ফাযায়িলে কালেমা

Fazail E Amal pdf কালেমা অধ্যায়

ফাযায়েলে তাওহীদ >> সহীহ ফাযায়িলে আমল এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কালেমা অধ্যায়

১. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণ ও ঈমান আনার ফাযীলাত
২. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণে অতীতের সৎ আমল নষ্ট হয় না
৩. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণ নিরাপত্তার বিধান দেয়
৪. পরিচ্ছেদঃ নবী [সাঃ]- কে না দেখে ঈমান আনার ফাযীলাত
৫. পরিচ্ছেদঃ যেআমলের দ্বারা ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়
৬. পরিচ্ছেদঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ– বলার ফাযীলাত
৭. পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের ফাযীলাত
৮. পরিচ্ছেদঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”- এর শর্তসমূহ
৯. পরিচ্ছেদঃ শির্‌ক না করার ফাযীলাত

১. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণ ও ঈমান আনার ফাযীলাত

১৪ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন :

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ 

আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না রাসুলুল্লাহু, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং আমি আল্লাহ্‌র রাসূল।

যে কোন বান্দা সন্দেহাতীতভাবে এই বাক্য দু`টির ওপর ঈমান আনবে, সে আল্লাহ্‌র সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করিবে যে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হইবে না।

হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৪৮- তাহক্বীক্ব শু`আইব আরনাউত্ব ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ : হাদিস সহিহ : তাহক্বীক্ব শায়খ আহমাদ শাকির : এর সানাদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৫ঃ `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃ] বলেছেন: হে খাত্তাবের পূত্র ! যাও, লোকদের মাঝে ঘোষণা করে দাও যে, কেবলমাত্র ঈমানদার লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করিবে। `উমার [রাঃআঃ] বলেন, অতঃপর আমি বের হলাম এবং ঘোষণা করলাম : শুনে রাখো, ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবে না। {১}

{১} হাদিস সহিহ ; সহিহ মুসলিম হা/৩২৩, তাহক্বীক্ব আলবানী : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৬ঃ `উক্ববাহ্ ইবনু আমির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাঃআঃ] বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং পরকালের প্রতি ঈমান রেখে মারা যাবে, তাকে বলা হইবে, তুমি জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যকার যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করো।”

[আহমাদ হা/৯৭- শায়খ শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি। এর শাওয়াদিহ বর্ণনা রয়েছে] হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি

১৭ঃ সুফিয়ান ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন যা আপনার পরে বা আপনি ছাড়া অন্য কাউকে আমি জিজ্ঞেস করবো না। তিনি [সাঃ] বলিলেন : তুমি বলো : আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। অতঃপর এরই উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।”

[সহিহ মুসলিম হা/১৬৮] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৮ঃ `উবাদাহ ইবনুস সামিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি বলে :

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] তাহাঁর বান্দা ও রাসূল, আর নিশ্চয়ই ঈসা [আঃ] আল্লাহর বান্দা, তাহাঁর বান্দীর [মারইয়ামের] পুত্র ও তাহাঁর সেই কালেমা যা তিনি মারইয়ামকে পৌঁছিয়েছেন এবং তাহাঁর পক্ষ হইতে প্রেরিত একটি রূহ মাত্র, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য”

তাকে জান্নাতের আটটি দরজার যেটি দিয়ে প্রবেশ করিতে চাইবে, প্রবেশ করাবেন।

হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৩১৮০ । অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “তার `আমল যা-ই হোক না কেন আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।” [সহীহুল বুখারি হা/৩১৮০, সহিহ মুসলিম হা/১৫০] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

১৯ঃ আবূ বুরদাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তিন ব্যক্তির জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে। এক, ঐ ব্যক্তি যে আহলে কিতাবের অন্তর্ভূক্ত নিজের নবীর [আ] উপর ঈমান এনেছে আবার মুহাম্মাদ [সাঃ]-এর উপরও ঈমান এনেছে। দুই, ঐ ক্রীতদাস যে মহান আল্লাহর হক আদায় করার পাশাপাশি স্বীয় মুনিবের হকও আদায় করে। তিন, ঐ ব্যক্তি যার কোন ক্রীতদাসী রয়েছে। আর সে তাকে উত্তম আদব শিখিয়েছে এবং উত্তমরূপে ইলম শিক্ষা দিয়েছে, অতঃপর তাকে আযাদ করে বিয়ে করেছে, তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়াব রয়েছে।

হাদিস সহীহ্ : সহীহুল বুখারি হা/৯৫- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ মুসলিম হা/৪০৪, আহমাদ হা/১৯৫৩২- তাহক্বীক্ব শু`আইব আরনাউত্ব : সানাদ বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। আহমাদ শাকির বলেন : সানাদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২০ঃ মাঈয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ]- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সকল আমলের মধ্যে সর্বোত্তম `আমল কোনটি? তিনি [সাঃ] বলিলেন : আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা, যিনি একক। এরপর আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করা, অতঃপর কবুল হাজ্জ। এ `আমলগুলো ও অন্যান্য আমলের মধ্যে ফাযীলাতের দিক দিয়ে এই পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে যে পরিমাণ ব্যবধান রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যকার দূরত্বের মাঝে।” {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/১৯০১০, শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২১ঃ `উবাদাহ ইবনু সামিত [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি এ সাক্ষ্য দেয় যে,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] আল্লাহর রাসূল”

আল্লাহ্ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন। {১}

{১} হাদিস সহীহ্ : সহীহ্ মুসলিম হা/১৫১শির্‌ক। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২২ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

“নবী [সাঃ] বলেন: যে কোন বান্দা এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল, আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেন। তখন মু`আয [রাঃআঃ] বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিব না? তিনি [সাঃ] বলিলেন, তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করে থাকিবে [`আমল ছেড়ে দেবে]। অতঃপর মু`আয [রাঃআঃ] স্বীয় মৃত্যুর সময় [ইলম গোপন করার গুনাহের ভয়ে] এ হাদিস বর্ণনা করেন।”

তিরমিজি হা/৩৩৮৩, ইবনু মাজাহ্ হা/৩৮০০, শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

২৩ঃ আবূ `আমরাহ আল-আনসারী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল।

আর আমি আল্লাহর নিকট সাক্ষ্য দিচ্ছি- যে কোন বান্দা এ [কালেমা] দু`টির প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করিবে, এ দুটো অবশ্যই তার জন্য ক্বিয়ামাতের দিন জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল হইবে। {১}

{১} সহিহ লিগাইরিহি : ইবনু হিব্বান হা/২২১- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহিহ লিগাইরিহি। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ লিগাইরিহি

২৪ঃ মু`আয ইবনু জাবাল [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ] বলেছেন : যে কোন ব্যক্তি এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করিবে যে, সে খাঁটি অন্তরে এই সাক্ষ্য দেয় যে,

“আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল”

– আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিবেন। {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/২১৯৯৮- আলবানী : হাসান সহীহ্। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৫ঃ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : “যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় দুনিয়া থেকে বিদায় নিলো যে, সে আল্লাহর প্রতি আন্তরিক ও মুখলেস ছিল, যিনি অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নেই, এবং সলাত ক্বায়িম করেছে, যাকাত দিয়েছে। সে তো এরূপ অবস্থায় বিদায় নিলো যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তষ্ট। এটাই হলো আল্লাহর দ্বীন, যা নিয়ে রাসূলগণ আগমন করেছিলেন এবং তাহাদের রবের পক্ষ হইতে প্রচার করিয়াছেন।

মুস্তাদরাক হাকিম হা/৩২৩৫। ইমাম হাকিম বলেন : এই হাদীসের সানাদ সহিহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৬ঃ ইবনু `আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা কিছু সংখ্যক মুশরিক লোক যারা মুশরিক অবস্থায় ব্যাপকহারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এবং যেনা-ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়েছে তারা মুহাম্মাদ [সাঃ]-এর নিকট এসে বললো : আপনি যা বলেন এবং যে দিকে আহ্বান করেন তা খুবই উত্তম। তবে আমাদেরকে বলুন, অতীত জীবনে আমরা যে সমস্ত মন্দ কাজ করেছি তা মুছে যাবে কিনা? [তাহলে আমরা ইসলাম গ্রহণ করবো]। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো :

“যে সমস্ত লোক আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে ইলাহ্ মানেনা, আল্লাহর হারাম করা কোন প্রাণকে অকারণে হত্যা করে না এবং যেনা করে না। যারা ঐসব কাজে লিপ্ত হইবে তারা নিজেদের পাপের প্রতিফল পাবে”- [সূরাহ্ আল-ফুরক্বান : ৬৮]। আরো অবতীর্ণ হলো : “হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছো, তারা আল্লাহর রহমাত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি তো ক্ষমাশীল”- [সূরাহ্ আয-যুমার : ৫৩]

হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/ ৩৩৭-হাদীসের শব্দাবলী তার। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৭ঃ `আমার ইবনু `আবাসাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা অত্যন্ত বৃদ্ধ একটি লোক তার লাঠির উপর ভর করে নবী [সাঃ]-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! [কাফির অবস্থায়] আমি বহু ওয়াদা ভঙ্গ করেছি এবং অসংখ্য পাপ কাজ করেছি, সুতরাং আমার ক্ষমার ব্যবস্থা আছে কি? তিনি [সাঃ] জবাবে বলিলেন : তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও না যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই? লোকটি বললো, হ্যাঁ, আর আমি এ সাক্ষ্যও দেই যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। নবী [সাঃ] বলিলেন : তাহলে তো তোমার সমস্ত ওয়াদা ভঙ্গ ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।

আহমাদ হা/১৯৪৩২, তাহক্বীক্ব শু`আইব : হাদিসটি সহিহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা। এছাড়া আরো বহু শাহেদ বর্ণনা রয়েছে] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২৮ঃ ইবনু শিমাসাহ আল-মাহরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, `আমর ইবনুল `আস [রাঃআঃ] যখন মৃত্যু শয্যায় ছিলেন, আমরা তাহাঁর কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে কাঁদলেন এবং দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবছিলেন। তার ছেলে বলিতে লাগলো, হে আব্বা, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] কি আপনাকে এই সুসংবাদ দেননি? রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] কি আপনাকে এরূপ সুসংবাদ দেননি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি মুখ ফিরিয়ে বলিলেন, অবশ্যই আমরা যা কিছু পুঁজি সঞ্চয় করেছি তন্মধ্যে

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

“আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] আল্লাহর রাসূল”

– সবচেয়ে উত্তম সঞ্চয়। আমি আমার জীবনে তিনটি পর্যায় অতিক্রম করে এসেছি। [প্রথম পর্যায়] আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর প্রতি আমার চেয়ে অধিক বিদ্বেষ পোষণ করিতে আর কাউকে দেখিনি। তখন আমার ইচ্ছা ছিল যে, যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে তাঁকে হত্যা করে মনের ঝাল মেটাব। [দ্বিতীয় পর্যায় হলো] অতঃপর যখন আল্লাহ্ আমার অন্তরে ইসলামের প্রেরণা ঢেলে দিলেন, আমি নবী [সাঃ]-এর কাছে এসে বললাম, আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার কাছে বাই`আত করবো। তিনি তাহাঁর ডান হাত প্রসারিত করলে আমি আমার হাতখানা টেনে নিলাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে `আমর! তোমরা কি হয়েছে? আমি বললাম, আমি কিছু শর্ত করিতে চাই। তিনি বলিলেন : তুমি কি শর্ত করিতে চাও। আমি বললাম, আমি এই শর্ত করিতে চাই যে, আমাকে ক্ষমা করা হোক। তিনি বলিলেন : হে `আমর! তুমি জান না ইসলাম পূর্বেকার সমস্ত অপরাধ ধ্বংস করে দেয়? অনুরূপভাবে হিজরাত ও হাজ্জের দ্বারাও পূর্বের সমস্ত অপরাধ ধ্বংস হয়ে যায়? তখন থেকে রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তি আমার কাছে অধিক প্রিয় ছিলো না। তার ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার এমনি এক প্রভাব ছিলো যে, আমি কখনো তাহাঁর চেহারার দিকে তাকিয়ে স্থির থাকতে পারতাম না। যদি কেউ আমাকে তাহাঁর দৈহিক সৌষ্ঠবের বর্ণনা করার জন্য অনুরোধ করতো তাও আমার দ্বারা সম্ভব হতো না। যদি এ অবস্থায় আমার মৃত্যু হতো তাহলে আমি আশা করিতে পারতাম যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত। [তৃতীয় পর্যায় হলো] অতঃপর আমার ওপর বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব ন্যাস্ত হলো। আমি অবগত নই যে, এগুলোর মধ্যে আমার অবস্থা কেমন?। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহ্ মুসলিম হা/৩৩৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

২. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণে অতীতের সৎ `আমল নষ্ট হয় না

২৯ঃ হাকিম ইবনু হিযাম [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-কে জিজ্ঞেস করলাম, যে আল্লাহর রাসূল! আমাকে বলুন, জাহিলী যুগে ভাল কাজ মনে করে আমি যে দান-খয়রাত করেছি, দাস মুক্ত করেছি বা আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেছি, তার জন্য কোন প্রতিদান পাওয়া যাবে কি? তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলিলেন : তুমি অতীত জীবনে যে সব সাওয়াবের কাজ করেছো তা সহকারেই তুমি মুসলিম হয়েছো। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহ্ মুসলিম হা/৩৩৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩. পরিচ্ছেদঃ ইসলাম গ্রহণ নিরাপত্তার বিধান দেয়

৩০ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলছেন : আমি মানুষের সাথে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য প্রেরিত হয়েছি যতক্ষণ না তারা এ সাক্ষ্য দেয় যে,

 أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহামাদ আল্লাহর রাসূল

, সালাত ক্বায়িম করিবে এবং যাকাত দিবে। তারা যদি এটা করে তাহলে আমার পক্ষ থেকে তাহাদের রক্ত ও সম্পদের নিরাপত্তার ঘোষণা রইল। তবে ইসলামের হাক্ব ব্যতীত। তাহাদের হিসাব্ আল্লাহর উপর। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/২৪, সহিহ মুসলিম হা/১৩৫। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩১ঃ হাকিম ইবনু হিযাম হইতে বর্ণিতঃ

“আল্লাহর শপথ! আমি জাহিলী যুগে যেসব নেক কাজ করেছি তা কখনো পরিত্যাগ করবো না, বরং ইসলামের মধ্যেও অনুরূপ করবো।”

[সহিহ মুসলিম হা/৩৪০] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩২ঃ হিশাম ইবনু `উরওয়াহ্ হইতে বর্ণিতঃ

“হাকিম হিযাম জাহিলী যুগে একশো দাস মুক্ত করিয়াছেন এবং সওয়ারীর জন্য একশো উট দান করেছিলেন। অতঃপর মুসলিম হওয়ার পরও পুনরায় একশো দাস মুক্ত করিয়াছেন এবং আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য একশো উট দান করিয়াছেন। অতঃপর নবী [সাঃ]-এর নিকট আসলেন।” হাদীসের বাকী অংশ পূর্বের হাদীসের অনুরূপ।

[সহিহ মুসলিম হা/১৪১] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪. পরিচ্ছেদঃ নবী [সাঃ]- কে না দেখে ঈমান আনার ফাযীলাত

৩৩ঃ আবূ `আবদুল রহমান জুহানী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমরা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় দুইজন আরোহীকে আসতে দেখা গেলো। রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] তাহাদেরকে দেখে বলিলেন, এদেরকে কিন্দা ও মাযহিজ গোত্রের মনে হচ্ছে। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকট উপস্থিত হলো, তখন তাহাদের সাথে মাযহিজ গোত্রের কিছু লোকও ছিল।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর দুই আগুন্তুকের মধ্যকার একজন বাই`আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর নিকটবর্তী হলো। যখন তিনি তাহাঁর [সাঃ] হাত নিজের হাতে নিলেন তখন বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনার সাথে সাক্ষ্যৎ করলো এবং আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি [সাঃ] বলিলেন : তার জন্য সুসংবাদ [মোবারকবাদ]। অতঃপর লোকটি তাহাঁর হাতের উপর হাত বুলিয়ে বাই`আত গ্রহণ করে চলে গেলো।

অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি অগ্রসর হলো। সেও বাই`আত গ্রহণের জন্য রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]-এর হাত নিজের হাতে রেখে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! যে ব্যক্তি আপনাকে না দেখে আপনার উপর ঈমান আনলো, আপনাকে সত্য বলে মানলো এবং আপনার অনুসরণ করলো সে কি পাবে? তিনি [সাঃ] বলিলেন : তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ, তার জন্য সুসংবাদ। অতঃপর এ লোকটিও তাহাঁর হাতের উপর নিজের হাত বুলিয়ে বাই`আত গ্রহণ করে চলে গেলো। {১}

{১} সানাদ হাসান :আহমাদ হা/ ১৭৩৮৮- হাদীসের শব্দাবলী তার- তাহক্বীক্ব শু`আইব আরনাউত্ব : সানাদ হাসান। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৩৪ঃ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “যে ব্যক্তি আমাকে দেখেছে এবং আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য একবার সুসংবাদ। আর যে ব্যক্তি আমাকে দেখে নাই, তথাপি আমার প্রতি ঈমান এনেছে তার জন্য সাত বার [বারবার] মোবারকবাদ।”

আহমাদ হা/১২৫৭৮- তাহক্বীক্ব শু`আইব আরনাউত্ব : সানাদ দুর্বল, তবে হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি। এছাড়া আবূ ইয়ালা হা/৩৩৯১। হাদিসটির শাওয়াহিদ বর্ণনা আছে। তন্মধ্যে আবূ সাঈদ খুদরী হইতে এর শাহিদ হাদিস রয়েছে আহমাদ হা/১১৬৭৩। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি

৩৫ঃ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : আমার আকাঙ্খা হয়, যদি আমার ভাইদের সাথে অমার সাক্ষ্য হতো! তখন নবী [সাঃ]-এর সাহাবীগণ বলেন : আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি [সাঃ] বলিলেন : “তোমরা তো আমার সাহাবী। আমার ভাই হলো তারা, যারা আমাকে না দেখে আমার উপর ঈমান আনবে।”

আহমাদ হা/১২৫৭৯, আবূ ইয়ালা হা/৩৩৯০, ত্বাবারানী আওসাত হা/৫৪৯০। শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : সানাদ দুর্বল, তবে হাদিসটি হাসান লিগাইরিহি। এর শাহেদ হাদিস রয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান লিগাইরিহি

৩৬ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

একদা কিছু লোক “আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ]-এর সামনে মুহাম্মাদ [সাঃ]-এর সাহাবীদের ঈমান সম্পর্কে আলোচনা করলো তখন রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেন, যারা রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে দেখেছেন তাহাদের সামনে তাহাঁর সত্যতা একেবারেই সুস্পষ্ট ছিল। সেই সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। সবচেয়ে উত্তম ঈমান হলো ঐ ব্যক্তির যে না দেখে ঈমান এনেছে। অতঃপর এর প্রমাণে তিনি এ আয়াত পড়লেন :

“আলিফ, লাম-মীম, এটা এমন কিতাব যাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মুত্তাকীনদের জন্য হিদায়াত স্বরূপ, যারা গায়েবের প্রতি ঈমান রাখে।”

মুস্তাদরাক হাকিম হা/২৯৮৮। ইমাম হাকিম বলেন : এই হাদিস বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত পোষণ করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫. পরিচ্ছেদঃ যে `আমলের দ্বারা ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়

৩৭ঃ আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ]- কে বলেছেন। তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে। এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ ও তাহাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হইবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৬৪২৮- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহিহ মুসলিম হা/১৭৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৩৮ঃ `আব্বাস ইবনু `আবদুল মুত্তালিব [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] – কে বলিতে শুনেছেন: যে ব্যক্তি সন্তুষ্টিচিত্তে আল্লাহকে রব্ব, ইসলামকে নিজের দ্বীন এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] – কে রাসূল হিসেবে মেনে নিয়েছে, সে ঈমানের স্বাদ গ্রহণ করেছে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৬০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬. পরিচ্ছেদঃ `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`- বলার ফাযীলাত

৩৯ঃ জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে

`লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`

বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : ইবনু হিব্বান হা/২০১, সিলসিলাহ্ সহীহাহ হা/২৩৫৫- শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪০ঃ মু`আয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “যে ব্যক্তি খালেস অন্তরে ইখলাসের সাথে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্` এর সাক্ষ্য দিবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।”

[ইবনু হিব্বান, আবূ নু`আইম, আহমাদ। এর সানাদ বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। সিলসিলাহ্ সহীহাহ্ হা/২৩৫৫] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪১ঃ `ইতবান বিন মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন: “যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ কে সন্তুষ্ট করার জন্য `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্` বলবে, ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হইবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।”

[আহমাদ হা/১৬৪৮২, সহীহুল বুখারি, সহীহ্ মুসলিম, বায়হাক্বীর `আসমা ওয়াস সিফাত` ও দূররে মানসুর] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪২ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ] তাকে বলিলেন। লোকদের মাঝে ঘোষণা দাও : “যে ব্যক্তি ইখলাসের সাথে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, তিনি একক, তাহাঁর কোন শরীক নেই”- সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।

[বাযযার, সহীহ্ জামিউল সাগীর হা/৮৫১- তাহক্বীক্ব আলবানী : সহিহ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৩ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : ঈমানের সত্তর বা ষাটের অধিক শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সর্বোত্তম শাখা হলো এ কথা বলা যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জাশীলতা ঈমানের একটি বিশেষ শাখা। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৮, সহিহ মুসলিম হা/১৬২-০, কোন বর্ণনায় রয়েছে : `সবচেয়ে উঁচু শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` এবং কোন বর্ণনায় রয়েছে : `সবচেয়ে বড় শাখা হলো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`। অতঃপর হাদীসের বাকী অংশ অনুরূপ। যেমন ত্বাবারানীতে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৪ঃ জাবির ইবনু `আবদুল্লাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃ] বলেন : সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্` এবং সর্বোত্তম দু`আ হলো `আল-হামদুলিল্লাহ্`। {১}

{১} হাদিস সহিহ : তিরমিজি হা/৩৩৮৩, ইবনু মাযাহ হা/৩৮০০, ইবনু হিব্বান, নাসায়ী, মুস্তাদরাক হাকিম হা/১৮৩৪ যাহাবীর তা`লীক্বসহ। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৫ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু `আমর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : নূহ [আঃ] স্বীয় ইন্তিকালের সময় তাহাঁর দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন : আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করে যাচ্ছি। আমি তোমাদেরকে দু`টি বিষয়ে আদেশ করছি এবং দু`টি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। আমি তোমাদেরকে শির্‌ক এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি। আর যে দুটি বিষয়ে আদেশ করছি তার একটি হলো : “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”। কেননা সমস্ত আসমান ও যমীন এবং এর মাছে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর অপর পাল্লায় “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” রাখা হয়, তাহলে কালেমার পাল্লাই ঝুলে যাবে [ভারি হইবে]। আর যদি সমস্ত আসমান-যমীন [সাত আকাশ ও সাত যমীন] এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে, একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ কালেমাকে রাখা হয় তাহলে ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে। আর আমি তোমাদেরকে আদেশ করছি `সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি` [পাঠ করার জন্য], কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবীহ, এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিযিক্ব দেয়া হয়। {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/৬৫৮৩, ৭১০১- শায়খ আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৬ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন : একদা আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ক্বিয়ামাতের দিন আপনার শাফা`আত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হইবে? রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলিলেন : হাদীসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞেস করিবে না। [অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলিলেন: আমার শাফায়া`আত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হইবে ঐ ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরের ইখলাসের সাথে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্` বলবে।`

হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৯৭- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমাদ হা/৮৮৫৮। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৭ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলবে একদিন না একদিন এই কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও ইতিপূর্বে তাকে কিছুটা শাস্তি ভোগ করিতে হইবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : বাযযার হা/৮২৯২- হাদীসের শব্দাবলী তার, ত্বাবারানীর কাবীর হা/১৪০, ৭৩৩, ১১১১, সহিহ আত-তারগীব হা/১৫২৫। আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। আল্লামা হায়সামী `মাজমাউয যাওয়ায়িদ` গ্রন্থে [হা/১৩] বলেন : এর রিজাল সহীহ্ রিজাল। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৮ঃ আবূ বাকর [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : যে ব্যক্তি এই কালেমা গ্রহণ করিবে যা আমি আমার চাচার [আবূ ত্বালিবের] কাছে পেশ করেছিলাম এবং তিনি তা প্রত্যাখান করেছিলেন, সেই কালেমা এই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হইবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/২০শির্‌ক শু`আইব আরনাঊত্ব বলেন : বর্ণনাটি সহিহ এর শাওয়াহিদ দ্বারা। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৪৯ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন, “যে ব্যক্তি `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` বলিতে এই কালেমা তাকে ঐ সময়ে মুক্তি দিবে যখন তার উপর মুসিবত আসবে।”

[সিলসিলাহ সহীহাহ্ হা/ ১৯৩২] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫০ঃ আনাস ইবনু মালিক [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃ] বলেছেন : এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে যবের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ [ঈমান] থাকিবে। এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে গমের দানার ওজন পরিমাণও কল্যাণ থাকিবে। অতঃপর এমন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের করা হইবে যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলেছে এবং তার অন্তরে অণু পরিমাণও কল্যাণ থাকিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/৬৮৬১- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহিহ মুসলিম হা/৪৯৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫১ঃ `আবদুল্লাহ ইবনু `আমর ইবনুল `আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন: মহান আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের মধ্য থেকে এক ব্যক্তিকে সমস্ত হাশরবাসীর সামনে আলাদা করে এনে উপস্থিত করবেন। তিনি তার সামনে ৯৯টি `আমলনামার খাতা খুলে ধরবেন। প্রতিটি খাতা দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত বিস্তৃত হইবে। অতঃপর তাকে প্রশ্ন করা হইবে, তুমি কি এসব `আমলনামার কোন কিছুকে অস্বীকার করো। `আমলনামা লিখার কাজে নিয়োজিত আমার ফিরিশতারা কি তোমার উপর কোন জুলুম করেছে? সে বলবে, না। অতঃপর প্রশ্ন করা হইবে, এ সমস্ত গুনাহের পক্ষে তোমার একটি নেকী আমার কাছে রয়েছে। আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হইবে না। অতঃপর একটি কাগজের টুকরা বের করা হইবে, যাতে লিখা থাকিবে : `আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান `আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।` বলা হইবে, যাও এটাকে ওজন করে নাও। সে আরজ করিবে, এতোগুলো দফতরের মোকাবেলায় এই সামান্য কাগজের টুকরা কি কাজে আসবে। বলা হইবে, আজ তোমার উপর কোন জুলুম করা হইবে না। অতঃপর ঐ দফতরগুলোকে এক পাল্লায় রাখা হইবে এবং অপর পাল্লায় কাগজের ঐ টুকরাটি রাখা হইবে। তখন দফতরওয়ালা পাল্লাটির মোকাবেলায় ঐ কাগজের টুকরার পাল্লাটি ওজনে ভারি হয়ে যাবে। আসল কথা হলো, আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন কিছুই ভারি হইতে পারে না। {১}

{১} হাদিস সহিহ : তিরমিজি হা/২৬৩৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫২ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কোন বান্দা এমন নেই যে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` বলে আর তার জন্য আকাশসমূহের দরজাগুলো খূলে যায় না। এমনকি এ কালেমা সোজা আরশ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। তবে শর্ত হচ্ছে, এর পাঠকারী কবীরাহ গুনাহ্ থেকে বেঁচে থাকিবে। {১}

{১} হাদিস হাসান : তিরমিজি হ/৩৫৯০- হাদীসের শব্দাবলী তার, সহিহ জামিঊস সাগীর হা/৫৬৪৮। ইমাম তিরমিজি বলেন। এ সূত্রে হাদিসটি হাসান ও গরীব। শায়খ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৫৩ঃ হুযাইফাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : কাপড়ের কারুকার্য যেমন মুছে যায় তেমনি ইসলামও এক সময় অস্পষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি লোকেরা এটাও জানবে না যে, সিয়াম কি, সলাত কি, কুরবানী কি এবং সদাক্বাহ কি জিনিস। একটি রাত আসবে যখন অন্তরসমূহ থেকে কুরআন উঠিয়ে নেয়া হইবে এবং যমীনের উপর কুরআনের একটি আয়াতও অবশিষ্ট থাকিবে না। তখন মানুষদের মধ্যে একদল বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা অবশিষ্ট থাকিবে। তারা বলবে, আমরা আমাদের বাপ-দাদার [পূর্ব পুরুষের] কাছ থেকে এই কালেমা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” শুনিয়াছিলাম, সেজন্য আমরাও এই কালেমা পাঠ করি। তখন সিলাহ্ বিন যুফার হুযাইফাহ [রাঃআঃ]- কে জিজ্ঞেস করলো, তারা যেহেতু ঐ সময় সলাত, সিয়াম, কুরবানী এবং সদাক্বাহ সম্পর্খে অবহিত থাকিবে না, তাহলে এই কালেমা তাহাদের কী উপকারে আসবে? হুযাইফাহ [রাঃআঃ] কোন জবাব দিলেন না। তিনি একই প্রশ্ন করিলেন। প্রতিবারেই [রাঃআঃ] কোন জবাব দিলেন না। অতঃপর তৃতীয়বারের পর [অনুরোধ] করলে তিনি বলেন, হে সিলাহ্! এই কালেমা তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। এই কালেমা তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে নাজাত দিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : ইবনু মাযাহ হা/৪০৪৯, হাকিম হা/৮৬৩৬, ৮৪৬০- হাদীসের শব্দাবলী উভয়ের, শায়খ আলবানী বলেন : হাদিস সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৪ঃ মিক্বদাদ ইবনু আসওয়াদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : যমীনের উপর এমন কোন মাটির ঘর বা তাঁবু অবশিষ্ট থাকিবে না যেখানে মহান আল্লাহ্ ইসলামের কালেমা [হুকুমাত] প্রবেশ না করাবেন। যারা মানবে তাহাদেরকে কালেমার অধিকারী [অনুসারী] হিসেবে সম্মানিত করবেন এবং যারা মানবে না তাহাদেরকে অপদস্থ করবেন। অতঃপর তারা [জিযিয়া দিয়ে] মুসলিমদের অধীনস্থ হয়ে থাকিবে। {১}

{১} সানাদ সহিহ : আহমাদ হা/২৩৮১৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৫ঃ ইবনু `উমার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : ইসলামের স্তুম্ভ পাঁচটি। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, সলাত ক্বায়িম করা, যাকাত দেয়া, হাজ্জ্ব করা এবং রমাযানের রোজা পালন করা। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১২২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৬ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা জিবরীল [আ] রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করিলেন, ইসলাম কী ? রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর `ইবাদাত করিবে তাহাঁর সাথে কাউকে শরীক করিবে না। আর সলাত ক্বায়িম করিবে ও ফরয যাকাত প্রদান করিবে এবং রামাযানের সিয়াম পালন করিবে।”

[সহীহুল বুখারি, সহিহ মুসলিম, আহমাদ] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস।

৭. পরিচ্ছেদঃ মৃত্যুর সময় কালেমা পাঠের ফাযীলাত

৫৭ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : তোমরা তোমাদের মৃত্যু পথযাত্রীকে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` তালকীন করাও। কেননা যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় শেষ কথা হইবে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {১}

{১} হাদিস হাসান : ইবনু হিব্বান হা/৩০০৪- শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : হাদিস সহিহ। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭- হাদীসের শব্দাবলী তার থেকে গৃহীত। শায়খ আলবানী বলেন : সানাদের ব্যক্তিবর্গ প্রত্যেকেই নির্ভরযোগ্য। অবশ্য মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ব্যতীত। তাকে ইবনু হিব্বান `সিকাত` গ্রন্থে উল্লেখ করিয়াছেন। আর হাদীসের বাক্য : “যারা শেষ কথা হইবে…” এটি বাযযার ভিন্ন সানাদে বর্ণনা করিয়াছেন। হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৫৮ঃ `উসমান [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি অন্তরে এ বিশ্বাস রেখে মৃত্যু বরণ করলো যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/১৪৫- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ আহমান হা/৪৬৪, ৪৯৮- তাহক্বীক্ব ও শু`আইব আরনাউত্ব : সানাদ বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। আহমাদ শাকির বলেন [হা/৪৯৮] : সানাদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৫৯ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : “যে ব্যক্তির শেষ কথা হইবে `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।”

[আবূ দাঊদ, হাকিম, ইবনু মানদাহ্ `আত-তাওহীদ` এবং আহমাদ। ইমাম হাকিম বলেন : সানাদ সহিহ। ইমাম যাহাবীর মতও তাই। শায়খ আলবানী একে হাসান বলেছেন। ইরওয়াউল গালীল হা/৬৮৭] হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস

৬০ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে কোন বান্দা এ কালেমা অন্তরের সাথে সত্য জেনে পাঠ করিবে এবং ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করিবে সে জাহান্নামের জন্য হারাম হয়ে যাবে। সেই কালেমা হলো `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`।”

[হাকিম। ইমাম হাকিম বলেন : হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। আলবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন সহিহ আত-তারগীব গ্রন্থে] হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬১ঃ আবূ যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমি নবী [সাঃ]-এর কাছে এসে দেখি তিনি সাদা কাপড় জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর আবার এসেও তাকে ঘুমন্ত দেখিতে পাই। অতঃপর আবার এসে দেখি তিনি জাগ্রত হয়েছেন। ফলে আমি তাহাঁর পাশে বসে পড়ি। তখন তিনি [সাঃ] বলিলেন : যে কোন বান্দা এ কথা বলে যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং এর উপরই মৃত্যু বরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। এ কথা শুনে আবূ যার [রাঃআঃ] বলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও? নবী [সাঃ] বলিলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও। আবূ যার [রাঃআঃ] আবার বলেন : যদি সে যেনা করে, যদি সে চুরি করে তবুও? নবী [সাঃ] বলিলেন : যদি সে যেনা করে এবং যদি সে চুরি করে তবুও সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে। আবূ যার নবী [সাঃ]- কে প্রশ্নটি তিনবার করেন আর প্রতিবারই নবী [সাঃ] একই জবাব দেন। অতঃপর চতুর্থবারে বলিলেন, আবূ যারের নাক ধুলো মলিন হোক। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/২৮৩- হাদীসের শব্দাবলী তার, অনুরূপ সহীহুল বুখারি হা/৫৩৭৯।

দৃষ্টি আকর্ষণ : `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` বলা ফাযীলাত সম্পর্কে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে মূলত `লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ` পাঠের শর্তগুলো চমৎকারভাবে পেশ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফাযীলাত লাভের দিকগুলো ফুটে উঠেছে। সুতরাং অধিক উপকার প্রদানের আশায় এর শর্তগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৮. পরিচ্ছেদঃ “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”- এর শর্তসমূহ

[১] এ বিষয়ে ইলম থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া সকল গাইরুল্লাহকে অস্বীকার করে একমাত্র আল্লাহকে ইলাহ্ বলে স্বীকার করা এবং এ সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান থাকা। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“আর জেনে রেখো, আল্লাহ্ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ্ নেই।” [সূরাহ মুহাম্মাদ : ১৯]

“তবে যারা সজ্ঞানে সত্যের সাক্ষ্য দেয়।” [সূরাহ যুখরুফ : ৮৬]

অর্থাৎ কালেমার সাক্ষ্য, তারা মুখে যা বলে সেটি অন্তর দিয়ে জানে।

নবী [সাঃ] বলেছেন : “যে লোক এমন অবস্থায় মারা গেলো যে, জীবিত অবস্থায় সে জানত, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ্ নেই। অবশ্যই সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।” [সহিহ মুসলিম]

[২] দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা : কোনরূপ সন্দেহ ছাড়া `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` এর বিশ্বাস অন্তরে পূর্ণভাবে থাকতে হইবে। কালেমাকে এমন পরিপূর্ণভাবে জানতে হইবে যাতে সংশয়-সন্দেহ না থাকে। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“সত্যিকারের মু`মিন হল তারাই, যারা আল্লাহ্ও তাহাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে এবং ঈমান আনার পর তাতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করে না।” [সূরাহ্ আল-হুজুরাত : ১৫]।

নবী [সাঃ] বলেছেন : “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তাহাঁর রাসূল। যে লোক এতে কোনরূপ সন্দেহ পোষণ না করে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হইবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করিবে।” [সহিহ মুসলিম]

[৩] কবুল করা : অর্থাৎ অন্তর ও জিহবার দ্বারা স্বীকার করা। মুশরিকদের অবস্থা বর্ণনা করে আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“তাহাদেরকে যখন বলা হত, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই, তখন তারা অহংকার করত এবং বলত : একজন পাগল কবির কথায় আমরা কি আমাদের ইলাহগুলোকে পরিত্যাগ করব?।” [সূরাহ সাফফাত : ৩৫-৩৬]

এ আয়াতের তাফসীরে হাফিয ইবনু কাসীর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন : মু`মিনগণ যেমনিভাবে এ কালেমা মুখে উচ্চারণ করিতেন ঠিক তার বিপরীত কাফিররা তা বলিতে অস্বীকার করত অহঙ্কারের কারণে। কালেমা `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` মুখে উচ্চারণ করার গুরুত্ব সম্পর্কে নবী কারীম [সাঃ] বলেন : “আমাকে আদেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত লোকেরা `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ` না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিতে। যখন কেউ তা মেনে নিবে ও মুখে উচ্চারণ করিবে তখন সাথে সাথে তার জীবন ও সম্পদ আমার কাছ থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের যে হাক্বাসমূহ আছে তা আদায় করিতে হইবে এবং তার হিসাব নিবেন স্বয়ং আল্লাহ্ তা`আলা।” [সহীহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

[৪] আত্মসমপর্ণ ও যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তন কর এবং তাহাঁর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ কর।” [সূরাহ্ যুমার : ৫৪]।

[৫] সত্যবাদিতা, যা মিথ্যার বিপরীত : তা হল অন্তরে সর্বান্তকরণে কালেমাকে উচ্চারণ করা। আল্লাহ্ তা`আলা মানুষকে সাবধান করে বলেন :

“আলিফ লাম-মীম : লোকেরা কি ভেবে নিয়েছে যে, “আমরা ঈমান এনেছি` এ কথা বললেই তারা নিরাপদ হয়ে যাবে, আর তাহাদের পরীক্ষা করা হইবে না? আর আমি তো তাহাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; অতএব আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে।” [সূরাহ্ আনকাবূত : ১-৩]

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “যদি কেউ খাটি অন্তরে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মাদ [সাঃ] তাহাঁর বান্দা ও তাহাঁর রাসূল, তবে আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিবেন।” [সহীহুল বুখারি, সহীহ্ মুসলিম]

[৬] ইখলাস : তা হচ্ছে নিয়্যাতকে শুদ্ধ করে যাবতীয় শির্‌ক থেকে নিজেকে দূরে রেখে নেক `আমল করা। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“তাহাদেরকে আদেশ দেয়া হয়েছে ইখলাসের সাথে আল্লাহর আনুগত্যসহ `ইবাদাত করিতে।” [সূরাহ বাইয়্যিনাহ্ : ৫]

রাসূলুল্লাহ্ [সাঃ] বলেছেন : “ক্বিয়ামাতের দিন আমার শাফা`য়াত পাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হইবে ঐ ব্যক্তি যে অন্তর থেকে ইখলাসের সাথে `লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ` স্বীকার করে।” [সহীহুল বুখারি]

তিনি [সাঃ] আরো বলেছেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা`আলা ঐ ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দিয়েছেন যে একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য `লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ` বলবে।” [সহীহুল বুখারি]

[৭] কালেমা তায়্যিবার প্রতি ভালবাসা পোষণ করা : কালেমার দাবী হলো, যে সকল মু`মিন উপরোক্ত শর্তসমূহ মানবে মানুষ কেবল তাহাদেরকেই ভালবাসবে এবং যারা তা মানবে না তাহাদেরকে ঘৃণা করিবে। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“মানুষের মাঝে এমন লোকও রয়েছে যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে তাহাঁর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং আল্লাহকে যেমন ভালবাসতে হয় তেমন তাহাদেরকে ভালবাসে। কিন্তু যারা প্রকৃত ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি তাহাদের ভালবাসা আরো মজবুত।” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ১৬৫]

রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ] বলেছেন : “তিনটি জিনিস যার মধ্যে রয়েছে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ সেই পাবে : এক, তার অন্তরে আল্লাহ্ তাহাঁর রাসূলের প্রতি ভালবাসা সবচেয়ে বেশি হইবে। দুই, যে কোন ব্যক্তির সাথে কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে। তিন, ঈমানের পর কুফরীর দিকে ফিরে যাওয়া তার কাছে এরূপ অপছন্দনীয় যেরূপ আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দনীয়।” [সহীহুল বুখারি ও সহিহ মুসলিম]

[৮] তাগুতের প্রতি কুফরী করা : তাগুত হল ঐ সকল বাতিল ইলাহ্ আল্লাহকে ছাড়া যাদের `ইবাদাত করা হয়। সুতরাং কালেমা পাঠকারী তাহাদেরকে বর্জন করিবে, যদিও সে একমাত্র আল্লাহকে রব্ব এবং সত্যিকারের ইলাহ্ বলে স্বীকার করে। আল্লাহ্ তা`আলা বলেন :

“আর যে লোক তাগুতদের অস্বীকার করিবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে নিশ্চয়ই সে এমন এক শক্ত বন্ধনকে আঁকড়ে ধরল যা ছুটবার নয়।” [সূরাহ আল-বাক্বারাহ্ : ২৫৬]

রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ] বলেছেন : “যে ব্যক্তি অন্তর থেকে বলে `লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ` এবং আল্লাহ্ ব্যতীত যে সকল ইলাহর `ইবাদাত করা হয় তা অস্বীকার করে তার জীবন ও সম্পদ [নষ্ট করা] অন্যের জন্য হারাম।” [সহিহ মুসলিম]

৬২ঃ ইয়াহইয়া ইবনু ত্বালহা হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ]-এর ইস্তিকালের পর একদা `উমার [রাঃআঃ] ত্বালহার নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন। `উমার [রাঃআঃ] ত্বালহাকে বিষন্ন দেখে বলিলেন : কি ব্যাপার, তোমাকে বিষন্ন দেখছি? তোমার চাচাতো ভাইয়ের খিলাফাত কি তোমার অপছন্দ হচ্ছে? ত্বালহা বলিলেন, না। তবে আমি রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : এমন একটি কালেমা আমি জানি, তা যে কেউ মৃত্যুর সময় পাঠ করলে তার `আমলনামার জন্য সেটা নূর হইবে এবং এবং নিঃসন্দেহে তার দেহ ও আত্মা মৃত্যুর সময় সেটার দ্বারা স্বস্তি লাভ করিবে। কিন্তু উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল [সাঃ]- কে জিজ্ঞেস করিতে পারিনি। এ সময়ের মধ্যে তিনিও ইন্তিকাল করিয়াছেন। `উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। এটা সেই কালেমা যা তিনি তাহাঁর চাচার কাছে আশা করেছিলেন [অর্থাৎ `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`]। {১}

{১} হাদিস সহিহ : ইবনু মাযাহ হা/৩০৭৭। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৩ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

অন্য বর্ণনায় রয়েছে : ত্বালহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ]- কে বলিতে শুনিয়াছি : “আমি এমন একটি কালেমা জানি, যে ব্যক্তি মৃত্যুর সময় তা পাঠ করিবে তার মৃত্যুকষ্ট দূর হয়ে যাবে, তার রং মৃত্যুর সময় উজ্জ্বল হইতে থাকিবে এবং সে আনন্দদায়ক দৃশ্য দেখিতে পাবে।” কিন্তু আমি উক্ত কালেমা সম্পর্কে রাসূল [সাঃ]- কে জিজ্ঞেস করিতে পারিনি। সেজন্য আমি মনক্ষূন্ন আছি। `উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, আমার সেই কালেমা জানা আছে। ত্বালহা [রাঃআঃ] আনন্দিত হয়ে জিজ্ঞেস করিলেন, সেটা কি? `উমার [রাঃআঃ] বলিলেন, আমি অবগত আছি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ কালেমা আর নেই যা তিনি স্বীয় চাচা আবু ত্বালিবকে মৃত্যুর সময় পেশ করেছিলেন, অর্থাৎ `লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ`। ত্বালহা [রাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহর কসম এটাই, আল্লাহর কসম এটাই সেই কালেমা।”

বায়হাক্বীর আসমা ওয়াস সিফাত হা/১৭২- উপরোক্ত শব্দে, দূররে মানসুর, হাকিম হা/১২৪৪, আহমাদ হা/১৩৮৪, আবূ ইয়াসা। ইমাম হাকিম বলেন : বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। ইমাম যাহাবী একে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শায়খ শু`আইব আরনাউত্ব বলেন : এর সানাদ সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৯. পরিচ্ছেদঃ শির্‌ক না করার ফাযীলাত

৬৪ঃ মু`আয [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

একদা আমি রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ] পিছনে ঊফাইর নামক গাধার পিঠে সওয়ার ছিলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ্‌ [সাঃ] আমাকে বলিলেন : হে মু`আয! তুমি কি জানো বান্দার উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে এবং আল্লাহর উপর বান্দার কি হক রয়েছে? আমি বললাম, আল্লাহ্ এবং তাহাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি [সাঃ] বলিলেন : বান্দার উপর আল্লাহর হক হচ্ছে- তারা আল্লাহর `ইবাদাত করিবে এবং তাহাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করিবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার অধিকার হচ্ছে, যে বান্দা তাহাঁর সাথে কাউকে শরীক করিবে না তিনি তাকে আযাব দিবেন না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি লোকদেরকে এ সুসংবাদ জানিয়ে দিবো না? তিনি [সাঃ] বলিলেন : তাহাদেরকে এ সুসংবাদ দিও না। কেননা তারা এর উপর নির্ভর করে `আমল ছেড়ে দিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহীহুল বুখারি হা/২৬৪৪। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৫ঃ জাবির [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রাসূল [সাঃ] বলিলেন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে। এক ব্যক্তি এসে বললো, যে আল্লাহর রাসূল! কোন দুটি জিনিস ওয়াজিব হয়ে গেছে? তিনি [সাঃ] বলিলেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুতে শরীক না করে মারা গেছে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে মারা গেছে সে জাহান্নামে প্রবেশ করিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/২৭৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৬ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু মাসঊদ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাসূলুল্লাহ [সাঃ]-কে মি`রাজ করানো হয় তখন তিনি সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছেন যা সপ্তম আকাশে রয়েছে। যে জিনিস উপরে উঠে তা এখান পর্যন্ত পৌঁছে, তারপর এখান থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়। আর যে জিনিস অবতরণ করে তা এখান পর্যন্ত অবতারিত, তারপর এখান থেকে গ্রহণ করা হয়। ঐ গাছের উপর সোনার ফড়িং ছেয়েছিল। রাসূলুল্লাহ [সাঃ]-কে পাঁচ ওয়াক্ত সলাত, এবং সূরাহ্ বাক্বারাহর শেষের দুই আয়াত দেয়া হয়। এবং এটাও দেয়া হয় যে, তার উম্মাতের মদ্যে যারা শির্‌ক করিবে না তাহাদের কবীরাহ গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হইবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৪৪৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৭ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে সব অপরাধী আল্লাহর সাথে শির্‌ক করেনি তাহাদেরকে ক্ষমা করা হয়। কিন্তু পরস্পর সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি সম্পর্কে [আল্লাহ্ বলেন] : এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না এরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপন করে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৬৭০৯। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৮ঃ আবূ যার [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : আল্লাহ্ তা`আলা বলেন : কেউ একটি নেক `আমল করলে এর বিনিময়ে তাকে এর দশগুণ বা আরো অধিক দিবো। কেউ যদি একটি গুনাহ করে তাহলে এর বিনিময়ে কেবল একটি গুনাহ [লিখা] হইবে অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো। আর কেউ যদি আমার কাছে পৃথিবীর সমান গুনাহসহ উপস্থিত হয় এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাকে তাহলে আমিও ঠিক পৃথিবীর সমান ক্ষমা নিয়ে তার কাছে এগিয়ে যাবো। {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/২১৩৬০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৬৯ঃ `আবদুল্লাহ্ ইবনু `আমর ইবনুল `আস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এরূপ অবস্থায় সাক্ষ্যাৎ করলো যে, তাহাঁর সাথে কাউকে শরীক করেনি, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করিবে এবং তার অন্যান্য পাপ তার কোন ক্ষতি করিবে না। যেমন কোন ব্যক্তি শির্‌ক করে তাহাঁর সাথে সাক্ষ্যাৎ করলে সে জাহান্নামে যাবে এবং তার অন্যান্য সাওয়াব তার কোন উপকারে আসবে না। {১}

{১} হাদিস সহিহ : আহমাদ হা/৬৫৮৬। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭০ঃ আবূ হুরাইরাহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃ] বলেছেন : প্রত্যেক নবীর বিশেষ একটি দু`আ আছে যা কবুল করা হইবে। প্রত্যেক নবীই তাহাঁর যে দু`আ আগে ভাগে [দুনিয়াতেই] করে ফেলেছেন। আর আমি আমার সে দু`আ ক্বিয়ামাতের দিন আমার উম্মাতের শাফা`আতের জন্য [দুনিয়াতে] মুলতবী রেখেছি। আমার উম্মাতের যে ব্যক্তি শির্‌ক না করে মৃত্যুবরণ করিবে, ইনশাআল্লাহ্ সে তা লাভ করিবে। {১}

{১} হাদিস সহিহ : সহিহ মুসলিম হা/৫১২। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭১ঃ আবূ হুরাইরাহ্ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা এক বেদুইন নবী [সাঃ]-এর নিকট এসে বললো : আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন যা করলে আমি জান্নাতে প্রবেশ করিতে পারবো। তিনি [সাঃ] বলিলেন : আল্লাহর `ইবাদাত করিবে এবং তাহাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করিবে না। ফরয সলাত ক্বায়িম করিবে, ফরয যাকাত আদায় করিবে এবং রমাযানের সাওম পালন করিবে। একথা শুনে লোকটি বললো, সেই সত্ত্বার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! আমি এর চেয়ে বেশিও করবো না এবং কমও করবো না। অতঃপর লোকটি যখন চলে যেতে লাগলে নবী [সাঃ] বলিলেন, কেউ কোন জান্নাতী লোক দেখে আনন্দিত হইতে চাইলে সে যেন এই লোকটিকে দেখে। {১}

{১} হাদিস সহিহ :সহীহুল বুখারি হা/১৩১০। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

৭২ঃ বর্ণনাকারী হইতে বর্ণিতঃ

উম্মাতকে শির্‌ক বিবর্জিত `ইবাদাত শিক্ষার দায়িত্ব দিয়েই মহান আল্লাহ্ নবী [সাঃ]- কে নবী করে পাঠিয়েছেন। যেমন, `আমর ইবনু `আবাসাহ আস-সুলামী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিত হাদিস। তিনি বলেন, জাহিলী যুগে আমি আমার সম্প্রদায়ের ইলাহগুলো থেকে বিমুখ ছিলাম। একদা আমি নবী [সাঃ] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম যে, তিনি আত্মগোপনে আছেন। আমি গোপনে খোঁজ নিয়ে তাহাঁর নিকট প্রবেশ করলাম। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কে? তিনি বলিলেন : নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বলিলেন : আল্লাহর রাসূল। আমি বললাম, আপনাকে কে পাঠিয়েছেন? তিনি বলিলেন : মহান আল্লাহ। আমি বললাম, আপনাকে কি দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন? তিনি বলিলেন : “এ আদেশ দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন যে, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা হইবে, রক্ত সংরক্ষণ করিতে হইবে, রাস্তা নিরাপদ করিতে হইবে, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে হইবে এবং এক আল্লাহর ইবাদাত করিতে হইবে তাহাঁর সাথে কাউকে শরীক করা যাবে না।” আমি বললাম, আপনাকে যা দিয়ে প্রেরণ করিয়াছেন তাতো অত্যন্ত ভাল। আমি আপনাকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি আপনার উপর ঈমান এনেছি এবং আপনাকে সত্য বলে ঘোষণা করছি। আপনি বলুন, আমি কি আপনার সাথে অবস্থান করবো? তিনি বলিলেন : তুমি দেখছো যে, আমি যা নিয়ে আগমন করেছি তা লোকেরা অপছন্দ করেছে। কাজেই তুমি তোমার পরিবারের কাছেই থাকো। অতঃপর যখন তুমি আমার সম্পর্কে জানবে যে, আমি আমার অবস্থান থেকে বেরিয়েছি তখন আমার কাছে এসো।”

আহমদ হা/১৭০১৬- ইমাম যাহাবী বলেন : সহিহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply