সালাম দেওয়া, ইস্তেগফার, শয়তান ও নবীদের ঘটনা

সালাম দেওয়া, ইস্তেগফার, শয়তান ও নবীদের ঘটনা

সালাম দেওয়া, ইস্তেগফার, শয়তান ও নবীদের ঘটনা >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন

সালাম দেওয়া, ইস্তেগফার, শয়তান ও নবীদের ঘটনা

দিনের শুরুতে সুরক্ষা গ্রহণ করা
জান্নাতের খাজানা
সন্তানের পিতা-মাতার জন্য ইস্তেগফার করার ফযীলত
বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খানায় অংশ গ্রহণ করে
আল্লাহর সর্বপ্রথম মখলুক
লেখা ও সাক্ষী রাখার সূচনা
নবী আদমকে আল্লাহ বললেন: يرحمُكَ الله
মুসলিমদের সালাম
আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা
মুসা ও খিদির আলাইহিমাস সালামের ঘটনা
মালাকুল মউতের সাথে মূসা আলাইহিস সালামের ঘটনা
আইয়ূব আলাইহিস সালামের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ
জাহেলী যুগের প্রথার অনিষ্ট
শয়তানের ওয়াসওয়াসা
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদের ফযীলত
ভালোর নির্দেশ দেওয়া ও খারাপ থেকে বিরত রাখা
ফাতিহার ফযীলত
ঊর্ধ্বজগতে ফিরিশতাদের তর্ক

৬৩. অনুচ্ছেদঃ দিনের শুরুতে সুরক্ষা গ্রহণ করা

হাদীসে কুদসী ১১৯ – নুআইম ইব্‌ন হাম্মার আল-গাতফানি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে বনি আদম দিনের শুরুতে চার রাকাত সালাত আদায়ে অপারগ হয়ো না, আমি দিন শেষে তোমার জন্য যথেষ্ট হব”। (মুসনাদে আহমদ, সুনান আবু দাউদও ইব্‌ন হিব্বান)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৬৪. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের খাজানা

হাদীসে কুদসী ১২০ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না, অথবা বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে আরশের নিচে জান্নাতের গুপ্তধন একটি কালিমার কথা বলব না? তুমি বলঃ لاَ حَوْلَ ولَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ (অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজ করার শক্তি ও অসৎ কাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই) আল্লাহ বলবেনঃ আমার বান্দা মেনে নিলো ও আনুগত্য করিল”। (হাকেম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

৬৫. অনুচ্ছেদঃ সন্তানের পিতা-মাতার জন্য ইস্তেগফার করার ফযিলত

হাদীসে কুদসী ১২১ -আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা নেক বান্দার মর্তবা জান্নাতে বুলন্দ করবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব এটা আমার জন্য কিভাবে হল? তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য তোমার সন্তানের ইস্তেগফারের কারণে”। (মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

৬৬. অনুচ্ছেদঃ বিসমিল্লাহ না বললে শয়তান খানায় অংশ গ্রহণ করে

হাদীসঃ ১২২ – ইব্‌ন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “ইবলিস বলেছেঃ হে আমার রব, আপনার কোন মখলুক নেই যার রিযক ও জীবিকা নির্বাহ আপনি নির্ধারিত করেন নি, কিন্তু আমার রিযক কি? তিনি বললেনঃ যেসব খাদ্যে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না”। (আবু নুআইম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৬৭. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর সর্বপ্রথম মখলুক

হাদীসে কুদসী ১২৩ – উবাদাহ ইব্‌ন সামেত (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করিয়াছেন কলম , তিনি বলেনঃ লেখ। সে বলিলঃ হে আমার রব, কি লিখব? তিনি বলেনঃ কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদির লিখ”। (সুনান আবু দাউদও মুসনাদে আহমদ) হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ লিগাইরিহি

