ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা হাদিসের আলাকে

ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা হাদিসের আলাকে

ইসলামিক বিচার ব্যবস্থা হাদিসের আলাকে >>আবুদ দাউদ শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

অধ্যায়ঃ ২৫, অনুচ্ছেদঃ ১-৩১=৩১টি

অনুচ্ছেদ-১, বিচারকের পদ চাওয়া সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২. বিচারক ভুল করলে
অনুচ্ছেদ-৩: বিচার চাওয়া এবং তাড়াহুড়া করে ফায়সালা দেয়া
অনুচ্ছেদ-৪ঃ ঘুষ গ্রহন নিষিদ্ধ
অনুচ্ছেদ-৫ঃ কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত উপহার
অনুচ্ছেদ-৬ঃ কিভাবে বিচার করবে
অনুচ্ছেদ-৭ঃ বিচারক যদি ভুল সিদ্ধান্ত দেন
অনুচ্ছেদ-৮ঃ বিচারকের সামনে বাদী-বিবাদীর বসার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-৯ঃ রাগের সাথে বিচারকের সিদ্ধান্ত দেয়া নিষেধ
অনুচ্ছেদ-১০ঃ যিম্মীদের বিবাদ মীমাংসা করার বিধান
অনুচ্ছেদ-১১ঃ বিচারকার্য পরিচালনায় ইজতিহাদ করা
অনুচ্ছেদ-১২ঃ সন্ধি স্থাপন
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ সাক্ষ্য প্রদানের বর্ণনা
অনুচ্ছেদ-১৪ঃ যে লোক প্রকৃত ঘটনা না জেনেই মামলায় সাহায্য করে
অনুচ্ছেদ-১৫ঃমিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান
অনুচ্ছেদ-১৬ঃ যার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়
অনুচ্ছেদ-১৭ঃ শহরবাসীর পক্ষে গ্রাম্য লোকের সাক্ষ্য
অনুচ্ছেদ-১৮ঃ দুধপান সম্পর্কিত বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া
অনুচ্ছেদ-১৯ঃ যিম্মীদের সাক্ষ্য এবং সফরের সময় ওসিয়াত প্রদান
অনুচ্ছেদ-২০ঃ বিচারক মাত্র একজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, যদি তিনি জানেন যে, লোকটি বিশ্বস্ত
অনুচ্ছেদ-২১ঃ একটি শপথ ও একটি সাক্ষীর ভিত্তিতে ফায়সালা দেয়া
অনুচ্ছেদ-২২ঃ একই বস্তুর দু’জন দবিদার, অথচ কারোই প্রমান নেই
অনুচ্ছেদ-২৩ঃ বিবাদীকে শপথ করতে হবে
অনুচ্ছেদ-২৪ঃ শপথ করার নিয়ম
অনুচ্ছেদ-২৫ঃ বিবাদী যিন্মী হলে শপথ করবে কি?
অনুচ্ছেদ-২৬ঃ অনুপস্হিত বিষয়ে নিজের জানা মতে শপথ করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-২৭ঃ যিন্মীকে শপথ করানোর নিয়ম
অনুচ্ছেদ-২৮ঃ যিনি নিজ অধিকার রক্ষার্থে শপথ করেন
অনুচ্ছেদ-২৯ঃ ঋণ সংক্রান্ত ও অন্যান্য বিষয়ে আটক করা সম্পর্কে
অনুচ্ছেদ-৩০ঃ প্রতিনিধি নিয়োগ
অনুচ্ছেদ-৩১ঃ বিচার সংক্রান্ত কিছু সমস্যা

অনুচ্ছেদ-১, বিচারকের পদ চাওয়া সম্পর্কে

৩৫৭১. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তিকে বিচারকের পদে নিযুক্ত করা হলো, সে যেন বিনা ছুরিতে যাবাহ হল।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫৭২. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তিকে জনগনের বিচারক নিযুক্ত করা হলো, তাকে যেন বিনা ছুরিতে যাবাহ করা হলো।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২. বিচারক ভুল করলে

৩৫৭৩. ইবনু বুরাইদাহ (রাদি.) হতে তার পিতার সুত্র হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ বিচারক তিন প্রকার। এক প্রকার বিচারক জান্নাতী এবং অপর দুই প্রকার বিচারক জাহান্নামী। জান্নাতী বিচারক হলো, যে সত্যকে বুঝে তদনুযায়ী ফায়সালা দেয়। আর যে বিচারক সত্যকে জানার পর স্বীয় বিচারে জুলুম করে সে জাহান্নামী এবং যে বিচারক অজ্ঞতা প্রসূত ফায়সালা দেয় সেও জাহান্নামী। [৩৫৭৩]

ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, এ বিষয়ে উপরোক্ত হাদীসটি অধিক সহীহ, অর্থাৎ ইবনু বুরায়দাহ্র হাদীস – বিচারক তিন শ্রেণীর।

[৩৫৭৩] নাসায়ী, ইবনু মাজাহ।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫৭৪. ‘আস ইবনুল ‘আস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন বিচারক বিচারকালে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দিয়ে যদি সে সঠিক সিদ্ধান্ত দেয় তার জন্য দু’টি সওয়াব রয়েছে। পক্ষান্তরে বিচারক যদি চিন্তা-ভাবনার পর ভুল সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে তার জন্য একটি সওয়াব রয়েছে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫৭৫. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিচারক পদ চায় এবং তা পেয়েও যায়। অতঃপর তার ন্যায়পরায়ণতা যুলুমকে পরাজিত করে তাহলে সে জান্নাতী। আর যে ব্যক্তির যুলুম ইনসাফের উপর প্রাধান্য পাবে সে হবে জাহান্নামী। [৩৫৭৫]

দুর্বল : যঈফাহ (১১৮৬) , মিশকাত (৩৭৩৬)। [৩৫৭৫] মিশকাত, তারগীব, ফাতহুল বারী। এর সানাদ দুর্বল। সানাদে মূসা ইবনু নাজদাহ সম্পর্কে হাফিজ বলেন : মাঝহুল (অজ্ঞাত)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৭৬. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

মহান আল্লাহ্‌র বানী : “যারা আল্লাহ্‌র অবতীর্ণ বিধান মোতাবেক বিচার ফায়সালা করে না, তারা কাফির… তারাই ফাসিক” (সূরা মায়িদাহ্‌ : ৪৫-৪৭) পর্যন্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) বলেনঃ এ তিনটি আয়াত ইয়াহুদীদের সম্পর্কে, বিশেষ করে বনু কুরাইযাহ ও বনু নাযীর গোত্রকে লক্ষ্য করে অবতীর্ণ হয়েছে। [৩৫৭৬]

হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-৩: বিচার চাওয়া এবং তাড়াহুড়া করে ফায়সালা দেয়া

৩৫৭৭. ‘আবদুর রহমান ইবনু বিশ্‌র আল-আযরাক্ব আল-আনসারী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা কিনদার দুই ব্যক্তির ঝগড়ারত অবস্থায় এসে উপস্থিত হলো। এ সময় আবূ মাসঊদ (রাদি.) এক বৈঠকে বসা ছিলেন। তারা উভয়ে বললো, আমাদের মাঝে ফায়সালা করে দেয়ার মত কেউ আছে কি? বৈঠকে উপস্থিত এক ব্যক্তি বললো, আমি। আবূ মাসঊদ (রাদি.) এক মুষ্টি কংকর তুলে তার দিকে ছুঁড়ে মারলেন এবং বললেন, থামো! বিচারের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা নিন্দনীয়।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৭৮. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলতে শুনেছি : যে ব্যক্তি বিচারকের পদ চায় এবং এজন্য সাহায্য প্রার্থনা করে, তাকে তার নিজের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি বিচারক পদের জন্য লালায়িত নয় এবং তা পাওয়ার জন্য কারো সাহায্য প্রার্থনা করে না, তাহলে আল্লাহ্‌ তাকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছার ব্যাপারে একজন ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেন।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৭৯. আবূ মুসা (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমরা কখনো আমাদের কোন দায়িত্বপূর্ণ পদে এমন ব্যক্তিকে নিয়োগ করবো না যে উক্ত পদের জন্য লালায়িত হয়।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৪ঃ ঘুষ গ্রহন নিষিদ্ধ

৩৫৮০. ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৫ঃ কর্মকর্তাদের প্রাপ্ত উপহার

৩৫৮১. ‘আদী ইবনু উমাইরাহ আল-কিন্দী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যকার কোন ব্যক্তিকে আমাদের সরকারী কোন পদে নিয়োগ করার পর সে যদি আমাদের তহবিল হতে একটি সুঁই কিংবা তার অধিক আত্মসাৎ করে তবে সে খেয়ানাতকারী। ক্বিয়ামাতের দিন সে তার এই খেয়ানাতের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে। তখন কালো বর্ণের জনৈক আনসার ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো। বর্ণনাকারী বলেন, আমি যেন তাকে দেখছি। সে বলল, হে আল্লাহ্‌র রাসুল! আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আপনি নিয়ে নিন। তিনি বললেনঃ তুমি কি বললে? সে বললো, আমি আপনাকে এরূপ এরূপ বলতে শুনেছি। তিনি বলেনঃ আমি বলেছি, যাকে আমরা কোন দায়িত্ব দিয়েছি, সে কম-বেশি যা কিছুই আদায় করে আনবে তা জমা দিবে। তা হতে তাকে যা প্রদান করা হবে সে তা নিবে, আর তাকে যা হতে বিরত থাকতে বলা হবে সে তা হতে বিরত থাকবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-৬ঃ কিভাবে বিচার করবে

৩৫৮২. ‘আলী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমাকে ইয়ামানে বিচারক হিসাবে প্রেরণ করলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আপনি আমাকে বিচারক করে ইয়ামানে পাঠাচ্ছেন, অথচ আমি একজন নব যুবক, বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা নেই। তিনি বলেনঃ আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই তোমার অন্তরকে সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে পথ দেখাবেন এবং তোমার কথাকে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন। যখন তোমার সামনে বাদী-বিবাদী বসবে তখন তুমি যেভাবে এক পক্ষের বক্তব্য শুনবে অনুরূপভাবে অপর পক্ষের বক্তব্য না শোনা পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিবে না। এতে তোমার সামনে মোকদ্দমার আসল সত্য প্রকাশিত হবে। ‘আলী (রাদি.) বলেন, অতঃপর আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সন্দেহে পতিত হইনি।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৭ঃ বিচারক যদি ভুল সিদ্ধান্ত দেন

৩৫৮৩. উম্মু সালামাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ আমি তো একজন মানুষ। তোমরা আমার নিকট তোমাদের মোকদ্দমা পেশ করে থাকো। হয়তো তোমাদের এক পক্ষ অপর পক্ষের চেয়ে অধিক বাকপটুতার সাথে নিজেদের যুক্তি-প্রমান পেশ করে থাকো। ফলে আমি তার বিবরণ অনুসারে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকি। এভাবে আমি যদি তাদের কোন ভাইয়ের হক হতে কিছু অংশ তাকে দেয়ার সিদ্ধান্ত দেই তবে সে যেন তা কখনো গ্রহন না করে। কারণ আমি তাকে এভাবে আগুনের একটি টুকরাই দিলাম।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫৮৪. উম্মু সালামাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা দু’জন লোক তাদের মীরাস সম্পর্কিত বিবাদ নিয়ে রাসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নিকট এলো। মৌখিক দাবি ব্যতীত তাদের কোন সাক্ষ্য–প্রমান ছিল না। নবী (সাঃআঃ) তাদেরকে বলেনঃ … অতঃপর উপরের হাদীসের অনুরূপ। একথা শুনে তারা দু’জনে কাঁদতে লাগলো এবং পরস্পরকে বলতে লাগলো, আমার প্রাপ্য তোমার জন্য ছেড়ে দিলাম। নবী (সাঃআঃ) উভয়কে বললেনঃ তোমরা যেহেতু এরূপ করছো তখন একটা কাজ করো। বিতর্কিত জিনিসটি উভয়ে ভাগ করে নাও, যা নষ্ট হয়েছে তা অনুমান করো। অতঃপর বিবেচনা করে যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিয়ে দাও।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৮৫. ‘আবদুল্লাহ ইবনু রাফি’ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি উম্মু সালামাহ্‌কে (রাদি.) নবী (সাঃআঃ)-এর সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছি। তিনি (‘আবদুল্লাহ) বলেন, দু’জন লোক তাদের মীরাস ও কিছু পুরানো আসবাব নিয়ে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। তিনি (সাঃআঃ) বললেনঃ আমি তোমাদের বিবাদের মীমাংসা করবো আমার নিজের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, যে বিষয়ে আমার উপর কিছু অবতীর্ণ হয়নি।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৮৬. ইবনু শিহাব (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

একদা ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাদি.) মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বললেন, হে জনসমাজ! রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যেসব সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তা নির্ভুল। কেননা মহান আল্লাহ্‌ তাঁকে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছিয়ে দিতেন। কিন্তু আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে ধারণা ও শ্রমের পর্যায়ভুক্ত।

হাদিসের মানঃ দুর্বল মাকতু

৩৫৮৭. আবূ ‘উসমান আশ-শামী (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

আমার (আবূ ‘উসমান) মতে হারীয ইবনু ‘উসমানের চেয়ে কোন শামবাসীই অধিক উত্তম নয়।

হাদিসের মানঃ সহিহ মাকতু

অনুচ্ছেদ-৮ঃ বিচারকের সামনে বাদী-বিবাদীর বসার নিয়ম

৩৫৮৮. ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, বাদী-বিবাদী উভয়ে বিচারকের সামনে বসবে। [৩৫৮৮]

সানাদ দুর্বল : মিশকাত (৩৭৮৬)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৯ঃ রাগের সাথে বিচারকের সিদ্ধান্ত দেয়া নিষেধ

৩৫৮৯. আবূ বাক্‌রাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি তার পুত্র ‘আবদুর রহমানকে এ মর্মে লিখলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কোন বিচারক যেন রাগান্বিত অবস্থায় দু’পক্ষের মধ্যে সিদ্ধান্ত না দেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১০ঃ যিম্মীদের বিবাদ মীমাংসা করার বিধান

৩৫৯০. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

মহান আল্লাহ্‌র বানী : তারা (ইয়াহুদীরা) তোমার নিকট এলে তোমার এখতিয়ার রয়েছে তাদের বিচার মীমাংসা করার অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করার (সুরাহ আল-মায়িদাহ : ৪২)। ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) বলেন, আলোচ্য আয়াত এ আয়াত দ্বারা রহিত হয়েছে : “অতএব আপনি আল্লাহ্‌র অবতীর্ণ করা আইন মোতাবেক লোকদের যাবতীয় বিষয়ে ফায়সালা করুন” (সুরাহ আল-মায়িদাহ : ৪৮)

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৫৯১. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো : “তারা যদি আপনার নিকট (নিজেদের মোকদ্দমা নিয়ে) আসে, তাহলে আপনার এখতিয়ার রয়েছে তাদের বিচার করার অথবা তাদেরকে উপেক্ষা করার। যদি আপনি (বিচার করতে) অস্বীকার করেন তবে তারা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর বিচার করলে ইনসাফের সাথেই করবেন। কেননা আল্লাহ্‌ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন” (সূরাহ আল-মায়িদাহ : ৪২)। ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) বলেন, বনী নাযীরের এক ব্যক্তি বনী কুরাইযাহ্‌র এক লোককে হত্যা করলে তারা দিয়াতের অর্ধেক পরিশোধ করতো। পক্ষান্তরে বনী কুরাইযাহ বনী নাযীরের কাউকে হত্যা করলে তাদেরকে পূর্ণ দিয়াত দিতে হতো। উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের মাঝে সমতা প্রতিষ্ঠা করলেন।

হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

অনুচ্ছেদ-১১ঃ বিচারকার্য পরিচালনায় ইজতিহাদ করা

৩৫৯২. মু’আয ইবনু জাবাল (রাদি.) কতিপয় সঙ্গীর সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন তাকে ইয়ামানে পাঠানোর ইচ্ছা করলেন তখন বললেনঃ তোমার নিকট যখন কোন মোকদ্দমা আনা হবে, তখন তুমি কিসের ভিত্তিতে এর ফায়সালা করবে? তিনি বললেন, আল্লাহ্‌র কিতাব মোতাবেক। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি যদি আল্লাহ্‌র কিতাবে এর কোন ফায়সালা না পাও? মু’আয (রাদি.) বললেন, তাহলে রাসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সুন্নাত অনুযায়ী। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি যদি রাসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) সুন্নাত এবং আল্লাহ্‌র কিতাবে এর ফায়সালা না পাও? মু’আয বললেন, তাহলে আমি ইজতিহাদ করবো এবং অলসতা করবো না। তখন নবী (সাঃআঃ) মু’আযের বুকে হাত মেরে বললেনঃ সকল প্রশংসা সেই আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি তাঁর রাসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) প্রতিনিধিকে আল্লাহ্‌র রাসূলের মনঃপুত কাজ করার তৌফিক দিয়েছেন। [৩৫৯২]

দুর্বল : মিশকাত (৩৭৩৭)। [৩৫৯২] তিরমিযী, আহমাদ। ইমাম বুখারী ‘আত-তারীকুল কাবীর’ গ্রন্থে হারিস ইবনু ‘আমরের জীবনীতে বলেন : হাদীসটি সহীহ নয় এবং তাকে এই মুরসাল বর্ণনা ছাড়া চেনা যায় না। ইমাম তিরমিযী বলেন : আমাদের নিকট এই সানাদটি মুত্তাসিল নয়। হাফিয ‘আত-তাক্বরীব’ গ্রন্থে বলেন : হারিস ইবনু ‘আমর অজ্ঞাত (মাজহুল)। শায়খ আলবানী এর উপর আলোচনা করেছেন যঈফাহ হা/৮৮১। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৫৯৩. মু’আয ইবনু জাবাল (রাদি.) সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) যখন তাকে ইয়ামানে প্রেরণ করলেন… অতঃপর পূর্ববর্তী হাদীসের অনুরূপ। [৩৫৯৩]

[৩৫৯৩] তিরমিযি, দারাকুতনি, আহমাদ। ইমাম তিরমিযি বলেন, আমরা হাদিসটির এই সনদ ছাড়া অন্য কোন সনদ অবহিত নই এবং এর সনদ মুত্তাসিল নয়। সনদে বিচ্ছিন্নতা ঘটেছে।

হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-১২ঃ সন্ধি স্থাপন

৩৫৯৪. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মুসলিম সমাজে পরস্পরের মধ্যে সন্ধি স্থাপন বৈধ। ইমাম আহমাদের বর্ণনায় রয়েছে : তবে এমন সন্ধি বৈধ নয় যা হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করে। সুলাইমান ইবনু দাঊদের বর্ণনায় রয়েছে : রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ মুসলিমরা নিজেদের (চুক্তিপত্রের) শর্তসমূহ পালন করতে বাধ্য।

হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

৩৫৯৫. কা’ব ইবনু মালিক (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে মাসজিদে নাববীর মধ্যে ইবনু আবূ হাদরাদকে তার দেয়া ঋণ পরিশোধ করতে তাগাদা দিলেন। এ সময় উভয়ের কণ্ঠস্বর উঁচু হলে রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) নিজ ঘর হতে এগিয়ে এলেন এবং দরজার পর্দা উঠিয়ে তিনি কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে বললেনঃ হে কা’ব! তিনি বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি উপস্থিত। তিনি কা’বকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেনঃ তোমার প্রাপ্য ঋণের অর্ধেক ছেড়ে দাও। কা’ব বললেন, আমি তাই করলাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! নবী (সাঃআঃ) (ঋণ গ্রহীতাকে) বললেনঃ উঠো এবং অবশিষ্ট ঋণ পরিশোধ করো।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৩ঃ সাক্ষ্য প্রদানের বর্ণনা

৩৫৯৬. যায়িদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ আমি কি তোমাদেরকে উত্তম সাক্ষী সম্পর্কে জানাবো না? যে ব্যক্তি সাক্ষী খোঁজার আগেই সাক্ষী দেয় অথবা নিজের সাক্ষ্য সম্পর্কে জানায়, সেই উত্তম সাক্ষী। বর্ণনাকারী ‘আবদুল্লাহ ইবনু আবূ বকর সন্দিহান যে, তার পিতা শব্দদ্বয়ের কোনটি বলেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় কিন্তু জানে না যে, এতে কার উপকার হচ্ছে। হামদানী বলেন, শাসককে জানানো তার কর্তব্য। ইবনুস-সারহ বলেন, সে শাসককে জানাবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৪ঃ যে লোক প্রকৃত ঘটনা না জেনেই মামলায় সাহায্য করে

৩৫৯৭. ইয়াহইয়া ইবনু রাশিদ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমরা ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমারের (রাদি.) অপেক্ষায় বসে রইলাম। তিনি বেরিয়ে এসে আমাদের নিকট বসলেন এবং বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) -কে বলতে শুনেছি : যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোন হাদ্দ বাস্তবায়িত করার পথে বাধা সৃষ্টি করে, সে আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। যে ব্যক্তি জেনে বুঝে মিথ্যা মামলা দেয়, সে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে। যে ব্যক্তি কোন ঈমানদারের এমন দোষ বলে বেড়ায় যা তার মধ্যে নেই, আল্লাহ তাকে জাহান্নামীদের আবর্জনার মধ্যে বসবাস করাবেন। অতএব তাকে শিঘ্রই তার কথা হতে তাওবাহ এবং ত্যাগ করা উচিত।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৫৯৮. ইবনু ‘উমার (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেন: … অতঃপর পূর্বোক্ত হাদীদের অনুরূপ। তিনি বলেন: যে ব্যক্তি কোন বিবাদে অন্যায়মূলক সাহায্য করলো সে আল্লাহর গযবে পতিত হলো। [৩৫৯৮]

দুর্বল : ইরওয়া (২৩১৮) [৩৫৯৮] ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী । সানাদে মাত্বার সম্পর্কে হাফিয আত-তাক্বরীব গ্রন্থে বলেনঃ সত্যবাদী, ভুল প্রচুর । হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৫ঃমিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান

৩৫৯৯. খুরাইম ইবনু ফাতিক (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজরের সলাত আদায় করলেন। সলাত শেষে তিনি দাঁড়িয়ে তিনবার বললেনঃ মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া আল্লাহর সাথে শির্ক করার সমতুল্য। অতঃপর তিনি কুরআনের আয়াত পড়লেন: “অতএব তোমরা মূর্তির কদর্যতা হতে দূরে থাকো, মিথ্যা কথা পরিহার করো, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না” (সূরাহ হাজ্জ : ৩০-৩১)। [৩৫৯৯]

দুর্বল : মিশকাত (৩৭৭৯)। [৩৫৯৯] তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ। ইমাম তিরমিযী বলেন: ‘আমাদের নিকট এটি অধিক সহীহ ।’ সানাদে যিয়াদ এবং আবূ সুফিয়ান উভয়ে মাক্ববূল। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৬ঃ যার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়

৩৬০০. আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খিয়ানতকারী ও খিয়ানতকারীনীর সাক্ষ্য এবং নিজের ভাইয়ের সাথে শত্রুতা পোষণকারীর সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি কোন পরিবারের অধীনস্থ খাদেম ও আশ্রিত ব্যক্তির সাক্ষ্যও বর্জন করেছেন, তবে অন্যের পক্ষে তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য বলেছেন। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, গিম্র অর্থ হলো শত্রুতা; কানি’ অর্থ আশ্রিতজন, অধীনস্থ, বিশেষ ভৃত্যের মত। [৩৬০০]

[৩৬০০] ইবনু মাজাহ, আহমাদ।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৬০১. সুলাইমান ইবনু মূসা হতে ‘আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ)-এর মাধ্যমে তার পিতার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন: খিয়ানাতকারী ও খিয়ানাতকারীনী, ব্যভিচারী ও ব্যভিচারীনী এবং কোন মুসলিম ভাইয়ের প্রতি হিংসা পোষণকারীর সাক্ষ্য বৈধ নয়। [৩৬০১]

[৩৬০১] বায়হাক্বী ।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৭ঃ শহরবাসীর পক্ষে গ্রাম্য লোকের সাক্ষ্য

৩৬০২. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বলতে শুনেছেন: শহরে বসবাসকারী লোকের জন্য জঙ্গলে, গ্রামে বা মরুভূমিতে বসবাসকারী লোকের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-১৮ঃ দুধপান সম্পর্কিত বিষয়ে সাক্ষ্য দেয়া

৩৬০৩. ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ‘উক্ববাহ ইবনুল হারিস আমাকে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আমার এক বন্ধু হাদীসটি ‘উক্ববাহ্ সূত্রে আমাকে বলেছেন। আমার বন্ধুর মাধ্যমে পাওয়া হাদীসটি আমি ভালোভাবে মনে রেখেছি। ‘উক্ববাহ (রাদি.) বলেন, আবূ ইহাবের মেয়ে উম্মু ইয়াহইয়াকে আমি বিয়ে করি। একটি কালো মহিলা আমাদের নিকট এসে বললো, সে আমাদের উভয়কে দুধ পান করিয়েছে। আমি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে এ কথা অবহিত করলাম। কিন্তু তিনি আমার কথায় গুরুত্ব দিলেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে মিথ্যাবাদিনী। তিনি বললেনঃতুমি তা কীভাবে জানলে! সে তো যা বলার বলেছে। তুমি তোমার স্ত্রীকে ত্যাগ করো।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬০৪. ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রহঃ) সূত্র হতে বর্ণিতঃ

তিনি ‘উবাইদ ইবনু আবূ মারইয়াম হতে ‘উক্ববাহ ইবনুল হারিসের সূত্রে এ হাদীস বর্ণনা করেছেন, …। [৩৬০৪]

আমি এটি সহীহ এবং যঈফে পাইনি।

[৩৬০৪] বুখারী, তিরমিযী, নাসায়ী, আহমাদ । ইমাম তিরমিযী বলেন : হাদীসটি হাসান সহীহ ।

হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়

অনুচ্ছেদ-১৯ঃ যিম্মীদের সাক্ষ্য এবং সফরের সময় ওসিয়াত প্রদান

৩৬০৫. আশ-শা‘বী (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

দাকূকাহ নামক শহরে এক মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন হলো। সে তার কৃত ওয়াসিয়াতের সাক্ষী রাখতে কোন মুসলিম না পেয়ে দু‘জন আহলে কিতাবকে সাক্ষী করে গেলো। তার উভয়ে কুফায় এসে আবূ মূসা আল-আশ‘আরীর (রাদি.) নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে তার ওয়াসিয়াত সম্পর্কে জানালো এবং তার পরিত্যক্ত সম্পদও পেশ করলো। আল-আশ’আরী (রাদি.) বললেন, বিষয়টি এমন যা রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর যুগে ঘটেছিল। তিনি উভয়কে ‘আসর সলাতের পর আল্লাহর নামে শপথ করালেন। তারা উভয়ে আল্লাহর নামে শপথ করে বললো, তারা খেয়ানত করেনি, মিথ্যা বলেনি, কিছু রদবদল করেনি, কিছু গোপন করেনি এবং কোনরূপ পরিবর্তন করেনি। এটাই ছিল তার ওয়াসিয়াত এবং এ হলো তার পরিত্যক্ত সম্পদ। ফলে তিনি তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করলেন।

সানাদ সহীহ, যদি শা‘বী হাদীসটি আবু মূসা হতে শুনে থাকেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬০৬. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সাহ্ম গোত্রের এক লোক তামীম আদ-দারী ও ‘আদী ইবনু বাদ্দার সাথে বের হলো। সাহম গোত্রের লোকটি এমন স্থানে মারা গেলো যেখানে কোন মুসলিমের বসতি ছিলো না। তার সঙ্গীদ্বয় যখন তার পরিত্যক্ত মালামাল নিয়ে ফিরে আসলো, দেখা গেলো স্বর্ণের কারুকার্য খচিত একটি রূপার পেয়ালা হারিয়ে গেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের উভয়কে শপথ করালেন। পাত্রটি পরে মাক্কাহ্তে পাওয়া গেলো। তারা (পাত্রের প্রাপক) বললো, আমরা এটা তামীম ও ‘আদীর কাছ হতে কিনেছি। অতঃপর মৃত সাহমীর দু’জন উত্তরাধিকারী দাঁড়িয়ে শপথ করে বললো, আমাদের সাক্ষ্য তাদের সাক্ষ্যের চেয়ে অধিক সত্য। আমাদের সাথী এ পাত্রটির মালিক ছিলো। ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) বলেন, তাদের প্রসঙ্গে এ আয়াত অবতীর্ণ হলো: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কারো মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে …” (সূরাহ আল-মায়িদাহ: ১০৬-৮)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২০ঃ বিচারক মাত্র একজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, যদি তিনি জানেন যে, লোকটি বিশ্বস্ত

৩৬০৭. ‘উমারাহ ইবনু খুযাইমাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তার চাচা তাকে জানিয়েছেন যে, তিনি নবী (সাঃআঃ) এর সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। একদা নবী (সাঃআঃ) এক বেদুঈনের কাছ হতে একটি ঘোড়া কিনলেন। নবী (সাঃআঃ) তাকে ঘোড়ার দাম নেয়ার জন্য তাঁর পিছে পিছে আসতে বললেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দ্রুত চলতে লাগলেন। তাতে বেদুঈন পিছে পড়ে গেলো। তখন কতিপয় ব্যক্তি বেদুঈনের সামনে এসে দরদাম করতে শুরু করলো। তারা জানতো না যে, নবী (সাঃআঃ) এটা কিনেছেন। বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে ডেকে বললো, যদি আপনি কিনতে চান তবে কিনুন, নতুবা আমি এটা বিক্রি করে দিচ্ছি। নবী (সাঃআঃ) বেদুঈনের ডাক শুনে দাঁড়ালেন। তিনি বললেনঃআমি কি তোমার কাছ হতে এটা ক্রয় করিনি? বেদুঈন বললো, আল্লাহর কসম! না, আমি আপনার নিকট তা বিক্রি করিনি। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃহাঁ, আমি কিছুক্ষণ আগেই তোমার কাছ হতে এটা কিনেছি। বেদুঈন বলতে লাগলো, তাহলে সাক্ষী পেশ করুন। তখন খুযাইমাহ্ ইবনু সাবিত (রাদি.) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই তুমি এটা তাঁর নিকট বিক্রি করেছো। নবী (সাঃআঃ) খুযাইমাহ্কে বললেনঃতুমি কী সাক্ষ্য দিচ্ছো? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কথার সত্যতার অনুকূলে সাক্ষ্য দিচ্ছি। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) খুযাইমাহ্র একার সাক্ষ্য দুইজনের সাক্ষ্যের সমান গণ্য করলেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২১ঃ একটি শপথ ও একটি সাক্ষীর ভিত্তিতে ফায়সালা দেয়া

৩৬০৮. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) একটি শপথ এবং একজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬০৯. আমর ইবনু দীনার (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে উপরের হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। সালামাহ (রাদি.) তার হাদীসে বলেন, ‘আমর (রহঃ) বলেছেন, তা ছিল অধিকারস্বত্ব সম্পর্কিত বিষয়।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬১০. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) একজন সাক্ষী এবং শপথের ভিত্তিতে ফায়সালা দিয়েছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬১১. রবী’আহ (রহঃ) হতে আবূ মুস‘আব সূত্র হতে বর্ণিতঃ

উপরোল্লেখিত হাদীস বর্ণিত।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬১২. যাবীব আল-আনবারী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনবার গোত্রের বিরুদ্ধে একদল সৈন্য প্রেরণ করলেন। তারা তাদেরকে তায়েফের কাছে রুকবাহ নামক জায়গায় গ্রেপ্তার করে নবী (সাঃআঃ) -এর নিকট নিয়ে এলো। আমি সকলের আগেই নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট পৌঁছলাম। আমি বললাম, আসসালামু ‘আলাইকুম ইয়া নাবিয়্যাল্লাহি ওয়ারহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আমাদের নিকট আপনার সৈন্যবাহিনী গিয়েছে এবং তারা আমাদেরকে ধরে নিয়ে এসেছে। অথচ আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি এবং আমাদের পশুগুলোর কান চিরে ফেলেছি। যখন আনবার গোত্রের লোকেরা এসে পৌঁছলো তখন নবী (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃতোমরা এ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্বে ইসলাম কবুল করেছ এর কোনো প্রামাণ আছে কি? আমি বললাম, হাঁ আছে। তিনি বললেনঃকে তোমার সাক্ষী? আমি বললাম, আনবার গোত্রের সামুরাহ এবং অন্য একজন, তার নামও তাঁকে বললাম। অতঃপর লোকটি সাক্ষ্য দিলো। সামুরাহ সাক্ষ্য দিতে চাইলেন না। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃসে তো তোমার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে সম্মত নয়। এখন তুমি কি তোমার অপর সাক্ষীর সাথে শপথ করবে? আমি বললাম, হাঁ। তিনি আমাকে শপথ করালেন। আমি আল্লাহর নামে কসম করলাম, আমরা অমুক অমুক দিন ইসলাম কবুল করেছি এবং আমাদের পশুগুলোর কান চিরে ফেলেছি। অতঃপর নবী (সাঃআঃ) সৈনিকদের বললেনঃযাও, তোমরা অর্ধেক সম্পদ রাখো এবং তাদের সন্তান-সন্ততিদের গায়ে হাত দিও না। মহান আল্লাহ যদি মুজাহিদদের আমল নিষ্ফল হওয়া অপছন্দ না করতেন তবে আমি তোমাদের এক গাছি রশিও রেখে দিতাম না। যাবীর (রহঃ) বলেন, আমার মা আমাকে ডেকে বললেন, এ লোকটি (সৈন্য) আমার বিছানা নিয়ে গেছে। আমি আল্লাহর নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট গিয়ে বিষয়টি জানালাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তাকে ধরে আনো। আমি তার ঘাড়ে আমার কাপড় জড়িয়ে তাকে ধরে নিয়ে এলাম এবং তার পাশে একই স্থানে দাঁড়ালাম। আল্লাহর নবী (সাঃআঃ) আমাদের দাঁড়ানো অবস্থায় দেখে বললেনঃতোমার বন্দীর ব্যাপারে কী করতে চাও? আমি আমার হাত হতে তাকে ছেড়ে দিলাম। আল্লাহর নবী (সাঃআঃ) উঠে দাঁড়ালেন, অতঃপর লোকটিকে বললেনঃএর মায়ের কাছ হতে তুমি যে বিছানা নিয়ে এসেছো তা একে ফিরিয়ে দাও। সে বললো, হে আল্লাহর নাবী! তা আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর নবী (সাঃআঃ) লোকটির তরবারি খুলে নিয়ে তা আমাকে দিলেন, অতঃপর লোকটিকে বললেনঃযাও, তাকে কয়েক সা‘ খাদ্যদ্রব্য প্রদান করো। সুতরাং সে আমাকে কয়েক সা‘ বার্লি দিলো। [৩৬১২]

দুর্বল : যঈফাহ (৫৭৩১) [৩৬১২]বায়হাক্বী । এর সানাদে ‘আম্মার ইবনু শু‘আইল ও তার পিতা দু’জনেই মাজহুল । হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২২ঃ একই বস্তুর দু’জন দবিদার, অথচ কারোই প্রমান নেই

৩৬১৩. আবূ মূসা আল-আশ‘আরী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

দু’ ব্যক্তি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট একটি উট বা একটি পশুর দাবি পেশ করলো। তাদের উভয়েরই কোনো প্রমাণ ছিলো না। নবী (সাঃআঃ) পশুটি উভয়কে দান করলেন। [৩৬১৩]

দুর্বল : ইরওয়া (২৬৫৬) [৩৬১৩]নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, বায়হাক্বী । ক্বাতাদাহর বর্ণনা নিয়ে হাদীসের সানাদে মতবিরোধের কারণে হাদীসটি দোষযুক্ত । হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬১৪. সাঈদ (রহঃ) সূত্র হতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে উপরোক্ত হাদীস বর্ণিত। [৩৬১৪]

সনদঃ পাওয়া যায়নি।

[৩৬১৪] এর পূর্বেরটি দেখুন ।

হাদিসের মানঃ নির্ণীত নয়

৩৬১৫. ক্বাতাদাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

দুই ব্যক্তি নবী (সাঃআঃ)-এর যুগে একই উটের মালিকানা দাবি করলো। উভয়ে দু’জন করে সাক্ষীও পেশ করলো। নবী (সাঃআঃ) উটটি উভয়ের মধ্যে সমানভাগে বন্টন করলেন। [৩৬১৫]

দুর্বল : মিশকাত (৩৭৭২)। [৩৬১৫] বায়হাক্বী । এর পূর্বেরটি দেখুন ।হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬১৬. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

একদা দু’ ব্যক্তি একটি জিনিসের মালিকানার দাবি নিয়ে নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট তাদের বিবাদ পেশ করলো। তাদের উভয়েরই কোন প্রমাণ ছিলো না। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃলটারীর মাধ্যমে নির্ধারণ করো কে কসম করবে, চাই তারা এটা পছন্দ করুক বা না করুক।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬১৭. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ (বাদী-বিবাদী) উভয়েই কসম করা অপছন্দ বা পছন্দ করলে উভয়ের মধ্যে কে কসম করবে তা লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণ করবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬১৮. সাঈদ ইবনু আবূ আরূবাহ (রহঃ) হতে ইবনু মিনহালের সূত্র হতে বর্ণিতঃ

অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। তিনি বলেন, বিবাদটি ছিলো একটি পশুকে কেন্দ্র করে। বাদী-বিবাদী উভয়েরই কোন সাক্ষী ছিলো না। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শপথ কে করবে তা লটারীর মাধ্যমে নির্ধারণের আদেশ দিলেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৩ঃ বিবাদীকে শপথ করতে হবে

৩৬১৯. ইবনু আবূ মুলাইকাহ (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) আমাকে লিখে পাঠালেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিবাদীকে কসম খাওয়ানোর আদেশ দিয়েছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৪ঃ শপথ করার নিয়ম

৩৬২০. ইবনু ‘আব্বাস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে শপথ করানোর সময় বললেনঃ সেই আল্লাহ্‌র শপথ করো যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তোমার নিকট বাদীর কোন পাওনা নেই। তিনি বিবাদীকে এই শপথ করিয়েছিলেন।

সানাদ দূর্বল : মিশকাত(৩৭৭৪)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৫ঃ বিবাদী যিন্মী হলে শপথ করবে কি?

৩৬২১. আল-আশ’আস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি এবং এক ইয়াহুদী এক খন্ড জমির মালিক ছিলাম। সে আমার মালিকানা অস্বীকার করলে আমি তাকে নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট নিয়ে যাই। নবী (সাঃআঃ) আমাকে বললেনঃ তোমার কি সাক্ষী আছে? আমি বললাম, না। তিনি ইয়াহুদীকে বললেনঃ কসম খাও। আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সে যখনই শপথ করবে, আমি আমার সম্পত্তি হতে বঞ্চিত হবো। অতঃপর মহান আল্লাহ্ অবতীর্ন করলেন : “যারা আল্লাহ্‌র সাথে কৃত ওয়াদা ও নিজেদের শপথসমূহ সামান্য মূল্যে বিক্রি করে, আর পরকালে তাদের জন্য কোন অংশ নেই। ক্বিয়ামাতের দিন আল্লাহ্ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তাকিয়ে দেখবেন না, আর তাদেরকে পবিত্র করবেন না। তাদের জন্য কঠিন ও পীড়াদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (সূরাহ আল-‘ইমরান : ৭৭)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৬ঃ অনুপস্হিত বিষয়ে নিজের জানা মতে শপথ করা সম্পর্কে

৩৬২২. আল-আশ’আস ইবনু ক্বায়িস (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

কিনদা এলাকার জনৈক ব্যক্তি ও হাদরামওতের এক লোক ইয়ামান হতে জমি সংক্রান্ত ঝগড়া নিয়ে নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্হিত হলো। হাদরামী বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! তার পিতা আমার জমি ছিনিয়ে নিয়েছিলো, বর্তমানে তা তার দখলে রয়েছে। তিনি বললেনঃ তোমার কোন সাক্ষী আছে কি? হাদরামী বললো, না। কিন্তু আমি তাকে শপথ করে বলতে পারি, আল্লাহ্ জানেন যে, তা আমার জমি এবং তার পিতা আমার এই জমিটা জবরদখর করে নিয়েছে – তাও সে অবহিত আছে। অতঃপর কিনদী শপথ করার জন্য তৈরী হলো। এভাবে হাদীসের শেষ পর্যন্ত বর্ণিত।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬২৩. আলক্বামাহ ইবনু ওয়াইল (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা হাদরামাওতের এক লোক ও কিনদার এক ব্যক্তি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট উপস্হিত হলো। হাদরামী বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! এ লোক আমার পিতার এক খন্ড জমি জবরদখল করে নিয়েছে। কিনদী বললো, এটা আমার জমি, আমার হাতে আছে এবং আমিই তা চাষাবাদ করে আসছি, এর উপর তার কোন অধিকার নেই। নবী (সাঃআঃ) হাদরামীকে বললেনঃ তোমার কি কোন সাক্ষী আছে? সে বললো, না। তিনি বললেনঃ তবে তোমাকে তার শপথের উপর নির্ভর করতে হবে। হাদরামী বললো, হে আল্লাহ্‌র রাসূল! সে তো এক পাপাচারী, কি শপথ করছে তা পরোয়া করবে না এবং কোন কিছু থেকেই সে বিরত হয় না। তিনি বললেনঃ তোমার কিছুই করার নেই, তোমাকে তার শপথের উপরই নির্ভর করতে হবে।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৭ঃ যিন্মীকে শপথ করানোর নিয়ম

৩৬২৪. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইয়াহুদীদেরকে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহ্‌র কসম দিয়ে বলছি, যিনি মূসা (আঃ)-এর উপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন! তোমরা ব্যভিচারীর জন্য তাওরাতে কী ধরনের শাস্তির উল্লেখ দেখতে পাও? পুরো হাদীসটি রজম সংক্রান্ত ঘটনায় বর্ণিত হয়েছে। [৩৬২৪]

দূর্বল : ইরওয়া (৯৫৯)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬২৫. আয-যুহরী (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত। এতে রয়েছে : মুযাইনাহ গোত্রের এক লোক যিনি জ্ঞানের অনুসরণ করেন এবং তার স্মৃতিশক্তি হতে বলেন যে, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহঃ) এ হাদীস বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বর্ণনাকারী অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। [৩৬২৫]

দূর্বল : এর পূর্বেরটি দেখুন। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬২৬. ‘ইকরিমাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) ইবনু সূরিয়াকে বললেনঃ ঐ আল্লাহ্‌র কসম করে তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যিনি ফেরাউন বাহিনীর অত্যাচার হতে তোমাদের মুক্তি দিয়েছেন, সাগর পার করে দিয়েছেন, তোমাদের উপর মেঘমালার ছায়াদান করেছেন, ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ নামক খাদ্য অবতীর্ণ করেছেন এবং তোমাদের উপর মূসা (আঃ)-এর মাধ্যমে তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন! বলো, তোমরা কি তোমাদের সেই কিতাবে রজমের শাস্তির আদেশ দেখতে পাও? ইবনু সূরিয়া বললো, আপনি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের বরাত দিয়েছেন। আপনার প্রশ্নের মিথ্যা উত্তর দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৮ঃ যিনি নিজ অধিকার রক্ষার্থে শপথ করেন

৩৬২৭. ‘আওফ ইবনু মালিক (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

একদা নবী (সাঃআঃ) দুই ব্যক্তির মাঝে ফায়সালা দিলেন। যার বিপক্ষে ফায়সালা দেয়া হলো সে পিঠ ফিরিয়ে চলে যাওয়ার সময় বললোঃ আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম অভিভাবক। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ বোকামীর জন্য তিরস্কার করেন। কিন্তু তোমার তো চতুর হওয়া উচিত। যদি কোন কারণে তুমি পরাজিত হতে তখন বলতে, আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনিই সর্বোত্তম অভিভাবক।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-২৯ঃ ঋণ সংক্রান্ত ও অন্যান্য বিষয়ে আটক করা সম্পর্কে

৩৬২৮. আমর ইবনুশ শারীদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ সচ্ছল ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ না করলে তার মান-সম্মানের উপর হস্তক্ষেপ করা যায় এবং তাকে শাস্তি দেয়া যায়। ইবনুল মুবারক (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো, তার প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করা বৈধ এবং অর্থ তাকে আটক করা যাবে।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৬২৯. হিরমাস ইবনু হাবীব (রহঃ) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আমার এক ঋণগ্রহীতাকে নিয়ে এলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ তুমি তার পিছনে লেগে থাকো। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে তামীম গোত্রের সরদার! তোমার কয়েদীকে তুমি কি করতে চাও।

হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬৩০. বাহ্য ইবনু (রাদি.) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে অনুমানের ভিত্তিতে আটক করেছিলেন।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৬৩১. বাহ্য ইবনু হাকীম (রাদি.) হতে পর্যায়ক্রমে তার পিতা ও দাদার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

তিনি অর্থাৎ ইবনু কুদামাহ্র বর্ণনা মোতাবেক বাহ্য ইবনু হাকীমের দাদার ভাই বা তার চাচা, আর মু’আম্মালের বর্ণনা মোতাবেক বাহ্যের দাদা মু’আবিয়াহ (রাদি.) নবী (সাঃআঃ)-এর খুত্ববাহ প্রদানের সময় তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, পুলিশ আমার প্রতিবেশীকে কেন আটকে রেখেছে? কথাটা তিনি দু’বার বললেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দু’বারই তার কথায় ভ্রুক্ষেপ করলেন না। অতঃপর তিনি কিছু একটা বললে নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তার প্রতিবেশীকে ছেড়ে দাও।

সানাদ হাসান।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩০ঃ প্রতিনিধি নিয়োগ

৩৬৩২. জাবির ইবনু ‘আবদুল্লাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

বর্ণনাকারী আবূ নু’আইম (রহঃ) জাবির (রাদি.)-কে এ হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। জাবির বলেছেন, আমি খায়বার এলাকায় যাওয়ার ইচ্ছা করলাম। অতএব আমি নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট আসলাম। তাঁকে সালাম দিয়ে বললাম, আমি খায়বারে যেতে চাই। তিনি বললেনঃ যখন তুমি আমার প্রতিনিধির নিকট আসবে তখন তার কাছ হতে পনেরো ওয়াসক নিবে। সে তোমার নিকট এর প্রমাণ চাইলে তুমি তার কন্ঠনালীতে হাত রাখবে। [৩৬৩২]

দূর্বল : মিশকাত (২৯৩৫)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

অনুচ্ছেদ-৩১ঃ বিচার সংক্রান্ত কিছু সমস্যা

৩৬৩৩. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা রাস্তা নিয়ে মতভেদ করলে তা সাত গজ পরিমান চ্যাপ্টা করো।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬৩৪. আবূ হুরাইরাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমাদের কেউ তার অপর ভাইয়ের নিকট তার দেয়ালের সাথে খুঁটি গাড়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে সে যেন তাকে নিষেধ না করে। এ হাদীস শুনে লোকেরা ঘাড় নীচু করলো। আবূ হুরায়রা (রাদি.) বললেন, কি ব্যাপার! তোমরা এ হাদীস হতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছো? আমি তোমাদের জন্য এ হাদীস শিরোধার্য করে দিবো।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬৩৫. নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথী আবূ সিরমাহ (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ কেউ অপরের ক্ষতি করলে আল্লাহ্ তার ক্ষতিসাধন করবেন। কেউ অযৌক্তিকভাবে কারো বিরোধীতা করলে আল্লাহ্ তার বিরোধী হবেন।

হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস

৩৬৩৬. সামুরাহ ইবনু জুনদুব (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

জনৈক আনসারীর বাগানে তার কিছু খেজুর গাছ ছিলো। আনসারী তার পরিবারসহ এখানে বাস করতেন। সামুরাহ (রাদি.) বাগানে আসা-যাওয়া করতেন। এতে আনসারী অসুবিধাবোধ করতেন। তিনি তার খেজুর গাছগুলো ক্রয় করতে চাইলেন, কিন্তু সামুরাহ (রাদি.) এতে সম্মত হলেন না। আনসারী তাকে এটা বদল করার জন্য প্রস্তাব দিলেন, কিন্তু তিনি এ প্রস্তাবেও সম্মত হলেন না। আনসারী নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে ঘটনাটি জানালেন। নবী (সাঃআঃ) তাকে ডেকে এনে এটা বিক্রি করে দেয়ার কথা বললেন, কিন্তু তিনি সম্মত হলেন না। তিনি এটা বদল করার প্রস্তাব দিলেন, সামুরাহ তাও মানলেন না। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি তাকে এটা দান করো। তিনি তাকে উৎসাহিত করে বললেনঃ তোমার জন্য এই এই জিনিস রয়েছে। কিন্তু তাতেও তিনি সম্মত হলেন না। নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ তুমি কষ্টদানকারী। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আনসারীকে বললেনঃ যাও, তুমি তার খেজুর গাছগুলো উপড়ে ফেলে দাও। [৩৬৩৬]

দূর্বল : মিশকাত (৩০০৬)। হাদিসের মানঃ দুর্বল হাদিস

৩৬৩৭. ‘আবদুল্লাহ ইবনুয যুবাইর (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

হাররা নামক স্থান হতে প্রবাহিত পানির বণ্টন নিয়ে যুবাইরের (রাদি.) সাথে এক ব্যক্তির বিবাদ হলো। আনসারী লোকটি বললো, পানিকে প্রবাহিত হয়ে আসতে দাও। কিন্তু যুবাইর (রাদি.) এতে সম্মত হলেন না। নবী (সাঃআঃ) যুবাইরকে বললেনঃ হে যুবাইর! তোমার জমিতে পানি দাও; অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর জমির দিকে তা ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় আনসারী রাগান্বিত হয়ে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! সে আপনার ফুফাতো ভাই সেজন্য পক্ষপাতিত্ব করছেন! তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। তিনি বললেনঃ তোমার জমিতে পানি দাও, অতঃপর তা আটকে রাখো যাতে আইল পর্যন্ত পৌঁছে। যুবাইর (রাদি.) বলেন, আল্লাহর কসম! আমার মতে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছেঃ “না, হে মুহাম্মাদ! আপনার রবের কসম, এরা কিছুতেই ঈমানদার হতে পারে না, যতক্ষণ তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদে আপনাকে বিচারপতিরূপে মেনে না নিবে। অতঃপর আপনি ফায়সালা করবেন, সে সম্পর্কে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ কুণ্ঠাবোধ করবে না; বরং তার সামনে নিজেদেরকে পূর্ণরূপে সোপর্দ করবে” (সূরাহ আন-নিসাঃ ৬৫)।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬৩৮. সা‘লাবা ইবনু আবূ মালিক (রহঃ) হতে বর্ণিতঃ

তিনি তার মুরুব্বীদের আলোচনা করতে শুনেছেন, কুরাইশ বংশের এক ব্যক্তির ইয়াহুদী বনী কুরাইযাহ্‌র পানির সাথে অংশীদার ছিলো। সে নবী (সাঃআঃ)-এর নিকট মাহযূর মাঠ হতে প্রবাহিত পানি সম্পর্কে অভিযোগ করলো, যাতে বৃষ্টির পানি এসে জমা হতো। এর পানি সবাই বণ্টন করে নিয়ে যেতো। রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তাদের মধ্যে ফায়সালা দিলেনঃ প্রথম ব্যক্তি পায়ের গোছা পর্যন্ত জমিতে পানি জমা করবে। অতঃপর উচ্চ ভূমির মালিক নিম্ন ভূমির মালিকের দিকে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

৩৬৩৯. আমর ইবনু শু‘আইব (রহঃ) হতে তার পিতা ও তার দাদার সূত্র হতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) মাহযূর মাঠের পানি সম্পর্কে এই ফায়সালা দিয়েছেনঃ পায়ের গোছা ডুবে যাওয়ার পরিমাণ হওয়া পর্যন্ত এর পানি আটকিয়ে রাখা যাবে। অতঃপর উচ্চ ভূমির মালিক নিম্ন ভূমির মালিকের দিকে পানি ছেড়ে দিবে।[৩৬৩৯]

[৩৬৩৯] ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী ।

হাদিসের মানঃ হাসান সহিহ

৩৬৪০.আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাদি.) হতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, দুই ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নিকট একটি খেজুর গাছের পরিধি সম্পর্কিত ঝগড়া নিয়ে হাযির হলো। এক বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি তা পরিমাপ করার আদেশ দিলেন। তদানুযায়ী মাপা হলো এবং পরিমাণে সাত গজ হলো। অপর বর্ণনা মোতাবেক এর পরিমাণ হলো পাঁচ গজ। তিনি তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিলেন। ‘আবদুল ‘আযীয (রহঃ) বলেন, নবী (সাঃআঃ) ঐ খেজুর গাছের একটি ডাল দিয়ে মাপার আদেশ দিলে তা দিয়ে মাপা হয়।

হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস

Comments

Leave a Reply