চুরি, মদ্যপান ও ব্যভিচারের শাস্তি
চুরি, মদ্যপান ও ব্যভিচারের শাস্তি >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
১. অধ্যায়ঃ চুরির শাস্তি ও তার পরিমাণ
২. অধ্যায়ঃ সম্ভ্রান্ত চোর এবং অন্যান্যদের হাত কাটা এবং হুদূদ [শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি]- এর ব্যাপারে সুপারিশ নিষিদ্ধ
৩. অধ্যায়ঃ ব্যভিচারের শাস্তি
৪. অধ্যায়ঃ ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজে ব্যভিচার স্বীকার করে
৬. অধ্যায়ঃ ইয়াহুদী জিম্মী ব্যভিচারীকে রজম করা
৭. অধ্যায়ঃ প্রসূতিদের হদ্দ- এর ব্যাপারে বিলম্ব করা
৮. অধ্যায়ঃ মদ্যপানের শাস্তি
৯. অধ্যায়ঃ তাযীর {২৮} –এর বেত্রাঘাতের পরিমাণ
১০. অধ্যায়ঃ হুদূদ তথা শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট দণ্ড কার্যকরে অপরাধীর পাপ ক্ষমা হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে
১১.অধ্যায়ঃ কোন জন্তুর আঘাতে কেউ আহত বা নিহত হলে, কিংবা খনি বা কূপে পড়ে গিয়ে আহত বা নিহত হলে এতে কোন দিয়্যাত বা ক্ষতিপূরণ আবশ্যক হইবে না।
১. অধ্যায়ঃ চুরির শাস্তি ও তার পরিমাণ
৪২৯০. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এক চতুর্থাংশ দীনার অথবা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ মূল্যের মাল চুরির দায়ে চোরের হাত কাটতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫১, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫১]
৪২৯১. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উক্ত সানাদে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫২, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫২]
৪২৯২. আয়েশাহ [রাদি.] এর সূত্রে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেনঃ এক চতুর্থাংশ দীনার অথবা এর অধিক মূল্যের মাল চুরি ব্যতীত চোরের হাত কর্তন করা যাবে না।
[ই ফা ৪২৫৩, ই সে ৪২৫৩]
৪২৯৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- কে বলিতে শুনেছেন, এক দীনারের চার ভাগের একভাগ অথবা এর বেশি মূল্যের সম্পদ চুরি ব্যতীত চোরের হাত কাটা যাবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৪, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫৪]
৪২৯৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলিতে শুলেছেন, এক দীনারের চার ভাগের এক ভাগ অথবা এর বেশি মূল্যের মাল চুরি ব্যতীত চোরের হাত কাটা যাবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৫, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫৫]
৪২৯৫. ইয়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
য়াযীদ ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি হাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৬, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫৬]
৪২৯৬. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সময়ে একটি ঢালের মূল্যের কম সম্পদ চুরির অপরাধে চোরের হাত কাটা হতো না। [আরবী] শব্দের অর্থ [আরবী] হাজাফাহ্ বা তুরস উভয় শব্দের অর্থই আত্মরক্ষার মূল্যবান ঢাল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৭, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫৭]
৪২৯৭. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে উল্লেখিত বর্ণিত হাদীসটি হুমায়দ ইবনি আবদুর রহমান রুওয়াসী হইতে ইবনি নুমায়র অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আবদুর রহীম এবং আবু উসামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] – এর হাদীসে [আরবী] [তা তখনকার দিনে মূল্যবান বস্তু] এটুকু অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৮, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৫৮]
৪২৯৮. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] একটি ঢাল চুরির অপরাধে এক চোরের হাত কেটে দেন। ঢালটির মূল্য ছিল তিন দিরহাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৫৯, ইসলামিক সেন্টার-৪২৫৯]
৪২৯৯. ইবনি উমর [রাদি.] সূত্রে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত মালিক [রাদি.]– এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাঁদের মধ্য থেকে কেউ কেউ [আরবী] [তার মূল্য] শব্দটি উল্লেখ করিয়াছেন এবং কেউ কেউ [আরবী] [সেটার মূল্য তিন দিরহাম] উল্লেখ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬০, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬০]
৪৩০০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা অভিসম্পাত করেন সে চোরের উপর, যে একটি ডিম [বা ডিমের মূল্যের পরিমাণ বস্তু] চুরি করিল। এতে তার হাত কাটা যাবে। আর যে ব্যক্তি একটি দড়ি [কিংবা দড়ির মূল্যের পরিমান বস্তু] চুরি করিল, তারও হাত কাটা যাবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬১, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬১]
৪৩০১. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
এ সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি [আরবী] [যদিও সে দড়ি চুরি করে এবং ডিম চুরি করে] কথাটি অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬২, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬২]
২. অধ্যায়ঃ সম্ভ্রান্ত চোর এবং অন্যান্যদের হাত কাটা এবং হুদূদ [শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি]- এর ব্যাপারে সুপারিশ নিষিদ্ধ
৪৩০২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাখযূমী গোত্রের একজন মহিলা চুরি করলে তার [প্রতি হদ প্রয়োগের ব্যাপারে] কুরায়শগণ চিন্তান্বিত হয়ে পড়লো। তাঁরা বলিল, কে এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর কাছে কথা বলিতে [সুপারিশ করিতে] পারে? তখন তাঁরা বলিলেন, এ ব্যাপারে উসামাহ [রাদি.] ব্যতিত আর কারো হিম্মত নেই। তিনি হলেন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর প্রিয় ব্যক্তি। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর সাথে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলিলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ্দের ব্যাপারে সুপারিশ করিতে চাও? অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণ ধ্বংস হয়েছে এ কারণে যে, তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যদি কোন দুর্বল লোক চুরি করতো, তবে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদ– এর কন্যা ফাতিমাহ্-ও চুরি করতো, তবুও নিশ্চয়ই আমি তার হাত কেটে দিতাম।
ইবনি রুমহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত অপর এক হাদীসে নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে বাক্যটি অতিরিক্ত বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৩, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬৩]
৪৩০৩. রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সহধর্মিণী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
