সালাম ফিরানোর নিয়ম এবং ফিরানোর পর যা বলবে
সালাম ফিরানোর নিয়ম এবং ফিরানোর পর যা বলবে >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (১০৯-১১৩)=৫টি
১০৯. অনুচ্ছেদঃ নামাযের সালাম ফিরানো সম্পর্কে
১১০. অনুচ্ছেদঃ সালাম সম্পর্কেই
১১১. অনুচ্ছেদঃ সালাম খুব লম্বা করে টানবে না, এটাই সুন্নত
১১২. অনুচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর যা বলবে
১১৩. অনুচ্ছেদঃ ডান অথবা বাম পাশে ফেরা
১০৯. অনুচ্ছেদঃ নামাযের সালাম ফিরানো সম্পর্কে
২৯৫. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষে ডান দিকে তারপর বাম দিকে এ বলে সালাম ফিরাতেন,
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯১৪], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদ সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস, ইবনি উমার, জাবির ইবনি সামুরা, বারাআ, আবু সাঈদ, আম্মার, ওয়াইল ইবনি হুজর, আদী ইবনি উমাইরা ও জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি মাসঊদের হাদীসটি হাসান সহিহ। নাবী রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশিরভাগ সাহাবা এবং তাহাদের উত্তরসুরিগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। সুফিয়ান সাওরী, ইবনিল মুবারক, আহমাদ এবং ইসহাকও একই রকম কথা বলেছেন। সালাম ফিরানোর নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১০. অনুচ্ছেদঃ সালাম সম্পর্কেই
২৯৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাযে এক সালামই ফিরাতেন, প্রথমে সামনের দিকে [শুরু করে] তারপর ডান দিকে কিছুটা মুখ ঘুরাতেন।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯১৯]। এ অনুচ্ছেদে সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আমরা শুধু উল্লেখিত সুত্রেই আয়িশার হাদীসটি মারফু হিসাবে পেয়েছি। মুহাম্মাদ ইবনি ইসমাঈল [বুখারী] বলেন, সিরিয়াবাসীগণ মুহাম্মাদ ইবনি যুহাইরের সূত্রে মুনকার হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। ইরাকবাসীগণ তার নিকট হইতে যে বর্ণনা গ্রহণ করিয়াছেন তা অধিক সহিহ। মুহাম্মাদ বলেন, আহমাদ ইবনি হাম্বল বলেছেন, সিরিয়াবাসীগণ যে যুহাইরের দেখা পেয়েছিলেন সম্ভবতঃ তিনি সেই যুহাইর নন যার বর্ণনা ইরাকবাসীগণ গ্রহণ করিয়াছেন। সম্ভবতঃ ইনি অন্য এক ব্যক্তি। আবু ঈসা বলেনঃ কোন কোন আলিম হাদীসে উল্লেখিত নিয়মে নামাযে সালাম ফিরানোর পদ্ধতি গ্রহণ করিয়াছেন। কিন্তু সবচাইতে সহীহ্ বর্ণনামতে নাবী [সাঃআঃ] দুবার সালাম ফিরাতেন। বেশিরভাগ সাহাবা, তাবিঈন ও তাবউ তাবিঈন এ মতই গ্রহণ করিয়াছেন। একদল সাহাবা, তাবিঈন ও অন্যান্যরা ফরয নামাযে একবার সালাম ফিরানোর পক্ষে মত দিয়েছেন। ঈমাম শাফি বলেছেন, দুটি পদ্ধতিরই অনুমতি আছে, ইচ্ছা করলে এক সালাম বা দুই সালামও ফিরাতে পারে। সালাম ফিরানোর নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১১. অনুচ্ছেদঃ সালাম খুব লম্বা করে টানবে না, এটাই সুন্নত
২৯৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেল, সালামের মধ্য হযফ করা সুন্নাত।
যঈফ, আবু দাউদ ১৭৯। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান সহীহ। আলী ইবন হুজর বলেন, ইবনিল মুবারক বলেছেন, হযফের তাৎপয হল সালাম খুব লম্বা করে না টেনে বরং স্বাভাবিক অবস্থায় রাখা। বিশেষজ্ঞগন এ নিয়মকে মুস্তাহাব বলেছেন। ইব্রাহিম নাখঈ বলেছেন, তাকবীর এবং সালাম অধিক্ষন টানবে না। রাবী হিকল সম্পর্কে বলা হয়, তিনি ঈমাম আওযায়ীর সচিব ছিলেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
১১২. অনুচ্ছেদঃ সালাম ফিরানোর পর যা বলবে
২৯৮. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালাম ফিরানোর পর এই দুআ পাঠের বেশি সময় বসতেন না-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস্ সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারক্তা জালজালালি ওয়াল ইকরাম”। অর্থাৎ-“হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা এবং তোমার নিকট হইতেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও গৌরবের মালিক! তুমি প্রাচুর্যময় ও বারকাতময়”।
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯২৪], মুসলিম। সালাম ফিরানোর নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
২৯৯. আসিম আল-আহওয়াল হইতে বর্ণীতঃ
আসিম আল-আহওয়াল হইতে উপরের হাদীসের মতই বর্ণিত হয়েছে। শুধু যাল-জালালি শব্দের পূর্বে ইয়া [হে] শব্দটি অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
সহিহ। দেখুন পূর্বের হাদীস। এ অনুচ্ছেদে সাওবান, ইবনি উমার, ইবনি আব্বাস, আবু সাঈদ, আবু হুরাইরা ও মুগীরা ইবনি শুবা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আয়েশা হাদীসটি হাসান সহিহ। খালিদ আল-হায্যা আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে আব্দুল্লাহ ইবনি হারিসের সূত্রে আসিমের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট হইতে আরো বর্ণিত হয়েছে, তিনি সালাম ফিরানোর পর এ দুআ পাঠ করিতেনঃ
“আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাহাঁর কোন শারীক নেই, [মহাবিশ্বের] রাজত্ব তাহাঁরই হাতে, তাহাঁর জন্য সকল প্রশংসা। তিনিই হায়াত দেন, তিনিই মউত দেন, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যাকে দান কর তা প্রতিরোধ করার শক্তি কারো নেই; তুমি যার প্রতিবন্ধক হও তাকে কেউ দান করিতে পারে না এবং কোন চেষ্টা-তদবিরকারীই তার চেষ্টার মাধ্যমে তোমার নিকট হইতে মঙ্গল ছিনিয়ে নিতে সমর্থ নয়”।
অপর এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলিতেনঃ “তারা যা বলে থাকে তা থেকে আপনার রব, যিনি মহা মহিমান্বিত সকল ক্ষমতার মালিক, মহান পবিত্র। সালাম বর্ষিত হোক রাসূলদের প্রতি। সকল প্রশংসা সারা বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই”। [সূরাদি. আস-সাফফাত-১৮০] সালাম ফিরানোর নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
৩০০. রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুক্ত করা গোলাম সাওবান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ হইতে ফুরসত হইতে চাইতেন তখন তিনবার মার্জনা প্রার্থনা করিতেন; তারপর বলিতেন,
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস্ সালামু ওয়া মিনকাস সালামু তাবারক্তা জালজালালি ওয়াল ইকরাম”।
অর্থাৎ-“হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিদাতা এবং তোমার নিকট হইতেই শান্তি আসে। হে পরাক্রম ও সম্মানের অধিকারী! তুমি প্রাচুর্যময় ও বারকাতময়”।
السَّلاَمُ | أَنْتَ | اللَّهُمَّ |
শান্তিদাতা | তুমিই | হে আল্লাহ |
تَبَارَكْتَ | السَّلاَمُ | وَمِنْكَ |
বারকাতময় | শান্তি | এবং তোমার নিকট হইতেই |
وَالإِكْرَامِ | ذَا الْجَلاَلِ | يَا |
ও সম্মানের অধিকারী | পরাক্রম | হে |
সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯২৮], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। সালাম ফিরানোর নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
১১৩. অনুচ্ছেদঃ ডান অথবা বাম পাশে ফেরা
৩০১. কাবিসা ইবনি হুলব [রাদি.] হইতে তার পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [হুলব] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের ঈমামতি করিতেন। [সালাম ফিরানোর পর] তিনি ডান এবং বাম উভয় পাশেই ফিরে বসতেন।
এ অনুচ্ছেদে আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আনাস, আবদুল্লাহ ইবনি আমর ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস উল্লেখিত আছে। হাসান সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৯২৯]। আবু ঈসা বলেনঃ হুলব-এর হাদীসটি হাসান। এ হাদীসের দ্বারা বিশেষজ্ঞগণ বলেন, ডান, বাম যে কোন পাশে ইচ্ছা ফিরে বসা যেতে পারে। দুই পাশের যে কোন পাশে ঘুরে বসার বিধান রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে ত্রুটিহীনভাবে প্রমানিত। আলী [রাদি.] বলেন, যদি ডান পাশে ঘুরে বসার প্রয়োজন হয় তবে ডান পাশে ঘুরে বসবে; যদি বাম পাশে ঘুরে বসার প্রয়োজন হয় তবে সেদিকে ঘুরে বসবে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান সহীহ
Leave a Reply