মিরাজের রাত্রে নবী (সা) কি আল্লাহর দর্শন পেয়েছেন?

মিরাজের রাত্রে নবী (সা) কি আল্লাহর দর্শন পেয়েছেন?

মহান আল্লাহর দর্শন পথের জ্ঞান >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৭৭.অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “নিশ্চয় তিনি তাঁকে দ্বিতীয়বার দেখেছেন”-[সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ১৩] নবি[ সাঃআ:] কি ইসরা মিরাজের রাত্রে তাহাঁর প্রভূকে দেখেছেন?
৭৮. অধ্যায়ঃ রসূল [সাঃআ:] এর বাণীঃ তা ছিল উজ্জ্বল জ্যোতি আমি তা দেখেছি। অন্য বর্ণনায়ঃ আমি উজ্জ্বল জ্যোতি দেখেছি।
৭৯. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর বাণী- নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলাকে নিদ্রা স্পর্শ করে না ; তিনি [সাঃআ:] আরও বলেনঃ “নূরই তাহাঁর আড়াল, যদি তা প্রকাশ পেত তাহলে তাহাঁর চেহারার জ্যোতি সৃষ্টি জগতের যতদুর পর্যন্ত পৌঁছতো তা পুড়ে ছারখার করে দিতো”
৮০. অধ্যায়ঃ আখিরাতে মুমিনগণ তাহাদের প্রভুকে দেখিতে পাবে
৮১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর দর্শন পথের জ্ঞান

৭৭.অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহ্‌র বাণীঃ “নিশ্চয় তিনি তাঁকে দ্বিতীয়বার দেখেছেন”-[সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ১৩] নবি[ সাঃআ:] কি ইসরা মিরাজের রাত্রে তাহাঁর প্রভূকে দেখেছেন?

৩২৪. আবু হুরাইরাহ [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

 وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى‏

“নিশ্চয় তিনি তাকে আরেকবার দেখেছিলেন”-[সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ : ১৩] আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেছেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] জিবরীল [আ:]-কে দেখেছিলেন।

[ই.ফা. ৩৩২; ই.সে. ৩৪৩]

৩২৫. ইবনি আব্বাস [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর প্রতিপালককে অন্তর দ্বারা অনুভূতির মাধ্যমে দেখেছেন।

[ই.ফা. ৩৩৩, ই সে.৩৪৪]

৩২৬. ইবনি আব্বাস [রাযিঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র বাণীঃ

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى

“তিনি যা দেখেছেন, তাহাঁর অন্তকরণ তা অস্বীকার করেনি”

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى‏

“এবং নিশ্চয়ই তিনি তাঁকে আরেক বার দেখেছেন” [সূরাহ আন্‌ নাজ্‌ম ৫৩ :১১ ও ১৩] আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যা হচ্ছেঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] তাহাঁর প্রভূকে হৃদয় অন্তকরণ দ্বারাই দেখেছেন। [অর্থাৎ বাহ্যিক চোখে প্রত্যক্ষ করেননি]।

[ই.ফা. ৩৩৪; ই.সে. ৩৪৫]

৩২৭. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু জাহমাহ এ সানাদে উপরোক্ত হাদীসের অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন।

[ই.ফা. ৩৩৫; ই.সে. ৩৪৬]

৩২৮. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশাহ্‌ [রাঃআ:] -এর মাজলিসে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। তখন তিনি বলছেন, হে আবু আয়িশাহ্‌। তিনটি কথা এমন, যে এর কোন একটি বললো, সে আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ভীষণ অপবাদ দিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সেগুলি কি? তিনি বলিলেন, যে এ কথা বলে যে, মুহাম্মাদ [সাঃআ:] তাহাঁর প্রতিপালককে দেখেছেন, সে আল্লাহ্‌র উপর ভীষণ অপবাদ দিল। রাবী মাসরূক বলেন, আমি তো হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলাম, এবার সোজা হয়ে বসলাম। বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! থামুন। আমাকে সময় দিন, ব্যস্ত হইবেন না। আল্লাহ্‌ তাআলা কুরআনে কি বলেননি?

وَلَقَدْ رَآهُ بِالأُفُقِ الْمُبِينِ

“তিনি [রসূল] তো তাঁকে [আল্লাহকে] স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন।-[সূরাহঃ আত তাকভীর ৮১ : ২৩]। অন্যত্র

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى

“নিশ্চয় তিনি তাঁকে আরেকবার দেখেছিলেন” -[সূরাহ আন নাজম ৫৩ : ১৩]। আয়িশা [রাঃআ:] বলেন, আমিই এ উম্মাতের প্রথম ব্যক্তি, যে রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছেনঃ তিনি তো ছিলেন জিবরীল [আ:]। কেবল মাত্র এ দুবারই আমি তাঁকে তাহাঁর আসল আকৃতিতে দেখেছি। আমি তাঁকে আসমান থেকে অবতরণ করিতে দেখেছি। তাহাঁর বিরাট দেহ ঢেকে ফেলেছিল আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সব স্থানটুকু। আয়িশা [রাঃআ:] আরো বলেন, তুমি শোননি? আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেনঃ “তিনি [আল্লাহ্‌] দৃষ্টির অধিগম্য নন, তবে দৃষ্টিশক্তি তাহাঁর অধিগত এবং তিনি সূক্ষদর্শী ও সম্যক পরিজ্ঞাত” [সূরাহ আল আনআম ৬ : ১০৩]। এরূপে তুমি কি শোননি? আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “মানুষের এমন মর্যাদা নেই যে, আল্লাহ্‌ তাহাঁর সাথে কথা বলবেন, ওয়াহীর মাধ্যম ব্যতিরেকে, অথবা পর্দার অন্তরাল ব্যতিরেখে, অথবা এমন দূত প্রেরণ ব্যতিরেকে যে তাহাঁর অনুমতিক্রমে তিনি যা চান তা ব্যক্ত করেন, তিনি সমুন্নত ও প্রজ্ঞাময়”-[সূরাহ আশ শূরা ৪২ : ৫১]। আয়িশাহ [রাঃআ:] বলেন, আর ঐ ব্যক্তিও আল্লাহ্‌র উপর ভীষণ অপবাদ দেয়, যে এমন কথা বলে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আল্লাহ্‌র কিতাবের কোন কথা গোপন রেখেছেন। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ “হে রসূল! আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করুন, যদি তা না করেন তবে আপনি তাহাঁর বার্তা প্রচারই করিলেন না-[সূরাহ আল মায়িদাহ ৫ : ৬৭]। তিনি আয়িশাহ [রাঃআ:] আরো বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা বলে যে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আল্লাহ্‌র ওয়াহী ব্যতীত আগামীকাল কি হইবে তা অবহিত করিতে পারেন, সেও আল্লাহ্‌র উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “বল, আসমান ও জমিনে আল্লাহ্‌ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না”- [সূরাহ আন্‌ নাম্‌ল ২৭ : ৬৫]।

[ই.ফা. ৩৩৬; ই.সে. ৩৪৭]। arbi

৩২৯. মুহাম্মাদ ইবনি আল মুসান্না [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

উক্ত সানাদে ইবনি উলাইয়্যাহ-এর হাদীসে অবিকল বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এতে এতটুকু অতিরিক্ত আছে, আয়িশা [রাঃআ:] বলেন, যদি মুহাম্মাদ [সাঃআ:] তাহাঁর উপর অবতীর্ণ ওয়াহীর কোন অংশ গোপন করিতেন তবে তিনি এ আয়াতটি অবশ্য গোপন করিতেনঃ “স্মরণ করুন, আল্লাহ্‌ যাকে অনুগ্রহ দান করিয়াছেন এবং আপনিও যার {রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর পোষ্য পুত্র যায়দ} প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন আপনি তাকে বলেছিলেন

‏ وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ أَمْسِكْ عَلَيْكَ زَوْجَكَ وَاتَّقِ اللَّهَ وَتُخْفِي فِي نَفْسِكَ مَا اللَّهُ مُبْدِيهِ وَتَخْشَى النَّاسَ وَاللَّهُ أَحَقُّ أَنْ تَخْشَاهُ‏

“তুমি তোমার স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ এবং আল্লাহ্‌ কে ভয় কর। আর আপনি আপনার অন্তরে গোপন করেছিলেন। অথচ আল্লাহ্‌ তা প্রকাশকারী। আপনি লোককে ভয় করেছিলেন, অথচ আল্লাহকে ভয় করা আপনার জন্য অধিকতর সঙ্গত” – [সূরাহ আল আহযাব ৩৩ : ৩৭]।

[ই.ফা. ৩৩৭; ই.সে. ৩৪৮]

৩৩০. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আয়িশা [রাঃআ:]–কে জিজ্ঞেস করলাম- নবি [সাঃআ:] তাহাঁর রবকে দেখেছেন কি? জবাবে তিনি [আতঙ্ক বা আশ্চর্যের সাথে] বলিলেন, সুবহানাল্লাহ্‌! তোমার কথা শুনে আমার শরীরের পশম কাঁটা দিয়ে খাড়া হয়ে গেছে। অতঃপর হাদীসের পূর্ণ বিবরণ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ প্রসঙ্গে দাঊদের হাদীসটিই পরিপূর্ণ ও বিস্তৃত।

[ই.ফা. ৩৩৮; ই.সে. ৩৪৯]

৩৩১. মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন আমি আয়িশা [রাঃআ:]–কে বললাম, [আপনি তো বলেন, মহানবি [সাঃআ:] তাহাঁর প্রতিপালককে দেখেননি] তাহলে আল্লাহর এ বাণীর জবাব কি?

 ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى * فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى * فَأَوْحَى إِلَى عَبْدِهِ مَا أَوْحَى‏

“এমনকি দুই ধনুকের সমান কিংবা তার চেয়েও কম দূরত্ব থেকে গেল। তখন আল্লাহর বান্দাকে যে ওয়াহী পৌছার ছিল তা পৌছে দিল”- [সূরাহ আন নাজম ৫৩ : ৯-১১]। আয়িশা [রাঃআ:] বলিলেন, ইনি তো হলেন জিবরীল [আ:]। সাধারণত তিনি নবি [সাঃআ:]–এর কাছে আসতেন মানুষের আকৃতিতে। কিন্তু এবার এসেছিলেন তাহাঁর আসল রূপে। তাহাঁর দেহ আকাশের সীমা ঢেকে ফেলেছিল।

[ই.ফা. ৩৩৯; ই.সে. ৩৫০]

৭৮. অধ্যায়ঃ রসূল [সাঃআ:] এর বাণীঃ তা ছিল উজ্জ্বল জ্যোতি আমি তা দেখেছি। অন্য বর্ণনায়ঃ আমি উজ্জ্বল জ্যোতি দেখেছি।

৩৩২. আবু যার [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]–কে জিজ্ঞেস করেছি, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? তিনি [সাঃআ:] বললেনঃ তিনি [আল্লাহ্‌] নূর, তা আমি কি রূপে দেখবো?

[ই.ফা. ৩৪০; ই.সে. ৩৫১]

৩৩৩. আবদুল্লাহ ইবনি শাকীক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আমি আবু যার [রাঃআ:]-কে বললাম, যদি রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]–এর দেখা পেতাম তবে অবশ্যই তাঁকে একটি কথা জিজ্ঞেস করতাম। আবু যার [রাঃআ:] বলিলেন, কি জিজ্ঞেস করিতে? তিনি বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতাম যে, আপনি কি আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন? আবু যার [রাঃআ:] বলিলেন, এ কথা তো আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি বলেছেন, আমি নূর দেখেছি।

[ই.ফা. ৩৪১; ই.সে. ৩৫২]

৭৯. অধ্যায়ঃ রসুলুল্লাহ [সাঃআ:]-এর বাণী- নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলাকে নিদ্রা স্পর্শ করে না ; তিনি [সাঃআ:] আরও বলেনঃ “নূরই তাহাঁর আড়াল, যদি তা প্রকাশ পেত তাহলে তাহাঁর চেহারার জ্যোতি সৃষ্টি জগতের যতদুর পর্যন্ত পৌঁছতো তা পুড়ে ছারখার করে দিতো”

৩৩৪. আবু মূসা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

একবার রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে পাঁচটি কথা বললেনঃ [১] আল্লাহ্‌ কখনও নিদ্রা যান না। [২] নিদ্রিত হওয়া তাহাঁর সাজেও না। [৩] তিনি তাহাঁর ইচ্ছানুসারে মীযান [দাঁড়িপাল্লা] নামান এবং উত্তোলন করেন। [৪] দিনের পূর্বেই রাতের সকল আমাল তাহাঁর কাছে পেশ করা হয়। রাতের পূর্বেই দিনের সকল আমাল তাহাঁর কাছে পেশ করা হয়। [৫] তিনি নূরের পর্দায় আচ্ছাদিত। আবু বকর [রাঃআ:]-এর আরেক বর্ণনায় [আরবী] [আলো] এর পরিবর্তে [আরবী] [আগুন] শব্দের উল্লেখ রয়েছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] বলেন, যদি সে আবরণ খুলে দেয়া হয়, তবে তাহাঁর নুরের আলোচ্ছটা সৃষ্টি জগতের দৃশ্যমান সব কিছু ভস্ম করে দিবে।

[ই.ফা. ৩৪২, ই সে. ৩৫৩]

৩৩৫. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

পূর্ব বর্ণিত সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ রিওয়ায়াতে বলা হয়েছে, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের সম্মুখে চারটি কথা নিয়ে দাঁড়ালেন। বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি [আরবী] সৃষ্টি জগতের শব্দ উল্লেখ করেননি এবং তিনি [আরবী] তিনি নূরের পর্দায় আচ্ছাদিত শব্দ উল্লেখ করিয়াছেন।

[ই.ফা. ৩৪৩; ই.সে. ৩৫৪]

৩৩৬. আবু মূসা [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআ:] আমাদের সম্মুখে চারটি কথা নিয়ে আলোচনা করে বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলা কখনো নিদ্রা যান না আর নিদ্রা তাহাঁর জন্য শোভাও পায় না, তিনি তুলাদণ্ড উচু এবং নীচু করেন, তাহাঁর নিকট রাতের পূর্বেই দিনের আমাল উত্থিত হয় এবং দিনের পূর্বে রাতের আমাল উত্থিত হয়।

[ই.ফা. ৩৪৪; ই.সে. ৩৫৫]

