দুয়া কুনুত তাশাহুদ দরুদ শরীফ ও সলাম ফিরানো

দুয়া কুনুত তাশাহুদ দরুদ শরীফ ও সলাম ফিরানো

দুয়া কুনুত তাশাহুদ ও দরুদ শরীফ >> বুলুগুল মারাম এর মুল সুচিপত্র দেখুন

দুয়া কুনুত তাশাহুদ ও দরুদ শরীফ

পরিচ্ছেদ ১১২. দুর্ঘটনা বা বিপদে দু’আয়ে কুনূত পাঠ করা শরীয়তসম্মত
পরিচ্ছেদ ১১৩. বিতরের কুনুতে যা পড়তে হয়
পরিচ্ছেদ ১১৪. সাজদায় গমনের পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ১১৫. তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দু’হাত রাখার পদ্ধতি
পরিচ্ছেদ ১১৬. তাশাহহুদ
পরিচ্ছেদ ১১৭. তাশাহহুদে দু’আর আদবসমূহ
পরিচ্ছেদ ১১৮. নবী [সাঃআঃ] এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নিয়ম
পরিচ্ছেদ ১১৯. নামাজের দু‘আসমূহের বিবরণ
পরিচ্ছেদ ১২০. নামাজ শেষে সলাম ফিরানোর পদ্ধতি

পরিচ্ছেদ ১১২. দুর্ঘটনা বা বিপদে দু’আয়ে কুনূত পাঠ করা শরীয়তসম্মত

৩০৪ – আনাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসুল [সাঃআঃ] এক মাসব্যাপী আরবের কতিপয় গোত্রের প্রতি বদদু’আ করার জন্য সালাতে রুকুর পর দু’আ কুনূত পাঠ করিয়াছেন । {৩৪১}

{৩৪১} বুখারী ১০০১, ১০০২, ১০০৩, ১৩০০, ২৮০১, ২৮১৪, ৩০৬৪, ৩১৯০, ৪০৮৮, ৪০৮৯, ৪০৯০, ৪০৯১, ১০৯৪, ৪০৯৫, ৪০৯৬, ৬৩৯৪, মুসলিম ৬৬৭, নাসায়ি হাদিস ১০৭০, ১০৭৪১, ১০৭৭, আবূ দাউদ ১৪৪৪, ইবনু মাজাহ ১১৮৩, ১১৮৪, আহমাদ ১১৭৪০, ১১৭৪২, ১২২৪৪, দারেমী ১৫৯৬, ১৫৯৯। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩০৫ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আহমাদ ও দারাকুৎনীতে অনুরুপ রয়েছে তবে ভিন্ন একটি সানাদে কিছু অতিরিক্ত কথা রয়েছেঃ “কিন্তু ফজরের সালাতে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় না নেয়া পর্যন্ত`কুনূত’ করা ছাড়েননি”। {৩৪২}

{৩৪২} আহমাদ ১২২৪৬, দারাকুতনী ৩৯ পৃঃ হাঃ ১৭১১, ১৭১২, ১৭১৩, ১৭২২, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য

৩০৬ – আনাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

নাবী [সাঃআঃ] কেবল কোন সম্প্রদায়ের পক্ষে দু’আ বা বিপক্ষে বদদু’আ [অভিসম্পাত] করার জন্য`কুনূত’ করিতেন। ইবনু খুযাইমা একে সহিহ বলেছেন। {৩৪৩}

{৩৪৩} সিলসিলা সহীহা হাঃ ৬৩৯, মুসলিমের শর্তে এ হাদিসের সনদ সহিহ। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩০৭ – সা’দ ইবনু তারেক আল-আশজাঈ [রহঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে পিতা! আপনি অবশ্যই রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ], আবু বাকর,`উমার, উসমান ও`আলী [রাঃআঃ] -এর পিছনে নামাজ আদায় করিয়াছেন। তারা কি ফজরের নামাজে দু’আ কুনৃত পড়তেন? তিনি বলেন, হে বৎস! এটা তো বিদআত। {৩৪৪}

৩৪৪. তিরমিয়ী ৪০২, ইবনু মাজাহ ১২৪১, নাসায়ী ১০৮০, আহমাদ ১৫৪৪৯, ২৬৬৬৮, হাদিসের তাহকীকঃ হাসান হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৩. বিতরের কুনুতে যা পড়তে হয়

৩০৮ – হাসান ইবনু`আলী [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বিতর নামাজের কুনৃতে পড়ার জন্য কতগুলো বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন যা আমি বিতর নামাজের কুনুতে পড়ে থাকি।

اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِي وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، إِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা, ওয়া আফিনী ফীমান আফায়তা, ওয়া তাওয়াল-লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়া বারিক লী ফীমা আ‘তায়তা, ওয়া কিনী শাররা মা কাদায়তা, ফাইন্নাকা তাকদী ওয়া লা ইয়ুকদা আলায়কা ইন্নাহু লা ইয়াদিল্লু মান ওয়ালায়তা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তা’আলায়তা। “হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান কর, যাদের তুমি হিদায়াত করেছ তাদের সাথে। আমাকে মাফ করে দাও, যাদের মাফ করেছ তাদের সাথে। আমার অভিভাবক হও, যাদের অভিভাবক হয়েছে তাদের সাথে। তুমি আমাকে যা দান করেছ তাতে বরকত দাও। আর আমাকে ঐ অনিষ্ট হ’তে বাচাও, যা তুমি নির্ধারণ করেছ। তুমি ফায়সালা কর কিন্তু তোমার উপরে কেউ ফায়সালা করিতে পারে না। তুমি যার সাথে শক্ৰতা রাখ, সে সম্মান লাভ করিতে পারে না। নিশ্চয়ই অপমান হয়না সেই যাকে তুমি মিত্র হিসাবে গ্রহণ করেছ। হে আমাদের রব! তুমি বরকতময়, তুমি উচ্চ এবং নাবী [সাঃআঃ] -এর উপর রহমত অবতীর্ণ হোক’।

তাবারানী ও বায়হাকী বৃদ্ধি করেছেনঃ উচ্চারণঃ ওয়ালা ইয়া‘উযযু মান`আদাইতা’ “তুমি যার সাথে শক্ৰতা পোষণ কর সে কখনো ইজ্জত লাভ করিতে পারে না।” নাসায়ীতে ভিন্ন সূত্রে আরো রয়েছেঃ উচ্চারণঃ ওয়া সল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি “আর নবীর প্রতি আল্লাহর নামাজ [দরুদ] বর্ষিত হোক। {৩৪৫}

৩৪৫. আবু দাউদ ১৪২৫, তিরমিজি ৪৬৪, নাসায়ী ১৭৪৫, ১৭৪৬, ইবনু মাজাহ ১১৭৪, আহমাদ ১৭২০, ২৭৮২০, দারেমী ১৫৯১, বায়হাকী ২য় খণ্ড ২০৯ পৃঃ হাঃ ৪৬৩৭, ৩২৬৩, তাবরানী ২৭০১, ২৭০৩, ২৫০৫, ২৫০৭, আবু দাউদ ১৪২৫, কুনূতের শেষে [আরবী] শব্দগুলো বলা সম্পর্কিত বর্ণনার ব্যাপারে ইমাম নববী তাহাঁর আল মাজমু [৩/৪৯৯] গ্রন্থে এবং ইমাম সাখাবী তার আল কাওলুল বাদী [২৬১] গ্রন্থে বলেন, এর সনদ হাসান অথবা সহিহ ও আল আযকার [৮৭] গ্রন্থে এর সনদকে হাসান বলেছেন। ইবনুল মুলকিন তাহাঁর তুহফাতুল মুহতাজ [১/৪১০] গ্রন্থে এর সনদকে হাসান বলেছেন। পক্ষান্তরে ইবনু হাজার আসকালানী তার নাতায়িজুল আফকার [২/১৫৩] গ্রন্থে বলেন, এই অতিরিক্ত অংশটির সনদ গরীব, সাব্যস্ত নয়, কেননা আবদুল্লাহ বিন আলী পরিচিত নয়। ইবনু হাজার আত তালখীসুল হাবীর [১/৪০৫] গ্রন্থে উপরোক্ত ইমাম নববীর মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, তিনি যে সহিহ অথবা হাসান বলেছেন, তা সঠিক নয়, কেননা, হাদিসটি মুনকাতি বা বিচ্ছিন্ন। শাইখ আলবানী তামামুল মিন্না [২৪৩] গ্রন্থে বলেন, কুনুতের শেষে যে অতিরিক্ত শব্দগুলো রহিয়াছে সেটি দুর্বল। কেননা, এর সনদে অজ্ঞতা ও বিচ্ছিন্নতা রহিয়াছে। শাইখ আলবানী জঈফ নাসায়ী [১৭৪৫] গ্রন্থে দুর্বল ও ইরওয়াউল গালীল [২/১৭৬], সিফাতুস সালাত [১৮০] গ্রন্থে এর সনদকে দুর্বল বলেছেন. হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩০৯ – ইবনু আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন- নাবী [ঃ আমাদেরকে দুআ শিখিয়ে দিতেন, যার দ্বারা আমরা ফাজরের কুনুতের সময় দুআ করতাম। এর সানাদে দুর্বলতা রহিয়াছে। {৩৪৬}

৩৪৬. বায়হাকী ২৯৬০, ৩২৬৬

ইবনু উসাইমিন শারহু বুলুগুল মারামে [২/১৪০] [আরবী] অংশ টুকুকে দুর্বল বলেছেন। তবে ফজরের নামাজে কুনুত করিতে নিষধ সংক্রান্ত হাদিস গুলো বিশুদ্ধ নয়। আয যয়াফা আল কাবির লিল উকইলী [৩/৩৬৭] গ্রন্থে উকাইলী বলেন, আর ইমাম বুখারী বলেছেন মুহাদিসগন তার হাদিস বর্জন করিয়াছেন। বায়হাকী সুনানে আল কুবরা [২/২১৪] গ্রন্থে ফজরের নামাজে কুনুত পড়া বিদআত সম্পর্কিত হাদিসটি সহিহ নয় বলে মন্তব্য করিয়াছেন। কেননা এর সনদে রহিয়াছে আবু লায়লা আল কুফী, আর সে হচ্ছে মাতরুক। মিযানুল ই‘তিদাল [৪/৫৬৬] গ্রন্থে ইমাম যাহাবী বলেন, ফজরের নামাজে কুনুত পড়া বিদআত সম্পর্কিত হাদিসের এক জন রাবী আবু লায়লাকে দুবল বলেছেন। নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৪. সাজদায় গমনের পদ্ধতি

৩১০ -আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন নামাজে সাজদায় যাবে তখন যেন উটের মত না বসে এবং সে যেন হাটুদ্বয় রাখার পূর্বে তার দু’হাত মাটিতে রাখে।

এ হাদিসটি ওয়ায়িল বিন হুজর [রাঃআঃ] কর্তৃক বর্ণিত হাদিস থেকে শক্তিশালী। {৩৪৭}

৩৪৭. আবু দাউদ ৮৪০, ৮৪১, নাসায়ী ১০৯০, ১০৯১, তিরমিয়ী ২৬৯, আহমাদ ৮৭৩২, দারেমী ১৩২১, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩১১ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

উক্ত হাদীসে আছেঃ আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে সাজদাহর সময় তাহাঁর দু’হাতের পূর্বে দু’ হাঁটু মাটিতে রাখতে দেখেছি। প্রথম হাদিসটি অধিক শক্তিশালী কারণ, ইবনু উমর [রাঃআঃ] হাদীসে উক্ত হাদিসের শাহিদ [অনুরূপ] {৩৪৮}

৩৪৮. ইবনু মাজহ ৮৮২, তিরমিয়ী ২৬৮, নাসায়ী ১০৮৯, ১১৫৪, আবু দাউদ ৮৩৮, দারেমী ১৩২০, আলবানী ৮৩৮, নাসায়ী ১০৮৯, তিরমিয়ী ১৬৮, ইরওয়াউল গালীল ৩৫৭ গ্রন্থসমূহে হাদীটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করিয়াছেন। আত-তালখীসুল হাবীর [৪১৩] গ্রন্থে ইবনু হাজার বলেন, হাদিসটি শরীফ এক ভাবে বর্ননা করিয়াছেন। এই হাদিসের শাহিদ রহিয়াছে।আওনুল মাদ [৩/৪২] গ্রন্থে আযীমা বাদী বলেন, এই হাদিসের সনদে ইবনু আদিল্লাহ আন নাখয়ী রহিয়াছে আর তার ব্যাপারে সমালোচনা করা হয়েছে। কোন কোন বর্ননায় “তিনি যখন দাড়াতেন তখন হাঁটুর উপর দাঁড়াতেন, এবং ভর করিতেন রানের উপর” এই অতিরিক্ত বর্ণনাটি যয়ীফ। ইবনু বাযের মাজমুয়া ফাত্তয়া [৬১/১১,৩৩/১১] গ্রন্থে হাত রাখার পূর্বে হাটু রাখা প্রমাণিত বলে মন্তব্য করিয়াছেন। তিনি তার অপর গ্রন্থে ফাতওয়ানুর আলাদ দার [৮/২৮৬] গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলে উল্লেখ করিয়াছেন। ইরওয়াউল গালীল [২/৭৭] গ্রন্থে আলবানী হাদিসটিকে মুনকার বলেছেন। তুহফাতুল আহওয়াযী [২/১৩] গ্রন্থে আব্দুর রহমান মোবারকপুরী হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন এবং ইবনু রজব হাদিসটিকে মুরসাল ও মুনকাতি বলেছেন। তবে, হাটুর পূর্বে হাত রাখার হাদিসকে মুহাদ্দীসগন সহিহ বা হাসান বলে অভিহিত করিয়াছেন। জামেউস স্বাগীর লিস সুয়ূতী [৬৭৩] আওনুল মা’বূদ ৩/৪৩, আল মাহাল্লী ৪/১২৯, হাদিসের তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

৩১২ – বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ

আর ইবনু খুযাইমাহ একে [ইবনু উমারের হাদিসকে] সহিহ বলেছেন, এবং বুখারীও এটাকে মুআল্লাক-মাওকুফরুপে বর্ণনা করিয়াছেন। {৩৪৯}

৩৪৯. ইবনু খুযায়মা উক্ত হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন, হাঃ ৬২৭। তা হচ্ছে, ইবনু উমার মুল থেকে বর্ণিত – তিনি তাহাঁর দুইটু রাখার পূর্বে দু’হাত রাখতেন এবং বলেন, রসূলুল্লাহ এরূপ করিতেন। উক্ত হাদিসটিকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে যা ঠিক নয়। হাদিসটিকে ইমাম ইবনু খুযায়মা, হাতেম এবং আলবানী [রহঃ] সহিহ বলেছেন। আসল কথা হচ্ছে, ইমাম বুখারী [রঃ] তা তা’লীক হিসেবে বর্ণনা করিয়াছেন। [ফাতুহুল বারী ২ খণ্ড ২৯০ পৃঃ], হাদিসের তাহকীকঃ অন্যান্য

পরিচ্ছেদ ১১৫. তাশাহহুদে বসা অবস্থায় দু’হাত রাখার পদ্ধতি

৩১৩ – ইবনু`উমার [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন তাশাহহুদে [আত্তাহিয়াতু পড়ার জন্য] বসতেন তখন বাম হাত বাম হাঁটুর উপর ও ডান হাত ডান হাটুর উপর রাখতেন এবং [আরাবীয় পদ্ধতিতে] তিল্পান্ন গণনার ন্যায় [ডান] হাতের শাহাদাত ব্যতীত আঙ্গুলগুলোকে গুটিয়ে নিতেন এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করিতেন।

মুসলিমের ভিন্ন একটি রিওয়ায়াতে রয়েছেঃ আঙ্গুলগুলোকে ভাঁজ করে নিয়ে কেবল বৃদ্ধাঙ্গুলির নিকটতম শাহদাত আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করিতেন। {৩৫০}

৩৫০, মুসলিম ৫৮০, তিরমিয়ী ২৯৪, নাসায়ী ১১৬০ ১১৬৬, ১২৬৭, আবৃ দাউদ ৯৮৭, ইবনু মাজাহ ৯১৩, আহমাদ ৪৫৬১, মুওয়াত্তা মালেক ১৯৯, দারেমী ১৩৩৯, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৬. তাশাহহুদ

৩১৪ – আবদুল্লাহ [ইবনু মাস‘উদ] [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] আমাদের দিকে তাকিয়ে বললেনঃ তাই যখন তোমরা কেউ নামাজ আদায় করিবে, তখন সে যেন বলে

التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ، وَالصَّلَوَاتُ، وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

উচ্চারণঃ আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাতু আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান-নাবিইউ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন। আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুল্লাহ ওয়া রসূলুল্লাহু। “সকল মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নাবী! আপনার উপর আল্লাহর সালাম, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপর বর্ষিত হোক।” [আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বূদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] তার বান্দা ও রসূল] -ও পড়বে।; শব্দ বিন্যাস বুখারীর।” {৩৫১}

নাসায়ীতে আছে, আমাদের উপর তাশাহহুদ ফার্য হবার পূর্বে আমরা উপরোক্ত তাশাহহুদ পড়তাম।

আহমাদে আছে, নাবী [সাঃআঃ] তাকে [ইবনু মাস‘উদকে] তাশাহহুদ শিখিয়েছিলেন আর এ নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, লোকেদেরকেও তিনি যেন তা শিখিয়ে দেন। {৩৫২}

{৩৫১} বুখারীর এক বর্ণনায় আরো রহিয়াছে, এ সময় তিনি আমাদের মাঝেই অবস্থান করছিলেন। তারপর যখন তার ওফাত হয়ে গেলো, তখন থেকে আমরা [আরবী] এ স্থলে [আরবী পড়তে লাগলাম। হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, প্রকৃতপক্ষে সাহাবীর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর জীবদ্দশায় সম্বোধন করে বলিতেন, [আরবী] অতঃপর তিনি যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন সাহাবীর সম্বোধন করা ছেড়ে দিলেন এবং [আরবী] এর সীগাহ উল্লেখ করে বলিতেনঃ [আরবী], শাইখ আলবানী তাহাঁর আসল সিফাতুস সালাত ৩/৮৭৩ গ্রন্থে বলেন, এর সনদে দুর্বলতা ও বিচ্ছিনতা রহিয়াছে। তিনি ইরওয়াউল গালীল ২/২৭ গ্রন্থেও এর দুর্বলতার কথাই বলেছেন। {৩৫২} বুখারী ৮৩৫, ১২০২, ৬২৩০, ৬২৬৫, মুসলিম ৪০২, তিরমিজি ২৮৯, ১১০৫, নাসায়ী ১২৫২, ১১৬৩, ১১৬৪ আবু দাউদ ৯৬৮ ইবনু মাজাহ ৮৯৯, আহমাদ ৩৫৫২, ৩৬১৫, ৩৮৬৭, ৪৪০৮, দারিমী ১৩৪০, ১৩৪১, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩১৫ – আব্বাস [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নবী [সাঃআঃ] আমাদের তাশাহহুদ শিখিয়েছিলেন তা নিম্নরূপ ছিলঃ`সকল বরকতসমৃদ্ধ মান মর্যাদা আর পবিত্র`ইবাদাত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ,………… শেষ পর্যন্ত। {৩৫৩}

{৩৫৩} তিরমিজি ২৯০, মুসলিম ৪০৩, তিরমিজি ২৯০, নাসায়ী ১১৭৪, আবু দাউদ ৯৭৪, ইবনু মাজাহ ৯০০, আহমাদ ২৬৬০, ২৮৮৭। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৭. তাশাহহুদে দু’আর আদবসমূহ

৩১৬ – ফুযালাহ বিন`উবাইদ [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এক ব্যক্তির নামাজ আদায় করার সময় শুনলেন যে, সে দু’আ করিল বটে কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা করিল না ও নাবীর প্রতি নামাজ [দরুদ] পাঠ করিল না। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, লোকটি তাড়াতাড়ি করেছে। তারপর তিনি তাকে ডেকে বলিলেন-যখন তোমাদের কেউ নামাজ আদায় করিবে তখন সে প্রথমে আল্লাহর হামদ ও গুণগান পাঠ করিবে, তারপর নাবীর উপর নামাজ [দরূদ] পাঠ করিবে, তারপর স্বীয় পছন্দমত দু’আ [নির্বাচন করে] পাঠ করিবে। তিরমিয়ী, ইবনু হিব্বান ও হাকীম এটিকে সহিহ বলেছেন। {৩৫৪}

{৩৫৪} আবু দাউদ ১৪৮১, তিরমিজি ৩৪৭৬, ৩৪৭৭ নাসায়ী ১২৮৪ আহমাদ ২৩৪১৯ ইবনু হিব্বান হাঃ ১৯৬০, হাকিম ১ম খণ্ড ২৩০ ও ২৬৮ পৃঃ। ইমাম তিরমিয়ী হাদিসটি বর্ণনা করার পর বলেছেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ইমাম আহমাদের বর্ণনায় [আরবী] এর বদলে [আরবী] -র উল্লেখ রহিয়াছে। ইমাম হাকিমের বর্ণনায় [আরবী] উল্লেখ রয়েছে।`মুজতাবা’ গ্রন্থে রহিয়াছে, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] জনৈক লোককে সালাত পাঠরত অবস্থায় দোয়া পাঠ করিতে শুনলেন, সে আল্লাহর গুণকীর্তন ও করলো না এবং নাবী [সাঃআঃ] -এর উপরও দরূদ পাঠ করলো না। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হে মুসল্লী তুমি তাড়াহুড়া করলে। অতঃপর নাবী [সাঃআঃ] সালাত শিক্ষা দিলেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] অপর একজন লোককে সালাত রত অবস্থায় আল্লাহর গুণকীর্তন, প্রশংসা এবং নাবী [সাঃআঃ] -এর উপর দরূদ পাঠ করিতে শুনলেন। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি দোয়া কর, তোমার দোয়া কবুল করা হইবে। তুমি যা চাও তাই প্রাপ্ত হইবে। হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৮. নবী [সাঃআঃ] এর প্রতি দরূদ পাঠ করার নিয়ম

৩১৭ – আবূ মাস’উদ [‘উকবাহ বিন্‌`আমির] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, বাশীর বিন্‌ সা’দ বলিলেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আল্লাহ্‌ আপনার উপর আমাদের নামাজ [দরূদ] পাঠের আদেশ করিয়াছেন, তবে আমরা কিরূপে আপনার উপর নামাজ [দরূদ] পাঠ করব? তিনি একটু নীরবতা পালন করিলেন, তারপর বলিলেন,

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ 

“আল্ল-হুম্মা সল্লি আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা-সল্লাইতা আলা-আ-লি ইবর-হীমা ওয়াবা-রিক আলা-মুহাম্মাদিন ওয়া আলা-আ-লি মুহাম্মাদিন কামা বা-রকতা আলা আ-লি ইবর-হীমা ফিল আলামীন। ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। অর্থাৎ “ হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তার পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম [আঃ] এর পরিবার-পরিজনের উপর রহমাত বর্ষণ করেছ। তুমি মুহাম্মাদ ও তাহাঁর পরিবার-পরিজনকে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করো-যেভাবে তুমি ইবরাহীম [আঃ]- এর পরিবার-পরিজনকে দুনিয়া ও আখিরাতে বারাকাত ও প্রাচুর্য দান করেছ। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত।“

ইবনু খুযাইমাহ তাতে বৃদ্ধি করেছেনঃ “আমরা আমাদের নামাজে যখন আপনার প্রতি নামাজ পাঠ করব তখন কিরূপে আপনার উপর নামাজ [দরূদ] পাঠ করব?” {৩৫৫}

{৩৫৫} সহিহ মুসলিম ৪০৫, তিরমিজি ৩২২০, নাসায়ি হাদিস ১২৮৫, ১২৮৬, আবূ দাউদ ৯৭৯, আহমাদ ১৬৬১৯, হাসানঃ সহিহ ইবনু খুযাইমাহ হাঃ ৭১১, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

৩১৮ – আবূ হুরাইরা [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] বলেছেন যখন তোমাদের কেউ তাশাহ্‌হুদ পড়ে শেষ করিবে তখন যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহ্‌র নিকট পানাহ চায়- [তা হলো]

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ (1) فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা মিন`আযাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন`আযাবিল কাব্‌রি ওয়া মিন ফিত্‌নাতিল মাহয়া ওয়াল মামাতি, অয়া মিন শার্‌রি ফিত্‌নাতিল মাসীহিদ-দাজ্জাল। অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি জাহান্নামের শাস্তি হতে, কবরের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের ফিত্‌না হতে এবং মাসীহ্‌ দাজ্জালের ফিত্‌না হতে। {৩৫৬}

মুসলিমের বর্ণনায় আছেঃ “যখন তোমাদের কেউ শেষের বৈঠকের তাশাহ্‌হ্যদ শেষ করে” [তারপর উপরোক্ত দু’আটি পড়বে]। {৩৫৭}

{৩৫৬} বুখারীর [হাঃ ১৩৭৭] বর্ণনায় রয়েছে, নাবী [সাঃআঃ] দু’আ করিতেন [আরবী] হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার সমীপে পানাহ চাচ্ছি ক্ববরের শাস্তি হতে, জাহান্নামের শাস্তি হতে, জীবন ও মরণের ফিত্‌না হতে এবং মাসীহ্‌ দাজ্জালের ফিত্‌না হতে। {৩৫৭} বুখারী ১৩৭৭ মুসলিম ৫৮৮, তিমিযী ৩৬০৪, নাসায়ি হাদিস ১৩১০, ৫৫০৫, ৫৫০৬, ৫৫০৮, ৫৫০৯, আবূ দাউদ ৯৮৩, ইবনু মাজাহ ৯০৯, আহমাদ ৭১৯৬, ৩৭২৮০, ১০৩৮৯, দারেমী ১৩৪৪, নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১১৯. নামাজের দু‘আসমূহের বিবরণ

৩১৯ – আবূ বাক্‌র সিদ্দীক [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

একদা তিনি আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] -এর নিকট আরয করিলেন, আমাকে নামাজে পাঠ করার জন্য একটি দু’আ শিখিয়ে দিন। তিনি বলিলেন, এ দু’আটি বলবে-

اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফ্‌সী যুলমান কাছিরাঁও, ওয়া লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্‌তা, ফাগফিরলী মাগফিরাতান মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী ইন্নাকা আন্‌তাল গাফূরুর রাহীম। “হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অধিক যুল্‌ম করেছি। আপনি ছাড়া সে অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। আপনার পক্ষ হতে আমাকে তা ক্ষমা করে দিন এবং আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।” {৩৫৮}

{৩৫৮} বুখারী ৬৩২৬, ৭৩৮৮, ৮৩৪, মুসলিম ২৭০৫, তিরমিজি ৩৫৩১, নাসায়ি হাদিস ১৩০২, ইবনু মাজাহ ৩৮৩৫, আহমাদ ৮, ২৯। নামাজ পড়ার নিয়ম কানুন হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস

পরিচ্ছেদ ১২০. নামাজ শেষে সলাম ফিরানোর পদ্ধতি

৩২০ – ওয়ায়িল বিন্‌ হুজর [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি নাবী [সাঃআঃ] -এর সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলাম। তিনি [নামাজ সমাপ্তকালে] ডান দিকে

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

আস্‌সালামু`আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু [আল্লাহ্‌র শান্তি, করুণা ও আশিষ আপনাদের উপর বর্ষিত হোক] এবং বাম দিকে

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ

আস্‌সালামু আলাইকুম অ-রাহ্‌মাতুল্লাহি অবারাকাতুহু বলে সালাম ফেরালেন। আবূ দাউদ সহীহ্‌ সানাদে। {৩৫৯}

{৩৫৯} আবূ দাউদ ৯৯৭, হাদিসের তাহকীকঃ সহিহ হাদিস


by

Comments

Leave a Reply