জান্নাত জাহান্নাম কিয়ামত রুহ ও শহীদদের ফযীলত

জান্নাত জাহান্নাম কিয়ামত রুহ ও শহীদদের ফযীলত

জান্নাত জাহান্নাম কিয়ামত রুহ ও শহীদদের ফযীলত >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন

জান্নাত জাহান্নাম কিয়ামত রুহ ও শহীদদের ফযীলত

জান্নাত কষ্ট ও জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত
নেক বান্দাদের জন্য তৈরি কিছু নি‘আমতের বর্ণনা
জান্নাতবাসীদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি
জান্নাতিদের তাদের প্রার্থিত বস্তু প্রদান করা
জান্নাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী
জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতী
শহীদদের ফযীলত
وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ আয়াতের শানে নুযূল
وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ আয়াতের আরেকটি শানে নুযূল
মুমূর্ষু হালত, রুহ বের হওয়া ও জীবন সায়ান্নে মুসলিম-কাফিরের অবস্থার বর্ণনাসহ মহান হাদীস
জান্নাত ও জাহান্নামীদের বর্ণনা
দুনিয়ার সুখ ও দুঃখ আখিরাতে মূল্যহীন
কিয়ামতের দৃশ্য
মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (والأرْضُ جَميعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ القيامةِ والسَّماواتُ مَطوِيَّاتٌ بِيَمِينِه)
কতক জাহান্নামীর জাহান্নাম থেকে বের হওয়া
কিয়ামতের দিন নি‘আমত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ
পরকালের আমলে অলসতাকারীর জন্য হুশিয়ারি
আখিরাতে মুমিনগণ রবের দর্শন লাভ করবে

২৬. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত কষ্ট ও জাহান্নাম প্রবৃত্তি দ্বারা আবৃত

হাদীসঃ ৪৮ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করিয়াছেন জিবরিলকে বলেছেনঃ যাও তা দেখ। সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলিলঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে প্রবেশ ব্যতীত থাকিবে না। অতঃপর তা কষ্ট দ্বারা ঢেকে দিলেন। অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলিলঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে কেউ প্রবেশ করিবে না। তিনি বলেনঃ আল্লাহ যখন জাহান্নাম সৃষ্টি করিয়াছেন বলেছেন, হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলিলঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম, তার ব্যাপারে কেউ শুনে তাতে কখনো প্রবেশ করিবে না। অতঃপর তিনি তা প্রবৃত্তি দ্বারা ঢেকে দিলেন অতঃপর বললেনঃ হে জিবরিল যাও তা দেখ, সে গেল ও তা দেখল অতঃপর এসে বলিলঃ হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের কসম আমি আশঙ্কা করছি তাতে প্রবেশ ব্যতীত কেউ বাকি থাকিবে না”। (আবু দাউদ, সুনান তিরমিযি, নাসায়ি ও মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

২৭. অনুচ্ছেদঃ নেক বান্দাদের জন্য তৈরি কিছু নিয়ামতের বর্ণনা

হাদীসঃ ৪৯ -আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য তৈরি করেছি যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শ্রবণ করেনি এবং কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

২৮. অনুচ্ছেদঃ  জান্নাতবাসীদের ওপর আল্লাহর সন্তুষ্টি

হাদীসঃ ৫০ – আবু সায়িদ খুদরি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের বলবেনঃ হে জান্নাতিগণ, তারা বলবেঃ সদা উপস্থিত হে আমাদের রব, আপনার সন্তুষ্টিবিধানে আমি সদা সচেষ্ট, সকল কল্যাণ আপনার হাতে। তিনি বলবেনঃ তোমরা সন্তুষ্ট হয়েছ? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে দিয়েছেন যা আপনার মখলুকের কাউকে দেননি! তিনি বলবেনঃ আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম দিব না? তারা বলবেঃ হে রব এর চেয়ে উত্তম কোন বস্তু? তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের ওপর আমার সন্তুষ্টি অবধারিত করছি এরপর কখনো তোমাদের ওপর অসন্তুষ্ট হব না”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ৫১ -জাবের (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “যখন জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করিবে আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আপনি আমাদের যা দিয়েছেন তার চেয়ে উত্তম কি? তিনি বলবেনঃ বরং আমার সন্তুষ্টিই সবচেয়ে বড়”। (ইব্‌ন হিব্বান)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

২৯. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতিদের তাহাদের প্রার্থিত বস্তু প্রদান করা

হাদীসে কুদসী ৫২ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) একদা কথা বলছিলেন, -তার নিকট গ্রামের এক ব্যক্তি ছিলঃ “জান্নাতিদের জনৈক ব্যক্তি তার রবের নিকট কৃষির জন্য অনুমতি চেয়েছে। আল্লাহ তাকে বললেনঃ তুমি কি তাতে নেই যা চেয়েছ? সে বলিলঃ অবশ্যই, তবে আমি কৃষি করতে চাই। সে দ্রুত চাষ করিল, বীজ বপন করিল, চোখের পলকে তার চারা গজাল, কাণ্ড সোজা হল, ফসল কাঁটার সময় হল এবং তার স্তূপ হল পাহাড়ের ন্যায়। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি এসব গ্রহণ কর, কারণ কোন জিনিস তোমাকে তৃপ্ত করিবে না। গ্রামের লোকটি বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল এ ব্যক্তি কুরাইশি বা আনসারি ব্যতীত কেউ নয়, কারণ তারা কৃষি করে, কিন্তু আমরা কৃষক নয়। রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) হেসে দিলেন”। (সহিহ বুখারি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩০. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী

হাদীসঃ ৫৩ – মুগিরা ইব্‌ন শুবা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ মুগিরা ইব্‌ন শুবা (রাদিআল্লাহু আঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে মরফূ  হিসেবে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “মুসা আলাইহিস সালাম তার রবকে জিজ্ঞাসা করেন জান্নাতিদের নিম্ন স্তর কি? তিনি বলেনঃ সে ব্যক্তি যে জান্নাতিদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর আসবে, তাকে বলা হবেঃ জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবেঃ হে আমার রব কিভাবে, অথচ লোকেরা তাহাদের স্থানে পৌঁছে গেছে, তাহাদের হক তারা গ্রহণ করেছে? তাকে বলা হবেঃ তুমি কি সন্তুষ্ট যে তোমার জন্য দুনিয়ার বাদশাহদের রাজত্বের ন্যায় রাজত্ব হোক? সে বলবেঃ হে আমার রব, আমি সন্তুষ্ট। তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য তা, এবং তার সমান, তার সমান ও তার সমান, পঞ্চম বারে বলিলঃ হে আমার রব আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মুসা আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করেনঃ হে আমার রব, তাহাদের মধ্যে সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী? তিনি বললেনঃ তাহাদেরকে আমি চেয়েছি, আমি নিজ হাতে তাহাদের সম্মান রোপণ করেছি ও তার ওপর মোহর এঁটে দিয়েছি, যা কোন চোখ দেখেনি, কোন কান শুনেনি এবং মানুষের অন্তরে কল্পনা হয়নি। তিনি বলেনঃ কুরআনে তার নমুনা হচ্ছেঃ
﴿ فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ ١٧ ﴾ (السجدة ঃ ١٧)
“অতঃপর কোন ব্যক্তি জানে না তাহাদের জন্য ‎‎চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে”। (সূরা আলিফ লাম মিম সাজদাহঃ ১৭) (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩১. অনুচ্ছেদঃ জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি

হাদীসঃ ৫৪ – আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকেঃ জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হইবে, আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হইবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেনঃ সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হইবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রহিয়াছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রহিয়াছে,- তিনি বলেনঃ সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তখন বলা হতঃ এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ৫৫ – ইব্‌ন মাসউদ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশ করিবে এমন ব্যক্তি, যে একবার চলবে একবার হোঁচট খাবে, একবার আগুন তাকে ঝলসে দিবে, যখন সে তা অতিক্রম করিবে তার দিকে ফিরে তাকাবে, অতঃপর বলবেঃ বরকতময় সে সত্তা যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে এমন বস্তু দান করিয়াছেন যা পূর্বাপর কাউকে দান করেন নি। অতঃপর তার জন্য একটি গাছ জাহির করা হইবে, সে বলবেঃ হে আমার রব আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন, যেন তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও তার পানি পান করতে পারি। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে আদম সন্তান যদি আমি তোমাকে এটা দান করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু তলব করিবে। সে বলবেঃ না, হে আমার রব, তাকে ওয়াদা দিবে যে এ ছাড়া কিছু তলব করিবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য সম্ভব হইবে না। তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, ফলে সে তার ছায়া গ্রহণ করিবে ও তার পানি পান করিবে। অতঃপর তার জন্য অপর গাছ জাহির করা হইবে, যা পূর্বের তুলনায় অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে এর নিকটবর্তী করুন, যেন তার পানি পান করতে পারি ও তার ছায়া গ্রহণ করতে পারি, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? তিনি বলবেনঃ আমি যদি তোমাকে এর নিকটবর্তী করি হয়তো (আবারও) অন্য কিছু চাইবে, ফলে সে তাকে ওয়াদা দিবে যে, অন্য কিছু চাইবে না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, সে তার ছায়া গ্রহণ করিবে ও তার পানি পান করিবে। অতঃপর তার সামনে জাহির করা হইবে একটি গাছ জান্নাতের দরজার মুখে, যা পূর্বের দু’টি গাছ থেকে অধিক সুন্দর। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করুন আমি তার ছায়া গ্রহণ করব ও তার পানি পান করব, এ ছাড়া কিছু চাইব না। তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম তুমি কি আমাকে ওয়াদা দাওনি অন্য কিছু চাইবে না? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব, এটাই আর কিছু চাইব না, তার রব তাকে ছাড় দিবেন, কারণ সে দেখবে যার ওপর তার ধৈর্য নেই। অতঃপর তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করবেন, যখন তার নিকটবর্তী করা হইবে সে জান্নাতিদের আওয়াজ শুনবে, সে বলবেঃ হে আমার রব, আমাকে তাতে প্রবেশ করান, তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, কিসে তোমার থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দিবে? তুমি কি সন্তুষ্ট যে আমি তোমাকে দুনিয়া ও তার সাথে তার সমান দান করি? সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি কি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’জাহানের রব? ইব্‌ন মাসউদ হেসে দিলেন, তিনি বললেনঃ তোমরা আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ না আমি কেন হাসছি? তারা বলিলঃ কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) এরূপ হেসেছেন। তারা (সাহাবিরা) বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল কেন হাসছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহর হাসি থেকে যখন সে বলিলঃ আপনি আমার সাথে ঠাট্টা করছেন অথচ আপনি দু’ জাহানের রব? তিনি বললেনঃ আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, তবে আমি যা চাই করতে পারি”। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ৫৬ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ লোকেরা বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বললেনঃ “চৌদ্দ তারিখের রাতে চাঁদ দেখায় তোমরা কি সন্দেহ (বা মতবিরোধ) কর?” তারা বলিলঃ না, হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেনঃ “তোমরা আল্লাহকে সেভাবে (স্পষ্ট) দেখবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ সকল মানুষকে জমা করে বলবেনঃ যে যে বস্তুর ইবাদত করত সে যেন তার পিছু নেয়, ফলে যে সূর্যের ইবাদত করত সে সূর্যের অনুগামী হইবে। যে চাঁদের ইবাদত করত সে চাঁদের অনুগামী হইবে। যে তাগুতের ইবাদত করত সে তাগুতের অনুগামী হইবে। শুধু এ উম্মত অবশিষ্ট থাকিবে, তাতে থাকিবে তার সুপারিশকারীগণ –অথবা তার মুনাফিকরা, বর্ণনাকারী ইবরাহিম সন্দেহ পোষণ করিয়াছেন , অতঃপর তাহাদের নিকট আল্লাহ এসে বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ আমরা এখানে অবস্থান করছি যতক্ষণ না আমাদের রব আমাদের নিকট আসেন, যখন আমাদের রব আসবেন আমরা তাকে চিনব, ফলে আল্লাহ সে রূপে তাহাদের নিকট আসবেন যে রূপে তারা তাকে চিনে। অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ আপনি আমাদের রব, অতঃপর তারা তার অনুগামী হইবে। আর জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশে পুলসিরাত কায়েম করা হইবে, আমি এবং আমার উম্মত সর্বপ্রথম তা অতিক্রম করব। সে দিন রাসূলগণ ব্যতীত কেউ কথা বলবে না। সে দিন রাসূলগণের বাণী হবেঃ আল্লাহুম্মা সাল্লিম, সাল্লিম। জাহান্নামে রহিয়াছে সাদানের  কাঁটার ন্যায় হুক, তোমরা সাদান দেখেছ?” তারা বলিলঃ হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ “তা সাদানের কাঁটার ন্যায়, তবে তার বিশালত্বের পরিমাণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। সে মানুষদেরকে তাহাদের আমল অনুযায়ী ছো মেরে নিয়ে নিবে। তাহাদের কেউ ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ আমলের কারণে (জাহান্নামের শুরুতে) রয়ে গেছে, তাহাদের কেউ টুকরো হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত অথবা সাজা প্রাপ্ত অথবা তার অনুরূপ। অতঃপর তিনি জাহির হইবেন, অবশেষে যখন বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হইবেন ও জাহান্নামীদের থেকে নিজ রহমতে যাকে ইচ্ছা বের করার ইচ্ছা করবেন ফেরেশতাহাদের নির্দেশ দিবেন যে, জাহান্নাম থেকে বের কর আল্লাহর সাথে যে কোন বস্তু শরীক করত না, যাদের ওপর আল্লাহ রহম করার ইচ্ছা করিয়াছেন এবং যারা সাক্ষী দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক ইলাহ নেই। তারা জাহান্নামে তাহাদেরকে সেজদার আলামত দ্বারা চিনবে। আগুন বনি আদমকে সেজদার জায়গা ব্যতীত খেয়ে ফেলবে। সেজদার জায়গা ভক্ষণ করা জাহান্নামের ওপর আল্লাহ হারাম করে দিয়েছেন। তারা জাহান্নাম থেকে বের হইবে এমতাবস্থায় যে পুড়ে গেছে, তাহাদের ওপর সঞ্জীবনী পানি ঢালা হইবে, ফলে তারা গজিয়ে উঠবে যেমন গজিয়ে উঠে প্রবাহিত পানির সাথে আসা উর্বর মাটিতে শস্যের চারা। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ফয়সালা থেকে ফারেগ হইবেন। অবশেষে শুধু এক ব্যক্তি জাহান্নামের ওপর তার চেহারা দিয়ে অগ্রসর হয়ে থাকিবে, সেই জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জাহান্নামী। সে বলবেঃ হে আমার রব, আমার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিন, কারণ সে আমার চেহারা বিষাক্ত করে দিয়েছে, তার লেলিহান আমাকে জ্বালিয়ে দিয়েছে। অতঃপর সে আল্লাহর নিকট দোআ করিবে, আল্লাহ যেভাবে তার দোআ করা পছন্দ করেন। অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ এমন হইবে না তো যদি তোমাকে তা দান করি তুমি আমার নিকট অন্য কিছু চাইবে? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম, এ ছাড়া আপনার নিকট কিছু চাইব না। সে তার রবকে যা ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার দিবে, ফলে আল্লাহ তার চেহারা জাহান্নাম থেকে ঘুরিয়ে দিবেন। অতঃপর সে যখন জান্নাতের দিকে মুখ করিবে ও তা দেখবে, চুপ থাকিবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান। অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে জান্নাতের দরজার পর্যন্ত অগ্রসর করুন। আল্লাহ তাকে বলবেনঃ তুমি কি আমাকে তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া অন্য কিছু আমার নিকট কখনো চাইবে না? হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার রব, এবং আল্লাহকে ডাকবে, অবশেষে আল্লাহ বলবেনঃ এমন হইবে না তো যদি তা দেই অপর বস্তু তুমি চাইবে? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম তা ছাড়া কিছু চাইব না, এবং যত ইচ্ছা ওয়াদা ও অঙ্গিকার প্রদান করিবে, ফলে আল্লাহ তাকে জান্নাতের দরজার নিকটবর্তী করবেন। যখন সে জান্নাতের দরজার নিকট দাঁড়াবে তার জন্য জান্নাত উন্মুক্ত হইবে, সে তার নিয়ামত ও আনন্দ দেখবে, অতঃপর চুপ থাকিবে আল্লাহ যতক্ষণ তার চুপ থাকা চান, অতঃপর বলবেঃ হে আমার রব আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান, আল্লাহ বলবেনঃ তুমি কি ওয়াদা ও অঙ্গিকার দাওনি আমি যা দিয়েছি তা ছাড়া কিছু চাইবে না? তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম সর্বনাশ তোমার, তুমি খুব ওয়াদা ভঙ্গকারী। সে বলবেঃ হে আমার রব আমি তোমার হতভাগা মখলুক হইতে চাই না, সে ডাকতে থাকিবে অবশেষে তার কারণে আল্লাহ হাসবেন। যখন হাসবেন তাকে বলবেনঃ জান্নাতে প্রবেশ কর, যখন সে তাতে প্রবেশ করিবে আল্লাহ তাকে বলবেনঃ চাও, সে তার নিকট চাইবে ও প্রার্থনা করিবে, এমনকি আল্লাহও তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেনঃ এটা, ওটা অবশেষে যখন তার আশা শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ বলবেনঃ এগুলো তোমার জন্য এবং এর অনুরূপও তার সাথে”। আতা ইব্‌ন ইয়াযিদ বলেনঃ আবু সায়িদ খুদরি আবু হুরাইরার সাথেই ছিল, আবু হুরাইরার হাদিসের কোন অংশ তিনি প্রত্যাখ্যান করেননি, অবশেষে যখন আবু হুরাইরা বলিলেন আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং এর সমান এর সাথে”। আবু সায়িদ খুদরি বললেনঃ “এবং তার সাথে তার দশগুণ হে আবু হুরাইরা। আবু হুরাইরা বললেনঃ আমার শুধু মনে আছেঃ “এগুলো এবং এর সাথে তার অনুরূপ”। আবু সায়িদ বললেনঃ আমি সাক্ষী দিচ্ছে আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) থেকে তার বাণীঃ “এগুলো তোমার জন্য এবং তার সমান দশগুণ” খুব ভাল করে স্মরণ রেখেছি। আবু হুরাইরা বললেনঃ এ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতি”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৫৭ – আবু যার (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে নাজাত প্রাপ্ত সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকে। এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হইবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ তার ছোট পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর, বড় পাপগুলো গোপন রাখ, অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তুমি অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ, অমুক অমুক পাপ, অমুক অমুক দিন করেছ। তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে বলা হবেঃ তোমার জন্য প্রত্যেক পাপের পরিবর্তে একটি করে নেকি। তিনি বলেনঃ অতঃপর সে বলবেঃ হে আমার রব আমি অনেক কিছু করেছি এখানে তা দেখছি না”। তিনি বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে দেখেছি হাসতে, এমনকি তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। (সহিহ মুসলিম ও সুনান তিরমিযি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩২. অনুচ্ছেদঃ শহীদদের ফযিলত

হাদীসঃ ৫৮ – মাসরুক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন আমরা আব্দুল্লাহ ইব্‌ন মাসউদকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিঃ
﴿وَلَاتَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ﴾
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাহাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না, বরং তারা ‎তাহাদের রবের নিকট জীবিত। তাহাদেরকে রিযক ‎‎দেয়া হয়”।  তিনি বলেনঃ জেনে রেখ, আমরাও এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “তাহাদের রূহসমূহ সবুজ পাখির পেটে, যার জন্য রহিয়াছে আরশের সাথে ঝুলন্ত প্রদীপ, সে জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা ভ্রমণ করে, অতঃপর উক্ত প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। একদা তাহাদের দিকে তাহাদের রব দৃষ্টি দেন অতঃপর বলেনঃ তোমরা কিছু চাও? তারা বলবেঃ আমরা কি চাইব, অথচ আমরা জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা বিচরণ করি? এভাবে তাহাদেরকে তিনবার জিজ্ঞাসা করবেন, যখন তারা দেখবে যে কোন কিছু চাওয়া ব্যতীত তাহাদেরকে নিস্তার দেয়া হইবে না, তারা বলবেঃ হে রব আমরা চাই আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হইতে পারি। যখন তিনি দেখবেন যে তাহাদের কোন চাহিদা নেই তাহাদের অব্যাহতি দেয়া হইবে”। (সহিহ মুসলিম, নাসায়ি ওইবনু মাজাহ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৫৯ – শাকিক (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ ইব্‌ন মাসউদ তাকে বলেছেনঃ “রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঠারো জন সাহাবি যারা বদরের দিন শহীদ হয়েছিল, আল্লাহ তাহাদের রুহগুলো জান্নাতে সবুজ পাখির পেটে রেখেছেন যে জান্নাতে বিচরণ করে। তিনি বলেনঃ তারা এভাবেই ছিল, এক সময় তোমার রব তাহাদের দিকে দৃষ্টি দেন, অতঃপর বলেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা বলিলঃ হে আমাদের রব এর ওপরে কি আছে? তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ “হে আমার বান্দাগণ তোমরা কি চাও?” তারা চতুর্থবার বলবেঃ আপনি আমাদের রুহগুলো আমাদের শরীরে ফিরিয়ে দিন, যেন আমরা শহীদ হইতে পারি যেমন শহীদ হয়েছি”। (ইব্‌ন হিব্বান) হাদিসটি মওকুফ ও সহিহ।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ মাওকুফ

হাদীসঃ ৬০ – আনাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “জান্নাতি এক ব্যক্তিকে আনা হইবে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কি রকম পেয়েছ? সে বলবেঃ হে আমার রব সবচেয়ে উত্তম। তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ তোমার নিকট প্রার্থনা করছি তুমি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দাও, যেন তোমার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হইতে পারি, যেহেতু সে শাহাদাতের মর্যাদা প্রত্যক্ষ করিবে”। (নাসায়ি, মুসনাদে আহমদ ও হাকেম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৬১ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তার দায়িত্ব স্বয়ং গ্রহণ করেন, যে তার রাস্তায় বের হয়, -যাকে আমার প্রতি ঈমান ও আমার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ব্যতীত কোন জিনিস বের করেনি-, আমি তাকে অতিসত্বর তার পাওনা সওয়াব অথবা গনিমত দেব অথবা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব। যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্ট না হত, তাহলে আমি কোন যুদ্ধ থেকে পিছপা হতাম না। আমি চাই আমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হইবে অতঃপর আমি শহীদ হব, অতঃপর আমাকে জীবিত করা হইবে অতঃপর আমি শহীদ হব”। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, নাসায়ি ওইবনু মাজাহ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসঃ ৬২ – আনাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন জান্নাতি এক ব্যক্তিকে হাজির করা হইবে, অতঃপর আল্লাহ বলবেনঃ হে বনি আদম তোমার স্থান কেমন পেয়েছ? সে বলবেঃ সবচেয়ে উত্তম, অতঃপর তিনি বলবেনঃ চাও, আশা কর। সে বলবেঃ এ ছাড়া আমি কি চাইব ও কি আশা করব যে, আপনি আমাকে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দিন, অতঃপর আপনার রাস্তায় আমি দশবার শহীদ হই, যেহেতু সে শাহাদাতের ফজিলত প্রত্যক্ষ করিবে”। (মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৬৩ – ইব্‌ন ওমর (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ , রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তার রব থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “আমার যে কোন বান্দা আমার সন্তুষ্টির নিমিত্তে আমার রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়, আমি তার জন্য জিম্মাদার যে আমি তাকে তার পাওয়া সওয়াব ও গনিমত পৌঁছে দেব, যদি তাকে মৃত্যু দেই তাহলে তাকে ক্ষমা করব, তাকে রহম করব ও তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব”। (মুসনাদে আহমদ ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ লিগাইরিহি

৩৩. অনুচ্ছেদঃ আয়াতের শানে নুযূল

হাদীসে কুদসী ৬৪ – আব্দুল্লাহ ইব্‌ন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের ভাইয়েরা উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন, আল্লাহ তাহাদের রুহগুলো সবুজ পাখির পেটে রাখেন, তারা জান্নাতের নহরসমূহ বিচরণ করে, তার ফল ভক্ষণ করে এবং আরশের ছায়ার নিচে ঝুলন্ত স্বর্ণের প্রদীপে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। যখন তারা নিজেদের সুস্বাদু খাদ্য-পানীয় এবং সুন্দর বিছানা গ্রহণ করিল, বলিলঃ আমাদের হয়ে আমাদের ভাইদেরকে কে পৌঁছাবে যে, আমরা জান্নাতে জীবিত, আমাদেরকে রিযক দেয়া হয়, যেন তারা জিহাদ থেকে পিছপা না হয় এবং যুদ্ধের সময় ভীরুতা প্রদর্শন না করে? আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমি তোমাদের হয়ে তাহাদেরকে পৌঁছে দেব”। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করেনঃ
﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ﴾ إِلَى آخِرِ الْآيَةِ.
“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাহাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না সূরা (আলে ইমরানঃ১৬৯)। আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (সুনান আবু দাউদও মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

৩৪. অনুচ্ছেদঃ  আয়াতের আরেকটি শানে নুযূল

হাদীসে কুদসী ৬৫ – জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) আমার সাথে দেখা করে আমাকে বলেনঃ “হে জাবের কেন তোমাকে বিষণ্ণ দেখছি? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল আমার পিতা উহুদের দিন শাহাদাত বরণ করেন, তিনি অনেক সন্তান ও ঋণ রেখে গেছেন। তিনি বললেনঃ “আমি কি তোমাকে সুসংবাদ দিব না তোমার পিতার সাথে আল্লাহ কি নিয়ে সাক্ষাত করিয়াছেন?” জাবের বলেন, আমি বললামঃ অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেনঃ আল্লাহ পর্দার আড়াল ব্যতীত কারো সাথে কখনো কথা বলেননি, কিন্তু তোমার পিতাকে জীবিত করে তার সাথে   কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ হে আমার বান্দা আমার নিকট চাও আমি তোমাকে দিব। জবাবে তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেনঃ হে আমার রব আমাকে জীবিত করুন, আমি দ্বিতীয়বার আপনার রাস্তায় শহীদ হব। আল্লাহ তাআলা বললেনঃ আমার সিদ্ধান্ত পূর্বে চূড়ান্ত হয়ে গেছে যে, মৃতদের দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করা হইবে না। তিনি বলেনঃ এবং এ আয়াত নাযিল করা হলঃ

﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ ١٦٩﴾ (ال عمرانঃ ١٦٩)

“আর যারা আল্লাহর পথে জীবন দিয়েছে, ‎তাহাদেরকে তুমি মৃত মনে করো না”। (সূরা আলে ইমরানঃ ১৬৯) (সুনান তিরমিযি ওইবনু মাজাহ) হাদিসটি অন্যান্য শাহেদ তথা সমার্থের বর্ণনার কারণে সহিহ।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩৫. অনুচ্ছেদঃ মুমূর্ষু হালত, রুহ বের হওয়া ও জীবন সায়ান্নে সহিহ মুসলিম-কাফিরের অবস্থার বর্ণনাসহ মহান হাদিস

হাদীসে কুদসী ৬৬ – বারা ইব্‌ন আযেব (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জনৈক আনসারির জানাজায় বের হলাম, আমরা তার কবরে পৌঁছলাম, তখনো কবর খোঁড়া হয়নি, রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বসলেন আমরা তার চারপাশে বসলাম, যেন আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে, তার হাতে একটি লাকড়ি ছিল তিনি মাটি খুড়তে ছিলেন, অতঃপর মাথা উঠিয়ে বললেনঃ “তোমরা আল্লাহর নিকট কবরের আযাব থেকে পানাহ চাও, দুইবার অথবা তিনবার (বলিলেন)”। অতঃপর বললেনঃ “নিশ্চয় মুমিন বান্দা যখন দুনিয়া প্রস্থান ও আখেরাতে পা রাখার সন্ধিক্ষণে উপস্থিত হয় তার নিকট আসমান থেকে সাদা চেহারার ফেরেশতাগণ অবতরণ করেন, যেন তাহাদের চেহারা সূর্য। তাহাদের সাথে জান্নাতের কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে, অবশেষে তারা তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত বসে যায়। অতঃপর মালাকুল মউত আলাইহিস সালাম এসে তার মাথার নিকট বসেন, তিনি বলেনঃ হে পবিত্র রুহ তুমি আল্লাহর মাগফেরাত ও সন্তুষ্টির প্রতি বের হও”। তিনি বললেনঃ “ফলে রুহ বের হয় যেমন মটকা/কলসি থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। তিনি তা গ্রহণ করেন, যখন গ্রহণ করেন চোখের পলক পরিমাণ তিনি নিজ হাতে না রেখে তৎক্ষণাৎ তা সঙ্গে নিয়ে আসা কাফন ও সুগন্ধির মধ্যে রাখেন, তার থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ঘ্রাণ বের হয় যা দুনিয়াতে পাওয়া যায়”। তিনি বললেনঃ “অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে ওঠে, তারা যখনই অতিক্রম করে তাকে সহ ফেরেশতাহাদের কোন দলের কাছ দিয়ে তখনই তারা বলে, এ পবিত্র রুহ কে? তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে সুন্দর নামে ডাকে যে নামে দুনিয়াতে তাকে ডাকা হত, তাকে নিয়ে তারা দুনিয়ার আসমানে পৌঁছে, তার জন্য তারা আসমানের দরজা খোলার অনুরোধ করেন, তাহাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হয়, তাকে প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তীরা পরবর্তী আসমানে অভ্যর্থনা জানিয়ে পৌঁছে দেয়, এভাবে তাকে সপ্তম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়, অতঃপর আল্লাহ বলেনঃ আমার বান্দার দফতর ইল্লিয়্যিনে লিখ এবং তাকে জমিনে ফিরিয়ে দাও, কারণ আমি তা (মাটি) থেকে তাহাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেখানে তাহাদেরকে ফেরৎ দেব এবং সেখান থেকেই তাহাদেরকে পুনরায় উঠাব”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, এরপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসাবে অতঃপর বলবেঃ তোমার রব কে? সে বলবেঃ আল্লাহ। অতঃপর তারা বলবেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলবেঃ আমার দ্বীন ইসলাম। অতঃপর বলবেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলবেঃ তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)। অতঃপর তারা বলবেঃ কিভাবে জানলে? সে বলবেঃ আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাতে ঈমান এনেছি ও তা সত্য জ্ঞান করেছি। অতঃপর এক ঘোষণাকারী আসমানে ঘোষণা দিবেঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে, অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও, তাকে জান্নাতের পোশাক পরিধান করাও এবং তার জন্য জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দাও। তিনি বলেনঃ ফলে তার কাছে জান্নাতের সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি আসবে, তার জন্য তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত তার কবর প্রশস্ত করে দেয়া হইবে। তিনি বলেনঃ তার নিকট সুদর্শন চেহারা, সুন্দর পোশাক ও সুঘ্রাণসহ এক ব্যক্তি আসবে, অতঃপর বলবেঃ সুসংবাদ গ্রহণ কর যা তোমাকে সন্তুষ্ট করিবে তার, এটা তোমার সেদিন যার ওয়াদা করা হত। সে তাকে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার নেক আমল। সে বলবেঃ হে আমার রব, কিয়ামত কায়েম করুন, যেন আমি আমার পরিবার ও সম্পদের কাছে ফিরে যেতে পারি”। তিনি বলেনঃ “আর কাফের বান্দা যখন দুনিয়া থেকে প্রস্থান ও আখেরাতে যাত্রার সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়, তার নিকট আসমান থেকে কালো চেহারার ফেরেশতারা অবতরণ করে, তাহাদের সাথে থাকে মুসুহ’ (মোটা-পুরু কাপড়), অতঃপর তারা তার নিকট বসে তার দৃষ্টির সীমা পর্যন্ত, অতঃপর মালাকুল মউত আসেন ও তার মাথার কাছে বসেন। অতঃপর বলেনঃ হে খবিস নফস, আল্লাহর গোস্বা ও গজবের জন্য বের হও। তিনি বলেনঃ ফলে সে তার শরীরে ছড়িয়ে যায়, অতঃপর সে তাকে টেনে বের করে যেমন ভেজা উল থেকে (লোহার) সিক বের করা হয় , অতঃপর সে তা গ্রহণ করে, আর যখন সে তা গ্রহণ করে চোখের পলকের মুহূর্ত হাতে না রেখে ফেরেশতারা তা ঐ মোটা-পুরু কাপড়ে রাখে, তার থেকে মৃত দেহের যত কঠিন দুর্গন্ধ দুনিয়াতে হইতে পারে সে রকমের দুর্গন্ধ বের হয়। অতঃপর তাকে নিয়ে তারা ওপরে উঠে, তাকেসহ তারা যখনই ফেরেশতাহাদের কোন দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে তখনই তারা বলে, এ খবিস রুহ কে? তারা বলেঃ অমুকের সন্তান অমুক, সবচেয়ে নিকৃষ্ট নাম ধরে যার মাধ্যমে তাকে দুনিয়াতে ডাকা হত, এভাবে তাকে নিয়ে দুনিয়ার আসমানে যাওয়া হয়, তার জন্য দরজা খুলতে বলা হয়, কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হইবে না”। অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) তিলাওয়াত করেনঃ

﴿لَا تُفَتَّحُ لَهُمۡ أَبۡوَٰبُ ٱلسَّمَآءِ وَلَا يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ ٱلۡجَمَلُ فِي سَمِّ ٱلۡخِيَاطِۚ ٤٠﴾ (الاعرافঃ ٤٠)

“তাহাদের জন্য আসমানের দরজাসমূহ খোলা হইবে না ‎এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে না, যতক্ষণ না ‎উট সূঁচের ছিদ্রতে প্রবেশ করে” (সূরা আরাফঃ ৪০) ‎অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ তার আমলনামা জমিনে সর্বনিম্নে সিজ্জিনে লিখ, অতঃপর তার রুহ সজোরে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেনঃ

﴿وَمَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَتَخۡطَفُهُ ٱلطَّيۡرُ أَوۡ تَهۡوِي بِهِ ٱلرِّيحُ فِي مَكَانٖ سَحِيقٖ ٣١﴾ (الحج ঃ ٣١)

“আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, সে যেন ‎আকাশ থেকে পড়ল। অতঃপর পাখি তাকে ছোঁ ‎‎মেরে নিয়ে গেল কিম্বা বাতাস তাকে দূরের কোন ‎জায়গায় নিক্ষেপ করিল” (সূরা হজঃ ৩১) ‎তার রুহ তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়, অতঃপর তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসে ও তাকে বসায়, তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেঃ তোমার রব কে? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলেঃ তোমার দ্বীন কি? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না। অতঃপর তারা বলেঃ এ ব্যক্তি কে যাকে তোমাদের মাঝে প্রেরণ করা হয়েছিল? সে বলেঃ হা হা আমি জানি না, অতঃপর আসমান থেকে এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করিবে যে, সে মিথ্যা বলেছে, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও, তার দরজা জাহান্নামের দিকে খুলে দাও, ফলে তার নিকট তার তাপ ও বিষ আসবে এবং তার ওপর তার কবর সংকীর্ণ করা হইবে যে, তার পাঁজরের হাড় একটির মধ্যে অপরটি ঢুকে যাবে। অতঃপর তার নিকট বীভৎস চেহারা, খারাপ পোশাক ও দুর্গন্ধসহ এক ব্যক্তি আসবে, সে তাকে বলবেঃ তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর, যা তোমাকে দুঃখ দিবে, এ হচ্ছে তোমার সে দিন যার ওয়াদা করা হত। সে বলবেঃ তুমি কে, তোমার এমন চেহারা যে কেবল অনিষ্টই নিয়ে আসে? সে বলবেঃ আমি তোমার খবিস আমল। সে বলবেঃ হে রব কিয়ামত কায়েম কর না”। (মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩৬. অনুচ্ছেদঃ জান্নাত ও জাহান্নামীদের বর্ণনা

হাদীসে কুদসী ৬৭ – ইয়াদ ইব্‌ন হিমার আল-মুজাশি থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) একদা তার খুতবায় বলেছেনঃ “জেন রেখ আমার রব আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমি তোমাদেরকে শিক্ষা দেই যা তোমরা জান না, যা তিনি আজকের এ দিনে আমাকে শিক্ষা দিয়েছেনঃ আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা হালাল। নিশ্চয় আমি আমার সকল বান্দাকে সৃষ্টি করেছি শির্ক মুক্ত-একনিষ্ঠ, অতঃপর তাহাদের নিকট শয়তান এসে তাহাদেরকে তাহাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করেছে। তাহাদের ওপর সে হারাম করেছে যা আমি তাহাদের জন্য হালাল করেছি। সে তাহাদেরকে নির্দেশ করেছে যেন আমার সাথে শরীক করে, যার সপক্ষে কোন দলিল নাযিল করা হয়নি। নিশ্চয় আল্লাহ জমিনে বাসকারীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছেন অতঃপর তাহাদের আরব অনারব সবাইর প্রতি তাহাঁর ক্রোধ আসে, অবশিষ্ট কতক কিতাবি  ব্যতীত। তিনি আরও বলেনঃ তোমাকে প্রেরণ করেছি তোমাকে পরীক্ষা করব ও তোমার দ্বারা তাহাদের পরীক্ষা করব এ জন্য। আমি তোমার ওপর এক কিতাব নাযিল করেছি, যা পানি ধুয়ে ফেলবে না, ঘুমন্ত ও জাগ্রত সর্বাবস্থায় তুমি তা তিলাওয়াত করিবে। আর নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি কুরাইশদের জ্বালিয়ে দেই। আমি বললামঃ হে আমার রব তাহলে তো তারা আমার মাথা থেঁতলে দিবে, অতঃপর রুটি বানিয়ে ছাড়বে। তিনি বললেনঃ তাহাদেরকে বের কর যেমন তারা তোমাকে বের করেছে, তাহাদের সাথে যুদ্ধ কর আমি তোমার সাথে যুদ্ধ করব, খরচ কর নিশ্চয় আমরা তোমার ওপর খরচ করব। তুমি বাহিনী প্রেরণ কর, আমি তার সমান পাঁচগুণ প্রেরণ করব। যারা তোমার আনুগত্য করেছে তাহাদের নিয়ে যুদ্ধ কর তাহাদের সাথে যারা তোমার অবাধ্য হয়েছে। তিনি বলেনঃ জান্নাতিরা তিন প্রকারঃ (ক). ন্যায়পরায়ণ, সদকাকারী ও তাওফিকপ্রাপ্ত বাদশাহ। (খ). সকল আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য দয়াশীল ও নরম হৃদয়ের অধিকারী ব্যক্তি। (গ). অধিক সন্তান-সন্তুতিসম্পন্ন সৎ ও পবিত্র ব্যক্তি। তিনি বলেনঃ জাহান্নামীরা পাঁচ প্রকারঃ (ক). দুর্বল, যার বিচারিক বিবেক নেই, যারা তোমাদের মধ্যে অনুসারী, যারা সন্তান ও সম্পদ আশা করে না। (খ). খিয়ানতকারী, যার খিয়ানত গোপন থাকে না, সামান্য বস্তু হলে তাতেও সে খিয়ানত করে। (গ). এমন ব্যক্তি যে সকাল-সন্ধ্যা তোমার পরিবার ও সম্পদে ধোকা প্রদানে লিপ্ত। (ঘ). তিনি কৃপণতা অথবা মিথ্যার উল্লেখ করিয়াছেন। (ঙ). দুরাচারী অশ্লীল ব্যক্তি”। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৬৮ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “জান্নাত ও জাহান্নাম তর্ক করেছে, অতঃপর জাহান্নাম বলিলঃ আমাকে অহংকারী ও দাম্ভিক দ্বারা প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। জান্নাত বলিলঃ আমার কি দোষ, আমার এখানে দুর্বল ও পতিত ব্যতীত কেউ প্রবেশ করিবে না! আল্লাহ তাআলা জান্নাতকে বলেনঃ তুমি আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমার বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছা আমি রহম করব। জাহান্নামকে বলেনঃ তুমি আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা আমার বান্দাদের থেকে আমি শাস্তি দিব। তোমাদের দু’টির প্রতিটিই পূর্ণ হইতে হইবে (অর্থাৎ উভয়কে পূর্ণ করা হইবে)। জাহান্নাম পূর্ণ হইবে না যতক্ষণ না তাতে আল্লাহর পা রাখা হয়, তখন সে বলবেঃ কত্ কত্ কত্, তখনি জাহান্নাম পূর্ণ হইবে এবং তার এক অংশ অপর অংশে ঢুকে যাবে, আল্লাহ তার কোন মখলুককে যুলম করবেন না। আর জান্নাতের জন্য আল্লাহ নতুন মখলুক সৃষ্টি করবেন”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩৭. অনুচ্ছেদঃ দুনিয়ার সুখ ও দুঃখ আখেরাতে মূল্যহীন

হাদীসে কুদসী ৬৯ – আনাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্টভোগকারী জান্নাতিকে হাজির করা হইবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ জান্নাতে তাকে ভালভাবে ঢোকাও, ফলে তাকে তারা ভালভাবে জান্নাতে ঢুকাবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কষ্ট অথবা তোমার অপছন্দ কিছু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো আমার অপছন্দ বস্তু দেখিনি। অতঃপর দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী সুখভোগকারী জাহান্নামীকে হাজির করা হইবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ তাকে ভালভাবে জাহান্নামে ডুবাও, অতঃপর তিনি বলবেনঃ হে বনি আদম, তুমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেছ? সে বলবেঃ না, তোমার ইজ্জতের কসম আমি কখনো কল্যাণ ও আরামদায়ক বস্তু দেখেনি”। (সহিহ মুসলিম, মুসনাদে আহমদ ওইবনু মাজাহ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩৮. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের দৃশ্য

হাদীসে কুদসী ৭০ আবু সায়িদ খুদরি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ হে আদম, সে বলবেঃ সদা উপস্থিত এবং তোমার সন্তুষ্টির জন্য প্রচেষ্টার পর প্রচেষ্টা, কল্যাণ কেবল তোমার হাতেই। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল বের কর। তিনি বলবেনঃ জাহান্নামী দল কোনটি? তিনি বলবেনঃ প্রত্যেক হাজার থেকে নয়শত নিরানব্বই জন, তখনি ছোটরা বার্ধক্যে উপনীত হইবে। সকল গর্ভবতী তার গর্ভ পাত করিবে, তুমি দেখবে মানুষরা মাতাল, অথচ তাহাদের সাথে মাতলামি নেই, কিন্তু আল্লাহর শাস্তি খুব কঠিন। তারা বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল আমাদের থেকে সে একজন কে? তিনি বললেনঃ “সুসংবাদ গ্রহণ কর, তোমাদের থেকে একজন ও ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে এক হাজার। অতঃপর তিনি বলেনঃ যার হাতে আমার নফস তার কসম করে বলছিঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতিদের এক চতুর্থাংশ হইবে”। আমরা তাকবীর বলে উঠলাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের এক তৃতীয়াংশ হইবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “আমি আশা করছি তোমরা জান্নাতের অর্ধেক হইবে”। আমরা তাকবীর বললাম। তিনি বললেনঃ “মানুষের ভিতরে তোমরা সাদা ষাঁড়ের গায়ে একটি কালো চুলের ন্যায়, অথবা কালো ষাঁড়ের গায়ের একটি সাদা চুলের ন্যায়”। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৩৯. অনুচ্ছেদঃ মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিয়ামতের দিন তার বিপক্ষে সাক্ষ্য দিবে

হাদীসে কুদসী ৭১ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “তারা বলিলঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বললেনঃ “তোমরা কি ভর দুপুরে মেঘ মুক্ত আকাশে সূর্য দেখায় সন্দেহ কর? তারা বলিলঃ না। তিনি বললেনঃ তোমরা কি চৌদ্দ তারিখের রাতে মেঘহীন আকাশে চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর? তারা বলিলঃ না। তিনি বললেনঃ তার সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার নফস, তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করিবে না, যেমন তোমরা সন্দেহ কর না সূর্য-চাঁদ কোনো একটি দেখার ক্ষেত্রে। তিনি বলেনঃ আল্লাহ বান্দার সাথে সাক্ষাত করবেন অতঃপর বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই। তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন এবং বলবেনঃ হে অমুক আমি কি তোমাকে সম্মানিত করি নি, তোমাকে নেতৃত্ব দেই নি, তোমাকে বিয়ে করাই নি এবং তোমার জন্য ঘোড়া ও উট অনুগত করে দেইনি, আমি কি তোমাকে সুযোগ দেই নি তুমি নেতৃত্ব দিয়েছ ও ভোগ করেছ? সে বলবেঃ অবশ্যই হে আমার রব। তিনি বলেনঃ অতঃপর তিনি বলবেনঃ তুমি কি ভেবেছ আমার সাথে তুমি সাক্ষাতকারী? সে বলবেঃ না। অতঃপর তিনি বলবেনঃ নিশ্চয় আমি তোমাকে ছেড়ে দেব যেমন তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করবেন, তাকেও অনুরূপ বলবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমি তোমার ওপর, তোমার কিতাব ও রাসূলদের ওপর ঈমান এনেছি, সালাত আদায় করেছি, সিয়াম পালন করেছি, সদকা করেছি, সে ইচ্ছামত গুণাগুণ বর্ণনা করিবে। তিনি বলবেনঃ তাহলে অপেক্ষা কর, তিনি বলেনঃ অতঃপর তাকে বলা হবেঃ এখন আমি তোমার বিপক্ষে আমার সাক্ষী উপস্থিত করছি। সে অন্তরে চিন্তা করিবে আমার বিপক্ষে কে সাক্ষী দিবে, তখন তার মুখে কুলুপ এঁটে দেয়া হইবে, এবং তার রান, গোস্ত ও হাড্ডিকে বলা হবেঃ কথা বল, ফলে তার রান, গোস্ত ও হাড্ডি তার আমলের বর্ণনা দিবে। আর এটা এ জন্যে যে, যেন সে লোক আল্লাহর কাছে ওজর পেশ করতে না পারে, সে হচ্ছে মুনাফিক, তার ওপরই আল্লাহর অসন্তুষ্টি আরোপ হইবে”। (সহিহ মুসলিম ও আবু দাউদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৭২ – আনাস ইব্‌ন মালিক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “আমরা একদা নবী (সাঃআঃ)ের নিকট ছিলাম, তিনি হঠাৎ হাসলেন। তিনি বললেনঃ “তোমরা জান কেন হেসেছি?”, তিনি বলেনঃ আমরা বললামঃ আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ “(আমি হেসেছি) বান্দার তার রবকে পাল্টা প্রশ্ন করা থেকে। সে বলবেঃ হে আমার রব, আপনি কি আমাকে যুলম থেকে নাজাত দেননি?” তিনি বলেনঃ “আল্লাহ বলবেনঃ অবশ্যই”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ আমার বিপক্ষে আমার অংশ ব্যতীত অন্য কোন সাক্ষী মানি না”। তিনি বলেনঃ “আল্লাহ্ বলবেনঃ সাক্ষী হিসেবে আজ তোমার জন্য তুমিই যথেষ্ট, আর দর্শক হিসেবে কিরামুন কাতেবিন যথেষ্ট”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর তার মুখে মোহর এঁটে দেয়া হইবে, তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বলা হইবে, বল”। তিনি বলেনঃ “ফলে অঙ্গসমূহ তার আমলের বর্ণনা দিবে”। তিনি বলেনঃ “অতঃপর সে বলবেঃ তোমরা দূর হও, নিপাত যাও তোমরা, তোমাদের পক্ষেই তো আমি সংগ্রাম করতাম”। (সহিহ মুসলিম ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৪০. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহ তাআলার বাণীঃ

হাদীসঃ ৭৩ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “আমি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)কে বলিতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা জমিন তাহাঁর হাতের মুঠোয় গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে মুড়িয়ে নিবেন, অতঃপর বলবেনঃ আমিই বাদশাহ, দুনিয়ার বাদশাহরা কোথায়?”। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ওইবনু মাজাহ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৭৪ – ইব্‌ন ওমর (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ জমিন হাতের মুঠোয় গ্রহণ করবেন, আর আসমান তার ডান হাতে থাকিবে, অতঃপর তিনি বলবেনঃ আমিই বাদশাহ”। (সহিহ বুখারি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৭৫ – উবাইদুল্লাহ ইব্‌ন মিকসাম থেকে বর্ণিতঃ সে আব্দুল্লাহ ইব্‌ন ওমরকে লক্ষ্য করেছে কিভাবে তিনি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে বর্ণনা দেন, তিনি (নবী-সা.) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা আসমান ও জমিন তার দু’হাতে পাকড়াও করবেন, অতঃপর বলবেনঃ আমি আল্লাহ, (তিনি হাতের আঙুলগুলো মুষ্টিবদ্ধ ও প্রসারিত করছিলেন), আমিই বাদশাহ”। আমি মিম্বারের দিকে দেখলাম একেবারে নিচ থেকে নড়ছে, এমনকি মনে হচ্ছিল মিম্বার কি রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে নিয়ে পড়ে যাবে”। সহিহ মুসলিম,ইবনু মাজাহ ও নাসায়ি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৪১. অনুচ্ছেদঃ কতক জাহান্নামীর জাহান্নাম থেকে বের হওয়া

হাদীসঃ ৭৬ – আনাস ইব্‌ন মালিক (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “জাহান্নাম থেকে চারজন বের হইবে, তাহাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির করা হইবে, অতঃপর তিনি তাহাদেরকে জাহান্নামের নির্দেশ দিবেন, ফলে তাহাদের একজন পিছন ফিরে তাকাবে এবং বলবেঃ হে আমার রব, আমি আশা করেছিলাম যদি সেখান থেকে আমাকে বের করেন, সেখানে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না, ফলে তিনি বলবেনঃ আমি তোমাকে সেখানে ফিরিয়ে দিব না”। (মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৪২. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ

হাদীসে কুদসী ৭৭ – আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হইবে, -অর্থাৎ বান্দাকে- তা হচ্ছে নিয়ামত, তাকে বলা হইবে যেঃ আমি কি তোমার শরীর সুস্থ করিনি, আমি কি তোমাকে ঠাণ্ডা পানি পান করাই নি”। (সুনান তিরমিযি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৪৩. অনুচ্ছেদঃ পরকালের আমলে অলসতাকারীর জন্য হুশিয়ারি

হাদীসঃ ৭৮ – আবু হুরাইরা ও আবু সায়িদ খুদরি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তারা বলেনঃ রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন বান্দাকে উপস্থিত করা হইবে, অতঃপর আল্লাহ তাকে বলবেনঃ আমি কি তোমাকে কান, চোখ, সম্পদ ও সন্তান দেই নি? এবং তোমার জন্য চতুষ্পদ জন্তু ও কৃষি অনুগত করে দিয়েছি। আর তোমাকে দিয়েছি নেতৃত্ব দেয়া ও ভোগ করার সুযোগ, (এত কিছুর পর) তুমি কি চিন্তা করেছ তোমার এ দিনে আমার সাথে সাক্ষাত করিবে?” রাসূল বলেনঃ “সে বলবেঃ না, অতঃপর তিনি তাকে বলবেনঃ আজ আমি তোমাকে ছেড়ে যাব, যেমন তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছিলে”। (সুনান তিরমিযি)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃহাসান হাদিস

৪৪. অনুচ্ছেদঃ আখেরাতে মুমিনগণ রবের দর্শন লাভ করিবে

হাদীসে কুদসী ৭৯ – আবু সায়িদ খুদরি (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ “আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল কিয়ামতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখব? তিনি বলেনঃ “তোমরা কি সূর্য ও চাঁদ দেখায় সন্দেহ কর যখন আসমান পরিষ্কার থাকে?”, আমরা বললামঃ না, তিনি বললেনঃ “নিশ্চয় সেদিন তোমরা তোমাদের রবকে দেখায় সন্দেহ করিবে না, যেমন চাঁদ-সূর্য উভয়কে দেখায় সন্দেহ কর না”। অতঃপর বললেনঃ “একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা করবেঃ প্রত্যেক সম্প্রদায় যেন তার নিকট যায়, যার তারা ইবাদত করত, ক্রুসের অনুসারীরা তাহাদের ক্রুসের সাথে যাবে; মূর্তিপূজকরা তাহাদের মূর্তির সাথে যাবে; এবং প্রত্যেক মাবুদের ইবাদতকারীরা তাহাদের মাবুদের সাথে যাবে। অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার অথবা বদকার লোকেরা অবশিষ্ট থাকিবে এবং কতক কিতাবি, অতঃপর জাহান্নাম হাজির করা হইবে যেন তা মরীচিকা। অতঃপর ইহুদিদের বলা হবেঃ তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর ছেলে উযাইর এর ইবাদত করতাম, অতঃপর তাহাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ আমরা চাই আমাদেরকে পানি পান করান, বলা হবেঃ তোমরা পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে। অতঃপর খৃস্টানদের বলা হবেঃ তোমরা কার ইবাদত করতে? তারা বলবেঃ আমরা আল্লাহর ছেলে ঈসার ইবাদত করতাম, বলা হবেঃ তোমরা মিথ্যা বলেছ, আল্লাহর কোন স্ত্রী ও সন্তান নেই, তোমরা কি চাও? তারা বলবেঃ আমরা চাই আমাদের পানি পান করান। বলা হবেঃ পান কর, ফলে তারা জাহান্নামে ছিটকে পড়বে, অবশেষে আল্লাহকে ইবাদতকারী নেককার ও বদকার অবশিষ্ট থাকিবে, তাহাদেরকে বলা হবেঃ কে তোমাদেরকে আটকে রেখেছে অথচ লোকেরা চলে গেছে? তারা বলবেঃ আমরা তাহাদেরকে (দুনিয়াতে) ত্যাগ করেছি, আজ আমরা তার (আমাদের রবের) বেশী মুখাপেক্ষী, আমরা এক ঘোষণাকারীকে ঘোষণা করতে শুনেছিঃ প্রত্যেক কওম যেন তার সাথেই মিলিত হয়, যার তারা ইবাদত করত, তাই আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি। তিনি বলেনঃ অতঃপর আল্লাহ তাহাদের নিকট আসবেন ভিন্ন সুরুতে, যে সুরুতে প্রথমবার তারা তাকে দেখেনি। তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব। তারা বলবেঃ আপনি আমাদের রব, নবীগণ ব্যতীত তার সাথে কেউ কথা বলবে না। তিনি বলবেনঃ তোমাদের ও তার মাঝে কোন নিদর্শন আছে যা তোমরা চিন? তারা বলবেঃ পায়ের গোছা, ফলে তিনি তার গোছা উন্মুক্ত করবেন, প্রত্যেক মুমিন তাকে সেজদা করিবে, তবে যে লোকদেখানো কিংবা লোকদের শোনানোর জন্য সেজদা করত সে অবশিষ্ট থাকিবে। সে সেজদা করতে চাইবে কিন্তু তার পিঠ উল্টো সোজা খাড়া হয়ে যাবে। অতঃপর পুল আনা হইবে এবং তা জাহান্নামের ওপর রাখা হইবে। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল পুল কি? তিনি বললেনঃ পদস্খলনের স্থান, তার ওপর রহিয়াছে ছো মারা হুক, পেরেক, বিশাল বড়শি যার রহিয়াছে বড় কাঁটা যেরূপ নজদ এলাকায় হয়, যা সাদান বলা হয়। তার ওপর দিয়ে মুমিনগণ চোখের পলক, বিদ্যুৎ, বাতাস, শক্তিশালী ঘোড়া ও পায়দল চলার ন্যায় পার হইবে, কেউ নিরাপদে নাজাত পাবে, কেউ ক্ষতবিক্ষত হয়ে নাজাত পাবে এবং কেউ জাহান্নামে নিক্ষেপ হইবে, অবশেষে যখন তাহাদের সর্বশেষ ব্যক্তি অতিক্রম করিবে তখন তাকে টেনে হিছড়ে পার করা হইবে। আর কোন সত্য বিষয়ে তোমরা আমার নিকট এতটা পীড়াপীড়ি কর না, -তোমাদের নিকট যা স্পষ্ট হয়েছে- মুমিনগণ সেদিন আল্লাহর নিকট যতটা পীড়াপীড়ি করিবে, যখন দেখবে যে তাহাদের ভাইদের মধ্যে শুধু তারাই নাজাত পেয়েছে, তারা বলবেঃ হে আমাদের রব, আমাদের ভাইয়েরা আমাদের সাথে সালাত আদায় করত, আমাদের সাথে সিয়াম পালন করত এবং আমাদের সাথে আমল করত। আল্লাহ তাআলা বলবেনঃ যাও যার অন্তরে তোমরা দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর। আল্লাহ তাহাদের আকৃতিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন। তারা তাহাদের নিকট আসবে, তাহাদের কেউ পা পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে গেছে, কেউ গোছার অর্ধেক পর্যন্ত, তারা যাদেরকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেনঃ যাও, যার অন্তরে তোমরা অর্ধেক দিনার পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, তারা যাকে চিনবে বের করে আনবে। অতঃপর ফিরে আসবে, আল্লাহ বলবেনঃ যাও যার অন্তরে তোমরা অণু পরিমাণ ঈমান দেখ তাকে বের কর, ফলে তারা যাকে চিনবে বের করিবে”। আবু সায়িদ বলেনঃ যদি তোমরা আমাকে সত্য জ্ঞান না কর, তাহলে পড়ঃ
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖۖ وَإِن تَكُ حَسَنَةٗ يُضَٰعِفۡهَا ٤٠ ﴾ (النساء ঃ ٤٠)
“নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। ‎আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ ‎করে দেন এবং তাহাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান ‎প্রদান করেন” (সূরা নিসাঃ ৪০) অতঃপর নবী, ফেরেশতা ও মুমিনগণ সুপারিশ করবেন। আল্লাহ বলবেনঃ আমার সুপারিশ বাকি রহিয়াছে, অতঃপর জাহান্নাম থেকে এক মুষ্টি গ্রহণ করবেন, ফলে এমন লোক বের করবেন যারা জ্বলে গিয়েছে, তাহাদেরকে জান্নাতের দরজার নিকট অবস্থিত নহরে নিক্ষেপ করা হইবে, যাকে বলা হয় সঞ্জীবনী পানি, ফলে তার দু’পাশে গজিয়ে উঠবে যেমন প্রবাহিত পানির উর্বর মাটিতে শস্য গজিয়ে উঠে, যা তোমরা দেখেছ পাথর ও গাছের পাশে, তার থেকে যা সূর্যের দিকে তা সবুজ এবং যা ছায়ার আড়ালে তা সাদা, অতঃপর তারা মুক্তোর ন্যায় বের হইবে। অতঃপর তাহাদের গর্দানে সীলমোহর দয়া হইবে, অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করিবে, জান্নাতিরা বলবেঃ তারা হচ্ছে রহমানের নাজাতপ্রাপ্ত, তাহাদেরকে তিনি জান্নাতে প্রবেশ করিয়েছেন কোন আমলের বিনিময়ে নয়, যা তারা করেছে, বা কোন কল্যাণের বিনিময়ে নয় যা তারা অগ্রে প্রেরণ করেছে। অতঃপর তাহাদেরকে বলা হবেঃ তোমাদের জন্য তোমরা যা দেখেছ তা এবং তার সাথে তার অনুরূপ”। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

হাদীসে কুদসী ৮০ – আবু যুবায়ের থেকে বর্ণিতঃ তিনি জাবের ইব্‌ন আব্দুল্লাহ (রাদিআল্লাহু আঃ)কে শুনেছেন, তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ওরুদ’ (বা জাহান্নামে নামা) সম্পর্কে, তিনি বলেনঃ আমরা কিয়ামতের দিন অমুক অমুক স্থান থেকে হাজির হব, দেখ অর্থাৎ মানুষের ওপরে, তিনি বলেনঃ লোকদেরকে তাহাদের মূর্তিসহ ডাকা হইবে এবং তারা যার ইবাদত করত। প্রথম অতঃপর প্রথম ধারাবাহিকভাবে, অতঃপর আমাদের রব আসবেন এবং বলবেনঃ তোমরা কার অপেক্ষা করছ? তারা বলবেনঃ আমরা আমাদের রবের অপেক্ষা করছি, তিনি বলবেনঃ আমি তোমাদের রব, তারা বলবেঃ যতক্ষণ না আমরা আপনাকে দেখব, ফলে তিনি তাহাদের সামনে জাহির হইবেন সহাস্যে”। রাসূল বলেনঃ “অতঃপর তিনি তাহাদের নিয়ে চলবেন, তারাও তার অনুসরণ করিবে। তাহাদের প্রত্যেক ব্যক্তিকে নূর দেয়া হইবে, কি মুনাফিক কি মুমিন, অতঃপর তারা তার অনুসরণ করিবে, জাহান্নামের পুলে থাকিবে হুক ও বড়শিসমূহ, সেগুলো পাকড়াও করিবে আল্লাহ যাকে চাইবেন তাকে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদের নূর নিভিয়ে দিবেন, মুমিনগণ নাজাত পাবে, প্রথম দলটি নাজাত পাবে তাহাদের চেহারা হইবে চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, শত্তুর হাজার এমন হইবে যাদের কোন হিসাব নেয়া হইবে না। অতঃপর তাহাদের পরবর্তীরা হইবে আসমানের সবচেয়ে উজ্জল তারকার ন্যায়, অতঃপর অনুরূপ, অতঃপর সুপারিশ আরম্ভ হইবে এবং তারা সুপারিশ করিবে, অবশেষে যে لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ বলেছে এবং যার অন্তরে গমের ওজন পরিমাণ কল্যাণ ছিল সেও জাহান্নাম থেকে বের হইবে। তাহাদেরকে জান্নাতের বারান্দায় রাখা হইবে, জান্নাতিরা তাহাদের ওপর পানি ঢালতে থাকিবে, অবশেষে তারা পানি প্রবাহের স্থানে শস্য গজানোর ন্যায় বেড়ে উঠবে, তাহাদের পোড়াদাগ চলে যাবে, অতঃপর প্রার্থনা করা হইবে, এমনকি তাকে দুনিয়া ও দুনিয়ার সমান দশগুণ দেয়া হইবে”। (সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ) হাদিসটি মওকুফ ও সহিহ।

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ মাওকুফ

Comments

One response to “জান্নাত জাহান্নাম কিয়ামত রুহ ও শহীদদের ফযীলত”

Leave a Reply