কুরায়শরা এক মহিলার ব্যাপারে চিন্তিত হয়ে পড়লো, যে মহিলাটি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর সময়কালে মাক্কাহ্ বিজয়ের সময় চুরি করেছিল। তখন তাঁরা বলিল, এ ব্যাপারে কে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর নিকট কথা [সুপারিশ] বলবে? তখন তাঁরা বলিল, এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর প্রিয়পাত্র উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] ব্যতীত আর কার হিম্মত থাকতে পারে? তিনি হলেন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর খুবই প্রিয় পাত্র। অতঃপর উক্ত মহিলাকে নিয়ে উসামাহ্ ইবনি যায়দ [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর নিকটে এসে তার ব্যাপারে কথা বলিলেন। এতে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর মুখমন্ডল বিবর্ণ হয়ে গেল। তখন তিনি বললেনঃ তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হদ-এর ব্যাপারে সুপারিশ করিতে চাও? তখন উসামাহ [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল। আমার জন্য [আল্লাহর কাছে] ক্ষমা প্রার্থনা করুন। যখন সন্ধ্যা হল তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- দন্ডায়মান হয়ে এক ভাষণ দিলেন। প্রথমে তিনি আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করিলেন, অতঃপর বললেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগণকে ধ্বংস করা হয়েছে এজন্য যে, যখন তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করতো, তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে হীন লোক চুরি করতো, তখন তার উপর হদ প্রয়োগ করতো। সে মহান আল্লাহর কসম! যাঁর হাতে আমার জীবন! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতিমাহ্ও চুরি করতো, তবে অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর যে মহিলা চুরি করেছিল, তিনি তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। সুতরাং তার হাত কেটে দেয়া হল।
ইউনুস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণনা করেন যে, অতঃপর সে মহিলা খাঁটিভাবে তাওবাহ্ করিল এবং এরপরে তার বিয়ে হলো। আয়িশা [রাদি.]….. বলেন, এ ঘটনার পর ঐ মহিলা প্রায়ই আমার কাছে আসতো। তাহাঁর কোন প্রয়োজন থাকলে আমি তা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর কাছে তুলে ধরতাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৪, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬৪]
৪৩০৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক মাখযুমী মহিলা বিভিন্ন ঋণ নিয়ে পরে সে তা অস্বীকার করতো। এতে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার হাত কাটার নির্দেশ দিলেন। এরপর সে মহিলার পরিবারবর্গ উসামাহ্ [রাদি.]- এর কাছে এসে এ ব্যাপারে কথোপকথন করলো। তিনি এ ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর সঙ্গে কথা বলিলেন। অতঃপর তিনি লায়স ও ইউনুস [রাদি.]….. এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৫, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৪৫]
৪৩০৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা এক মাখযূমী মহিলা চুরি করিল। অতঃপর তাকে [নিয়ে এসে] নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর সহধর্মিণী উম্মু সালামার মাধ্যমে ক্ষমা চাইলো। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন বললেনঃ যদি ফাতিমাহ্ও চুরি করতো, তবে আমি তার হাত কেটে দিতাম। এরপর মহিলাটির হাত কেটে দেয়া হল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৬, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬৬]
৩. অধ্যায়ঃ ব্যভিচারের শাস্তি
৪৩০৬. উবাদাহ্ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেনঃ তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর, তোমরা আমার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করিয়াছেন। যদি কোন অবিবাহিত পুরুষ কোন কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে তবে একশ বেত্রাঘাত কর এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন দাও। আর যদি বিবাহিত ব্যক্তি কোন বিবাহিতা মহিলার সঙ্গে ব্যভিচার করে, তবে তাদেরকে প্রথমত একশ বেত্রাঘাত করিবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৭, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬৭]
৪৩০৭. নসূর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উক্ত সানাদে অনুরূপ বর্ণনা করেছন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৬৮, ইসলামিক সেন্টার-৪২৬৮]
৪৩০৮. উবাদাহ্ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর ওপর যখন ওয়াহী অবতীর্ণ হতো, তখন তাঁকে ক্লান্ত মনে হতো এবং তাহাঁর মুখমণ্ডলে ক্লান্তির চিহ্ন ফুটে উঠত। বর্ণনাকারী বলেন, একদা যখন তাহাঁর ওপর ওয়াহী অবতীর্ণ হলো তখন তাহাঁর অবস্থা ঐরূপ হলো। এরপর যখন অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল, তখন তিনি বললেনঃ তোমরা আমার কাছ হইতে শিক্ষা গ্রহণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মহিলাদের জন্য একটি পন্থা বের করে দিয়েছেন। যদি কোন বিবাহিত পুরুষ কোন বিবাহিতা মহিলার সাথে এবং কোন অবিবাহিত পুরুষ কুমারী মেয়ের সাথে ব্যভিচার করে, তবে বিবাহিত ব্যক্তিকে একশ বেত্রাঘাত করিবে, এরপর পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করিবে। আর অবিবাহিত পুরুষ বা মহিলাকে একশ বেত্রঘাত করিবে, এরপর তাদেরকে এক বছরের জন্য নির্বাসন দেবে।
[ই.ফা ৪২৬৯, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৬৯]
৪৩০৯. কাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তাদের উভয়ের বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, [আরবী] { অবিবাহিত [পুরুষ বা মহিলা]-কে বেত্রাঘাত করা হইবে এবং নির্বাসন দেয়া হইবে। আর বিবাহিত [পুরুষ বা মহিলা] –কে প্রথমতঃ বেত্রাঘাত করা হইবে এরপর পাথর মেরে হত্যা করা হইবে}। কিন্তু তিনি [আরবী] [এক বছর ও একশ] এ কথাটি তাহাঁর হাদীসে উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭০, ইসলামিক সেন্টার- ৪২৭০]
৪. অধ্যায়ঃ ব্যভিচারের জন্য বিবাহিতকে রজম করা
৪৩১০. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, উমর ইবনি খাত্তাব [রাদি.] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর মিম্বারের উপর বসা অবস্থায় বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-কে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন এবং তাহাঁর উপর কিতাব [কুরআন] অবতীর্ণ করিয়াছেন। আল্লাহ্র নাযিলকৃত বিষয়ের মধ্যে [আরবী] [ব্যভিচারের জন্য পাথর নিক্ষেপের আয়াত] রয়েছে। তা আমরা পাঠ করেছি, স্মরণ রেখেছি এবং হৃদয়ঙ্গম করেছি। সুতরাং রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ব্যভিচারের জন্য রজম করার হুকুম বাস্তবায়ন করিয়াছেন। তাহাঁর পরবর্তী সময়ে আমরাও [ব্যভিচারের জন্য] রজমের হুকুম বাস্তবায়িত করেছি। আমি ভয় করছি যে, দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর কেউ এ কথা হয়তো বলবে যে, আমারা আল্লাহর কিতাবে [ব্যভিচারের শাস্তি] রজমের নির্দেশ পাই না। তখন আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত এ ফরয কাজটি পরিত্যাগ করে তারা মানুষদেরকে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। নিশ্চয়ই আল্লাহর কিতাবে বিবাহিত নর-নারীর ব্যভিচারের শাস্তি [আরবী] [পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা]-এর হুকুম সাব্যস্ত। যখন সাক্ষ্য দ্বারা তা প্রমাণিত হয়, কিংবা গর্ভবতী হয়, অথবা সে নিজে স্বীকার করে। {২৬}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭১, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭১]
{২৬} এ আয়াতটি তিলাওয়াত মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে কিন্তু আয়াতটির হুকুম এখনো বহাল রয়েছে ।
৪৩১১. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উক্ত সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭২, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭২]
৫. অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি নিজে ব্যভিচার স্বীকার করে
