কিয়ামতের বড় আলামত এবং দজ্জালের ফিতনা

কিয়ামতের বড় আলামত এবং দজ্জালের ফিতনা

কিয়ামতের বড় আলামত এবং দজ্জালের ফিতনা >> হাদীসে কুদসী এর মুল সুচিপত্র দেখুন

কিয়ামতের বড় আলামত এবং দজ্জালের ফিতনা

কিয়ামতের বড় আলামত
দজ্জালের ফিতনা
আল্লাহর প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযীলত

৯৭. অনুচ্ছেদঃ কিয়ামতের বড় আলামত

হাদীসে কুদসী ১৬১ – আবু যর (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেনঃ আমি একটি গাধার ওপর নবী (সাঃআঃ)ের সাথে ছিলাম। তখন তার উপর একটি পাড়যুক্ত চাদর ছিল। তিনি বলেনঃ এটা ছিল সূর্যাস্তের সময়, তিনি আমাকে বলেনঃ “হে আবু যর তুমি জান এটা কোথায় অস্ত যায়?” তিনি বলেনঃ আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তার রাসূল ভাল জানেন। তিনি বলেনঃ সূর্যাস্ত যায় একটি কর্দমাক্ত ঝর্ণায় , সে চলতে থাকে অবশেষে আরশের নিচে তার রবের জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, যখন বের হওয়ার সময় আল্লাহ তাকে অনুমতি দেন, ফলে সে বের হয় ও উদিত হয়। তিনি যখন তাকে যেখানে অস্ত গিয়েছে সেখান থেকে উদিত করার ইচ্ছা করবেন আটকে দিবেন, সে বলবেঃ হে আমার রব আমার পথ তো দীর্ঘ, আল্লাহ বলবেনঃ যেখান থেকে ডুবেছে সেখান থেকেই উদিত হও, এটাই সে সময় যখন ব্যক্তিকে তার ঈমান উপকার করিবে না” । (মুসনাদে আহমদ)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৯৮. অনুচ্ছেদঃ দাজ্জালের ফিতনা

হাদীসে কুদসী ১৬২ – নাওয়াস ইব্‌ন সামআন থেকে বর্ণিতঃ কোন এক সকালে রসূলুল্লাহ (সাঃআঃ) দাজ্জালের উল্লেখ করিলেন, তাতে তিনি আওয়াজ নিচু ও উঁচু করছিলেন, এমনকি আমরা তাকে (দাজ্জালকে) প্রতিবেশীর খেজুর বাগানে ধারণা করেছিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ “আমি তোমাদের ওপর দাজ্জাল ব্যতীত অন্য কিছুর আশঙ্কা করছি, যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে থাকি, তাহলে আমিই তাকে মোকাবিলা করব তোমাদের পরিবর্তে। যদি সে বের হয় আর আমি তোমাদের মাঝে না থাকি, তাহলে প্রত্যেকে তার নিজের জিম্মাদার, আর আমার অবর্তমানে আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমের জিম্মাদার। দাজ্জাল কোঁকড়ানো চুল বিশিষ্ট যুবক, তার চোখ ওপরে উঠানো, আমি তার উদাহরণ পেশ করছি আব্দুল উজ্জা ইব্‌ন কুতনকে। তোমাদের থেকে যে তাকে পাবে সে যেন তার ওপর সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে, নিশ্চয় সে বের হইবে শাম ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থান থেকে, সে ডানে ও বামে ধ্বংসযজ্ঞ চালাবে, হে আল্লাহর বান্দাগণ তোমরা দৃঢ় থাক”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যমীনে তার অবস্থান কি পরিমাণ হইবে? তিনি বললেনঃ “চল্লিশ দিন, একদিন এক বছর সমান, অতঃপর একদিন এক মাসের সমান, অতঃপর একদিন এক জুমার সমান, অতঃপর তার অন্যান্য দিনগুলো তোমাদের দিনের ন্যায়”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, যে দিনটি এক বছরের ন্যায় সেখানে কি একদিনের সালাত যথেষ্ট? তিনি বললেনঃ “না, তোমরা তার পরিমাণ করিবে”। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল যমীনে তার গতি কিরূপ হইবে? তিনি বললেনঃ “মেঘের মত, যাকে বাতাস হাঁকিয়ে নিয়ে যায়, সে এক কওমের নিকট আসবে তাহাদেরকে আহ্বান করিবে, ফলে তারা তার ওপর ঈমান আনবে ও তার ডাকে সাড়া দিবে, অতঃপর সে আসমানকে নির্দেশ করিবে আসমান বৃষ্টিপাত করিবে, যমীনকে নির্দেশ করিবে যমীন শস্য জন্মাবে, এবং তাহাদের জন্তুগুলো সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরবে উঁচু চুটি, দুধে পরিপূর্ণ ও দীর্ঘ দেহ নিয়ে। অতঃপর এক কওমের নিকট আসবে তাহাদেরকে দাওয়াত দিবে, কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করিবে, সে তাহাদের থেকে চলে যাবে ফলে তারা দুর্ভিক্ষে পতিত হইবে তাহাদের হাতে তাহাদের সম্পদের কিছুই থাকিবে না। সে ধ্বংস স্তূপের পাশ দিয়ে যাবে অতঃপর তাকে বলবেঃ তোমার সম্পদ তুমি বের কর, ফলে তার সম্পদ তার অনুগামী হইবে মক্ষী রাণীর ন্যায়, অতঃপর সে পূর্ণ এক যুবককে ডাকবে ও তলোয়ারের আঘাতে দু’টুকরো করে ঢিলার দূরত্ব পরিমাণ দুই ধারে নিক্ষেপ করিবে, অতঃপর তাকে ডাকবে সে এগিয়ে আসবে ও হাসিতে তার চেহারা উজ্জ্বল থাকিবে। দাজ্জাল এরূপ করতে থাকিবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ মাসিহ ইব্‌ন মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন, তিনি দামেস্কের পূর্ব দিকে সাদা মিনারের কাছে অবতরণ করবেন দু’টি কাপড় পরিহিত অবস্থায় ফেরেশতাহাদের ডানার ওপর তার দু’হাত রেখে। যখন তিনি মাথা নিচু করবেন (বৃষ্টির ন্যায়) পানি টপকাবে, যখন তিনি মাথা উঁচু করবেন মুক্তোর ন্যায় শ্বেত পাথর পড়বে, (অর্থাৎ পরিষ্কার পানি)। কোন কাফের এর পক্ষে সম্ভব হইবে না তার শ্বাসের গন্ধ পাবে আর বেচে থাকিবে, তার শ্বাস সেখানে যাবে যেখানে তার দৃষ্টি পৌঁছবে। তিনি তাকে সন্ধান করবেন অবশেষে লুদ্দ’ নামক দরজার নিকট তাকে পাবেন, অতঃপর তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম এক কওমের নিকট আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ দাজ্জাল থেকে নিরাপদ রেখেছেন, তিনি তাহাদের চেহারায় হাত ভুলিয়ে দিবেন এবং জান্নাতে তাহাদের মর্তবা সম্পর্কে তাহাদেরকে বলবেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তার নিকট ওহি করবেন, আমি আমার এমন বান্দাদের বের করেছি যাদের সাথে যুদ্ধ করার সাধ্য কারো নেই, অতএব তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে তুরে আশ্রয় গ্রহণ কর, আল্লাহ ইয়াজুজ ও মাজুজকে প্রেরণ করবেন, তারা প্রত্যেক উঁচু স্থান থেকে ছুটে আসবে। তাহাদের প্রথমাংশ পানিতে পূর্ণ নদীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করিবে, তারা তার পানি পান করে ফেলবে। তাহাদের শেষাংশ অতিক্রম করিবে ও বলবেঃ এখানে কখনো পানি ছিল। আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ তুরে আটকা পড়বেন, অবশেষে গরুর একটি মাথা তাহাদের নিকট বর্তমানে তোমাদের একশো দিনার থেকে উত্তম হইবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট মনোনিবেশ করবেন, ফলে আল্লাহ তাহাদের (ইয়াজুজ-মাজুজের) গ্রীবায় গুটির রোগ সৃষ্টি করবেন, ফলে তারা সবাই এক ব্যক্তির মৃতের ন্যায় মৃত পড়ে থাকিবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ যমীনে অবতরণ করবেন, তারা যমীনে এক বিঘত জায়গা পাবে না যেখানে তাহাদের মৃত দেহ ও লাশ নাই। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দোআ করবেন, ফলে তিনি উটের গর্দানের ন্যায় পাখি প্রেরণ করবেন, তারা এদেরকে বহন করে আল্লাহর যেখানে ইচ্ছা নিক্ষেপ করিবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, কাঁচা-পাকা কোন ঘর অবশিষ্ট থাকিবে না যেখানে সে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করিবে না, যমীন ধৌত করে অবশেষে আয়নার মত করে দিবে। অতঃপর যমীনকে বলা হবেঃ তোমার ফল তুমি জন্মাও, তোমার বরকত তুমি ফেরৎ দাও, ফলে সেদিন এক দল লোক একটি আনার ভক্ষণ করিবে এবং তার ছিলকা দ্বারা ছায়া গ্রহণ করিবে, দুধে বরকত দেয়া হইবে ফলে এক উটের দুধ কয়েক গ্রুপ মানুষের জন্য যথেষ্ট হইবে। এক গরুর দুগ্ধ এক গ্রামের জন্য যথেষ্ট হইবে। এক বকরির দুগ্ধ এক পরিবারের জন্য যথেষ্ট হইবে। তারা এভাবেই জীবন যাপন করিবে, এমতাবস্থায় আল্লাহ পবিত্র বাতাস প্রবাহিত করবেন, যা তাহাদের বগলের নিচ স্পর্শ করিবে, ফলে সে প্রত্যেক মুমিন ও মুসলিমের রূহ কব্জা করিবে, তখন কেবল সবচেয়ে খারাপ লোকগুলো অবশিষ্ট থাকিবে, তারা গাধার ন্যায় (সবার সামনে) যৌনাচারে লিপ্ত হইবে, অতঃপর তাহাদের ওপরই কিয়ামত কায়েম হইবে”। (সহিহ মুসলিম)

হাদিসের মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

৯৯. অনুচ্ছেদঃ আল্লাহর প্রশংসামূলক কতক বাক্যের ফযিলত

হাদীসে কুদসী ১৬৩ – আনাস (রাদিআল্লাহু আঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি নবী (সাঃআঃ)ের নিকট সালাত অবস্থায় হাজির হয়ে বলিলঃ الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ، নবী (সাঃআঃ) সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে অমুক বাক্য পাঠকারী? সকলে চুপ রইল। তিনি বলেনঃ তিনি তিনবার তা বলিলেন, অতঃপর এক ব্যক্তি বলিলঃ আমি তা বলেছি, আমি ভাল ব্যতীত অন্য কিছু উদ্দেশ্য করিনি। তিনি বলেনঃ নবী (সাঃআঃ) বললেনঃ “বারোজন ফেরেশতা তাকে গ্রহণ করার জন্য দ্রুত ছুটে এসেছে, তারা বুঝতে পারছিল না কিভাবে তা লিখবে, অবশেষে তাহাদের রবের নিকট জিজ্ঞাসা করে, অতঃপর তিনি বলেনঃ আমার বান্দা যেরূপ বলেছে সেরূপ লিখ”। (মুসনাদে আহমদ)

হাদীসে কুদসী মান নির্ণয়ঃসহিহ হাদিস

Comments

Leave a Reply