মুসলিম গরিব ও প্রতিবেশীর অধিকার এবং ফযীলত
মুসলিম গরিব ও প্রতিবেশীর অধিকার এবং ফযীলত >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন
মুসলিম গরিব ও প্রতিবেশীর অধিকার এবং ফযীলত
মুসলিমদেরকে মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
প্রতিবেশীদের সাক্ষী ও তাদের প্রশংসার ফযীলত
দুনিয়া-আখিরাতে মুমিনের দোষ আল্লাহর গোপন করা
মুমিনের ফযীলত
গরিবকে সুযোগ দেওয়া ও ক্ষমা করার ফযীলত
আল্লাহর অলিদের সাথে শত্রুতা করার পাপ
আল্লাহর জন্য মহব্বতের ফযীলত
১৯. অনুচ্ছেদঃ মুসলিমদেরকে মহব্বত ও ভ্রাতৃত্বের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা
হাদীসঃ ৩৭ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে বনি আদম আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, তুমি আমাকে দেখনি, সে বলবেঃ হে আল্লাহ আপনাকে কিভাবে দেখব, অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল তুমি তাকে দেখনি, তুমি জান না যদি তাকে দেখিতে আমাকে তার নিকট পেতে? হে বনি আদম আমি তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিলাম তুমি আমাকে খাদ্য দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি কিভাবে আপনাকে খাদ্য দিব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ তুমি জান না আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট খাদ্য চেয়েছিল তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তুমি জান না যদি তাকে খাদ্য দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে। হে বনি আদম, আমি তোমার কাছে পানি চেয়েছিলাম তুমি আমাকে পানি দাওনি, সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে আমি আপনাকে পানি দেব অথচ আপনি দু’জাহানের রব? তিনি বলবেনঃ আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল তুমি তাকে পানি দাওনি, মনে রেখ যদি তাকে পানি দিতে তা আমার নিকট অবশ্যই পেতে”। (সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
২০. অনুচ্ছেদঃ প্রতিবেশীদের সাক্ষী ও তাহাদের প্রশংসার ফযিলত
হাদীসে কুদসী – ৩৮ – আনাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “যখনই কোন সহিহ মুসলিম মারা যায় অতঃপর তার প্রতিবেশীর নিকটতম চার ঘর তার জন্য সাক্ষ্য দেয়, তার সম্পর্কেই আল্লাহ বলেনঃ তার সম্পর্কে তোমাদের জানা আমি কবুল করলাম, আর যা তোমরা জান না আমি ক্ষমা করে দিলাম”। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান লিগাইরিহি
২১. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়া-আখিরাতে মুমিনের দোষ আল্লাহর গোপন করা
হাদীসঃ ৩৯ -সাফওয়ান ইব্ন মুহরিয আল-মাযেনি (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ একদা আমি ইব্ন ওমরের সাথে তার হাত ধরে হাঁটছিলাম, হঠাৎ এক ব্যক্তি সামনে এলো। অতঃপর সে বলিলঃ নাজওয়া’ (গোপন কথা) সম্পর্কে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে কি বলিতে শুনেছেন? তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলা মুমিনের নিকটবর্তী হইবেন অতঃপর তার ওপর পর্দা ফেলে তাকে ঢেকে নিবেন এবং বলবেনঃ মনে পড়ে অমুক পাপ, মনে পড়ে অমুক পাপ? সে বলবেঃ হ্যাঁ, হে আমার রব, অবশেষে সে যখন তার সকল পাপ স্বীকার করিবে এবং নিজেকে মনে করিবে যে, সে ধ্বংস হয়ে গেছে, আল্লাহ বলবেনঃ তোমার ওপর দুনিয়াতে এসব গোপন রেখেছি আজ আমি তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি। অতঃপর তাকে তার নেক আমলের দফতর দেয়া হইবে, পক্ষান্তরে কাফের ও মুনাফিক সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবেঃ এরা তাহাদের রবের ওপর মিথ্যারোপ করেছিল, জেনে রেখ জালেমদের ওপর আল্লাহর লানত”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
২২. অনুচ্ছেদঃ মুমিনের ফযিলত
হাদীসঃ ৪০ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার মুমিন বান্দা আমার নিকট এমন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত, যেখানে সে সকল কল্যাণের হকদার, সে আমার প্রশংসা করে এমতাবস্থায় আমি তার দু’পাশ থেকে তার রূহ কব্জা করি”। (মুসনাদে আহমদ)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস
২৩. অনুচ্ছেদঃ গরিবকে সুযোগ দেয়া ও ক্ষমা করার ফযিলত
