তারাবীহ তাহাজ্জুদ Qiyamul Lail এর রাকাত সংখ্যা ও দোয়া

কিয়ামুল লাইল/ তাহাজ্জুদ/ তারাবীহ নামাজ এর রাকাত সংখ্যা ও দোয়া

এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> বুখারি তারাবী তাহাজ্জুদ >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >>তিরমিজি তাহাজ্জুদ কিয়াম>> নাসাঈ >> মিশকাত >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে

1. পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করিতে উঠে যে দুয়া পাঠ করিবে [মাজাহ]
2. পরিচ্ছেদঃ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ আরম্ভ করার দুয়া
3. পরিচ্ছেদঃ ২০ রাকআত তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল
4. পরিচ্ছেদঃ অধিক রাকাত তারাবীহর নামাজ/ কিয়ামুল লাইল
5. পরিচ্ছেদঃ ৮ রাকাত তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল ও বিতর ৩
6. পরিচ্ছেদঃ রমযানে তারাবী /কিয়ামুল লাইল পড়ার ফাযীলাত
7. পরিচ্ছেদঃ তারাবী /কিয়ামুল লাইল বিচ্ছিন্নভাবে পড়ার কারন
8. পরিচ্ছেদঃ তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল এর জামাত
পরিচ্ছেদঃ রাতের নামাজ ১২ রাকাত, বিতর ও ফজরের সুন্নত ২
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ ও বিতর সহ এবং ফজরের সুন্নত ২
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ দু দু করে বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের/তাহাজ্জুদ ১০ বিতর ১ এবং ফজরের সুন্নাত ২
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাহাজ্জুদ ৮ ও বিতর ৩ ফজরের সুন্নত ২
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাহাজ্জুদ ৮ বিতর ৫
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ ফজরের সুন্নাত ২ সহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাজাজ্জুদ ৬ বিতর ৫ ও ফজরের সুন্নত ২
পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-রাতের নামাজ ৮ ফজরের সুন্নত ২ সহ
পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-রাতের নামাজ, বিতর ১ রাকাত সহ
পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-তাজাজ্জুদ ৬ বিতর ৩ ও ফজরের সুন্নত ২
পরিচ্ছেদঃ ৯ রাকাত-তাজাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইল
পরিচ্ছেদঃ ১৫/১৩/১১ রাকাত-বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩/১১ রাকাত-বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩/১১/৯ রাকাত-বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ ১১/৯ রাকাত-বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ ৭ বা ৫ রাকআত নামাজ বিতর সহ
পরিচ্ছেদঃ কিয়ামুল লাইল/ তাহাজ্জুদ বাধ্যবাধকতা রহিত করে শিথিল করা
পরিচ্ছেদঃ ক্বিয়ামুল লাইল [আবু দাউদ] [মাজাহ]
পরিচ্ছেদঃ রাত জেগে ইবাদত করার গুরুত্ব ও ফযিলত [বুখারী] [নাসাঈ]
পরিচ্ছেদঃ সফরকালীন সময়ে রাত্রে নামাজ আদায় করার ফযীলত [নাসাঈ]
পরিচ্ছেদঃ ঘুম হইতে জেগে ও পরিজনকে উঠিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়/উৎসাহ করা [বুখারী] [মাজাহ] [নাসাঈ]
পরিচ্ছেদঃ রাতের সালাতে নিয়ম ও রুকু সিজদা দীর্ঘ করা [বুখারী] [নাসাঈ]
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদের সালাত দীর্ঘ করা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ নামাজের মধ্যে তন্দ্রা এলে [আবু দাউদ] [মাজাহ]
পরিচ্ছেদঃ রাতে সালাত না আদায় করলে ঘাড়ের পশ্চাদংশে শয়তানের গ্রন্থী বেঁধে দেয়া।
পরিচ্ছেদঃ সালাত আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়লে তার কানে শয়তান পেশাব করে দেয়।
পরিচ্ছেদঃ ঘুমের কারণে ওযীফা ছুটে গেলে [আবু দাউদ]
পরিচ্ছেদঃ রুগ্ন ব্যক্তির তাহাজ্জুদ আদায় না করা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ সাহরীর সময় যে নিদ্রা যায় অথবা ফজ্‌রের সালাত পর্যন্ত জেগে থাকা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ তাহাজ্জুদ এর নামাজের জন্য জাগ্রত হওয়ার সময় ও জিকির [বুখারী] [নাসাঈ]
পরিচ্ছেদঃ রমযানে ও অন্যান্য সময়ে নাবী (সাঃআঃ)-এর রাত্রি জেগে ইবাদাত করা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ নফল নামাজ এর নিয়্যাত করার পর ঘুমিয়ে গেলে [আবু দাউদ]
পরিচ্ছেদঃ ইবাদাত ও নামাজের জন্য রাতের কোন্‌ সময়টি উত্তম? [আবু দাউদ] [মাজাহ]
পরিচ্ছেদঃ রাতের নামাজ দু দু রাকআত করে [আবু দাউদ] [মাজাহ]
পরিচ্ছেদঃ রাতের নামাজে উচ্চস্বরে ক্বিরাআত পাঠ [আবু দাউদ]
পরিচ্ছেদঃ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ সম্পর্কে [আবু দাউদ]
পরিচ্ছেদঃ নামাজে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ [আবু দাউদ]
পরিচ্ছেদঃ রাতে ও দিনে পবিত্রতা হাসিল করার মর্যাদা এবং সালাত আদায়ের ফাযীলাত [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ ইবাদাতে কঠোরতা অবলম্বন করা অপছন্দনীয় [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ রাত জেগে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির ইবাদাত পরিত্যাগ করা মাকরূহ [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ যে ব্যক্তি রাত জেগে সালাত আদায় করে তার ফযীলত [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাজ। [মাজাহ]
পরিচ্ছেদঃ ফরজ সালাতের পর নফল সালাত [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ ফর্‌জের পর নফল সালাত না আদায় করা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ নফল সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা [বুখারী]
পরিচ্ছেদঃ নফল সালাত ঘরের মধ্যে আদায় করা [বুখারী]

1. পরিচ্ছেদঃ রাতে [তাহাজ্জুদের] নামাজ আদায় করিতে উঠে যে দুয়া পাঠ করিবে

আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মাঝরাতে বা গভীর রাতে [তাহাজ্জুদের] নামাযে দাঁড়াতেন সে সময় বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيَّامُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ الْحَقُّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ إِلَهِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আংতা নুওরুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া লাকালহামদু আংতা কায়্যিমুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি, ওয়া লাকাল হামদু আংতা রব্বুস সামাওয়অতি ওয়াল আরদি ওয়া মান ফিহিন্না আংতাল হাক্কু ওয়া ওয়া’দুকাল হাক্কু, ওয়া লিক্বাউকা হাক্কু। ওয়াল ঝান্নাতু হাক্কু। ওয়ান নারু হাক্কু। ওয়াস সাআতু হাক্কু। আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু। ওয়াবিকা আমাংতু ওয়া আলাইকা তাওয়াক্কালতু। ওয়া ইলাইকা আনাবতু। ওয়া বিকা খাসামতু। ওয়া ইলাইকা হাকামতু। ফাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখ্খারতু। ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আ’লাংতু। আংতা ইলাইহি লা ইলাহা ইল্লা আংতা, ” হে প্রভু ! সকল প্রশংসা তোমার জন্য, তুমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আলো এবং সকল প্রশংসার অধিকারী তুমিই। তুমিই আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছ। সকল প্রশংসা তোমার। তুমি আকাশমণ্ডলী, দুনিয়া এবং উভয়ের মাঝখানের সমস্ত কিছুর প্রতিপালক, তুমি সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য, [আখিরাতে] তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য এবং ক্বিয়ামাত [সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গটি] সত্য। হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপর ঈমান এনেছি, তোমার উপর তাওয়াককুল [নির্ভর] করেছি, তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি, তোমার জন্যই যুদ্ধ করি এবং তোমাকে বিচারক মানি। সুতরাং আমার পূর্বের-পরের এবং লুকায়িত ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ তুমি ক্ষমা করে দাও। তুমিই আমাদের মাবূদ, তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই”।

[তিরমিজি ৩৪১৮ সহীহ] [ইবনি মাজা ১৩৫৫ সহীহ সনদে একী বর্ণনা কারি হতে উল্লেখ করেন اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيَّامُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ مَالِكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ وَلَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ الْحَقُّ وَوَعْدُكَ حَقٌّ وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ وَقَوْلُكَ حَقٌّ وَالْجَنَّةُ حَقٌّ وَالنَّارُ حَقٌّ وَالسَّاعَةُ حَقٌّ وَالنَّبِيُّونَ حَقٌّ وَمُحَمَّدٌ حَقٌّ اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ وَبِكَ خَاصَمْتُ وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ  ]

আসিম বিন হুমায়দ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করলাম যে, নবী [সাঃআঃ] রাতে নামাজ আদায় করিতে উঠে প্রথমে কি পড়তেন? তিনি বলেন, তুমি আমার নিকট যে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো, তোমার আগে সে সম্পর্কে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করেনি। তিনি দশবার আল্লাহু আকবার, দশবার আলহামদু লিল্লাহ, দশবার সুবহানাল্লাহ ও দশবার ক্ষমা প্রার্থনা করিতেন এবং বলিতেন ঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي

আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়াহ দীনি ওয়ার জুকনি ওয়া আফিনি, “হে আল্লাহ্‌! আমাকে ক্ষমা করো, আমাকে হিদায়াত দান করো, আমাকে রিযিক দাও এবং আমাকে নিরাপত্তা দান করো”।

তিনি কিয়ামাত দিবসের ভয়াবহ অবস্থা থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করিতেন।

[ইবনে মাজাহ ১৩৫৬ হাসান]

নাসায়ি ১৬১৭ হাসান اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي وَعَافِنِي، أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ ضِيقِ الْمَقَامِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ, আবু দাউদ ৭৬৬

2. পরিচ্ছেদঃ রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ আরম্ভ করার দুয়া

আবু সালামাহ [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ

আয়িশাহ [রাদি.]- কে আমি প্রশ্ন করলাম, নাবী [সাঃআঃ] রাতে যখন [তাহাজ্জুদ] নামাজ আদায় করিতে দন্ডায়মান হইতেন তখন কিসের মাধ্যমে নামাজ শুরু করিতেন [তাকবীরে তাহরীমার পর এবং ফাতিহার আগে কি পাঠ করিতেন]? তিনি বলেন, তিনি রাতে [তাহাজ্জুদ] নামাজ আদায় করিতে দাঁড়িয়ে তা আরম্ভ করে বলিতেনঃ

اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَعَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ

“আল্ল-হুম্মা রব্বা জিবরীলা ওয়া মীকাঈলা, ওয়া ইস্‌রা-ফীলা, ফাত্বিরাস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযি, আ-লিমাল গয়বি ওয়াশ্ শাহা-দাতি, আন্‌তা তাহ্‌কুমু বায়না ইবা-দিকা ফীমা কা-নূ ফীহি ইয়াখ্‌তালিফূন, ইহ্‌দিনী লিমাখ্‌তুলিফা ফীহি মিনাল হাক্বক্বি বিইয্‌নিকা, ইন্নাকা তাহ্‌দি মান তাশা-উ ইলা- সিরাত্বিম মুসতাক্বীম, “হে জিবরীল, মীকাঈল ও ইসরাফীলের রব, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা , প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য জ্ঞাতা! তোমার বান্দাদের মধ্যে তুমিই মীমাংসাকারী যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করছে। সত্যের ব্যাপারে যে মতবিরোধ করা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে তুমি তোমার আদেশবলে আমাকে সঠিক পথের হিদায়াত দান কর, তুমিই যাকে ইচ্ছা তাকে হিদায়াত দান করে থাক”।

[তিরমিজি ৩৪২০ সহীহ] ইবনি মাজাহ ১৩৫৭, اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرَئِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِكَ إِنَّكَ لَتَهْدِي إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ]
[নাসাই ১৬২৫ হাসান اللَّهُمَّ رَبَّ جِبْرِيلَ وَمِيكَائِيلَ وَإِسْرَافِيلَ، فَاطِرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، أَنْتَ تَحْكُمُ بَيْنَ عِبَادِكَ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ، اللَّهُمَّ اهْدِنِي لِمَا اخْتُلِفَ فِيهِ مِنَ الْحَقِّ، إِنَّكَ تَهْدِي مَنْ تَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ]

মুত্তালিব বিন আবু ওয়াদাআহ [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, রাতের নামাজ দু দু রাকআত করে। প্রতি দু রাকআতের শেষে রয়েছে তাশাহহুদ। অত্যন্ত বিনয়-নম্রতা সহকারে, শান্তভাবে ও একাগ্রতার সাথে নামাজ পড়বে এবং বলবে ঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

আল্লাহুম্মাগফিরলি “হে আল্লাহ্! আমাকে ক্ষমা করুন।” যে ব্যক্তি তা করেনি তার নামায ত্রুটিপূর্ণ।

[ইবনে মাজাহ ১৩২৫, দুর্বল]

আবু দাউদ ১২৯৬

3. পরিচ্ছেদঃ ২০ রাকআত তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল

ইয়াযিদ ইবনি রুমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] ইয়াযিদ ইবনি রুমান [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণনা করেন- তিনি বলেছেন, লোকজন উমার ইবনি খাত্তাব [রাদি.]-এর খিলাফতকালে রমযানে তেইশ রাকআত তারাবীহ পড়াতেন তিন রাকআত বিতর এবং বিশ রাকআত তারাবীহ। এটাই উমার [রাদি.] শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

[মুয়াত্তা ২৪৪]

মুসান্নাফে আঃ রায্যাক হতে বর্ণিত

أَنَّ عُمَرَ جَمَعَ النَّاسَ فِي رَمَضَانَ عَلَى أُبَي بنِ كَعَبٍ وَعَلَى تَمِيْمِ الدَّارِيْ عَلَى إِحْدى وَعِشْرِيْنَ مِنْ رَكْعَةِ يَقْرَؤُنَ بِالْمَئِيين

উমার (রাযি.) রমযানে উবাই ইবনে কাব ও তামীম আদদারীকে ইমামতিতে লোকদেরকে একুশ রাকআত সালাতের প্রতি জামাআতবদ্ধ করেছিলেন। (অর্থাৎ তারাবীহ ২০ ও বিতর ১ রাকআত)

