মুহরম, সাওয়াল, প্রত্যেক মাস ও শাবান মাসের সওম

মুহরম, সাওয়াল, প্রত্যেক মাস ও শাবান মাসের সওম

শাবান মাসের সওম >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৩৪. অধ্যায়ঃ রমাযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে নবী [সাঃ] এর সিয়াম পালন করার বর্ণনা, প্রত্যেক মাসেই কিছু সিয়াম পালন করা উত্তম
৩৫. অধ্যায়ঃ সারা বছর ধরে সিয়াম পালন করা নিষেধ, কারণ এতে স্বাস্থ্যহানি হওয়ার এবং জরুরী কর্তব্য পালনে অক্ষম হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, একদিন পরপর সিয়াম পালন করার ফযিলত
৩৬. অধ্যায়ঃ প্রতি মাসে তিনদিন, আরাফাতের দিন, আশুরার দিন, সোম ও বৃহস্পতিবার সওম পালনের ফযিলত
৩৭. অধ্যায়ঃ শাবান মাসের সওম
৩৮. অধ্যায়ঃ মুহার্‌রমের সওমের ফযিলত
৩৯. অধ্যায়ঃ রমাযানের রোযার পর শাও্ওয়াল মাসে ছয়দিন সওম পালনের ফযিলত

৩৪. অধ্যায়ঃ রমজান মাস ব্যতীত অন্য মাসে নবী [সাঃ] এর রোজা পালন করার বর্ণনা, প্রত্যেক মাসেই কিছু রোজা পালন করা উত্তম

২৬০৭. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে বললাম, নবী [সাঃআঃ] কি রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন সময় পূর্ণ মাস রোজা পালন করিতেন? তিনি বলিলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি আজীবন রমজান ছাড়া অন্য কোন সময় পূর্ণ এক মাস রোজা পালন করেননি। আর এমন কোন মাসও অতিবাহিত হয়নি যাতে তিনি অন্তত কিছু রোজা পালন করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৩]

২৬০৮. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]- কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী [সাঃআঃ] কি কখনও একটি পূর্ণ মাস [নাফ্‌ল] রোজা পালন করিতেন? তিনি বলিলেন, আমার জানা মতে তাহাঁর ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত তিনি রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন সময়ে পূর্ণ মাস রোজা পালন করেননি। আর এমন কোন মাসও কাটেনি যে মাসে তিনি [দু একটি] রোজা পালন করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৪]

২৬০৯. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে নবী [সাঃআঃ]-এর রোজা সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, তিনি একাধারে রোজা পালন করে যেতেন যাতে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি অনেক রোজা পালন করিয়াছেন। আর কখনো তিনি একাধারে পানাহার [রোজা পালন না করে] কাটিয়ে দিতেন। যাতে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি অনেক দিন যাবৎ রোজা পালন করেননি, তিনি অনেক দিন রোজা পালন করেননি। আয়িশা [রাদি.] আরো বলেন, তিনি মাদীনায় আসার পর আমি তাঁকে রমজান মাস ছাড়া কখনো পূর্ণ একটি মাস রোজা পালন করিতে দেখিনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৫]

২৬১০. আবদুল্লাহ ইবনি শাক্বীক্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম… উপরের হাদীসের অনুরূপ। তবে এ সানাদে অধঃস্তন রাবী হিশাম ও মুহাম্মাদের নাম উল্লেখ নেই।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৭, ইসলামিক সেন্টার-২৫৮৬]

২৬১১. উম্মুল মুমিনীন আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একাধারে রোজা পালন করিতে থাকতেন। ফলে আমরা বলাবলি করতাম, তিনি আর রোজা ভঙ্গ করবেন না। আবার এমনভাবে তিনি ক্রমাগত রোজা ছাড়তে থাকতেন যাতে আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর [এ মাসে] রোজা পালন করবেন না। আমি তাঁকে কখনো রমজান মাস ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক রোজা পালন করিতেও দেখিনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৭]

২৬১২. আবু সালামাহ্‌ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, কখনো কখনো একাধারে রোজা পালন করে যেতেন যে, আমরা বলতাম, তিনি রোজা পালন করে যাচ্ছেন [হয়ত আর বিরত হইবেন না]। আবার তিনি কখনো কখনো একাধারে রোজা পালন না করে অতিবাহিত করিতেন যে, আমরা বলতাম, হয়ত তিনি আর রোজা পালন করবেন না। আমি তাকে শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত অধিক [নাফ্‌ল] রোজা পালন করিতে দেখিনি। তিনি পুরো শাবান মাসেই রোজা পালন করিতেন। [অর্থাৎ কয়েক দিন ছাড়া পূর্ণ শাবান মাস রোজা পালন করিতেন]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৮]

