে [পুরুষের] উযু করা
৭৭. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] উভয়ে জুনুবী অবস্থায় একই পাত্র থেকে [পানি নিয়ে] গোসল করতাম।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম, হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। জুনুবী ব্যক্তি [প্রকৃতপক্ষে] অপবিত্র নন। ২। নারীর ব্যবহৃত পানির অতিরিক্তয়াংশ পুরুষের ব্যবহৃত পানির অতিরিক্তাংশের মতই। ৩। এক পাত্র থেকে দুব্যক্তির গসল করা জায়িয। } অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৭৮. উম্মু সুবাইয়্যাহ আল-জুহানিয়্যাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, একই পাত্রে উযু করার সময় আমার ও রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর হাত একত্রে উঠানামা করত।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহিহ
৭৯. ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর যুগে পুরুষ ও নারীরা উযু করিতেন। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাস বলেন, তারা একই পাত্রের পানি দিয়ে একত্রে উযু করত।
সহীহঃ বোখারী একই পাত্রের কথাটি বাদে। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮০.আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ.
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] এর যুগে আমরা ও নারীরা একই পাত্রে হাত দিয়ে পানি নিয়ে উযু করতাম।
সহীহঃ বোখারী, পূর্বেরটি দেখুন। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪০ঃ এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা
৮১. হুমাইদ আল-হিময়ারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] –এর এমন এক সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়েছিল যিনি চার বছর তাহাঁর সাহচর্যে ছিলেন, যেমন তাহাঁর সাহচর্যে ছিলেন আবু হুরাইরা [রাঃআ:]। তিনি বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] পুরুষের ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দ্বারা নারীকে এবং নারীর ব্যবহারের অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষকে গোসল করিতে নিষেধ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী মুসাদ্দাস এর সঙ্গে বৃদ্ধি করে বলেন, নারী-পুরুষের একই পাত্র থেকে পানি তুলা নিষেধ।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ প্রত্যেক নারী ও পুরুষ, একে অপরের পবিত্রতা অর্জনে ব্যবহৃত অতিরিক্তাংশ পানি দ্বারা পবিত্র অর্জন অপছন্দনীয়। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮২. আল-হাকাম ইবনি আমর আল-আক্বরা হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] স্ত্রীলোকের [উযু বা গোসলের] অবশিষ্ট পানি দ্বারা পুরুষকে উযু করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪১ঃ সমুদ্রের পানি দ্বারা উযু করা
৮৩. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবি [সাঃআ:] –কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রসূল! আমরা সমুদ্রে যাত্রা করি এবং পান করার জন্য সামান্য [মিঠা] পানি বহন করি। আমরা যদি তা দিয়ে উযু করি তাহলে পিপাসায় থাকতে হয়। সুতরাং এরূপ অবস্থায় আমরা সমুদ্রের পানি দিয়ে উযু করব কি? রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বললেনঃ সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং তার মৃত প্রানী [খাওয়া] হালাল।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। সমুদ্রের পানি পাক। ২। সমুদ্রের প্রানী, যা কেবল সমুদ্রেই বসবাস করে [স্থলে নয়] তা হালাল। ৩। কোন মুফতু কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হলে তিনি যদি বুঝতে পারেন যে, প্রশ্নকারীকে উক্ত মাসআলাহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দিকও অবহিত করার প্রয়োজন আছে, তবে তাহাঁর জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে প্রশ্নকারীকে তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়াদিও জানিয়ে দেয়া। কেননা প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত তথ্য সংযোজনে পরিপূর্ণ উপকার পাওয়া যায়। যেমন নবি [সাঃআ:] এর বাণীঃ এবং সমুদ্রের মৃত হালাল। এ অতিরিক্ত সংযোজন শিকারীদের জন্য উপকারী। আর প্রশ্নকর্তাও তাহাদের একজন ছিলেন। এটা ফাতাইয়াহর উপকারী দিক। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪২ঃ নবিয [খেজুরের শরবত] দিয়ে উযু করা
৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] জ্বীন আগমনের রাতে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার পাত্রে কি আছে? আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেন, নবিয। নবি [সাঃআ:] বলিলেন, খেজুর পবিত্র আর পানি পবিত্রকারী। {৮৪}
শারীফ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হান্নান জ্বীন আগমনের রাত কথাটি উল্লেখ করেননি। দুর্বলঃ মিশকাত ৪৮০। {৮৪} তিরমিজি [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা , অনুঃ নবিয দিয়ে উযু করা, হাঃ ৮৮], ইবনি মাজাহ [অধ্যায়ঃ পবিত্রতা , অনুঃ নবিয দিয়ে উযু করা , হাঃ ৩৮৪], আহমদ [১/৪০২] আয-যাওযায়িদ গ্রন্থে রয়েছেঃ হাদিসটির মূল বিষয় বর্তায় আবু যায়িদ-এর উপর। তিনি হাদীস বিশারদ ইমামগণের নিকট অজ্ঞাত। যেমনটি তিরিমিযী ও অন্যান্যরা উল্লেখ করিয়াছেন। আহমদ শাকিরও এর সানাদকে দুর্বল বলেন। এর দোষ হচ্ছে আবু যায়িদ। তিনি অজ্ঞাত লোক। ইবনি আবদুল বার আল ইসতিয়াব গ্রন্থে বলেন, মুহাদ্দিসগণের নিকট আবু যায়িদ অজ্ঞাত। আবু ফাযারার বর্ণনা ছাড়া তাকে চেনা যায় না। ইবনি মাসউদ সূত্রে নবিয দ্বারা উযু করা সম্পর্কে বর্ণিত তাহাঁর হাদীসটি মুনকার, ভিত্তিহীন ও প্রমাণহীন। ইমাম বাগাভী শারহু সুন্নাহ গ্রন্থে বলেন, তাহাঁর হাদীস প্রমানিত নয়। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৮৫. আলক্বামাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাঃআ:] কে জিজ্ঞেস করেছিলাম, জ্বীন আগমনের রাতে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] –এর সঙ্গে আপনাদের মধ্যকার কে ছিলেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর সাথে আমাদের কেউ ছিল না।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ হাদীসটি প্রমাণ করে নবি [সাঃআ:] জ্বীনদেরও নবি। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৬. আত্বা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি দুধ ও নবিয দ্বারা উযু করা অপছন্দ করিতেন এবং বলিতেন, আমার মতে এর চেয়ে তায়াম্মুম করা বেশি শ্রেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ দুধ ও নবিয দ্বারা উযু শুদ্ধ হইবে না। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৭. আবু খালদা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
আমি আবুল আলিয়াকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এক ব্যাক্তির গোসল ফরয হয়েছে, কিন্তু তার কাছে পানি নেই, বরং নবিয আছে। সে কি নবিয দিয়ে গোসল করিবে? তিনি বলিলেন, না।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৩ঃ কোন ব্যক্তি পায়খানা-পেশাবের বেগ চেপে রেখে সলাত আদায় করিবে কি?
৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি আরক্বাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি হাজ্জ বা উমরার উদ্দেশ্যে বের হলেন। তার সঙ্গে ছিল আরো একজন যিনি তাহাদের ইমামতি করিতেন। একদিন ফাজরের সলাত আরম্ভ হতে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় তিনি বলিলেন, তোমাদের কেউ ইমামতি করুক। এই বলে তিনি পায়খানায় চলে গেলেন। তিনি আরো বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনেছিঃ সলাত শুরুর সময়ে তোমাদের কারো পায়খানার বেগ হলে প্রথমে সে যেন পায়খানা সেরে নেয়।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ ১। একাগ্রতার সাথে সলাত আদায় করা এবং একাগ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টিকারী যেকোনো কিছু হতে দূরে থাকা। ২। সলাতের পূর্বে পেশাব-পায়খানার বেগ হলে সলাতে না দাঁড়িয়ে প্রথমে পেশাব-পায়খানা সম্পন্ন করা। ৩। পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে সলাত আদায়কারীর ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করিয়াছেন। কেউ বলেছেন, তাকে পুনরায় সলাত আদায় করিতে হইবে, যেমন মালিকিদের মত। আর কেউ বলেছেন, পেশাব-পায়খানার বেগ তাকে ব্যাস্ততায় ফেলে দিলে এবং তাড়াহুড়া করে সলাত শেষ করার দিকে মশগুল করে দিলে তিনি সলাত ছেড়ে দিবেন। কেউ বলেছেন, হালকা বেগ হলে সলাত ছাড়তে হইবে না। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৮৯. ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদের ভাই আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ সুত্রে হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমরা আয়িশাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর নিকট ছিলাম। এমন সময় তাহাঁর খাবার আনা হলো। তখনই ক্বাসিম সলাত আদায়ের জন্যে দাঁড়িয়ে গেলে আয়িশাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে বলিতে শুনেছিঃ খাবার এসে গেলে [তা না খেয়ে] এবং পায়খানা-পেশাবের বেগ হলে তা চেপে রেখে কেউ যেন সলাত আদায় না করে।
সহীহঃ মুসলিম। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯০. সাওবান [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাকে বলেছেনঃ তিনটি কাজ করা কারো জন্য হালাল নয়। [এক] কোন ব্যাক্তি ইমাম হয়ে অন্যের জন্য দুআ না করে শুধুমাত্র নিজের জন্য দুআ করা। এরূপ করলে সে তো তাহাদের সাথে প্রতারণা করিল। [দুই] অনুমতি গ্রহণের পূর্বে কেউ কারো ঘরের অভ্যন্তরে উঁকি মেরে দেখবে না। কেননা এরূপ করাটা তার ঘরে প্রবেশেরই নামান্তর। [তিন] পায়খানা-পেশাবের বেগ চেপে রেখে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত কেউ সলাত আদায় করিবে না। {৯০}
দুর্বলঃ জঈফ আল-জামিউস সাগীর ২৫৬৫, মিশকাত ১০৭০। {৯০} অনুরূপ তিরমিজি। ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] মিশকাতের তাহক্বীক্বে বলেনঃ এর সানাদে ইযতিরাব [উলটপালট] ও জাহালাত [অজ্ঞাত ব্যাক্তি] আছে। ইমাম ইবনি তাইমিয়্যাহ ও ইবনিল কাইয়্যিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-ও এটিকে দুর্বল বলেছেন। বরং ইবনি খুযাইমাহ হাদীসের প্রথমাংশকে বানোয়াট বলেছেন। এছাড়া হাদীসের অবশিষ্ট অংশের শাওয়াহিদ বর্ণনা রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
৯১. আবু হুরাইরাহ্ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যাক্তির জন্য পায়খানা-পেশাবের বেগ হতে মুক্ত না হয়ে সলাত আদায় করা বৈধ নয়। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত শব্দযোগে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেনঃ আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী কোন ব্যাক্তির জন্য কোন সম্প্রদায়ের অনুমতি ছাড়া তাহাদের ইমামতি করা এবং অন্যদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের জন্য দুআ করা বৈধ নয়। যদি এরূপ করে, তবে সে তো তাহাদের প্রতারিত করিল। {৯১}
সহীহঃ তবে দুআ করা কথাটি বাদে। ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদীসটি কেবল সিরিয়ার বর্ণনাকারীগণ বর্ণনা করিয়াছেন, এতে তাহাদের সাথে অন্য কেউ অংশগ্রহণ করেননি। {৯১} এটি আবু দাউদের একক বর্ণনা। হাদীস থেকে শিক্ষাঃ১। কোন ব্যাক্তির জন্যই জায়িয নয় কোন সম্প্রদায় বা লোকের অনুমতি ছাড়া তাহাদের ইমামতি করা। যেহেতু তারাই ইমামতের অধিক হাক্বদার।২। সলাতের যেসন স্থানে দুআর সুযোগ রয়েছে, কেউ ইমামতিকালে সেসব স্থানে কেবল নিজের জন্য দুআ না করে সকলের জন্যই দুআ করবেন।অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৪ঃ উযুর জন্য যতটুকু পানি যথেষ্ট
৯২. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:] এক সা পানি দিয়ে গোসল করিতেন এবং এক মুদ্ পানি দিয়ে উযু করিতেন।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৩. জাবীর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] এক সা পানি দিয়ে গোসল করিতেন আর এক মুদ্ পানি দিয়ে উযু করিতেন।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৪. উম্মু উমারাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
একদা নবি [সাঃআ:] উযু করার ইচ্ছা করলে তাহাঁর জন্য একটি পাত্রে পানি আনা হয়। তিনি তা দিয়ে উযু করিলেন। তাতে পানির পরিমাণ ছিল এক মুদের দু-তৃতীয়াংশ।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৫. আনাস [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] একটি পাত্রের পানি দিয়ে উযু করিতেন, তাতে পানি ধরত দু রত্বল পরিমাণ। আর তিনি গোসল করিতেন এক সা পানি দিয়ে। আবদুল্লাহ ইবনি জাবর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণনা করেনঃ আমি আনাস [রাঃআ:]-সুত্রে শুনিয়াছি, তিনি বলেছেন, তিনি এক মাক্কুক [বা এক মগ] পানি দিয়ে উযু করিতেন, দু রত্বলের কথা উল্লেখ নেই।
ইমাম আবু দাউদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আহমদ ইবনি হাম্বালকে বলিতে শুনিয়াছি, পাঁচ রত্বলে এক সা হয়। আবু দাউদ বলেন, এটা হচ্ছে ইবনি আবু যিব-এর সা। আর এটাই হচ্ছে নবি [সাঃআ:] -এর সা। {৯৫} {৯৫} দুর্বলঃ তবে তার বক্তব্য “তিনি এক মাক্কুক পানি দিয়ে উযু করিতেন” এটি সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম, {৯৫} বোখারী [অধ্যায়ঃ উযু, অনুঃ পানি দ্বারা উযু করা, হাঃ ২০১], মুসলিম [অধ্যায়ঃ হায়িয, অনুঃ জানাবাতের গোসলের জন্য যে পরিমাণ পানি ব্যাবহার মুস্তাহাব] ইবনি জার্ব হতে আনাস সুত্রে। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৫ঃ উযুতে প্রয়োজনাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা
৯৬. আবদুল্লাহ ইবনি মুগাফ্ফাল [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি তাহাঁর পুত্রকে দুআ করিতে শুনলেনঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করি, আমি যখন জান্নাতে প্রবেশ করব তখন জান্নাতের ডান দিকে যেন সাদা অট্টালিকা থাকে। [একথা শুনে] আবদুল্লাহ [রাঃআ:] বলেন, হে বৎস! আল্লাহ্র নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাও। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআ:] -কে বলিতে শুনেছিঃ শীঘ্রই এ উম্মাতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা পবিত্রতা অর্জন ও দুআর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করিবে।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৬ঃ পূর্ণাঙ্গরূপে উযু করা
৯৭. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] একদল লোকের [উযু করার পরও] পায়ের গোড়ালি শুকনা দেখিতে পেলেন। তিনি বললেনঃ দুভার্গ্য ঐ লোকদের জন্য যারা গোড়ালির কারণে জাহান্নামে যাবে। তোমরা পরিপূর্ণভাবে উযু কর।
সহীহঃ বোখারী ও মুসলিম। তবে বোখারীতে পরিপূর্ণভাবে উযু করার নির্দেশের কথা নেই। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-৪৭ঃ তামার পাত্রে উযু করা
৯৮. হিশাম ইবনি উরওয়াহ হইতে বর্ণিতঃ.
আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেছেন, আমি ও রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাম্র নির্মিত পাত্রের [পানি দিয়ে ] গোসল করতাম।
অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
৯৯. আয়িশাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
নবি [সাঃআ:]-এর সূত্রে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ নির্ণয় করা হয়নি
১০০. আবদুল্লাহ ইবনি যায়িদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের নিকট আসলেন। আমরা তাহাঁর জন্য তামার একটি পাত্রে পানি দিলাম। তিনি তা দ্বারা উযু করিলেন।
সহীহঃ বোখারী। অজুর পানি পাক না নাপাক -এই হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস
Leave a Reply