[মুসান্নাফে আঃ রায্যাক ৭৭৩০]
উল্লেখ্য যে, সৌদীর মসজিদ গুলোতে তারাবী ও বিতর মিলে ১১ বা ১৩ রাকআত পড়লেও মক্কার হারামে ও মাদ্বীনার মসজিদে নববীতে তারাবীহ ২০ ও বিতর ৩ মিলিয়ে মোট ২৩ রাকআত পড়ে থাকে।

4. পরিচ্ছেদঃ অধিক রাকাত তারাবীহর নামাজ/ কিয়ামুল লাইল

আরাজ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা সব সময় লোকদেরকে [সহাবীদেরকে] পেয়েছি তারা রমযান মাসে কাফিরদের ওপর লানাত বর্ষণ করিতেন। সে সময় ক্বারী অর্থাৎ তারাবীহের সলাতের ঈমামগণ সূরাহ আল বাক্বারাহ-কে আট রাকাআতে পড়তেন। যদি কখনো সূরাহু আল বাক্বারাহ-কে বারো রাকাআতে পড়ত, তাহলে লোকেরা মনে করত ঈমাম সলাত সংক্ষেপ করে ফেলেছেন।

[মিসকাত ১৩০৩, সহীহ] [মুয়াত্তা ২৪৫]
সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৪২৯৬, শুআবুল ঈমান ৩০০১

5. পরিচ্ছেদঃ ৮ রাকাত তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল ও বিতর ৩

আবু সালামা ইবনু আবদুর রাহমান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশা (রাদি.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, রমযানে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) –এর সালাত কিরূপ ছিল? তিনি বলিলেন, রমযান মাসে ও রমযানে ব্যতীত অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাকআত হইতে বৃদ্ধি করিতেন না। তিনি চার রাকআত সালাত আদায় করিতেন, তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। অতঃপর তিনি চার রাকআত পড়েন। তুমি তার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো না। এরপর তিন রাকআত সালাত আদায় করিতেন। আমি (আয়েশা রাঃ) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন? তিনি বললেনঃ হে আয়েশা! আমার দুচোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কাল্‌ব নিদ্রাভিভূত হয়না।

[বুখারী ২০১৩] [আবু দাউদ ১৩৪১, সহীহ]

সায়িব ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, উমার [রাদি.] উবাই ইবনি কাব ও তামীম আদ দারী-কে আদেশ করিলেন যেন তারা লোকেদেরকে নিয়ে রমাযান মাসের রাতের এগার রাকাআত তারাবীহের সলাত আদায় করে। এ সময় ঈমাম তারাবীহের সলাতে এ সূরাগুলো পড়তেন। যে সূরার প্রত্যেকটিতে একশতের বেশী আয়াত ছিল। বস্তুতঃ কিয়াম বেশী লম্বা হওয়ার কারণে আমরা আমাদের লাঠির উপর ভর করে দাঁড়িয়ে ফাজরের নিকটবর্তী সময়ে সলাত শেষ করতাম।

[মিসকাত ১৩০২, সহীহ] [মালিক ২৪৩]

6. পরিচ্ছেদঃ রমযানে তারাবী /কিয়ামুল লাইল পড়ার ফাযীলাত

আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রমযানের [রাত্র জেগে] ইবাদাত-বন্দিগীতে মাশ্‌গুল থাকতে রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] উৎসাহিত করিতেন, তবে সেটাকে বাধ্যতামূলক হিসেবে নির্দেশ দেননি। তিনি বলিতেনঃ ঈমানের সাথে এবং সাওয়াবের আশা করে যে লোক রমযান মাসে [রাতে ইবাদাতে] দন্ডায়মান হইবে সে লোকের পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হইবে। এ নিয়মই রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর মৃত্যু পর্যন্ত চালু ছিল। এ বিষয়টি আবু বকর [রাদি.]-এর খিলাফত এবং উমার ইবনিল খাত্তাব [রাদি.]-আর খিলাফতের প্রথম দিকেও এমনই ছিল।

[বুখারী ২০০৮, ২০০৯] [তিরমিজি ৮০৮, সহীহ] [আবু দাউদ ১৩৭১, সহিহ] [মুয়াত্তা মালিক ২৪১, সহীহ] [মিসকাত ১২৯৬] [বুলগুল ৬৯৭, সহীহ]

7. পরিচ্ছেদঃ তারাবী /কিয়ামুল লাইল বিচ্ছিন্নভাবে পড়ার কারন

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃs

তিনি বলেন, লোকেরা রমযান মাসে মাসজিদে বিচ্ছিন্নভাবে নামাজ আদায় করতো। আমার প্রতি রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নির্দেশ মোতাবেক আমি তাহাঁর জন্য একটা মাদুর বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর বর্ণনাকারী ঘটনাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, অতঃপর নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে লোক সকল! আল্লাহর শপথ! আল্লাহর প্রশংসা, আমার রাতটি আমি গাফিলভাবে অতিবাহিত করি নাই এবং তোমাদের অবস্থাও আমার নিকট গোপন থাকেনি।

[আবু দাউদ ১৩৭৪, হাসান]

8. পরিচ্ছেদঃ তারাবীর নামাজ /কিয়ামুল লাইল এর জামাত

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) গভীর রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন, কিছু সংখ্যক পুরুষ তাহাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন। সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন, ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন। তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেন। তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। এরপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না, কিন্তু তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালতের সাক্ষ্য দেয়ার পর বললেনঃ শোন! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না, কিন্তু আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই) কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) -এর ওফাত হলো আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায়।

[বুখারী ২০১২] [আবু দাউদ ১৩৭৩, সহিহ] [নাসাই ১৬০৪, সহীহ] [মুয়াত্তা মালিক ২৪০]

যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] [রমাযান] মাসে মাসজিদের ভিতরে চাটাই দিয়ে একটি কামরা তৈরি করিলেন। তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এখানে কয়েক রাত [তারাবীহ] সলাত আদায় করিলেন। আস্তে আস্তে তাহাঁর নিকট লোকজনের ভিড় জমে গেল। এক রাতে তাহাঁর কণ্ঠস্বর না শুনতে পেয়ে লোকের মনে করেছে তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ঘুমিয়ে গেছেন। তাই কেউ কেউ গলা খাকারী দিলো, যাতে তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাদের কাছে বেরিয়ে আসেন। তিনি [সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, তোমাদের যে অনুরাগ আমি দেখছি তাতে আমার আশংকা হচ্ছে এ সলাত না আবার তোমাদের ওপর ফার্‌য হয়ে যায়। তোমাদের ওপর ফার্‌য হয়ে গেলে তোমরা তা পালন করিতে সক্ষম হবে না। অতএব হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের বাড়ীতে সলাত আদায় কর। এজন্য ফার্‌য সলাত ব্যতীত যে সলাত ঘরে পড়া হয় তা উত্তম সলাত। 

[মিসকাত ১২৯৫, সহীহ]
বোখারী ৭২৯০, মুসলিম ৭৮১

আবু হুরাইরাহ (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা রমযান মাসে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বেরিয়ে দেখলেন যে, মাসজিদের একপাশে কতিপয় লোক নামাজ আদায় করছে। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা কারা? বলা হলো, এরা কুরআন মুখস্ত না জানার কারণে উবাই ইবনি কাব (রাঃআঃ) এর ঈমামতিতে (তারাবীহ) নামাজ আদায় করছে। নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ এরা ঠিকই করছে এবং চমৎকার কাজই করছে!

[আবু দাউদ ১৩৭৭, দুর্বল]

আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা রোযা পালন করেছি। তিনি আমাদেরকে নিয়ে রমযান মাসে কোন [নফল] নামাজ আদায় করেননি। অবশেষে তিনি রমযানের সাত দিন বাকী থাকতে আমাদেরকে নিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। এতে এক-তৃতীয়াংশ রাত চলে গেল। আমাদেরকে নিয়ে তিনি ষষ্ঠ রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়াননি। তিনি আবার আমাদের নিয়ে পঞ্চম রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়ান। এতে অর্ধেক রাত চলে গেল। আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। যদি আমাদের বাকী রাতটিও নামাজ আদায় করে পার করে দিতেন। তিনি বললেনঃ ইমামের সাথে যদি কোন লোক [ফরয] নামাযে শামিল হয় এবং ইমামের সাথে নামাজ আদায় শেষ করে তাহলে সে লোকের জন্য সারা রাত [নফল] নামাজ আদায়ের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর মাসের তিন রাত বাকী থাকা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেননি। আবার তিনি তৃতীয় [২৭শে] রাত থাকতে আমাদের নিয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তাহাঁর পরিজন ও স্ত্রীগণকেও তিনি এ রাতে ডেকে তুললেন। এত [দীর্ঘ]-সময় ধরে তিনি নামাজ আদায় করিলেন যে, যার ফলে সাহ্‌রীর সময় চলে যাওয়ার সংশয় হল আমাদের মনে। বর্ণনাকারী জুবাইর ইবনি নুফাইর বলেন, আবু বকর [রাদি.]-কে আমি বললামঃ ফালাহ্‌” কি? তিনি বলিলেন, সাহ্‌রী খাওয়া।

[তিরমিজি ৮০৬, সহীহ] [আবু দাউদ সহিহ , ১৩৭৫] [নাসাই ১৬০৫, সহীহ] [মিসকাত ১২৯৮]

আবদুর রাহমান ইবনু আবদ আল-ক্বারী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রমযানের এক রাতে উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদি.)- এর সাথে মসজিদে নাবাবীতে গিয়ে দেখি যে, লোকেরা এলোমেলোভাবে জামাআতে বিভক্ত। কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে। উমর (রাদি.) বলিলেন, আমি মনে করি যে, এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের) পিছনে জমা করে দেই, তবে তা উত্তম হইবে। এরপর তিনি উবাই ইবনু কাব (রাদি.)- এর পিছনে সকলকে জমা করে দিলেন। পরে আর এক রাতে আমি তাহাঁর [উমর (রাদি.)] সাথে বের হই। তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল। উমর (রাদি.) বলিলেন, কতইনা সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন, কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত।

[বুখারী ২০১০] [মিসকাত ১৩০১] [মুয়াত্তা ২৪২]
আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিত [২০১১]

নুআয়ম ইবনি যিয়াদ আবু তাল্‌হা হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, আমি নুমান ইবনি বশীর [রাঃআঃ]-কে হিম্‌স নামক স্থানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলিতে শুনিয়াছি, আমরা একবার রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রমযান মাসের তেইশতম রাত্রের প্রথম এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত তারাবীহ্‌র নামাজ আদায় করলাম। অতঃপর পঁচিশতম রাত্রে তাহাঁর সাথে অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত তারাবীহ্‌র নামাজ আদায় করলাম। আবার তাহাঁর সাথে সাতাইশতম রাত্রেও তারাবীহ্‌র নামাজ আদায় করিতে লাগলাম। এমন কি আমরা আশংকা করলাম যে, “ফালাহ” পাব না। সাহাবীগণ সাহরীকে ফালাহ বলিতেন।

[নাসাই ১৬০৬, সহীহ]

মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, [মসজিদে রাত কাটিয়ে] আমরা রমাযানে [গৃহে] ফিরে আসতাম, তখন ভোর হওয়ার আশংকায় খাদেমগণকে [খানা প্রস্তুতির] কাজে লাগাতাম। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

উরওয়াহ [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিত; যাকওয়ান আবু আমর [রাহিমাহুল্লাহ] নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিণী আয়েশা [রাদি.]-এর ক্রীতদাস ছিলেন। আয়েশা [রাদি.]-এর ওফাতের পর যাকওয়ান মুক্তিপ্রাপ্ত হইবেন বলে ঘোষণা ছিল। [উক্ত যাকওয়ান] রমাযান মাসে তারাবীহর নামায আদায় করিতেন এবং আয়েশা [রাদি.] তাঁর পেছনে [অন্যদের সথে] মুকতাদী হয়ে নামায আদায় করিতেন অথবা আয়েশা [রাদি.] তাঁর কুরআন পাঠ শুনতেন। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]

[মুয়াত্তা ২৪৬]

পরিচ্ছেদঃ রাতের নামাজ ১২ রাকাত, বিতর ও ফজরের সুন্নত ২

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] তিনি তার খালা এবং নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মায়মূনা [রাঃআঃ]-এর ঘরে ঘুমালেন। তিনি বলেন, আমি বালিশে আড়াআড়িভাবে শুয়ে পড়লাম এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ও তাহাঁর স্ত্রী লম্বালম্বি শুয়ে পড়েন। নবী [সাঃআঃ] ঘুমিয়ে পড়েন। অর্ধরাত বা তার চেয়ে কম কিছু অথবা বেশি অতিবাহিত হলে তিনি জেগে তার দু হাত দিয়ে ঘুমের রেশ তাহাঁর চেহারা থেকে দূর করেন, অতঃপর সূরাহ আল-ইমরানের শেষ দশ আয়াত তিলাওয়াত করেন, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত পানির মশকের কাছে গিয়ে তা থেকে পানি নিয়ে উত্তমরূপে উযু করেন, তারপর সলাতে দাঁড়িয়ে যান। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস [রাঃআঃ] বলেন, আমিও উঠে গেলাম এবং তিনি যা করিলেন আমিও তদ্রূপ করলাম, তারপর তাহাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর ডান হাত আমার মাথার উপর রাখলেন এবং আমার ডান কান ধরে মললেন। তারপর তিনি দু রাকআত নামাজ পড়েন, তারপর দু রাকআত, তারপর দু রাকআত, তারপর দু রাকআত, তারপর দু রাকআত, তারপর দু রাকআত, তারপর বিত্‌র নামাজ পড়েন। তারপর তিনি আরাম করেন, যাবত না তাহাঁর নিকট মুআযযিন আসে। অতঃপর তিনি হালকাভাবে দু রাকআত [ফজরের সুন্নাত] নামাজ পড়েন, অতঃপর [ফজরের ফরয] নামাজ আদায় করিতে বেরিয়ে যান।

[ইবনে মাজাহ ১৩৬৩, সহিহ] [আবু দাউদ ১৩৬৭, সহিহ]

আল-ফাদল ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, স্বচক্ষে নাবী (সাঃআঃ) এর নামাজ আদায়ের পদ্ধতি অবলোকনের উদ্দেশে আমি একদা নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে রাত যাপন করি। তিনি (সাঃআঃ) ঘুম থেকে উঠে উযু করে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। তাহাঁর দাঁড়ানোর দীর্ঘতা তাহাঁর রুকূর সমান এবং তাহাঁর রুকূর দীর্ঘতা ছিলো তাহাঁর সাজদাহ্‌র সমান। অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে আবার সজাগ হয়ে উযু ও মিসওয়াক করে সূরাহ আল ইমরান হইতে এ পাঁচটি আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ

 إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ

ইন্না ফি খলকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলি ওয়ান নাহারি”। এরূপে তিনি দশ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন এবং শেষে এক রাকআত দ্বারা বিতর করিলেন। এ সময় মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করে বসে থাকলেন। অতঃপর ফাজরের নামাজ আদায় করিলেন।

[আবু দাউদ ১৩৫৫, দুর্বল ]

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সূরাহ মুয্‌যাম্মিলের প্রথমাংশ অবতীর্ণ হলে মুসলিমরা রমাযান মাসের ন্যায় রাতে দীর্ঘ ক্বিয়াম (নামাজ আদায়) করতে লাগলেন। অতঃপর এ সূরাহ্‌র শেষাংশ অবতীর্ণ হয়। এ সুরাহ্‌র প্রথম ও শেষাংশ অবতীর্ণের মধ্যে এক বছরের ব্যবধান ছিল।

[আবু দাউদ ১৩০৫, দুর্বল]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ ও বিতর সহ এবং ফজরের সুন্নত ২

মাখরামাহ ইবনি সুলায়মান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তাকে ইবনি আব্বাসের (রাঃআঃ) মুক্তদাস কুরাইব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) অবহিত করিয়াছেন যে, তিনি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) রাতের নামাজের পদ্ধতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি বলেছেন, একদা আমি মায়মূনাহর (রাঃআঃ) ঘরে নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে রাত যাপন করি। সেখানে তিনি কিছুক্ষন ঘুমিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর জেগে উঠে পানির মশকের নিকট গিয়ে উযু করিলেন। আমিও তাহাঁর সাথে উযু করলাম। তিনি নামাজে দাঁড়ালেন। আমি তাহাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালে তিনি আমাকে টেনে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমার মাথার উপর তাহাঁর হাত রাখলেন, যেন তিনি আমার কান মলে আমাকে সজাগ করছেন। অতঃপর তিনি সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। প্রতি রাকআতে তিনি সূরাহ ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি সালাম ফিরালেন এবং আবার নামাজ আদায় করিলেন। শেষ পর্যন্ত বিতর সহ মোট এগার রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এরপর ঘুমালেন। অতঃপর বিলাল এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! নামাজ। ফলে তিনি উঠে দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায়ের পর লোকদের নিয়ে ফারয নামাজ আদায় করিলেন।

[আবু দাউদ ১৩৬৪, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ দু দু করে বিতর সহ

যায়িদ ইবনি খালিদ আল-জুহানী (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর রাতের নামাজ সচক্ষে দেখার সংকল্প করিলেন। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর ঘরের চৌকাঠ বা তাঁবুর দরজাতে মাথা রেখে শুয়ে থাকলাম। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর দু রাকআত আদায় করিলেন খুবই দীর্ঘভাবে। অতঃপর আরো দু রাকআত। তবে এর দীর্ঘতা পূর্বের দু রাকআতের চেয়ে কম। অতঃপর দু রাকআত পড়লেন, এটা পূর্বের দু রাকআতের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ছিলো। অতঃপর আরো দু রাকআত আদায় করিলেন পূর্বেরটির চেয়ে সংক্ষিপ্ত করে। অতঃপর বিতর আদায় করিলেন। এ নিয়ে সর্বমোট তের রাকআত নামাজ।

[আবু দাউদ ১৩৬৬, সহিহ]

যায়দ বিন খালিদ আল-জুহানী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি [মনে মনে] বললাম, আমি অবশ্যি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর আজকের রাত এর নামাজ দেখবো। তিনি বলেন, আমি তাহাঁর ঘরের বা তাহাঁর তাবুর দরজার কাঠের সাথে ঠেস দিয়ে বসে থাকলাম। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে হালকাভাবে দু রাকআত নামাজ পড়েন, অতঃপর দীর্ঘ দু রাকআত পড়েন, তারপর আরো দু রাকআত পড়েন, যা পূর্ববর্তী দু রাকআত এর চেয়ে কম দীর্ঘ, তারপর দু রাকআত পড়েন, যা ছিল তাহাঁর পূর্ববর্তী দু রাকআত অপেক্ষা কম দীর্ঘ, তারপর আরো দু রাকআত পড়েন, যা ছিল তার পূর্ববর্তী দু রাকআত অপেক্ষা স্বল্প দীর্ঘ, এরপর আরো দু রাকআত পড়েন, তারপর বিত্‌র পড়েন। এভাবে মোট তেরো রাকআত হলো।

[ইবনে মাজাহ ১৩৬২, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের/তাহাজ্জুদ ১০ বিতর ১ এবং ফজরের সুন্নাত ২

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ইশার নামাজের পর থেকে সুবহি সাদিক পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে এগারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। প্রত্যক দু রাকআতে সালাম ফিরাতেন এবং এক রাকআত দ্বারা বিতর করতেন। তিনি এত দীর্ঘক্ষন সাজদাহয় অবস্থান করতেন যে, তাহাঁর মাথা উঠানোর পূর্বে তোমাদের কেউ আনুমানিক পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করতে পারতে। মুয়ায্‌যিন ফাজ্‌রের (প্রথম) আযান শেষ করলে তিনি উঠে সংক্ষেপে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর মুয়াযযিন (জামাআতের সংবাদ দেয়ার জন্য) পুনরায় আসা পর্যন্ত তিনি ডান পাশের পাজরের উপর ভর করে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন।

[আবু দাউদ ১৩৩৬, সহিহ] [ইবনে মাজাহ ১৩৫৮, সহীহ]
১৩৩৭. ইবনি শিহাব (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে দশ রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং বিতর পড়তেন এক রাকআত। অতঃপর ফাজ্‌রের দু রাকআত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করতেন, এ নিয়ে সর্বমোট তেরো রাকআত হতো।

[আবু দাউদ ১৩৩৪, সহিহ হাদিস]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাহাজ্জুদ ৮ ও বিতর ৩ ফজরের সুন্নত ২

আমির আশ্‌-শাবী হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাঃআঃ] ও আবদুল্লাহ বিন উমার [রাঃআঃ] কে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রাতের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তারা বলেন, তেরো রাকআত, এর মধ্যে আট রাকআত তাহাজ্জুদ, তিন রাকআত বিত্‌র এবং ফজরের ওয়াক্ত হলে পর দু রাকআত [সুন্নাত]।

[ইবনে মাজাহ ১৩৬১, সহীহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাহাজ্জুদ ৮ ও বিতর সহ

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন, তন্মধ্যে আট রাকআত (তাহাজ্জুদ), অতঃপর বিতর নামাজ পড়তেন। এরপর তিনি আবার নামাজ আদায় করতেন। বর্ণনাকারী মুসলিম ইবনি ইবরাহীম বলেন, বিতর নামাজের পর তিনি বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তবে রুকূর ইচ্ছা করলে দাঁড়িয়ে রুকূ করতেন এবং ফাজরের আযান ও ইক্বামাতের মাঝখানে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন।

[আবু দাউদ ১৩৪০, সহিহ হাদিস]

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং নবম রাকআতে বিতর অথবা তিনি অনুরূপ বলেছেন। তিনি বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন, অতঃপর ফাজ্‌রের দু রাকআত সুন্নাত নামাজ আযান ও ইক্বামাতের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করতেন।

[আবু দাউদ ১৩৫০, হাসান]

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর ফাজর নামাজের আযান শুনতে পেলে সংক্ষেপে দু রাকআত (সুন্নাত) আদায় করতেন।

[আবু দাউদ ১৩৩৯, সহিহ হাদিস]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাহাজ্জুদ ৮ বিতর ৫

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তন্মধ্যে তিনি পাঁচ রাকআত বিতর আদায় করতেন, এ পাঁচ রাকআতে কেবল শেষ বৈঠক ছাড়া মাঝখানে বসতেন না, অতঃপর সালাম ফিরাতেন।

[আবু দাউদ ১৩৩৮, সহিহ হাদিস]

সাইদ ইবনি জুবাইর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) তাকে এ হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি উঠে দু দু রাকআত করে আট রাকআত নামাজ আদায়ের পর পাঁচ রাকআত বিতর করেন এবং তিনি এ রাকআতগুলোর মাঝে বসেননি।

[আবু দাউদ ১৩৫৮, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-রাতের নামাজ ফজরের সুন্নাত ২ সহ

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃআঃ) নিকট এক রাত অতিবাহিত করি। নাবী (সাঃআঃ) রাতের নামাজের উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন। তিনি তের রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, তাতে ফাজরের দু রাকআত সুন্নাতও ছিল। আমি অনুমান করলাম, তাহাঁর প্রতি রাকআতে দাঁড়ানোর সময়টুকু ছিল “ইয়া আইয়্যূহাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠের সময়ের অনুরূপ। বর্ণনাকারী নূহ ইবনি হাবীব,তন্মধ্যে ফাজরের দু রাকআতও ছিল এ কথাটি বলেননি।

[আবু দাউদ ১৩৬৫, সহিহ]

উরওয়াহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করেন যে, তিনি তাকে বলেছেন, নাবী (সাঃআঃ) ফাজ্‌রের দু রাকআত (সুন্নাত) সহ রাতে সর্বমোট তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন।

[আবু দাউদ ১৩৬০, সহিহ] [ইবনে মাজাহ, সহীহ, ১৩৫৯, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩ রাকাত-তাজাজ্জুদ ৬ বিতর ৫ ও ফজরের সুন্নত ২

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) ফাজ্‌রের পূর্বের দুরাকআত সহ সর্বমোট তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। দু দু রাকআত করে ছয় রাকআত এবং বিতর পাঁচ রাকআত, এর সর্বশেষ রাকআত ছাড়া তিনি মাঝখানে বসতেন না।

[আবু দাউদ ১৩৫৯, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-রাতের নামাজ ৮ ফজরের সুন্নত ২ সহ

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহ বিনতুল হারিসের (রাঃআঃ) ঘরে অবস্থান করি। নাবী (সাঃআঃ) ইশার নামাজ আদায়ের পর ঘরে এসে চার রাকআত নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়লেন। অতঃপর আবার উঠে নামাজ আদায় করতে লাগলেন, তখন আমি তাহাঁর বাম পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে ঘুরিয়ে এনে তাহাঁর ডান পাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি পাঁচ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি আবার ঘুমালেন, এমনকি আমি তাহাঁর নাক ডাকার শব্দ শুনতে পেলাম। অতঃপর আবার উঠে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর (ঘর থেকে) বের হয়ে (মাসজিদে) গিয়ে ফাজ্‌রের নামাজ আদায় করেন।

[আবু দাউদ ১৩৫৭, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-রাতের নামাজ, বিতর ১ রাকাত সহ

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) রাতে এগারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তন্মধ্যে বিতর হতো এক রাকআত। অতঃপর নামাজ শেষে তিনি ডান কাতে শুয়ে বিশ্রাম নিতেন।

[আবু দাউদ ১৩৩৫, সহিহ হাদিস]

হিশাম ইবনি সাদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি মাদীনাহয় এসে আয়েশা (রাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে বললাম, আপনি আমাকে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) নামাজ সম্বন্ধে বলুন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) লোকদের নিয়েই শার নামাজ আদায়ের পর নিজের বিছানায় এসে ঘুমাতেন। অতঃপর মাঝ রাতে উঠে নিজের প্রয়োজন সেরে উযুর পানি নিয়ে উযু করে মাসজিদে গিয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। আমার ধারণা, তিনি ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্‌র মধ্যে সমতা বজায় রাখতেন। তারপর এক রাকআত বিতর করতেন। সবশেষে বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করে বিশ্রাম নিতেন। অতঃপর কখনো বিলাল এসে তাঁকে নামাজের সংবাদ দিতেন। কখনো তিনি আবার হালকা ঘুমিয়ে পড়েছেন কিনা, এ নিয়ে আমার সংশয় হতো। অতঃপর তাঁকে আবারো নামাজের জন্য ডাকা হতো। এ ছিল বয়োবৃদ্ধ বা শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত তাহাঁর রাতের নামাজ। অতঃপরআয়েশা তাহাঁর শরীর ভারী হওয়া সম্পর্কিত আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী যা উল্লেখ করার করেন। অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন।

[আবু দাউদ ১৩৫২, সহিহ হাদিস]

পরিচ্ছেদঃ ১১ রাকাত-তাজাজ্জুদ ৬ বিতর ৩ ও ফজরের সুন্নত ২

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদা তিনি নাবী (সাঃআঃ) এর সাথে ঘুমালেন। অতঃপর তিনি দেখলেন যে, তিনি ঘুম থেকে জেগে মিসওয়াক করে উযু সেরে আল্লাহর এ বাণী তিলাওয়াত করলেনঃ

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ

ইন্না ফি খালক্বিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি” সূরাহ আলইমরানের শেষ আয়াত পর্যন্ত। তারপর উঠে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। নামাজের ক্বিয়াম, রুকূ ও সাজদাহ্‌ খুব দীর্ঘায়িত করিলেন। অতঃপর নামাজ শেষে তিনি নাক ডেকে ঘুমাতে লাগলেন। এরূপে তিনবারে ছয় রাকআত আদায় করিলেন এবং প্রতিবারই মিসওয়াক করে উযু সেরে উক্ত আয়াতগুলো তিলাওয়াত করিলেন। সবশেষে বিতর পড়লেন। বর্ণনাকারীউসমান বলেন, তিনি বিতর নামাজ তিন রাকআত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর মুয়াযযিন এলে তিনি মাসজিদে চলে গেলেন। ইবনি ঈসা বলেন, তিনি বিতর করিলেন, অতঃপর ফাজ্‌রের আবির্ভাব হলে বিলাল (রাঃআঃ) এসে তাঁকে নামাজের সংবাদ দিলেন। তিনি ফাজরের দু রাকআত সুন্নাত আদায়ের পর মাসজিদে যান এবং দুআ পাঠ করেনঃ

اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي لِسَانِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُورًا، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا، وَاجْعَلْ خَلْفِي نُورًا، وَأَمَامِي نُورًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُورًا، وَمِنْ تَحْتِي نُورًا، اللَّهُمَّ وَأَعْظِمْ لِي نُورًا

আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরান, ওয়াজ আল ফী লিসানী নূরান, ওয়াজ আল ফী সাম্‘য়ী নূরান, ওয়াজ আল ফী বাসারী নূরান, ওয়াজ আল খলফী নূরান, ওয়া মিন আমামী নূরান, ওয়াজ আল মিন ফাওকী নূরান,  ওয়া মিন তাহ্‌তী নূরান, আল্লা-হুম্মা ওয়া আ‘জিমলি নূরান, “হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দাও, আমার জবানে নূর দাও, আমার কানে নূর দাও, আমার চোখে নূর দাও, নূর দান করো আমার পিছনে ও সম্মুখভাগে এবং আমার উপরে ও নীচে। হে আল্লাহ! আমাকে পর্যাপ্ত নূর দান করো”।