২৬১৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শাবান মাসে যত রোজা পালন করিতেন, সারা বছরে অন্য কোন মাসে তিনি এত অধিক রোজা পালন করিতেন না। আর তিনি [লোকদের উদ্দেশ্য] বলিতেন, “তোমরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী যত বেশী পার আমাল কর।” কেননা, আল্লাহ তাআলা [তোমাদেরকে সাওয়াব দানে] ক্লান্ত বা বিরক্ত হইবেন না যতক্ষণ তোমরা অক্ষম হয়ে না পড়বে। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমাল হচ্ছে যা কোন বান্দা অব্যাহতভাবে করে থাকে- যদিও তা পরিমাণে কম হয়।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯০, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৮৯]

২৬১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রমজান মাস ছাড়া আর কখনো পূর্ণ মাস রোজা পালন করিতেন না। তিনি যখন রোজা পালন করিতেন তখন ক্রমাগত রোজা পালন করে যেতেন। ফলে লোকেরা বলত, আল্লাহর ক্বসম! হয়ত তিনি আর রোজা ভঙ্গ করবেন না। আবার যখন তিনি রোজা ছেড়ে দিতেন একাধারেই বিরতি দিতে থাকতেন। এমনকি লোকেরা বলত আল্লাহর ক্বসম! তিনি হয়ত আর রোজা পালন করবেন না। {১০}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯১, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯০]

{১০} এসব বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, বছরের বারো মাস ধরেই সওম পালন সুন্নাতের খেলাফ এবং একে ভাল মনে করা বিদআত এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হিদায়াতের বিপরিত। মুসলিমদেরকে কেবল পূর্ণ রমজান মাসে সওম পালন করিতে বলা হয়েছে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রতি মাসেই কিছু কিছু সওম পালন করিতেন, বিশেষ করে শাবান মাসে তুলনামূলক বেশি কেননা এটা রমাযানের পূর্ব প্রস্তুতি। আর এখানে যে কসম খাওয়া হয়েছে তা স্বভাবগত কসম, যে সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, অর্থাৎ এ ধরনের কসমের কারণে পাকড়াও হইবে না।

২৬১৫. আবু বিশর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এতে আছে, নবী [সাঃআঃ] মাদীনাতে আসার পর কখনো একাধারে এক মাস [নাফ্ল] রোজা পালন করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯২, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯১]

২৬১৬. উসমান ইবনি হাকীম আল আনসারী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমি রজব মাসের রোজা সম্পর্কে সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাদি.]- কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলিলেন, আমি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একাধারে রোজা পালন করিতে থাকতেন যাতে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোজা ছাড়বেন না। আবার তিনি এমনভাবে ক্রমাগত রোজা না রেখে থাকতেন যাতে আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর [এ মাসে] রোজা পালন করবেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯২]

২৬১৭. উসমান ইবনি হাকীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৪, ইসলামিক সেন্টার-২৫৯৩]

২৬১৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোজা পালন করে যেতেন, এমনকি বলা হত তিনি অনেক রোজা পালন করিয়াছেন, তিনি অনেক রোজা পালন করিয়াছেন। আবার তিনি রোজা থেকে এমনভাবে বিরত থাকতেন যে, বলা হত তিনি অনেক দিন রোজা থেকে বিরত রয়েছেন, অনেক দিন বিরত রয়েছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯৪]

৩৫. অধ্যায়ঃ সারা বছর ধরে রোজা পালন করা নিষেধ , কারণ এতে স্বাস্থ্যহানি হওয়ার এবং জরুরী কর্তব্য পালনে অক্ষম হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে, একদিন পরপর রোজা পালন করার ফযিলত

২৬১৯. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে অবহিত করা হলো যে, আমি বলছি, আমি যতদিন বেঁচে থাকব সারা রাতে নামাজ আদায় করব এবং সর্বদা দিনের বেলা রোজা পালন করব। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] [আমাকে] জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এ কথা বলেছ? আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি এ কথা বলেছি। তিনি বলিলেন, তুমি এ কাজ করিতে পারবে না, কারণ তোমার সে সামর্থ্য নেই। পড়, নিদ্রাও যাও। আর প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালন কর। কেননা প্রত্যেক নেক কাজের জন্য দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়। এতেই সারা জীবন রোজা পালন করার সাওয়াব পাওয়া যাবে। রাবী বলেন, আমি আরয করলাম, আমি এর চেয়েও বেশী করার সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, তবে একদিন রোজা পালন কর এবং অতঃপর দুদিন রোজা পালন থেকে বিরত থাক। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল! আমি এর চেয়েও বেশী করিতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি একদিন রোজা পালন কর এবং একদিন বিরত থাক। এটাই দাউদ [আঃ]-এর রোজা। আর এর চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই।

আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নির্দেশ মত তিন দিনের রোজা পালন করাকে যদি আমি গ্রহণ করে নিতাম তাহলে এটা আমার কাছে আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের চেয়েও পছন্দনীয় হত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯৫]

২৬২০. ইয়াহ্‌ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি ও আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ আবু সালামার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে রওনা হলাম। অবশেষে আমরা তার বাড়িতে গিয়ে পৌছলাম। তার বাড়ির সামনেই ছিল একটি মাসজিদ। আমরা সেখানে গিয়ে বসলাম এবং তাকে খবর দেয়ার জন্য একটি লোক পাঠালাম। তিনি বাড়ির ভিতর থেকে বের হয়ে আমাদের কাছে এসে বলিলেন, তোমরা ইচ্ছে করলে ঘরে গিয়েও বসতে পার অথবা এখানেও বসতে পার। আমরা বললাম, অবশ্যই আমরা এখানে বসব। অতঃপর তিনি আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করিতে শুরু করিলেন। তিনি বলিলেন, আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] আমার কাছে বলেছেন, আমি সর্বদা রোজা পালন করতাম এবং প্রতি রাতেই [রাতভর] কু্রআন তিলাওয়াত করতাম। পরে হয়ত বা আমার ব্যাপারে নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে আলোচনা করা হয়েছে অথবা [রাবীর সন্দেহ] তিনি নিজেই আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। আমি গিয়ে তাহাঁর কাছে হাজির হলাম। তিনি বলিলেন, আমি জানতে পারলাম, তুমি নাকি সর্বদা রোজা পালন কর এবং প্রতি রাতেই [সারারাত] কুরআন তিয়াওয়াত কর? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর নবী! আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি কল্যাণ লাভ করার উদ্দেশেই তা করে থাকি। তিনি বলিলেন, প্রতি মাসে তিনটি করে রোজা পালন করাই তোমার জন্য যথেষ্ট। তখন আমি বললাম, আমি এর চেয়েও বেশী করিতের সক্ষম। তিনি বলিলেন, [এরূপ করো না]। কেননা তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে, যারা তোমার সাথে সাক্ষাৎ করিতে আসে তাদেরও তোমার উপর অধিকার রয়েছে। আর তোমার উপর তোমার দেহেরও হাক্ব আছে। তাই তুমি আল্লাহর নবী দাউদ [আঃ]-এর রোজা অনুসরণ কর। কেননা তিনি মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইবাদাত করিতেন। আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! দাউদ [আঃ]-এর রোজা কী? তিনি বলিলেন, দাউদ [আঃ] একদিন রোজা পালন করিতেন এবং একদিন পালন করিতেন না [অর্থাৎ একদিন পরপর রোজা পালন করিতেন]।

তিনি [আরো] বলিলেন, তুমি প্রতি মাসে একবার কুরআন খতম কর। আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশী পড়ার সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি প্রতি বিশ দিনে একবার কুরআন খতম কর। আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশী করিতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি প্রতি দশ দিনে একবার কুরআন খতম কর। আমি আবার বললাম, হে আল্লাহর নবী এর চেয়েও বেশী পারি। তিনি বলিলেন, তুমি সাতদিন অন্তর কুরআন খতম কর, তবে এর চেয়ে বেশী পড়ো না। কেননা তোমার উপর তোমার স্ত্রীর হাক্ব আছে, তোমারে সাক্ষাতপ্রার্থীদেরও তোমার উপর হাক্ব আছে, আর তোমার শরীরেরও তোমার উপর হাক্ব আছে। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, আমি [সর্বদা রোজা পালন করে] নিজের উপর কঠোরতা করেছি। ফলে [আমার উপরও] কঠোরতা চেপে বসেছে। তিনি আরো বলেন, নবী [সাঃআঃ] আমাকে বলেছিলেন, তোমার জানা নেই হয়ত বা তুমি দীর্ঘায়ু লাভ করিবে। [তখন তোমার পক্ষে এত বেশী আমাল করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।]

নবী [সাঃআঃ] যা বলেছিলেন বাস্তবে তাই হলো। আমি যখন বয়োবৃদ্ধ হয়ে পড়লাম তখন অনুশোচনা করে বলতাম, “হায়! আমি যদি নবী [সাঃআঃ]-এর দেয়া অবকাশটুকু গ্রহণ করতাম!

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৭, অ.সে. ২৫৯৬]

২৬২১. ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে প্রতি মাসে তিনদিন করে রোজা পালন করাই যথেষ্ট- এ কথার পরে আরো আছে, “কেননা প্রত্যেক নেক কাজের বিনিময়ে তার দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায়, আর এভাবে তা সারা বছরের সিয়ামের সমতুল্য গণ্য হয়”। তিনি তার বর্ণিত হাদীসের আরো উল্লেখ করিয়াছেন, “আমি বললাম, আল্লাহর নবী দাউদ [আঃ]- এর রোজা কী [ছিল]? তিনি বলিলেন, বছরের অর্ধেক [অর্থাৎ একদিন রোজা পালন করা ও একদিন রোজা ভাঙ্গা]। তিনি [এ হাদীসে] কুরআন তিলাওয়াতের প্রসঙ্গে কিছুই উল্লেখ করেননি। এ বর্ণনায় তিনি “তোমার সাক্ষাত-প্রার্থীদেরও তোমার উপর হাক্ব আছে”- এ কথাটি উল্লেখ করেননি। বরং এতে আছেঃ তোমার সন্তানদেরও তোমার উপর হাক্ব আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯৭]

২৬২২. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তুমি প্রতি মাসে একবার করে সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ কর। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলেন, আমি বললাম, আরো বেশী পড়ার সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি বিশ দিন অন্তর একবার কুরআন খতম কর। রাবী বলেন, আমি আবার আরয করলাম, আমার আরো [বেশী পাঠ করার ] শক্তি আছে। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি সাত দিন অন্তর একবার সম্পূর্ণ কুরআন পাঠ কর। তবে এর চেয়ে বেশী [তিলাওয়াত] করো না। [কারণ এর চেয়ে কম সময়ের মধ্যে কুরআন খতম করলে কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করা এবং এর মর্ম উপলব্ধি করার সুযোগ হয় না]। {১১}

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৫৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ২৫৯৮]

{১১} এ বর্ণনাসমূহ থেকে জানা গেল যে, রমজান মাসের এক রাত্রিতে পূর্ণাঙ্গ কুরআন মাজীদ খতম করার যে রীতি প্রচলিত আছে এবং কুরআনের হাফিযগণ এতে গর্ববোধ করেন তা সুন্নাতের খেলাফ এবং প্রকৃতপক্ষে বিদআত। আর বিশেষ করে এতে হাফিযদের এবং যে সকল ব্যক্তি এতে অংশগ্রহণ করে তাদের গর্ব করা যে, আমি একরাত্রিতে কুরআন খতম করেছি বা এতে অংশগ্রহণ করেছি এটা স্পষ্ট আহমকী ছাড়া আর কিছুই নয়।

২৬২৩. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ হে আবদুল্লাহ ! [বেশী বেশী রাত জেগে] তুমিও অমুক ব্যক্তির মতো হয়ে যেও না। সে রাত জেগে জেগে নামাজ আদায় করত, অতঃপর রাত জেগে ইবাদাত করা ছেড়ে দিয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০০, ই.সে ২৫৯৯]

২৬২৪. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] জানতে পারলেন, আমি অনবরত রোজা পালন করি এবং রাতভর নামাজ আদায় করি। তিনি আমাকে ডেকে পাঠালেন অথবা [রাবীর সন্দেহ] আমি তাহাঁর সাথে দেখা করি। তিনি বলিলেন, আমি খবর পেয়েছি, তুমি অনবরত রোজা পালন কর, বিরতি দাও না, আর রাত ভর নামাজ আদায় কর। এরপর আর এরূপ করিবে না। কেননা তোমার উপর তোমার চোখের অংশ [হাক্ব] আছে, তোমার দেহ ও আত্মার অংশ আছে এবং তোমার পরিবার-পরিজনেরও অংশ আছে। কাজেই তুমি রোজাও পালন কর, বিরতিও দাও, নামাজও আদায় কর, ঘুমও যাও। তুমি দশ দিনে একদিন রোজা পালন কর, তাহলে বাকি নয়টি দিনেরও সাওয়াব পাবে। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আমি নিজের মধ্যে এর চেয়েও অধিক রোজা পালন করার শক্তি রাখি। তিনি বলিলেন, তাহলে তুমি দাউদ [আঃ]-এর মত রোজা পালন কর।

তিনি [আবদুল্লাহ] বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! দাউদ [আঃ] কিভাবে রোজা পালন করিতেন? তিনি [নবী] বলিলেন, দাউদ [আঃ] একদিন রোজা পালন করিতেন এবং একদিন বিরতি দিতেন। এ জন্যেই [দুর্বল হইতেন না এবং] দুশমনের সম্মুখীন হলে [ময়দান ছেড়ে] পালাতেন না। আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! এ ব্যাপারে কে আমার দায়িত্ব নিবে? আত্বা বলেন, আমি জানি না, অনবরত রোজা পালন করার বিষয়টি কিভাবে আলোচনায় আসল। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, যে ব্যক্তি অনবরত রোজা পালন করিল, সে যেন কোন রোজাই পালন করেনি। যে ব্যক্তি সব সময় রোজা পালন করিল সে যেন রোজাই পালন করেনি, যে ব্যক্তি সদাসর্বদা রোজা পালন করিল সে যেন রোজাই পালন করেনি।

[ ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০১, ই.সে ২৬০০]

২৬২৫. ইবনি জুরায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

এ সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি বলেছেন, আবু আব্বাস শাইর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাকে অবহিত করিয়াছেন।

[ঈমাম মুসলিম বলেন]: তিনি হলেন আবু আব্বাস আস্ সায়িব ইবনি ফার্রূখ। তিনি মাক্কার অধিবাসী এবং বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০২, ইসলামিক সেন্টার-২৬০১]

২৬২৬. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনি আম্‌র! তুমি তো একাধারে সওম [রোযা] পালন করে যাচ্ছ। সারারাত ইবাদাতে দাঁড়িয়ে থাক। তুমি এরূপ করলে তাতে তোমার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হইবে এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবে। যে ব্যক্তি সর্বদা সওম পালন করিল, সে মূলত সওম পালন করিল না। মাসে তিন দিন সওম পালন করা পূর্ণ মাস পালনের সমতুল্য। আমি বললাম, আমি এর চেয়েও বেশি সামর্থ্য রাখি। তিনি বলিলেন, দাউদ [আঃ]-এর ন্যায় সওম পালন কর। তিনি একদিন সওম পালন করিতেন এবং একদিন ছেড়ে দিতেন এবং পলায়ন করিতেন না যখন শত্রুর সম্মুখীন হইতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৩, ইসলামিক সেন্টার- ২৬০২]

২৬২৭. হাবীব ইবনি আবু সাবিত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এতে আরও আছে, “এবং তুমি শ্রান্ত-ক্লান্ত হয়ে পড়বে।”

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৪, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৩]

২৬২৮. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, আমাকে তোমার সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে যে, তুমি সারারাত দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় কর এবং দিনের বেলা সওম রাখ? আমি বললাম, আমি অবশ্য করি। তিনি বলেন, তুমি এরূপ করিতে গেলে অনিদ্রার কারণে তোমার চোখ কোটরাগত হইবে এবং তুমি দুর্বল হয়ে পড়বে। তোমার চোখের হাক্ব রয়েছে, তোমার দেহের হাক্ব রয়েছে এবং তোমার পরিবার-পরিজনের হাক্ব রয়েছে। অতএব তুমি রাতে ইবাদতও করিবে এবং নিদ্রাও যাবে। সওমও পালন করিবে, আবার তা বাদও দিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৫, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৪]

২৬২৯. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন: আল্লাহ্‌র নিকট পছন্দনীয় সওম হচ্ছে দাঊদ [আঃ]-এর সওম এবং তাহাঁর নিকট পছন্দনীয় নামাজ হচ্ছে দাঊদ [আঃ]-এর নামাজ। তিনি অর্ধরাত ঘুমাতেন। অতঃপর এক তৃতীয়াংশ রাত ইবাদাতে থাকতেন। অতঃপর এক ষষ্ঠাংশ রাত ঘুমাতেন। তিনি একদিন সওম পালন করিতেন এবং একদিন বাদ দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৬, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৫]

২৬৩০. আবদুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] বলেন: আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক প্রিয় সওম হচ্ছে দাঊদ [আঃ]-এর সওম। তিনি বছরের অর্ধেক কাল সওম পালন করিতেন। মহান আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক পছন্দনীয় নামাজ হচ্ছে দাঊদ [আঃ]-এর নামাজ। তিনি অর্ধ রাত ঘুমাতেন, অতঃপর সলাতে দাঁড়াতেন, অতঃপর শেষ রাতে ঘুমিয়ে যেতেন। তিনি অর্ধ রাত অতিক্রান্ত হবার পর এক-তৃতীয়াংশ রাত ইবাদাত করিতেন।

রাবী ইবনি জুয়ায়জ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি আমর ইবনি দীনারকে বললাম, আমর ইবনিল আস [রাদি.] কি এ কথা বলিতেন যে, তিনি অর্ধরাত অতিক্রান্ত হবার পর এক-তৃতীয়াংশ রাত ইবাদাতে থাকতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৭ ইসলামিক সেন্টার-২৬০৬]

২৬৩১. আবু ক্বিলাবাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাকে আবুল মালীহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] অবহিত করিয়াছেন, তিনি বলেছেন: আমি তোমার পিতার সাথে আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.]-এর কাছে গেলাম। তিনি আমাদের নিকট বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নিকট আমার সওম সম্পর্কে উল্লেখ করা হলে তিনি আমার কাছে এলেন। আমি তাহাঁর জন্য একটি চামড়ার বালিশ বিছিয়ে দিলাম। তাতে খেজুরের আঁশ ভর্তি ছিল। তিনি মাটির উপর বসে গেলেন এবং বালিশটি তাহাঁর ও আমার মাঝে পড়ে থাকল। তিনি আমাকে বলিলেন, প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন করা কি তোমার জন্য যথেষ্ট নয়? আমি বললাম: হে আল্লাহ্‌র রসূল [আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি]! তিনি বলিলেন, তাহলে পাঁচদিন? আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ্য রাখি]! তিনি বলিলেন, তাহলে সাতদিন? আমি বললাম : হে আল্লাহ্‌র রসূল [আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি]! তিনি বলিলেন, তাহলে নয়দিন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল [আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি]! তিনি বলিলেন, তাহলে এগারদিন। আমি বললাম : হে আল্লাহ্‌র রসূল [আমি এর অধিক সামর্থ্য রাখি]! নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, দাঊদ [আঃ]-এর রোজার উপর কোন সওম নেই। তিনি বছরের অর্ধেক অর্থাত একদিন যদি এ সওম পালন করিতেন, আরেক দিন বাদ দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৮, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৭]

২৬৩২. আবদুল্লাহ ইবনি আম্‍র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বলেন, তুমি একদিন সওম পালন করলে পরের দিনের সাওয়াব পাবে। তিনি বলেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তুমি দুদিন সওম পালন কর। তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোর সাওয়াব পাবে। তিনি বলিলেন, আমি আরও অধিক সওম পালন করিতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তুমি তিনদিন সওম পালন কর তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোরও সাওয়াব পাবে। তিনি বলিলেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তুমি চারদিন সওম পালন কর, তাহলে অবশিষ্ট দিনগুলোরও সাওয়াব লাভ করিবে। তিনি বলিলেন, আমি আরও অধিক রাখতে সক্ষম। তিনি বলিলেন, তুমি দাঊদ [আঃ]-এর সওম পালন কর যা আল্লাহ্‌র কাছে সর্বোত্তম সাওম। তিনি পর্যায়ক্রমে একদিন সওম পালন করিতেন এবং পরের দিন বাদ দিতেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬০৯, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৮]

২৬৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বলিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনি আম্‍র! আমি জানতে পেরেছি যে, তুমি দিনের বেলা সওম পালন কর এবং রাতের সলাতে থাক, তুমি এরূপ করো না। কারণ তোমার উপর তোমাদের দেহের একটি অংশ [হাক্ব] রয়েছে, তোমার উপর তোমার চোখের অংশ রয়েছে এবং তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অংশ রয়েছে। তুমি সওমও পালন কর এবং বাদও দাও। প্রতি মাসে তিনদিন করে সওম পালন কর এবং এটাই হল সারা বছরের সওম [এর নিয়ম]। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমার আরও শক্তি আছে। তিনি বলিলেন, তাহলে দাঊদ [আঃ]-এর সওম-এর মতো সওম পালন কর। পর্যায়ক্রমে একটি সওম পালন কর এবং একদিন বাদ দাও।

আবদুল্লাহ [রাদি.] বলিতেন, হায়! আমি যদি সহজটার উপর আমাল করতাম!

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১০, ইসলামিক সেন্টার-২৬০৯]

৩৬. অধ্যায়ঃ প্রতি মাসে তিনদিন, আরাফাতের দিন , আশুরার দিন, সোম ও বৃহস্পতিবার সওম পালনের ফযিলত

২৬৩৪. মুআযাহ্ আল আদাবিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.]-এর কাছে জানতে চাইলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন করিতেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করলাম, মাসের কোন্ কোন্ দিন তিনি সওম পালন করিতেন? আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, তিনি মাসের যে কোন দিন সওম পালন করিতে দ্বিধা করিতেন না।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১১, ইসলামিক সেন্টার-২৬১০]

২৬৩৫. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন অথবা [অধঃস্তন রাবীর সন্দেহ] তিনি কোন ব্যক্তিকে বলেছেন এবং তিনি তা শুনলেন, হে অমুক! তুমি কি এ মাসের মধ্যভাগে সওম পালন করেছিলে? সে বলিল, না। তিনি বলিলেন, যখন তুমি তা ভঙ্গ করিবে, তখন দুদিন সওম পালন করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১২, ইসলামিক সেন্টার-২৬১১]

২৬৩৬. আবু ক্বাতাদাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এক ব্যক্তি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞেস করিল, আপনি কিভাবে সওম পালন করেন? তার এ কথায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট হলেন। উমর [রাদি.] তাহাঁর অসন্তোষ লক্ষ্য করে বলিলেন, “আমরা আল্লাহ্‌র উপর [আমাদের] প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামের উপর [আমাদের] দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর উপর আমাদের নবী হিসেবে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে তাহাঁর ও তাহাঁর রসূলের অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”। উমর [রাদি.] কথাটি বার বার আওড়াতে থাকলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত রসূল [সাঃআঃ]-এর অসন্তোষের ভাব দূরীভূত হল। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! যে ব্যক্তি সারা বছর সওম পালন করে তার অবস্থা কিরূপ? তিনি বলিলেন, সে সওম পালন করেনি এবং ছেড়েও দেয়নি। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করিলেন, যে ব্যক্তি একদিন পর একদিন সওম পালন করে তার অবস্থা কিরূপ? তিনি বলিলেন, এটা দাঊদ [আঃ]-এর সওম। তিনি আবার জিজ্ঞেস করিলেন, যে একদিন সওম পালন করে ও একদিন করে না, তার অবস্থা কিরূপ? রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি আশা করি যে, আমার এতটা শক্তি হোক। তিনি পুনরায় বলিলেন, প্রতি মাসে তিনদিন সওম পালন করা এবং রমজান মাসের সওম এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান পর্যন্ত সারা বছর সওম পালনের সমান। আর আরাফাহ্ দিবসের সওম সম্পর্কে আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে। আর আশুরার সওম সম্পর্কে আমি আল্লাহ্‌র কাছে আশাবাদী যে, তাতে পূর্ববর্তী বছরের গুনাহসমূহের কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়ে যাবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৩, ইসলামিক সেন্টার-২৬১২]

২৬৩৭. আবু ক্বাতাদাহ্ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। এতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অসন্তুষ্ট হলেন। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, আমরা আল্লাহ্‌র উপর [আমাদের] প্রতিপালক হিসেবে, ইসলামের উপর [আমাদের] দ্বীন হিসেবে, মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর উপর [আমাদের] রসূল হিসেবে এবং আমাদের কৃত বাইআতের উপর আমরা সন্তুষ্ট। অতঃপর সারা বছর সওম পালন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বলিলেন, সে সওম পালন করেনি, ইফত্বার করেনি, সে সওম পালন করেনি এবং সওমহীনও থাকেনি। অতঃপর একাধারে দুদিন সওম পালন করা ও একদিন সওম পালন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞস করা হল। তিনি বলিলেন, এভাবে সওম পালনের সামর্থ্য কার আছে? অতঃপর একদিন সওম পালন ও দুদিন সওম ত্যাগ করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বলিলেন, আল্লাহ যেন আমাদের এরূপ সওম পালনের সামর্থ্য দান করেন। অতঃপর একদিন সওম পালন করা ও একদিন না করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তিনি বলিলেন, তা আমার ভাই দাঊদ [আঃ]-এর সওম। অতঃপর সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, এ দিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং এ দিনই আমি নুবূয়াতপ্রাপ্ত হয়েছি বা আমার উপর [কুরবান] নাযিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলিলেন, প্রতি মাসে তিনদিন এবং গোটা রমজান সওম পালন করাই হল সারা বছর সওম পালনের সমতূল্য। অতঃপর আরাফাহ্‌ দিবসের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলেন তিনি বলিলেন, তাতে পূর্ববর্তী বছর ও পরবর্তী বছরের গুনাহের কাফ্‌ফারা হয়ে যাবে। অতঃপর আশূরার সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, বিগত বছরের গুনাহের কাফ্‌ফারাহ্‌ হয়ে যাবে।

এ হাদীসে শুবাহ্-এর বর্ণনায় আরও আছে, “অতঃপর সোমবার ও বৃহস্পতিবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল”। কিন্তু আমাদের বৃহস্পতিবারের কথা ভুলবশতঃ বর্ণিত হয়েছে, তাই আমরা তার উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৪, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৩]

২৬৩৮. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৫, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৪]

২৬৩৯. গইলান ইবনি জারীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে এ সানাদ হইতে বর্ণীতঃ

শুবাহ্-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে এ সূত্রে তিনি [গইলান] সোমবারের উল্লেখ করিয়াছেন কিন্তু বৃহস্পতিবারের উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৬, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৫]

২৬৪০. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে সোমবারের সওম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ঐদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং ঐদিন আমার উপর [কুরআন] নাযিল হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৭, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৬]

৩৭. অধ্যায়ঃ শাবান মাসের সওম

২৬৪১. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে অথবা অপর কাউকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি শাবান মাসের মধ্যভাগে সওম পালন করেছিলে? তিনি বলিলেন, না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যখন তুমি সওম পালন করনি, তখন দুদিন সওম পালন করে নিও।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৮, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৭]

২৬৪২. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এ মাসের মধ্যভাগে কিছু দিন সওম পালন করেছিলে? সে বলিল, না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি তার বদলে রমাযানের রোজা শেষ করে দুদিন রোজা পালন করিবে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬১৯, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৮]

২৬৪৩. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নবী [সাঃআঃ] এক ব্যক্তিকে বলিলেন, তুমি কি এক মাসের অর্থাৎ শাবান মাসের মধ্যভাগে কিছু দিন রোজা পালন করেছ? সে বলিল, না। তিনি তাকে বলিলেন, রমাযানের সওম পালন শেষ করে তুমি একদিন বা দুদিন সওম পালন কর। এ সম্পর্কে শুবাহ-এর সন্দেহ রয়েছে এবং রাবী বলেন, আমার ধারণা যে, তিনি দুদিনের কথা বলেছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২০, ইসলামিক সেন্টার-২৬১৯]

২৬৪৪. আবদুল্লাহ ইবনি হানী ইবনি আখী মুতাররিফ হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে অনুরূপ হাদীস করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২১, ইসলামিক সেন্টার-২৬২০]

৩৮. অধ্যায়ঃ মুহরম মাস এর রোজার ফযিলত

২৬৪৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: রমাযানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সওম হচ্ছে আল্লাহ্‌র মাস মুহাররমের সওম এবং ফরয নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২২, ইসলামিক সেন্টার-২৬২১]

২৬৪৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে জিজ্ঞেস করা হল, ফার্‍য নামাজসমূহের পর কোন্ নামাজ এবং রমজান মাসের সিয়ামের পর কোন্ সওম সর্বোত্তম? তিনি বলিলেন, ফরয নামাজসমূহের পর গভীর রাতের নামাজ সর্বোত্তম এবং রমজান মাসের সিয়ামের পর আল্লাহ্‌র মাস মুহার্‌রমের সওম সর্বোত্তম।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২৩, ইসলামিক সেন্টার-২৬২২]

২৬৪৭. আবদুল মালিক ইবনি উমায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

এ সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২৪, ইসলামিক সেন্টার- ২৬২৩]

৩৯. অধ্যায়ঃ রমাযানের রোযার পর শাওয়াল মাস এ ছয়দিন সওম পালনের ফযিলত

২৬৪৮. আবু আইয়ূব আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ রমজান মাসের রোজা পালন করে পরে শাও্ওয়াল মাসে ছয়দিন রোজা পালন করা সারা বছর সওম পালন করার মত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২৫, ইসলামিক সেন্টার- ২৬২৪]

২৬৪৯. আবু আইয়ূব আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি, তিনি পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২৬, ইসলামিক সেন্টার- ২৬২৫]

২৬৫০. আবু আইয়ূব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

অনুরূপ বর্ণিত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২৬২৭, ইসলামিক সেন্টার- ২৬২৬]


Posted

in

by

Comments

One response to “মুহরম, সাওয়াল, প্রত্যেক মাস ও শাবান মাসের সওম”

Leave a Reply