হাদীসঃ ৪১ – হুযায়ফা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বেকার জনৈক ব্যক্তির রূহের সাথে ফেরেশতারা সাক্ষাত করে বলেঃ তুমি কি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তারা বলেনঃ স্মরণ কর। সে বলেঃ আমি মানুষদের ঋণ দিতাম, অতঃপর আমার যুবকদের বলতাম তারা যেন গরিবকে সুযোগ দেয় ও ধনীর বিলম্বিতা ক্ষমা করে”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ৪২ – আবু মাসউদ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের পূর্বের জনৈক ব্যক্তিকে জেরা করা হয়েছে, কিন্তু তার কোন কল্যাণ পাওয়া যায়নি, সে ছিল ধনী, মানুষের সাথে লেনদেন করত, আর তার লোকদের বলত, যেন গরিবকে ক্ষমা করে”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা বললেনঃ তার চেয়ে আমি ক্ষমা করার অধিক হকদার, তাকে ক্ষমা কর”। (সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ৪৩ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “জনৈক ব্যক্তি কোনো কল্যাণ করেনি, সে মানুষকে ঋণ দিত, অতঃপর তার দূতকে বলতঃ যা সহজ গ্রহণ কর, যা কষ্টের তা ত্যাগ কর ও ছাড় দাও। হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। যখন সে মারা গেল, আল্লাহ তাকে বললেনঃ তুমি কোন কল্যাণ করেছ? সে বলেঃ না, তবে আমার এক কর্মচারী ছিল, আমি মানুষকে ঋণ দিতাম, যখন আমি তাকে উসুল করার জন্য প্রেরণ করেছি তাকে বলেছিঃ যা সহজ হয় গ্রহণ কর, যা কষ্টকর ত্যাগ কর ও ক্ষমা কর, হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। (নাসায়ি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস
২৪. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর অলিদের সাথে দুশমনি করার পাপ
হাদীসঃ ৪৪ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ যে আমার অলির সাথে দুশমনি করিবে আমি তার সাথে যুদ্ধের ঘোষণা করেছি। আমার বান্দার ওপর আমি যা ফরয করেছি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় কোন বস্তু দ্বারা সে আমার নৈকট্য অর্জন করেনি। আমার বান্দা নফল দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে অবশেষে আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি আমি তার কানে পরিণত যা দ্বারা সে শ্রবণ করে। তার চোখে পরিণত হই যা দ্বারা সে দেখে, তার হাতে পরিণত হই যা দ্বারা সে ধরে, তার পায়ে পরিণত হই যা দ্বারা সে হাঁটে । যদি সে আমার নিকট চায় আমি তাকে অবশ্যই দিব, যদি সে আমার নিকট পানাহ চায় আমি তাকে অবশ্যই পানাহ দিব। আমার করণীয় কোন কাজে আমি দ্বিধা করি না যেমন দ্বিধা করি মুমিনের নফসের সময়, সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আমি তার কষ্টকে অপছন্দ করি”। (সহিহ বুখারি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
২৫. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর জন্য মহব্বতের ফযিলত
হাদীসঃ ৪৫ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেনঃ আমার বড়ত্বের জন্য মহব্বতকারীরা কোথায়, আজ আমি তাহাদেরকে আমার ছায়ায় ছায়া দান করব, যখন আমার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া নেই”। (সহিহ মুসলিম)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ৪৬ – আবু সহিহ মুসলিম খাওলানি রাহিমাহুল্লাহ, মুআয ইব্ন জাবাল (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ “আল্লাহর নিমিত্তে মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ায় নুরের মিম্বারে অবস্থান করবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকিবে না”। তিনি বলেনঃ (মুআযের কাছ থেকে) বের হয়ে উবাদাহ ইব্ন সামেতের সাথে দেখা করি, আমি তাকে মুআয ইব্ন জাবালের হাদিস বলিঃ তিনি বললেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে খরচকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আমার নিমিত্তে সাক্ষাতকারীদের জন্য আমার মহব্বত ওয়াজিব। আল্লাহর জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ আরশের ছায়ার নিচে নূরের মিম্বারে অবস্থান করিবে, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকিবে না”। (মুসনাদে আহমদ) এ হাদিসটি সব ক’টি সনদের বিবেচনায় সহিহ।
হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস
হাদীসঃ ৪৭ – মুয়ায ইব্ন জাবাল (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ “আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আমার নিমিত্তে মহব্বতকারীদের জন্য নূরের মিম্বার রহিয়াছে, যাদের সাথে ঈর্ষা করিবে নবী ও শহীদগণ”। (সুনান তিরমিযি)
হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস
Leave a Reply