[আবু দাউদ ১৩৫৩, সহিহ হাদিস]

পরিচ্ছেদঃ ৯ রাকাত-তাজাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইল

আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

নবী [সাঃআঃ] রাতে নয় রাকআত নামাজ আদায় করিতেন।

[ইবনে মাজাহ ১৩৬০, সহীহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৫/১৩/১১ রাকাত-বিতর সহ

যুরারাহ ইবনি আওফা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

একদাআয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) মধ্য রাতের নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তিনি ইশার নামাজ জামাআতে আদায় করে নিজ পরিজনের কাছে ফিরে এসে চার রাকআত নামাজ আদায় করে স্বীয় বিছানায় ঘুমিয়ে পড়তেন। এ সময় উযুর পানি ও মিসওয়াক তাহাঁর কাছেই থাকতো। অতঃপর মহান আল্লাহ রাতে যখন সজাগ করার তাঁকে সজাগ করতেন। তিনি মিসওয়াক ও উত্তমরূপে উযু করে তাহাঁর মুসল্লায় দাঁড়িয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। তাতে সূরাহ ফাতিহা, কুরআনের অন্য সূরাহ এবং আল্লাহ যা চাইতেন তা পাঠ করতেন। তিনি এতে মাঝখানে না বসে কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন এবং সালাম না ফিরিয়ে নবম রাকআতে দাঁড়িয়ে ক্বিরাআত পড়তেন। অতঃপর (শেষ বৈঠকে) বসে আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করতেন, তাহাঁর কাছে প্রার্থনা করতেন এবং তাহাঁর প্রতি আকৃষ্ট হইতেন। সবশেষে তিনি এতো জোরে সালাম ফিরাতেন যে, সালামের আওয়াজে ঘরের লোকের জাগ্রত হবার উপক্রম হতো। অতঃপর তিনি (বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন এবং তাতে) বসেই সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও রুকূ করতেন। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় রাকআতেও বসাবস্থায় রুকূ ও সাজদাহ্‌ করতেন। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী দুআ করে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতেন। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) শরীর ভারী হওয়া পর্যন্ত এভাবেই নামাজ আদায় করতেন। অতঃপর ( শরীর ভারী হয়ে গেলে) তিনি নয় রাকআত থেকে দুই কমিয়ে ছয় রাকআত ( এবং এক যোগ করে ) সাত রাকআত আদায় করেন এবং দু রাকআত বসাবস্থায় আদায় করতেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এভাবেই নামাজ আদায় করিয়াছেন।

[আবু দাউদ ১৩৪৬, সহিহ হাদিস]

বাহয ইবনি হাকীম (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

উপরোক্ত সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনি ইশার নামাজ আদায়ের পর স্বীয় বিছানায় বিশ্রাম নিতেন। এতে চার রাকআতের কথা উল্লেখ নেই। অতঃপর পুরো হাদিস বর্ণনা করেন। এতে রহিয়াছে, অতঃপর তিনি আট রাকআত নামাজ আদায় করতেন। ক্বিরাআত, রুকূ ও সাজদাহ্ এগুলো পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান ছিলো সমপরিমাণ এবং তিনি এ নামাজে কেবলমাত্র অষ্টম রাকআতেই বসতেন। অতঃপর উঠে দাঁড়িয়ে এক রাকআত দ্বারা বিতর করতেন। সবশেষে এমনভাবে উচ্চস্বরে সালাম বলিতেন যে, আওয়াজ আমাদের নিদ্রা ভঙ্গ করে দিতো। এরপর পূর্ববর্তী হাদিসের অনুরূপ।

[আবু দাউদ ১৩৪৭, সহিহ হাদিস]

পরিচ্ছেদঃ ১৩/১১ রাকাত-বিতর সহ

আব্দুল্লাহ ইবনি আবু কায়িস (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রাঃআঃ) কে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) বিতর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, তিনি চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন অথবা তিন রাকআত বিতর পড়তেন। তিনি সাত রাকআতের কম এবং তের রাকআতের অধিক বিতর করতেন না।

[আবু দাউদ ১৩৬২, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ ১৩/১১/৯ রাকাত-বিতর সহ

আল-আসওয়াদ ইবনি ইয়াযীদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আয়েশা (রাঃআঃ) এর কাছে গিয়ে তাঁকে রসূলুল্লাহর (সাঃআঃ) রাতের নামাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তিনি রাতে তের রাকআত নামাজ আদায় করতেন। পরবর্তীতে তিনি দু রাকআত বর্জন করে এগার রাকআত আদায় করিয়াছেন। অতঃপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি রাতে নয় রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। বিতর হতো তাহাঁর রাতের শেষ নামাজ।

[আবু দাউদ ১৩৬৩, দুর্বল]

পরিচ্ছেদঃ ১১/৯ রাকাত-বিতর সহ

সাদ ইবনি হিশাম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি যুদ্ধে যাওয়ার উদ্দেশে আমার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে মাদীনাহয় আমার যে ভূমি রহিয়াছে তা বিক্রি করে যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করার জন্য (বাসরাহ থেকে) মাদীনা হইতে আসলাম। এ সময় নাবী (সাঃআঃ) এর একদল সাহাবীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত হলে তারা বলিলেন, আমাদের মধ্যকার ছয় ব্যক্তির একটি দল এরূপ ইচ্ছা করেছিল। কিন্তু নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁদেরকে এরূপ করতে নিষেধ করে বলেনঃ “তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলের মাঝেই উত্তম আদর্শ নিহিত আছে ”।

বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) এর নিকট গিয়ে নাবী (সাঃআঃ) এর বিতর নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রসূলুল্লাহর নামাজ সম্পর্কে যিনি অধিক অভিজ্ঞ আমি তোমাকে তার সন্ধান দিচ্ছি। তুমি আয়েশা (রাঃআঃ) এর নিকট যাও। কাজেই আমি তার নিকট যাই এবং হাকীম ইবনি আফলাহকেও যাবার অনুরোধ করি, কিন্তু তিনি অস্বীকার করায় আমি তাকে শপথ দিয়ে অনুরোধ করলে তিনি আমার সঙ্গে রওয়ানা হন। আমরা আয়েশা (রাঃআঃ) এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তিনি জিজ্ঞেস করেন, কে? তিনি বলেন, হাকীম ইবনি আফলাহ। তিনি বলেন, তোমার সাথে কে? তিনি বলিলেন, সাদ ইবনি হিশাম। তিনি বলিলেন, উহুদের যুদ্ধে শহীদ হওয়া হিশাম ইবনি আমির? হাকীম ইবনি আফলাহ বলে, আমি বললাম, হাঁ। তিনি বলিলেন,আমির তো অত্যন্ত ভাল লোক ছিলেন। তিনি বলেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আমাকে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চরিত্র সম্বন্ধে বলুন। তিনি বলিলেন, তুমি কি কুরআন পড়ো না? গোটা কুরআনই হচ্ছে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর চরিত্র। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে রাতের ক্বিয়াম সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন, তুমি কি কুরআনের “ইয়া আইয়্যু হাল মুযযাম্মিল” সূরাহ পাঠ করনি? তিনি বলেন, আমি বললাম, হাঁ, পাঠ করেছি। তিনি বলিলেন, এ সূরাহর প্রথমাংশ অবতীর্ণ হবার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এর সাহাবীগণ এতো বেশী “ক্বিয়ামুল লাইল” করতেন যে, তাহাঁদের পা ফুলে যেতো। অতঃপর এ সূরাহর শেষাংশ অবতীর্ণ হলে “ক্বিয়ামুল লাইল” ফারয হইতে নাফল হিসেবে পরিবর্তন হয়। তিনি বলেন, আমি বললাম, আমাকে নাবী (সাঃআঃ) এর বিতর নামাজ সম্পর্কে বলুন। তিনি বলিলেন, তিনি আট রাকআত বিতর করতেন এবং তাতে কেবল অষ্টম রাকআতেই বসতেন। অতঃপর দাঁড়িয়ে আরো এক রাকআত পড়তেন এবং এই অষ্টম ও নবম রাকআত ছাড়া কোথাও বসতেন না। তিনি নবম রাকআতে সালাম ফিরাতেন। অতঃপর বসে বসে দু রাকআত নামাজ আদায় করতেন। হে আমার বৎস! এ এগার রাকআতই ছিল তাহাঁর রাতের নামাজ। অতঃপর বার্ধক্যের কারণে তাহাঁর শরীর ভারী হয়ে গেলে তিনি সাত রাকআত বিতর করতেন এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম রাকআত ছাড়া বসতেন না, আর সালাম ফিরাতেন সপ্তম রাকআতে। অতঃপর বসে বসে দু রাকআত নাফল নামাজ আদায় করতেন। হে বৎস! এ নয় রাকআতই ছিল রাতের নামাজ। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) কখনো সারারাত ভোর পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন না, এক রাতে গোটা কুরআন খতম করতেন না এবং রমাযান মাস ছাড়া পুরো এক মাস সওম পালন করতেন না। তিনি কোনো নামাজ আরম্ভ করলে তা নিয়মিত আদায় করতেন। ঘুমের কারণে রাতে জাগ্রত হইতে না পারলে তিনি দিনের বেলা বারো রাকআত নামাজ আদায় করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আমি ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) এর কাছে এসে এগুলো বর্ণনা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! এটাই হচ্ছে প্রকৃত হাদিস। আমি যদি আয়েশার সঙ্গে  কথা বলতাম তাহলে আমি এসে এ হাদিস আলোচনা করতাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, আমি যদি জানতাম যে, আপনি তাহাঁর সাথে কথাবার্তা বলেন না, তাহলে আমি হাদিসটি আপনার কাছে বর্ণনা করতাম না।

[আবু দাউদ ১৩৪২, সহিহ হাদিস] [নাসাই ১৬০১, সহিহ]
১৩৪৩. ক্বাতাদাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বিতর নামাজ নয় রাকআত আদায় করতেন। পরবর্তীতে (পরিণত বয়সে) তিনি সাত রাকআত বিতর নামাজ আদায় করেন এবং বিতরের পর বসাবস্থায় দু রাকআত নামাজ আদায় করিয়াছেন। তাতে ক্বিরাআত পাঠ করিয়াছেন এবং রুকূর সময় দাঁড়িয়ে রুকূ করিয়াছেন, অতঃপর সাজদাহ্ করিয়াছেন।

[আবু দাউদ ১৩৫১]

পরিচ্ছেদঃ ৭ বা ৫ রাকআত নামাজ বিতর সহ

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, এক রাতে আমি আমার খালা মায়মূনাহর (রাঃআঃ) নিকট অবস্থান করি। সন্ধ্যার পর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এসে জিজ্ঞেস করিলেন, বালকটি কি নামাজ আদায় করেছে? তারা বলিলেন, হাঁ। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় রাতের কিছু অংশ অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি উঠে উযু করে বিতর সহ সাত বা পাঁচ রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। এতে তিনি কেবল শেষ রাকআতেই সালাম ফিরান।

[আবু দাউদ ১৩৫৬, সহিহ]

আয়েশা (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)ইশার নামাজ আদায়ের (অনেকক্ষণ) পরে দাঁড়িয়ে আট রাকআত নামাজ আদায় করেন এবং দু আযানের (ফাজ্‌রের আযান ও ইকামাতের) মাঝখানে দু রাকআত নামাজ আদায় করেন। তিনি কখনো এ দু রাকআত ছেড়ে দেননি। জাফর ইবনি মুসাফিরের বর্ণনায় রয়েছেঃ তিনি দু আযানের মাঝখানে দু রাকআত নামাজ বসে আদায় করিয়াছেন।

[আবু দাউদ ১৩৬১, সহিহ]

পরিচ্ছেদঃ কিয়ামুল লাইল/ তাহাজ্জুদ বাধ্যবাধকতা রহিত করে শিথিল করা

ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি সূরাহ মুয্‌যাম্মিল সম্পর্কে বলেন, আল্লাহর বাণীঃ

 قُمِ اللَّيْلَ إِلاَّ قَلِيلاً * نِصْفَهُ

“কুমিল লায়লাহ ইল্লা ক্বালীলান নিসফাহু” (অর্থঃ আপনি রাতের কিছু অংশ ব্যতীত সারা রাত আল্লাহর ইবাদাতে দাঁড়িয়ে থাকুন)। অতঃপর এর পরবর্তী আয়াতটি এ নির্দেশকে রহিত করেঃ

عَلِمَ أَنْ لَنْ تُحْصُوهُ فَتَابَ عَلَيْكُمْ فَاقْرَءُوا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْآنِ

“আলিমা আন লান তুহ্‌সূহু ফাতাবাআলাইকুম ফাক্বরাউ মা তাইয়াস্‌সারা মিনাল কুরআন। ” (অর্থঃ তিনি খুব ভাল করেই জানেন যে, তা করা তোমাদের পক্ষে অসম্ভব। তাই তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন। সুতরাং এখন তোমরা কুরআনের যতটুকু পাঠ করা সম্ভব ততটুকুই পড়ো)

এবং রাতের প্রথামাংশ। তাহাঁদের নামাজ রাতের প্রথমভাগেই হয়ে থাকতো। ইবনি আব্বাস  (রাঃআঃ) বলেন, কাজেই আল্লাহ তোমাদের উপর যেটুকু রাতের ইবাদত ফরয করিয়াছেন তা সঠিকভাবে আদায় করো। কেননা মানুষ ঘুমিয়ে গেলে কখন সে জাগ্রত হইবে তা বলিতে পারে না। আল্লাহর বাণীঃ

أَقْوَمُ قِيلاً

আকওয়ামু কীলা” –অর্থ হচ্ছে কুরআনকে অনুধাবন করার অধিক যোগ্য। আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلاً

“ইন্না লাকা ফিন নাহারি সাবহান তাবীলা” এর অর্থ হচ্ছে, আপনি দিনের বেলায় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন।

[আবু দাউদ ১৩৫৩, সহিহ]
১৩৫৪. হুসাইন (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

তারাবীহ নামাজ সম্পর্কে আরও হাদীস যদি আপনার জানা থাকে তাহলে নিচে Comment এ জানাবেন। আমরা এই লেখার সাথে যোগ করে দিব। ইনশাআল্লাহ।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply