মারইয়াম পুত্র ঈসা [‘আ] ও মাসীহিদ দাজ্জাল – এর বর্ণনা

মারইয়াম পুত্র ঈসা [‘আ] ও মাসীহিদ দাজ্জাল – এর বর্ণনা।

মারইয়াম পুত্র ঈসা [‘আ] ও মাসীহিদ দাজ্জাল – এর বর্ণনা। >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৭৫. অধ্যায়ঃ মারইয়াম পুত্র ঈসা [‘আ] ও মাসীহিদ দাজ্জাল – এর বর্ণনা।

৩১৪. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুলাহ [সাঃআ:] বলেন, একরাতে [স্বপ্নে] আমি কাবা শরীফের কাছে আমাকে দেখিতে পেলাম। গোধুম [গম] বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের যত লোক তোমরা দেখেছ তিনি ছিলেন তাহাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর।ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল ছিল তাহাঁর। তিনি এ চুল আচড়িয়ে রেখেছেন আর তা থেকে পানি ঝরছিল। দুজনের উপর বা বর্ণনাকারী বলেন, দুজনের কাধের উপর ভর করে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হলো ইনি মাসীহ ইবনি মারইয়াম। {৭৪} তারপর দেখি আরেক ব্যক্তি, অধিক কোকড়ানো চুল, ডান চক্ষুটি টেরা যেন একটি আঙুর ফুলে আছে। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, মাসীহুদ দাজ্জাল। {৭৫}

[ই.ফা. ৩২২; ই.সে. ৩৩৩]

{৭৪} ঈসা আ কে এজন্য মাসীহ বলা হয় যে, যখন তিনি কোন অসুস্থ ব্যক্তির উপর হাত ফিরাতেন তখন সে ভাল হয়ে যেত এবং কেউ কেউ বলেন যে, তাহাঁর পায়ের তলা বরাবর ছিল, গভীর ছিলনা। এজন্য মাসীহ বলা হয়েছে আরো অনেকেই বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং দাজ্জালকেও মাসীহ বলা হয়েছে। এজন্য যে, তাহাঁর চক্ষু বসা হইবে ও ডান চক্ষু কানা হইবে। আবার কেউ বলেছেন, শেষ যুগে যখন সে বের হইবে তখন সারা দুনিয়া বিচরন করিবে। যার জন্য তাকে মাসীহ বলা হয়েছে। [সংক্ষিপ্ত নাবাবী]

{৭৫} ইবনি উমার [রাযিঃ] এর বর্ণিত এ হাদীস থেকে এটাই প্রমানিত হয় যে, ঈসা [আ:]-এর তাওয়াফের ঘটনা নবি [সাঃআ:] এর স্বপ্নযোগে ছিল। কেননা, এ হাদীসে দাজ্জালের তাওয়াফ করার বর্ণনাও এসেছে। যদিও সহিহ হাদীস হতে প্রমান আছে যে, দাজ্জাল মাক্কাহ ও মাদীনায় প্রবেশ করিতে পারবেনা। কাযী ইয়ায [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন যে, সম্ভবত এর ব্যাখ্যা এ হতে পারে যে, দাজ্জালের মাক্কাহ ও মাদীনায় প্রবেশ করিতে না দেয়া ওই যুগের সাথে খাস যখন সে ফাসাদে লিপ্ত হইবে।

৩১৫. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদিন রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর সহাবাদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বলিলেন, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা টেরা চোখ বিশিষ্ট নন। জেনে রাখ দাজ্জালের ডান চোখ টেরা যেন ফোলা একটি আঙ্গুর। ইবনি উমার [রাঃআ:] বলেন, রসুলুল্লাহ [সাআল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বলিলেন, একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কাবার কাছে পেলাম। গোধুম বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ তিনি ছিলেন তাহাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। চুল তাহাঁর কাধ পর্যন্ত ঝুলছিল। তাহাঁর চুলগুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দু ব্যক্তির কাধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হলো, ইনি মাসীহ ইবনি মারইয়াম। তাহাঁরই পেছনে দেখলাম, আরেক ব্যক্তি, অধিক কোকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখিতে ছিল ইবনি কাতান-এর ন্যায়। সেও দু ব্যক্তির কাধে হাত রেখে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিল। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, মাসিহুদ দাজ্জাল।

[ই.ফা. ৩২৩; ই.সে. ৩৩৪]

