রুকু ও সিজদার নিয়ম ,তাসবীহ, দুয়া ও হাত উত্তোলন করা

রুকু ও সিজদার নিয়ম ,তাসবীহ, দুয়া ও হাত উত্তোলন করা

রুকু ও সিজদার নিয়ম ,তাসবীহ, দুয়া ও হাত উত্তোলন করা >> সুনান তিরমিজি শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়ঃ ২, অনুচ্ছেদঃ (৭৬-১০২)=২৭টি

৭৬. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সিজদা সময়ে তাকবীর বলা
৭৭. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয় সম্পর্কিত
৭৮. অনুচ্ছেদঃ রুকূর সময় উভয় হাত উত্তোলন করা [রফউল ইয়াদাইন]
৭৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথমবার ব্যতীত নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি
৮০. অনুচ্ছেদঃ রুকূতে দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখা
৮১. অনুচ্ছেদঃ রুকূ অবস্থায় উভয় হাত পেটের পার্শ্বদেশ হইতে পৃথক রাখা
৮২. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সিজদা তাসবীহ
৮৩. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সাজদাহ্‌তে কুরআন পাঠ নিষেধ
৮৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্‌তে পিঠ সোজা করে না
৮৫. অনুচ্ছেদঃ রুকূ হইতে মাথা উঠানোর সময় যা বলিতে হইবে
৮৬. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়
৮৭. অনুচ্ছেদঃ সিজদার সময় হাঁটু দুটি রাখার পর দুই হাত রাখতে হইবে
৮৮. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়বস্তু
৮৯. অনুচ্ছেদঃ নাক ও কপাল দিয়ে সিজদা করা
৯০. অনুচ্ছেদঃ সিজদা সময় মুখমন্ডল কোন্ জায়গায় রাখতে হইবে
৯১. অনুচ্ছেদঃ সাত অঙ্গের সমন্বয়ে সিজদা করা
৯২. অনুচ্ছেদঃ সাজদাহ্‌তে হাত বাহু হইতে ফাঁক করে রাখা
৯৩. অনুচ্ছেদঃ সঠিকভাবে সিজদা করা
৯৪. অনুচ্ছেদঃ সিজদা সময় যমিনে হাত রাখা এবং পায়ের পাতা খাড়া করে রাখা
৯৫. অনুচ্ছেদঃ রুকূ ও সিজদা হইতে মাথা তুলে পিঠ সোজা রাখা
৯৬. অনুচ্ছেদঃ ইমামের সাথে সাথে রুকূ-সাজদাহ্য় যাওয়া ভাল নয়
৯৭. অনুচ্ছেদঃ দুই সিজদার মঝখানে ইক্আ করা মাকরুহ
৯৮. অনুচ্ছেদঃ ইক্বআর অনুমতি
৯৯. অনুচ্ছেদঃ দুই সিজদা মাঝে বিরতির সময় যা পাঠ করিতে হইবে
১০০. অনুচ্ছেদঃ সিজদার সময় কিছুতে ভর দেওয়া
১০১. অনুচ্ছেদঃ সাজদাহ্‌ হইতে উঠার নিয়ম
১০২. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়

৭৬. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সিজদা সময়ে তাকবীর বলা

২৫৩. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, [নামাজরত অবস্থায়] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রত্যেকবার উঠা, নীচু হওয়া, দাঁড়ানো ও বসার সময় আল্লাহু আকবার বলিতেন। আবু বাকার এবং উমার [রাদি.]-ও এরূপ আমল করিতেন।

সহীহ। ইরওয়া হাদীস নং-[৩৩০]। এ অনুচ্ছেদে আবু হুরাইরা, আনাস, ইবনি উমার, আবু মালিক আশআরী, আবু মূসা, ইমরান ইবনি হুসাইন, ওয়াইল ইবনি হুজর এবং ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনি মাসঊদের হাদীসটি হাসান সহীহ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবা যেমন আবু বাক্র, উমার, উসমান ও আলী [রাদি.], তাঁদের পরবর্তীগণ এবং সমস্ত ফিক্হবিদ ও বিশেষজ্ঞ আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৭. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয় সম্পর্কিত

২৫৪. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] [নামাযে] নীচের দিকে যেতে তাকবীর বলিতেন।

সহিহ। ইরওয়া হাদীস নং-[৩৩১], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবয়ি কিরাম ও তাবিঈনেরও এই মত রুকূ-সাজদাহ্য় যাওয়ার সময় ঝুকে পড়ে আল্লাহু আকবার বলবে।. রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৮. অনুচ্ছেদঃ রুকূর সময় উভয় হাত উত্তোলন করা [রফউল ইয়াদাইন]

২৫৫. সালিম [রঃ] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আবদুল্লাহ] বলেন, আমি দেখেছি, যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শুরু করিতেন, তখন নিজের কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলতেন এবং যখন রুকূতে যেতেন এবং রুকূ হইতে উঠতেন [তখনও এরূপ করিতেন]। ইবনি আবু উমার তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে আরো বলেছেন, কিন্তু তিনি [রসুলুল্লাহ] [সাঃআঃ] দুই সিজদা মাঝখানে হাত তুলতেন না।

সহীহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৫৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি উমারের বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৬. আবু ঈসা হইতে বর্ণীতঃ

ফাযল ইবনি সাবাহ বাগদাদী তিনি সুফইয়ান ইবনি উয়াইনাহ হইতে তিনি যুহরী হইতে এই সনদ পরম্পরায় ইবনি আবী উমারের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

সহিহ। দেখুন পূর্বের হাদীস। এ অনুচ্ছেদে উমার, আলী, ওয়াইল ইবনি হুজর, মালিক ইবনি হুয়াইরিস, আনাস, আবু হুরাইরা, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ, সাহল ইবনি সাদ, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা, আবু কাতাদা, আবু মূসা আশআরী, জাবির ও উমাইর লাইসী [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবা যেমন, ইবনি উমার, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ, আবু হুরাইরা, আনাস, ইবনি আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনি যুবাইর [রাদি.] ও আরো অনেকে; তাবিঈদের মধ্যে হাসান বাসরী, আতা, তাউস, মুজাহিদ, নাফি, সালিম ইবনি আবদুল্লাহ, সাঈদ ইবনি যুবাইর প্রমুখ রুকূতে যাওয়া এবং রুকূ হইতে উঠার সময় রফউল ইয়াদাইন করার পক্ষে মত দিয়েছেন। ঈমাম মালিক মামার, আওযায়ী ইবনি উয়াইনাহ ঈমাম আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাক [রঃ] এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাক বলেন, হাত উত্তোলন সম্পর্কিত হাদীস সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুপ্রমাণিত। ইবনি মাসউদ [রাদি.] যে বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] শুধু একবার রফউল ইয়াদাইন করিয়াছেন, অতঃপর আর কখনো করেননি এ হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। আমাকে এ কথা আহমাদ ইবনি আবদাহ্ বলেছেন, তিনি ওয়াহ্ব ইবনি যামআর সূত্রে তিনি সুফিয়ান ইবনি আবদুল মালিকের সূত্রে এবং তিনি আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাকের সূত্রে পেয়েছেন। জারুদ ইবনি মুআয বলেনঃ সুফইয়ান ইবনি উয়াইনা, উমার ইবনি হারুন, নায্র ইবনি শুমাইল প্রমুখ ঈমামগণ নামাজ শুরু করিতে রুকূতে যাওয়ার সময় এবং রুকূ হইতে উঠার সময় রফউল ইয়াদাইন করিতেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৭৯. অনুচ্ছেদঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] প্রথমবার ব্যতীত নামাযে আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি

২৫৭. আলকামা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] বলিলেন, আমি কি তোমাদেরকে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর [নিয়মে] নামাজ আদায় করে দেখাব না? তিনি [আবদুল্লাহ] নামাজ আদায় করিলেন, কিন্তু প্রথম বার [তাকবীরে তাহরীমার সময়] ছাড়া আর কোথাও রফউল ইয়াদাইন করেননি।

সহিহ। সিফাতুস নামাজ, মূল-মিশকাত-হাদীস নং-[৮০৯]। এ অনুচ্ছেদে বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ ইবনি মাসঊদের হাদীসটি হাসান। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একাধিক সাহাবা ও তাবিঈন এ হাদীসের অনুকূলে মত দিয়েছেন। সুফিয়ান সাওরী ও কুফাবাসীগণ এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮০. অনুচ্ছেদঃ রুকূতে দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখা

২৫৮. আবু আবদুর রাহমান আস-সুলামী [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.] আমাদের বলিলেন, রুকূতে হাঁটুতে হাত রাখা তোমাদের জন্য সুন্নাত। অতএব তোমরা হাঁটুতে হাত রাখ।

