সূর্যগ্রহণের নামাজ
সূর্যগ্রহণের নামাজ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের নামাজ
২. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সলাতে প্রতি রাকআতে তিনটি রুকূর বর্ণনা
৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সলাতে ক্ববরের শাস্তির উল্লেখ
৪. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহণের সলাতে নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জান্নাত ও জাহান্নামের যা কিছু উত্থাপন করা হয়েছে
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বলে যে, তিনি [সাঃআঃ] চার সাজদায় আট রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন
৬. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের নামাজের জন্য আহবান করা এবং “আস্সলা-তু জা-মিআহ্” [নামাজের জামাআত] বলা প্রসঙ্গে
১. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের নামাজ
১৯৭৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যুগে একবার সূর্য গ্রহণ হলো। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করিতে লাগলেন। নামাজের মধ্যে তিনি বেশ দীর্ঘ এবং বেশ দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর রুকূ করিলেন এবং তা খুব দীর্ঘায়িত করিলেন। অতঃপর আবার রুকূ করিলেন এবং রুকূ বেশ দীর্ঘায়িত করিলেন, যা রুকূ থেকে বিছু কম, অতঃপর সাজদায় গেলেন। সাজদাহ্ থেকে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় ক্বিয়াম [দণ্ডায়মান হওয়া] করিলেন। যা প্রথমবার ক্বিয়াম অপেক্ষা কিছুটা কম ছিল। অতঃপর রুকূতে গেলেন এবং এতে দীর্ঘ সময় কাটালেন। অবশ্য তা প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম ছিল। অতঃপর দীর্ঘ রুকূ করিলেন, অবশ্য তা প্রথম রুকূর চেয়ে কম ছিল। অতঃপর সাজ্দাহ করিলেন। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষ করিলেন। এতক্ষণে সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি লোকদের সামনে খুত্বাহ্ দিলেন। খুত্বাহ্ প্রসঙ্গে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করিলেন। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। আর চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ কারো জন্ম ও মুত্যুর কারণে সংঘটিত হয় না। অতএব তোমরা যখন চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণ দেখিতে পাও, তখন তাকবীর পড় আর আল্লাহর কাছে দুআ কর এবং নামাজ আদায় কর ও সদাক্বাহ্ কর। হে উম্মাতে মুহাম্মাদ! মনে রেখ, এমন কেউ নেই যে মহান আল্লাহ থেকে অধিক আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন, যখন তার দাস বা দাসী ব্যভিচারে লিপ্ত হয় [তখন তিনি শাস্তি না দিয়ে থাকেন না]। হে উম্মাতে মুহাম্মাদী! আল্লাহর কসম, যদি তোমরা জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা অবশ্যই অধিক পরিমাণে কান্না-কাটি করিতে এবং খুব কম হাসতে। আমি কি আল্লাহর বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি? মালিকের রিওয়ায়াতে এ বাক্যটি এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে- সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর বিশেষ কুদরাতের নিদর্শনাবলী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৫৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৬৬]
১৯৭৫. হিশাম ইবনি উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে একই সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
তবে হিশাম এ কথাটুকু বাড়িয়েছেঃ “অতঃপর সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত” এবং এ কথাটুকুও বাড়িয়েছেনঃ “অতঃপর তিনি উভয় হাত উঠিয়ে বলিলেন, হে আল্লাহ! আমি কি তোমার বাণী পৌঁছিয়ে দিয়েছি?”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৬৭]
১৯৭৬. নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়িশাহ্ [রা.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় সূর্য গ্রহণ লেগেছিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদে চলে গেলেন এবং দাঁড়িয়ে তাকবীর উচ্চারণ করিলেন। আর লোকজন তাহাঁর পিছনে সারিবদ্ধ ছিল। তারপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দীর্ঘ ক্বিরাআত পাঠ করিলেন। অতঃপর তাকবীর বলে রুকুতে গেলেন এবং লম্বা রুকূ করিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণঃ “সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হাম্দ”, অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেন আল্লাহ তার কথা শুনে থাকেন, অর্থঃ হে আমাদের রব্ব! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা
বলিলেন। এরপর দাঁড়িয়ে লম্বা ক্বিরাআত পাঠ করিলেন যা প্রথম ক্বিরাআত অপেক্ষা ছোট ছিল। এরপর তাকবীর বলে রুকূতে গেলেন এবং লম্বা রুকূ করিলেন যা প্রথম রুকূ অপেক্ষা ছোট ছিল। অতঃপর তিনি
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
উচ্চারণঃ “সামিআল্ল-হু লিমান হামিদাহ, রব্বানা- ওয়ালাকাল হাম্দ”, অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেন আল্লাহ তার কথা শুনে থাকেন, অর্থঃ হে আমাদের রব্ব! আর আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা
বলে সাজদায় গেলেন। আবুত্ ত্বহির-এর বর্ণনায় অবশ্য “সাজদাহ্”র কথাটি উল্লেখ নেই। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দ্বতীয় রাকআতেও অনুরূপ করিলেন। এভাবে তিনি চারটি রুকূ ও চারটি সাজদাহ্ করিলেন [দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন]। তিনি নামাজ শেষ করার আগেই সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। অতঃপর বলিলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম মৃত্যুর কারণে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হয় না। অতএব, যখন তোমরা এ অবস্থা দেখিতে পাও দ্রুত সলাতে ধাবিত হও। এরূপও বলেছেন: “এবং নামাজ আদায় করিতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের থেকে এ অবস্থা দূরীভূত না হয়। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি আমার এ স্থানে দাঁড়িয়ে তোমাদের নিকট ওয়াদাকৃত প্রতিটি বস্তু দেখিতে পেলাম। এমনকি আমি নিজেকে যেন দেখিতে পেলাম জান্নাতের এক ছড়া ফল নিতে যাচ্ছিলাম। এমনকি তোমরা আমাকে সামনে অগ্রসর হইতে দেখেছ। {রাবী মুরাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [আরবী] বলেছেন} আমি অবশ্যই জাহান্নামকে [এরূপ ভয়াবহ অবস্থায়] দেখলাম যে, এর একাংশ অপর অংশকে খেয়ে ফেলেছে, এমনকি তোমরা আমাকে দেখলে আমি পিছনে সরে যাচ্ছি। আমি জাহান্নামে [আম্র] ইবনি লুহাইকে দেখিতে পেলাম। সে সর্বপ্রথম প্রতিমার উদ্দেশে পশু ছেড়েছিল। আবুত্ ত্বহির-এর হাদীস তাহাঁর এ কথা পর্যন্ত শেষ হয়েছে- “ফাফ্যাউ লিস্সলা-ত” তিনি পরবর্তী অংশ উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৬৮]
১৯৭৭. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময় একবার সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। তিনি জনৈক ব্যক্তিকে এ ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেন:
الصَّلاَةَ جَامِعَةً
আসসালাতা জামিয়াহ, “জামাআতে নামাজ”
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। [ঘোষণা শুনে] সবাই একত্রিত হলে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সামনে অগ্রসর হয়ে তাকবীর উচ্চারণ করিলেন এবং দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। দু রাকআতে চারটি রুকূ ও চারটি সাজদাহ্ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬২, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৬৯]
১৯৭৮. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] সূর্যগ্রহণের সলাতে ক্বিরাআত উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করিয়াছেন এবং দু রাকআতের স্থলে চার রাকআত আদায় করিয়াছেন এবং চারটি সাজদাহ্ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭০]
১৯৭৯. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] নবী [সাঃআঃ] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দু রাকআতের স্থলে চার রাকআত আদায় করিয়াছেন এবং চারটি সাজদাহ্ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭০]
১৯৮০. কাসীর ইবনি আব্বাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি আব্বাস [রাদি.] সূর্যগ্রহণের দিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে ঠিক ঐরূপ বর্ণনা করিয়াছেন যেরূপ উরওয়াহ্ আয়িশা [রাদি.] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭১]
২. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সলাতে প্রতি রাকআতে তিনটি রুকূর বর্ণনা
১৯৮১. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময় সূর্যগহণ লাগলে তিনি নামাজের উদ্দেশে দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘ ক্বিয়াম করিলেন। অতঃপর রুকু করেন। রুকূর পর আবার দাঁড়ালেন আবার রুকূ করিলেন। আবার দাঁড়ালেন, আবার রুকূ করিলেন। এভাবে দু রাকআতে তিন রূকূ ও চার সাজদায় আদায় করিলেন। নামাজ শেষ হইতে হইতে সূর্যও পরিষ্কার হয়ে গেল। তিনি রুকূতে যাওয়ার সময়
اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
বলিতেন, অতঃপর রুকূ করিতেন। রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
উচ্চারণঃ সামিআল্ল-হ লিমান হামিদাহ, অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করেন আল্লাহ তার কথা শুনে থাকেন
বলিতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগান করিলেন এবং বললেনঃচন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে লাগে না বরং এ দুটি আল্লাহর নিদর্শন, যা দ্বারা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাকে সতর্ক করেন। অতএব তোমরা যখন সূর্যগ্রহণ লাগতে দেখ, আল্লাহর যিক্রে মশ্গুল হও যতক্ষণ তা আলোকিত হয়ে না যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭২]
১৯৮২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] [সূর্য গ্রহণের সময়] ছয় রুকূ ও চার সাজদাহ্ সহকারে দু রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৩]
৩. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের সলাতে ক্ববরের শাস্তি এর উল্লেখ
১৯৮৩. আম্রাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এক ইয়াহূদী মহিলা আয়িশা [রাদি.]-কে কিছু জিজ্ঞেস করার উদ্দেশে তাহাঁর নিকট আসলো। এসে বলিল, আল্লাহ আপনাকে ক্ববর আযাব থেকে মুক্তি দিন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, এরপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! মানুষকে ক্ববরে কি আযাব দেয়া হইবে? আমরাহ-এর বর্ণনা অনুযায়ী আয়িশা [রাদি.] বলেন, নাউযুবিল্লাহ। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন সকালবেলা সওয়ারীতে আরোহণ করিলেন, তখন সূর্যগ্রহণ লাগছিল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি কতিপয় মেয়ে লোকদের সাথে নিয়ে হুজরাগুলোর পিছন দিয়ে বের হলাম। আর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সওয়ারী থেকে নেমে যেখানে নামাজ আদায় করিতেন সোজা সেখানে পৌঁছলে তিনি সলাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। লোকেরাও সঙ্গে সঙ্গে তাহাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লম্বা ক্বিয়াম করিলেন। অতঃপর রুকূ করিলেন এবং রুকূও লম্বা করিলেন। তারপর মাথা উঠিয়ে আবার বেশ কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন যা পূর্বের ক্বিয়াম অপেক্ষা কিচু কম। অতঃপর রুকূতে গেলেন তবে তা প্রথম রুকূ অপেক্ষা কম ছিল। তারপর মাথা উত্তোলন করিলেন। এতক্ষণে সূর্য একেবারে উজ্জ্বল হয়ে গেল। তিনি বলিলেন, আমি দেখিতে পেলাম তোমরা ক্ববরেও দাজ্জালের ফিতনার ন্যায় ভীষণ পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে।
আম্রাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, এরপর থেকে আমি শুনতে পেতাম যে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জাহান্নামের আযাব থেকে ও ক্ববর আযাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৪]
১৯৮৪. ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সুলায়মান ইবনি বিলাল-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৫]
৪. অধ্যায়ঃ সুর্যগ্রহণের সলাতে নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জান্নাত ও জাহান্নামের যা কিছু উত্থাপন করা হয়েছে
১৯৮৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যামানায় ভীষণ গরমের দিনে একবার সূর্যগ্রহণ লাগল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাহাবীগণকে নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। সলাতে ক্বিয়াম এত দীর্ঘায়িত করিলেন যে, লোকরা পড়ে যেতে লাগল। অতঃপর রুকূ করিলেন এবং তাও খুব লম্বা করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকূতে গেলেন এবং লম্বা রুকূ করিলেন। তারপর মাথা উঠালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর দুটি সাজদাহ্ করিলেন। এরপর দাঁড়িয়ে পূর্বের ন্যায় ক্বিয়াম এ রুকূ করিলেন। এতে চারটি রুকূ ও চারটি সাজদাহ্ ছিল। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা সেসব স্থানে প্রবেশ করিবে যে সব স্থান আমাকে দেখানো হয়েছে। আমার সামনে জান্নাত পেশ করা হয়েছিল। আমি সেখান থেকে একটি আঙ্গুর ধরতে চেয়েছিলাম। অথবা তিনি বলেছেন, একটি শাখা ধরতে চাইলে আমার হাত সে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি এবং আমার সম্মুখে জাহান্নামও পেশ করা হয়েছিল। সেখানে বানী ইসরাঈলের একটি মহিলাকে দেখিতে পেলাম। তাকে একটা বিড়ালের কারণে শাস্তি দেয়া হয়েছে। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল, খানাপানি কিছু দেয়নি। আর ছেড়েও দেয়নি যে তা জমিনের পোকামাড় খেয়ে জীবন ধারণ করত [এভাবে অনাহারে বিড়ালটি মারা গেল]। এছাড়াও জাহান্নামে আবু সুমামাহ্ আম্র ইবনি মালিককেও দেখলাম, সে তার নাড়িভুঁড়ি টানাটানি করছে। আরবরা বলত যে, চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ কোন মহান ব্যক্তির মৃত্যুর কারণেই সংঘটিত হয়ে থাকে। অথচ এ দুটি আল্লাহ্র দুটি নিদর্শন যা আল্লাহ তোমাদেরকে দেখান। অতএব যখন চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ লাগে, তোমরা নামাজ আদায় কর যে পর্যন্ত তা পরিষ্কার না হয়ে যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৬]
১৯৮৬. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে একই সানাদ হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কেবল ব্যতিক্রম এই যে, তিনি বলেন, আমি জাহান্নামের মধ্যে হিম্ইয়ারিয়্যাহ্ গোত্রের একটি দীর্ঘকায় কালো মেয়েলোককে দেখিতে পেলাম। এতে তিনি বানী ইসরাঈলের কথা উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৭]
১৯৮৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যামানায় অর্থাৎ যেদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর প্রিয় পুত্র ইব্রাহীম মৃত্যুবরণ করেন, সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। এতে লোকেরা বলিতে লাগল ইব্রাহীমের মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ লেগেছে। নবী [সাঃআঃ] উঠে গিয়ে উপস্থিত লোকদের নিয়ে ছয় রুকূ ও চার সাজদায় নামাজ আদায় করিলেন। সূচনাতে তাকবীর উচ্চারণ করিলেন পরে ক্বিরাআত পাঠ করিলেন এবং ক্বিরাআত বেশ লম্বা করিলেন। অতঃপর রুকূ করিলেন। রুকূতে ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় অবস্থান করিলেন। অতঃপর রুকূ থেকে মাথা উঠালেন এবং ক্বিয়ামে প্রথম ক্বিরাআত অপেক্ষা কিছু ছোট ক্বিরাআত পাঠ করিলেন। অতঃপর ক্বিয়ামের সমপরিমাণ সময় রুকূতে কাটালেন। তারপর রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে ক্বিরাআত পাঠ করিলেন যা পূর্বের ক্বিরাআত অপেক্ষা ছোট ছিল। অতঃপর রুকূতে গিয়ে ক্বিয়ামের পরিমাণ সময় অতিবাহিত করিলেন। এরপর রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সাজদায় গেলেন এবং দুটি সাজদাহ করিলেন। তারপর দাঁড়িয়ে আরো তিনটি রুকূ করিলেন যাতে কোন রাকআত ছিল না। শেষের তিন রুকূ এরূপ ছিল যে, প্রত্যেক রুকূ পূর্ববর্তী রুকূ অপেক্ষা ছোট এবং পরবর্তী রুকূ অপেক্ষা দীর্ঘ ছিল। আর প্রতিটি রুকূর সময় সাজদার সমপরিমাণ ছিল। অতঃপর তিনি একটু পিছনে সরে আসলেন আর তাহাঁর পিছনের সারিগুলোও পিছনে সরে গিয়ে আমরা পৌছে গেলাম। আবু বাক্র বলেনঃ মহিলাদের কাতার পর্যন্ত পৌছে গেলেন। অতঃপর তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং তাহাঁর সাথে সব লোক সামনে এগিয়ে গেল। অবশেষে তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে নামাজ শেষ করিলেন। এদিকে সূর্য তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে এল। নামাজ শেষে তিনি [সাঃআঃ] উপস্থিত লোকদেরকে সম্বোধন করে বলিলেন, হে লোক সকল। চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে দুটি নিদর্শন। আর এ দুটি কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে গ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। আবু বাক্র-এর বর্ণনায় [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন], “কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে” [এ দুটি গ্রহণ হয় না]। অতএব, তোমরা যখন এরূপ কিছু ঘটতে দেখ তখন নামাজ আদায় কর যে পর্যন্ত সূর্য স্পষ্ট হয়ে না যায়। তোমাদের কাছে যে সব বিষয় সম্পর্কে ওয়াদা করা হয়েছে তার প্রতিটি আমি আমার নামাজের মধ্যে দেখিতে পেয়েছি। আমার কাছে জাহান্নাম তুলে ধরা হয়েছে। আর এটা তখন যখন তোমরা আমাকে দেখেছ যে, আমি পিছনে সরে এসেছি এর লেলিহান শিখা আমাকে স্পর্শ করার ভয়ে। অবশেষে আমি জাহান্নামের মধ্যে লৌহশলাকাধারীকে [আমর ইবনি মালিক] দেখলাম, সে জাহান্নামের মধ্যে নিজের নাড়ীভূঁড়ি টানছে। এ ব্যক্তি নিজ লাঠি দ্বারা হাজ্জ যাত্রীদের মালপত্র চুরি করত। এরপর যদি ধরা পড়ে যেত তখন বলত আহ ! আমার শলাকার সাথে লেগে গেছে। আর কেউ অসাবধান থাকলে তা নিয়ে যেত। এছাড়া জাহান্নামের মধ্যে ঐ মহিলাকেও দেখিতে পেলাম যে, একটি বিড়ালকে বেঁধে রেখেছিল। এরপর এটাকে আহারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি, যাতে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে জীবন ধারণ করিতে পারত। শেষ পর্যন্ত বিড়ালটি ক্ষুধায় ছটফট করে মারা গেল। অতঃপর আমার সামনে জান্নাত তুলে ধরা হয়েছে। আর এটা তখন দৃষ্ট হয়েছে, যখন তোমরা আমাকে দেখিতে পেয়েছ যে, আমি সামনে এগিয়ে গেছি এবং নিজস্থানে দাঁড়িয়েছি। আমি আমার হাত প্রসারিত করলাম এবং এর ফল তুলে নেবার ইচ্ছা করলাম যাতে তোমরা তা দেখিতে পাও। অতঃপর এরূপ না করাই স্থিরকৃত হলো। যেসব বিষয় তোমাদের জানানো হয়েছিল তার প্রতিটি বিষয় আমি আমার এ সলাতে থাকাকালীন দেখিতে পেয়েছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৮]
১৯৮৮. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর যামানায় একবার সূর্যগ্রহণ লাগে। তখন আমি আয়েশাহ [রাদি.]-এর নিকট গিয়ে দেখি তিনি নামাজ আদায় করছেন। আমি বললাম কি ব্যাপার! লোকেরা নামাজ আদায় করছে? আয়েশাহ [রাদি.] মাথা নেড়ে আসমানের দিকে ইশারা করিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, একি বিশেষ কোন ঘটনা? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। এদিকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এত লম্বা ক্বিয়াম করিলেন যে, আমার মাথার চক্কর এসে গেল। তখন আমি আমার পাশে রাখা পানির মশক নিয়ে আমার মাথায় অথবা চেহারায় পানি ঢালতে আরম্ভ করলাম। আস্মা বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর নামাজ শেষ করার সাথে সাথে সূর্য উজ্জ্বল হয়ে গেল। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] লোকদের উদ্দেশ্যে খুত্বাহ্ দিলেন। আল্লাহর হাম্দ ও নাত আদায় করার পর তিনি বলিলেন, আম্মাবাদ, যে সব বস্তু আমি ইতিপূর্বে দেখিনি তা আমি আমার এ স্থানে দাঁড়িয়ে দেখিতে পেলাম। এমনকি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। আর এ মুহূর্তে আমার নিকট অবতীর্ণ করা হয়েছে যে, অচিরেই তোমরা ক্ববরে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হইবে। অথবা বলেছেন, মাসীহ দাজ্জালের ফিৎনার ন্যায় ফিৎনায় পতিত হইবে। [রাবী বলেন,] আমার জানা নেই আস্মা এর কোন্টা বলেছে। এরপর তোমাদের প্রত্যেককে হাজির করে জিজ্ঞেস করা হইবে “এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা কি জানা আছে?” এ সময় ঈমানদার ব্যক্তি অথবা বলেছে মুমিন দৃঢ় বিশ্বাসী ব্যক্তি [আমার জানা নেই আস্মা এর কোনটা বলেছেন] বলবে, ইনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ], ইনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]। তিনি [সাঃআঃ] সুপষ্ট প্রমাণাদি ও হিদায়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে এসেছেন। তাই আমরা তাহাঁর আহবানে সাড়া দিয়েছি এবং তাহাঁর অনুসরণ করেছি। তিনবার সে এ কথা উচ্চারণ করিবে। তখন তাকে বলা হইবে। ঘুমাও, আমরা জানতাম তুমি তাহাঁর প্রতি ঈমান বজায় রেখেছো। ভালরূপে ঘুমাও। কিন্তু মুনাফিক্ব অথবা মুরতাদ [সংশয়বাদী আমার জানা নেই আস্মা এর কোনটা বলেছেন] বলবে, আমি তো কিছু জানি না। লোকদের কিছু বলাবলি করিতে শুনেছি আমিও তা-ই বলেছি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৭৯]
১৯৮৯. আসমা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়েশাহ [রাদি.] এর নিকট এসে দেখলাম, লোকেরা সলাতে দাঁড়ানো এবং আয়িশা [রাদি.]-ও নামাজ আদায় করছেন। আমি বললাম, লোকদের কি অবস্থা? হাদীসটি হিশাম-এর সূত্রে বর্ণিত। ইবনি নুমায়র–এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮০]
১৯৯০. উরওয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [আরবী] বলবে না, বরং [আরবী] বলো। অর্থ একই সূর্যগ্রহণ লেগেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮১]
১৯৯১. আসমা বিনতু আবু বাক্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] একদিন অর্থাৎ- যেদিন সূর্যগ্রহণ লেগেছিল, এরূপ আতঙ্কগ্রস্ত হলেন যে, চাদর নিতে গিয়ে ভুলে [মহিলাদের] বড় চাদর উঠিয়ে নিলেন। পরে তাহাঁর চাদরই তাঁকে পৌছে দেয়া হলো। অতঃপর তিনি লোকদের নিয়ে নামাজ শুরু করে দিলেন এবং বেশ লম্বা ক্বিয়াম করিলেন। যদি কোন লোক তাহাঁর কাছে আসত বুঝতে পারত না যে, নবী [সাঃআঃ] রুকূ করিয়াছেন [রুকূর পর] দীর্ঘ ক্বিয়ামের কারণে। যে পর্যন্ত কেউ প্রকাশ না করে দিত যে, তিনি রুকূ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮২]
১৯৯২. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। এতে আস্মা [রাদি.] বলেছেন, দীর্ঘ সময় ক্বিয়াম করে পরে রুকূ করিয়াছেন। বর্ণনাকারী এ কথাটুকু বাড়িয়েছেন- “আমি মহিলাদের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমার চেয়ে বয়স্কা মহিলাও আছে আর আমার চেয়ে অধিক রুগ্না মহিলাও রয়েছে”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৩]
১৯৯৩. আসমা বিনতু আবু বাক্র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] এর যামানায় একবার সূর্যগ্রহণ লাগলে তিনি [সাঃআঃ] ঘাবড়ে গেলেন। যে কারণে তিনি ভুল করে নিজের চাদর নিতে গিয়ে [মহিলাদের] বড় চাদর নিয়ে গেলেন। অবশ্য পরে তাহাঁর চাদর পৌছিয়ে দেয়া হলো। আস্মা [রাদি.] বলেন, আমি আমার প্রয়োজন সেরে আসলাম এবং এসে মাসজিদে প্রবেশ করলাম। ঢুকে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছেন। আমিও তাহাঁর সাথে দাঁড়ালাম, তিনি [সাঃআঃ] দীর্ঘ ক্বিয়াম করিলেন। এমনকি আমি মনে মনে ভাবছিলাম বসে পড়ব কিনা, অতঃপর তাকিয়ে দেখলাম একটি দুর্বল মহিলা। তখন মনে মনে বললাম, এ মেয়ে লোকটি তো আমার চেয়েও দুর্বল। অতএব দাঁড়িয়ে থাকলাম। দীর্ঘ সময় পর তিনি রুকূতে গেলেন এবং রুকূও দীর্ঘ করিলেন, অতঃপর তিনি মাথা উঠালেন। রুকূ থেকে উঠেও দীর্ঘ ক্বিয়াম করিলেন। এমনকি কোন ব্যক্তি এসে দেখলে মনে করত তিনি রুকূই করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৪]
১৯৯৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময় একবার সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিজের সাথে লোকদের নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন। নামাজ শুরু করে তিনি লম্বা ক্বিয়াম করিলেন প্রায় সুরা আল বাক্বারাহ্ পড়ার সমপরিমাণ সময়। অতঃপর রুকূ করিলেন লম্বা রুকূ। অতঃপর [রুকূ থেকে] মাথা উঠালেন। আবার লম্বা ক্বিয়াম করিলেন যা প্রথম ক্বিয়াম অপেক্ষা কিছুটা ছোট। অতঃপর লম্বা রুকূ করিলেন যা প্রথম রুকূ অপেক্ষা কিছু কম। অতঃপর সাজদাহ্ করিলেন। সাজদাহ্ থেকে উঠে আবার লম্বা ক্বিয়াম করিলেন যা প্রথম ক্বিয়াম অপেক্ষা কম। আবার লম্বা রুকূ করিলেন যা প্রথম রুকূর চেয়ে কিছু কম। অতঃপর সাজদাহ্ করিলেন। সাজদাহ্ থেকে উঠে আবার লম্বা ক্বিয়াম করিলেন যা প্রথম ক্বিয়াম অপেক্ষা কিছু কম। তারপর মাথা উঠিয়ে দীর্ঘ সময় ক্বিয়াম করিলেন যা প্রথম ক্বিয়াম অপেক্ষা কম। অতঃপর আবার দীর্ঘ রুকূ করিলেন যা প্রথম রুকূ অপেক্ষা সংক্ষিপ্ত। অতঃপর সাজদাহ্ করে নামাজ সমাপ্ত করিলেন। এতক্ষণে সূর্য স্পষ্ট হয়ে গেল। এরপর তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। এগুলো কারো জন্ম বা মৃত্যুর কারণে গ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। অতএব তোমরা যখন এরূপ কিছু দেখ, তখন আল্লাহকে স্মরণ কর। সাথীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! আমরা আপনাকে দেখলাম, আপনি এ স্থানে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে নিতে যাচ্ছেন। আবার একটু পর দেখলাম হাত ফিরিয়ে নিলেন? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি জান্নাত দেখিতে পেলাম। অতএব জান্নাত থেকে ফলের একটি ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। যদি তা নিয়ে নিতাম তাহলে তোমরা তা পৃথিবী ক্বিয়াম থাকা পর্যন্ত খেতে পারতে। আমি জাহান্নামও দেখিতে পেলাম এবং আজকের ন্যায় এমন ভয়াবহ দৃশ্য আরি কখনও দেখিনি। আমি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে বেশীর ভাগ দেখলাম মহিলা। সাথীরা জিজ্ঞেস করিলেন, কি কারণ হে আল্লাহ রসূল! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তাঁদের অকৃতজ্ঞতার কারণে। তিনি বলেন, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে এবং অনুগ্রহকে অস্বীকার করে। তুমি যদি তাদের কারো সারাজীবনও উপকার কর, অতঃপর যদি কখনও তোমার থেকে কোন ত্রুটি দেখে তখন বলে ফেলে, আমি তোমার কাছ থেকে কখনও কোন কল্যাণ দেখিতে পাইনি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৫]
১৯৯৫. যায়দ ইবনি আসলাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। কেবল ব্যতিক্রম এই যে, তিনি বলেছেনঃ “অতঃপর আপনাকে দেখলাম হাত গুটিয়ে নিলেন”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৬]
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি বলে যে, তিনি [সাঃআঃ] চার সাজদায় আট রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন
১৯৯৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সূর্যগ্রহণের সময় আটটি রুকূ ও চারটি সাজদাহ্ সহকারে নামাজ আদায় করিয়াছেন। আলী [রাদি.] থেকেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৭]
১৯৯৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] সূর্যগ্রহণের সময় নামাজ শুরু করে প্রথমে ক্বিরাআত পাঠ করিয়াছেন, তারপর রুকূ করিয়াছেন। আবার ক্বিরাআত পড়েছেন, আবার রুকূ করিয়াছেন। আবার ক্বিরাআত পাঠ করে আবার রুকূ করিয়াছেন। আবার ক্বিরাআত পাঠ করে আবার রুকূ করিয়াছেন। অতঃপর সাজদাহ্ করিয়াছেন। দ্বিতীয় রাকআতও অনুরূপভাবে আদায় করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৮]
৬. অধ্যায়ঃ সূর্যগ্রহণের নামাজের জন্য আহবান করা এবং “আস্সলা-তু জা-মিআহ্” [নামাজের জামাআত] বলা প্রসঙ্গে
১৯৯৮. আবদুল্লাহ ইবনি আম্র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময় যখন সূর্যগ্রহণ লাগল, তখন ঘোষণা করা হলো,
الصَّلاَةَ جَامِعَةً
“আস্সলা-তু জা-মিআহ্” [নামাজের জামাআত]
অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দু রুকূ ও এক সাজদাহ্ সহকারে এক রাকআত আদায় করিলেন। অতঃপর সূর্য স্পষ্ট হয়ে গেল। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি কখনও এর চেয়ে লম্বা রুকূ ও লম্বা সাজদাহ্ আদায় করিনি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৮৯]
১৯৯৯. আবু মাসঊদ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। এগুলো দ্বারা আল্লাহ তাহাঁর বান্দাদের ভীতি প্রদর্শন করেন। আর এ দুটি কোন মানুষের মৃত্যুর জন্য গ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। অতএব, তোমরা যখন এরূপ কিছু দেখিতে পাও, তখন তোমরা নামাজ আদায় কর এবং দুআ করিতে থাক যে পর্যন্ত আল্লাহ তোমাদের এ অবস্থা দূর না করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯০]
২০০০. আবু মাসঊদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ অবশ্যই কোন মানুষের মৃত্যুর কারণে সংঘটিত হয় না। বরং এগুলো আল্লাহর দুটি নিদর্শন। অতএব তোমরা যখন তা [গ্রাস] দেখ তখন উঠে গিয়ে নামাজ আদায় কর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯১]
২০০১. আবু বাকর ইবনি আবু শায়বাহ্, ইসহাক্ব ইবনি ইব্রাহীম, ইবনি আবু উমর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. সকলেই ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তবে সুফ্ইয়ান ও ওয়াকী-এর হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে: যেদিন ইব্রাহীম [ইবনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]] ইনতিকাল করেন, সেদিন সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন লোকেরা বলিতে লাগল, ইব্রাহীম-এর মৃত্যুর কারণে সূর্যগ্রহণ লেগেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯২]
২০০২. আবু মূসা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] এর যামানায় একবার সূর্যগ্রহণ লাগল। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়ালেন। [রাবীর ধারণা] তিনি ক্বিয়ামাত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। অবশেষে তিনি মাসজিদে এসে সলাতে দাঁড়ালেন এবং সবচেয়ে লম্বা ক্বিয়াম, লম্বা রুকূ, লম্বা সাজদাহ্ সহকারে নামাজ আদায় করিতে লাগলেন। আমি কখনও কোন নামাজ তাঁকে [সাঃআঃ-কে] এত লম্বা করিতে দেখিনি। নামাজ শেষ করে তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, এসব নিদর্শনাবলী যা যা আল্লাহ জগতে পাঠান। কোন ব্যক্তির মৃত্যু বা জীবনের কারণেই অবশ্যই তা হয় না। বরং আল্লাহ এগুলো পাঠিয়ে বান্দাদের সতর্ক করেন। অতএব তোমরা যখন এমন কিছু দেখিতে পাও, তখন তোমরা ভীত হয়ে আল্লাহর যিক্র, দুআ ও ইস্তিগফারে মশগুল হও।
ইবনি আলা এর বর্ণনায় রয়েছেঃ সূর্যগ্রহণের সময় এবং তিনি বলেন, বান্দাদের সতর্ক করার জন্য।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৩]
২০০৩. আবদুর রহমান ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জীবদ্দশায় আমি তীর নিক্ষেপ করেছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ লাগল। তখন আমি এগুলো ফেলে রেখে মনে মনে ভাবলাম, আজ সূর্যগ্রহণে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে নতুন কিছু প্রকাশ পায় কিনা তা অবশ্যই দেখব। আমি তাহাঁর কাছে পৌঁছে গেলাম। এ সময়ে তিনি দু হাত উঠিয়ে দুআ করছিলেন এবং
اللَّهُ أَكبَر
তাকবীর উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবর, অর্থঃ আল্লাহ মহান
الْحَمْدُ لِلَّهِ
তাহমীদ উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
ও তাহলীলে [লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ]
মশগুল ছিলেন। অবশেষে সূর্য পরিষ্কার হয়ে গেল। এরপর তিনি দুটি সুরা পাঠ করিলেন এবং দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৪]
২০০৪. আবদুর রহমান ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সহাবীর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময়ে আমি একবার মাদীনায় তীর নিক্ষেপ করেছিলাম। এমন সময় সূর্যগ্রহণ আরম্ভ হলো। তখন আমি এগুলো ফেলে রেখে মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম! সূর্যগ্রহণকালে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে যা কিছু প্রকাশ পায়, তা অবশ্যই দেখব। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে দেখি তিনি সলাতে দন্ডায়মান এবং দু হাত উঠিয়ে
তাসবীহ [সুবহা-নাল্ল-হ],
الْحَمْدُ لِلَّهِ
তাহমীদ উচ্চারণঃ আলহামদু লিল্লাহ, অর্থঃ সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ
তাহলীল [লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ],
اللَّهُ أَكْبَرُ
তাকবীর উচ্চারণঃ আল্লাহু আকবার, অর্থঃ আল্লাহ মহান
ও দুআ করছেন, অবশেষে সূর্য গ্রাসমুক্ত হলো এবং তিনি দুটি সুরা পাঠ করিলেন এবং দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৫]
২০০৫. আবদুর রহমান ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সময় একবার আমি আমার তীর ছুঁড়ছিলাম, এমন সময় সূর্যগ্রহণ লাগল। অতঃপর পূর্বোক্ত বর্ণনাকারীর মতো বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৬]
২০০৬. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ কারো জীবন ও মৃত্যুর কারণে লাগে না। বরং এ দুটি আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম। অতএব তোমরা যখন এ দুটি [গ্রহণ লাগতে] দেখ, তখন সলাতে মশগুল হও।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৯০, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৭]
২০০৭. যিয়াদ ইবনি ইলাক্বাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মুগীরাহ্ ইবনি শুবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর যামানায় অর্থাৎ যেদিন ইব্রাহীম ইবনি মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] ইনতিকাল করেন, সূর্যগ্রহণ লেগেছিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, চন্দ্র ও সূর্য আল্লাহর দুটি নিদর্শন। এগুলো কারো জীবন ও মরণের কারণে গ্রাসপ্রাপ্ত হয় না। অতএব যখন তোমরা তা দেখিতে পাও। আল্লাহর কাছে দুআ কর ও নামাজ আদায় করিতে থাক যে পর্যন্ত গ্রাসমুক্ত না হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৯৯১, ইসলামিক সেন্টার- ১৯৯৮]
Leave a Reply