কবীরা গুনাহ বা মুখতাসার আল-কাবায়ের – ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহবী
কবীরা গুনাহ
কবীরা গুনাহ বা মুখতাসার আল-কাবায়ের
ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহবী
ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী রহ.
অনুবাদ: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
মৃত্যুঃ ৪০০ হিজরি
কবীরা গুনাহ: ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহবী সংকলিত প্রসিদ্ধ গ্রন্থ মুখতাসার আল-কাবায়ের, যা বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে নাম দেওয়া হয়েছে কবীরা গুনাহ। এ বইটি মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বড় বড় গুনাহ চিহ্নিত করা ও সেগুলো থেকে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে এ বইটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ-নির্দেশক।
সূচীপত্র
ভূমিকা
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য। আমরা শুধু তাঁরই প্রশংসা করি এবং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাই। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দিবেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারবে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না এবং আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাঃআঃ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে ঈামনদারগণ! তোমরা যথাযথভাবে আল্লাকে ভয় কর আর সাবধান, মুসলিম না হয়ে মারা যেও না।” [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০২]
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী, আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচনা করে থাক এবং আত্মীয়- জ্ঞাতীদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ১]
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক সত্য কথা বল, তিনি তোমাদের আমল সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।” [সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১]
নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আর্দশ হলো রাসূলের আদর্শ। আর সর্ব নিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া ও নব প্রবর্তিত বিষয় তথা বিদ‘আত, আর প্রতিটি বিদ‘আতই হলো গোমরাহী। আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যে সকল বড় গুনাহ সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সে সব বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকতে পার, তবে আমরা তোমাদের ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৩১]
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা যারা কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকবে তাদেরকে দয়া ও অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। কারণ, সগীরা গুনাহ বিভিন্ন নেক আমল যেমন, সালাত, সাওম, জুমু‘আ, রমযান ইত্যাদির মাধ্যমে মাফ হয়ে যাবে।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“পাচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমু‘আ থেকে অন্য জুমু‘আ এবং এক রমযান থেকে অন্য রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহগুলোকে ক্ষমা করিয়ে দেয়, যদি বড় গুনাহ থেকে বেচে থাকা যায়।”[1]
উল্লিখিত হাদীসের দ্বারা স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকা অতীব জরুরি। যদিও জ্ঞানীরা বলেন, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোনো কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। আর একই গুনাহ বার বার করলে তা সগীরা থাকে না।
অতএব, কবীরা গুনাহ থেকে বেচে থাকতে হলে তা সম্পর্কে আমাদের সঠিক ধারণা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামন রা. ‘আনহু বলেন, লোকেরা রাসূল সাঃআঃকে ভালো ভালো বিষয়গুলো জিজ্ঞাসা করত এবং আমি খারাপ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এজন্য যে, যাতে আমাকে খারাপ বিষয়গুলো স্পর্শ করতে না পারে। কবি বলেন,
“আমি খারাপ সম্পর্কে জেনেছি তা করার উদ্দেশে নয়, বরং খারাপি থেকে রক্ষা পেতে। কারণ, যে লোক মন্দ সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না সে তাতে পতিত হয়।”
বিষয়টাকে অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ মনে করে যে সব কবীরা গুনাহ হাফেয ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী তার প্রসিদ্ধ কিতাব “আল-কাবায়ের” এ উল্লেখ করেছেন সেগুলোসহ আরো কিছু কবীরা গুনাহের আলোচনা করা হয়েছে।
এসব কবীরা গুনাহ সম্পর্কে জানা থাকলে হয়ত এ গুনাহ থেকে বেচে থাকাও সম্ভব হবে।
এখানে প্রতিটি কবীরা গুনাহের আলোচনার সাথে একটি বা দু’টি করে কুরআন ও হাদীসের বিশুদ্ধ প্রমাণ উল্লেখ করা হয়েছে এবং প্রয়োজন অনুসারে কোনো কোনো স্থানে বিষয়টির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আল্লাহর নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এবং মহৎ গুণাবলীর মাধ্যমে র্প্রাথনা করছি যে, এই রিসালার মধ্যে যে বিষয়গুলো রয়েছে তার দ্বারা আমাকে এবং সমস্ত মুসলিমকে প্রতিদান দিবেন ঐ দিন যে দিন কোনো ধন সম্পদ ও সন্তান কারো উপকারে আসবে না। একমাত্র ঐ ব্যক্তি উপকৃত হবে যে আল্লাহর নিকট সরল মন নিয়ে উপস্থিত হবেন। আর এই আমল সহ অন্য সমস্ত আমল একমাত্র আল্লাহর জন্য। তিনি তার সন্তুষ্টি অর্জন ও কুরআন, হাদীসের অনুসৃত পথ নির্দেশনা অনুসলরণ করার তাওফীক দিন।
কবীরা গুনাহ কী?
অনেকেই মনে করেন, কবীরা গুনাহ মাত্র সাতটি যার বর্ণনা একটি হাদীসে এসেছে। মূলতঃ কথাটি ঠিক নয়। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে, উল্লিখিত সাতটি গুনাহ কবীরা গুনাহের অর্ন্তভুক্ত। এ কথা উল্লেখ করা হয় নি যে, কেবল এ সাতটি গুনাহই কবীরা গুনাহ, আর কোনো কবীরা গুনাহ নেই।
একারণেই আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. ‘আনহুমা বলেন, কবীরা গুনাহ সাত হতে সত্তর পর্যন্ত (তাবারী বিশুদ্ধ সনদে)।
ইমাম শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, উক্ত হাদীসে কবীরা গুনাহের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা করা হয় নি।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যা রহ. বলেন, কবীরা গুনাহ হলো: যে সব গুনাহের কারণে দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক শাস্তির বিধান আছে এবং আখিরাতে শাস্তির ধমক দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, যে সব গুনাহের কারণে কুরআন ও হাদীসে ঈমান চলে যাওয়ার হুমকি বা অভিশাপ ইত্যাদি এসেছে তাকেও কবীরা গুনাহ বলে।
উলামায়ে কিরাম বলেন, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার ফলে কোনো কবীরা গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না আবার একই সগীরা গুনাহ বার বার কারার কারণে তা সগীরা (ছোট) গুনাহ থাকে না।
উলামায়ে কিরাম কবীরা গুনাহের সংখ্যা সত্তরটির অধিক উল্লেখ করেছেন। যা নিচে তুলে ধরা হলো:
১ নং কবীরা গুনাহঃ আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা’
শির্ক দুই প্রকার:
১. শির্কে আকবার, আল্লাহর সাথে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর ইবাদত করা। অথবা যে কোনো প্রকারের ইবাদতকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর জন্য নিবেদন করা যেমন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে প্রাণী যবেহ করা ইত্যাদি।
যদি কোনো ব্যক্তি ইবাদতের কিছু অংশে গাইরুল্লাহকে শরীক করার মুহূর্তে আল্লাহর ইবাদত করে তবুও তা শির্ক।
দলীল: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা তার সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করবেন না। তবে শির্ক ছাড়া অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮]
২. শির্কে আসগার বা ছোট শির্ক: রিয়া অর্থাৎ লোক দেখানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আমল করা ইত্যাদি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অতএব, দুর্ভোগ সে সব মুসল্লীর যারা তাদের সালাত সম্পর্কে বে-খবর যারা তা লোক দেখানোর জন্য করে।” [সুরা আল-মা‘উন, আয়াত: ৪-৬]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমি অংশিদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোনো কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে, আমি ঐ ব্যক্তিকে তার শির্কে ছেড়ে দেই।”[2]
২ নং কবীরা গুনাহঃ ‘মানুষ হত্যা করা’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের ইবাদত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন সঙ্গত কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যারা এসব কাজ করে তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে। কিয়ামত দিবসে তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং লাঞ্চিত অবস্থায় সেথায় তারা চিরকাল বসবাস করবে। কিন্তু তারা নয়, যারা তাওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে।” [সুরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৬-৭০]
উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হত্যা করতে নিষেধ করেছেন। আর যারা হত্যা করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। সুতরাং শরী‘আত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মানুষ হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
৩ নং কবীরা গুনাহঃ ‘যাদু’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কিন্তু শয়তানেরা কুফুরী করে মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত।” [সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১০২]
আবু হুরায়রা রা. ‘আনহু থেকে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় থেকে বেচে থাকবে সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন: ইয়া রসূলুল্লাহ! ঐ ধ্বংসাত্মাক বিষয়গুলো কী? তিনি জবাবে বলেন, (১) আল্লাহর সাথে শরীক করা, (২) যাদু করা, (৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যা আল্লাহ তা‘আলা হারাম করে দিয়েছেন, (৪) সুদ খাওয়া, (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা, (৬) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা, (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলাকে অপবাদ দেওয়া।”[3]
৪ নং কবীরা গুনাহঃ (সালাত ত্যাগ করা)
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে বলেন,
“তাদের পর আসলো (অপদার্থ) বংশধর। তারা সালাত নষ্ট করল ও লালসার বশবর্তী হলো। সুতরাং তারা অচিরেই কু-কর্মের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে; কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও নেক কাজ করেছে।” [সুরা মারইয়াম, আয়াত: ৫৯-৬০]
হাদীসে বর্ণিত রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কোনো মুমিন ব্যক্তি এবং শির্ক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।”[4]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আমাদের ও তাদের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত, যে তা পরিত্যাগ করল সে কাফের হয়ে গেল।”[5]
৫ নং কাবীরা গুনাহঃ منع الزكاة বা যাকাত আদায় না করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে। এই কার্পণ্য তাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে, বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর হবে। যাতে তারা কার্পণ্য করবে সে সকল ধন সম্পদ কিয়ামতের দিনে তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে।” [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০]
৬নং কবীরা গুনাহঃ সঙ্গত কারণ ছাড়া রমযানের সাওম ভঙ্গ করা বা না রাখা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (১) এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাঃআঃ আল্লাহর রাসূল, (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত দেওয়া, (৪) হজ করা, (৫) রামযান মাসের সাওম রাখা।”[6]
৭ নং কবীরা গুনাহঃ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও হজ না করা
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
“আর এ ঘরের হজ করা সে সকল মানুষের জন্য অবশ্য কর্তব্য যারা সেথায় যাওয়ার সামর্থ্য রাখে। আর যে প্রত্যাখ্যান করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ সারা বিশ্বের কোনো কিছুরই মখোপেক্ষী নয়।” [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯৭]
৮ নং কবীরা গুনাহঃ ‘মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া’
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তা বলে দিব না? আর তা হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা, মাতা-পিাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।”[7]
৯ নং কবীরা গুনাহঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং নিকট আত্মীয়দের পরিত্যাগ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ক্ষমতা লাভের পর সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিহীন করেন।” [সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২-২৩]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আত্মীয়তার ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”[8]
১০ নং কবীরা গুনাহঃ ‘ব্যভিচার করা’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ ও অতি মন্দ পথ।” [সুরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩২]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যখন কোনো মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন তার থেকে ঈমান বের হয়ে যায়। ঈমান তার মাথার উপর ছায়ার মতো অবস্থান করে যাখন সে বিরত থাকে ঈমান আবার ফিরে আসে।”[9]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আদম সন্তানের ওপর ব্যভিচারের কিছু অংশ লিপিবদ্ধ হয়েছে সে অবশ্যই তার মধ্যে লিপ্ত হবে। দুই চক্ষুর ব্যভিচার হলো দৃষ্টি এবং তার দুই কানের ব্যভিচার শ্রবণ, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা ও পায়ের ব্যভিচার হলো পদক্ষেপ আর অন্তরে ব্যভিচারের আশা ও ইচ্ছার সঞ্চার হয়, অবশেষে লজ্জাস্থান একে সত্যে অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।”[10]
১১ নং কবীরা গুনাহঃ পুং মৈথুন এবং স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং লূতকেও পাঠিয়েছিলাম, সে তার সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছ যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করে নি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারীকে বাদ দিয়ে পুরুষের নিকট গমন কর, তোমরা তো সীমালঙ্গনকারী সম্প্রদায়’।” [সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা কাউকে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকাম) করতে দেখলে যে করে এবং যার সাথে করা হয় উভয়কে হত্যা কর।”[11]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আরো বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টি দিবেন না, যে কোনো পুরুষের সাথে সমাকামিতায় লিপ্ত হয় অথবা কোনো মহিলার পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে।”[12]
১২ নং কবীরা গুনাহঃ أكل الربا ‘সুদ খাওয়া’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা সুদ খায় তারা দাঁড়াবে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যাকে শয়তান স্পর্শ দ্বারা পাগল করে দেয়।” [সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৭৫]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন:
“সুদের গুনাহের ৭৩টি স্তর রয়েছে। যার মধ্যে সবচেয়ে হাল্কা হলো নিজ মাতাকে বিবাহ করা। সর্বনিম্ন স্তর হলো কোনো মুসলিমের ইজ্জত সম্ভ্রম হরণ করা।”[13]
১৩ নং কবীরা গুনাহঃ ‘ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণ করা’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা ইয়াতীমের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্তরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ১০]
১৪ নং কবীরা গুনাহ
আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের ওপর মিথ্যারোপ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে কিয়ামতের দিন আপনি তাদের মুখ কালো দেখবেন।” [সুরা আয-যুমার, আয়াত: ৬০]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন তার অবস্থান জাহান্নাম করে নেয়।”[14]
হাসান রহ. বলেন, স্মরণ রাখতে হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূল যা হারাম করেন নি তা হারাম করল, আর যা হালাল বলেন নি তা হালাল বলল, সে আল্লাহ ও তার রাসূল এর প্রতি মিথ্যারোপ করল এবং কুফুরী করল।”
১৫ নং কবীরা গুনাহ
الفرار من الزحف ‘যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যে ব্যক্তি লড়াইয়ের ময়দান থেকে পিছু হটে যাবে সে আল্লাহর গযব সাথে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে অবশ্য যে লড়াইয়ের কৌশল পরিবর্তন করতে কিংবা নিজ সৈন্যদের নিকট স্থান নিতে আসে সে ব্যতীত।” [সুরা আল-আনফাল. আয়াত: ১৬]
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বর্তমান যুগে মুসলিমরা শুধু যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করে না, বরং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে কোনো ধরনের অংশই নিতেই চায় না। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
১৬নং কবীরা গুনাহ
শাসক ব্যক্তি কর্তৃক প্রজাদেরকে ধোকা দেওয়া এবং তাদের ওপর অত্যাচার করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।” [সুরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে আমাদেরকে ধোকা দেয় সে আমাদের অন্তভুক্ত নয়।”[15]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আরো বলেন,
“অত্যাচার কিয়ামতের দিন চরম অন্ধকার হবে।”[16]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে শাসক তার অধীনস্থদের ধোকা দেয়, তার ঠিকানা জাহান্নাম।”[17]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব পান, অতঃপর সে তাদের অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের সময় নিজেকে গোপন করে রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার অভাব দূর করণের প্রতি লক্ষ্য রাখবেন না।”[18]
বর্তমানে আমাদের অবস্থা অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ, আমরা আমাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করি। আর বাতিলের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ, নির্বিকার এবং অন্যায়ের কোনো প্রতিকার নেই।
১৭ নং কবীরা গুনাহ
গর্ব, অহংকার, আত্মম্ভরিতা, হট-ধর্মিতা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করেন না”। [সুরা আন-নাহল, আয়াত: ২৩]
যে ব্যক্তি সত্যের বিরুদ্ধে অহংকার করে তার ঈমান তার কোনো উপকার করতে পারে না। ইবলিসের অবস্থা এর জ্বলন্ত প্রমাণ।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যার অন্তরে এক বিন্দু পরিমান অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। জনৈক ব্যক্তি বললেন, কোনো ব্যক্তি চায় তার জামা-কাপড়, জুতা-সেন্ডেল সুন্দর হোম তাহলে এটাও কি অহংকার? রসূলুল্লাহ সাঃআঃ উত্তর দিলেন, আল্লাহ নিজে সুন্দর এবং তিনি সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। (অর্থাৎ এগুলো অহংকারের অর্ন্তভুক্ত নয়) অহংকার হলো সত্যকে গোপন করা আর মানূষকে অবজ্ঞা করা।”[19]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অহংকার বশে তুমি মানুকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে অহংকারের সাথে পদচারণা করো না। কখনো আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সুরা লোকমান, আয়াত: ১৮]
রাসূল সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা বলেন, মহত্ব আমার পরিচয় আর অহংকার আমার চাদর, যে ব্যক্তি এ দু’টি নিয়ে টানা হেচাড়া করবে আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো।”[20]
১৮ নং কবীরা গুনাহ
‘মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া’
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা মিথ্যা ও বাতিল কাজে যোগদান করে না।” [সুরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭২]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় গুনাহ সম্পর্কে অবগত করব না? তা হলো আল্লাহর সাথে শির্ক করা, মাত-পিতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা।”[21]
১৯ নং কবীরা গুনাহ
মাদক দ্রব্য সেবন করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নায়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্য হোল মদ আর সকল প্রকার মদ হারাম।”[22]
“আল্লাহ মদ পানকারী, বিক্রেতা, ক্রেতা, প্রস্তুতকারী, বহনকারী এবং যার জন্য বহন করা হয় সকলকে অভিসম্পাত দিয়েছেন।”[23]
২০নং কবীরা গুনাহ
জুয়া খেলা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে মুমিনগণ! এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নিধারক শরসমূহ, এসব শয়তানের অপবিত্র কাজ ছাড়া আর কিছু নয়। অতএব, তোমরা এগুলো থেকে বেচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও।” [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৯০]
২১নং কবীরা গুনাহ
সতী–সাধ্বী নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা সতী-সাধ্বী ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারা ইহকাল ও পরকালে অভিশপ্ত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [সুরা আন-নূর, আয়াত: ২৩]
কোনো সতী-সাধ্বী নারীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়াকে কযফ বলে (قذف) বলে।
২২ নং কবীরা গুনাহ
গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা
যে ব্যক্তি গনীমতের মাল পাওনাদেরদের মধ্যে বন্টন পূর্বে কোনো কিছু আত্মসাৎ করে করে, সে কিয়ামতের দিন ঐ সম্পদকে বহন করা অবস্থায় উপস্থিত হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যে ব্যক্তি গনীমাতের মালে খেয়ানত করল সে কিয়ামতের দিবসে সেই খেয়ানতকৃত বস্তু বহন করে উপস্থিত হবে।” [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬১]
শুধু যুদ্ধলব্ধ সম্পদে নয় এমন সকল সম্পদ যাতে অন্যের অধিকার আছে তা আত্মসাৎ বা তাতে খেয়ানত এ শাস্তির অন্তর্ভুক্ত হবে।
২৩ নং কবীরা গুনাহ
চুরি করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও এটা তাদের কৃতকর্মের ফল ও আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দণ্ড, আল্লাহ পরাক্রান্ত জ্ঞানময়।” [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৮]
২৪ নং কবীরা গুনাহ
ডাকাতি করা
অর্থাৎ মানুষের সম্পদ ছিনতাই এবং চুরি করা অথবা বল প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের থেকে নিয়ে নেওয়া বা তাদের পিছু নিয়ে তাদের ইজ্জত সভ্রম বিনষ্ট করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর যারা আল্লাহ, তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করেতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশান্তর করা হবে। এটা হলো তাদের পাথির্ব লাঞ্ছনা, আর পরকালের তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৩]
২৫ নং কবীরা গুনাহ
মিথ্যা শপথ
নবী সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে এবং তা দ্বারা কোনো মুসলিমের সম্পদকে অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে এমন অবস্থায় যে, আল্লাহ তার ওপর ক্রোধান্বিত।”[24]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কবীরা গুনাহ হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা । মাতা-পিতার নাফরমানী করা, হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা”।[25]
২৬ নং কবীরা গুনাহ
যুলুম, অত্যাচারা করা
যুলুম বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। মানুষের সম্পদ অন্যায় ভাবে ভক্ষণ করা অন্যায়ভাবে প্রহার করা, গালি দেওয়া, তাদের ওপর বাড়াবাড়ি করা, দুর্বলদের ওপর চড়াও হওয়া ও অন্যান্য যে সকল কাজে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা সবই যুলুম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“অত্যাচারীরা শীঘ্রই জানবে তাদের গন্তব্য স্থল কোথায়।” [সুরা আশ-শু‘আরা, আয়াত: ২২৭।)
নবী সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা যুলুম করা থেকে বেচে থাক। কারণ, যুলুম কিয়ামতের দিন গভীর অন্ধকার পরিণতি হবে”।[26]
২৭ নং কবীরা গুনাহ
চাঁদাবাজী ও অন্যায় টোল আদায়
বাস্তবিক পক্ষে এটি এক ধরনের ডাকাতি। কারণ, এতে মানুষের ওপর এক ধরনের জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। চাঁদা উসূলকারী, লেখক এবং গ্রহণকারী গুনাহের মধ্যে সমানভাবে শামিল। এরা সবাই হারাম ভক্ষণকারী চাঁদাবাজ মূলতঃ যুলুমের বড় সহযোগি শুধু তাই নয় বরং সে যুলুমকারী ও অত্যাচারী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ব্যবস্থা নেওয়া হবে শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে করে বেড়ায়। তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।” [সুরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]
নবী সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা কি জান প্রকৃত দরিদ্র কে আমার উম্মতের মধ্যে? প্রকৃত দরিদ্র ঐ ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন অনেক সালাত, সাওম, যাকাত, নিয়ে উপস্থিত হবে। তবে সে দুনিয়াতে কাউকে হত্যা করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কাউকে গাল-মন্দ করেছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে মেরেছে অথবা কাউকে প্রহার করেছে। কিয়ামতের দিন এ ব্যক্তির নেক আমল বা সাওয়াব তাদের (তার দ্বারা যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে) দেওয়া হবে। যদি তার নেক আমলের সাওয়াব পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায় তাখন তাদের গুনাহগুলোকে তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং তার পর তাকের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”[27]
২৮ নং কবীরা গুনাহ
হারাম খাওয়া, তা যে কোনো উপায়ে হোক না কেন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।” [সুরা আল-বাকারাহহ, আয়াত: ১৮৮]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন:
“কোনো ব্যক্তি দীর্ঘ পথ অতিক্রম করলো, বিক্ষিপ্ত চুল, ধূলা-বালিযুক্ত শরীর, দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে দো‘আ করতে থাকে আর বলতে থাকে: হে আমার রব! হে আসার রব! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম এবং হারাম দ্বারা শক্তি সঞ্চয় করা হয়েছে। তাহলে কীভাবে তার দো‘আ কবুল করা হবে?”[28]
২৯ নং কবীরা গুনাহ
আত্মাহত্যা করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি দয়ালু আর যে কেউ সীমালংঘন কিংবা যুলুমের বশবর্তী হয়ে এরূপ করবে তাকে খুব শীঘ্র আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ২৯-৩০]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিজেকে হত্যা করে সে উক্ত অস্ত্র দ্বারা জাহান্নামের আগুনে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে। সে চিরদিন এই জাহান্নামে অবস্থান করবে। যে বিষ পান করে নিজেকে হত্যা করল সে চিরদিন জাহান্নামে অবস্থানকালে হত্যা করতে থাকবে। আর যে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করবে সেও চিরদিন জাহান্নামে অবস্থান করবে এবং পাহাড় থেকে নিক্ষিপ্ত হতে থাকবে”।[29]
৩০ নং কবীরা গুনাহ
অধিকাংশ সময় মিথ্যা বলা
নবী সাঃআঃ বলেন,
“মিথ্যা পাপাচারের দিকে পথ দেখায়। আর পাপাচার জাহান্নামে নিয়ে যায়। মানুষ মিথ্যা বলতে থাকলে আল্লাহর নিকট মিথ্যুক হিসেবে তার নাম লেখা হয়।”[30]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং তাদের প্রতি আল্লাহর অভিসম্পাত যারা মিথ্যাবাদী।” [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬১]
৩১ নং কবীরা গুনাহ
মানব রচিত বিধানে দেশ পরিচালনা ও বিচার ফয়সালা করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা কাফির।” [সুরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৪৪]
তিনি আরো বলেন,
এবং যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা যালিম।” [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]
তিনি আরো বলেন,
“যারা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারা ফাসেক।” [সুরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]
৩২ নং কবীরা গুনাহ
বিচার ফয়সালার ক্ষেত্রে ঘুষ গ্রহণ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না এবং জনগণের সম্পদের কিয়দাংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণের কাছে পেশ করো না।” [সুরা আল-বাকারাহ আয়াত: ১৮৮]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা ঘুষ দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের উপর অভিশাপ করেছেন।”[31]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যদি কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের জন্য কোনো বিষয় সুপারিশ করে, পরে তার জন্য হাদিয়া বা উপটোকন প্রেরণ করা হয়, সে তা গ্রহণ করে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি এক মারাত্মক ধরনের সুদের দ্বারে প্রবেশ করল।”[32]
৩৩নং কবীরা গুনাহ
মহিলা পুরুষের বেশ ধারণ করা এবং পুরুষের মহিলার বেশ ধারণ করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা পুরুষের বেশ ধারণকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ করেছেন এবং মহিলাদের বেশ ধারনকারী পুরুষের উপর অভিশাপ করেছেন।”[33]
৩৪ নং কবীরা গুনাহ
আপন স্ত্রীকে ব্যভিচারে সুযোগ দেওয়া
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তিন ব্যক্তির জন্য আল্লাহর জন্য জান্নাত হারাম করেছেন, (১) যে মদ তৈরী করে (২) যে মাতা-পিতার নাফরমানী করে (৩) ঐ চরিত্রহীন ব্যক্তি যে নিজ স্ত্রীকে অশ্লীলতা ও ব্যভিচারে করতে সুযোগ দেয়।”[34]
দাইউস ঐ ব্যক্তিকে বলে যে তার স্ত্রী অশ্লীল কাজ বা ব্যভিচার করলে সে ভালো মনে করে গ্রহণ করে অথবা প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে।
৩৫ নং কবীরা গুনাহ
হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ে গুনাহগার
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“হালালকারী এবং যার জন্য হালাল করা হয় উভয়ের প্রতি আল্লাহ অভিশাপ করেছেন।”[35]
এর ব্যাখ্যা হলো: কেউ কারো তিন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে এ শর্তে বিবাহ করে যে, সে সহবাস করে আবার তালাক দিয়ে দিবে, যাতে প্রথম স্বামী পুণরায় বিবাহ করতে পারে, এই ব্যক্তিকে মুহাল্লিল বা হালালকারী বলে।
৩৬ নং কবীরা গুনাহ
পেশাব থেকে বেঁচে না থাকা
ইবনু আব্বাস রা. ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সাঃআঃ দু’টি কবরের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন এবং বলেন, এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো বড় বড় ধরনের কাজের জন্যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের একজনের অভ্যাস ছিল সে প্রসাব থেকে পবিত্রতা অর্জন করতো না। আর অন্যজন মানুষের একজনের দোষ অন্যের কাছে বলে বেড়াত।”[36]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং তোমার কাপড়কে তুমি পবিত্র করা।” [সুরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ৪]
অতএব, আপনাদের কাপড়ে ও শরীরে যেন পেশাব না জড়ায়। যদি কোনো কারণে জড়িয়েও যায় তাহলে তা সাথে সাথে পবিত্র করে নিবেন।
আমরা আমাদের নিজের জন্য ও আপনাদের জন্য এই বিপদ থেকে মহান আল্লাহর দয়া ও রহমতের দ্বারা পরিত্রাণ কামনা করছি।
৩৭ নং কবীরা গুনাহ
চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃতি করা
নবী সাঃআঃ বলেন,
“তোমাদের নিকট কি পৌছে নাই যে, যে ব্যক্তি চতুষ্পদ জন্তুর চেহারা বিকৃত করে অথবা চেহারার উপর আঘাত করে আমি তার উপর অভিশাপ করছি।”[37]
৩৮ নং কবীরা গুনাহ
দুনিয়া অর্জনের লক্ষ্যে ইলমে দীন শিক্ষা করা এবং সত্যেকে গোপন করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমরা যে সব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথ-নির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে আল্লাহ তাদের অভিসম্পাত দেন এবং অভিশাপকারীরাও তাদের অভিশাপ দেয়। কিন্তু যারা তাওবা করে ও নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে। তাদেরই প্রতি আমি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সুরা আল-বাকারাহহ, আয়াত: ১৫৯-১৩০।)
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি জ্ঞানীদের ওপর প্রধান্য বিস্তার করার লক্ষ্যে অথবা মূর্খের সাথে বিতর্কের উদ্দেশ্যে অথবা মানুষের দৃষ্টি তার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।”[38]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি দীনি ইলম শিক্ষা করল ধন সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না।” (আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৭৯।)
৩৯ নং কবীরা গুনাহ
খিয়ানত করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ঈমানদারগণ আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে খেয়ানত করো না এবং জেনে-শুনে নিজেদের পারস্পরিক আমানতের খেয়ানত করো না।” [সুরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৭]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যার আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই, আর যার প্রতিজ্ঞা পূরণ নেই তার ধর্ম নেই।”[39]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সে হবে প্রকৃত মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে নিফাকের একটি দোষ পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে ঐ দোষ বর্জন করবে যখন তার নিকট আমানত রাখা হয় সে তা খেয়ানত করে।”[40]
৪০ নং কবীরা গুনাহ
المن খোটা দেওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকা ধংস করো না।” [সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৬৪]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন কোনো কথা বলবেন না, তাদের প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টি দিবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রদায়ক শাস্তি। (১) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টখনু-গিরার নিচে ঝুলিয়ে দেয়, (২) খোটাদানকারী, যে কোনো কিছূ দান করে খোটা দেয় (৩) যে মিথ্যা শপথ করে দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করে।”[41]
৪১ নং কবীরা গুনাহ
التكذيب بالقدر তাকদীরকে অস্বীকার করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যদি আল্লাহ তা‘আলা আসামান ও যমীনের সকল অধিবাসীকে আযাব দেন তাহলে তার আযাব দেওয়াটা কোনো প্রকার অন্যায় হবে না। আর যদি দয়া করেন তবে তা তাদের আমলের তুলনায় অনেক বেশি হবে। যাদি কোনো ব্যক্তির নিকট ওহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহ তার এ দান বিন্দু পরিমাণও গ্রহণ করবেন না, যতক্ষন পর্যন্ত না সে তাকদীরের প্রতি ঈমান আনয়ন করবে আর এ কথা বিশ্বাস করবে যে, কোনো ব্যক্তি সঠিক কাজ করল সে তা তকদীর অনুযায়ী করেছে এট ভুল করা তার জন্য নির্ধারিত ছিল না। আর যে ভুল করল এটা সঠিকভাবে করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। যদি তুমি এ বিশ্বাসের বাইরে মারা যাও তাহলে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”[42]
৪২ নং কবীরা গুনাহ
মানুষের নিকট অন্যের গোপন তথ্য ফাঁস করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা মানুষের ত্রুটি বিচ্যুতি খুজে বেড়াবে না।” [সুরা আল-হুজরাত, আয়াত: ১২]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের লোকের কথা শ্রবণ করার চেষ্টা করে তাদের অনচ্ছিা সত্ত্বেও, তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত শীশা ঢালা হবে, আর যে ব্যক্তি কোনো জীবজন্তুর ছবি অংকন করে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। তাকে বলা হবে তুমি এ ছবিতে প্রাণ সঞ্চার কর, কিন্তু সে পারবে না। আর যে ব্যক্তি এমন স্বপ্ন বর্ণনা করল যা সে দেখে নি তাকে শাস্তি হিসেবে দু’টি যবের দানাকে একত্রে জোড়া লাগাতে বলা হবে, কিন্তু তা সে মোটেই পারবে না।”[43]
৪৩ নং কবীরা গুনাহ
النميمة পরনিন্দা করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যে বেশি শপথ করে এবং যে পশ্চাতে নিন্দা করে একের কথা অপরের নিকট লাগিয়ে ফিরে আপনি তার আনুগত্য করবে না।” [সুরা আল-ক্বালম, আয়াত: ১০-১১]
নমীমাহ বলা হয, যে ব্যক্তি একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায় পারস্পরিক ঝগড়া-ফাসাদ সৃষ্টি করার উদ্দেশে। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. ‘আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ দু’টি কবরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং বললেন: এ কবরবাসীদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো বড় ব্যাপারে নয়, তাদের একজন এমন ব্যক্তি যে একের কথা অন্যের নিকট লাগাতো। (সহীহ বুখারী)
৪৪ নং কবীরা গুনাহ
অভিশাপ করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“মুসলিমদের অভিশাপ করা অন্যায় এবং তাকে হত্যা করা কুফর।”[44]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কোনো লোক যখন অন্য কাউকে অভিশাপ করে তথন অভিশাপটি আকাশে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার জন্য আকাশের দরজাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর যমীনের দিকে অবতরণ করে। কিন্তু যমীনের দরজাগুলোও বন্ধ হয়ে যায়। অহতঃপর অভিশাপটি ডানে বামে ঘুরতে থাকে। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে যার উপর করা হলো তার নিকট যায়, যদি সে অভিশাপের উপযুক্ত হয়। অন্যথায় অভিশাপকারীর উপর প্রত্যাবর্তন করে।”[45]
যে কারণেই হোক কোনো মুসলিম ভইয়ের ওপর অভিশাপ করা সম্পূর্ণ হারাম। খারাপ দোষে দুষ্ট ব্যক্তিদের ওপর তাদের দোষ উল্লেখ করে অভিশাপ করা যায়। যেমন, অত্যাচারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, কাফিরদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ, প্রাণীর ছবি অংকনকারীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ ইত্যাদি।
৪৫ নং কবীরা গুনাহ
গাদ্দারী করা, ওয়াদা পালন না করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“চারটি দোষ যার মথ্যে পাওয়া যাবে সে খাঁটি মুনাফিক হবে। আর যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার মধ্যে মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যতক্ষণ পর্যন্ত যে উক্ত অভ্যাস ত্যাগ না করে। যখন আমানত রাখার হয় সে খেয়ানত করে আর যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন প্রতিজ্ঞা করে তখন গাদ্দারী করে আর যখন ঝগড়া করে তখন গালি দেয়।”[46]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“প্রত্যেক ওয়াদা অঙ্গকারীর জন্যে কিয়ামতের দিন একটি নিদর্শন থাকবে তার গাদ্দারীর পরিমাণ অনুযায়ী তাকে উচ্চ করা হবে। তবে জনগণের সাথে প্রতারণাকারী শাসকে চেয়ে বড় গাদ্দার আর কেউ হবে না।”[47]
৪৬ নং কবীর গুনাহ
গণক ও জ্যোতির্বিদদের বিশ্বাস করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি গণক বা জ্যোতিষীর নিকট আসলো এবং তারা যা বললো তা সত্য বলে গ্রহণ করলো সে মূলতঃ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নযিল করা হয়েছে তাকেই অস্বীকার করলো।”[48]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো গণকের নিকট আসলো তার পর তাকে ভাগ্য সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করল চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।”[49]
৪৭ নং কবীরা গুনাহ
স্বামীর অবাধ্য হওয়াنشوز المرأة على زوجها
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর তাদের স্ত্রীদের মধ্যে অবাধ্যতার আশংকা কর তাদের সদুপদেশ দাও তাদের শয্যা ত্যাগ করো এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা অনুগত হয়ে যায় তবে তাদের জন্যে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার ওপর শ্রেষ্ঠ।” [সুরা আন-নিসা, আয়াত: ৩৪]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যদি কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহ্বান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর ওপর ফিরিশতারা অভিশাপ করতে থাকে।”[50]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যদি তাদেরকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম আরা যেন তাদের স্বামীদের সাজদাহ করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পৃষ্ঠেও তাকেও আহ্বান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।”[51]
সুতরাং তাদেরকে আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে সাজদাহ করার আদেশ দিতাম তাহলে নারীদের প্রতি আদেশ দিতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সাজদাহ করে। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার জীবন, মহিলারা ঐ পর্যন্ত আল্লাহর হক আদায় করতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে স্বামীর হক আদায় না করে, এমনকি স্বামী যদি যাত্রা পথে ঘোড়ার পিঠেও তাকে আহ্বান করে তখনও তাকে বাধা না দেয়।”[52]
সুতরাং নারীদের কর্তব্য, তারা সর্বাবস্থায় স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হবে এবং তার অসন্তুষ্টি থেকে বেচে থাকবে, কখনো স্বামীকে জৈবিক চাহিদা পূরণে বাধা দেবে না। তবে যদি শর‘ঈ কোনো আপত্তি থাকে তবে যেমন, হায়েয নিফাস অথবা ফরয সাওম ইত্যাদি অবস্থায় শুধু সহবাস থেকে নিষেধ করতে পারে। মহিলাদের জন্য কর্তব্য হল সর্বদা স্বামীর নিকট লজ্জাবতী হওয়া, তার আদেশের আনুগত্য করা, তার সকল প্রকার অপছন্দনীয় কাজ হতে বিরত থাকা।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আমি জান্নাতে উকি মেরে দেখি, জান্নাতে অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র এবং জাহান্নামে উকি মেরে দেখি, তার অধিকাংশ অধিবাসী মহিলা।”[53]
অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী বলেন, মহিলাদের আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আনুগত্যের অভাব। স্বামীর অবাধ্যতা এবং পর্দাহীনতাই এর মূল কারণ। মহিলারা যখন ঘর থেকে বের হয় তখন সর্বোচ্চ সুন্দর পোশাক পরে বিশেষ সাজ-সজ্জা অবলম্ভন করে, যা মানুষকে ফিৎনায় পড়তে বাধ্য করে। সে নিজে নিরাপদে থাকলেও মানুষ তার থেকে নিরাপদ থাকে না।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“মহিলারা আবরণীয়, কিন্তু যখন তারা রাস্তায় বের হয় তখন শয়তান তাকে মাথা উঁচু করে দেখে।”[54]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“মহিলারা হলো আবরণীয়, তারা যখন ঘর হতে বের হয় তখন শয়তান তাদেরকে মাথা উচু করে দেখে। তারা যত বেশি ঘরের কোণে অবস্থান করবে ততই আল্লার নৈকট্য লাভ করবে।”[55]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আমার পরে পুরুষদের ওপর মহিলাদের মতো ক্ষতিকর আর কোনো ফিৎনা আমি রেখে যাই নি।”[56]
মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ তার ঘর অবস্থান করা। আল্লাহর ইবাদত, স্বামীর আনুগত্য, তার অধিকার সর্ম্পকে সচেতন থাকা, স্বামীর ওপর কোনো প্রকার বাড়াবাড়ি না করা এবং আপন চরিত্রে কোনো প্রকার কলঙ্ক না জড়ানো।
উল্লিখিত প্রতিটি হাদীসে স্ত্রীর কাছে স্বামীর অধিকার যে কত বড় তা বুঝানো হয়েছে। বাস্তবিক পক্ষে এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করার কারণে বর্তমানে এটি মহিলাদের জন্যে মহা প্রলয়ংকারী বিপদে পরিণত হয়েছে।
হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের প্রতি আমার বিনীত উপদেশ এই যে, আপনারা এমন নারীদের বিবাহ করবেন যারা মুমিনা, পর্দানশীল, স্বামীর অনুগত, আপনার ধন স্পদ রক্ষাকারিণী এবং সে পর্দাহীনভাবে সাজ-সজ্জা গ্রহণ করে রাস্তায় বের হবে না, আর আপনার আনুগত্য করবে।
যদি আপনার স্ত্রী মুমিনা ও অনুগতা মহিলা হয় তাহলে আপনি হিতাকাঙ্খী হবেন, তার সাথে কোনো রকমের হঠকারিতাপূর্ণ আচরণ করবেন না।
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা মেয়েদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে। তাদেরকে বাম পাজরের হাড় হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাজরের হাড় সবচেয়ে বাকা হয়, যদি তুমি সোজা করতে চেষ্টা কর ভেঙ্গে যাবে, আর যদি ছেড়ে তাও তাহলে সর্বদা বাকা তাকবে। সুতরাং তাদের সাথে সৎ ব্যবহার করতে থাক।”[57]
তাদের সাথে সৎ ব্যবহার হলো, আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করার নির্দেশ দেওয়া এবং নিষেধ কাজ থেকে বিরত থাকতে আদেশ করা। এগুলো তাদেরকে জান্নাতের পথের নিয়ে যায়।
৪৮ নং কবীরাগুনাহ
কাপড় , দেওয়াল ও পাথর ইত্যাদিতে প্রাণীর ছবি আঁকা
নবী সাঃআঃ বলেন,
“যারা চিত্রাংকন করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন শাস্তি দেওয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে তোমরা যা সৃষ্টি করেছিলে তাদের আত্মা ও জীবন দান কর।”[58]
আয়েশা রা. ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“একদিন রসূলুল্লাহ সাঃআঃ আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন ঘরের দরজায় এমন একটি পর্দা টানানো ছিল যার মধ্যে প্রাণীর ছবি আকা ছিল। তিনি দেখা মাত্র পর্দাটি ছিড়ে ফেললেন ও তার চেহারার বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি বললেন, হে আয়েশা! কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হবে ঐ সব লোকদের যারা আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃর্শ অবলম্বন করে কিছু তৈরি করে। আয়েশা রা. ‘আনহা বলেন, আমি উক্ত পর্দা কেটে একটি অথবা দু’টি বালিশ তৈরি করি।”[59]
৪৯ নং কবীরা গুনাহ
শোক প্রকাশার্থে চেহারার উপর আঘাত করা, মাতম করা, কাপড় ছেড়া, মাথা মুণ্ডানো বা চুল উঠানো, বিপদের সময় ধ্বংসের জন্য দো‘আ করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“শোক প্রকাশ করতে যেয়ে যে চেহারার উপর প্রহার করে এবং কাপড় ছিড়ে ফেলে এবং জাহেলিয়্যাতের অভ্যাসের অনুসরন করে সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়।”[60]
৫০ নং কবীরা গুনাহ
অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“ব্যবস্থা নেওয়া হবে কেবল তাদের বিরুদ্ধে যারা মানুষের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহকরে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। “ [সুরা আশ-শূরা, আয়াত: ৪২]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী প্রেরণ করেন যে, তোমরা বিনয়ী হও, কেউ যেন কারো ওপর গর্ব না করে আর কোউ যেন কারো ওপর অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ না করে।”[61]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আত্মীয়তা ছিন্ন করা এবং অন্যায় ভাবে বিদ্রোহ করা এমন দু’টি মারাত্বক অপরাধ যার শাস্তি আখেরাতে নির্ধারিত থাকা সত্বেও দুনিয়াতে দেওয়া হবে।”[62]
৫১ নং কবীরা গুনাহ
দুর্বল, চাকর-চাকরানী, স্ত্রী ও চতুষ্পদ জন্তুর ওপর অত্যাচার করা
রাসুল সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি তার গোলামকে শাস্তি দিল এমন কোনো অভিযোগে যা সে করে নাই, তার প্রতিকার হলো তাকে মুক্ত করে দেওয়া।”[63]
রাসূল সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা ঐ সব লোকদের শাস্তি দিবেন যারা দুনিয়াতে মানুষদের কষ্ট দিত।”[64]
৫২ নং কবীরা গুনাহ
أذى الجار প্রতিবেশীদের কষ্ট দেওয়া
রাসূল সাঃআঃ বলেন,
“ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদ থাকে না।”[65]
৫৩ নং কবীরা গুনাহ
মুসলিমদের কষ্ট দেওয়া ও গালি দেওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।” [সুরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৮]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মর্যাদার দিকে দিয়ে ঐ ব্যক্তি সর্ব নিকৃষ্ট, যাকে মানুষ তার অনিষ্টতা থেকে বাঁচার লক্ষ্যে এড়িয়ে চলে।”[66]
৫৪ নং কবীরা গুনাহ
অহংকার করে লুঙ্গি কাপড় ইত্যাদি ঝুলিয়ে পরিধান করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“গোড়ালির নিচে যে কাপড় পরা হবে, তা জাহান্নামে যাবে।”[67]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির দিকে রহমতের দৃষ্টি দিবেন না যে অহংকার করে কাপড় পরিধান করে।”[68]
বর্তমানে এ ব্যধি একেবারে সাধারণ হয়েছে। প্রায় সবার মধ্যে এ সমস্যাটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকেই দেখা যায় তারা গোড়ালির নিচে কাপড় পরধিান করে, অনেক সময় মাটি পর্যন্ত কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে বিপদ থেকে রক্ষা করুন। অবশ্য এ নিষেধাজ্ঞা পুরুষদের জন্য।
৫৫ নং কবীরা গুনাহ
স্বর্ণ রৌপ্যের পাত্রে পানাহার করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি স্বর্ণ ও রূপার প্লেটে খায় বা পান করে সে মূলতঃ তার পেটে জাহান্নামের আগুনকেই স্থান দেয়।”[69]
৫৬ নং কবীরা গুনাহ
পুরুষের স্বর্ণ ও রেশমী কাপড় পরিধান করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“দুনিয়াতে যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পরে তার জন্যে আখিরাতে কোনো অংশই নেই”।[70]
৫৭ নং কবীরা গুনাহ
إباق العبد গোলামের পলায়ন করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“গোলাম যখন পলায়ন করে তখন তার কোনো সালাত-ই গ্রহণ করা হয় না।”[71]
অন্য বর্ণনায় আছে, যতক্ষণ না সে তার মনিবের নিকট প্রত্যাবর্তন করে।
৫৮ নং কবীরা গুনাহ
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশে পশু যবেহ করা
রাসূল সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ।”[72]
গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করা দৃষ্টান্ত যেমন, কেউ যবেহ করার সময় বলে, আমি শয়তানের নামে যবেহ করাছি অথবা দেব-দেবীর নামে অথবা পীর সাহেবদের নামে যবেহ করছি ইত্যাদি।
৫৯ নং কবীরা গুনাহ
জেনে শুনে অন্যকে পিতা বলে স্বীকৃতি দেওয়া
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি জেনে শুনে নিজের পিতাকে বাদ দিয়ে অন্যকে পিতা বলে ঘোষণা দেয় তার ওপর জান্নাত হারাম করা হয়েছে।”[73]
৬০ নং কবীরা গুনাহ
তর্ক-বির্তক, ঝগড়া এবং শত্রুতা পোষণ করা
অর্থাৎ কারো কথার ভুল-ভ্রান্তি প্রকাশের দোষ তালাশ করা । একটি দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত আছে,
“যে ব্যক্তি অনর্থক কোনো বিষয়ে জেনে-শুনে বির্তক করে সে ঐ পর্যন্ত আল্লাহর অসন্তুষ্টি জীবন যাপন করে যতক্ষণ না সে বির্তক থেকে ফিরে আসে।”[74]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কোনো জাতি সঠিক পথের ওপর থাকার পর পথভ্রষ্ট হয় নাই, কিন্তু যখনই তারা বিতর্কে লিপ্ত হয়েছে তখনই পথভ্রষ্ট হযেছে।”[75]
অর্থাৎ সত্য অন্বেষণ বা উদঘাটনের জন্য নয়, বিতর্ক করার জন্য বিতর্কে লিপ্ত হয়।
৬১ নং কবীরা গুনাহ
প্রয়োজনের অতিক্তি পানি দান করতে অস্বীকার করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত ঘাস দান করা থেকে বিরত থাকে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন দয়া ও সাওয়াবের দিতে অস্বীকার করবেন।”[76]
৬২ নং কবীরা গুনাহ
ওজনে ও মাপে কম দেওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুভোর্গ।” [সুরা আল-মুতাফফিফীন, আয়াত: ১]
৬৩ নং কবীরা গুনাহ
আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিত হওয়া
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ এ কথাটি বেশি বলতেন-
“হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আপনি আমাদের অন্তরকে আপনার দীনের ওপর অটল রাখুন । অতঃপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সাঃআঃ আপনি কি আমাদের ঈমানের ব্যাপারে আশংকা করেন? রসূলুল্লাহ সাঃআঃ উত্তর দিলেন, মানুষের অন্তর দয়াময় আল্লাহরই দুই আঙ্গুলের মাঝে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে পরিবর্তন করেন।”[77]
সুতরাং হে মুসলিম ভাইয়েরা! আপনাদের ঈমান, আমল, সালাত ও সকল প্রকার নেক আমল যতই বেশি ও সুন্দর হোক না কেন অহংকার করবেন না। কারণ, এগুলো আল্লাহর দয়া ছাড়া আর কিছু নয়। যদি কোনো না কোনো সময় তিনি এগুলো আপনার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যান তখন আপনি উটের পেটের চেয়েও বেশি খালী হয়ে যাবেন। আপনি আপনার আমলের কারণে গর্ব করা থেক বিরত থাকুন এবং এমন কথা বলবেন না যা অজ্ঞ ও মূর্খরা বলে, যেমন আমরা অমুকের চেয়ে ভালো। আমার আল্লাহ তো মানুষের অন্তরের গোপন প্রকাশ্য সকল বিষয়ে অবগত। আপনার দুর্বলতা, গুনাহের আধিক্য, আমল কম হওয়ার অনুভুতি অন্তরে স্থান দিয়ে সর্বদা আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকুন এবং এমন একটি অবস্থায় থাকুন যে অবস্থার বর্ণনা রসূলুল্লাহ সাঃআঃ হাদীসে দিয়েছেন:
তিনি বলেন,
“তোমার সংসারে ব্যস্তাতা সত্ত্বেও তুমি জিহবাকে সংযত রাখবে, গুনাহের কাজের ওপর কান্নাকাটি করবে।”[78]
ঐসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তারা কি আল্লাহর পাকড়াও-এর ব্যাপারে নির্ভয় হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ব্যতীত কেউ আল্লাহর পাকড়াও থেকে নির্ভয় হয় না।” [সুরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৯৯]
বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রাথনা কর এবং সর্বদা এ কথাগুলো বলতে থাক-
“হে অন্তরের পরিবর্তকারী! তুমি আমাদের অন্তরকে তোমার দীনের ওপর অটল অবিচল রাখ।”
৬৪ নং কবীরা গুনাহ
মৃত জন্তু, প্রবহিত রক্ত এবং শুকরের গোশত খাওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আপনি বলে দিন, যে বিধান অহীর মাধ্যমে আমার কাছে পৌছেছে, তন্মধ্যে আমি কোনো ভক্ষণকারীর জন্যে কোনো হারাম খাদ্য পাই নি। মৃত ও প্রবাহিত রক্ত এবং শুকরের গোশত ব্যতীত। এটা অপবিত্র।” [সুরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১৪৫]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি চওসর (দাবা জাতীয়) খেলায় প্রবৃত হয়, সে যেন তার হাতকে শুকরের রক্তে রঞ্জিত করার মতো অন্যায় করে।”[79]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ শুকরের রক্ত ও গোশত হাতে নেওয়াকে গুনাহ সাব্যস্ত করেছেন। শুধু তাই নয় বরং বড় গুনাহ বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং শুকরের গোশত খাওয়া যে কাত বড় গুনাহ তা সহজেই অনুমান করা যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে এ বিপদ থেকে রাক্ষা করুন।
৬৫ নং কবীর গুনাহ
জুমু‘আর সালাত ও জামা‘আত চেড়ে দিয়ে বিনা কারণে একা একা সালাত আদায় করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যদি মানুষ জুমু‘আর সালাত পরিত্যাগ করা থেকে বিরত না থাকে তাহলে আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিবেন যার ফলে তারা অলস ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[80]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি আযান শুনল অথচ কোনো প্রকার ওযর ছাড়া সালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হলো না তার সালাত আল্লাহর নিকট কবুল হয় না।”[81]
৬৬ নং কবীরা গুনাহ
আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তোমরা আল্লার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ রহমত থে একমাত্রকে কাফির সম্প্রাদায়ই নিরাশ হয়।” [সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমাদের কেউ যেন আল্লাহর প্রতি ভালো ধারণা পোষণ ছাড়া মারা না যায়।”[82]
৬৭ নং কবীরা গুনাহ
মুসলিমকে কাফির বলে আখ্যায়িত করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইকে বলে, হে কাফির! এর পরিণাম তাদের কোনো না কোনো একজনের ওপর বর্তাবেই।”[83]
৬৮ নং কবীরা গুনাহ
ষড়যন্ত্র করা এবং ধোক দেওয়া المكر والخديعة
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কুচক্রের শাস্তি কারও ওপর পতিত হয় না, কুচক্রীর ওপরই পতিত হয়।” [সুরা ফাতির, আয়াত: ৪৩]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“কুচক্র এবং ধোকাবাজীর স্থান জাহান্নাম।”[84]
৬৯ নং কবীরা গুনাহ
মুসলিমদের ত্রুটি-বিচ্যুতি তালাশ করা এবং তাদের গোপন তথ্য প্রকাশ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আপনি আনুগত্য করবেন না ঐ ব্যক্তির যে কথায় কথায় শপথ করে, যে লাঞ্ছিত, যে অন্যকে দোষারোপ করে ও পশ্চাতে নিন্দা করে, যে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়।” [সুরা আল-ক্বালম, আয়াত: ১০-১১]
একটি দীর্ঘ হাদীসে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো মুমিন সম্পর্কে এমন দোষ বর্ণনা করে যা তার মধ্যে আদৌ নেই, আল্লাহ জাহান্নামীদের নির্গত পচা গলা পুজের মধ্যে তার স্থান নির্ধারন করে দিবেন। সে যা বলেছে তা বের করে দিতে চাবে, কিন্তু পারবে না”।[85]
৭০ নং কবীরা গুনাহ
কোনো সাহাবীকে গালি দেওয়া
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি দিও না। যদি তোমাদের কেউ ওহুদ পাহাড় পরিমাণ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তবুও তাদের কারো একটি মুটি বা আধা মুটি পরিমাণ দানের সমান হবে না।”[86]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি আমার সাহাবীকে গালি দেয় তার ওপর আল্লাহ তা‘আলা, ফিরিশতা এবং সমস্ত মানুষের অভিশাপ।”[87]
৭১ নং কবীরা গুনাহ
অন্যায় বিচার
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“দু’জন বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং একজন বিচারক জান্নাতে যাবে। যে বিচারক মূল সত্যকে উদঘাটন করে এবং তদনুসারে বিচার করে সে জান্নাতে যাবে। আর একজন বিচারকার্যে সত্যকে উদঘাটন করার পর জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে বিচার করছে সে জাহান্নামে যাবে অথবা যে না জেনে-শুনে বিচার করে সে জাহান্নামে যাবে।”[88]
৭২ নং কবীরা গুনাহ
الفجور عند الخصومة
ঝগড়া করার সময় অতিরিক্ত গালি দেওয়া
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“চারটি দোষ যার মধ্যে পাওয়া যাবে সেই প্রকৃত মুনাফিক। যার মধ্যে এর একটি পাওয়া যাবে তার নিকট মুনাফিকের একটি চরিত্র পাওয়া গেল। যখন আমানত রাখা হয় সে খেয়ানত করে, যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন চুক্তি করে তা ভঙ্গ করে আর যখন ঝগড়া করে গাল-মন্দ করে।”[89]
৭৩ নং কবীরা গুনাহ
কোনো বংশ বা তার লোকদের খারাপ গুণে অভিহিত করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“দু’টি দোষ মানুষের মধ্যে কুফর সমতুল্য । (১) বংশের কুৎসা রটানো। (২) মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক কান্নাকাটি করা।”[90]
৭৪ নং কবীরা গুনাহ
মৃত ব্যক্তির জন্য আনুষ্ঠানিক ও উচ্চ শব্দে কান্নাকাটি করা
যেমন পূর্বের হাদীসে এ সম্পর্কে পরোপুরি নিষেধ এসেছে।
৭৫ নং কবীরা গুনাহ
যমীনের সীমানা উঠিয়ে ফেলা বা পরিবর্তন করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহর অভিশাপ করেছেন ঐ ব্যক্তির ওপর যে যমীনের সীমানা পরিবর্তন করে।”[91]
৭৬ নং কবীরা গুনাহ
অপসংস্কৃতি ও কু-প্রথার প্রচলন করা অথবা বিভ্রান্তির দিকে আহ্বান করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোনো কু-প্রথা বা বিদ‘আত চালু করল সে নিজেতো গুনাহগার হবেই এবং তার পরে যে ব্যক্তি ঐ কু-প্রথার ওপর আমল কররবে তার গুনাহ ও তার ওপর বর্তাবে, তবে এ কারণে ঐ ব্যক্তির গুনাহের অংশ বিন্দু পরিমাণ ও কমানো হবে না।”[92]
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি কোনো গোমরাহীর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে ঐ ব্যক্তি গুনাহের মধ্যে ঐ পরিমাণ অংশীদার হবে যে পরিমাণ গুনাহ ঐ গোমরাহীর অনুসারীদের হবে। তবে এ কারণে তাদের গুনাহের পরিমাণ একটু ও কমানো হবে না”।[93]
৭৭ নং কবীরা গুনাহ
নারী অন্যের চুল ব্যবহার করা, শরীরে উলকি আকা, ভ্রু উপড়ানো, দাত ফাক করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“আল্লাহ তা‘আলা অভিশাপ করেন এমন সব নারীদের যারা অন্যের অঙ্গ খোদাই করে নিজের শরীরে তা করাতে চায়, যারা ভ্রু উঠিয়ে ফেলে এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাত সরু ও উহার ফাক বড় করে, যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলে নেয়।”[94]
তিনি আরো বলেন,
“সে নারীর ওপর আল্লাহর অভিশাপ যে অন্য নারীর মাথায় কৃত্রিম চুল স্থাপন করে কিংবা নিজ মাথায় মেকী চুল স্থাপন করে এবং যে অন্যের গাত্রে উল্কি করে অথবা নিজের গাত্রে উল্কি করায়।”[95]
৭৮ নং কবীরা গুানাহ
ধারালো অস্ত্র দিয়ে কারো দিকে ইশারা করা
রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“যে ব্যক্তি তার কোনো ভাইয়ের দিকে ধারালো অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে ফিরিশতাগণ তার ওপর অভিশাপ করতে থাকে, যদিও সে তার আপন ভাই হয়।”[96]
অন্য একটি হাদীসের কঠোর ধমকির কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“হতে পারে শয়তান তার হাতে থেকে অস্ত্র নিয়ে ব্যবহার করবে। ফলে সে জাহান্নামের গুহায় নিপতিত হবে।”[97]
৭৯ নং কবীরা গুনাহ
হারাম শরীফে ধর্মদ্রোহী কাজ করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এবং মসজিদে হারাম যা আমরা করেছি স্থায়ী ও বহিরাগত সকলের জন্য সমান। আর তাতে যে অন্যায়ভাবে কোনো ধর্মদ্রোহী কাজ করার ইচ্ছা করে, আমি তাকে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি আস্বাদান করাবো।” [সুরা আল-হাজ, আয়াত: ২৫]
এ বিষয় যা আলোচিত হলো এগুলো মারাত্বক কবীরা গুনাহ, যা পবিত্র কুরআনর হাদীসের আলোকে উলামায়ে কিরাম উল্লেখ করেছেন এবং বিশেষ করে ইমাম হাফেয শামসুদ্দীন আয-যাহাবী রহ, আল-কাবায়ের কিতাবে সংকলন করেছেন। আল্লাহ যেন এ সকল গুনাহ থেকে বেচে থাকতে সাহায্য করেন এবং আমাদেরকে তাওফীক দিবেন, যে সব কাজ তিনি পছন্দ করেন না এবং সন্তুষ্ট হন না, এসব কাজ থেকে বেচে থাকতে এবং আমরা ঐ সব গুনাহ যা আমাদের থেকে প্রকাশ পেয়েছে আল্লাহ যেন আমাদের ঐ সকল পাপ ক্ষমা করেন এবং আল্লার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের ঐসব লোকদের অর্ন্তভুক্ত না করেন যাদের সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেন,
“তোমরা কি জান আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্র কে? মনে রাখবে আমার উম্মতের মধ্যে দিরদ্র হলো ঐ লোক যে কিয়ামতের দিন অনেক সালাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে অথচ সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ ভক্ষণ করেছে আবার কাউকে রক্তাক্ত বা প্রহার করেছে, অতঃপর আল্লাহ তার পুণ্য হতে তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, অত্যাচারিত ব্যক্তিদের পাওনা আদায় করে দিবেন। যখন পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ করার পূর্বেই তার পুণ্য শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের পাপগুলো তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”[98]
সমাপ্ত
[1] সহীহ মুসলিম।
[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৩০০।
[3] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৬।
[4] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬।
[5] আহমদ, হাদীস নং ২১৮৫৯।
[6] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭।
[7] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৬।
[8] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৩৩।
[9] তিরমিযী, হাদীস নং ২৫৪৯।
[10] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮০২।
[11] তিরমিযী, হাদীস নং ১২৭৬।
[12] তিরমিযী, হাদীস নং ১৮৬, সহীহ আল-জামে।
[13] হাকেম, সহীহ আল-জামে।
[14] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১০৭।
[15] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৬৭।
[16] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২২৬৭।
[17] ইবন আসাকির, সহীহ আল-জামে।
[18] আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫৫৯।
[19] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩১।
[20] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৬০।
[21] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৬০।
[22] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৭৩৪।
[23] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১৮৯।
[24] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৬৪৭।
[25] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬১৮২।
[26] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৭৫।
[27] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮৬।
[28] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৮৬।
[29] সহীহ মসলিম, হাদীস নং ১৫৮।
[30] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৬২৯।
[31] আহমদ।
[32] আহমদ, হাদীস নং ৬৬৮৯।
[33] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৫৭৪।
[34] আহমদ , হাদীস নং ৫৮৩৯।
[35] আহমদ, হাদীস নং ৭৯৩৭।
[36] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬১১।
[37] আবু দাউদ, হাদীস নং ২২০১।
[38] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৫৬।
[39] আহমদ, হাদীস নং ১১৯৩৫।
[40] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।
[41] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৫৫।
[42] কিতাবুস সুন্নাহ: ইবন আবী আসিম আশ-শায়বানী
[43] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৫২০।
[44] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৬।
[45] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪৬৫৯।
[46] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।
[47] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩২৭২।
[48] আহমদ, হাদীস নং ১২৫।
[49] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৩৭।
[50] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৮।
[51] আহমদ, হাদীস নং ১০৭৯।
[52] আহমদ, সহীহ আল-জামে।
[53] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০০২।
[54] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৯৩।
[55] তিরমিযী, হাদীস নং ১০৯৩; সহীহ আল-জামে।
[56] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৪০৬।
[57] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩০৮৪।
[58] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৭৮৩।
[59] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৯৮।
[60] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১২১২।
[61] আবু দাউদ, হাদীস নং ৪২৫০।
[62] আহমদ, হাদীস নং ৪২০১।
[63] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩১৩১।
[64] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৩৪।
[65] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬।
[66] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৫৭২।
[67] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৪১।
[68] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৪২।
[69] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২০৩।
[70] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬০৫৫।
[71] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৩।
[72] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৫৭।
[73] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৯৮২।
[74] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২৩।
[75] তিরমিযী, হাদীস নং ৩১৭; সহীহ আল-জামে।
[76] আহমদ, হাদীস নং ৬৩৮২উ
[77] তিরমিযী, হাদীস নং ২০৬৬
[78] তিরমিযী।
[79] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১৯৪।
[80] দারেমী, হাদীস নং ১৫২৪।
[81] ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৭৮৫।
[82] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১২৫।
[83] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৩৮।
[84] বায়হাকী, সিলসিলাতুত সহীহাহ।
[85] আবু দাউদ, হাদীস নং ৩১২৩।
[86] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৯৮।
[87] তাবারানী, সহীহ আল-জামে।
[88] জামে তিরমিযী, হাদীস নং ১২৪৪।
[89] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩।
[90] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০০।
[91] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৬৫৭।
[92] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৯১।
[93] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৩১।
[94] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৬৬।
[95] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭৭।
[96] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৪১।
[97] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৪২।
[98] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৮২।
Leave a Reply