সনদ সহিহ। এ অনুচ্ছেদে সাদ, আনাস, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ, সাহল ইবনি সাদ, মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা ও আবু মাসউদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ উমারের হাদীসটি হাসান সহীহ। সাহাবা, তাবিঈন ও তাবি তাবিঈনের মধ্যে রুকূর সময় হাঁটুতে হাত রাখার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে যা বর্ণিত হয়েছে [রুকূর সময় দুই হাত একত্রে মিলিয়ে দুই ঊরুর মাঝখানে রাখা] তার সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিশেষজ্ঞ আলিমগণ বলেন, তাহাঁর বর্ণনাটি মানসুখ [বাতিল] হয়ে গেছে। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৫৯. সাদ ইবনি আবু ওয়াককাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আমরা প্রথমে এরূপ করতাম [দুই হাত একসাথে মিলিয়ে দুই রানের মাঝখানে রাখতাম]। কিন্তু পরে আমাদেরকে এমনটি করিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং রুকূর সময় হাঁটুর উপর হাত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৭৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। মুসআব ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতা সাদের সূত্রেও উপরে উল্লেখিত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। আবু হুমাইদ সায়িদীর নাম আব্দুর রহমান ইবনি সাদ ইবনিল মুনযির, আবু উসাইদের নাম মালিক ইবনি রাবিয়্যাহ, আবু হুসাইনের নাম উসমান ইবনি আসিম, আবু আব্দুর রহমান সুলামীর নাম আব্দুল্লাহ ইবনি হাবীব। আবু ইয়াফূর-এর নাম আব্দুর রহমান ইবনি উবাইদ। আবু ইয়াকূব আবদীর নাম ওয়াক্বিক। আর ইনিই আব্দুল্লাহ ইবনি আবী আউফা হইতে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। এরা উভয়েই কুফাবাসী। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮১. অনুচ্ছেদঃ রুকূ অবস্থায় উভয় হাত পেটের পার্শ্বদেশ হইতে পৃথক রাখা

২৬০. আব্বাস ইবনি সাহল হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একদা আবু হুমাইদ, আবু সাঈদ, সাহল ইবনি সাদ এবং মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামা [রাদি.] একত্র হলেন। তাঁরা রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ সম্পর্কে একে অপরের সংগে আলাপ করছিলেন। আবু হুমাইদ [রাদি.] বলিলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাজ আদায়ের নিয়ম সম্পর্কে আমি তোমাদের চেয়ে অনেক ভাল জানি। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকূর সময় দুই হাত দুই হাঁটুতে রাখলেন। তিনি হাত দুটোকে টানা তীরের মত [সোজা] রাখলেন এবং পার্শ্বদেশ হইতে পৃথক [ফাঁক] করে রাখলেন।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭২৩], মিশকাত-হাদীস নং-[৮০১], সিফাতুস নামাজ-[১১০]। এ অনুচ্ছেদে আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুমাইদ-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। বিশেষজ্ঞগণ রুকূ সিজদা সময় উভয় হাত পার্শ্বদেশ [পেট] হইতে পৃথক রাখার নিয়মই অবলম্বন করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮২. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সিজদা তাসবীহ

২৬১. ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ রুকূ করিবে তখন রুকূতে তিনবার

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

“সুবাহানা রব্বিয়াল আযীম” [আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি] বলবে। তাহলে তার রুকূ পূর্ণ হইবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ। যখন সে সিজদা করিবে তখন সিজদায় তিনবার

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

“সুবহানা রব্বিয়াল আলা” বলবে। তাহলে তার সিজদা পূর্ণ হইবে। আর এটা হল সর্বনিম্ন পরিমাণ।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৯০] এ অনুচ্ছেদে হুযাইফা ও উকবা ইবনি আমির [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয় [অর্থাৎ, এটা সনদসূত্র কর্তিত হাদীস]। কেননা ইবনি মাসউদ [রাদি.]-এর সাথে আওন ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উতবার দেখা হয়নি। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা রুকূ ও সিজদায় তিন তাসবীহ-এর কম না বলাই মুস্তাহাব বলেছেন। ইবনিল মুবারাক বলেছেন, আমি ইমামের জন্য পাঁচ বার তাসবীহ বলা মুস্তাহাব মনে করি। এতে মুক্তাদী ধীরেসুস্থে তিন তাসবীহ পাঠ করে নিতে পারবে। ইসহাক ইবনি ইবরাহীমও অনুরূপ কথা বলেছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

২৬২. হুযাইফা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করছেন। তিনি [রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]] রুকূতে

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ

সুবহানা রব্বিয়াল আযীম এবং সিজদায়

سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى

সুবহানা রব্বিয়াল আলা বলিতেন। যখনই কোন রাহমাত সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখনই তিনি সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে রাহমাত চাইতেন। যখনই তিনি কোন শাস্তি সম্পর্কিত আয়াতে আসতেন, তখন সামনে অগ্রসর হওয়া বন্ধ রেখে শাস্তি হইতে আশ্রয় চাইতেন।

সহীহ। মিশকাত-হাদীস নং-[৮৮১]। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৬৩. ঈমাম তিরমিযী হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মাদ ইবনি বাশ্‌শার আব্দুর রহমান ইবনি মাহদী হইতে, তিনি শুবা হইতে স্বীয় সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

সহিহ। দেখুন পূর্বের হাদীস।হুযাইফা হইতে অন্য সূত্রেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। তাতে তিনি রাত্রে নামাজ আদায় করিয়াছেন বলে উল্লেখ আছে। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৩. অনুচ্ছেদঃ রুকূ-সাজদাহ্‌তে কুরআন পাঠ নিষেধ

২৬৪. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নিষেধ করেছেনঃ কাচ্ছি নামক রেশমী কাপড় ও কড়া লাল রং- এর কাপড় পরতে, সোনার আংটি পরতে এবং রুকূর মধ্যে কুরআনের আয়াত পাঠ করিতে।

সহিহ। মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আলী [রাদি.]-এর হাদীসটি হাসান সহীহ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবা ও তাহাদের পরবর্তী বিদ্বানগণ রুকূ ও সিজদা মধ্যে কুরআনের আয়াত পাঠ করা মাকরূহ বলেছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৪. অনুচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্‌তে পিঠ সোজা করে না

২৬৫. আবু মাসউদ আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রুকূ ও সাজদাহ্‌তে পিঠ স্থিরভাবে সোজা করে না তার নামাজ সহীহ হয় না।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৭০]। এ অনুচ্ছেদে আলী ইবনি শাইবান, আনাস, আবু হুরাইরা ও রিফাআহ আয-যুরাকী হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু মাসঊদের এ হাদীসটি হাসান সহীহ। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাহাদের পরবর্তীদের মত অনুসারে রুকূ এবং সাজদাহ্য় পিঠ স্থিরভাবে সোজা করিতে হইবে। ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাক বলেন, যে ব্যক্তি রুকূ-সাজদাহ্য় পিঠ স্থিরভাবে সোজা না করিবে, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হাদীসের তাৎপর্য অনুযায়ী তার নামাজ বিফল হয়ে যাবে। আবু মামার এর নাম আব্দুল্লাহ ইবনি সাখবারাহ, আবু মাসউদ আনসারী এর নাম উকবা ইবনি আমর। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৫. অনুচ্ছেদঃ রুকূ হইতে মাথা উঠানোর সময় যা বলিতে হইবে

২৬৬. আলী ইবনি আবু তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রুকূ হইতে মাথা উঠানোর সময় বলিতেনঃ

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَوَاتِ وَمِلْءَ الأَرْضِ وَمِلْءَ مَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ

“সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ্ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরযি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মাশিতা মিন শাই-ইম বাদু”।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৩৮], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে ইবনি উমার, ইবনি আব্বাস, ইবনি আবু আওফা, আবু জুহাইফা ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। একদল মনীষী এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। ঈমাম শাফি এই মত গ্রহণ করিয়াছেন এবং বলেছেন, ফরয ও অন্যান্য সব নামাযেই এই দুআ পাঠ করিতে হইবে। কোন কোন কুফাবাসী [ঈমাম আবু হানীফা ও তাহাঁর মতানুসারীগণ] বলেছেন, এই দুআ ফরয নামাযে পাঠ করিবে না, নাফল ও অন্যান্য নামাযে পাঠ করিবে। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৬. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়

২৬৭. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ ঈমাম যখন

سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ

সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে, তোমরা তখন

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ

রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বল। কেননা যার কথা ফেরেশতাহাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হইবে।

সহিহ। সহিহ আবু দাউদ-[৭৯৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহীহ। নাবী [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও তাহাদের পরবর্তীগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। তাঁরা বলেছেন, ঈমাম রুকূ হইতে উঠতে সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলবে এবং তার পেছনের লোকেরা রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলবে। ঈমাম আহমাদ এই মত দিয়েছেন। ইবনি সীরীন ও অপরাপর মনীষীগণ বলেছেন, ইমামের মত মুক্তাদীরাও সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ বলবে। ঈমাম শাফি ও ইসহাস এই মত প্রকাশ করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৭. অনুচ্ছেদঃ সিজদার সময় হাঁটু দুটি রাখার পর দুই হাত রাখতে হইবে

২৬৮. ওয়াইল ইবনি হুজর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখেছি- তিনি যখন সিজদা করিতেন তখন মাটিতে হাত রাখার আগে হাঁটু রাখতেন এবং যখন তিনি [সিজদা হইতে] উঠতেন তখন হাঁটু উঠানোর আগে হাত উঠাতেন।

যঈফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৮২]। হাসান ইবনি আলী তাহাঁর হাদীসে উল্লেখ করিয়াছেন, ইয়াযীদ ইবনি হারূন বলেছেন। আসিমের নিকট হইতে শারীক শুধু এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। আবু ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান গারীব। শারীক ছাড়া আর কেউ এ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন বলে আমাদের জানা নেই। বেশিরভাগ মনীষীই এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন এবং বলেছেন, সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে প্রথমে হাঁটু ও পরে হাত রাখতে হইবে এবং উঠার সময় আগে হাত ও পরে হাঁটু তুলতে হইবে। হাম্মাম আসিমের নিকট হইতে এ হাদীস মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন, কিন্তু তাতে ওয়াইল ইবনি হুজরের নাম উল্লেখ করেননি। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৮৮. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়বস্তু

২৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ তার নামাযে কি উটের মত ভর দিয়ে বসবে?

সহিহ। মিশকাত-হাদীস নং-[৮৯৯], ইরওয়া হাদীস নং-[২/৭৮], সহীহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৮৯]।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। কেননা এ হাদীসটি আমরা শুধুমাত্র আবুয যিনাদের সূত্রেই জেনেছি। আবদুল্লাহ ইবনি সাঈদ আল-মাকবুরী তাহাঁর পিতার সূত্রে আবু হুরাইরার নিকট হইতে এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ আল-কাত্তন ও অন্যরা আবদুল্লাহ ইবনি সাঈদ আল-মাকবুরীকে যঈফ [দুর্বল] বলেছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৮৯. অনুচ্ছেদঃ নাক ও কপাল দিয়ে সিজদা করা

২৭০. আবু হুমাইদ আস-সায়েদী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সিজদা করিতেন তখন নিজের নাক ও কপাল যমিনের সাথে লাগিয়ে রাখতেন, উভয় হাত পাঁজর হইতে আলাদা রাখতেন এবং হাতের তালু কাঁধ বরারব রাখতেন।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭২৩], মিশকাত [৮০১], সিফাতুস নামাজ [১২৩]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, ওয়াইল ইবনি হুজর ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুমাইদের হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমগণের মতে, নাক ও কপাল দিয়ে সিজদা করিতে হইবে। যদি শুধু কপাল দিয়ে সিজদা করা হয় এবং নাক মাটিতে না ঠেকান হয় তবে এক দল আলিমের মতে নামাজ হয়ে যাবে। কিন্তু অন্য দলের মতে নাক ও কপাল মাটিতে না ঠেকালে নামাজ সম্পূর্ণ হইবে না। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯০. অনুচ্ছেদঃ সিজদা সময় মুখমন্ডল কোন্ জায়গায় রাখতে হইবে

২৭১. আবু ইসহাক [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.]-কে প্রশ্ন করলামঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাজদাহ্‌তে মুখমন্ডল কোন জায়গায় রাখতেন? তিনি বলিলেন, দুই হাতের তালুর মাঝ বরাবর রাখতেন।

সহিহ। মুসলিম-[২/১৩]। এ অনুচ্ছেদে ওয়াইল ইবনি হুজর ও আবু হুমাইদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ বারাআ-এর হাদীসটি হাসান সহিহ গারীব। কোন কোন বিদ্বান এ হাদীস অনুযায়ী সাজদাহ্‌তে উভয় হাত কান বরাবর রাখার নিয়ম অবলম্বন করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯১. অনুচ্ছেদঃ সাত অঙ্গের সমন্বয়ে সিজদা করা

২৭২. আব্বাস ইবনি আবদুল মুত্তালিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছেনঃ বান্দা যখন সিজদা করে তখন তার সাথে তার [শরীরের] সাতটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সিজদা করে অর্থাৎ মুখমন্ডল, উভয় হাতরে তালু, দুই হাঁটু ও দুই পা।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৮৫], মুসলিম। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, আবু হুরাইরা, জাবির ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আব্বাসের হাদীসটি হাসান সহীহ। বিশেষজ্ঞগণ এ হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী আমল করেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী [সাঃআঃ] আদিষ্ট হয়েছেন সাত অঙ্গের সমন্বয়ে সিজদা করিতে এবং [নামাযের মধ্যে] চুল ও কাপড় না গোছাতে।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৮৪], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ হাদীসটি হাসান-সহীহ। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯২. অনুচ্ছেদঃ সাজদাহ্‌তে হাত বাহু হইতে ফাঁক করে রাখা

২৭৪. উবাইদুল্লাহ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আকরাম আল-খুযাঈ [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

তিনি [আবদুল্লাহ] বলেন, আমি আমার পিতার সাথে নামিরার সমতল ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। ইতিমধ্যে একদল সাওয়ারী [আমাদের] পার হয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করছেন। রাবী বলেন, যখন তিনি সাজদাহ্‌য় যেতেন তখন আমি তাহাঁর বগলের শুভ্রতা দেখে নিতাম।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৮১]। এ অনুচ্ছেদে ইবনি আব্বাস, ইবনি বুহাইনা, জাবির, আহমাদ ইবনি জায, মাইমূনা, আবু হুমাইদ, আবু উসাইদ, আবু মাসউদ, সাহল ইবনি সাদ, মুহাম্মাদ ইবুন মাসলামা, বারাআ ইবনি আযিব, আদী ইবনি আমীরা ও আয়েশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আহমার ইবনি জায নাবী [সাঃআঃ]-এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত।

আবু ঈসা বলেনঃ আবদুল্লাহ ইবনি আকরামের হাদীসটি হাসান। দাঊদ ইবনি কাইসের মাধ্যমেই আমরা এ হাদীসটি জেনেছি। আবদুল্লাহ ইবনি আকরাম [রাদি.]-এর নিকট হইতে নাবী [সাঃআঃ]-এর এ হাদীসটিই শুধু আমরা জানি। তিনি একটিমাত্র হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আলিমগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন [সাজদাহ্‌তে হাত এমনভাবে ছড়িয়ে রাখতে হইবে যেন বগল ফাঁক থাকে]। আবদুল্লাহ ইবনি আকরাম আয-যুহরী সাহাবী ছিলেন এবং তিনি আবু বাকার সিদ্দীক [রাদি.]-এর কাতিব [সচিব] ছিলেন। আর আবদুল্লাহ ইবনি আকরাম আল-খুযাঈ [রাদি.] রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে শুধু এ হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৩. অনুচ্ছেদঃ সঠিকভাবে সিজদা করা

২৭৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন সঠিকভাবে সিজদা করে এবং কুকুরের মত যমিনে যেন হাত বিছিয়ে না দেয়।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৯১]। এ অনুচ্ছেদে আবদুর রহমান ইবুন শিবল, বারাআ, আনাস, আবু হুমাইদ ও আয়েশা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ জাবিরের হাদীসটি হাসান সহীহ। আলিমগণ সঠিকভাবে সিজদা করার [এবং দুই সিজদা মাঝখানে বিরতি দেয়ার] প্রতি জোর দিয়েছেন এবং হিংস্র জন্তুর মত হাত মাটিতে বিছিয়ে দেয়াকে মাকরূহ বলেছেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৭৬. কাতাদা [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমি আনাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনিয়াছি, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা সঠিকভাবে সিজদা কর। তোমাদের কেউ যেন নামাযের মধ্যে কুকুরের মত যমিনে হাত বিছিয়ে না দেয়।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৯২], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। আবু ঈসা বলেনঃ এই হাদীসটি হাসান সহীহ। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৪. অনুচ্ছেদঃ সিজদা সময় যমিনে হাত রাখা এবং পায়ের পাতা খাড়া করে রাখা

২৭৭. আমির ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে তাহাঁর পিতার সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] হাত [তালু] মাটিতে রাখতে এবং পা খাড়া রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

হাসান। সিফাতুস নামাজ-[১২৬]। এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

২৭৮. বর্ণনাকারী হইতে বর্ণীতঃ

অপর এক বর্ণনায় আছে আমির ইবনি সাদ এ হাদীসটি মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। [হাসান] পূর্বের হাদীসের কারণে। এ বর্ণনা সূত্রটি ওহাইবের বর্ণনার চেয়ে বেশি সহীহ। মনীষীগণ এ হাদীস অনুযায়ী আমল করা পছন্দ করিয়াছেন।

এই হাদীসটির তাহকিকঃ হাসান হাদীস

৯৫. অনুচ্ছেদঃ রুকূ ও সিজদা হইতে মাথা তুলে পিঠ সোজা রাখা

২৭৯. বারাআ ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর নামাযের নিয়ম ছিলঃ যখন তিনি রুকূ করিতেন, যখন রুকু হইতে মাথা তুলতেন, যখন সিজদা করিতেন এবং সিজদা হইতে মাথা তুলতেন তখন এ কাজগুলোর মধ্যে সময়ের ব্যবধান প্রায় সমানই হত।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৯৮], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮০. মুহাম্মদ ইবনি বাশ্‌শার হইতে বর্ণীতঃ

মুহাম্মদ ইবনি বাশ্‌শার, তিনি মুহাম্মদ ইবনি জাফর হইতে, তিনি শুবা হইতে তিনি হাকাম হইতে, তিনি স্বীয় সনদে পূর্বের হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

আবু ঈসা বলেনঃ বারাআর হাদীসটি হাসান সহিহ। বিশেষজ্ঞ আলিমগণ উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

৯৬. অনুচ্ছেদঃ ইমামের সাথে সাথে রুকূ-সাজদাহ্য় যাওয়া ভাল নয়

২৮১. আবদুল্লাহ ইবনি ইয়াযীদ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমাদেরকে বারাআ [রাদি.] বলেছেন আর তিনি মিথ্যাবাদী নন। আমরা যখন রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে নামাজ আদায় করতাম, তখন তিনি রুকূ হইতে মাথা তুলার পর সাজদাহ্‌য় যাওয়ার আগে আমাদের কেউই নিজ নিজ পিঠ [সিজদা জন্য] ঝুঁকিয়ে দিত না। তিনি সাজদাহ্‌য় যাওয়ার পর আমরা সাজদাহ্‌য় যেতাম।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৬৩১-৬৩৩], বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ। এ অনুচ্ছেদে আনাস, মুআবিয়া, ইবনি মাসআদা ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ বারাআর হাদীসটি হাসান সহিহ। আলিমগণ বলেছেন, মুক্তাদীগণ ইমামের প্রতিটি কাজে তাকে অনুসরণ করিবে এবং ঈমাম রুকূতে যাওয়ার পর তারা রুকূতে যাবে, তার মাথা তুলার পর তারা মাথা তুলবে। এ ব্যাপারে বিদ্বানদের মধ্যে কোন মতের অমিল আছে বলে আমাদের জানা নেই। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৭. অনুচ্ছেদঃ দুই সিজদার মঝখানে ইক্আ করা মাকরুহ

২৮২. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ হে আলী! আমি নিজের জন্য যা ভাল মনে করি তোমার জন্যও তা হিত মনে করি এবং আমার নিজের জন্য যা অপছন্দ করি তা তোমার জন্যও অপছন্দ করি। তুমি দুই সিজদার মাঝে ইকআ রীতিতে বস না।

যইফ, ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৯৪, ৮৯৫] আবি ঈসা বলেনঃ আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত এই হাদীসটি শুধুমাত্র আবু ইসহাক হইতে হারিসের সুত্রে জানতে পেরেছি। কোন কোন জ্ঞানি ব্যক্তি এ হাদীসের রাবী হারিসকে যঈফ বলেছেন। বেশিরভাগ বিদ্বান এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন এবং ইক্‌আ পদ্ধতিতে বসা মাকরুহ বলেছেন। এ অনুচ্ছেদে আইশা, আনাস আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও বর্ণিত আছে। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

৯৮. অনুচ্ছেদঃ ইক্বআর অনুমতি

২৮৩. তাউস [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে ইক্বআ সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বলিলেন, এটা সুন্নাত। আমরা বললাম, এতে আমরা পায়ে ব্যথা পাই। তিনি আবার বলিলেন, এটা তোমাদের রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সুন্নাত।

সহিহ। সহিহ আবু দাঊদ হাদীস নং-[৭৯১], মুসলিম। আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান সহিহ। কিছু জ্ঞানী সাহাবা [রাদি.] এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন। তাঁরা ইক্বআয় [দুই পায়ের পাতা খাড়া রেখে তার উপর নিতম্ব রেখে বসাতে] কোন সমস্যা দেখেন না। মক্কার কোন কোন ফিক্‌হবিদেরও এই মত। কিন্তু বেশিভাগ বিদ্বান দুই সিজদা মাঝখানে এভাবে বসা মাকরূহ মনে করেন। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

৯৯. অনুচ্ছেদঃ দুই সিজদা মাঝে বিরতির সময় যা পাঠ করিতে হইবে

২৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

নাবী [সাঃআঃ] দুই সিজদা মাঝখানে বলিতেন,

 اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي

আল্লাহুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজবুরনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুকনী।

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮৯৮]। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

২৮৫. হাসান ইবনি আলী আল-খাল্লাল আল-হুলওয়ানী হইতে বর্ণীতঃ

তিনি ইয়াযিদ ইবনি হারুন হইতে, তিনি যাইদ ইবনি হুবাব হইতে, তিনি আবুল আলা কামিল হইতে স্বীয় সনদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

আবু ঈসা বলেনঃ এ হাদীসটি গারীব। আলী [রাদি.] হইতে একই রকম হাদীস বর্ণিত আছে। ঈমাম শাফি, আহমাদ ও ইসহাক এ হাদীসের সমর্থক। তাঁরা ফরয, নফল সব নামাযে এ দুআ পাঠ করা জায়িয বলেছেন। কেউ কেউ এ হাদীসটি আবুল আলা কামিল হইতে মুরসাল হিসাবে বর্ণনা করিয়াছেন। এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়

১০০. অনুচ্ছেদঃ সিজদার সময় কিছুতে ভর দেওয়া

২৮৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নাবী কারিম [সাঃআঃ]-এর সাহাবাগন তাহাঁর নিকট অভিযোগ করলেনঃ যখন তারা সিজদায় যান তখন কনুই পৃথক রাখতে তাহাদের খুব অসুবিধা হয়। তিনি বলেনঃ হাঁটুর সাথে কনুই ঠেকিয়ে সাহায্য নাও।

যঈফ, যঈফ আবু দাউদ[১৬০]। আবু ঈসা বলেন এ হাদীসটী গারিব। এ হাদীসটি আমরা আবু সালিহের সনদ পরম্পরায় লাইসের মাধ্যমে ইবনি আজলানের সুত্রেই জানতে পেরেছি। নুমান ইবনি আবু আইয়াশও এরকম হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। লাইসের বর্ণনা চাইতে এই বর্ণনা বেশি সহিহ। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস

১০১. অনুচ্ছেদঃ সাজদাহ্‌ হইতে উঠার নিয়ম

২৮৭. মালিক ইবনি হুয়াইরিস আল-লাইসী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি নাবী [সাঃআঃ]-কে নামাজ আদায় করিতে দেখেছেন। তিনি যখন নামাযের বেজোর রাকআতে থাকতেন তখন [সাজদাহ্‌ হইতে উঠে] সোজা হয়ে না বসা পর্যন্ত [পরবর্তী রাকআতের জন্য] দাঁড়াতেন না।

সহিহ। ইরওয়া হাদীস নং-[২/৮২-৮৩], সিফাতুস নামাজ-[১৩৬], বুখারী। আবু ঈসা বলেনঃ মালিক ইবনি হুযাইরিসের হাদীসটি হাসান সহিহ। কোন কোন বিদ্বান এ হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন। ঈমাম ইসহাক [রঃ] ও আমাদের কিছু সঙ্গীরা এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। মালিকের উপনাম আবু সুলাইমান। রুকু ও সিজদার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

১০২. অনুচ্ছেদঃ একই বিষয়

২৮৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাযে [সিজদা হইতে ] নিজের পায়ের তালুতে [ভর দিয়ে] দাঁড়িয়ে যেতেন।

যঈফ, ইরওয়া ৩৬২। আবু ঈসা বলেন, বিদ্বানগন আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদীসের উপর আমল করিয়াছেন। তারা নামাযের মধ্যে [সিজদা হইতে ] পায়ের পাতার উপর দাঁড়ানোই মনঃপূত করিয়াছেন। হাদীস বিশারদদের মতে খালিদ ইবনি আইয়াশ একজন যঈফ রাবী। তাকে খালিদ ইবনি ইয়াসও বলা হয়। আর সালিহ তিনি হলেন সালিহ ইবনি আবু সালিহ। আবু সালিহের নাম নাবহান, তিনি মদীনার অধিবাসী। এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস


by

Comments

Leave a Reply