৪৩১২. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মুসলিমদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এলো। তখন তিনি মাসজিদে বসে ছিলেন। সে তখন উচ্চৈঃস্বরে বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]! আমি ব্যভিচার করেছি। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। সে লোকটি তাহাঁর [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] -এর চেহারার দিকে গিয়ে বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে চারবার স্বীকারোক্তি প্রদান করিল। এরপর সে যখন চারবার নিজের উপর সাক্ষ্য দিল, তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে ডাকলেন এবং বলিলেন, তোমার মধ্যে কি পাগলামী আছে? সে বলিল, না। তুমি কি বিবাহিত? সে বলিল, হ্যাঁ। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তোমরা তাকে নিয়ে যাও এবং পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা কর।
ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] থেকে যিনি হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন তিনি আমার কাছে বলেন যে, জাবির [রাদি.] বলেছেন, পাথর নিক্ষেপকারীদের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। আমারা তখন তাকে [ঈদের] নামাজ পড়ার স্থানে পাথর নিক্ষেপ করলাম। যখন তার উপর পাথর পড়তে লাগল তখন সে পলায়ন করিল। আমরা তাকে হার্রা নামক স্থানে ধরে ফেললাম এবং পাথর মেরে হত্যা করলাম।
[ই. ফা ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৩]
৪৩১৩. মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন যে, লায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও আবদূর রহমান বিন খালিদ বিন মুসাফিরের মাধ্যমে ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ই. ফা ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৩]
৪৩১৪. আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান দারিমী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবুল ইয়ামান এবং শুআয়বের মাধ্যমে যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বরাতে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস শুনিয়েছেন। আর উভয়ের বর্ণিত হাদীসে ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন যে, আমার নিকট এমন এক ব্যক্তি হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, যিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] থেকে হাদীস শ্রবণ করিয়াছেন, যেমন উল্লেখ করিয়াছেন উকায়ল [রাদি.]।
[ই. ফা ৪২৭৩, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৪]
৪৩১৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] সূত্রে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ
এভাবে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন যেভাবে উকায়ল যুহরীর মাধ্যমে আবু হুরাইরার বরাতে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে থেকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭৪, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৫]
৪৩১৬. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মাইয ইবনি মালিক [রাদি.]-কে দেখলাম, যখন তাকে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট আনা হলো। তিনি ছিলেন বেঁটে প্রকৃতির সুঠাম দেহের অধিকারী। তাহাঁর গায়ে কোন চাদর ছিল না। তিনি নিজেই চারবার স্বীকারোক্তি করিলেন যে, তিনি ব্যভিচার করিয়াছেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তুমি হয়তো [শুধু চুমু খেয়েছ অথবা স্পর্শ করেছ] তখন তিনি উত্তরে বলিলেন, না, আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়ই এ হতভাগা ব্যভিচার করেছে। পরিশেষে তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপ করার আদেশ করিলেন। এরপর তিনি এক ভাষণ প্রদান করে বললেনঃ সাবধান! আমরা যখন আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে গমন করি, তখন কেউ কেউ পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের ন্যায় আওয়াজ করে [-অর্থাৎ ছাগল যেমন সঙ্গমের সময় উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ করে তদ্রুপ] আর তাদেরকে সে অল্প দুধ দেয়। [-অর্থাৎ সঙ্গম করে, দুধের অর্থ বীর্য।] আল্লাহর শপথ! যদি আল্লাহ আমাকে এ শ্রেণীর কোন লোকের উপর ক্ষমতা প্রদান করেন, তবে আমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দেব। [যেন অন্যেরা তার থেকে উপদেশ গ্রহণ করিতে পারে।]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭৫, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৬]
৪৩১৭. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এক ব্যক্তিকে আনা হলো। তিনি ছিলেন বেঁটে আকৃতির, চুল ছিল অবিন্যস্ত এবং বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী। তার গায়ে ছিল একটি চাদর। তিনি ব্যভিচার করেছিলেন। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুবার তার স্বীকারোক্তি প্রত্যাখ্যান করিলেন। এরপর তার ব্যাপারে আদেশ দিলেন, তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেনঃ তোমরা জেনে রেখো; আমরা যখনই আল্লাহর পথে জিহাদের উদ্দেশে বের হই, তখন তোমাদের মধ্য হইতে কেউ না কেউ পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের ন্যায় আওয়াজ করে। সে তখন কোন নারীকে অল্প দুধ প্রদান করে। [অর্থাৎ-ব্যভিচার করে] নিশ্চয় আল্লাহ যদি আমাকে তাদের কারো উপর শক্তি দেন, তবে আমি তাকে এমন শাস্তি প্রদান করবো যা অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে।
বর্ণনাকারী বলেন, আমি এ হাদীসই সাঈদ ইবনি জুবায়র [রাদি.]-এর নিকট বর্ণনা করলাম। তখন তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঐ ব্যক্তির স্বীকারোক্তি চারবার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭৬, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৭]
৪৩১৮. আবু বাকর ইবনি আবু শাইবাহ্ ও ইসহাক্ ইবনি ইব্রাহীম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ….. উভয়েই জাবির ইবনি সামুরা [রাদি.] সূত্রে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি জাফার [রাদি.]-এর হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আর শাবাবা [রাদি.]-ও তাহাঁর বাণী [আরবী] [তিনি তার স্বীকারোক্তি দুবার প্রত্যাখ্যান করেন]-এর সাথে একমত হয়েছেন। আবু আমির [রাদি.]-এর অপর এক হাদীসে [আরবী] [তিনি তাহাঁর স্বীকারোক্তি দুবার অথবা তিনবার প্রত্যাখ্যান করিয়াছেন] বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৭৭, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৮]
৪৩১৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মাইয ইবনি মালিক [রাদি.] -কে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার সম্পর্কে আমার কাছে যে সংবাদ এসেছে তা সত্য কিনা? তিনি বলিলেন, আমার সম্পর্কে আপনার কাছে কী সংবাদ পৌঁছছে? তখন তিনি বলিলেন, আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, তুমি অমুক বংশের কোন এক দাসীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছ। তিনি উত্তরে বলিলেন, হ্যাঁ। এরপরে তিনি এ ব্যাপারে চারবার সাক্ষ্য দিলেন অর্থাৎ- স্বীকারোক্তি দিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর ব্যাপারে আদেশ দিলেন। তাকে তখন পাথর মারা হলো।
[ই. ফা ৪২৭৮, ইসলামিক সেন্টার-৪২৭৯]
৪৩২০. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আসলাম গোত্রের মাইয ইবনি মালিক নামক এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এসে বলিল, আমি তো এক গর্হিত কাজ করে ফেলেছি। অতএব এর জন্য আমার উপর শারীআতের বিধান প্রয়োগ করুন। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাহাঁর এ স্বীকারোক্তি কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি ঐ ব্যক্তির স্বগোত্রীয় লোকের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করিলেন। তাঁরা বলিল, আমারা তো তার সম্বন্ধে কোন খারাপ জানি না। কিন্তু হঠাৎ করেই সে এমন অন্যায় কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। সে এখন ভাবছে যে, তার প্রতি হদ [আরবী] শারীআতের বিধান প্রয়োগ ব্যতীত তার আর কোন নিষ্কৃতি নেই। বর্ণনাকারী বলেন যে, তখন সে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট ফিরে এল। তখন তিনি তাকে পাথর নিক্ষেপের জন্য আমাদের নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমারা তখন তাকে বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে নিয়ে চললাম। আমরা তাকে বাঁধলাম না এবং মাটিতে পুঁতলামও না। এরপর আমরা তাঁকে হাড়, মৃত্তিকা, ঢিলা এবং ইট মারতে শুরু করলাম। হঠাৎ সে দৌঁড়ে পালাল, আমরাও তার পিছনে ছুটলাম। অবশেষে সে হাররাহ্ নামক স্থানে উপনীত হলো। আমারা তথায় তাকে ধরলাম এবং পাথর নিক্ষেপ করলাম। পরিশেষে সে নিশ্চল হয়ে গেল অর্থাৎ- মরে গেল। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ সন্ধ্যাবেলায় কিছু বলার উদ্দেশ্যে দণ্ডায়মান হলেন এবং বলিলেন, আমরা যখনই আল্লাহর পথে যখন যুদ্ধে গমন করি তখন কোন না কোন ব্যক্তি আমাদের পরিবার-পরিজনদের মাঝে থেকে যায় এবং ছাগলের শব্দের ন্যায় আওয়াজ করে। আমার উপর কর্তব্য হল যদি এরূপ কোন ব্যক্তিকে আমার কাছে আনা হয়, তবে আমি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবো। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার জন্য [আল্লাহর কাছে] ক্ষমা প্রার্থনা করেননি এবং কোন গালিও দেননি। [দুআ এজন্য করেননি যে, হয়তো এ আশায় কেউ আবার পাপচারে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে; মন্দ বলেননি এজন্য যে, তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয়ে গেছে।]
[ই. ফা ৪২৭৯, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮০]
৪৩২১. মুহাম্মাদ ইবনি হাতিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] দাঊদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত হাদীসের মর্মার্থ বর্ণনা করেন। তিনি তাহাঁর হাদীসে উল্লেখ করেন যে, এরপর নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সন্ধ্যাবেলায় দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা শেষে বলিলেন, তাদের কী পরিণতি হইবে? যখন আমরা যুদ্ধে গমন করি তখন তাদের কেউ কেউ আমাদের পিছনে থেকে যায় এবং ছাগলের শব্দের ন্যায় আওয়াজ করে। [অর্থাৎ-ব্যভিচার করে।] কিন্তু তিনি তাহাঁর বর্ণনায় আমাদের পরিবারবর্গের মধ্যে কথাটি বর্ণনা করেননি।
[ই. ফা ৪২৮০, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮১]
৪৩২২. সুরায়জ ইবনি ইউনুস ও আবু বাক্র ইবনি আবু শাইবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] দাঊদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
উল্লেখিত হাদীসের অংশ বিশেষ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণিত হাদীসে [আরবী] [অতএব, সে তিনবার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করেছে] এ কথা উল্লেখ রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮১, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮২]
৪৩২৩. মুহাম্মাদ ইবনি আলা হামদানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সুলাইমান ইবনি বুরাইদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতার হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাইয ইবনি মালিক নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তোমার দুর্ভাগ্য। তুমি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ্ কর। বর্ণনাকারী বলেন যে, লোকটি অল্প দূর চলে গিয়ে আবার ফিরে এলো। এরপর বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। বর্ণনাকারী বলেন যে, লোকটি অল্প দূর গিয়ে আবার ফিরে আসলো এবং বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তোমার দুর্ভাগ্য। তুমি প্রত্যাবর্তন কর এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ্ কর। তখন নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] পূর্বের মতই কথা বলিলেন, যখন চতুর্থবার মাইয একই কথা বলিল, আমাকে পবিত্র করুন হে আল্লাহর রসূল! রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে বলিলেন, কোন বিষয়ে আমি তোমাকে পবিত্র করবো? তখন সে বলিল, যিনার পাপ হইতে। সুতরাং রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার [সঙ্গী-সাথীদের নিকট] জিজ্ঞেস করিলেন, তার মধ্যে কি কোন পাগলামী আছে? তখন তাঁকে জানানো হলো যে, সে পাগল নয়। এরপর তিনি জিজ্ঞেস করিলেন, সে মদ্যপান করেছে কি? তখন এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হলো এবং তার মুখ শুঁকে দেখল, সে তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পেল না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি যিনা করেছ? প্রতি উত্তরে সে বলিল, জী-হ্যাঁ। অতএব রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার প্রতি [ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের] নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো। সুতরাং এ ব্যাপারে জনগণ দুদলে বিভক্ত হয়ে গেল। একদল বলিতে লাগল, নিশ্চয় সে [মাইয] ধ্বংস হয়ে গেছে। নিশ্চয় তার পাপ কার্যত তাকে ঘিরে ফেলেছে। দ্বিতীয় দল বলিতে লাগল, মাইয এর তাওবার চেয়ে উত্তম [তাওবার অনুশোচনা] আর হয় না। সে প্রথমে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে আগমন করলো এবং নিজের হাত তাহাঁর হাতের উপর রাখলো। এরপর বলিল,আমাকে পাথর দ্বারা হত্যা করুন। বর্ণনাকারী বলেন যে, দু তিন দিন পর্যন্ত মানুষ কেবল এ কথাই বলাবলি করছিল। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আগমন করিলেন এবং দেখলেন যে, সাহাবাগণ বসে আছেন। তিনি প্রথমে সালাম দিলেন, এরপর বসলেন এবং বলিলেন, তোমরা মাইয ইবনি মালিক-এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তখন তাঁরা বলিলেন, আল্লাহ! মাইয ইবনি মালিককে ক্ষমা করুন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, সে এমনভাবে তাওবাহ্ করেছে, যদি তা একটি উম্মাতের লোকদের মাঝে বণ্টিত হয় তবে সকলের জন্যই তা যথেষ্ট হতো।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর তাহাঁর নিকট আযদ গোত্রের গামিদ পরিবারের এক মহিলা আগমন করলো এবং বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তখন তিনি বলিলেন, তোমার দুর্ভাগ্য তুমি ফিরে যাও এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাওবাহ্ কর। তখন মহিলা বলিল, আপনি কি আমাকে সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাইয ইবনি মালিককে? তখন তিনি বলিলেন, তোমার কী হয়েছে? মহিলা বলিল, আমি ব্যভিচারের কারণে গর্ভবতী হয়েছি। তিনি [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] জিজ্ঞেস করিলেন, তুমি কি এমন কাজ করেছ? সে প্রতি উত্তরে বলিল, জী-হ্যাঁ। তখন তিনি তাকে বলিলেন, তোমার গর্ভের সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত তুমি অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন যে, এক আনসারী ব্যক্তি তার গর্ভের সন্তান প্রসবকাল পর্যন্ত তার দায়িত্ব গ্রহণ করলো। বর্ণনাকারী বলেন, কিছুদিন পর ঐ ব্যক্তি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এসে বলিল, গামিদীয় মহিলা তো সন্তান প্রসব করিয়াছেন। তখন তিনি বলিলেন, এমতাবস্থায় তার ছোট শিশু সন্তানকে রেখে আমি তাকে রজম করিতে পারি না। কেননা তার শিশু সন্তানকে দুধপান করানোর মত কেউ নেই। তখন এক আনসারী লোক দাঁড়িয়ে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি তার দুধপান করানোর দায়িত্ব নিলাম। তখন তাকে পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করার আদেশ করিলেন।
[ই. ফা ৪২৮২, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৩]
৪৩২৪. বুরাইদাহ্ [রাদি.]-এর বরাতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
মাইয ইবনি মালিক আসলামী নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয়ই আমি আমার আত্মার উপর জুলুম করেছি, অর্থাৎ ব্যভিচার করেছি। আমি চাই যে, আপনি আমাকে পবিত্র করবেন। তখন তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরের দিন সে আবার তাহাঁর [নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ] কাছে এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি। এবারও তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। এরপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কোন এক ব্যক্তিকে তার সম্প্রদায়ের লোকের কাছে পাঠালেন। লোক সেখানে গিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, আপনারা কি মনে করেন যে, তার মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে এবং সে মন্দ কাজে লিপ্ত হয়েছে? তারা প্রতি উত্তরে বলিলেন, আমরা তো তার মস্তিষ্কের বিকৃতি সম্পর্কে কোন কিছু জানি না। আমরা তো জানি যে, সে সম্পূর্ণ সুস্থ প্রকৃতির। এরপর মাইয তৃতীয়বার রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে আগমন করলো। তখন তিনি আবারও একজন লোককে তার গোত্রের কাছে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রেরণ করিলেন। তখনও তারা তাঁকে জানালো যে, আমরা তার সম্পর্কে খারাপ কোন কিছু জানি না এবং তার মস্তিষ্কেরও কোন বিকৃতি ঘটেনি। এরপর যখন চতুর্থবার সে আগমন করলো, তখন তার জন্য একটি গর্ত খনন করা হলো এবং তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার প্রতি [ব্যভিচারের শাস্তি প্রদানের] নির্দেশ প্রদান করিলেন। সুতরাং তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হলো।
বর্ণনাকারী বলেন, এরপর গামিদী এক মহিলা এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি ব্যভিচার করেছি। সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করুন। তখন তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তাকে ফিরিয়ে দিলেন। পরবর্তী দিন আবার ঐ মহিলা আগমন করলো এবং বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]! আপনি কেন আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। আপনি সম্ভবত আমাকে ঐভাবে ফিরিয়ে দিতে চান, যেমনভাবে আপনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাইযকে? আল্লাহর শপথ করে বলছি, নিশ্চয়ই আমি গর্ভবতী। তখন তিনি বলিলেন, তুমি যদি ফিরে যেতে না চাও, তবে আপাততঃ এখনকার মত চলে যাও এবং প্রসবকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর। রাবী বলেন, এরপর যখন সে সন্তান প্রসব করলো- তখন ভূমিষ্ঠ সন্তানকে এক টুকরা কাপড়ের মধ্যে নিয়ে তাহাঁর কাছে আগমন করলো এবং বলিল, এ সন্তান আমি প্রসব করেছি। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, যাও তাকে [সন্তানকে] দুধপান করাও। দুধপান করানোর সময় পার হলে পরে এসো। এরপর যখন তার দুধপান করানোর সময় শেষ হলো তখন ঐ মহিলা শিশু সন্তানটিকে নিয়ে তাহাঁর কাছে মহিলাটি আবার আগমন করলো-এমন অবস্থায় যে, শিশুটির হাতে এক টুকরা রুটি ছিল। এরপর বলিল, হে আল্লাহর নবী! এইতো সেই শিশু, যাকে আমি দুধপান করানোর কাজ শেষ করেছি। সে এখন খাদ্য খায়। তখন শিশু সন্তানটিকে তিনি কোন একজন মুসলিমকে প্রদান করিলেন। এরপর তার প্রতি [ব্যভিচারের শাস্তি] প্রদানের নির্দেশ দিলেন। মহিলার বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করানো হলো এরপর জনগণকে [তার প্রতি পাথর নিক্ষেপের] নির্দেশ দিলেন। তারা তাকে পাথর মারতে শুরু করলো। খালিদ ইবনি ওয়ালীদ [রাদি.] একটি পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন এবং মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করিলেন, তাতে রক্ত ছিটকে পড়লো খালিদ [ইবনি ওয়ালীদ] [রাদি.]-এর মুখমন্ডলে। তখন তিনি মহিলাকে গালি দিলেন। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার গালি শুনতে পেলেন। তিনি বলিলেন, সাবধান! হে খালিদ! সে মহান আল্লাহর শপথ, যাঁর হস্তে আমার জীবন, জেনে রেখো! নিশ্চয়ই সে এমন তাওবাহ্ করেছে, যদি কোন “হক্কুল ইবাদ” বিনষ্টকারী ব্যক্তিও এমন তাওবাহ্ করতো, তবে তারও ক্ষমা হয়ে যেত। এরপর তার জানাযার নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। তিনি তার জানাযায় নামাজ আদায় করিলেন। এরপর তাকে দাফন করা হলো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৩, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৪]
৪৩২৫. ইমরান ইবনি হুসায়ন [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
জুহাইনাহ্ গোত্রের এক মহিলা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট আগমন করিল। সে বলিল, হে আল্লাহর নবী! আমি হদ্দ [শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত ব্যভিচারের শাস্তি]-এর উপযোগী হয়েছি। অতএব আমার উপর তা কার্যকর করুন। তখন আল্লাহর নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার অভিভাবককে ডাকলেন এবং বলিলেন, তাকে ভালভাবে দেখাশোনা করো। তারপর সে যখন সন্তান প্রসব করিবে তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। সে তাই করলো। এরপর আল্লাহর নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তার প্রতি [শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দিলেন। তখন মহিলার কাপড় শক্ত করে বাঁধা হলো। এরপর তিনি শাস্তি কার্যকর করার আদেশ দিলেন। তাকে পাথর মারা হলো। অতঃপর তিনি তার উপর জানাযার নামাজ আদায় করিলেন। তখন উমর [রাদি.] বলিলেন, হে আল্লাহর নবী! আপনি তার [জানাযার] নামাজ আদায় করিলেন অথচ সে তো ব্যভিচার করেছিল? তিনি বলিলেন, নিশ্চয়ই সে এমনভাবে তাওবাহ্ করেছে, যদি তা মাদীনার সত্তরজন লোকের মধ্যে বণ্টিত হতো, তবে তাদের জন্য তাই যথেষ্ট হতো। তুমি কি তার চেয়ে অধিক উত্তম তাওবাহ্কারী কখনও দেখেছ? সে-তো নিজের জীবন আল্লাহর জন্য দিয়ে দিয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৪, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৫]
৪৩২৬. ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসির [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সূত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৫, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৬]
৪৩২৭. আবু হুরাইরাহ্ এবং যায়দ ইবনি খালিদ জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাঁরা বলেন, এক বেদুঈন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট এসে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি যে, আপনি আমার ব্যাপারে আল্লাহর কিতাব অনুসারে হুকুম প্রদান করুন। তখন তার প্রতিপক্ষ অপর একব্যক্তি যে তার চেয়ে অধিক জ্ঞানী ছিল বলিল, হ্যাঁ, আপনি আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে ফায়সালা করুন, তবে এর আগে আমাকে [কথা বলার] অনুমতি দিন। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, বলো। লোকটি বলিল, আমার এক ছেলে ঐ ব্যক্তির বাড়িতে চাকর ছিল। সে তার স্ত্রীর সঙ্গে ব্যভিচার করেছে। অতএব, আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আমার ছেলের উপর রজম [পাথর নিক্ষেপ]-এর শাস্তি আরোপিত হইবে। সুতরাং আমি সেটার বিনিময় প্রদান করলাম একশ ছাগল ও একটি দাসী। এরপর আমি এ ব্যাপারে আলিমগণের কাছে জিজ্ঞেস করলাম। তখন তাঁরা আমাকে বলিলেন যে, আমার ছেলের উপর একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছর কাল নির্বাসনের হুকুম বলবৎ হইবে। আর ঐ মহিলার উপর রজম [পাথর নিক্ষেপ]-এর হুকুম কার্যকর হইবে। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] তখন বলিলেন, সে মহান সত্তার শপথ! যাঁর হস্তে আমার জীবন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুসারে নিষ্পত্তি করে দেব। সুতরাং দাসী এবং ছাগল প্রত্যাখ্যাত হইবে। [অর্থাৎ-এগুলো তুমি ফিরিয়ে নেবে]। আর তোমার ছেলের উপর একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসনের হুকুম কার্যকর হইবে। হে উনায়স [রাদি.]! [একজন সাহাবা] তুমি আগামীকাল সকালে ঐ মহিলার কাছে গমন করিবে [এবং ঐ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিবে।] যদি সে তা স্বীকার করে তবে তাকে রজম [পাথর নিক্ষেপ] করে হত্যা করিবে।
বর্ণনাকারী বলেন, পরদিন সকালে তিনি মহিলার কাছে গেলেন [এবং এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করিলেন।] সে তা স্বীকার করলো। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মহিলার প্রতি শারীআতের হুকুম কার্যকর করার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে পাথর মারা হল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৬, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৭]
৪৩২৮. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সুত্রে উল্লেখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৭, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৮]
৬. অধ্যায়ঃ ইয়াহুদী জিম্মী ব্যভিচারীকে রজম করা
৪৩২৯. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট একজন ইয়াহূদী পুরুষ এবং একজন ইয়াহূদী মহিলাকে আনা হল, যারা উভয়েই ব্যভিচার করেছিল। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের কাছে গেলেন এবং তাদেরকে লক্ষ্য করে বলিলেন, তোমরা তাওরাতে ব্যভিচারী ব্যক্তির শাস্তি কী পেয়েছ? তারা বলিল, এতে আমরা উভয়ের মুখমণ্ডলে কালি লাগিয়ে দেই এবং উভয়কে বিপরীতমুখী করে উটের উপর উঠিয়ে পরিভ্রমণ করাই। [এ হল তাওরাত বর্ণিত শাস্তি] রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, তাহলে তোমরা তাওরাত কিতাব নিয়ে এসো, যদি তোমরা এ ব্যাপারে সত্যবাদী হয়ে থাক। তারা তখন তাওরাত কিতাব নিয়ে এলো এবং পাঠ করিতে শুরু করিল। যখন [আরবী] [ব্যভিচারের শাস্তি]-এর আয়াত নিকটবর্তী হল তখন যে যুবকটি তাওরাত পাঠ করছিল সে আপন হাত [আরবী] [পাথর নিক্ষেপের আয়াত]-এর উপর রেখে দিল এবং রক্ষিত হাতের আগের-পেছনের অংশ পাঠ করলো। তখন আবদুল্লাহ ইবনি সালাম [রাদি.] {২৭}, [তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সঙ্গে ছিলেন] তাঁকে লক্ষ্য করে বলিলেন, আপনি তাকে নির্দেশ করুন- যেন সে আপন হাত উঠিয়ে ফেলে। সে তার হাত উঠিয়ে নিল। হঠাৎ দেখা গেল যে, এর নিচেই [আরবী] [পাথর নিক্ষেপের আয়াত] রয়েছে। সুতরাং রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] উভয়কে পাথর নিক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। সুতরাং উভয়কে পাথর মারা হল।
আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] বলেন যে, যারা উভয়কে পাথর মেরেছিল, আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। আমি দেখিতে পেলাম যে, পুরুষটি মহিলাটিকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। [অর্থাৎ- ভালবাসার আকর্ষণে নিজেই তার পাথরের আঘাত গ্রহণ করছে]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৮, ইসলামিক সেন্টার-৪২৮৯]
{২৭} তাওরাতের হাফিয ও বিখ্যাত ইয়াহূদী আলিম ছিলেন।
৪৩৩০. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দুজন ইয়াহূদীকে ব্যভিচারের অপরাধে রজম [পাথর নিক্ষেপ] করেন। তন্মধ্যে একজন ছিল পুরুষ এবং অপরজন মহিলা, যারা উভয়েই ব্যভিচার করেছিল। ইয়াহূদীরা উভয়কে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট নিয়ে এসেছিল। এরপর তিনি উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ শেষ পর্যন্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৮৯, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯০]
৪৩৩১. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইয়াহূদীরা তাদের ব্যভিচারী একজন পুরুষ ও একজন মহিলাকে রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর কাছে নিয়ে এলো। অতঃপর তিনি উবাইদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] কর্তৃক নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত হাদীসের ন্যায় হাদীসটি শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯০, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯১]
৪৩৩২. বারা ইবনি আযিব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর সম্মুখ দিয়ে একজন ইয়াহূদীকে কালি মাখা এবং বেত্রাঘাতকৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছ? তারা বলিল, হ্যাঁ।
এরপর তিনি তাদের মধ্য হইতে একজন আলিম [পাদরী] ব্যক্তিকে ডাকলেন এবং বলিলেন, তোমাকে সে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা [আঃ]-এর প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, এরূপই কি তোমরা তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারীর শাস্তি পেয়েছ? তখন ইয়াহূদী আলিম ব্যক্তি বলিলেন, না। তিনি আরো বলিলেন, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে এভাবে না বলিতেন তবে আমি আপনাকে জানাতাম না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম [পাথর নিক্ষেপ করা]। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোন সম্ভ্রান্ত লোককে পেতাম, তখন তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোন নিঃস্ব ব্যক্তিকে পাকড়াও করতাম তখন তার উপর শারীআতের প্রকৃত শাস্তি [আরবী] বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সবাই মিলে এ ব্যাপারে একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হইবে। সুতরাং আমরা ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্রাঘাত করাকেই স্থির করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের পরিবর্তে। তখন রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলিলেন, হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَوَّلُ مَنْ أَحْيَا أَمْرَكَ إِذْ أَمَاتُوهُ
বাস্তবায়িত [পুনর্জীবিত] করলাম, যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সুতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে ঐ ইয়াহূদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এ আয়াতঃ
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ لاَ يَحْزُنْكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ
“হে রসূল! যারা কুফরী কাজে দ্রুতগামী তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে। ….. অতঃপর সেই বাণী পর্যন্ত যদি তোমরা তা প্রদত্ত হও, তবে তা ধারণ কর”-[সূরা মায়িদাহ্ ৫:৪১] পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা [ইয়াহূদীরা] বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট গমন করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে- কালি লাগানো এবং বেত্রাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন, তবে তোমরা তা কার্যকর করিবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করিবে। আল্লাহ তাআলা [এ মর্মে] আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির [অস্বীকারকারী] সম্প্রদায়”- [সূরা মায়িদাহ্ ৫:৪৪]। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুসারে বিচার করে না তারাই হলো অত্যাচারী দল”- [সূরা মায়িদাহ্ ৫:৪৫]। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো সীমালঙ্ঘনকারী দল”- [সূরা মায়িদাহ্ ৫:৪৭]। এ সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯১, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯২] আর-বী.
৪৩৩৩. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সূত্রে [আরবী] “তখন নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর [রজম করার] নির্দেশ করিলেন, এরপর [ঐ ইয়াহূদীকে] পাথর মারা হল” পর্যন্ত অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। কিন্তু এরপরে বর্ণিত আয়াতসমূহ তিনি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯২, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৩]
৪৩৩৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আসলাম গোত্রের একজন পুরুষ এবং একজন ইয়াহূদী পুরুষ ও মহিলার প্রতি [ব্যভিচারের জন্য] পাথর নিক্ষেপ করার শাস্তি বলবৎ করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৩, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৪]
৪৩৩৫. ইবনি জুরায়জ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একই সূত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। তবে তিনি “এবং একজন মহিলা” এ শব্দটি উল্লেখ করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৪, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৫]
৪৩৩৬. আবু ইস্হাক শাইবানী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আবু আওফা [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম, রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কি [ব্যভিচারের জন্য] পাথর মেরেছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, সূরা নূর অবতীর্ণ হওয়ার আগে, না পরে? তখন তিনি বলিলেন, আমি তা জানি না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৫, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৬]
৪৩৩৭. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- কে বলিতে শুনেছি, যদি তোমাদের কোন দাসী ব্যভিচার করে এবং তার ব্যাভিচার কার্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে তবে তাকে শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি [আরবী] অনুযায়ী বেত্রাঘাত করিবে এবং তাকে কোন প্রকার তিরস্কার করিবে না। এরপর যদি দ্বিতীয়বার সে ব্যভিচার করে, তবে তাকে শারীআত কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি বেত্রাঘাত করিবে এবং তাকে কোন প্রকার ধমকি দিবে না। এরপর যদি তৃতীয়বার ব্যভিচার করে এবং তার ব্যভিচার কার্য প্রকাশ পায় তবে তাকে বিক্রি করে দেবে, চুলের দড়ি পরিমাণ মূল্যে হলেও। [ অর্থাৎ- অতি কম মূল্য হলেও।]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৬, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৭]
৪৩৩৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.]- এর বরাতে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হুরায়রা্ [রাদি.]- এর বরাতে নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে দাসীর বেত্রাঘাত সম্পর্কে, “যখন সে তিনবার ব্যভিচার করে, এরপর চতুর্থবারে তাকে বিক্রি করে দেবে”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৭, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৮]
৪৩৩৯. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- কে জিজ্ঞেস করা হলো- যখন কোন অবিবাহিত দাসী ব্যভিচার করে এর হুকুম সম্পর্কে। তখন তিনি বলিলেন, যদি সে ব্যভিচার করে তবে তাকে বেত্রাঘাত করিবে। আবার যদি সে ব্যভিচার করে তবে আবারও বেত্রাঘাত করিবে। এরপরও যদি সে ব্যভিচার করে তবে তাকে বেত্রাঘাত করিবে এবং পরিশেষে তাকে বিক্রি করে দেবে, একটি দড়ির মূল্য পরিমাণ মূল্যে হলেও।
ইবনি শিহাব [সন্দেহসূচক] বর্ণনা করিয়াছেন যে, আমি জানি না [আরবী] [বিক্রি করার নির্দেশটি কি তৃতীয় বারের পরে, না চতুর্থ বারের পরে]।
কানবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার বর্ণনায় বলেন যে, ইবনি শিহাব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [আরবী] শব্দের অর্থ [আরবী] [দড়ি] বলেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৮, ইসলামিক সেন্টার-৪২৯৯]
৪৩৪০. আবু হুরাইরাহ্ ও যায়দ ইবনি খালিদ জুহানী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দাসী সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলেন, …… এ হাদীসটি আবদুল্লাহ ইবনি মাসলামাহ্ এবং ইয়াহইয়া বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি [ইবনি ওয়াহ্ব] ইবনি শিহাবের কথা [আরবী] এর অর্থ [আরবী] [দড়ি] এ কথাটি উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪২৯৯, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০০]
৪৩৪১. আবু হুরাইরাহ্ ও যায়দ ইবনি খলিদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
সালিহ এবং মামার তারা উভয়ে মালিকের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর তারা তাদের হাদীসে দাসী বিক্রি সম্পর্কে [আরবী] [তৃতীয়বারে অথবা চতুর্থবারে] এ কথা সন্দেহসূচক বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০০, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০১]
৭. অধ্যায়ঃ প্রসূতি দের হদ্দ- এর ব্যাপারে বিলম্ব করা
৪৩৪২. আবু আবদুর রহমান [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আলী [রাদি.] এক ভাষণে বলিলেন, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের [ব্যাভিচারী] দাস-দাসীদের উপর শরীআতের হুকুম “হদ্দ কার্যকর কর, তারা বিবাহিত হোক অথবা অবিবাহিত হোক। রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর এক দাসী ব্যভিচার করেছিল। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আমি যেন তাকে [দাসীটিকে] বেত্রাঘাত করি। সে তখন [নিফাস] সদ্য প্রসূতি অবস্থায় ছিল। আমি তখন ভয় করলাম যে, এমতাবস্থায় যদি আমি তাকে বেত্রাঘাত করি- তবে হয়তো তাকে মেরেই ফেলবো। এ ঘটনা আমি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট পেশ করলাম। তখন তিনি বলিলেন, তুমি ভালই করেছো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০১, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০২]
৪৩৪৩. সুদ্দী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সূত্রে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু তিনি “তাদের মধ্যকার বিবাহিত এবং অবিবাহিত” এ কথার উল্লেখ করেননি। তাহাঁর বর্ণিত হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, “তুমি তাকে ছেড়ে দাও, যতক্ষন না সে নিফাস থেকে পবিত্র হয়”।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০২, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৩]
৮. অধ্যায়ঃ মদ্যপানের শাস্তি
৪৩৪৪. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]-এর নিকট একদিন একজন মদ্যপানকারী ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হলো। তখন তিনি দুটি খেজুরের ডাল দিয়ে চল্লিশ বারের মত তাকে বেত্রাঘাত করিলেন।
বর্ণনাকারী বলেন যে, আবু বকর [রাদি.]- ও [তাহাঁর খিলাফত আমলে] তাই করেন। পরে যখন উমর [রাদি.] খলীফা হলেন, তিনি এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গের পরামর্শ চাইলেন। তখন আবদুর রহমান [রাদি.] বলিলেন, অপরাধের শাস্তি কমপক্ষে আশি বেত্রাঘাত হওয়া প্রয়োজন। তাই উমর [রাদি.] এরই নির্দেশ দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৩, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৪]
৪৩৪৫. কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি আনাস [রাদি.]- কে বলিতে শুনেছি, একদা রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম]- এর নিকট এক ব্যাক্তিকে আনা হল…অতঃপর রাবী আনাস উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৪, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৫]
৪৩৪৬. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মদ্যপানে খেজুরের ডাল ও জুতা দ্বারা প্রহার করিয়াছেন। আবু বকর [রাদি.] তাহাঁর আমালে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করিয়াছেন। উমর [রাদি.]-এর খিলাফতকালে মানুষের সমৃদ্ধি এলে তারা প্রচুর পানি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বসবাস আরম্ভ করলো। তিনি তাদেরকে বলিলেন, মদ্যপানের বেত্রাঘাত বিষয়ে আপনাদের মতামত কী? আবদুর রহমান ইবনি আওফ [রাদি.] বলিলেন, এ ব্যাপারে আমি মনে করি যে, আপনি সর্বনিম্ন দন্ড নির্ধারণ করুন। তারপর উমর [রাদি.] মদ্যপানের শাস্তি হিসাবে আশিটি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৫, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৬]
৪৩৪৭. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৬, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৭]
৪৩৪৮. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] মদ্যপানের অপরাধে জুতো এবং খেজুরের ডাল দ্বারা চল্লিশটি আঘাত করিতেন। অতঃপর ওয়াকী উল্লিখিত হাদীস বর্ণনাকারীদ্বয়ের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। আর তিনি …… পানি ও বসতি কথাটির উল্লেখ করেন নি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৭, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৮]
৪৩৪৯. আবু বাকর ইবনি আবু শাইবাহ্, যুহায়র ইবনি হার্ব, আলী ইবনি হুজর ও ইসহাক্ ইবনি ইবরাহীম হানযালী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাদীসের শব্দগুলো তাহাঁরই [বর্ণনা করা], হুসায়ন ইবনি মুনযির আবু হাসান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি উসমান ইবনি আফ্ফান [রাদি.]-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। তখন ওয়ালীদকে তাহাঁর কাছে আনা হল। সে ফজরের দুরাকআত নামাজ আদায় করে বলেছিল, আমি তোমাদের উদ্দেশে আরও অধিক রাকআত পড়ব। তখন দুব্যক্তি ওয়ালীদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিল। তন্মধ্যে একজনের নাম ছিল হুমরান। সে বলিল, সে মদ খেয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল যে, সে তাকে বমি করিতে দেখেছে [মদ্যপানের কারণে]। তখন, উসমান [রাদি.] বলিলেন, সে মদ খাওয়ার পরই বমি করেছে। অতএব তিনি বলিলেন, হে আলী [রাদি.] আপনি উঠুন ও তাকে বেত্রাঘাত করুন। তখন আলী [রাদি.] হাসান [রাদি.] কে বলিলেন, হে হাসান! তুমি উঠ ও তাকে বেত্রাঘাত কর। হাসান [রাদি.] বলিলেন, যে ক্ষমতার স্বাদ ভোগ করেছে সে তার তিক্ততা ভোগ করুক। এতে যেন আলী [রাদি.] তার প্রতি মর্মাহত হলেন। অতঃপর তিনি বলিলেন, হে আবদুল্লাহ ইবনি জাফার! তুমি উঠ এবং তাকে দুর্রা [বেত্রাঘাত] কর। তিনি তাকে দুর্রা মারলেন। আর আলী [রাদি.] তা গণনা করিলেন। যখন চল্লিশটি দুর্রা মেরেছেন তখন আলী [রাদি.] বলিলেন, তুমি বিরত হও। এরপর তিনি বলিলেন যে, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] চল্লিশটি বেত্রাঘাত করিয়াছেন এবং আবু বাকর [রাদি.]-ও তাহাঁর খিলাফাতকালে চল্লিশটি দুর্রা মেরেছেন। আর উমর [রাদি.] [তাহাঁর খিলাফাত কালে] আশিটি দুর্রা মেরেছেন। আর এতদুভয় সংখ্যার প্রতিটিই সুন্নাত। তবে এটি [শেষোক্তটি] আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়।
আলী ইবনি হুজ্র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন। ইসমাঈল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন যে, আমি তা দানাজ থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু এখন তা আমার মনে নেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৮, ইসলামিক সেন্টার-৪৩০৯]
৪৩৫০. আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন অপরাধীর উপর হদ্দ [শরীয়তের শাস্তি] প্রয়োগে সে যদি মারা যায় তাতে আমি ব্যথিত হয়নি। কিন্তু মদ্যপায়ীর শাস্তি প্রদানে আমি ভীত। কেননা, এতে যদি সে মারা যায় তবে আমি তার দিয়্যাত [ক্ষতিপূরণ] প্রদান করব। কেননা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এ ব্যাপারে শাস্তির কোন পরিমাণ নির্ধারিত করে যাননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩০৯, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১০]
৪৩৫১. সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সুফ্ইয়ান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১০, ই. সে ৪৩১১]
৯. অধ্যায়ঃ তাযীর {২৮} –এর বেত্রাঘাতের পরিমাণ
{২৮} যে অপরাধ হদ্দযোগ্য [নির্দিষ্ট দণ্ডযোগ্য] নয়- এ জাতীয় অপরাধের কারণে যে শাস্তি প্রদান করা হয় তাকে তাযীর বলা হয়।
৪৩৫২. আবু বুরদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] কে বলিতে শুনেছেন, কাউকে যেন আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত অপরাধের নির্দিষ্ট হদ্দ [দণ্ড] ব্যতীত দশ বেত্রাঘাতের বেশি বেত্রাঘাত না করা হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১১, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১২]
১০. অধ্যায়ঃ হুদূদ তথা শরীয়ত কর্তৃক নির্দিষ্ট দণ্ড কার্যকরে অপরাধীর পাপ ক্ষমা হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে
৪৩৫৩. উবাদাহ্ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা কোন এক মজলিসে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর সঙ্গে বসা ছিলাম। তখন তিনি বলিলেন যে, তোমরা আমার কাছে এর উপর বাইআত কর যে, তোমরা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করিবে না, ব্যভিচার করিবে না, চুরি করিবে না এবং কাউকে হত্যা করিবে না যাকে হত্যা করা আল্লাহ্ নিষেধ করিয়াছেন। কিন্তু, ন্যায়সঙ্গতভাবে [অর্থাৎ- কিসাস হিসেবে অথবা মুরতাদ হলে কিংবা বিয়ের পর যিনা করলে]। অতএব, তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ তা পূর্ণ করিবে, সে তার পুরস্কার আল্লাহ্র কাছে পাবে। আর যদি কেউ উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয়ে শাস্তি ভোগ করে থাকে, তবে তাই তার জন্য কাফ্ফারা [বদলা] হয়ে যাবে। আর যদি কোন ব্যক্তি উল্লিখিত অপরাধের কোন একটিতে পতিত হয় অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তা গোপন রাখেন, তবে বিষয়টি মহান আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১২, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১৩]
৪৩৫৪. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে একই সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। আর তিনি তাহাঁর হাদীসে শুধু এটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করিয়াছেন যে, “অতএব, তিনি আমাদের কাছে সূরা নিসা-এর আয়াত [অর্থ] : তারা যেন আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক না করে …. আয়াতের শেষ পর্যন্ত তিলায়াত করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১৩, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১৪]
৪৩৫৫. উবাদাহ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, রাসুলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] আমাদের থেকে অনুরূপ অঙ্গীকার নিলেন, যেরূপ অঙ্গীকার নিয়েছেন মহিলাদের থেকে যেন আমরা আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক না করি, চুরি না করি, ব্যভিচার না করি, আমাদের সন্তানদেরকে হত্যা না করি এবং একে অপরের ক্ষতি না করি। অতএব, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তা পূর্ণ করিবে তার পুরস্কার আল্লাহ্র কাছে পাবে। আর তোমাদের মধ্যে যদি কেউ এমন কোন অপরাধ করে যাতে [হদ্দ] শরীয়তের শাস্তি অত্যাবশ্যকীয় হয়, অতঃপর তার উপর সে শাস্তি কার্যকরী হয়, তবে তা তার অপরাধের কাফ্ফারা [বদলা] হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তির পাপ কার্য আল্লাহ্ গোপন রাখলেন, তার বিষয় আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। যদি তিনি ইচ্ছা করেন তবে তাকে শাস্তি দিবেন। আর যদি ইচ্ছা করেন তবে তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১৪, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১৫]
৪৩৫৬. কুতাইবাহ্ ইবনি সাঈদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] ও মুহাম্মাদ ইবনি রুম্হ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] …. উভয়ে উবাদাহ ইবনি সামিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি সেসব নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন ছিলাম, যাঁরা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] এর নিকট বাইআত নিয়েছিলেন। আমরা শপথ নিলাম যে, আমরা আল্লাহ্র সাথে কোন কিছু শরীক করবো না, ব্যভিচার করব না, চুরি করবো না, কাউকে হত্যা করবো না- যেগুলো [যাদেরকে হত্যা করিতে] আল্লাহ্ নিষিদ্ধ করিয়াছেন। কিন্তু, ন্যায়সঙ্গতভাবে [অর্থাৎ- কিসাস তথা অবৈধ হত্যার পরিবর্তে বা মুরতাদ হলে বা বিয়ের পর যিনা করলে হত্যা করিবে]। আর ডাকাতি করবো না ও কোন প্রকার নিষিদ্ধ কর্মও করবো না। যদি আমরা ঐরূপ কার্যাবলী না করে চলতে পারি তবে আমাদের জান্নাত মিলবে। আর যদি আমরা উল্লিখিত অপরাধের কোনটিতে লিপ্ত হই, তবে এর ফায়সালা আল্লাহ্র কাছেই।
ইবনি রুম্হ বলেন, এর ফায়সালা মহান আল্লাহ্র কাছেই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩১৫, ইসলামিক সেন্টার-৪৩১৬]
নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] থেকে উল্লিখিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৩২০, ইসলামিক সেন্টার-৪৩২১]
Leave a Reply