৮১. অধ্যায়ঃ মহান আল্লাহর দর্শন পথের জ্ঞান

৩৪০. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

কয়েকজন সহাবা রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখিতে পাবো? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ পূর্ণিমার রাতে চাঁদ দেখিতে কি তোমাদের পরস্পরের মাঝে কষ্ট হয়? সহাবাগণ বলিলেন, না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখিতে কি তোমাদের পরস্পরের কষ্টবোধ হয়? তাঁরা বলিলেন, না। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ তদ্রূপ তোমরা তাঁকেও দেখবে। কিয়ামাত দিবসে আল্লাহ সকল মানুষকে জমায়েত করে বলবেন, পৃথিবীতে তোমাদের যে যার ইবাদাত করেছিলে আজ তাকেই অনুসরণ কর। তখন যারা সূর্যের উপাসনা করতো, তারা সূর্যের সাথে থাকিবে। যারা চন্দ্রের উপাসনা করতো, তারা চন্দ্রের সাথে থাকিবে। আর যারা আল্লাহদ্রোহীদের [তাগূতের] উপাসনা করতো, তারা আল্লাহদ্রোহীদের সাথে জমায়েত হয়ে যাবে। কেবল এ উম্মাত অবশিষ্ট থাকিবে। তন্মধ্যে মুনাফিকরাও থাকিবে। তখন আল্লাহ তাআলা তাহাদের নিকট এমন আকৃতিতে উপস্থিত হইবেন যা তারা চিনে না। তারপর [আল্লাহ তাআলা] বলবেন, আমি তোমাদের প্রতিপালক [সুতরাং তোমরা আমার পিছনে চল]। তারা বলবে, নাঊযুবিল্লাহ। আমাদের প্রভু না আসা পর্যন্ত আমরা এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো। আর তিনি যখন আসবেন, তখন আমরা তাকে চিনতে পারবো। এরপর আল্লাহ তাআলা তাহাদের নিকট তাহাদের পরিচিত আকৃতিতে আসবেন, বলবেন : আমি তোমাদের প্রভু। তারা বলবে, হ্যাঁ, আপনি আমাদের প্রভু। এ বলে তারা তাঁকে অনুসরণ করিবে। এমন সময়ে জাহান্নামের উপর দিয়ে সিরাত [সাঁকো] বসানো হইবে। {নবি [সাঃআ:] বলেন} আর আমি ও আমার উম্মাতই হব প্রথম এ পথ অতিক্রমকারী। সেদিন রসূলগণ ব্যতীত অন্য কেউ মুখ খোলারও সাহস করিবে না। আর রসূলগণও কেবল এ দুআ করবেন। হে আল্লাহ! নিরাপত্তা দাও, নিরাপত্তা দাও। আর জাহান্নামে থাকিবে সাদান বৃক্ষের কাঁটার মত অনেক কাঁটাযুক্ত লৌহদণ্ড। তোমরা সাদান বৃক্ষটি দেখেছ কি? সহাবাগণ বলিলেন, হ্যাঁ দেখেছি। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ তা সাদান বৃক্ষের কাঁটার মতই, তবে সেটা যে কত বিরাট তা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। পাপ কাজের জন্য কাঁটার আংটাগুলো ছোবল দিতে থাকিবে। তাহাদের কেউ কেউ মুমিন [যারা সাময়িক জাহান্নামী] তারা রক্ষা পাবে, আর কেউ তো শাস্তি ভোগ করে নাযাত পাবে। এরপর আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে ফায়সালা হতে অবসর হলে স্বীয় রহমাতে কিছু সংখ্যক জাহান্নামীদের [জাহান্নাম হতে] বের করিতে দেয়ার ইচ্ছা করবেন তখন ফেরেশতাহাদেরকে নির্দেশ দিবেন যারা কালিমায় বিশ্বাসী ও শির্‌ক করেনি যাদের উপর আল্লাহ তাআলা রহম করিতে চাইবেন যে, তাহাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিয়ে আসো। আর যাদের উপর আল্লাহ তাআলা দয়া করিতে চেয়েছেন তারা ঐ সকল লোক যারা লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হ বলত। অতঃপর ফেরেশতাগণ তাহাদের সনাক্ত করবেন। তারা সাজদাহ চিহ্নের সাহায্যে তাহাদের চিনবেন। কারণ, অগ্নি মানুষের দেহের সবকিছু জ্বালিয়ে ফেললেও সাজদার স্থান অক্ষত থাকিবে। আল্লাহ তাআলা সাজদার চিহ্ন নষ্ট করা হারাম [নিষিদ্ধ] করে দিয়েছেন। মোটকথা, ফেরেশতাগণ এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে এমন অবস্থায় যে, তাহাদের দেহ আগুনে দগ্ধ। তাহাদের উপর মাউল-হায়াত [সঞ্জীবনী পানি] ঢেলে দেয়া হইবে। তখন তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর পানিসিক্ত উর্বর জমিতে সতেজ হয়ে উঠে। তারপর আল্লাহ তাআলা বান্দাদের বিচার সমাপ্ত করবেন। শেষে এক ব্যক্তি থেকে যাবে। তার মুখমণ্ডল হইবে জাহান্নামের দিকে। এই হইবে সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারী। সে বলবে, হে আমার প্রভু! [অনুগ্রহ করে] আমার মুখটি জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিন। কারণ জাহান্নামের দুর্গন্ধ আমাকে অসহনীয় কষ্ট দিচ্ছে; এর লেলিহান অগ্নিশিখা আমাকে দগ্ধ করে দিচ্ছে। আল্লাহ যতদিন চান ততদিন পর্যন্ত সে তাহাঁর নিকট দুআ করিতে থাকিবে। পরে আল্লাহ বলবেন, তোমার এ দুআ কবূল করলে তুমি কি আরো কিছু কামনা করিবে? সে বিভিন্ন ধরণের ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে বলবে যে, জাহান্নামের দিক থেকে ফিরিয়ে দিবেন। তার চেহারা যখন জান্নাতের দিকে ফিরিয়ে দেয়া হইবে, আর সে জান্নাত দেখবে, তখন আল্লাহ যতদিন চান সে নীরব থাকিবে। পরে আবার বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেবল জান্নাতের দরজা পর্যন্ত আমাকে পৌঁছে দিন। আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি না অঙ্গীকার দিয়েছিলে যে, আমি তোমাকে যা দিয়েছি তা ছাড়া আর কিছু চাইবে না। হে আদাম সন্তান! তুমি হতভাগা ও তুমি সাংঘাতিক ওয়াদাভঙ্গকারী। তখন সে বলবে, হে আমার রব! এই বলে আল্লাহর কাছে দুআ করিতে থাকিবে। আল্লাহ বলবেন, তুমি যা চাও তা যদি দিয়ে দেই তবে আর কিছু চাইবে না তো? সে বলবে, আপনার ইজ্জতের কসম! আর কিছু চাইব না। এভাবে সে তার অক্ষমতা [আল্লাহর কাছে] পেশ করিতে থাকিবে যতদিন আল্লাহর ইচ্ছা হয়। তারপর তাকে জান্নাতের দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া হইবে। এবার যখন সে জান্নাতের দরজায় দাঁড়াবে, তখন জান্নাত তার সামনে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। সে জান্নাতের সমৃদ্ধি ও সুখ দেখিতে থাকিবে। সেখানে আল্লাহ যতক্ষণ চান সে ততক্ষণ চুপ করে থাকিবে। পরে বলবে, হে আমার রব! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন। আল্লাহ বলবেন, তুমি না সকল ধরণের ওয়াদা ও অঙ্গীকার করে বলেছিলে, আমি যা দান করেছি এর চাইতে বেশি আর কিছু চাইবে না? হে হতভাগা আদাম সন্তান! তুমি তো ভীষণ ওয়াদাভঙ্গকারী। সে বলবে, হে আমার রব! আমি যেন আপনার সৃষ্টির সবচেয়ে দুর্ভাগা না হই। সে বার বার দুআ করিতে থাকিবে। পরিশেষে তার অবস্থা দেখে আল্লাহ তাআলা হেসে ফেলবেন। আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। [জান্নাতে প্রবেশের পর] আল্লাহ তাকে বলবেন, [যা চাওয়ার] চাও। তখন সে তার সকল কামনা চেয়ে শেষ করিবে। এরপর আল্লাহ নিজেই স্মরন করায়ে বলবেন, অমুক অমুকটা চাও। এভাবে তার কামনা শেষ হয়ে গেলে আল্লাহ বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেয়া হলো।

আতা ইবনি ইয়াযীদ বলেন, এবং আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] এ হাদীসটি আবু হুরাইরা [রাঃআ:]-এর অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বর্ণিত এ হাদীসের কোন কথাই রদ করেননি। তবে আবু হুরাইরা [রাঃআ:] যখন এ কথা উল্লেখ করিলেন, “আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে বলবেন, তোমাকে এ সব এবং এর সমপরিমাণ আরো দেয়া হলো” তখন আবু সাঈদ [রাঃআ:] বললেনঃ হে আবু হুরাইরা! বরং তা সহ আরো দশগুণ দেয়া হইবে। আবু হুরাইরা [রাঃআ:] বলিলেন, আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকে “এর সম-পরিমাণ” এ শব্দ স্মরণ রেখেছি। আবু সাঈদ [রাঃআ:] বলিলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমি রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকে “আরো দশগুণ” এ শব্দ সংরক্ষিত রেখেছি।

রাবী বলেন, আবু হুরাইরা [রাঃআ:] পরিশেষে বলেন, এ ব্যক্তি হইবে জান্নাতে সর্বশেষ প্রবেশকারী।

[ই.ফা. ৩৪৮; ই.সে. ৩৫৯]

৩৪১. আবু হুরাইরাহ [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

সহাবাগণ রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাতের দিন আমরা কি আমাদের রবকে দেখিতে পাব? ….. এরপর রাবী ইবরাহীম ইবনি সাদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ উল্লেখ করেন।

[ই.ফা. ৩৪৯; ই.সে. ৩৬০]

৩৪২. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিতঃ

আবু হুরাইরা [রাঃআ:] আমাদেরকে রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] থেকে কতিপয় হাদীস বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে এটিও ছিল, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের জান্নাতীকে বলা হইবে যে, তুমি কামনা কর। সে কামনা করিতে থাকিবে এবং আরো কামনা করিবে। আল্লাহ তাকে বলবেন, তোমার যা কামনা করার তা কি করেছ? সে বলবে, জ্বী! আল্লাহ বলবেন, যা কামনা করেছ তা এবং এর অনুরূপ তোমাকে প্রদান করা হল।

[ই.ফা. ৩৫০; ই.সে. ৩৬১]

৩৪৩. আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-এর যুগে কতিপয় লোক তাঁকে জিজ্ঞেস করে বলিল, হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামাত দিবসে আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে দেখিতে পাবো? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ হ্যাঁ! তিনি আরো বললেনঃ দুপুরে মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখিতে কি তোমাদের কষ্ট হয়? চন্দ্রের চৌদ্দ তারিখে মেঘমুক্ত অবস্থায় চন্দ্র দেখিতে কি তোমাদের কষ্ট হয়? সকলে বলিলেন, হে আল্লাহর রসূল! তা হয় না। নবি [সাঃআ:] বললেনঃ ঠিক তদ্রূপ কিয়ামাত দিবসে তোমাদের বারাকাতময় মহামহিম প্রতিপালককে দেখিতে কোনই কষ্ট অনুভব হইবে না যেমন চন্দ্র ও সূর্য দেখিতে কষ্ট অনুভব কর না। সে দিন এক ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবে, যে যার উপাসনা করতো সে আজ তার অনুসরণ করুক। তখন আল্লাহ ব্যতীত তারা অন্য দেব-দেবী ও মূর্তিপূজার বেদীর উপাসনা করত তাহাদের কেউ অবশিষ্ট থাকিবে না; সকলেই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হইবে। সৎ হোক বা অসৎ যারা আল্লাহর ইবাদাত করত তারাই কেবল অবশিষ্ট থাকিবে এবং কিতাবীদের [যারা দেব-দেবী ও বেদীর উপাসক ছিল না তারাও বাকী থাকিবে]। এরপর ইয়াহূদীদেরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করা হইবে, তোমরা কার ইবাদাত করিতে? তারা বলবে, আল্লাহর পুত্র উযায়র-এর। তাহাদেরকে বলা হইবে মিথ্যা বলছো। আল্লাহ কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। তোমরা কি চাও? তারা বলবে, হে আল্লাহ! আমাদের খুবই পিপাসা পেয়েছে। আমাদের পিপাসা নিবারণ করুন। প্রার্থনা শুনে তাহাদেরকে ইঙ্গিত করে মরীচিকাময় জাহান্নামের দিকে জমায়েত করা হইবে। সেখানে আগুনের লেলিহান শিখা যেন পানির ঢেউ খেলবে। এর একাংশ আরেক অংশকে গ্রাস করিতে থাকিবে। তারা এতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এরপর খৃস্টানদেরকে ডাকা হইবে, বলা হইবে, তোমরা কার ইবাদাত করিতে? তারা বলবে, আল্লাহর পুত্র মাসীহ-এর [ঈসার] উপাসনা করতাম। বলা হইবে, মিথ্যা বলছ। আল্লাহ কোন স্ত্রী বা সন্তান গ্রহণ করেননি। জিজ্ঞেস করা হইবে, এখন কি চাও? তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমাদের দারুণ পিপাসা পেয়েছে, আমাদের পিপাসা নিবারণ করুন। তখন তাহাদেরকেও পানির ঘাটে যাবার ইঙ্গিত করে জাহান্নামের দিকে হাকিয়ে নিয়ে জমায়েত করা হইবে। এটিকে মরীচিকার ন্যায় মনে হইবে। সেখানে আগুনের লেলিহান শিখা যেন পানির ঢেউ খেলবে। এর একাংশ অপর অংশকে গ্রাস করে নিবে। তারা তখন জাহান্নামে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকিবে। শেষে সৎ হোক বা অসৎ এক আল্লাহর উপাসক ব্যতীত আর কেউ [ময়দানে] অবশিষ্ট থাকিবে না। তখন আল্লাহ তাআলা পরিচিত আকৃতিতে তাহাদের নিকট আসবেন। বলবেন, সবাই তাহাদের স্ব স্ব উপাস্যের অনুসরণ করে চলে গেছে, আর তোমরা কার অপেক্ষা করছ? তারা বলবে, হে আমাদের প্রভু! যেখানে আমরা বেশী মুখাপেক্ষী ছিলাম সে দুনিয়াতেই আমরা অপরাপর মানুষ থেকে পৃথক থেকেছি এবং তাহাদের সঙ্গী হইনি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমিই তো তোমাদের প্রভু। মুমিনরা বলবে, “আমরা তোমার থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি” আল্লাহর সঙ্গে আমরা কিছুই শারীক করি না। এ কথা তারা দুই বা তিনবার বলবে। এমন কি কেউ কেউ অবাধ্যতা প্রদর্শনেও অবতীর্ণ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলবেন, আচ্ছা, তোমাদের নিকট এমন কোন নিদর্শন আছে যদ্বারা তাঁকে তোমরা চিনতে পার? তারা বলবে অবশ্যই আছে। এরপর পায়ের সাক [গোছা] উন্মোচিত হইবে। তখন পৃথিবীতে যারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে সাজদাহ্‌ করত, সে মূহুর্তে তাহাদেরকে আল্লাহ সাজদাহ্‌ করার অনুমতি দিবেন এবং তারা সবাই সাজদাহ্‌বনত হয়ে পড়বে। আর যে কারো ভয়-ভীতি কিংবা লোক দেখানোর জন্য সাজদাহ্‌ করতো তার মেরুদণ্ড শক্ত ও অনমনীয় করে দেয়া হইবে। যখনই তারা সাজদাহ্‌ করিতে ইচ্ছা করিবে তখনই তারা চিত হয়ে পড়ে যাবে। অতঃপর তারা তাহাদের মাথা উঠাবে এবং তিনি তাহাঁর আসলরূপে আবির্ভূত হইবেন। অতঃপর বলবেন, আমি তোমাদের রব, তারা বলবে, হ্যাঁ! আপনি আমাদের রব। তারপর জাহান্নামের উপর “জাস্‌র” [পুল] স্থাপন করা হইবে। শাফাআতেরও অনুমতি দেয়া হইবে। মানুষ বলিতে থাকিবে, হে আল্লাহ! আমাদের নিরাপত্তা দিন, আমাদের নিরাপত্তা দিন। জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআ:] ! “জাস্‌র” কী? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ এটি এমন স্থান যেখানে পা পিছলে যায়। সেখানে আছে নানা প্রকারের লৌহ শলাকা ও কাঁটা, দেখিতে নাজ্‌দের সাদান বৃক্ষের কাঁটার ন্যায়। মুমিনগণের কেউ তো এ পথ চোখের পলকের গতিতে, কেউ বিদ্যুৎ গতিতে, কেউ বায়ুর গতিতে, কেউ উত্তম অশ্ব গতিতে, কেউ উষ্ট্রের গতিতে অতিক্রম করিবে। কেউ তো অক্ষত অবস্থায় নাযাত পাবে, আর কেউ তো হইবে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় নাযাতপ্রাপ্ত। আর কতককে কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হইবে। অবশেষে মুমিনগণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করিবে। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ সে সত্তার কসম! যাঁহার হাতে আমার প্রাণ, ঐ দিন মুমিনগণ তাহাদের ঐ সব ভাইদের স্বার্থে আল্লাহর সাথে এত অধিক বিতর্কে লিপ্ত হইবে যারা জাহান্নামে রয়ে গেছে যে, তোমাদের পার্থিব অধিকারের ক্ষেত্রেও এমন বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না। তারা বলবে, হে রব! এরা তো আমাদের সাথেই সিয়াম, সলাত আদায় করত, হাজ্জ করত। তখন তাহাদেরকে নির্দেশ দেয়া হইবে যে, যাও, তোমাদের পরিচিতদের উদ্ধার করে আন। উল্লেখ্য এরা জাহান্নামে পতিত হলেও মুখমণ্ডল আযাব থেকে রক্ষিত থাকিবে। [তাই তাহাদেরকে চিনতে কোন অসুবিধা হইবে না।] মুমিনগণ জাহান্নাম হতে এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে আনবে। এদের অবস্থা এমন হইবে যে, কারোর তো পায়ের নলা পর্যন্ত, আবার কারো হাঁটু পর্যন্ত দেহ আগুন ছাই করে দিবে। উদ্ধার শেষ করে মুমিনগণ বলবে, হে রব! যাদের সম্পর্কে আপনি নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তাহাদের মাঝে আর কেউ অবশিষ্ট নেই। আল্লাহ বলবেন, পুনরায় যাও, যার অন্তরে এক দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন তারা আরো একদলকে উদ্ধার করে এনে বলবে, হে রব! অনুমতিপ্রাপ্তদের কাউকেও রেখে আসিনি। আল্লাহ বলবেন : আবার যাও, যার অন্তরে অর্ধ দীনার পরিমাণও ঈমান অবশিষ্ট পাবে তাকেও বের করে আন। তখন আবার এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের আপনি উদ্ধার করিতে বলেছিলেন তাহাদের কাউকে ছেড়ে আসিনি। আল্লাহ বলবেন : আবার যাও, যার অন্তরে অণু পরিমাণও ঈমান বিদ্যমান, তাকেও উদ্ধার করে আন। তখন আবারও এক বিরাট দলকে উদ্ধার করে এনে তারা বলবে, হে রব! যাদের কথা বলেছিলেন তাহাদের কাউকেও রেখে আসিনি।

সহাবা আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] বলেন, তোমরা যদি এ হাদীসের ব্যাপারে আমাকে সত্যবাদী মনে না কর তবে এর সমর্থনে নিম্নোক্ত আয়াতটি যদি চাও তবে তিলাওয়াত করিতে পার : “আল্লাহ অণু পরিমাণও যুল্‌ম করেন না এবং অণু পরিমাণ নেক কাজ হলেও আল্লাহ তা দ্বিগুণ করে দেন এবং তাহাঁর নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন”— [সূরাহ আন্‌ নিসা ৪ : ৪০]। এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন : ফেরেশতারা সুপারিশ করিলেন, নবিগণও সুপারিশ করিলেন এবং মুমিনরাও সুপারিশ করেছে, কেবলমাত্র আরহামুর রাহিমীন-পরম দয়াময়ই রয়ে গেছেন। এরপর তিনি জাহান্নাম থেকে এক মুঠো তুলে আনবেন, ফলে এমন একদল লোক মুক্তি পাবে যারা কখনো কোন সৎকর্ম করেনি এবং আগুনে জ্বলে লাল হয়ে গেছে। পরে তাহাদেরকে জান্নাতের প্রবেশ মুখের নাহরুল হায়াতে ফেলে দেয়া হইবে। তারা এতে এমনভাবে সতেজ হয়ে উঠবে, যেমনভাবে শস্য অঙ্কুর স্রোতবাহিত পানি ভেজা উর্বর জমিতে সতেজ হয়ে উঠে। [রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বললেনঃ] তোমরা কি কোন বৃক্ষ কিংবা পাথরের আড়াল কোন শস্যদানা অঙ্কুরিত হতে দেখনি? যেগুলো সূর্য কিরণের মাঝে থাকে সেগুলো হলদে ও সবুজ রূপ ধারণ করে আর যেগুলো ছায়াযুক্ত স্থানে থাকে সেগুলো সাদা হয়ে যায়। সহাবাগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! মনে হয় আপনি যেন গ্রামাঞ্চলে পশু চরিয়েছেন। রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] বলেনঃ এরপর তারা নহর থেকে মুক্তার ন্যায় ঝকঝকে অবস্থায় উঠে আসবে এবং তাহাদের গ্রীবাদেশে মোহরাঙ্কিত থাকিবে যা দেখে জান্নাতীগণ তাহাদের চিনতে পারবেন। এরা হর উতাকাউল্লাহ-আল্লাহর পক্ষ থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত। আল্লাহ তাআলা সৎ আমাল ব্যতীতই তাহাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এরপর আল্লাহ তাহাদেরকে লক্ষ্য করে বলবেন : যাও, জান্নাতে প্রবেশ কর। আর যা কিছু দেখছ সব কিছু তোমাদেরই। তারা বলবে, হে রব! আপনি আমাদেরকে এত দিয়েছেন যা সৃষ্টজগতের কাউকে দেননি। আল্লাহ বলবেন : তোমাদের জন্য আমার নিকট এর চেয়েও উত্তম বস্তু আছে। তারা বলবে, কী সে উত্তম বস্তু? আল্লাহ বলবেন : সে হলো আমার সন্তুষ্টি। এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হবো না।

ইমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ শাফাআত সম্পর্কীয় এ হাদীসটি আমি ঈসা ইবনি হাম্মাদ যুগবাতুর মিসরী-এর নিকট পাঠ করিতে বললাম, আপনি লায়স ইবনি সাদ থেকে নিজে এ হাদীসটি শুনেছেন? আমি কি আপনার পক্ষ থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করিতে পারি? তিনি উত্তর করিলেন, হ্যাঁ! এরপর আমি ঈসা ইবনি হাম্মাদকে হাদীসটি এ সূত্রে শুনিয়েছি যে, ঈসা ইবনি হাম্মাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:]-এর সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:]-কে বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আমাদের প্রভুকে দেখিতে পাবো? রসূলুল্লাহ্‌ [সাঃআ:] উত্তর করিলেন : মেঘমুক্ত আকাশে সূর্য দেখিতে ভীড়ের কারণে তোমাদের কি কোন অসুবিধা হয়? আমরা বললাম, না …..। এভাবে হাদীসটির শেষ পর্যন্ত তুলে ধরলাম। এ হাদীসটি হাফিয ইবনি মাইসারাহ্‌ বর্ণিত হাদিসেরই অনুরূপ। তিনি [আরবী] এ অংশটুকুর পর [আরবী] অর্থাৎ তাহাদের বলা হইবে : তোমাদের জন্য রয়েছে যা তোমরা দেখছ।

আবু সাঈদ আল খুদরী [রাঃআ:] বলেন, আমার কাছে রিওয়ায়াতে পৌঁছেছে যে, জাস্‌র [পুল] চুল অপেক্ষা অধিক সূক্ষ্ম ও তরবারি অপেক্ষা অধিক তীক্ষ্ণ।

তাছাড়া লায়সের হাদীসে [আরবী] বাক্যটির পরবর্তী অংশগুলো উল্লেখ নেই।

[ই.ফা. ৩৫১; ই.সে. ৩৬২]

৩৪৪. যায়দ ইবনি আসলাম [রাঃআ:] হইতে বর্ণিতঃ

পূর্ব বর্ণিত হাদীসদ্বয়ের সানাদের হাফ্‌স ইবনি মাইসারার অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ রিওয়ায়াতে শব্দগুলো কিছু কম বর্ণনা আছে।

[ই.ফা. ৩৫২; ই.সে. ৩৬৩]


Posted

in

by

Comments

One response to “মিরাজের রাত্রে নবী (সা) কি আল্লাহর দর্শন পেয়েছেন?”

Leave a Reply