৩১৬. ইবনি উমার [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি স্বপ্নযোগে কাবার নিকটে খাড়া চুল বিশিষ্ট বাদামী রংয়ের এক ব্যক্তিকে দুজন লোকের কাধের উপর হাত রাখা অবস্থায় দেখেছি। তাহাঁর মাথা থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছিল অথবা বলেছেন, ফোটা ফোটা পানি পড়ছিল। আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? লোকেরা বললো, ঈসা ইবনি মারইয়াম [আ:] অথবা বলেছেন, আল মাসীহ ইবনি মারইয়াম [আ:]। সালিম বলেন, ইবনি উমার [রাযি] সঠিকভাবে অবগত নন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] কোনটি বলেছেন। তবে তিনি এ কথাও বলেছেন যে, তাহাঁর পেছনে আমি এমন ব্যক্তিকেও দেখেছি, যে রক্তবর্ণের, স্থুল দেহী, মাথার চুল কোকড়ানো, ডান চোখ কানা, আকৃতিতে আমার দেখা [কাফির] ইবনি কাতানের সাথে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। আমি জানতে চাইলাম, এ লোকটি কে? তারা বলিলেন, এ হলো মাসীহে দাজ্জাল।

[ই.ফা. ৩২৪; ই.সে. ৩৩৫]

৩১৭. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, [মিরাজের সংবাদে] কুরায়শরা আমাকে মিথ্যাবাদি বলে অপবাদ দিল। তখন আমি হাজরে আসওয়াদের পাশে দাঁড়ালে আল্লাহ্‌ তাআলা আমার সম্মুখে বাইতুল মাকদাসকে তুলে ধরেন, আর আমি চোখে দেখেই তাহাঁর সকল সকল নিদর্শনাবলী উল্লেখ করে যেতে লাগলাম।

[ই.ফা. ৩২৫, ই, সে, ৩৩৬]

৩১৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে বলিতে শুনিয়াছি যে, একদিন আমি ঘুমিয়েছিলাম। তখন দেখি যে, আমি কাবা তাওয়াফ করছি। বাদামী বর্ণের মধ্যমাকৃতির এক ব্যক্তিকে সেখানে দেখলাম। তাহাঁর চুল গুলো ছিল সোজা। তিনি দুজনের কাধে ভর করে তওয়াফ করছেন। আর তাহাঁর মাথা হতে টপটপ করে পানি ঝরছে। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] হয়তো অথবা শব্দ ব্যবহার করিয়াছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হয় ইনি ইবনি মারিয়াম [আ:]। তারপর আমি চোখ ফিরিয়ে তাকালাম; লোহিত বর্ণের মোটা এক ব্যক্তিকে দেখলাম, তাহাঁর চুলগুলো ছিল কোঁকড়ানো। তার চোখ ছিল টেরা, যেন একটি ফোলা আঙ্গুর। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হলো, এ হলো দাজ্জাল। তার নিকটতম সদৃশ হলো ইবনি কাতান।

[ই, ফা.৩২৬, ই সে.৩৩৭]

৩১৯. আবু হুরাইরাহ [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, আমি হাজরে আসওয়াদ এর নিকট ছিলাম। এ সময় কুরায়শরা আমাকে আমার মিরাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করিতে শুরু করে। তারা আমাকে বাইতুল মাকদাসের এমন সব বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করিতে লাগল যা আমি ভালভাবে দেখিনি। ফলে আমি খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লাম।রসূল [সাঃআ:] বলেন, তারপর আল্লাহ্‌ তাআলা আমার সামনে বাইতুল মাকদাসকে উদ্ভাসিত করে দিলেন এবং আমি তা দেখছিলাম। তারা আমকে যে প্রশ্ন করছিল তাহাঁর জবাব দিতে লাগলাম। এরপর নবিদের এক জামাআতে ও আমি নিজেকে উদ্ভাসিত দেখলাম। মূসা [আ:]-কে সালাতে দণ্ডায়মান দেখলাম। তিনি শানূয়াহ গোত্রের লোকদের ন্যায় মধ্যমাকৃতি। তাহাঁর ছুল ছিল কোঁকড়ানো। ঈসা [আ:]-কে ও সালাতে দাঁড়ানো দেখলাম। তিনি তোমাদের এ সাথীর মতই দেখিতে অর্থাৎ মুহাম্মাদ [সাঃআ:]-এর মত। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, তারপর সলাতের সময় হলো, আমি তাঁদের ইমামত করলাম। সলাত শেষে এক ব্যক্তি আমাকে বলিলেন, হে মুহাম্মাদ [সাঃআ:] ! ইনি জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়ক মালিক ওকে সালাম করুন। আমি তাহাঁর দিকে তাকালাম। তিনি আমাকে আগেই সালাম করিলেন।

[ই.ফা. ৩২৭; ই.সে. ৩৩৮]


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply