সদুপদেশই দীন, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ

সদুপদেশই দীন, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ

সদুপদেশই দীন >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

২০. অধ্যায়ঃ মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানের অঙ্গ। ঈমান হ্রাস ও বৃদ্ধি হয়। ভালো কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজের নিষেধ করা ওয়াজিব
২১. অধ্যায়ঃ মুমিনদের মধ্যে একে অপরের চাইতে ঈমানের গুনে প্রাধান্য থাকা এবং এ বিষয়ে ইয়ামানবাসী রা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত
২২. অধ্যায়ঃ মুমিন ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করিবে না, মুমিনদের ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ আর তা অর্জনের উপায় হলো পরস্পর অধিক সালাম বিনিময়
২৩. অধ্যায়ঃ সদুপদেশই দীন
২৪. অধ্যায়ঃ গুনাহ দ্বারা ঈমানের ক্ষতি হয় এবং গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ঈমান থাকে না অর্থাৎ ঈমানের পূর্ণতা থাকে না

২০. অধ্যায়ঃ মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ঈমানের অঙ্গ। ঈমান হ্রাস ও বৃদ্ধি হয়। ভালো কাজের আদেশ করা ও মন্দ কাজের নিষেধ করা ওয়াজিব

৮১. তারিক ইবনি শিহাব [আবু বাক্‌র ইবনি আবী শাইবার হাদীসে] হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ান ঈদের দিন সলাতের পূর্বে খুত্‌বাহ্‌ দেয়ার [বিদআতী] প্রথা প্রচলন করে। এ সময় এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলিল, খুতবার আগে সলাত [সম্পন্ন করুন]। মারওয়ান বলিলেন, এখন থেকে সে নিয়ম পরিত্যাগ করা হলো। সাথে সাথে আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] উঠে বলিলেন, ঐ ব্যক্তি তার কর্তব্য পালন করেছে। আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে [শক্তি প্রয়োগে] পরিবর্তন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে, তবে মুখ [বাক্য] দ্বারা এর পরিবর্তন করিবে। আর যদি সে সাধ্যও না থাকে, তখন অন্তর দ্বারা করিবে, তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক।

[ই.ফা. ৮৩; ই.সে. ৮৫]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮২. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

মারওয়ানের ঘটনা বর্ণনা করিয়াছেন। আর এ হাদীসটি শুবাহ্‌ ও সুফ্‌ইয়ানের বর্ণিত হাদীসের মতোই।

[ই.ফা. ৮৪; ই.সে. ৮৬]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ আমার পূর্বে আল্লাহ তাআলা যে নবিকেই কোন উম্মাতের মধ্যে পাঠিয়েছেন, তাহাদের মধ্যে তাহাঁর জন্য একদল অনুসারী ও সহাবা ছিল। তারা তাহাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রাখত এবং তাহাঁর নির্দেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাহাদের অবর্তমানে কতগুলো মন্দ লোক স্থলাভিষিক্ত হয়। তারা মুখে যা বলে নিজেরা তা করে না। আর যা করে তার জন্য তাহাদেরকে নির্দেশ করা হয়নি। অতএব যে ব্যক্তি তাহাদের হাত [শক্তি] দ্বারা মুকাবিলা করিবে, সে মুমিন। এরপর আর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমানের স্তর নেই। আবু নাফি বলেন, আমি এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে বললাম। তিনি আমার সামনে এটা অস্বীকার করিলেন। পরে এক সময় ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] কানাত [মাদীনার কাছাকাছি একটি] নামক স্থানে আসলেন। আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাঃআ:] অসুস্থ আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদকে দেখার জন্য আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন। আমি তাহাঁর সাথে গেলাম। যখন আমরা বসে পড়লাম, তখন আমি আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদকে এ হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি আমাকে অবিকল সেরূপ-ই বর্ণনা করিলেন, যেরূপ আমি ইবনি উমার [রাঃআ:]-কে বর্ণনা করেছিলাম।

সালিহ বলেন, আবুরাফি থেকে হুবহু এরূপই বর্ণিত হয়েছে।

[ই.ফা. ৮৫; ই.সে. ৮৭]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৪. আবদুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ যে কোন নবির জন্য এমন কিছু সংখ্যক নিবেদিত প্রাণ সহচর জুটেছিল, যারা তাহাঁর নির্দেশিত পথে জীবন যাপন করিয়াছেন এবং তাহাঁর সুন্নাতকে সমুন্নত রেখেছেন।” হাদীসের অবশিষ্টাংশ হুবহু সালিহ-এর হাদীসের অনুরূপ। তবে এ বর্ণনায় ইবনি মাসঊদের আগমন ও তাহাঁর সাথে ইবনি উমারের একত্রিত হওয়ার কথা উল্লেখ নেই।

[ই.ফা. ৮৬; ই.সে. ৮৮]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১. অধ্যায়ঃ মুমিনদের মধ্যে একে অপরের চাইতে ঈমানের গুনে প্রাধান্য থাকা এবং এ বিষয়ে ইয়ামানবাসী রা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত

৮৫. আবু মাসুদ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] তাহাঁর হাত দিয়ে ইয়ামানের দিকে ইশারা করে বলিলেন, জেনে রাখো, ঈমান সেখানেই। কঠোর ও পাষাণ হৃদয় হচ্ছে শয়তানের দুই শিংয়ের মধ্যে বসবাসকারী সে সব লোক যারা উটের লেজের গোড়া থেকে চীৎকার দিয়ে থাকে, অর্থাৎ রাবীআহ্‌ ও মুযারা গোত্র।

[ই.ফা. ৮৭; ই.সে. ৮৯]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, ইয়ামানের অধিবাসীরা এসেছে; তাহাদের হৃদয় বড়ই কোমল। ঈমান রয়েছে ইয়ামানবাসীদের মধ্যে, ধর্মীয় গভীর জ্ঞান রয়েছে ইয়ামানবাসীদের মধ্যে এবং হিকমাত রয়েছে ইয়ামানবাসীদের মধ্যে।

[ই.ফা. ৮৮; ই.সে. ৯০]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৭. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, পরবর্তী অংশ উপরোক্ত হাদিসের মতোই।

[ই.ফা. ৮৯; ই.সে. ৯১]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানবাসীরা এসেছে। তারা নম্রচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ধর্মীয় গভীর জ্ঞান ইয়ামানবাসীদের মধ্যে এবং হিকমাতও ইয়ামানবাসীদের মধ্যে রয়েছে। {৩০}

[ই.ফা. ৯০; ই.সে. ৯২]

{৩০} উল্লিখিত হাদীসে ﻭاﻠﺤﻜﺔ اﻠﻔﻘﻪ [আল ফিক্‌হ ওয়াল হিকমাহ্‌] অর্থাৎ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে ইয়ামানের দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, কুফ্‌রের মূল উৎস হচ্ছে পূর্ব দিকে। অহংকার ও দাম্ভিকতা রয়েছে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকারকারী পশুপালক ঘোড়া ও উট ওয়ালাদের মধ্যে। আর নম্রতা রয়েছে বকরীওয়ালাদের মধ্যে। {৩১}

[ই.ফা. ৯১; ই.সে. ৯৩]

{৩১} প্রকৃত “ফাদ্দাদিন” হাদিসে শব্দের বিভিন্ন রকম অর্থ হয়ে থাকে। যেমন কেউ বলেন, গাই গরু যার দ্বারা জমিন আবাদ করা হয়। কেউ এ অর্থ অস্বীকার করেও বলেন যে, উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে প্রকৃতপক্ষে উট ঘোড়াওয়ালা স্বাভাবিকভাবে চিল্লাচিল্লি করে থাকে। আর “আবার” উটের পশমকেও বলা হয়। আর নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে, এজন্য বকরী চরানোর মাধ্যমে নবিদের মন মেজাজে নম্রতার শিক্ষা দেয়া হয়েছে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, ঈমানের উৎস হচ্ছে ইয়ামানবাসীদের মধ্যে, আর কুফ্‌রের উৎস হচ্ছে পূর্ব দিকে এবং নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে। আর অহংকার ও রিয়া চিৎকারকারী ঘোড়া ও উট পালকদের মধ্যে।

[ই.ফা. ৯২; ই.সে. ৯৪]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, অহংকার ও দাম্ভিকতা চিৎকারকারী উট পালকদের মধ্যে এবং নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে।

[ই.ফা. ৯৩; ই.সে. ৯৫]

এখানে ইয়ামান দ্বারা কি উদ্দেশ্য এ সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। কাজী আয়ায সকল মতামতকে সমন্বয় করিয়াছেন। তন্মধ্যে একটি মতামত হচ্ছে এখানে ইয়ামান দ্বারা মাক্কাহ্‌ নগরীকে বুঝানো হয়েছে। দ্বিতীয় মতামত হচ্ছে, এর দ্বারা মাক্কাহ্‌ ও মাদীনাহ্‌ উভয় স্থানকে বুঝানো হয়েছে। বর্ণিত আছে যে, নবি [সাঃআ:] যখন এ কথাটি বলেছিলেন তখন তিনি তাবূকে অবস্থা করছিলেন। তখন মাক্কাহ্‌ ও মাদীনাহ্‌ নবি [সাঃআ:] ও ইয়ামানের মধ্যখানে ছিল। তাই নবি [সাঃআ:] মাক্কাহ্‌ ও মাদীনাকে বুঝাতে গিয়ে ইয়ামানের দিকে ইঙ্গিত করিয়াছেন যেমন কাবা ঘরের যে কোন্‌টি ইয়ামানের দিকে অবস্থিত তাকে বুঝানোর জন্য রুকনে ইয়ামানী বলা হয়। [শারহুন্‌ নাবাবী আলা মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯২. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত সূত্রে অবিকল বর্ণনা করেন। তবে এতে এ বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে “ঈমান ইয়ামানবাসীদের মধ্যে এবং হিকমাত ইয়ামানবাসীদের মধ্যে”।

[ই.ফা. ৯৪; ই.সে. ৯৬]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৩. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানের লোকেরা উপস্থিত হয়েছে। তারা নম্রচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ঈমান ইয়ামানীদের মধ্যে এবং হিকমাত ইয়ামানীদের। নম্রতা বকরীওয়ালাদের মধ্যে এবং অহংকার ও দাম্ভিকতা, চিৎকারকারী উট পালকের মধ্যে, যাদের অবস্থান সূর্যোদয়ের দিকে।

[ই.ফা. ৯৫; ই.সে. ৯৭]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৪. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ তোমাদের নিকট ইয়ামানের লোকেরা উপস্থিত হয়েছে। তারা নম্রচিত্ত ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী। ঈমান ইয়ামানীদের মধ্যে এবং হিকমাত ইয়ামানীদের। আর কুফ্‌রের উৎস হচ্ছে পূর্ব দিকে।

[ই.ফা. ৯৬; ই.সে. ৯৮]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৫. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদেই অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তাহাঁর বর্ণনায় কুফ্‌রের উৎস রয়েছে পূর্ব দিকে কথাটি উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা. ৯৭; ই.সে. ৯৯]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৬. মুহাম্মাদ ইবনি আল মুসান্না ও বিশ্‌র ইবনি খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে জারীর [রাঃআ:] বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে বর্ণনাকারী শুবাহ্‌, অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন অহংকার ও দাম্ভিকতা উট মালিকদের মধ্যে, আর নম্রতা ও গাম্ভীর্য বকরীর মালিকদের মধ্যে।

[ই.ফা. ৯৮; ই.সে. ১০০]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, মনের কঠোরতা ও অন্তরের নিষ্ঠুরতা পূর্ব দিকের মানুষের মধ্যে আর ঈমান হিজাযবাসীদের মধ্যে।

[ই.ফা. ৯৯; ই.সে. ১০১]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২. অধ্যায়ঃ মুমিন ব্যতীত কেউই জান্নাতে প্রবেশ করিবে না, মুমিনদের ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ আর তা অর্জনের উপায় হলো পরস্পর অধিক সালাম বিনিময়

৯৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দিব না, কি করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হইবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করিবে। {৩২}

[ই.ফা. ১০০; ই.সে. ১০২]

{৩২} প্রথমে ঈমান আনতে হইবে, তারপর মুসলিম ব্যক্তি পরিচিত হোক আর না হোক সালাম বিনিময় করিবে, সালাম বিনিময় ঈমান লাভের উপকরণ।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯৯. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেন, সে সত্তার শপথ! যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আন। পরবর্তী অংশ আবু মুআবিয়াহ্‌ ও ওয়াকী-এর হাদীসের অনুরূপ।

[ই.ফা. ১০১; ই.সে. ১০৩]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৩. অধ্যায়ঃ সদুপদেশই দীন

১০০. তামীম আদ্‌ দারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] বলেছেনঃ সদুপদেশ দেয়াই দীন। আমরা আরয করলাম, কার জন্য উপদেশ? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাহাঁর কিতাবের, তাহাঁর রসূলের, মুসলিম শাসক এবং মুসলিম জনগণের। {৩৩}

[ই.ফা. ১০২; ই.সে. ১০৪]

{৩৩} তামীম আদ্‌ দারী [রাঃআ:] হতে বোখারীতে কোন হাদীস বর্ণনা নেই আর মুসলিমে এটা ব্যতীত নেই। “নাসীহাত”একটি আরাবী ও অত্যন্ত ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। যার একটি অর্থ সমস্ত কল্যাণ একত্রে করা। ঐরূপ কালাহ শব্দ, এটাও দুরকম কল্যাণকে বোঝায়। কারও মতে, “নাসীহাত” এর আরেকটি অর্থ কারও ভিতর ত্রুটি থাকায় তাকে সংশোধনের লক্ষ্যে আলোচনা করা। যেমন- ﺒﻪ ﺜﻭ ﺠل اﻠر ﻨﺼﺡ “উমুক ব্যক্তি তার ছেড়া কাপড় সেলাই করিয়াছেন, যাতে তা পড়ার উপযুক্ত হয়।” তেমনি কারও ভিতর কোন ত্রুটি থাকায় নাসীহাত করার অর্থ হলো সংশোধন করা, যা তার জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর হয়। প্রথমতঃ আল্লাহর দিকে নাসীহাত। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমানের দিকে প্রত্যাবর্তন করা ও তাহাঁর সঙ্গে শারীক না করার উপদেশ দেয়া।

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর কিতাব “নাসীহাত” হলো এটা আল্লাহর কথা হিসেবে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করা তিনি অবতীর্ণ করিয়াছেন মানুষের রচিত নয়, আর তার মত তৈরি করা পৃথিবীতে আল্লাহ ব্যতীত সকলে একত্রিত হয়েও পারবে না।

তৃতীয়তঃ তাহাঁর রসূলের দিকে “নাসীহাত” আল্লাহ তাকে মানুষের হিদায়াতের জন্য পাঠিয়েছেন বিশ্বাস করা। রসূলের আদেশ ও নিষেধকে মেনে চলা, বিশ্বাস করা যে, তিনি শেষ নবি ও রসূল [সাঃআ:] ।

চতুর্থতঃ “নাসীহাত” মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা যতক্ষণ কুরআন হাদীস মুতাবিক নির্দেশ দিবে। জিহাদ যুদ্ধে শারীক হওয়া, তার পিছনে সলাত আদায় করা।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০১. তামীম আদ্‌ দারী [রাঃআ:] এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] থেকে উপরোক্ত হাদীসের মতোই বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ১০৩; ই.সে. ১০৫]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০২. তামীম আদ্‌ দারী [রাঃআ:]-এর সূত্রে হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ১০৪; ই.সে. ১০৬]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৩. জারীর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি সলাত আদায়ের, যাকাত দেয়ার এবং প্রত্যেক মুসলিম কল্যাণ সাধন করার জন্য রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর নিকট বাইআত করেছি।

[ই.ফা. ১০৫; ই.সে. ১০৭]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৪. জারীর ইবনি আবদুল্লাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

আমি প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ করার শর্তে নবি [সাঃআ:]-এর নিকট বাইআত করেছি। {৩৪}

[ই.ফা. ১০৬; ই.সে. ১০৮]

{৩৪} সলাত ও যাকাতকে নির্দিষ্ট করিয়াছেন, শাহাদাতাইনের পরই এর স্থান, আর বাইয়াত শব্দ ব্যাপক অন্যান্য সকল ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৫. জারীর [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবি [সাঃআ:]-এর কাছে শ্রবণ ও আনুগত্যের বাইআত গ্রহন করলে তিনি আমাকে শিখিয়ে দিলেন, [বলো] যতদূর আমার সাধ্যে কুলায় [কেননা সাধ্যের অতিরিক্ত করিতে বান্দা অপারগ]। আর প্রত্যেক মুসলিমের উপদেশ দেয়ার ব্যাপারেও [বাইআত করেছি]। ইয়াকূব তার বর্ণনায় বলেন, সাইয়্যার আমাদেরকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। {৩৫}

[ই.ফা. ১০৭; ই.সে. ১০৯]

{৩৫} জারীর [রাঃআ:] তাহাঁর এক দাসকে বলিলেন যে, আমার জন্য একটা ঘোড়া ক্রয় করে আন, দাস তিনশত দিরহাম দাম দিয়ে একটি ঘোড়া ক্রয় করেন। বিক্রেতা সাথে সাথে আসলেন দাম গ্রহন করার জন্য। জারীর বলিলেন, তোমার ঘোড়ার দাম এর থেকে বেশি হইবে। বিক্রেতা বলিলেন, যেটা ভাল মনে করেন। জারীর ঘোড়ার দাম বাড়াতে বাড়াতে আটশত দিরহামে ক্রয় করেন। উচিৎ হলো, মুসলিমদের কাউকে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত না করা।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৪. অধ্যায়ঃ গুনাহ দ্বারা ঈমানের ক্ষতি হয় এবং গুনাহে লিপ্ত থাকা অবস্থায় ঈমান থাকে না অর্থাৎ ঈমানের পূর্ণতা থাকে না

১০৬. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেছেনঃ ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না, চুরি করার সময় চোরও ঈমানদার থাকে না, মদ্যপায়ীও মদ্যপান করার সময় মুমিন থাকে না। আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] অন্য সূত্রে এর সাথে এটাও বলেছেন, প্রকাশ্য দিবালোকে মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাইকারী যখন ছিনতাই করিতে থাকে তখন সে মুমিন থাকে না। {৩৬}

[ই.ফা. ১০৮; ই.সে. ১১০]

{৩৬} ইমাম নাবাবী বলেন, তত্বান্বেষী আলিমগণ উক্ত হাদীস সম্বন্ধে বলেন, উল্লেখিত অপরাধ করার অবস্থায় পূর্ণ ঈমান থাকে না। কতগুলো প্রবাদ আছে- যেমন লোকটির জ্ঞান নেই, তার অর্থ হলো উপকারী জ্ঞান নেই। শান্তি নেই, প্রকৃত শান্তি পরকালে। আবু যার [রাঃআ:] হতে বর্ণিত, যে

লা- ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলবে সে জান্নাতে যাবে যদিও সে যিনা ব্যভিচার ও চুরি করে। আর উবাদাহ বিন সামিত [রাঃআ:] হতে বর্ণিত। সহাবায়ে কিরাম আল্লাহর রসূলের হাতে বাইআত করিয়াছেন যে, তারা চুরি করিবে না, ব্যভিচার করিবে না আর অন্য কোন অপরাধ করিবে না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেন, যে ব্যক্তি বাইআত পূর্ণ করিবে তার প্রতিদান আল্লাহ দিবেন। আর যদি অপরাধ করে বসে এবং দুনিয়াতে শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তবে তা কাফ্‌ফারাহ্‌ হইবে, আর দুনিয়াতে যদি শাস্তি না হয় তাহলে আখিরাতে আল্লাহর ইচ্ছা হলে শাস্তি দিতে পারেন, ক্ষমাও করিতে পারেন।

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৭. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেছেনঃ ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না ….. বাকী অংশ লুটতরাজের বর্ণনাসহ উপরোক্ত হাদিসের অনূরুপ। তবে এতে মূল্যবান সামগ্রী কথাটির উল্লেখ নেই।

ইবনি শিহাব বলেন, সাঈদ ইবনি মুসাইয়্যাব ও আবু সালামাহ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. আবু হুরাইরা [রাঃআ:] এর সূত্রে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] থেকে আবু বাকরের হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি النُّهْبَةَ ছিনতাইয়ের কথা উল্লেখ করেননি।

[ই.ফা. ১০৯; ই.সে. ১১১]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৮. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

উকায়লের হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন এবং ছিনতাইয়ের কথাও বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তিনি ذَاتَ شَرَفٍ মুল্যবান কথাটি বলেন নি।

[ই.ফা. ১১০; ই.সে. ১১২]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১০৯. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি [সাঃআ:]-এর সূত্রে সকলেই যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ১১১; ই.সে. ১১৩]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১১০. আবু হুরাইরাহ [রাযি :] হইতে বর্ণিতঃ

সকলেই যুহরীর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে আলা ও সাফওয়ান ইবনি সুলায়মের বর্ণিত হাদিসে “জনসম্মুখে” … বাক্যটি উল্লেখ নেই। আর হাম্মামের হাদীসে রয়েছে “লুটপাটকারীরা যখন লুটতরাজে ব্যতিব্যস্ত আর মুমিনরা তার প্রতি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছে, এমতাবস্থায় সে মুমিন থাকে না” কথাটির উল্লেখ রয়েছে। হাম্মাম তাহাঁর হাদীসে আরো বলেছেন, খিয়ানাতকারী যখন খিয়ানাত করে, তখন মুমিন থাকে না। সুতরাং তোমরা সাবধান থেকো তোমরা সাবধান থেকো।

[ই.ফা. ১১১; ই.সে. ১১৪]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১১১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

নবি করীম [সাঃআ:] বলেছেনঃ ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। চোর যখন চৌর্য বৃত্তিতে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। মদ্যপ ব্যক্তি যখন মদপানে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। তবে এরপর আর তাওবার দরজা খোলা থাকে।

[ই.ফা. ১১২; ই.সে. ১১৬]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১১২. মারফূ সানাদে আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

ব্যভিচারী ব্যভিচারে লিপ্ত ……এরপর শুবার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ১১৩; ই.সে. ১১৭]

হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply