ক্ববর তৈরি, চুনকাম করা, বসা ও দুআ করা
লাহ্দ ক্ববর তৈরি এবং ক্ববরের উপর ইট স্থাপন প্রসঙ্গে >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২৯. অধ্যায়ঃ লাহ্দ ক্ববর তৈরি এবং ক্ববরের উপর ইট স্থাপন প্রসঙ্গে
৩০. অধ্যায়ঃ ক্ববরে চাদর বিছিয়ে দেয়া সম্পর্কে
৩১. অধ্যায়ঃ ক্ববর সমান করার নির্দেশ প্রসঙ্গে
৩২. অধ্যায়ঃ ক্ববরে চুনকাম করা এবং এর উপর অট্টালিকা নির্মাণ প্রসঙ্গে
৩৩. অধ্যায়ঃ কবরের উপর বসা এবং নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে
৩৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে জানাযার নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে
৩৫. অধ্যায়ঃ ক্ববরে প্রবেশের সময় কি বলবে এবং ক্ববরবাসীর জন্য দুআ প্রসঙ্গে
৩৬. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর মাতার ক্ববর যিয়ারাতের জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে
৩৭. অধ্যায়ঃ আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাজ পরিত্যাগ প্রসঙ্গে
২৯. অধ্যায়ঃ লাহ্দ ক্ববর তৈরি এবং ক্ববরের উপর ইট স্থাপন প্রসঙ্গে
২১৩০. আমির ইবনি সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর মৃত্যুকালীন পীড়ার সময় বলেছেন, তোমরা আমার জন্য একটা ক্ববর ঠিক করে রাখ এবং আমার ক্ববরের উপর এভাবে ইট স্থাপন কর যেভাবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্ববরে করা হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১০৯, ইসলামিক সেন্টার- ২১১২]
৩০. অধ্যায়ঃ ক্ববরে চাদর বিছিয়ে দেয়া সম্পর্কে
২১৩১. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর ক্ববরের লাল বর্ণের একটা চাদর বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ঈমাম মুসলিম বলেন, আবু জাম্রাহ্-এর নাম হচ্ছে নাস্র ইবনি ইমরান ও আবু তায়ইয়্যাহ-এর প্রকৃত নাম ইয়াযীদ ইবনি হুমায়দ উভয়ে সারাখ্স এ ইনতিকাল করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১০, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৩]
৩১. অধ্যায়ঃ কবর সমান করার নির্দেশ প্রসঙ্গে
২১৩২. সুমামাহ্ ইবনি শুফাই [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা একবার রোম সাম্রাজ্যের রূদিস নামক উপদ্বীপে ফুযালাহ্ ইবনি উবায়দ-এর সঙ্গে ছিলাম। আমাদের একজন সঙ্গী মারা গেলে ফুযালাহ্ তাকে কবরস্থ করিতে আদেশ দিলেন। অতঃপর তাহাঁর কবরকে সমান করে তৈরি করা হল। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে শুনেছি, তিনি [সাঃআঃ] কবরকে সমতল করে তৈরি করিতে আদেশ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১১, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৪]
২১৩৩. আবুল হাইয়্যাজ আল আসাদী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আলী [রাদি.] বলেন, আমি কি তোমাকে এমনভাবে পাঠাব না, যে কাজে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে পাঠিয়েছিলেন? তা হচ্ছে কোন [জীবের] প্রতিকৃতি বা ছবি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে এবং কোন উচূ কবর দেখলে তা ভেঙ্গে দিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১২, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৫]
২১৩৪. হাবীব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে বর্ণিত। তিনি বলেন, মূর্তি বিলুপ্ত এবং ছবি ধংস করে দিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৩, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৬]
৩২. অধ্যায়ঃ কবরে চুনকাম করা এবং এর উপর অট্টালিকা নির্মাণ প্রসঙ্গে
২১৩৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবর পাকা করিতে, কবরের উপর বসতে ও কবরের উপর গৃহ নির্মাণ করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৪, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৭]
২১৩৬. আবুয্ যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি জানিয়েছেন যে, তিনি জাবির ইবনি আবদুল্লাহকে বলিতে শুনেছেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি ….. উপরের হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৮]
২১৩৭. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কবর পাকা করিতে নিষেধ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৬, ইসলামিক সেন্টার- ২১১৯]
৩৩. অধ্যায়ঃ কবরের উপর বসা এবং নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে
২১৩৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন তোমাদের কারো জলন্ত আঙ্গারের উপর বসে থাকা এবং তাতে তার কাপর পুড়ে গিয়ে শরীরের চামড়া দগ্ধীভুত হওয়া কবরের উপর বসার চেয়ে উত্তম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৭, ইসলামিক সেন্টার- ২১২০]
২১৩৯. কুতায়বাহ্ ইবনি সাঈদ, আমর আন্ নাক্বিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]…. উভয়েই সুহায়ল [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সানাদে অনুরুপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৮, ইসলামিক সেন্টার- ২১২১]
২১৪০. আবু মারসাদ আল গানাবি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কখনো কবরের উপর বসবে না এবং কবরের দিকে মুখ করে সালাতও আদায় করিবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১১৯, ইসলামিক সেন্টার- ২১২২]
২১৪১. আবু মারসাদ আল গানবী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি: তোমরা কবরের দিকে সালাত আদায় করো না এবং কবরের উপর বসো না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২০, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৩]
৩৪. অধ্যায়ঃ মসজিদে জানাযার নামাজ আদায় করা প্রসঙ্গে
২১৪২. আব্বাস ইবনি আবদুল্লাহ ইবনিয্ যুবায়র [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আয়েশাহ [রাদি.] সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস-এর লাশ মসজিদে নিয়ে আসতে ও মসজিদের ভিতরে জানাযার নামাজ আদায় করিতে নির্দেশ দিলেন। উপস্থিত লোকেরা তাহাঁর আদেশ পালনে অসম্মতি প্রকাশ করিল। তিনি বলিলেন, লোকেরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেল! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সুহায়ল ইবনি বায়যা-এর জানাযার নামাজ মসজিদেই আদায় করেছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২১, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৪]
২১৪৩. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
যখন সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] ইন্তিকাল করিলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রীগণ তাহাঁর লাশ মসজিদে নিয়ে আসার জন্য বলে পাঠালেন যাতে তারাও তার জানাযাহ আদায় করিতে পারেন। উপস্থিত লোকেরা তাই করলো। তাঁকে উম্মাহাতুল মুমিনীনদের ঘরের সামনে রাখা হল এবং তারা তার জানাযার নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তাকে বাবুল জানায়িয [জানাযাহ বের করার দরজা] দিয়ে যা মাক্বাইদের দিকে ছিল, বের করা হল। লোকেরা এ খবর জানতে পেয়ে বলিল, কি ব্যাপার! জানাযাহ্ মসজিদে ঢুকানো হয়েছে? আয়িশা [রাদি.]-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বলিলেন, লোকেরা কেন এত শীঘ্র সমালোচনায় প্রবৃত্ত হল, যে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নাই? মসজিদে জানাযাহ নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে লোকেরা সমালোচনা করিল, অথচ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সুহায়ল ইবনি বায়যা-এর সালতে জানাযাহ্ মসজিদের ভিতরেই আদায় করিয়াছেন। ঈমাম মুসলিম বলেন, সুহায়ল বিন ওয়াদা বায়যা-এর পুত্র। তার মায়ের নাম বায়যা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২২, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৫]
২১৪৪. আবু সালামাহ্ ইবনি আবদুর রহমান [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
যখন সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস ইন্তিকাল করিলেন আয়িশা [রাদি.] বলিলেন, তোমরা তার লাশ নিয়ে মসজিদে প্রবেশ কর। আমি তাহাঁর জানাযাহ পড়ব। তখন লোকেরা অস্বীকৃতি জানালে তিনি বলিলেন, আল্লাহর কসম! রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বায়যা-এর দু ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের [সাহ্ল-এর] জানাযার নামাজ মসজিদেই আদায় করিয়াছেন ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৩, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৬]
৩৫. অধ্যায়ঃ কবরে প্রবেশের সময় কি বলবে এবং কবরবাসীর জন্য দুআ প্রসঙ্গে
২১৪৫. আয়েশাহ [রা্যিঃ] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অভ্যাস ছিল, যেদিন তার কাছে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর রাত্রি যাপনের পালা আসত, তিনি শেষ রাত্রে উঠে [জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে] চলে যেতেন এবং এভাবে দুআ করিতেন :
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ ” . وَلَمْ يُقِمْ قُتَيْبَةُ قَوْلَهُ ” وَأَتَاكُمْ
“আস্সালা-মু আলায়কুম দা-রা ক্বাওমিন্ মুমিনীনা ওয়া আতা-কুম মা-তূআদূনা গদান্ মুআজ্জালূনা ওয়া ইন্না- ইন্শা-আল্ল-হু লা-হিকূন, আল্ল-হুম্মাগফিরলি আহ্লি বাকীইল গরক্বাদ”
[অর্থাৎ- তোমাদের উপর সালাম ও শান্তি বর্ষিত হোক, ওহে ঈমানদার কবরবাসীগণ! তোমাদের কাছে পরকালে নির্ধারিত যেসব বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তা তোমাদের নিকট এসে গেছে। আল্লাহর ইচ্ছায় আমারাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ্! বাক্বী গারক্বাদ কবরবাসীদেরকে ক্ষমা করে দাও।]।
কিন্তু কুতায়বাহ্-এর বর্ণনায় “তোমাদেরকে দেয়া হয়েছে” কথাটি নাই।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৪, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৭]
২১৪৬. মুহাম্মাদ ইবনি ক্বায়স [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছি- তিনি বলেন, আমি কি তোমাদেরকে নবী [সাঃআঃ] থেকে ও আমার তরফ থেকে হাদীস বর্ণনা করে শোনাব না? আমরা বললাম, অবশ্যই! ঈমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হাজ্জাজ আল আওয়ার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে শুনেছেন ….. জনৈক কুরায়শী আবদুল্লাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে মুহাম্মাদ ইবনি ক্বায়স ইবনি মাখরামাহ্ ইবনিল মুত্ত্বালিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] একদিন আমাকে বলেন, আমি কি তোমাদেরকে আমার পক্ষ থেকে ও আমার আম্মাজান থেকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাব? রাবী আবদুল্লাহ বলেন, আমরা ধারণা করলাম তিনি তাহাঁর জননী মাকে বুঝাচ্ছেন। এরপর তিনি বলিলেন, আয়িশা [রাদি.] বলেছেন, আমি কি তোমাদের আমার পক্ষ থেকে ও রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] থেকে হাদীস বর্ণনা করে শুনাব? আমরা বললাম, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি বলেন, যখন ঐ রাত আসত যে রাতে নবী [সাঃআঃ] আমার কাছে থাকতেন। তিনি এসে তাহাঁর চাদর রেখে দিতেন, জুতা খুলে পায়ের কাছে রাখতেন। পরে নিজ তহবন্দের [লুঙ্গি] একদিক বিছানায় বিছিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়তেন। অতঃপর মাত্র কিছু সময় যতক্ষণে তিনি ধারনা করিতেন যে, আমি ঘুমিয়ে পরেছি, বিশ্রাম গ্রহন করিতেন। অতঃপর উঠে ধীরে ধীরে নিজ চাদর নিতেন এবং জুতা পরিধান করিতেন। পরে আস্তে আস্তে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়তেন। অতঃপর কিছু সময় নিজেকে আত্মগোপন করে রাখতেন। একদিন আমি আমার জামা মাথার উপর স্থাপন করে তা দিয়ে মাথাটা ঢেকে লুঙ্গি পরিধান করে, অতঃপর তাহাঁর পেছনে রওনা হলাম। যেতে যেতে তিনি বাক্বীতে{৪৩} [কবরস্থানে] পৌঁছলেন। তথায় তিনি দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর তিনি তিনবার হাত উঠিয়ে দুআ করিলেন। এবার গৃহের দিকে ফিরে রওয়ানা করলে আমিও রওয়ানা হলাম। তিনি [সাঃআঃ] দ্রুত রওয়ানা করলে আমিও দ্রুত চলতে লাগলাম। তাঁকে আরও দ্রুত পদক্ষেপে এগিয়ে আসতে দেখে আমি আরও দ্রুত চলতে লাগলাম। এরপর আমরা দৌড়াতে আরম্ভ করলে আমি দৌড়ে তাহাঁর আগেই ঘরে ঢুকে পড়লাম এবং বিলম্ব না করেই শুয়ে পড়লাম। একটু পরে তিনি গৃহে প্রবেশ করে আমাকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আয়েশাহ! তোমার কি হল? কেন হাঁপিয়ে পড়েছ? আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি জবাব দিলাম না, তেমন কিছু না। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, হয় তুমি নিজে আমাকে ব্যাপারটা খুলে বলবে নতুবা মহান আল্লাহ আমাকে তা জানিয়ে দিবেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আপনার ওপর আমার মাতা-পিতা কুরবান হোক! এরপর তাঁকে ব্যাপারটা জানিয়ে দিলাম। তিনি বলিলেন, তুমিই সেই কাল ছায়াটি যা আমি আমার সামনে দেখছিলাম। আমি বললাম: জি হ্যাঁ। তিনি [সাঃআঃ] আমার বুকে একটা থাপ্পড় মারলেন যাতে আমি ব্যাথা পেলাম। অতঃপর বলিলেন, তুমি কি ধারনা করেছ আল্লাহ ও তাহাঁর রসূল তোমার ওপর অবিচার করবেন? আয়িশা [রাদি.] বলেন, যখনি মানুষ কোন কিছু গোপন করে, আল্লাহ তা অবশ্যই জানেন। হ্যাঁ অবশ্যই জানেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, যখন তুমি আমাকে দেখেছ এ সময় আমার কাছে জিব্রীল [আঃ] এসেছিলেন এবং আমাকে ডাকছিলেন। অবশ্য তা তোমার কাছে গোপন রাখা হয়েছে। আর আমিও তা গোপন রাখা বাঞ্ছনীয় মনে করে তোমার নিকট গোপন রেখেছি। যেহেতু তুমি তোমার কাপড় রেখে দিয়েছ, তাই তোমার কাছে তিনি আসেননি। আমি ভেবেছিলাম তুমি ঘুমিয়ে পরেছ। তাই তোমাকে জাগানো সমীচীন মনে করিনি। আর আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে, তুমি ভীত বিহ্বল হয়ে পড়বে। এরপর জিব্রীল [আঃ] বলিলেন, আপনার প্রভু আপনার প্রতি আদেশ করিয়াছেন, বাক্বীর কবরবাসীদের নিকট গিয়ে তাদের জন্য দুআ ইসতিগফার করিতে। আয়িশা [রাদি.] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি তাদের জন্য কীভাবে দুআ করব? তিনি বললেনঃতুমি বল,
السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ
আস্সালা-মু আলা- আহ্লিদ দিয়া-র মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুস্তাকদি মিনা মিন্না ওয়াল মুস্তাখেরিনা ওয়া ইন্না- ইন্শা-আল্ল-হু বিকুম লালাহিকনা
“এ বাসস্থানের অধিবাসী ঈমানদার মুসলিমদের প্রতি সালাম বর্ষিত হোক। আমাদের মধ্যে থেকে যারা আগে বিদায় গ্রহন করেছে আর যারা পিছনে বিদায় নিয়েছে সবার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৮]
{৪৩} বাক্বী হচ্ছে মদীনার নিকটবর্তী একটি কবরস্থান যেখানে অনেক সহাবীর কবর রয়েছে। রয়েছে অনেক কাফিরের ও সাধারন মুসলিমের কবর। আমাদের দেশে এটি জান্নাতুল বাক্বী নামে পরিচিত। কিন্তু আসলে এটি একটি ভুল কারণ, এটির আসল নাম হচ্ছে বাক্বীউল গারক্বাদ। জান্নাতুল বাক্বী বলা ঠিক নয়।
২১৪৭. সুলায়মান ইবনি বুরায়দাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা {বুরায়দাহ্ ইবনি হুসায়ব ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]} হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, তাঁরা যখন কবরস্থানে যেতেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাদেরকে দুআ শিখিয়ে দিতেন। অতঃপর তাদের মধ্যে কোন ব্যাক্তি আবু বকর-এর বর্ণনানুযায়ী বলত
السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ
“আস্সালা-মু আলা- আহ্লিদ দিয়া-র” [অর্থাৎ- কবরবাসীদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক।]।
আর যুহায়র-এর বর্ণনায় আছে :
السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَلَاحِقُونَ أَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمْ الْعَافِيَةَ
“আস্সালা-মু আলায়কুম আহ্লাদ্ দিয়া-রি মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না- ইন্শা-আল্ল-হু লালা-হিকূনা আস্আলুল্ল-হা লানা- ওয়ালাকুমুল আ-ফিয়াহ্”
[অর্থাৎ- হে কবরবাসী ঈমানদার মুসলিমগণ! তোমাদের প্রতি সালাম। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমি আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট নিরাপত্তার আবেদন জানাচ্ছি।]।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৬, ইসলামিক সেন্টার- ২১২৯]
৩৬. অধ্যায়ঃ নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর মাতার কবর যিয়ারাত জন্য আল্লাহর নিকট অনুমতি চাওয়া সম্পর্কে
২১৪৮. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন: আমি আমার প্রভুর নিকট আমার মায়ের জন্য ইস্তিগফার [ক্ষমা প্রার্থনা] করার অনুমতি চাইলে আমার প্রভু আমাকে অনুমতি দান করেননি। আর তাহাঁর কবর যিয়ারাত করার অনুমতি চাইলে তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৭, ইসলামিক সেন্টার- ২১৩০]
২১৪৯. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর মায়ের কবর যিয়ারত করিতে গেলেন। তিনি [সাঃআঃ] কাঁদলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাঁদালেন। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন আমি আমার প্রভুর নিকট মায়ের জন্য ইসতিগফারের অনুমতি চাইলাম। কিন্তু আমাকে অনুমতি দেয়া হল না। আমি তাহাঁর কবর যিয়ারাত করার জন্য অনুমতি চাইলে আমাকে অনুমতি দেয়া হল। অতএব তোমরা কবর যিয়ারত কর। কেননা কবর যিয়ারত তোমাদেরকে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৮, ইসলামিক সেন্টার- ২১৩১]
২১৫০. ইবনি বুয়ায়দাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি {বুরায়দাহ্ ইবনি হুসায়ব ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.]} বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারাত করিতে নিষেধ করতাম। [এখন অনুমুতি দিচ্ছি] তোমরা কবর যিয়ারাত করিতে পার। আমি ইতোপূর্বে তিনদিনের বেশি কুরবানী গোশ্ত রাখার ব্যাপারে তোমাদেরকে নিষেধ করতাম। এখন তোমাদের যতদিন ইচ্ছা রাখতে পার। এছাড়া আমি তোমাদেরকে পানির পাত্রে নবীয তৈরি করিতে নিষেধ করেছিলাম, এখন তোমরা যে কোন পানির পাত্রে তা তৈরি করিতে পার। তবে নেশার বস্তু [মাদকদ্রব্য] পান করো না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১২৯, ইসলামিক সেন্টার- ২১৩২]
২১৫১. আবদুল্লাহ ইবনি বুরায়দাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাহাঁর পিতা থেকে নবী [সাঃআঃ] সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
তারা সবাই এ হাদীস আবু সিনান-এর বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থে বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৩০, ইসলামিক সেন্টার- ২১৩৩]
৩৭. অধ্যায়ঃ আত্মহত্যাকারীর জানাযার নামাজ পরিত্যাগ প্রসঙ্গে
২১৫২. জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ]-এর নিকট জনৈক ব্যাক্তির লাশ উপস্থিত করা হল। সে চেপ্টা তীরের আঘাতে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তার জানাযার নামাজ আদায় করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৩১, ইসলামিক সেন্টার- ২১৩৪]
Leave a Reply