৬৮. অনুচ্ছেদঃ লেখা ও সাক্ষী রাখার সূচনা

হাদীসে কুদসী ১২৪ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করেন ও তার মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন তখন সে হাঁচি দেয়। অতঃপর বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর নির্দেশে সে আল্লাহর প্রশংসা করিল, তার রব তাকে বললেনঃ হে আদম তোমার রব তোমাকে রহম করুন, ঐ ফেরেশতাহাদের বসে থাকা দলটির কাছে যাও, তাহাদেরকে সালাম কর। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বলিলঃ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ অতঃপর তিনি তার রবের নিকট ফিরে আসেন, তিনি বলেনঃ এ হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের পরস্পর অভিবাদন। আল্লাহ তাআলা বলেন, তখন তার দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিলঃ দু’টো থেকে যেটা ইচ্ছা গ্রহণ কর, তিনি বললেনঃ আমি আমার রবের ডান গ্রহণ করলাম, আমার রবের উভয় হাতই ডান ও বরকতপূর্ণ, অতঃপর তিনি তা প্রসারিত করিলেন, তাতে ছিল আদম ও তার সন্তান। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, এরা কারা? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তোমার সন্তান, সেখানে প্রত্যেক মানুষের বয়স তার চোখের সামনে লিখা ছিল, তাহাদের মধ্যে একজন ছিল সবচেয়ে উজ্জ্বল, অথবা তাহাদের থেকে একজন অতি উজ্জ্বল ছিল, যার জন্য শুধু চল্লিশ বছর লিখা ছিল, তিনি বললেনঃ হে আমার রব এ কে? তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তোমার সন্তান দাউদ, তার জন্য আমি চল্লিশ বছর লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব তার বয়স বৃদ্ধি করুন, তিনি বললেনঃ এটাই আমি তার জন্য লিখেছি। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, আমি তার জন্য আমার বয়স থেকে ষাট বছর দান করলাম, তিনি বললেনঃ এটা তোমার ও তার বিষয়। আল্লাহর যতদিন ইচ্ছা ছিল তিনি জান্নাতে অবস্থান করেন, অতঃপর সেখান থেকে অবতরণ করানো হয়, এরপর থেকে তিনি নিজের বয়স হিসেব করতেন। রাসূল বলেনঃ তার নিকট মালাকুল মউত আসল, আদম তাকে বলেনঃ দ্রুত চলে এসেছ, আমার জন্য এক হাজার বছর লিখা হয়েছে। তিনি বলিলেন, অবশ্যই; কিন্তু তোমার ছেলে দাউদের জন্য তার থেকে ষাট বছর দান করেছ। আদম তা অস্বীকার করিল। সে অস্বীকার করেছে তাই তার সন্তানও অস্বীকার করে, তিনি ভুলে গেছেন তাই তার সন্তানও ভুলে যায়। তিনি বলেনঃ সে দিন থেকে লিখা ও সাক্ষী রাখার নির্দেশ দেয়া হয়”। ইব্‌ন হিব্বান, হাকেম ও আবু আসেম) হাদিসটি সহিহ লি গায়রিহি।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ লিগাইরিহি

৬৯. অনুচ্ছেদঃ নবী আদমকে আল্লাহ যা বললেনঃ

হাদীসে কুদসী ১২৫ -আনাস ইব্‌ন মালিক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন আদমের মধ্যে রূহ সঞ্চার করেন, অতঃপর রূহ যখন তার মাথায় পৌঁছে তিনি হাঁচি দেন, তারপর বলেনঃ الحمدُ لله رَبِّ العَالَمِيْن আল্লাহ তাকে বলেনঃ يَرْحَمُكَ الله (ইব্‌ন হিব্বান) হাদিসটি সহিহ।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭০. অনুচ্ছেদঃ সহিহ মুসলিমদের সালাম

হাদীসে কুদসী ১২৬ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা আদমকে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করিয়াছেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত, তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেনঃ যাও সেখানে বসে থাকা ফেরেশতাহাদের দলকে সালাম কর, খেয়াল করে শোন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়, কারণ তা-ই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন। তিনি বললেনঃ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বলিলঃ السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ তারা অতিরিক্ত বলিল। সুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে, আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম) হাদিসটি সহিহ।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭১. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর নবী ইউনুস আলাইহিস সালামের ঘটনা

হাদীসে কুদসী ১২৭ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমার কোন বান্দার জন্য (বর্ণনাকারী ইব্‌ন মুসান্না বলেছেনঃ আমার বান্দার জন্য) এমন বলা সমীচীন নয়ঃ আমি ইউনুস ইব্‌ন মাত্তা আলাইহিস সালাম থেকে উত্তম  ”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭২. অনুচ্ছেদঃ মুসা ও খিযির আলাইহিমাস সালামের ঘটনা

হাদীসঃ ১২৮ – সায়িদ ইব্‌ন জুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি ইব্‌ন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আঃ)কে বললাম নাউফ আল-বাকালি’র ধারণা খিদির’ এর সাথী মুসা’ বনি ইসরাইলের মুসা’ নয়, তিনি অন্য মুসা’। তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাই ইব্‌ন কাব নবী (সাঃআঃ) থেকে আমাদেরকে বর্ণনা করেনঃ “একদা মুসা আলাইহিস সালাম বনি ইসরাইলে খুতবা দেয়ার জন্য দাঁড়ালে তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, কে সবচেয়ে বেশী জানে? তিনি বললেনঃ আমি”। এ জন্য আল্লাহ তাকে তিরস্কার করিলেন, কারণ তিনি বেশী জানার জ্ঞান আল্লাহর নিকট সোপর্দ করেন নি। তাকে তিনি বললেনঃ “দুই সমুদ্রের মিলনস্থলে আমার এক বান্দা রহিয়াছে, সে তোমার চেয়ে অধিক জানে। তিনি বললেনঃ হে আমার রব, তার নিকট পৌঁছার জন্য আমার কে আছে? অথবা সুফিয়ান বলেছেনঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে তার কাছে পৌঁছব? তিনি বললেনঃ একটি মাছ নাও, অতঃপর তা পাত্রে রাখ, যেখানে মাছটি হারাবে সেখানেই সে…” অতঃপর পূর্ণ হাদিস উল্লেখ করেন। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭৩. অনুচ্ছেদঃ মালাকুল মউতের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের ঘটনা

হাদীসে কুদসী ১২৯ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “মালাকুল মউত মুসা আলাইহিস সালামের নিকট এসে তাকে বলেনঃ আপনার রবের ডাকে সাড়া দিন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মুসা আলাইহিস সালাম মালাকুল মউতকে থাপ্পড় মেরে তার চোখ উপড়ে ফেলেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর মালাকুল মউত আল্লাহর নিকট ফিরে গেল এবং বলিলঃ আপনি আমাকে আপনার এমন বান্দার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন যে মরতে চায় না, সে আমার চোখ উপড়ে ফেলেছে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ তার চোখ তাকে ফিরিয়ে দেন, আর বলেনঃ আমার বান্দার নিকট ফিরে যাও এবং বলঃ আপনি হায়াত চান? যদি আপনি হায়াত চান তাহলে ষাঁড়ের পিঠে হাত রাখুন, আপনার হাত যে পরিমাণ চুল ঢেকে নিবে তার সমান বছর আপনি জীবিত থাকিবেন। তিনি বলেনঃ অতঃপর? মালাকুল মউত বলিলঃ অতঃপর মৃত্যু বরণ করবেন। তিনি বলেনঃ তাহলে এখনি দ্রুত কর। হে আমার রব, পবিত্র ভূমির সন্নিকটে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বে আমাকে মৃত্যু দান কর”। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ আমি যদি তার নিকট হতাম, তাহলে রাস্তার পাশে লাল বালুর স্তূপের নিকট তার কবর দেখিয়ে দিতাম”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭৪. অনুচ্ছেদঃ আইয়ূব আলাইহিস সালামের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ

সহিহ হাদিসে কুদসি ১৩০ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “একদা আইয়ূব উলঙ্গ গোসল করছিল, তার ওপর এক পাল স্বর্ণের টিড্ডি পড়ল, তিনি তা মুষ্টি মুষ্টি করে কাপড়ে তুলছিলেন। এমতাবস্থায় তার রব তাকে ডাক দিলেনঃ হে আইয়ূব, আমি কি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে দেই-নি যা দেখছ তা থেকে? তিনি বললেনঃ অবশ্যই হে আমার রব, তবে আপনার বরকত থেকে আমার অমুখাপেক্ষীতা নেই”। (সহিহ বুখারি ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭৫. অনুচ্ছেদঃ জাহেলী যুগের প্রথার অনিষ্ট

হাদীসে কুদসী ১৩১ -উবাই ইব্‌ন কাব (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে দু’জন ব্যক্তি বংশের উল্লেখ করিল, একজন বলিলঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক তুমি কে, তুমি মা হারা হও। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ মুসা আলাইহিস সালামের যুগে দু’ ব্যক্তি বংশ পরিচয় উল্লেখ করেছিল, তাহাদের একজন বলেঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক এভাবে সে নয়জন গণনা করে, অতএব তুমি কে, তুমি মা হারা হও। সে বলিলঃ আমি অমুকের সন্তান অমুক ইব্‌ন ইসলাম। তিনি বলেনঃ আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহিস সালামের নিকট ওহি প্রেরণ করিলেন, এ দু’জন বংশ পরিচয় উল্লেখকারীঃ হে নয়জন উল্লেখকারী তুমি জাহান্নামে, তুমি তাহাদের দশম ব্যক্তি। হে দু’জন উল্লেখকারী তুমি জান্নাতে, তুমি তাহাদের তৃতীয়জন”। (মুসনাদে আহমদ ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭৬. অনুচ্ছেদঃ শয়তানের ওয়াসওয়াসা

হাদীসে কুদসী ১৩২ – আনাস ইব্‌ন মালিক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমার উম্মত বলিতে থাকবেঃ এটা কিভাবে? এটা কিভাবে? অবশেষে বলবেঃ আল্লাহ মখলুক সৃষ্টি করিয়াছেন, কিন্তু আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?” (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৭৭. অনুচ্ছেদঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদের ফযিলত

হাদীসঃ ১৩৩ – আব্দুর রহমান ইব্‌ন আউফ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বের হলেন, আমি তার অনুগামী হলাম, তিনি একটি খেজুর বাগানে ঢুকে সেজদা করিলেন, সেজদা এত দীর্ঘ করিলেন যে আমি আশঙ্কা করলাম আল্লাহ তাকে তো মৃত্যু দেন নি! তিনি বলেনঃ আমি দেখার জন্য আসলাম, অতঃপর তিনি মাথা তুললেন, তিনি বললেনঃ “হে আব্দুর রহমান কি হয়েছে তোমার?” তিনি বলেনঃ আমি তাকে তা শোনালাম, অতঃপর তিনি বললেনঃ “জিবরিল (আলাইহিস সালাম) আমাকে বলেছেনঃ আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দেব না, আল্লাহ তাআলা তোমাকে বলেনঃ যে ব্যক্তি তোমার ওপর দরূদ পাঠ করিবে আমি তার ওপর দরূদ পাঠ করব, যে তোমার ওপর সালাম পাঠ করিবে আমি তার ওপর সালাম প্রেরণ করব”। (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি ও আবু ইয়ালা)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান লিগাইরিহি

৭৮. অনুচ্ছেদঃ ভালোর নির্দেশ দেয়া ও খারাপ থেকে বিরত রাখা

হাদীসঃ ১৩৪ – আবু সায়িদ খুদরি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বান্দাকে জিজ্ঞেস করবেন, এক পর্যায়ে বলবেনঃ তুমি যখন খারাপ কর্ম দেখেছ কেন বাঁধা দাওনি? আল্লাহ যখন বান্দাকে তার উত্তর শিক্ষা দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব, তোমার মাগফেরাত আশা করেছি ও মানুষকে ভয় করেছি”। (ইব্‌ন মাজাহ ও ইব্‌ন হিব্বান)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

৭৯. অনুচ্ছেদঃ ফাতেহার ফযিলত

হাদীসঃ ১৩৫ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমি সালাতকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগে ভাগ করেছি, আমার বান্দার জন্য সে যা চাইবে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব”।‎ আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার প্রশংসা করেছে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ﴾ “দয়াময়, পরম দয়ালু”। আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দা আমার গুণগান করেছে। বান্দা যখন বলেঃ ﴿مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ﴾ “বিচার দিবসের মালিক”। আল্লাহ বলেনঃ ‎আমার বান্দা আমার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করেছে। (একবার বলেছেনঃ আমার বান্দা তাকে আমার ওপর ন্যাস্ত করেছে), বান্দা যখন বলেঃ ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ﴾ “আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই ‎নিকট আমরা সাহায্য চাই”। ‎আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে, আর আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে। যখন বান্দা বলেঃ
﴿ٱهۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ ٦ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧ ﴾ (الفاتحةঃ 1، 7)
“আমাদেরকে সরল পথের হিদায়াত ‎দিন তাহাদের পথ, যাদের উপর আপনি অনুগ্রহ করিয়াছেন। ‎যাদেরকে নিয়ামত দিয়েছেন। যাদের উপর ‎‎(আপনার) ক্রোধ আপতিত হয়নি এবং যারা ‎পথভ্রষ্টও নয়”।‎ আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার বান্দার জন্য, আমার বান্দার জন্য যা সে চাইবে”। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৮০. অনুচ্ছেদঃ ঊর্ধ্বজগতে ফেরেশতাহাদের তর্ক

হাদীসঃ ১৩৬ – মুয়ায ইব্‌ন জাবাল (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ একদা ফজর সালাতে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিলম্ব করিলেন, আমরা প্রায় সূর্যের অগ্রভাগ দেখার কাছাকাছি ছিলাম, অতঃপর তিনি দ্রুত বের হলেন, সালাতের ঘোষণা দেয়া হল, তিনি দ্রুত সালাত আদায় করিলেন, যখন সালাম ফিরালেন উচ্চ স্বরে আমাদেরকে বললেনঃ “তোমরা তোমাদের কাতারে থাক যেরূপ আছ”। অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে বললেনঃ “আমি অবশ্যই তোমাদের বলব কি কারণে আজ আমার বিলম্ব হয়েছে। আমি রাতে উঠে ওযু করেছি অতঃপর যা তাওফিক হয়েছে সালাত আদায় করেছি, সালাতে আমার তন্দ্রা এসে যায় তাই আমার কষ্ট হচ্ছিল, হঠাৎ দেখি আমার রব আমার সামনে সর্বোত্তম আকৃতিতে। তিনি আমাকে বললেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি বললামঃ লাব্বাইক আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্বজগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ হে আমার রব আমি জানি না, -তিনি তা তিনবার বলিলেন- রাসূল বলেনঃ আমি দেখলাম তিনি (আল্লাহ) নিজ হাতের তালু আমার ঘাড়ের ওপর রাখলেন, এমনকি আমি তার আঙ্গুলের শীতলতা আমার বুকের মধ্যে অনুভব করেছি, ফলে আমার সামনে প্রত্যেক বস্তু জাহির হল ও আমি চিনলাম। অতঃপর বললেনঃ হে মুহাম্মদ, আমি বললামঃ লাব্বাইক হে আমার রব। তিনি বললেনঃ ঊর্ধ্ব জগতের ফেরেশতারা কি নিয়ে তর্ক করছে? আমি বললামঃ কাফফারা সম্পর্কে। তিনি বললেনঃ তা কি? আমি বললামঃ জামাতের জন্য হাঁটা, সালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযু করা। তিনি বলেনঃ অতঃপর কোন বিষয়ে? আমি বললামঃ পানাহার করানো, সুন্দর কথা বলা, মানুষের ঘুমিয়ে থাকাবস্থায় রাতে সালাত আদায় করা। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুমি চাও, আমি বললামঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ فِعْلَ الْخَيْرَاتِ وَتَرْكَ الْمُنْكَرَاتِ وَحُبَّ الْمَسَاكِينِ وَأَنْ تَغْفِرَ لِي وَتَرْحَمَنِي وَإِذَا أَرَدْتَ فِتْنَةَ قَوْمٍ فَتَوَفَّنِي غَيْرَ مَفْتُونٍ، أَسْأَلُكَ حُبَّكَ وَحُبَّ مَنْ يُحِبُّكَ، وَحُبَّ عَمَلٍ يُقَرِّبُ إِلَى حُبِّكَ
“হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কল্যাণের কাজ করার তৌফিক চাই, খারাপ কাজ ছেড়ে দেয়ার তৌফিক চাই, অভাবীদের জন্য ভালোবাসা, আর আপনি যেন আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার প্রতি রহম করেন। আর যখন আপনি কোন কাওমকে ফিতনা তথা পরীক্ষায় নিপতিত করতে চান, তখন আমাকে পরীক্ষায় নিপতিত না করে মৃত্যু দিন। আমি আপনার কাছে আপনার ভালোবাসা, আপনাকে যে ভালোবাসে তার ভালবাসা এবং এমন আমলের ভালোবাসা চাই যা আমাকে আপনার ভালোবাসার নিকটে নিয়ে যাবে।” রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ নিশ্চয় এ বাক্যগুলো সত্য, তোমরা এগুলো শিখ ও শিক্ষা দাও”। (সুনান তিরমিযি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

Comments

One response to “সালাম দেওয়া, ইস্তেগফার, শয়তান ও নবীদের ঘটনা”

Leave a Reply