আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকীদা
ইমাম আবূ জাফর আহমাদ আত-ত্বহাবী র.
অনুবাদঃ মো. আবদুল মতিন আবদুর রহমান
Islam House, Soudi Arab
ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সম্পাদনাঃ ড. আবূ বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
জন্মঃ কায়রো মিসর
ম্রিত্তুঃ ৩৩১ হিঃ
মাকতাবাতুস সুন্নাহ=২০৳ |
1. পরিচ্ছেদঃ আকিদা তাহাবি বইটি সম্পূর্ণ পড়ুন
2. শরহুল আকীদাহ আত তাহাবিয়া – সুচিপত্র
3. তাহাবী শরীফ – শারহু মাআনিল আছার
1. পরিচ্ছেদঃ আকিদা তাহাবি বইটি সম্পূর্ণ পড়ুন
আল-আকীদা আত-তাহাবিয়াঃ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা আবূ জাফর আহমদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সালামা আল-ইযদী আত-তাহাবী কর্তৃক সংকলিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকীদা সমগ্রের সারসংক্ষেপ। এ বইটি সকল মাযহাবের অনুসারী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতসকল ইমাম ও আলিমদের নিকট সমাদৃত হইয়াছে সমানভাবে। আরবীসহ বহু ভাষায় এর তরজমা ও ব্যাখ্যা লেখা হইয়াছে।
ভুমিকা: আল-আকীদা আত-তাহাবিয়া [ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ]ঃ প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা আবূ জাফর আহমদ ইবনু মুহাম্মদ ইবনু সালামা আল-ইযদী আত-তাহাবী কর্তৃক সংকলিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা সমগ্রের সারসংক্ষেপ। এ বইটি সকল মাযহাবের অনুসারী আহলে সুন্নাহর সকল ইমাম ও আলিমদের নিকট সমাদৃত হইয়াছে সমানভাবে। আরবীসহ বহু ভাষায় এর তরজমা ও ব্যাখ্যা লেখা হইয়াছে। এছাড়া আপারা পড়তে পারেন তাহাবি শরীফ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম : সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি সৃষ্টিকুলের রব।
প্রখ্যাত আলেম, হুজ্জাতুল ইসলাম, আবূ জাফর ওয়াররাক আত-ত্বহাবী র. মিসরে অবস্থানকালে বলেছিলেনঃ ফুকাহায়ে মিল্লাত আবূ হানীফা আন-নুমান ইবনু সাবেত আল-কুফী, আবূ ইউসুফ ইয়াকূব ইবনু ইবরাহীম আল-আনসারী এবং আবূ আব্দুল্লাহ ইবনু আল-হাসান আশ-শায়বানী র.-এর অনুসৃত নীতি অনুসারে এটা হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকীদা বা দীনী বিশ্বাস এবং তারা ধর্মের নীতিসমূহে যে আকীদা পোষণ করিতেন এবং সে সব নীতি অনুসারে তারা আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীনের মনোনীত দীন ইসলাম অনুসরণ করিতেন তার বিবরণ।
১। মহান আল্লাহ তায়ালার তাওফীক কামনা করে তাহার তাওহীদ[1] তথা একত্ববাদ সম্পর্কে আমরা বলব, নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এক, যাঁর কোনো শরীক [অংশীদার] নেই।
২। তাহার মতো কিছুই নেই।
৩। কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।
৪। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।
৫। তিনি ক্বাদীম[2] বা প্রাচীন, যার কোনো শুরু নেই। তিনি অনন্ত, যার কোনো অন্ত নেই।
৬। তাহার ক্ষয় নেই, ধ্বংস নেই।
৭। তাহার ইচ্ছা ব্যতীত কোনো কিছুই সংঘটিত হয় না।
৮। কল্পনাসমূহ তাহার [সম্পর্কে জানার জন্য] ধারে কাছে] পৌঁছুতে পারে না এবং বুঝ-জ্ঞান তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না।
৯। আর তিনি সৃষ্ট বস্তুর সদৃশ নন।
১০। তিনি চিরঞ্জীব, মারা যাবেন না, চির জাগ্রত, নিদ্রা যান না।
১১। তিনি [এমন] সৃষ্টিকর্তা [যার সৃষ্টির প্রতি] কোনো প্রয়োজন [সাহায্যের মুখাপেক্ষী হওয়া] ছাড়াই, তিনি কোনো প্রকার ক্লান্তি ছাড়াই [সবার] রিযিকদাতা।
১২। তিনি নির্ভয়ে প্রাণ সংহারকারী এবং বিনা ক্লেশে পুনরুত্থানকারী।
১৩। সৃষ্টির বহু পূর্ব থেকেই তিনি তাহার অনাদি গুণাবলীসহ বিদ্যমান ছিলেন, আর সৃষ্টির কারণে তাহার নতুন কোনো গুণের সংযোজন ঘটে নি এবং তিনি তাহার গুণাবলীসহ যেমন অনাদি ছিলেন, তেমনি তিনি স্বীয় গুণাবলীসহ অনন্ত থাকবেন।
১৪। সৃষ্টির কারণে তাহার গুণবাচক নাম খালেক’’ [সৃষ্টিকর্তা] হয় নি অথবা বিশ্ব জাহান সৃষ্টির কারণে তাহার গুণবাচক নাম বারী’’ [উদ্ভাবক] হয় নি।
১৫। প্রতিপাল্যের অবিদ্যমানতায়ও তিনি ছিলেন রব’ বা প্রতিপালক, আর মাখলুক সৃষ্টির পূর্বেও তিনি ছিলেন খালেক’ বা সৃষ্টিকর্তা।
১৬। মৃতদেরকে জীবন দান করার ফলে যেমন তাঁকে জীবনদানকারী’ বলা হয়ে থাকে তেমনিভাবে তাদেরকে জীবনদান করার পূর্বেও তিনি এই [জীবনদানকারী] নামের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপভাবে তিনি সৃষ্টিকুলের সৃজনের পূর্বেই সৃষ্টিকর্তা’ নামের অধিকারী ছিলেন।
১৭। এটা এই জন্য যে, তিনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রতিটি সৃষ্টিই তাহার অনুগ্রহ ভিখারী; আর সব কিছুই তাহার জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুরই মুখাপেক্ষী নন। তাহার মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’’ [সুরা আশ-শূরা, আয়াতঃ ১১]
১৮। তিনি স্বীয় জ্ঞানে সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন।
১৯। এবং তাদের [সৃষ্ট বস্তুর] জন্য সব কিছুরই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
২০। এবং তাদের জন্য মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করেছেন।
২১। সৃষ্ট জীবের সৃষ্টির পূর্বে কোনো কিছুই তাহার কাছে গোপন ছিল না। জীব জগতের সৃষ্টির পূর্বেই তাদের সৃষ্টির পরবর্তীকালের কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি সম্যক অবহিত ছিলেন।
২২। এবং তিনি তাদেরকে তাহার আনুগত্য করার আদেশ দিয়াছেন এবং তাহার অবাধ্যচরণ হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়াছেন।
২৩। আর সবকিছু তাহার নির্ধারণ ও ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়ে থাকে। তাহার ইচ্ছা কার্যকর হয়েই থাকে, তাহার ইচ্ছা ব্যতীত বান্দার কোনো ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয় না। অতএব তিনি বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়, আর যা চান না তা হয় না।
২৪। তিনি [আল্লাহ তায়ালা] অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা হিদায়েত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
২৫। আর সকলেই তাহার [আল্লাহ তায়ালার] ইচ্ছা অনুযায়ী তাহারই এ অনুগ্রহ ও এ ন্যায়বিচারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে[3]।
২৬। তিনি কারও প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সমকক্ষ হওয়ার উর্ধ্বে।
২৭। তাহার ফয়সালার কোনো পরিবর্তন নেই। কেউই তাহার নির্দেশ বাতিল করার নেই এবং তাহার নির্দেশকে পরাভূত করারও কেউ নেই।
২৮। উল্লিখিত সব কিছুর ওপরই আমরা ঈমান এনেছি এবং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করছি যে, এ [ভালো-মন্দ] সব কিছুই আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে আগত।
২৯। নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহার নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নবি এবং সন্তোষপ্রাপ্ত রাসূল।
৩০। তিনি নবিগণের মধ্যে সর্বশেষ নবি, মুত্তাক্বীদের ইমাম, রাসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রবের হাবীব [বন্ধু]।
৩১। আর তাহার পরবর্তী যুগে নবুওয়াতের যে সব দাবী উত্থাপিত হইয়াছে, তার সবগুলোই ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ।
৩২। তিনি সত্য, হিদায়াত, নূর ও জ্যোতিসহকারে সকল জিন ও সমস্ত মাখলুকের প্রতি প্রেরিত।
৩৩। নিশ্চয় কুরআন আল্লাহ তায়ালার কালাম, যা আল্লাহ তায়ালার নিকট থেকে কথা হিসেবে শুরু হয়ে এসেছে, তবে এর কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না[4]। এই কালামকে তিনি তাহার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অহী হিসাবে নাযিল করেছেন আর ঈমানদারগণ তাঁকে এ ব্যাপারে সত্য বলে মেনে নিয়েছেন। তারা দৃঢ় বিশ্বাস করেছেন যে, এটি সত্যিই আল্লাহ তায়ালার কথা বা কালাম, কোনো সৃষ্টির কথার মত সৃষ্টবস্তু নয়। অতএব, যে ব্যক্তি কুরআন শুনে তাকে মানুষের কালাম [কথা] বলে ধারণা করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। [যে কুরআনকে মানুষের কথা বলবে] আল্লাহ তায়ালা তাআলা তার নিন্দা করেছেন, তাকে দোষারোপ করেছেন এবং তাকে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যেমন, তিনি বলেছেন,
﴿سَأُصۡلِيهِ سَقَرَ ٢٦﴾ [المدثرঃ ٢٦]
শীঘ্রই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব।’’ [সুরা মুদ্দাস্সির, আয়াতঃ ২৬] আল্লাহ তায়ালা তাআলা জাহান্নামের এ ভীতি তো তাকে প্রদর্শন করিয়েছেন যে বলে,
﴿إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا قَوۡلُ ٱلۡبَشَرِ ٢٥﴾ [المدثرঃ ٢٥]
এটাতো মানুষের কথা বৈ আর কিছুই নয়’’। [সুরা মুদ্দাস্সির, আয়াতঃ ২৫] অতএব, আমরা জেনে নিলাম ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলাম যে, এ কুরআন মানুষের সৃষ্টিকর্তারই কালাম আর তা কোনো মানুষের কথার সাথে সাদৃশ্য রাখে না।
৩৪। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার প্রতি মানবিয় কোনো গুণ আরোপ করবে, সে কাফির হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি এতে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে সে শিক্ষা নিতে সক্ষম হইবে। আর [আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে] কাফিরদের মত নিরর্থক কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে উপলব্ধি করতে সক্ষম হইবে যে, আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীন তাহার গুণাবলীতে মানুষের মতো নন।
৩৫। আর জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ তায়ালাকে দেখার বিষয়টি সত্য। তবে সে দেখা সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ব করে নয়, আর তার পদ্ধতিও আমাদের অজানা। যেমনটি কুরআন ঘোষণা করে বলেছে,
﴿وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣﴾ [القيامةঃ ٢٢، ٢٣]
সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল আনন্দোজ্জল হইবে, সেগুলো তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে।’’ [সুরা আল-কিয়ামাহ, আয়াতঃ ২২] এ দেখার সঠিক ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা যেভাবে ইচ্ছা করেন এবং যেভাবে তিনি জানেন সে ভাবেই অনুষ্ঠিত হইবে।
আর এ সম্পর্কে যা কিছু সহিহ হাদীছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হইয়াছে তা যেমনটি তিনি বলেছেন সেভাবে অবিকৃত অবস্থায় গৃহীত হইবে আর সেগুলোর যে অর্থ তিনি উদ্দেশ্য নিয়েছেন সেটাই ধর্তব্য হইবে। এতে আমরা আমাদের মতের ওপর নির্ভর করে কোনো প্রকার অপব্যাখ্যা করব না, অনুরূপ কোনো প্রকার প্রবৃত্তির প্ররোচনায় নিপতিত হয়ে কোনো অযাচিত ধারণার বশবর্তী হবো না। কারণ, কোনো ব্যক্তি কেবল তখনই তার দীনকে [ভ্রষ্টতা ও বক্রতা থেকে] নিরাপদ রাখতে পারে, যখন সে মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তাহার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের [নির্দেশনার] কাছে নিঃশর্তভাবে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পন করবে এবং সংশয়ের ব্যাপারসমূহকে যে সেটা জানে সে আল্লাহ তায়ালার দিকেই প্রর্ত্যাবর্তন করাবে।
৩৬। বশ্যতা স্বীকার আর আত্মসমর্পণ ছাড়া কারও পা ইসলামের ওপর দৃঢ় থাকতে পারে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এমন বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের পিছনে লেগে থাকবে যা তার জ্ঞানের নাগালের বাইরে এবং যার বুঝ বশ্যতা স্বীকারে সন্তুষ্ট হইবে না, তার সে ইচ্ছা তাকে নির্ভেজাল তাওহীদ, স্বচ্ছ মারেফাত ও বিশুদ্ধ ঈমান থেকে বঞ্চিত রাখবে। ফলে সে কুফরী ও ঈমান সত্য ও মিথ্যা, স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি, সন্দেহ, দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে থাকবে। সে না সত্যবাদী মু’মিন হইবে, আর না অস্বীকারকারী মিথ্যাবাদী হইবে।
৩৭। যে ব্যক্তি জান্নাতীদের দ্বারা আল্লাহ তায়ালাকে দেখতে পাওয়া সম্পর্কে কোনো ধারণার বশবর্তী হইবে, [অথবা সেটাকে অনিশ্চিত বিষয় জ্ঞান করবে] অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সে দেখার ভুল ব্যাখ্যা দিবে, তার ঈমান বিশুদ্ধ হইবে না। কারণ, আল্লাহ তায়ালাকে দেখার বিষয়টি, অনুরূপ রবের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় গুণাগুণের বিষয়ে প্রকৃত ব্যাখ্যা হচ্ছে- সে [টার ধরণ] সম্পর্কে কোনোরূপ ব্যাখ্যা দেয়ার অপচেষ্টা না করা এবং সেটাকে অবিকৃতভাবে মেনে নেওয়া [গ্রহণ করা]। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের দীন [অনুসৃত নীতি]। যে ব্যক্তি [রবের সাথে সংশ্লিষ্ট গুণাগুণকে] নফী [অস্বীকৃতি] এবং তাশবীহ [সাদৃশ্য] হতে রক্ষা করতে সক্ষম হইবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে এবং সে সঠিকভাবে আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হইবে। কারণ, আমাদের মহান রব একক ও নজীরবিহীন হওয়ার গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের মধ্যে কেউ তাহার গুণে ভূষিত নয়।
৩৮। আর আল্লাহ তায়ালা তাআলা সীমা, পরিধি[5] থেকে উর্ধ্বে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সাজ-সরঞ্জাম থেকে মুক্ত। অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় ষষ্ঠ দিক তাঁকে বেষ্টন করে রাখতে পারে না।
৩৯। আর মিরাজ সত্য, নবি [মুহাম্মাদ] সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নৈশকালে ভ্রমণ করানো হয়েছিল, তাঁকে জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে উর্ধ্ব আকাশে উত্থিত করা হয়েছিল। সেখান থেকে আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা অনুসারে আরো উর্ধ্বে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাঁকে যা প্রত্যাদেশ করার ছিল তা করেছেন।
﴿مَا كَذَبَ ٱلۡفُؤَادُ مَا رَأَىٰٓ ١١﴾ [النجمঃ ١١]
“তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি।” [সুরা আন-নাজম, আয়াতঃ ১১] সুতরাং আল্লাহ তায়ালার তাহার ওপর আখিরাতে এবং দুনিয়ার জগতে সালাত ও সালাম পেশ করুন।
৪০। আর হাউয [পানির আধার] যা আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাহার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাহার উম্মতের পিপাসা নিবারণার্থে প্রদান করে সম্মানিত করেছেন, তা অবশ্যই সত্য।
৪১। আর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফাআত, যা তিনি উম্মতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন যেমনটি বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, তা সত্য।
৪২। মী-ছাক’’ [দৃঢ় অঙ্গীকার], যা আল্লাহ তায়ালা তাআলা আদম এবং তাহার সন্তানদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন তা সত্য।
৪৩। মহান আল্লাহ তায়ালা শুরু থেকে এবং এখন, সব সময়েই ভলো করেই জানেন, কত লোক জান্নাতে যাবে আর কত লোক জাহান্নামে যাবে। এতে ব্যতিক্রম হইবে না। তাই এ সংখ্যা কমবেও না, বাড়বেও না।
৪৪। অনুরূপভাবে আল্লাহ তায়ালা তাআলা মানুষের কৃতকর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবহিত এবং যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হইয়াছে, সে কাজ তার জন্য সহজ সাধ্য করে দেওয়া হইয়াছে। শেষ কর্ম দ্বারা মানুষের কৃতকার্যতা বিবেচিত হইবে এবং সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ তায়ালার ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হইয়াছে। আর হতভাগা সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ তায়ালার ফায়সালায় হতভাগা বলে নির্ধারিত হইয়াছে।
৪৫। আর তাকদীর’’ সম্পর্কে আসল কথা এই যে, এটা সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার একটি রহস্য; যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশ্তা কিংবা প্রেরিত কোনো নবিও অবহিত নন। এ সম্পর্কে তথ্য আবিস্কার করতে যাওয়া অথবা অনুরূপ আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া আশাহত হওয়ার নিশ্চিত কারণ, বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমালংঘনের ধাপ। অতএব সাবধান! এ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং কুমন্ত্রণা থেকে সতর্ক থাকুন। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাকদীর’ সম্পর্কিত জ্ঞান তাহার সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন এবং তাদেরকে এর উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তা’আলা বলেন,
﴿لَا يُسَۡٔلُ عَمَّا يَفۡعَلُ وَهُمۡ يُسَۡٔلُونَ ٢٣﴾ [الانبياءঃ ٢٣]
তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হইবে না, বরং তারা [তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে] জিজ্ঞাসিত হইবে’’। [সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াতঃ ২৩]
অতএব, যে ব্যক্তি একথা জিজ্ঞেস করবে তিনি কেন এ কাজ করলেন?’’ সে আল্লাহ তায়ালার কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।
৪৬। [তাকদীর বিষয়ে যা জানা ও যার উপর ঈমান আনার প্রয়োজন], উপরোক্ত আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে তা বিধৃত হইয়াছে। আল্লাহ তায়ালার ওলী তথা বন্ধুদের মধ্যে যার অন্তর জ্যোতিদীপ্ত তার জন্য এতটুকু জানাই প্রয়োজন। আর এটিই হচ্ছে জ্ঞানে সুগভীর প্রজ্ঞা বিভূষিতদের স্তর। [যারা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে আগত সংবাদকে মনে-প্রাণে গ্রহণ করে নেয় এবং তার কাছে আত্মসমর্পন করে]
কারণ, ইলম বা জ্ঞান দু’প্রকার। [১] যে জ্ঞান সৃষ্ট জীবের নিকট বিদ্যমান[6]। [২] যে জ্ঞান সৃষ্ট জীবের নিকট অবিদ্যমান[7]। বিদ্যমানকে অস্বীকার করাও যেমন কুফুরী, অবিদ্যমান জ্ঞানের দাবী করাও তেমনি কুফুরী। বিদ্যমান জ্ঞানের সাধনা করা, আর অবিদ্যমান জ্ঞানের অন্বেষন করা হতে বিরত থাকাই সুদৃঢ় ঈমানের পরিচয়।
৪৭। আর আমরা লাওহে মাহফুযে ঈমান রাখি, আরও ঈমান রাখি কলমের উপর। আর যা আল্লাহ তায়ালা লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তার সবকিছুতে। যা সংঘটিত হইবে বলে আল্লাহ তায়ালা এ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তা যদি সকল সৃষ্ট জীব একত্রিত হয়েও রোধ করতে চায় তারা সেটা করতে সক্ষম হইবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয় সংঘটিত হবার কথা তিনি লিখেননি, সমস্ত সৃষ্ট জীব একত্রিত হয়েও তা ঘটাতে পারবে না। কিয়ামত দিবস পর্যন্ত যা ঘটবে তা লিপিবদ্ধ হয়ে কলমের কালি শুকিয়ে গেছে। যা বান্দার নসীবে লেখা হয়নি, তা সে কখনই পাবে না আর যা বান্দার নসীবে লেখা আছে, তা কখনই বাদ পড়বে না।
৪৮। বান্দার একথা জেনে রাখা উচিত যে, তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় ঘটনাবলী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পূর্ব হতে অবহিত রয়েছেন। অতএব, তিনি সেটাকে অকাট্য ও অবিচল তাকদীর হিসাবে নির্ধারিত করেছেন। আসমান ও যমীনের কোনো মাখলুক এটাকে বানচালকারী অথবা এর বিরোধিতাকারী নেই, অনুরূপ একে কেউ অপসারণ অথবা পরিবর্তন করতে পারবে না, একে সংকোচন কিংবা পরিবর্ধনও করতে পারবে না।
আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দৃঢ়তা, মারেফাতের মূলবস্তু এবং আল্লাহ তায়ালা তাআলার ওয়াহদানিয়াত ও রবুবিয়্যাত সম্পর্কে স্বীকৃতি দান। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাহার গ্রন্থে ঘোষণা করেছেন,
﴿وَخَلَقَ كُلَّ شَيۡءٖ فَقَدَّرَهُۥ تَقۡدِيرٗا ٢﴾ [الفرقانঃ ٢]
তিনি সকল বস্তু সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে যথাযথ অনুপাত অনুসারে পরিমিতি প্রদান করেছেন।’’ [সুরা আল-ফুরকান, আয়াতঃ ৩]
আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীন অন্যত্র বলেছেন,
﴿وَكَانَ أَمۡرُ ٱللَّهِ قَدَرٗا مَّقۡدُورًا ٣٨ ﴾ [الاحزابঃ ٣٨]
আল্লাহ তায়ালার বিধান সুনির্ধারিত।’’ [সুরা আল-আহযাব, আয়াতঃ ৩৮]
অতএব, ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস অনিবার্য যে ব্যক্তি তাক্বদীর সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে এবং রোগগ্রস্ত অন্তর নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনায় প্রবৃত্ত হইয়াছে। নিশ্চয়ই সে স্বীয় ধারণা অনুসারে গায়েবের একটি গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছে এবং এ সম্পর্কে সে যা মন্তব্য করেছে তার ফলে সে মিথ্যাবাদী ও পাপাচারীতে পরিণত হইয়াছে।
৪৯। আর আরশ এবং কুরসী সত্য।
৫০। আর আল্লাহ তায়ালা তাআলা আরশ ও অন্যান্য বস্তু থেকে অমুখাপেক্ষী।
৫১। তিনি সমস্ত বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছেন এবং তিনি সব কিছুরই উর্ধ্বে। সৃষ্টিজগত তাঁকে পূর্ণভাবে আয়ত্ব করতে অক্ষম।
৫২। আমরা আরও বলি যে, আল্লাহ তায়ালা রাববুল আলামীন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে খলীল বা অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করেছেন এবং মূসা আলাইহিস সালাম এর সঙ্গে কথোপকথন করেছেন। [আমরা একথা বলি] এর প্রতি পূর্ণ ঈমান রেখে, এর সত্যতা স্বীকার করে এবং তাকে পরিপূর্ণভাবে মেনে নিয়ে।
৫৩। আর আমরা আল্লাহ তায়ালার ফিরিশতাগণ, নবিগণ ও রাসূলগণের ওপর প্রেরিত কিতাবসমূহের ওপর ঈমান রাখি এবং আমরা আরও সাক্ষ্য প্রদান করি যে, তারা প্রকাশ্য সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।
৫৪। আমাদের ক্বিবলাকে [বায়তুল্লাহকে] যারা ক্বিবলা বলে স্বীকার করে আমরা তাদেরকে মুসলিম ও মু’মিন বলে আখ্যায়িত করি যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিয়ে আসা শরীআতকে স্বীকার করে এবং তিনি যা কিছু বলেছেন তাকে সত্য বলে গ্রহণ করে।
৫৫। আমরা আল্লাহ তায়ালার সত্ত্বা [জাত] সম্পর্কে অন্যায় গবেষণায় প্রবৃত্ত হই না এবং তাহার দীন সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হই না।
৫৬। কুরআন সম্পর্কে আমরা কোনো তর্কে লিপ্ত হই না এবং সাক্ষ্য প্রদান করি যে, কুরআন বিশ্ব চরাচরের রবের কালাম [কথা]। এটা নিয়ে জিবরীল আমীন অবতীর্ণ হইয়াছেন। অতঃপর তিনি তা সকল রাসূলদের নেতা মুহাম্মাদ সাঃকে শিক্ষা দেন। এ কুরআন আল্লাহ তায়ালা তাআলার কালাম [বাণী], কোনো সৃষ্টির কথা এর সমতুল্য নয়। আর আমরা একে সৃষ্ট বলি না এবং [এ ব্যাপারে] আমরা মুসলিম মিল্লাতের বিরুদ্ধাচরণ করি না।
৫৭। কোনো গুনাহর কারণে কোনো আহলে ক্বিবলাকে [মুসলিমকে] কাফির বলে অভিহিত করি না; যতক্ষণ না সে উক্ত গুনাহকে হালাল [জায়েয] মনে করে[8]।
৫৮। আর আমরা বলি না যে, ঈমান আনার পর কোনো গুনাহ করাতে ক্ষতি নেই।
৫৯। আমরা আশা করি যে, সৎকর্মশীল মু’মিনগণকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আমরা তাদের সম্পর্কে নিঃশঙ্ক হয়ে যাবো না, আর তাদেরকে জান্নাতী বলে ঘোষণাও দান করবো না[9]। আর আমরা তাদের গুনাহসমূহের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করব এবং আমরা তাদের জন্য আশংকা বোধ করব, কিন্তু আমরা তাদেরকে নিরাশ করব না।
৬০। নিঃশঙ্ক ও নৈরাশ্যবোধ একজন মুসলিমকে ইসলামী মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। আহলে ক্বিবলার জন্য সত্য পথ তো এতদুভয়ের মাঝামাঝি থাকার মধ্যেই নিহিত।
৬১। কোনো মানুষ শুধু তা অস্বীকার করলেই ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে, যা স্বীকার করে সে তাতে প্রবেশ করেছে[10]।
৬২। আর ঈমান হচ্ছে, মুখে স্বীকৃতি দেওয়া এবং অন্তর দিয়ে সত্যায়ণ করা[11]
৬৩। শরীআত এবং তার ব্যাখ্যায় যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রাপ্ত হইয়াছে, তা সবই হক্ব বা সত্য।
৬৪। ঈমান এক। আর ঈমানদার ব্যক্তিরা সে মৌলিক দিক থেকে সবাই সমান[12], তবে তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্য হয়ে থাকে আল্লাহ তায়ালার ভয়, তাক্বওয়া, কৃ-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণ এবং উত্তম বস্তুকে আকড়ে ধরার মাধ্যমে।
৬৫। সব মুমিন ব্যক্তিই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীনের ওলী বা বন্ধু। আর তাদের মধ্যে আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে বেশি সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তাহার অধিক অনুগত এবং কুরআনের বেশী অনুসারী।
৬৬। আর ঈমান [এর বিস্তারিত রূপ] হচ্ছেঃ আল্লাহ তায়ালা, তাহার মালায়েকা [ফিরিশতা], তাহার গ্রন্থসমূহ, তাহার রাসূলগণ, শেষ দিবস এবং তাক্বদীরের ভাল মন্দ, মিষ্টি ও তিক্ত, সবই আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে [তাহারই অনুমতিতে] ঘটে থাকে এ ঈমান [স্বীকৃতি] রাখা।
৬৭। আর আমরা উল্লিখিত বিষয় সবগুলোর ওপর ঈমান [দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি] পোষণ করি। আমরা রাসূলদের মধ্যে [ঈমানের ক্ষেত্রে] কোনো তারতম্য করি না। তাহারা যে সকল বিধি-বিধান নিয়ে এসেছিলেন তা সবই সত্য বলে স্বীকার করি।
৬৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাতের মধ্যে যারা [শির্ক ব্যতীত অপরাপর] কবীরা গুনাহ করবে তারা তাওবা নাও করলেও জাহান্নামে চিরস্থায়ী হইবে না- যদি তারা তাওহীদ তথা একত্ববাদী হয়ে মারা গিয়ে থাকে। যখন তারা ঈমানদার অবস্থায় আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাত করবে তখন তারা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা ও বিচারের ওপর নির্ভরশীল হইবে। যদি তিনি চান তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং নিজ গুণে তাদের ত্রুটিসমূহ মার্জনা করবেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাহার কুরআনুল কারীমে বলেন,
﴿وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ﴾ [النساءঃ ٤٨]
শির্ক ব্যতীত অন্যান্য সব অপরাধ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।’’ [সুরা আন-নিসা, আয়াতঃ ৪৮]
আর যদি তিনি চান, তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করাবেন এবং তাও হইবে তার ন্যায়বিচার। অতঃপর আল্লাহ তায়ালাপাক তাদেরকে নিজ অনুগ্রহে এবং তাহার [অনুমতিপ্রাপ্ত] সুপারিশকারীদের সুপারিশের ফলে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে নিবেন এবং জান্নাতে প্রেরণ করবেন।
এর কারণ হলো, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাহার মারিফাতের অধিকারী [স্বীকারকারী] নেককার বান্দাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন। তাদেরকে ইহকাল ও পরকালের তাহার অস্বীকারকারীদের ন্যায় করেন নি, যারা তাহার হিদায়াতের পথ থেকে অকৃতকার্য হইয়াছে। তারা তাহার বন্ধুত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হইয়াছে। হে ইসলাম ও মুসলিমদের অভিভাবক মহান আল্লাহ তায়ালা! আপনি আমাদেরকে ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আপনার সাথে সাক্ষাৎ করি।
৬৯। আর আমরা প্রত্যেক সৎ ও পাপী মুসলিমের পিছনে সালাত আদায় করা এবং প্রত্যেক মৃত মুসলিমের জন্য জানাযার সালাত আদায় করার পক্ষে মত প্রদান করি।
৭০। আমরা তাদের কাউকে জান্নাতী ও জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করব না এবং তাদের কারও বিরুদ্ধে আমরা কুফুরী ও শির্ক অথবা নিফাকের সাক্ষ্য প্রদান করব না, যতক্ষণ না এগুলির কোনো একটি তাদের মধ্যে প্রকাশ্যে দৃষ্টিগোচর হয়। তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ছেড়ে দেই।
৭১। আমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতদের কারও বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার পক্ষে মত দেই না, যদি না এমন কেউ হয় যার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা ওয়াজিব[13]।
৭২। আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দোআ করব।
৭৩। আমরা সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুসরণ করব[14]। আমরা জামাআত হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং জামাআতের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকব।
৭৪। আমরা ন্যায়পরায়ণ ও আমানতদার ব্যক্তিদেরকে ভালোবাসব এবং অন্যায়কারী ও আমানতের খিয়ানতকারীদের সাথে শত্রুতা পোষণ করব।
৭৫। যে সব বিষয়ে আমাদের জ্ঞান অস্পষ্ট সে সব বিষয়ে আমরা বলব, আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীন অধিক জানেন।’’
৭৬। সফরে ও গৃহে অবস্থানকালে আমরা হাদীসের নিয়মানুসারে মোজার উপরে মাসেহ করার পক্ষে মত প্রদান করি।
৭৭। মুসলিম শাসক ভালো হোক কিংবা মন্দ হোক- তার অনুগামী হয়ে হজ করা এবং জিহাদ করা কিয়ামাত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এ দু’টি জিনিসকে কোনো কিছুই বাতিল কিংবা ব্যাহত করতে পারবে না।
৭৮। আমরা কিরামান-কাতিবীন [সম্মানিত লেখকবৃন্দ] ফেরেশ্তাদের ওপর ঈমান রাখি, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাদেরকে আমাদের ওপর পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন।
৭৯। আমরা মালাকুল মাউতের [মৃত্যুর ফিরিশতার] ওপরও ঈমান রাখি। তাকে সৃষ্টিকুলের রূহসমূহ কবয করার দায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছে।
৮০। আমরা শাস্তিযোগ্য ব্যক্তিদের জন্য কবরের আযাবের প্রতি ঈমান রাখি এবং এও ঈমান রাখি যে, কবরের মুনকার ও নাকীর [দুই ফিরিশতা] মৃত ব্যক্তির রব, দীন, ও নবি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের নিকট থেকে বহু হাদীস ও উক্তি বর্ণিত হইয়াছে।
৮১। কবর জান্নাতের বাগিচাসমূহের অন্যতম অথবা তা জাহান্নামের গহ্বরসমূহের অন্যতম।
৮২। আমরা পুনরুত্থান, কিয়ামাত দিবসে আমলের প্রতিফল, [আল্লাহ তায়ালার সমীপে] পেশ করা, হিসাব নিকাশ, আমলনামা পাঠ, সওয়াব, [প্রতিদান] শাস্তি, পুলসিরাত এবং মীযান এসবের উপর ঈমান রাখি।
৮৩। [আরও ঈমান রাখি যে,] জান্নাত ও জাহান্নাম পূর্ব হতে সৃষ্ট হয়ে আছে। এ দু’টি কোনো দিন লয় প্রাপ্ত হইবে না এবং ক্ষয় প্রাপ্তও হইবে না। আল্লাহ তায়ালা তাআলা জান্নাত ও জাহান্নামকে অন্যান্য সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টি করেছেন এবং উভয়ের জন্য বাসিন্দা সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং যাকে ইচ্ছা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। আর তা হইবে তার ন্যায় বিচার। প্রত্যেকেই সেই কাজ করবে যা তার জন্য নির্দিষ্ট করা হইয়াছে এবং যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হইয়াছে সেখানেই সে যাবে।
৮৪। ভালো ও মন্দ উভয়ই বান্দার জন্য নির্দিষ্ট করে লেখা হইয়াছে।
৮৫। সামর্থ্য’’- [যা প্রত্যেক কর্মের জন্য অপরিহার্য। আর তা] দু’ধরণের- [১] যে সামর্থ্য বান্দার কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট [কর্ম বাস্তবায়িত করার সময় থাকা অপরিহার্য] যেমন কাজটির তাওফীক [যথাযথভাবে সম্পন্ন করার সুযোগ] তা কোনো সৃষ্টির গুণ হতে পারে না, [বরং তা কেবল আল্লাহ তায়ালার হাতে আর তাহারই গুণ] এ ধরনের সামর্থ্য কেবল কার্য সম্পাদনের সময়েই অর্জিত হয়। পক্ষান্তরে [২] যে সামর্থ্য’’ বলতে বুঝায় বান্দার সুস্থতা, সচ্ছলতা, সক্ষমতা, অঙ্গ প্রতঙ্গের নিরাপত্তা, তা অবশ্যই কর্মের পূর্বেই থাকা প্রয়োজন। আর এটার সাথেই তাকলীফ [তথা বান্দার জন্য আল্লাহ তায়ালার নির্দেশনা] সম্পৃক্ত। [অর্থাৎ এটা থাকলেই আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ তার উপর প্রযোজ্য হয় নতুবা নয়]। আর এটা যেমন আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেছেন,
﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ﴾ [البقرةঃ ٢٨٦]
তিনি কাউকে তার সামর্থ্যের উর্ধ্বে দায়িত্ব দেন না।” [সুরা আল-বাকারা, আয়াতঃ ২৮৬]
৮৬। বান্দাদের যাবতীয় কর্ম আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি এবং তা বান্দাদের উপার্জন।
৮৭। আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাহার বান্দাদের উপর তাদের সামর্থ্যের অধিক দায়িত্বভার ন্যস্ত করেন না। আর তারাও ততটুকুই দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা রাখে যতটুকু বোঝা আল্লাহ তায়ালা তাদের উপর চাপিয়ে থাকেন[15]। আর এটাই হচ্ছে
«لا حول ولا قوة إلا بالله»
আল্লাহ তায়ালার সাহায্য ছাড়া কোনো সৎ কর্ম করা এবং অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকার ক্ষমতা কারও নেই।’’ এ বাণীর তাফসীর বা ব্যাখ্যা।
এর অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা রাব্বুল আলামীনের সাহায্য ছাড়া কারো কোনো অপরাধ থেকে বাঁচার এবং নড়া-চড়া করার ক্ষমতা নেই। অনুরূপভাবে, আল্লাহ তায়ালা তাআলার তাওফীক ছাড়া আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য বরণ করার এবং তার উপরে দৃঢ় থাকার সাধ্য কারও নেই।
৮৮। পৃথিবীতে যা কিছু সংঘটিত হয়, তা আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা, তাহার জ্ঞান, তাহার ফায়সালা এবং তাহার বিধান অনুসারেই হয়ে থাকে। তাহার ইচ্ছা সমস্ত ইচ্ছার উপরে। তাহার ফায়সালা সমস্ত কৌশলের ঊর্ধ্বে। যা ইচ্ছা তিনি তাই করেন। তিনি কখনও অত্যাচার করেন না। তিনি সর্ব প্রকার কলুষ ও কালিমা হতে পবিত্র এবং সব রকমের দোষ ত্রুটি হতে বিমুক্ত। তিনি যা করেন সে সম্পর্কে তিনি জিজ্ঞাসিত হইবেন না। পক্ষান্তরে, অন্য সবই স্বীয় কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হইবে। [সুরা আল-আম্বিয়া, আয়াতঃ ২৩]
৮৯। জীবিত ব্যক্তিদের দোআ এবং দান খয়রাত দ্বারা মৃত বক্তিরা উপকৃত হয়ে থাকে।
৯০। আল্লাহ তায়ালা তাআলা দোআ কবুল করেন এবং বান্দাদের প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন।
৯১। আল্লাহ তায়ালা তাআলা সব কিছুরই মালিক এবং তাহার মালিক কেউ নয়। মুহুর্তের জন্যও কারো পক্ষে আল্লাহ তায়ালার অমুখাপেক্ষী হওয়া সম্ভব নয়। যে ব্যক্তি মুহুর্তের জন্য আল্লাহ তায়ালার অমুখাপেক্ষী হতে চাবে, সে কাফির হয়ে যাবে এবং লাঞ্ছিত হইবে।
৯২। আল্লাহ তায়ালা তাআলা ক্রুদ্ধ এবং রুষ্ট হন, তবে তা মাখলুকের ন্যায় নয়।
৯৩। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণকে ভালোবাসি, তবে তাদের কারও ভালোবাসার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করি না এবং তাদের কারও থেকে বিমুক্তি ঘোষণা করি না। তাদের সাথে যারা বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা যারা তাদেরকে অসম্মানজনকভাবে স্মরণ করে আমরা তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি। আমরা তাদেরকে শুধু কল্যাণের সাথেই স্মরণ করি। তাদের সঙ্গে মহব্বত রাখা দীন ও ঈমান এবং ইহসানের অংশ। আর তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা, কুফুরী, মুনাফিকী এবং সীমালংঘন করার পর্যায়ভুক্ত।
৯৪। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সর্বপ্রথম আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতকে স্বীকৃতি দেই। অতঃপর পর্যায়েক্রমে উমর ইবনু খাত্তাব, উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমকে খলীফা বলে স্বীকার করি। তারাই ছিলেন সুপথগামী খলীফা ও হিদায়াতপ্রাপ্ত নেতা।
৯৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দশজন সাহাবীর নাম উল্লেখ করে তাদের সম্পর্কে জান্নাতের সুসংবাদ দান করেছেন, আমরা তাদের জন্য জান্নাতের সাক্ষ্য প্রদান করি। কারণ, এ সম্পর্কে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুসংবাদ দান করেছেন এবং তাহার উক্তি সত্য। তাহারা হলেনঃ [১] আবূ বকর [২] উমর [৩] উসমান [৪] আলী [৫] তালহা [৬] যুবাইর [৭] সাদ [৮] সাঈদ [৯] আবদুর রহমান ইবনু আউফ এবং [১০] আমীনুল উম্মাহ [জাতির বিশ্বাসভাজন] আবূ ওবায়দা ইবনুুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম [আল্লাহ তায়ালা তাদের সবার ওপর সন্তুষ্ট হোন]
৯৬। যে ব্যক্তি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও তাহার পবিত্র স্ত্রীগণ ও সম্মানিত বংশধরদের সম্পর্কে ভালো মন্তব্য করে সে মুনাফিকী থেকে নিষ্কৃতি পায়।
৯৭। পূর্বে গত হওয়া সালাফে সালেহীন [নেককার পূর্বসূরী] আলেমগণ এবং তাঁদের যথাযথ পদাঙ্ক অনুসারী কল্যাণের অধিকারী হাদীসবিদগণ ও ফিকহের জ্ঞানের অধিকারী গবেষকগণকে আমরা যথাযথ সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করি। আর যারা এদের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করে তারা সঠিক পথের পথিক নয়।
৯৮। আমরা কোনো ওলীকে কোনো নবির ওপর প্রাধান্য দেই না বরং আমরা বলি, যে কোনো একজন রাসূল সকল ওলী থেকে শ্রেষ্ঠ।
৯৯। ওলীদের কারামত সম্পর্কে যে খবরাখবর আমাদের নিকট পৌঁছেছে এবং যা বিশ্বস্ত বর্ণনার মাধ্যমে পরিবেশিত হইয়াছে আমরা তার উপর ঈমান রাখি।
১০০। আমরা কিয়ামাতের নিম্নলিখিত নিদর্শনাবলীর প্রতি ঈমান রাখিঃ দাজ্জালের আবির্ভাব, আসমান থেকে ঈসা আলাইহিস সালামের অবতরণ। আর আমরা পশ্চিম গগনে সূর্যোদয় এবং দাব্বাতুল আরদ নামক প্রাণীর স্বীয় স্থান হতে আবির্ভাবের ওপরও ঈমান রাখি।
১০১। আমরা কোনো ভবিষ্যৎ বক্তা অথবা কোনো জ্যোতিষীকে সত্য বলে বিশ্বাস করি না এবং ঐ বক্তিকেও সত্য বলে মনে করি না, যে আল্লাহ তায়ালার কিতাব, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে।
১০২। আমরা [মুসলিম জাতির] ঐক্যকে সত্য ও সঠিক বলে মনে করি এবং তা হতে বিচ্ছিন্নতাকে বক্রতা ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করি।
১০৩। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে আল্লাহ তায়ালার দীন এক ও অভিন্ন। তা হচ্ছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ﴾ [ال عمرانঃ ١٩]
নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার নিকট একমাত্র দীন হচ্ছে ইসলাম।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১৯]
অন্যত্র তিনি আরও বলেন,
﴿وَرَضِيتُ لَكُمُ ٱلۡإِسۡلَٰمَ دِينٗا﴾ [المائدةঃ ٣]
এবং আমি ইসলামকে তোমাদের দীন হিসাবে মনোনীত করলাম”। [সুরা আল-মায়েদা, আয়াতঃ ৩]
১০৪। ইসলাম মধ্যপন্থী দীন। [নবি-রাসূল, সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ ও শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে] বাড়াবাড়ি ও কমতির মাঝামাঝি তার অবস্থান, [আল্লাহ তায়ালার সত্তা, নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে সেগুলোতে তাশবীহ তথা] সাদৃশ্য স্থাপন কিংবা [সে নাম ও গুণগুলোকে তাতীল তথা] অর্থহীন করার মাঝে তার অবস্থান, [সৃষ্টিকুলের তাকদীরের ব্যাপারে তাদেরকে জবর তথা] ক্ষমতাহীন বাধ্য ও [কাদর তথা] নির্ধারণহীন মুক্ত এ দু’য়ের মাঝে তার অবস্থান। অনুরূপ [আল্লাহ তায়ালার ভয় ও ক্ষমার ব্যাপারে] নিশ্চিন্ততা ও নৈরাশ্যের মধ্যবর্তীতে তার অবস্থান।
১০৫। এগুলোই হচ্ছে আমাদের দীন এবং আমাদের আকীদা বা মৌলিক বিশ্বাস। প্রকাশ্যে এবং অন্তরে তাই আমরা ধারণ করি। উপরে যা আমরা উল্লেখ করলাম এবং বর্ণনা করলাম যারাই তার কোনো কিছুর বিরোধিতা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনোই সম্পর্ক নেই।
আমরা আল্লাহ তায়ালা তাআলার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে ঈমানের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং আমাদের জীবনাবসান ঈমানের সাথে করেন। আর তিনি যেন আমাদেরকে রক্ষা করেন বিভিন্ন প্রবৃত্তিপরায়ণতা ও বিবিধ মতামতের অনুসরণ থেকে এবং মুশাব্বিহা, মুতাযিলা, জাহমিয়া, জাবরিয়া, ক্বাদরিয়া প্রভৃতি বাতিল মতবাদসমূহ থেকে। যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বিরুদ্ধাচরণ করেছে এবং যারা বিভ্রান্ত মত ও পথের পক্ষ নিয়েছে আমরা তাদের থেকে আমাদের সম্পর্কহীনতার কথা ঘোষণা করছি। তারা আমাদের মতে পথভ্রষ্ট ও নিকৃষ্ট।
আল্লাহ তায়ালার নিকটেই যাবতীয় ভ্রান্তি হতে নিরাপত্তা এবং সৎপথে চলার তাওফীক কামনা করছি।
সমাপ্ত
[1] জানা উচিৎ, যে তাওহীদ নিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাহার রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন এবং যা নিয়ে কিতাব নাযিল হইয়াছে, তার তিনটি অংশ রয়েছে, যা কুরআন ও সুন্নাহর ভাষ্যসমূহ যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং দায়িত্ববানদের বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই তা নির্ধারিত হইয়াছে।
প্রথম অংশ, তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ, আর তা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা তাআলাকে তাহার মহান কর্মকাণ্ডে এক সত্তা জ্ঞান করা। তা হচ্ছে, এ ঈমান রাখা যে মহান আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র স্রষ্টা, রিযিকদাতা, সৃষ্টিজগতের সকলের কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী, তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণকারী। এগুলোতে তার কোনো শরীক নেই। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেন,
﴿ٱللَّهُ خَٰلِقُ كُلِّ شَيۡءٖ﴾ [الزمرঃ ٦٢]
“আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর স্রষ্টা”। [সুরা আয-যুমার, আয়াতঃ ৬২]
আল্লাহ তায়ালা তাআলা আরও বলেন,
﴿إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۖ﴾ [يونسঃ ٣]
“নিশ্চয় তোমাদের রব তো আল্লাহ তায়ালা, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও যমীন ছয়দিনে, তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন, তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন”। [সুরা ইউনুস, আয়াতঃ ৩] তাওহীদের এ অংশে আরবের মুর্তিপূজারী মুশরিকরা ঈমান রাখত, যদিও তাদের অধিকাংশই পুনরুত্থান ও হাশর-নশর অস্বীকার করত; কিন্তু এ ঈমান তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করায় নি। কারণ, তারা আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের সাথে অন্য কিছুকে শরীক করত, তার ইবাদতের সাথে মূর্তি ও অন্যান্য কিছুরও ইবাদত করত এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঈমান আনয়ন করে নি।
দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে, তাওহীদুল ইবাদাহ, যাকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ বলেও নামকরণ করা হয়ে থাকে। আর উলুহিয়্যাহ অর্থই ইবাদত। তাওহীদের এ অংশটিই মুশরিকরা অস্বীকার করেছিল, যেমনটি আল্লাহ তায়ালা তাআলা তাদের থেকে উল্লেখ করেছেন তাহার নিম্নোক্ত বাণীতে,
﴿وَعَجِبُوٓاْ أَن جَآءَهُم مُّنذِرٞ مِّنۡهُمۡۖ وَقَالَ ٱلۡكَٰفِرُونَ هَٰذَا سَٰحِرٞ كَذَّابٌ ٤ أَجَعَلَ ٱلۡأٓلِهَةَ إِلَٰهٗا وَٰحِدًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عُجَابٞ ٥ ﴾ [صঃ ٤، ٥]
“আর কাফিররা আশ্চর্য হয়েছিল যে, তাদের কাছে তাদের থেকেই একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী আসলো এবং কাফিররা বলল, এ তো জাদুকর মিথ্যাবাদী। সে কি সব ইলাহকে এক ইলাহ বানিয়ে দিয়েছে? নিশ্চয় এটি এক আশ্চর্য বিষয়”। [সুরা সোয়াদ, আয়াতঃ ৪-৫] অনুরূপ আরও বহু আয়াত রয়েছে। তাওহীদের এ অংশ ইবাদতকে খালেস বা নিষ্ঠাসহকারে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য হওয়া, তিনিই একমাত্র ইবাদতের যোগ্য সত্তা হওয়া এবং তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা যে বাতিল এসব কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে। তাওহীদের এ অংশই কালেমা লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’-এর প্রকৃত অর্থ। কেননা এ কালেমা অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত হক কোনো মাবুদ নেই, যেমনটি মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلۡحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ هُوَ ٱلۡبَٰطِلُ﴾ [الحجঃ ٦٢]
“এটা এজন্যই যে, আল্লাহ তায়ালা, একমাত্র তিনিই সত্য [মাবুদ], তাঁকে ছাড়া তারা অন্য যাকেই আহ্বান করে সেসবই বাতিল”। [সুরা আল-হাজ, আয়াতঃ ৬২]
তৃতীয় অংশঃ তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। আর তা হচ্ছে, মহান আল্লাহ তায়ালার কিতাবে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামের সহিহ সুন্নাহতে যে সকল নাম ও গুণ এসেছে সেগুলোর ওপর ঈমান আনয়ন, সেগুলোকে মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য যথোপযুক্তভাবে সাব্যস্তকরণ, কোনো প্রকার বিকৃতি কিংবা অর্থমুক্তি অথবা কোনো প্রকার ধরণ নির্ধারণ বা সাদৃশ্য নির্ণয় ব্যতীত। যেমন, আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেন,
﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤﴾ [الاخلاصঃ ١، ٤]
“বলুন, তিনি আল্লাহ তায়ালা, এক-অদ্বিতীয়, আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সামাদ’ [তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাহার মুখাপেক্ষী]; তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয় নি এবং তাহার সমতুল্য কেউই নেই।” [সুরা আল-ইখলাস, আয়াতঃ ১-৪] তিনি আরও বলেন,
﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١ ﴾ [الشورىঃ ١١]
“তাহার মতো কোনো কিছু নেই, আর তিনি তো সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা”। [সুরা আশ-শূরা, আয়াতঃ ১১] মহান সত্তা আরও বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡأَسۡمَآءُ ٱلۡحُسۡنَىٰ فَٱدۡعُوهُ بِهَاۖ﴾ [الاعرافঃ ١٨٠]
“আর আল্লাহ তায়ালার জন্যই রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাকে সেগুলো দিয়েই আহ্বান কর”। [সুরা আল-আরাফ, আয়াতঃ ১৮০] অনুরূপ আল্লাহ তায়ালা তাআলা সুরা আন-নাহালে বলেন,
﴿وَلِلَّهِ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰۚ وَهُوَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ٦٠﴾ [النحلঃ ٦٠]
“আর আল্লাহ তায়ালার জন্যই যাবতীয় মহত্তম উদাহরণ, আর তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” [সুরা আন-নাহল, আয়াতঃ ৬০] এ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে। এখানে উত্তম উদাহরণ বলতে এমন সুউচ্চ গুণাগুণ বোঝানো হইয়াছে যাতে কোনো অপূর্ণতা নেই। আর এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল সাহাবী, তাদের যথাযথ সুন্দর অনুসরণকারী তাবেঈগণের অভিমত যে, তারা আল্লাহ তায়ালার সিফাত তথা গুণাগুণসম্পন্ন আয়াত ও হাদীসসমূহকে যেভাবে এসেছে সেভাবে পরিচালনা করিতেন, সেগুলোর অর্থকে মহান আল্লাহ তায়ালা তাআলার জন্য সাদৃশ্য নির্ধারণ মুক্তভাবে সাব্যস্ত করিতেন। অনুরূপভাবে তারা মহান আল্লাহ তায়ালা তাআলাকে তাহার সৃষ্টির কারও সামঞ্জস্যবিধান থেকে পবিত্র করিতেন, কিন্তু সেগুলোকে [কুরআন ও হাদীসের গুণাগুণসম্পন্ন ভাষ্যসমূহকে] অর্থহীন করিতেন না। আর তারা যা বলেছেন সেটার মাধ্যমেই কুরআন ও সুন্নাহর দলীলসমূহ একই সুত্রে গাঁথা সম্ভব এবং এর মাধ্যমেই যারা তাদের বিরোধিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে দলীল-প্রমাণাদি উপস্থাপন ও প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। আর মহান আল্লাহ তায়ালার নিম্নোক্ত বাণীতে তাদেরকেই উদ্দেশ্য নেওয়া হইয়াছেঃ
﴿وَٱلسَّٰبِقُونَ ٱلۡأَوَّلُونَ مِنَ ٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ وَٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُم بِإِحۡسَٰنٖ رَّضِيَ ٱللَّهُ عَنۡهُمۡ وَرَضُواْ عَنۡهُ وَأَعَدَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي تَحۡتَهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدٗاۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٠٠﴾ [التوبةঃ ١٠٠]
“আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়াছেন এবং তারাও তাহার ওপর সন্তুষ্ট হইয়াছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হইবে। এ তো মহাসাফল্য”। [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াতঃ ১০০] মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন তাহার একান্ত দয়া ও অনুগ্রহে আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আল্লাহ তায়ালাই সাহায্যকারী। [ই.বা.]
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত [2] ক্বাদীম’ বা প্রাচীন’ শব্দটি লেখক আল্লাহ তায়ালার জন্য ব্যবহার করেছেন। অথচ এ নামটি মহান আল্লাহ তায়ালার নাম হিসেবে কুরআন ও সুন্নায় আসে নি। যেমনটি এ ভাষ্যের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনু আবিল ইয আল-হানাফী এবং অন্যান্যগণ সতর্ক করে জানিয়েছেন। এটা তো কেবল কালাম শাস্ত্রবিদরা উল্লেখ করেছে; তারা এর দ্বার মহান আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বকে সবকিছুর পূর্বে সাব্যস্ত করার উদ্দেশ্য নিয়েছিলেন। তবে এটা অবশ্যই জানা প্রয়োজন যে, মহান আল্লাহ তায়ালার নামসমূহ অহীর মাধ্যমে জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই সেগুলোকে অবশ্যই কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যের মাধ্যমেই সাব্যস্ত করা যাবে। অন্য কিছু দ্বারা সাব্যস্ত করা জায়েয নেই। কোনো প্রকার বিবেকের মত প্রদানের মাধ্যমে তা সাব্যস্ত করা বৈধ নয়, যেমনটি সালাফে সালেহীন তথা সঠিক পূর্বসুরী আলেমগণ স্পষ্টভাবে বলেছেন।
তাছাড়া কাদীম’ বা প্রাচীন শব্দটিকে কালাম শাস্ত্রবিদরা যে অর্থে ব্যবহার করেছে বাস্তবে সেটি উক্ত অর্থ প্রকাশ করে না। কারণ আরবী ভাষায় কাদীম’ বলা হয় যা কোনো কিছুর পূর্বে হয়, যদিও পূর্বে তা অস্তিত্বহীন বিষয় হোক না কেন। যেমন, আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ
﴿حَتَّىٰ عَادَ كَٱلۡعُرۡجُونِ ٱلۡقَدِيمِ﴾ [يسঃ ٣٩]
“অবশেষে সে চাঁদ শুষ্ক বাঁকা, পুরোনো খেজুর শাখার আকারে ফিরে যায়।” [সুরা ইয়াসীন, আয়াতঃ ৩৯] তবে গ্রন্থকারের পরবর্তী কথা যার কোনো শুরু নেই’ এর দ্বারা বিশুদ্ধ অর্থ নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে। তারপরও এটাকে আল্লাহ তায়ালার নাম হিসেব গণ্য করা যাবে না। কারণ, কুরআন বা হাদীসে সেটা নাম হিসেবে সাব্যস্ত হয়নি। তার বদলে আল্লাহ তায়ালার আল-আউয়াল’ [সর্বপ্রথম] নামটিই যথেষ্ট। যেমন, মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿هُوَ ٱلۡأَوَّلُ وَٱلۡأٓخِرُ﴾ [الحديدঃ ٣]
“তিনিই প্রথম আর তিনিই শেষ”। [সুরা আল-হাদীদ, আয়াতঃ ৩] আল্লাহ তায়ালাই তাওফীকদাতা। [ই.বা.]
[3] কারণ, মানুষ এ দু’টি কাজ তথা অনুগ্রহ ও ন্যায়বিচারের মধ্যেই সর্বদা থাকে। মানুষ হয় ঈমানদার, হিদায়াতপ্রাপ্ত যা আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দয়া ও নিআমত অথবা মানুষ পথভ্রষ্ট, কুফুরী বা ফাসেকীর মাধ্যমে বক্রতা অবলম্বনকারী যা মহান আল্লাহ তায়ালার ন্যায় বিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ীই সম্পন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং কেউই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে না। [সম্পাদক]
[4] উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তায়ালার কথা বলার কোনো ধরণ নেই এটা বলা হয় নি, বরং কোনো ধরণ জানা নেই বলা হইয়াছে। আল্লাহ তায়ালার কথা বলার ধরণ আমাদের জানা না থাকলেও সেটার একটা ধরণ তো অবশ্যই রয়েছে। [সম্পাদক]
[5] “আর আল্লাহ তায়ালা তাআলা সীমা পরিধি থেকে উর্ধ্বে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সাজ-সরঞ্জাম থেকে মুক্ত। অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় ষষ্ঠ দিক তাঁকে বেষ্টন করে রাখতে পারে না।” এ কথাটিতে অস্পষ্টতা রয়েছে, আল্লাহ তায়ালার নাম ও গুণাবলীর অপব্যাখ্যাকারী ও বিকৃতিকারীদের কেউ সে অস্পষ্টতার সুযোগ নিতে পারে। অথচ গ্রন্থকারের এ কথার মধ্যে তাদের মতের সপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। কারণ, উক্ত কথা দ্বারা গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য আল্লাহ তায়ালা তাআলা ওয়া তাআলাকে সৃষ্টির কারও সাদৃশ্যতা থেকে পবিত্র ঘোষণা করা। তবে তিনি একটি অস্পষ্ট বাক্য নিয়ে এসেছেন যা স্পষ্ট করার প্রয়োজন, যাতে করে সন্দেহ সংশয় দূরিভূত হয়। এখানে গ্রন্থকার সীমা’ বলে বুঝিয়েছেন সে সীমা যা মানুষ জানে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালার সীমা-পরিসীমা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। যেমন, তিনি সুরা ত্বা-হায় বলেন,
﴿يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يُحِيطُونَ بِهِۦ عِلۡمٗا ١١٠﴾ [طهঃ ١١٠]
“তিনি তাদের সামনে ও পিছনে যা আছে সবই জানেন আর তারা তাঁকে জ্ঞানে আয়ত্ব করতে পারে না”। [সুরা ত্বা-হা, আয়াতঃ ১১০] সালাফে সালেহীন তথা পূণ্যবান পূর্বসূরীগণের মধ্যে যারা আরশের উপর আরোহণ ইত্যাদি সংক্রান্ত সীমা বর্ণনা করেছেন, সেখানে সীমা’ দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এমন সীমা-পরিসীমার কথা যা আল্লাহ তায়ালা তাআলা জানেন, বান্দার জানা কোনো সীমা নয়।
গ্রন্থকারের অন্য কথা, আল্লাহ তায়ালা তাআলা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও সাজ-সরঞ্জাম থেকে মুক্ত’ এর দ্বারাও তাহার উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহ তায়ালা তাআলা ওয়াতাআলাকে তাহার প্রজ্ঞা ও সত্তার সাথে সম্পৃক্ত গুণাবলী যেমন চেহারা, হাত, পা ইত্যাদিতে সৃষ্টির কারও সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা থেকে পবিত্র করা। তবে মহান আল্লাহ তায়ালা তাআলা চেহারা, হাত, পা ইত্যাদি গুণাগুণে গুণান্বিত, যদিও তাহার কোনো গুণ সৃষ্টিকুলের কারও গুণের মত নয়। আর আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অপর কেউ তাহার এ গুণের ধরণ সম্পর্কে অবহিত নয়। বিদআতীরা এ ধরণের শব্দ ব্যবহার করে থাকে যাতে করে এর দ্বারা আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী অস্বীকার করতে পারে। আর সে উদ্দেশ্যে তারা এমন সব শব্দ ব্যবহার করে যেগুলো আল্লাহ তায়ালা তাআলা নিজে বলেন নি এবং নিজের জন্য সাব্যস্ত করেন নি; যাতে করে তাদের ষড়যন্ত্র প্রকাশিত হয়ে না পড়ে এবং হকপন্থীরা তাদের উপর দোষ না দিতে পারে। গ্রন্থকার অবশ্য বিদআতীদের’ মত উদ্দেশ্য নেন নি। কারণ, তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত অন্তর্ভুক্ত, যারা আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী সাব্যস্তকারী। এ আকীদায় তার কথা-বার্তার একাংশ অপর অংশের ব্যাখ্যা করে, একাংশ অপর অংশের সত্যায়ণ করে এবং সন্দেহযুক্ত অংশকে সন্দেহমুক্ত অংশ ব্যাখ্যা করে।
অনুরূপভাবে গ্রন্থকারের কথা অন্যান্য সৃষ্ট বস্তুর ন্যায় ষষ্ঠ দিক তাঁকে বেষ্টন করে রাখতে পারে না’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, সৃষ্টিগত ছয়টি দিক। এর দ্বারা মহান আল্লাহ তায়ালার উচ্চে থাকা ও আরশের উপর তাহার আরোহন করার বিষয়টি অস্বীকার করা উদ্দেশ্য নয়। কারণ এটি সৃষ্ট ছয় দিকের অভ্যন্তরে নয়। কারণ তিনি সৃষ্টিজগতের উপরে এবং সৃষ্টিজগতকে পরিবেষ্টন করে আছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার সুউচ্চে থাকার বিষয়টির ওপর ঈমান থাকা তিনি তাহার বান্দাদের ফিতরাত তথা অন্তরে স্বাভাবিকভাবে গেঁথে দিয়াছেন। তাদের স্বাভাবিক অন্তরের কথা হচ্ছে যে, তিনি উপরের দিকে। এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা নবি সাঃের সাহাবী এবং সুন্দরভাবে তাঁদের অনুসারী তাবেঈগণও এর ওপর একমত হইয়াছেন। কুরআনে কারীম ও সহিহ মুতাওয়াতির [নিরঙ্কুশ নিঃসন্দেহে বিশুদ্ধভাবে বর্ণিত] সুন্নাহ স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে যে, তিনি উপরে রয়েছেন। হে প্রিয় পাঠক এ বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে সাবধান থাকুন এবং জেনে রাখুন যে এটাই সত্য, এটা ব্যতীত অন্য কিছু বাতিল। আর আল্লাহ তায়ালাই তাওফীক দেওয়ার মালিক। [ই.বা.]
[6] আর তা হচ্ছে শরীআতের মৌলিক ও শাখা-প্রশাখাজনিত জ্ঞান।
[7] গ্রন্থকার এখানে অবিদ্যমান জ্ঞান বলে গায়েবী জ্ঞান বুঝিয়েছেন। যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সাথেই সংশ্লিষ্ট। কোনো মানুষ যদি সেটার দাবী করবে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাআলা ওয়াতাআলা বলেন,
﴿وَعِندَهُۥ مَفَاتِحُ ٱلۡغَيۡبِ لَا يَعۡلَمُهَآ إِلَّا هُوَۚ ﴾ [الانعامঃ ٥٩]
“আর তার কাছেই রয়েছে গায়েবের জ্ঞান, যা তিনি ব্যতীত কেউ জানে না”। [সুরা আল-আনআম, আয়াতঃ ৫৯]
অনুরূপ মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿قُل لَّا يَعۡلَمُ مَن فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلۡغَيۡبَ إِلَّا ٱللَّهُۚ ﴾ [النملঃ ٦٥]
“বলুন, আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা কেউই গায়েব জানে না”। [সুরা আন-নামলঃ ৬৫]
অনুরূপ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, গায়েবের চাবিকাঠি পাঁচটি। আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর তা কেউ জানে না। তারপর তিনি তিলাওয়াত করলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ عِندَهُۥ عِلۡمُ ٱلسَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ ٱلۡغَيۡثَ …﴾ [لقمانঃ ٣٤]
“নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালার কাছেই রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান আর তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন…”। [সুরা লুকমান, আয়াতঃ ৩৪] অনুরূপভাবে এতদসংক্রান্ত আরও বহু হাদীস রয়েছে, যেগুলো প্রমাণ করে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব জানতেন না, যদিও তিনি সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ এবং রাসূলদের নেতা। সুতরাং তিনি ব্যতীত অন্যরা তো মোটেই জানার কথা নয়। বস্তুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও এ জ্ঞানের কিছুই জানতেন না, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাকে তা হতে কিছু জানাতেন। এ জন্যই আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ওপর অপবাদ দেওয়ার বিষয় নিয়ে লোকেরা যখন বলাবলি করছিল তখন তিনি অহী নাযিল হওয়ার মাধ্যমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার পবিত্রতার ঘোষণা না আসা পর্যন্ত কিছুই জানতে পারেন নি। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো এক সফরে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হার হারিয়ে গেলে তিনি বেশ কয়েকজনকে সেটার খোঁজে পাঠিয়েছিলেন, সেটা কোথায় আছে সেটা জানতে পারেন নি, অবশেষে যখন উট দাঁড় করানো হলো তখন তারা হারটিকে উটের নিচে দেখতে পেল। আর কুরআন ও সুন্নায় এ বিষয়ে বহু দলীল-প্রমাণাদি রয়েছে। আল-হামদুলিল্লাহ। [ই.বা.]
আর গায়েবী জ্ঞানের অন্যতম হচ্ছে, তাকদীরের জ্ঞান, যা আল্লাহ তায়ালা তার সৃষ্টির কাছে পর্দাবৃত রেখেছেন। সেটাও কোনো সৃষ্টিই তা জানতে পারে না।
[8] গ্রন্থকারের কথা, কোনো গুনাহর কারণে কোনো আহলে ক্বিবলাকে [মুসলিমকে] কাফির বলে অভিহিত করি না; যতক্ষণ না সে উক্ত গুনাহকে হালাল [জায়েয] মনে করে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আল্লাহ তায়ালা ও শেষ দিবসের ওপর ঈমান আনয়নকারী কোনো একত্ববাদী মুমিন মুসলিমকে কোনো গুনাহ যেমন ব্যভিচার, মদপান, সুদ খাওয়া ও পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ইত্যাদি অপরাধ করার কারণে কাফির বলে না, যতক্ষণ না সে এগুলোকে বৈধ মনে করে করবে; কিন্তু যদি এগুলোকে বৈধ হিসেবে সম্পাদন করে তবে সে কাফির হয়ে যাবে। কারণ, এর মাধ্যমে সে আল্লাহ তায়ালা ও তাহার রাসূলের উপর মিথ্যরোপ করেছে, তাহার দীন থেকে বের হয়ে গেছে। তবে যদি সে বৈধ হিসেবে গ্রহণ না করে এ গুনাহগুলো করে বসে তবে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর নিকট এ অপরাধগুলোর কারণে তাকে কাফির বলা যাবে না, বরং তাকে দুর্বল ঈমানের অধিকারী বলা হইবে। যে ধরণের অপরাধ সে করেছে সে ধরণের অপরাধের জন্য শরীআতে যে বিধান দেওয়া হইয়াছে যেমন ফাসেক [পাপাচারী] বলা, কিংবা তার উপর যে হদ তথা নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে তা প্রযোজ্য করা হইবে। আর এটিই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত মত। এ ব্যাপারে খাওয়ারিজ ও মুতাযিলা এবং যারা তাদের বাতিল মতামতের অনুসরণ করে চলে তারা ভিন্ন মত পোষণ করে থাকে। তন্মধ্যে খাওয়ারিজরা তাদেরকে গুনাহের কারণে কাফির বলে থাকে [অর্থাৎ দুনিয়াতে তাদের ওপর দীন ত্যাগের শাস্তি আর আখেরাতে তারা স্থায়ীভাবে জাহান্নামী বলে থাকে]। অন্যদিকে মুতাযিলারা তাদেরকে দু’ অবস্থানের মধ্যবর্তী অবস্থানে রাখে। অর্থাৎ দুনিয়াতে তাদেরকে ঈমান ও কুফরীর মাঝে রয়েছে বলে থাকে, কিন্তু আখেরাতে খাওয়ারিজদের মতই তাদেরকে স্থায়ীভাবে জাহান্নামী বলে বিশ্বাস করে। এ উভয় দলের মতই কুরআন, সুন্নাহ ও এ উম্মতের সত্যনিষ্ঠ পূর্বসূরীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাতিল বলে স্বীকৃত। এ দুদলের বিষয় কোনো কোনো মানুষের মনে তার জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে সন্দেহ-সংশয় তৈরী করতে পারে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার জন্য সকল প্রশংসা খাওয়ারিজ ও মুতাযিলাদের আকীদা-বিশ্বাস ভ্রান্ত হওয়ার বিষয়টি হকপন্থীদের নিকট যেমনটি আমরা বর্ণনা করেছি দিবালোকের মতোই স্পষ্ট। আল্লাহ তায়ালার কাছেই সার্বিক তাওফীক কামনা করি। [ই.বা.]
[9] এর দ্বারা গ্রন্থকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতের সাক্ষ্য দিয়াছেন। যেমন, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন ও অন্যান্য সুসংবাদপ্রাপ্তগণ, তাদের ব্যতীত অন্যদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা থেকে বিরত থাকা। যেমনটি গ্রন্থকারের শেষের আলোচনা থেকে স্পষ্ট হইয়াছে। তবে এটা জানা আবশ্যক যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকীদা হচ্ছে, সাধারণভাবে তাকওয়ার অধিকারী ঈমানদার ব্যক্তিগণ জান্নাতে যাবে, আর কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ব্যক্তিরা জাহান্নামে যাবে। যেমনটি কুরআনে কারীমের বিভিন্ন আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বহু মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হইয়াছে। তন্মধ্যে রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী,
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَنَعِيمٖ ١٧﴾ [الطورঃ ١٧]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও নিআমতে”। [সুরা আত-তূর, আয়াতঃ ১৭]
মহান আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
﴿وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَا وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ وَرِضۡوَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٧٢ ﴾ [التوبةঃ ٧٢]
“আল্লাহ তায়ালা মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীকে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন জান্নাতের, যার নিচে নদীসমূহ প্রবাহিত, সেখানে তারা স্থায়ী হইবে। আরও [ওয়াদা দিচ্ছেন] স্থায়ী জান্নাতসমূহে উত্তম বাসস্থানের। আর আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এটাই মহাসাফল্য”। [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াতঃ ৭২] অনুরূপ অর্থে আরও বহু আয়াত রয়েছে যা এ কথর ওপর প্রমাণবহ।
আর কাফিরদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦﴾ [فاطرঃ ٣٦]
“আর যারা কুফুরী করেছে তাদের জন্য আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের উপর ফয়সালা দেয়া হইবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হইবে না। এভাবেই আমরা প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে শাস্তি দিয়ে থাকি”। [সুরা ফাতির, আয়াতঃ ৩৬] অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُنَٰفِقِينَ فِي ٱلدَّرۡكِ ٱلۡأَسۡفَلِ مِنَ ٱلنَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمۡ نَصِيرًا ١٤٥﴾ [النساءঃ ١٤٥]
“মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতম স্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোনো সহায় পাবেন না।” [সুরা আন-নিসা, আয়াতঃ ১৪৫] তাছাড়া অনুরূপ আরও বহু আয়াত রয়েছে যা এ অর্থের ওপর প্রমাণবহ। আর আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তাওফীকদাতা। [ই.বা.]
[10] এ সীমাবদ্ধতার বিষয়টি বিশুদ্ধ নয়, বরং কথাটি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কারণ, কাফির শাহাদাতাইন [তথা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, এ] দু’টির সাক্ষ্য দিলেই ইসলামে প্রবেশ করবে, যদি সে সেটা মুখে উচ্চারণ না করতে পারে। কিন্তু যদি উচ্চারণ করতে পারে তবে [শাহাদাতাইনের সাথে সাথে] এমন কিছু থেকেও তাকে তাওবাহ করতে হইবে যা [করলে বা বিশ্বাস করলে] তার কাফির হওয়াকে আবশ্যক করে তোলে। তাছাড়া অস্বীকার করা ছাড়াও এমন বেশ কিছু কারণ রয়েছে যা কোনো মানুষকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়, আলিমগণ সেগুলো তাদের গ্রন্থে মুরতাদ তথা দ্বীন ত্যাগের বিধান আলোচনায় বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন। যেমন,
- ইসলামের বদনামী করা, ইসলামের প্রতি অপবাদ দেওয়া, ইসলাম সম্পর্কে কোনো খারাপ মন্তব্য করা, অথবা ইসলামের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কোনো অশোভন কথা বলা, কিংবা আল্লাহ তায়ালা, তাহার রাসূল বা তাহার কিতাব অথবা তাহার দেওয়া শরীআতের কোনো সামান্যতম বিধান নিয়েও ঠাট্টা-উপহাস করা। কারণ আল্লাহ তায়ালা তাআলা বলেন,
﴿قُلۡ أَبِٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ وَرَسُولِهِۦ كُنتُمۡ تَسۡتَهۡزِءُونَ ٦٥ لَا تَعۡتَذِرُواْ قَدۡ كَفَرۡتُم بَعۡدَ إِيمَٰنِكُمۡۚ﴾ [التوبةঃ ٦٥، ٦٦]
“বলুন, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালা্, তাহার আয়াতসমূহ ও তাহার রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে?’ তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফুরী করেছ।” [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াতঃ ৬৫-৬৬] [ই.বা.]
- তন্মধ্যে আরও রয়েছে, মূর্তি বা বেদী পূজা করা, অথবা প্রয়োজন পূরণার্থে মৃতদেরকে আহ্বান করা, তাদের কাছে প্রার্থনা করা, তাদের দ্বারা উদ্ধার কামনা করা, তাদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া ইত্যাদি। কারণ, এসব কিছু লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ এর কালেমার পরিপন্থী কাজ। কারণ, এ কালেমা প্রমাণ করে যে ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালা তাআলারই ঐকান্তিক হক বা অধিকার। আর ইবাদতের প্রকারসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দোআ, উদ্ধারপ্রার্থনা, রুকূ, সাজদাহ, জবাই, মান্নত ইত্যাদি। সুতরাং যে কেউ এগুলো থেকে সামান্যতম কিছুও আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত মূর্তি, বেদী, ফিরিশতা, জিন্ন, কবরবাসী ইত্যাদি এবং কোনো সৃষ্টির কারোর জন্য নিবেদন করবে সে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার সাথে শির্ক করলো, সে ব্যক্তি কালেমা লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ যথাযথভাবে বাস্তবায়ণ করেনি।
উপরে বর্ণিত মাসআলাগুলোর প্রত্যেকটিই এমন যে যার ব্যত্যয় ঘটলে আলেমগণের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। অথচ এগুলোর কোনোটিই অস্বীকার করার মাসআলা নয়।[অর্থাৎ এগুলো দীনের কোনো অঙ্গকে অস্বীকার করার মাধ্যমে সংঘটিত হয়নি] আর এগুলো যে মানুষকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় তার সপক্ষে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল খুবই জানা বিষয়। এছাড়া আরও অনেক অনেক মাসআলা রয়েছে যেগুলো করলে মুসলিম কাফির হয়ে যায়, অথচ সেগুলো অস্বীকার করার মত মাসআলা নয়, [অর্থাৎ এগুলো দ্বীনের কোনো অঙ্গকে অস্বীকার করার বিষয় নয়] তারপরও আলেমগণ সেগুলো মুরতাদ বা দীনত্যাগকারীর বিধানের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন। যদি দেখার ইচ্ছা হয় তো সেখানে দেখা যেতে পারে। আর আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তাওফীকদাতা। [ই.বা.]
[11] এ সংজ্ঞায় কিছু দৃষ্টি আকর্ষণী ও ঘাটতি রয়েছে। বরং বিশুদ্ধ কথা, যার উপর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত আকীদা তা হচ্ছে, ঈমান, কথা, কাজ ও বিশ্বাসের নাম, যাতে আানুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি লাভ ঘটে এবং অবাধ্যতার মাধ্যমে ঘাটতি হয়। এ কথার উপর কুরআন ও সুন্নাহর দলীল-প্রমাণাদি অগণিত অসংখ্য। এ কিতাবের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার ইবনু আবিল ইয্য আল-হানাফী অনেকগুলো উল্লেখ করেছেন। যদি প্রয়োজন মনে কর তো সেখানে দেখে নাও। ঈমানকে আমলের গণ্ডির বাইরে রাখা মূলতঃ মুরজিয়া সম্প্রদায়ের মত। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও তাদের মধ্যকার মতভেদ কেবল শব্দগত বিরোধে সীমাবদ্ধ নয়, রবং সেটা যেমন শব্দগত বিরোধ তেমনি তা অর্থগত বিরোধও। কারণ, এ মতভেদের ওপর অনেক বিধান নির্ভর করছে, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এবং মুরজিয়া উভয় সম্প্রদায়ের কথা-বার্তা নিয়ে চিন্তা করবে তারা সেটা সহজেই জানতে পারবে। [ই.বা.]
বস্তুতঃ ঈমান ও আমলের সম্পর্ক বীজ ও বৃক্ষের ন্যায়। বৃক্ষ যেমন বীজের পরিচয় বহন করে, তেমনি আমল ঈমানের পরিচয় বহন করে। আকীদা ও আমলের একটিকে অপরটি থেকে বাদ দিয়ে ঈমানের কল্পনাই করা যায় না। তাই মুহাদ্দিসগণের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত এই যে, ঈমান হচ্ছে তিনটি বস্তুর সমন্বয়ঃ [১] অন্তরের বিশ্বাস, [২] মূখের স্বীকৃতি এবং [৩] আরকানসহ আহকামের বাস্তবায়ন। -অনুবাদক।
[12] কথাটিতে প্রচুর সমস্যা রয়েছে। বরং তা একটি বাতিল কথা। কারণ ঈমানদারগণ সবাই ঈমানের দিক থেকে একই পর্যায়ের নয়। তাদের মধ্যে বড় ধরণের প্রার্থক্য বিদ্যমান। যেমন রাসূলগণের ঈমান অন্যদের ঈমানের মত নয়। অনুরূপ খোলাফায়ে রাশেদীনসহ অন্যান্য সাহাবীগণের ঈমান এবং তাহারা ব্যতীত অন্যদের ঈমান একরকম নয়। এ তারতম্যের কারণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা, তাহার নাম, তাহার গুণাবলী এবং তিনি তাহার বান্দাদের জন্য যে শরীআত প্রবর্তন করেছেন বান্দার অন্তরে অবস্থিত সেটার জ্ঞানে তারতম্য থাকা। আর এটাই হচ্ছে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত অভিমত। মুরজিয়া ও তাদের মতের পক্ষের লোকেরা এটার বিরোধিতা করে থাকে। আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সাহায্যকারী। [ই.বা.]
[13] আর তা ওয়াজিব হয় তিনটি কারণে। এক. বিবাহিত লোকের ব্যভিচারের কারণে, দ্বিতীয়. কোনো সম্মানিত মানুষকে হত্যা করার কারণে, তিন. দীন ইসলাম পরিত্যাগ করে কাফির হওয়ার কারণে যেমনটি হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে। [দেখুনঃ সহিহ বুখারী, হাদীস নং ৬৮৭৮; সহিহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৭৬] –সম্পাদক।
[14] সুন্নাত এর অর্থ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত, আর জামাআত অর্থ, যে পথের ওপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম চলে গেছেন সে পথে চলাচলকারী লোকসকল। সকল সাধারণ মুসলিমই এর অংশ। এর দ্বারা কোনো দল বুঝানো হয় নি। -সম্পাদক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
[15] এটা সঠিক নয়। কারণ, আল্লাহ তায়ালা তাআলা তার বান্দাদেরকে যতটুকু তাকলীফ [দায়-দায়িত্ব বা নির্দেশনা] দিয়াছেন তারা তার চেয়েও বেশি ক্ষমতা রাখেন। বরং মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি দয়াপরবশ হইয়াছেন এবং তাদের প্রতি সহজ করে দিয়াছেন, তিনি তাদের ওপর তাদের দীনে কোনো সমস্যা রাখেন নি। এসবই হচ্ছে তার রহমত ও দয়ার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ তায়ালাই তাওফীকের মালিক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত
2. পরিচ্ছেদঃ শরহুল আকীদাহ আত তাহাবিয়া – সুচিপত্র
শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঅনুচ্ছেদ ১ টি
ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহর সংক্ষিপ্ত জীবনী
আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয্ আল-হানাফী রহিমাহুল্লাহ এর ভূমিকা (مقدمة)অনুচ্ছেদ ৩ টি
আল্লামা ইমাম ইবনে আবীল ইয্ আল-হানাফী রহিমাহুল্লাহ এর ভূমিকা (مقدمة)
নাবী-রসূলগণের আনুগত্য করা ওয়াজীব এবং তাদের উপর আল্লাহ তা‘আলা যা নাযিল করেছেন তার আনুগত্য করাও ওয়াজীব
রসূল (ﷺ) যা নিয়ে এসেছেন, আমাদের জন্য তা যথেষ্ট
১. তাওহীদের সংজ্ঞা ও তার প্রকারভেদঅনুচ্ছেদ ৬ টি
তাওহীদের সংজ্ঞা ও তার প্রকারভেদ
তাওহীদুল উলুহীয়া এবং তাওহীদুর রুবুবীয়াহ
তাওহীদুল উলুহীয়া ছিল নাবী-রসূলদের দাওয়াতের মূলভিত্তি
রসূলগণ যে তাওহীদের প্রতি আহবান করেছেন, তার প্রকারভেদ -১
রসূলগণ যে তাওহীদের প্রতি আহবান করেছেন, তার প্রকারভেদ – ২
রসূলগণ যে তাওহীদের প্রতি আহবান করেছেন, তার প্রকারভেদ – ৩
২. তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই (وَلَا شَيْءَ مِثْلُهُ)অনুচ্ছেদ ২ টি
তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই – ১
তার সদৃশ কোনো কিছুই নেই – ২
৩. কোনো কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না (وَلَا شَيْءَ يُعْجِزُهُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
কোনো কিছুই তাকে অক্ষম করতে পারে না।
৪. তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই (وَلَا إِلَهَ غَيْرُهُ)অনুচ্ছেদ ২ টি
তিনি ছাড়া আর কোনো সত্য ইলাহ নেই।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (لا إله إلا الله) এর ব্যাখ্যা
৫. তিনি কাদীম (অনাদি, অবিনশ্বর, প্রাক্তন), তার কোনো শুরু নেই। তিনি অনন্ত-চিরন্তন, তার কোনো অন্ত নেই (قَدِيمٌ بِلَا ابْتِدَاءٍ دَائِمٌ بِلَا انْتِهَاءٍ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি কাদীম (অনাদি, অবিনশ্বর, প্রাক্তন), তার কোনো শুরু নেই। তিনি অনন্ত-চিরন্তন, তার কোনো অন্ত নেই।
৬. তার ধ্বংস নেই, তিনি ক্ষয়প্রাপ্তও হবেন না (لا يَفْنَى وَلا يَبِيدُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তার ধ্বংস নেই, তিনি ক্ষয়প্রাপ্তও হবেন না।
৭. আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া অন্য কিছু হয় না (وَلَا يَكُونُ إِلَّا مَا يُرِيدُ)অনুচ্ছেদ ২ টি
আল্লাহ তা‘আলা যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া অন্য কিছু হয় না।
আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার প্রকারভেদ এবং সৃষ্টিগত ইচ্ছা ও শরীয়াতগত ইচ্ছার মধ্যে পার্থক্য
৮. মানুষের কল্পনা ও ধারণাসমূহ তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারে না এবং জ্ঞান-বোধশক্তি তাকে উপলব্ধি ও আয়ত্ত করতে পারে না (لَا تَبْلُغُهُ الْأَوْهَامُ وَلَا تُدْرِكُهُ الْأَفْهَامُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
মানুষের কল্পনা ও ধারণাসমূহ তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারে না এবং জ্ঞান-বোধশক্তি তাকে উপলব্ধি ও আয়ত্ত করতে পারে না।
৯. সৃষ্টির কোনো কিছুই তার সদৃশ নয় (وَلَا يُشْبِهُهُ الْأَنَامَ)অনুচ্ছেদ ১ টি
সৃষ্টির কোনো কিছুই তার সদৃশ নয়।
১০. তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মারা যাবেন না, চির জাগ্রত, কখনো নিদ্রা যান না (حَيٌّ لَا يَمُوتُ قَيُّومٌ لَا يَنَامُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি চিরঞ্জীব, কখনো মারা যাবেন না, চির জাগ্রত, কখনো নিদ্রা যান না।
১১. তিনি সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টির প্রতি তার কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তিনি সৃষ্টি করেছেন। কোনো প্রকার ক্লান্তি ছাড়াই তিনি রিযিকদাতা (خَالِقٌ بِلَا حَاجَةٍ رَازِقٌ بِلَا مؤنَةٍ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি সৃষ্টিকর্তা। সৃষ্টির প্রতি তার কোনো প্রয়োজন ছাড়াই তিনি সৃষ্টি করেছেন। কোনো প্রকার ক্লান্তি ছাড়াই তিনি রিযিকদাতা।
১২. তিনি নির্ভয়ে প্রাণ হরণকারী এবং বিনা ক্লেশে পুনরুত্থানকারী (مُمِيتٌ بِلَا مَخَافَةٍ بَاعِثٌ بِلَا مَشَقَّةٍ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি নির্ভয়ে প্রাণ হরণকারী এবং বিনা ক্লেশে পুনরুত্থানকারী।
১৩. সৃষ্টি করার বহু পূর্ব থেকেই তিনি তার অনাদি গুণাবলীসহ চিরন্তন-অবিনশ্বর সত্তা হিসাবে বিদ্যমান রয়েছেন, আর সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করার কারণে তার এমন কোনো নতুন গুণের সংযোজন ঘটেনি, যা সৃষ্টি করার পূর্বে ছিল না। তিনি তার গুণাবলীসহ যেমন অনাদি ছিলেন, তেমনি তিনি স্বীয় গুণাবলীসহ অনন্ত, চিরন্তন ও চিরঞ্জীব থাকবেন (مَا زَالَ بِصِفَاتِهِ قَدِيمًا قَبْلَ خَلِقِهِ لَمْ يَزْدَدْ بِكَوْنِهِمْ شَيْئًا لَمْ يَكُنْ قَبْلَهُمْ مِنْ صِفَتِهِ كَمَا كَانَ بِصِفَاتِهِ أَزَلِيًّا، كَذَلِكَ لَا يَزَالُ عَلَيْهَا أَبَدِيًّا)অনুচ্ছেদ ২ টি
সৃষ্টি করার বহু পূর্ব থেকেই তিনি তার অনাদি গুণাবলীসহ চিরন্তন-অবিনশ্বর সত্তা হিসাবে বিদ্যমান রয়েছেন, আর সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করার কারণে তার এমন কোনো নতুন গুণের সংযোজন ঘটেনি, যা সৃষ্টি করার পূর্বে ছিল না। তিনি তার গুণাবলীসহ যেমন অনাদি ছিলেন, তেমনি তিনি স্বীয় গুণাবলীসহ অনন্ত, চিরন্তন ও চিরঞ্জীব থাকবেন।
সৃষ্টির ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকার ধারণা
১৪. সৃষ্টি করার পর তার গুণবাচক নাম খালেক হয়নি এবং সৃষ্টিজগৎ উদ্ভাবন করার কারণে তার গুণবাচক নাম উদ্ভাবক হয়নি (لَيْسَ بَعْدَ خَلْقِ الْخَلْقِ اسْتَفَادَ اسم الْخَالِق وَلَا بِإِحْدَاثِهِ الْبَرِيَّةَ اسْتَفَادَ اسم الْبَارِي)অনুচ্ছেদ ১ টি
সৃষ্টি করার পর তার গুণবাচক নাম খালেক হয়নি এবং সৃষ্টিজগৎ উদ্ভাবন করার কারণে তার গুণবাচক নাম উদ্ভাবক হয়নি।
১৫. আল্লাহ তা‘আলা তখনো প্রতিপালন করার বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন, যখন কোনো প্রতিপালিত সৃষ্টি ছিল না। তিনি তখনো সৃষ্টি করার বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন, যখন কোনো সৃষ্ট ছিল না (لَهُ مَعْنَى الرُّبُوبِيَّةِ وَلَا مَرْبُوبَ وَمَعْنَى الْخَالِقِ وَلَا مَخْلُوقَ)অনুচ্ছেদ ১ টি
আল্লাহ তা‘আলা তখনো প্রতিপালন করার বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন, যখন কোনো প্রতিপালিত সৃষ্টি ছিল না। তিনি তখনো সৃষ্টি করার বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন, যখন কোনো সৃষ্ট ছিল না।
১৬. মৃতদেরকে জীবন দান করার পর যেমন তিনি জীবনদানকারী নাম ও বিশেষণে বিশেষিত ঠিক তেমনি তাদেরকে জীবনদান করার পূর্বেও তিনি এ নামের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপ তিনি সৃষ্টিকুলের সৃজনের পূর্বেই স্রষ্টা নাম ও গুণের অধিকারী ছিলেন (وَكَمَا أَنَّهُ مُحْيِي الْمَوْتَى بَعْدَمَا أَحْيَا اسْتَحَقَّ هَذَا الِاسْمَ قَبْلَ إِحْيَائِهِمْ كَذَلِكَ اسْتَحَقَّ اسْمَ الْخَالِقِ قَبْلَ إِنْشَائِهِمْ)অনুচ্ছেদ ১ টি
মৃতদেরকে জীবন দান করার পর যেমন তিনি জীবনদানকারী নাম ও বিশেষণে বিশেষিত ঠিক তেমনি তাদেরকে জীবনদান করার পূর্বেও তিনি এ নামের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপ তিনি সৃষ্টিকুলের সৃজনের পূর্বেই স্রষ্টা নাম ও গুণের অধিকারী ছিলেন।
১৭. এটা এ জন্য যে, তিনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রত্যেক সৃষ্টিই তার মুখাপেক্ষী এবং সব কিছুই তার জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুর প্রতিই মুখাপেক্ষী নন। তার মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা (ذَلِكَ بِأَنَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ وَكُلُّ شَىْءٍ إِلَيْهِ فَقِيرٌ وَكُلُّ أَمْرٍ إليه يَسِيرٌ لَا يَحْتَاجُ إِلَى شَيْءٍ، لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
এটা এ জন্য যে, তিনি সবকিছুর উপর সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান এবং প্রত্যেক সৃষ্টিই তার মুখাপেক্ষী এবং সব কিছুই তার জন্য সহজ। তিনি কোনো কিছুর প্রতিই মুখাপেক্ষী নন। তার মত কিছুই নেই; তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
১৮. তিনি স্বীয় জ্ঞানে সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন (خَلَقَ الْخَلْقَ بِعِلْمِهِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি স্বীয় জ্ঞানে সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেছেন।
১৯. এবং তিনি তাদের জন্য তাকদীর বা সব কিছুরই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন (وَقَدَّرَ لَهُمْ أَقْدَارًا)অনুচ্ছেদ ১ টি
এবং তিনি তাদের জন্য তাকদীর বা সব কিছুরই পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।
২০. তিনি তাদের মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করেছেন (وَضَرَبَ لَهُمْ آجَالًا)অনুচ্ছেদ ২ টি
তিনি তাদের মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করেছেন।
নিহত ব্যক্তিও তার জন্য নির্ধারিত সময়েই মারা যায়
২১. সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টির পূর্বে কোনো কিছুই তার কাছে গোপন ছিল না। এমনি সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টির পূর্বেই তাদের সৃষ্টির পরবর্তীকালের কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন (وَلَمْ يَخْفَ عَلَيْهِ شَيْءٌ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَهُمْ وَعَلِمَ مَا هُمْ عَامِلُونَ قَبْلَ أَنْ يَخْلُقَهُمْ)অনুচ্ছেদ ১ টি
সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টির পূর্বে কোনো কিছুই তার কাছে গোপন ছিল না। এমনি সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টির পূর্বেই তাদের সৃষ্টির পরবর্তীকালের কার্যকলাপ সম্পর্কে তিনি অবহিত ছিলেন।
২২. এবং তিনি তাদেরকে তার আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার নাফরমানী করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন (وَأَمَرَهُمْ بِطَاعَتِهِ وَنَهَاهُمْ عَنْ مَعْصِيَتِه)অনুচ্ছেদ ১ টি
এবং তিনি তাদেরকে তার আনুগত্য করার আদেশ দিয়েছেন এবং তার নাফরমানী করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
২৩. সবকিছু তার নির্ধারণ এবং ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়। তার ইচ্ছাই কার্যকর হয়, তার ইচ্ছা ব্যতীত বান্দার কোনো ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয় না। অতএব তিনি বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়, আর যা চান না তা হয় না (وَكُلُّ شَيْءٍ يَجْرِي بِتَقْدِيرِهِ وَمَشِيئَتِهِ وَمَشِيئَتُهُ تَنْفُذُ لَا مَشِيئَةَ لِلْعِبَادِ إِلَّا مَا شَاءَ لَهُمْ، فَمَا شَاءَ لَهُمْ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ)অনুচ্ছেদ ২ টি
সবকিছু তার নির্ধারণ এবং ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়। তার ইচ্ছাই কার্যকর হয়, তার ইচ্ছা ব্যতীত বান্দার কোনো ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয় না। অতএব তিনি বান্দাদের জন্য যা চান তাই হয়, আর যা চান না তা হয় না।
তাকদীর দিয়ে দলীল গ্রহণ করে কুফুরী ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া অযৌক্তিক
২৪. আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন (يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ وَيَعْصِمُ وَيُعَافِي فَضْلًا وَيُضِلُّ مَنْ يَشَاءُ وَيَخْذُلُ وَيَبْتَلِي عَدْلًا)অনুচ্ছেদ ১ টি
আল্লাহ অনুগ্রহ করে যাকে ইচ্ছা, তাকে হেদায়াত, আশ্রয় ও নিরাপত্তা প্রদান করেন। আর যাকে ইচ্ছা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পথভ্রষ্ট করেন, অপমানিত করেন ও বিপদগ্রস্ত করেন।
২৫. আর সকলেই আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে এবং সবাই তারই অনুগ্রহ ও এ ন্যায়বিচারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে (وَكُلُّهُمْ يَتَقَلَّبُونَ فِي مَشِيئَتِهِ بَيْنَ فَضْلِهِ وَعَدْلِهِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
আর সকলেই আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে এবং সবাই তারই অনুগ্রহ ও এ ন্যায়বিচারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।
২৬. তিনি কারও প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সমকক্ষ হওয়ার বহু উর্ধ্বে (وَهُوَ مُتَعَالٍ عَنِ الْأَضْدَادِ وَالْأَنْدَادِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তিনি কারও প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সমকক্ষ হওয়ার বহু উর্ধ্বে।
২৭. তার ফায়ছালার কোনো প্রতিহতকারী নেই। তার হুকুমকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করার কেউ নেই এবং তার নির্দেশকে পরাভূত করারও কেউ নেই (لَا رَادَّ لِقَضَائِهِ وَلَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ وَلَا غَالِبَ لِأَمْرِهِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
তার ফায়ছালার কোনো প্রতিহতকারী নেই। তার হুকুমকে পশ্চাতে নিক্ষেপ করার কেউ নেই এবং তার নির্দেশকে পরাভূত করারও কেউ নেই।
২৮. উপরে উল্লেখিত সব কিছুর উপরই আমরা ঈমান এনেছি এবং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছি যে, সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে আগত (آمَنَّا بِذَلِكَ كُلِّهِ، وَأَيْقَنَّا أَنَّ كُلًّا مِنْ عِنْدِهِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
উপরে উল্লেখিত সব কিছুর উপরই আমরা ঈমান এনেছি এবং দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করেছি যে, সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে আগত।
২৯. নিশ্চয় মুহাম্মাদ (ﷺ) তার নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নাবী এবং পছন্দনীয় রসূল।অনুচ্ছেদ ৫ টি
নিশ্চয় মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নাবী এবং পছন্দনীয় রসূল।
মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াতের প্রতি ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক
নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা সম্পর্কে কিছু কথা – ১
নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুজেযা সম্পর্কে কিছু কথা – ২
নাবী ও রাসূলের মধ্যে পার্থক্য
৩০. তিনি সর্বশেষ নাবী, মুত্তাকীদের ইমাম, রসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রবের হাবীব (وَأَنَّهُ خَاتَمُ الْأَنْبِيَاءِ وَإِمَامُ الْأَتْقِيَاءِ وَسَيِّدُ الْمُرْسَلِينَ وَحَبِيبُ رَبِّ الْعَالَمِينَ)অনুচ্ছেদ ৪ টি
তিনি সর্বশেষ নাবী, মুত্তাকীদের ইমাম, রসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রবের হাবীব।
নাবীদের একজনকে অন্যজনের উপর প্রাধান্য দেয়া সম্পর্কে কিছু কথা
মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর হাবীব
ভালোবাসার স্তরসমূহ
৩১. তার পরে যেসব লোক নবুওয়াতের দাবি করবে, তাদের প্রত্যেকের দাবি ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু নয় (وَكُلُّ دَعْوَى النُّبُوَّةِ بَعْدَهُ فَغَيٌّ وَهَوًى)অনুচ্ছেদ ১ টি
তার পরে যেসব লোক নবুওয়াতের দাবি করবে, তাদের প্রত্যেকের দাবি ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
৩২. তিনি সত্য, হেদায়াত, নূর ও জ্যোতি সহকারে সমস্ত জিন ও মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন (وَهُوَ الْمَبْعُوثُ إِلَى عَامَّةِ الْجِنِّ وَكَافَّةِ الْوَرَى بِالْحَقِّ وَالْهُدَى وَبِالنُّورِ وَالضِّيَاءِ)অনুচ্ছেদ ২ টি
তিনি সত্য, হেদায়াত, নূর ও জ্যোতি সহকারে সমস্ত জিন ও মানুষের প্রতি প্রেরিত হয়েছেন।
মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রেসালাত বিশ্বজনীন
৩৩. নিশ্চয়ই কুরআন আল্লাহর কালাম, যা আল্লাহর নিকট থেকে কথা হিসেবে শুরু হয়েছে, তবে এর কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না। ……অনুচ্ছেদ ৮ টি
নিশ্চয়ই কুরআন আল্লাহর কালাম, যা আল্লাহর নিকট থেকে কথা হিসেবে শুরু হয়েছে, তবে এর কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না। এ কালামকে তিনি তার রাসূলের প্রতি অহী হিসাবে নাযিল করেছেন। আর ঈমানদারগণ তাকে এ ব্যাপারে সত্যবাদী বলে মেনে নিয়েছে। তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, এটি সত্যিই আল্লাহর কালাম, কোনো সৃষ্টির কথার মত সৃষ্টি নয়। অতএব, যে ব্যক্তি কুরআন শুনে তাকে মানুষের কালাম বলে ধারণা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা তার নিন্দা করেছেন, তাকে দোষারোপ করেছেন এবং তাকে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, سَأُصْلِيهِ سَقَرَ ‘শীঘ্রই তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো’। (সূরা মুদ্দাসি্সর: ২৬) সুতরাং যে বলে إِنْ هَذَا إِلَّا قَوْلُ الْبَشَرِ ‘এটাতো মানুষের কথা ছাড়া আর কিছুই নয়’ আল্লাহ তা‘আলা তাকে সাকার নামক জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। অতএব, আমরা জেনে নিলাম ও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলাম যে, এ কুরআন মানুষের সৃষ্টিকর্তার কালাম। আর তা কোনো মানুষের কথার সাথে সাদৃশ্য রাখে না।
আল্লাহর কালাম সম্পর্কিত মাস‘আলায় আলেমদের মতভেদ
জান্নাতবাসীদের সাথে আল্লাহর কথোপকথন।
যারা কুরআনকে মাখলুক বলে তাদের জবাব:
আল্লাহর কালামের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব এবং বিরোধীদের জবাব – ১
আল্লাহর কালামের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব এবং বিরোধীদের জবাব – ২
আল্লাহর কালামের ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব এবং বিরোধীদের জবাব – ৩
কুরআনকে যারা মাখলুক বলে, তারা কাফের
৩৪. যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে মানবীয় কোনো বিশেষণে বিশেষিত করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি অন্তরের চোখ দিয়ে এতে গভীর দৃষ্টি প্রদান করবে সে সঠিক শিক্ষা নিতে সক্ষম হবে। আর কাফেরদের মত কুরআনকে মানুষের কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে জানতে পারবে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন তার গুণাবলীতে মানুষের মত নন (وَمَنْ وَصَفَ اللَّهَ بِمَعْنًى مِنْ مَعَانِي الْبَشَرِ، فَقَدْ كَفَرَ مَنْ أَبْصَرَ هَذَا اعْتَبَرَ وَعَنْ مِثْلِ قَوْلِ الْكُفَّارِ انْزَجَرَ. وَعَلِمَ أَنَّ اللَّهَ بِصِفَاتِهِ لَيْسَ كَالْبَشَرِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলাকে মানবীয় কোনো বিশেষণে বিশেষিত করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি অন্তরের চোখ দিয়ে এতে গভীর দৃষ্টি প্রদান করবে সে সঠিক শিক্ষা নিতে সক্ষম হবে। আর কাফেরদের মত কুরআনকে মানুষের কথা বলা হতে বিরত থাকবে এবং সে জানতে পারবে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন তার গুণাবলীতে মানুষের মত নন।
৩৫. জান্নাতীদের জন্য আল্লাহকে দেখার বিষয়টি সত্য। তবে সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে নয়, তার পদ্ধতিও আমাদের অজানা। ……অনুচ্ছেদ ৪ টি
আর জান্নাতীদের জন্য আল্লাহকে দেখার বিষয়টি সত্য। তবে সম্পূর্ণভাবে আয়ত্ত করে নয়, তার পদ্ধতিও আমাদের অজানা। যেমনটি আমাদের রবের কিতাব ঘোষণা করেছে, وُجُوه يَومَئِذٍ نَّاضِرَةٌ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٌ ‘সেদিন অনেক মুখম-ল আনন্দোজ্জল হবে, সেগুলো তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে’। (সূরা আল-কিয়ামাহ: ২২) এ দেখার ব্যাখ্যা হলো, একমাত্র আল্লাহ যেভাবে ইচ্ছা করেন এবং যেভাবে তিনি জানেন সেভাবেই এটি অর্জিত হবে এবং এ সম্পর্কে যা কিছু ছহীহ হাদীছে রসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত হয়েছে, তা যেভাবে তিনি বলেছেন সেভাবেই গৃহীত হবে এবং তিনি যা উদ্দেশ্য করেছেন সেটিই ধর্তব্য হবে। এতে আমরা আমাদের নিজস্ব মতের উপর নির্ভর করে কোনো অপব্যাখ্যা করবো না এবং আমাদের প্রবৃত্তির প্ররোচনায় তাড়িত হয়ে কোনো অযাচিত ধারণার বশবর্তী হবো না। কারণ কোনো ব্যক্তি কেবল তখনই তার দ্বীনকে ভ্রষ্টতা ও বক্রতা থেকে নিরাপদ রাখতে পারে, যখন সে মহান আল্লাহ এবং তার রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পন করবে এবং সংশয়ের ব্যাপারসমূহকে আল্লাহর দিকেই ফিরিয়ে দিবে।
আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকারকারীদের দলীল ও তার জবাব – ১
আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকারকারীদের দলীল ও তার জবাব – ২
আল্লাহর সাক্ষাৎ অস্বীকারকারীদের দলীল ও তার জবাব – ৩
৩৬. পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও বশ্যতা স্বীকার করা ব্যতীত কারও পা ইসলামের উপর দৃঢ় থাকতে পারে না (وَلَا تَثْبُتُ قَدَمُ الْإِسْلَامِ إِلَّا عَلَى ظَهْرِالتَّسْلِيمِ وَالِاسْتِسْلَامِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ ও বশ্যতা স্বীকার করা ব্যতীত কারও পা ইসলামের উপর দৃঢ় থাকতে পারে না।
৩৭. যে ব্যক্তি এমন বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা করবে যা তার জ্ঞানের নাগালের বাইরে এবং যার বুঝ বশ্যতা স্বীকারে সন্তুষ্ট হবে না, তার ইচ্ছা তাকে নির্ভেজাল তাওহীদ, স্বচ্ছ মারেফত-পরিচয় ও ছহীহ ঈমান হতে দূরে সরিয়ে রাখবে (فَمَنْ رَامَ عِلْمَ مَا حُظِرَ عَنْهُ عِلْمُهُ وَلَمْ يَقْنَعْ بِالتَّسْلِيمِ فَهْمُهُ حَجَبَهُ مَرَامُهُ عَنْ خَالِصِ التَّوْحِيدِ وَصَافِي الْمَعْرِفَةِ وَصَحِيحِ الْإِيمَانِ )অনুচ্ছেদ ৩ টি
যে ব্যক্তি এমন বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা করবে যা তার জ্ঞানের নাগালের বাইরে এবং যার বুঝ বশ্যতা স্বীকারে সন্তুষ্ট হবে না, তার ইচ্ছা তাকে নির্ভেজাল তাওহীদ, স্বচ্ছ মারেফত-পরিচয় ও ছহীহ ঈমান হতে দূরে সরিয়ে রাখবে।
কালামশাস্ত্রের অসারতা সম্পর্কে ইমাম গাজ্জালীর স্বীকারোক্তি
আক্বীদার ক্ষেত্রে মুসলিমদের বিভ্রান্তির কারণ
৩৮. ফলে সে কুফুরী ও ঈমান, সত্যায়ন ও মিথ্যায়ন, স্বীকৃতি প্রদান ও অস্বীকৃতি, সন্দেহ-পেরেশান এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে থাকবে। সে না সত্যবাদী মুমিন হবে, আর না অস্বীকারকারী মিথ্যাবাদী হবে (فَيَتَذَبْذَبُ بَيْنَ الْكُفْرِ وَالْإِيمَانِ، وَالتَّصْدِيقِ وَالتَّكْذِيبِ، وَالْإِقْرَارِ وَالْإِنْكَارِ مُوَسْوِسًا تَائِهًا، شَاكًّا، لَا مُؤْمِنًا مُصَدِّقًا، وَلَا جَاحِدًا مُكَذِّبًا)অনুচ্ছেদ ১ টি
ফলে সে কুফুরী ও ঈমান, সত্যায়ন ও মিথ্যায়ন, স্বীকৃতি প্রদান ও অস্বীকৃতি, সন্দেহ-পেরেশান এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বের অনিশ্চয়তার বেড়াজালে ঘুরপাক খেতে থাকবে। সে না সত্যবাদী মুমিন হবে, আর না অস্বীকারকারী মিথ্যাবাদী হবে।
৩৯. জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎ লাভের উপর ঐ ব্যক্তির ঈমান আনয়ন বিশুদ্ধ হবে না, যে কোনো ধারণার বশবর্তী হবে, অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সাক্ষাতের তাবীল করবে বা ভুল ব্যাখ্যা দিবে। ……অনুচ্ছেদ ৩ টি
জান্নাতীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার সাক্ষাৎ লাভের উপর ঐ ব্যক্তির ঈমান আনয়ন বিশুদ্ধ হবে না, যে কোনো ধারণার বশবর্তী হবে, অথবা নিজের বুঝ অনুসারে সাক্ষাতের তাবীল করবে বা ভুল ব্যাখ্যা দিবে। কারণ আল্লাহকে দেখার বিষয়টি এবং রবের অন্যান্য গুণাবলীর বিষয়ের ব্যাপারে প্রকৃত কথা হচ্ছে ঐগুলোর কোনোরূপ তাবীল করার অপচেষ্টা না করে যেভাবে এসেছে সেভাবেই অবিকৃতভাবে মেনে নিতে। এটাই হচ্ছে মুসলিমদের দ্বীন। যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।
আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে অনুমান ও ধারণা করে কথা বলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক
التأويل শব্দের অর্থ
৪০. যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে (وَمَنْ لَمْ يَتَوَقَّ النَّفْيَ وَالتَّشْبِيهَ زَلَّ وَلَمْ يُصِبِ التَّنْزِيهَ)অনুচ্ছেদ ২ টি
যে ব্যক্তি রবের জন্য সুসাব্যস্ত গুণাবলীকে অস্বীকার করা এবং সৃষ্টির গুণাবলীর সাথে তার সাদৃশ্য করা থেকে বিরত থাকবে না, তার নিশ্চিত পদস্খলন ঘটবে ও সে সঠিকভাবে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণায় ব্যর্থ হবে।
আল্লাহ তা‘আলাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা কুফুরী
৪১. আমাদের মহান রব একক ও নজীর বিহীন হওয়ার গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয় (فَإِنَّ رَبَّنَا جَلَّ وَعَلَا مَوْصُوفٌ بِصِفَاتِ الْوَحْدَانِيَّةِ، مَنْعُوتٌ بِنُعُوتِ الْفَرْدَانِيَّةِ، لَيْسَ فِي مَعْنَاهُ أَحَدٌ مِنَ الْبَرِيَّةِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
আমাদের মহান রব একক ও নজীর বিহীন হওয়ার গুণে গুণান্বিত। মাখলুকের মধ্যে কেউ তার গুণে ভূষিত নয়।
৪২. আর আল্লাহ তা‘আলা সীমা, পরিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, সাজ-সরঞ্জাম, উপাদান-উপকরণ ও যন্ত্রপাতির সাহায্য নেয়ার অনেক উর্ধ্বে এবং সকল সৃষ্ট বস্তুকে যেমন ছয়টি দিক পরিবেষ্টন করে রাখে, দিকসমূহ তাকে সেভাবে পরিবেষ্টন করতে পারে না (وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ وَالْأَرْكَانِ وَالْأَعْضَاءِ وَالْأَدَوَاتِ، لَا تَحْوِيهِ الْجِهَاتُ السِّتُّ كَسَائِرِ الْمُبْتَدَعَاتِ)অনুচ্ছেদ ২ টি
আর আল্লাহ তা‘আলা সীমা, পরিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, সাজ-সরঞ্জাম, উপাদান-উপকরণ ও যন্ত্রপাতির সাহায্য নেয়ার অনেক উর্ধ্বে এবং সকল সৃষ্ট বস্তুকে যেমন ছয়টি দিক পরিবেষ্টন করে রাখে, দিকসমূহ তাকে সেভাবে পরিবেষ্টন করতে পারে না।
যারা আল্লাহ তা‘আলা থেকে দিক নাকোচ করার মাধ্যমে সৃষ্টির উপর তার সমুন্নত হওয়া নাকোচ করতে চায়, তাদের জবাব
৪৩. মিরাজ সত্য ……অনুচ্ছেদ ৩ টি
আর মিরাজ সত্য, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রাতের বেলা আকসায় ভ্রমণ করানো হয়েছে। অতঃপর তাকে জাগ্রত অবস্থায় স্ব-শরীরে উর্ধ্ব আকাশে উত্থিত করা হয়েছে। সেখান থেকে আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে আরো উর্ধ্বে নেয়া হয়েছে। সেখানে আল্লাহ স্বীয় ইচ্ছা অনুসারে তাকে সম্মান প্রদর্শন করেছেন এবং তাকে যা প্রত্যাদেশ করার ছিল তা করেছেন। তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি। আল্লাহ তার উপর আখেরাতে এবং দুনিয়ার জগতে সালাত (দরুদ) ও সালাম নাযিল করুন।
মিরাজের রাতে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে দেখার ব্যাপারে ছাহাবীদের মতভেদ
স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় মিরাজ হয়
৪৪. আর হাউয যা আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার উম্মতের পিপাসা নিবারণার্থে প্রদান করে সম্মানিত করেছেন, তা অবশ্যই সত্য (وَالْحَوْضُ الَّذِي أَكْرَمَهُ اللَّهُ تَعَالَى بِهِ غِيَاثًا لِأُمَّتِهِ حَقٌّ)অনুচ্ছেদ ১ টি
আর হাউয যা আল্লাহ তা‘আলা তার নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার উম্মতের পিপাসা নিবারণার্থে প্রদান করে সম্মানিত করেছেন, তা অবশ্যই সত্য।
৪৫. আর নাবী (ﷺ) এর শাফা‘আত সত্য। যা তিনি উম্মতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। যেমনটি বিভিন্ন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে (وَالشَّفَاعَةُ الَّتِي ادَّخَرَهَا لَهُمْ حَقٌّ كَمَا رُوِيَ فِي الْأَخْبَارِ)অনুচ্ছেদ ৪ টি
আর নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শাফা‘আত সত্য। যা তিনি উম্মতের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেন। যেমনটি বিভিন্ন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে।
প্রথম প্রকার শাফা‘আত বা শাফা‘আতে উযমা (বৃহৎ)
অন্যান্য শাফা‘আতের বর্ণনা
দুনিয়ার জীবনে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উসীলায় দু‘আ করা
৪৬. আল্লাহ তা‘আলা আদম এবং তার সন্তানদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তা সত্য (وَالْمِيثَاقُ الَّذِي أَخَذَهُ اللَّهُ تَعَالَى مِنْ آدَمَ وَذُرِّيَّتِهِ حَقٌّ)অনুচ্ছেদ ২ টি
আল্লাহ তা‘আলা আদম এবং তার সন্তানদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তা সত্য – ১
আল্লাহ তা‘আলা আদম এবং তার সন্তানদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন তা সত্য – ২
৪৭. মহান আল্লাহ আগে থেকেই জানেন, সর্বমোট কত সংখ্যক লোক জান্নাতে যাবে আর কত সংখ্যক লোক জাহান্নামে যাবে। এ সংখ্যায় কোনো কমবেশী হবে না। অর্থাৎ এ সংখ্যা কমবেও না, বাড়বেও না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবহিত (وَقَدْ عَلِمَ اللَّهُ تَعَالَى فِيمَا لَمْ يَزَلْ عَدَدَ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ، وَعَدَدَ مَنْ يَدْخُلُ النار، جملة واحدة، فلا يزداد فِي ذَلِكَ الْعَدَدِ وَلَا يُنْقَصُ مِنْهُ, وَكَذَلِكَ أَفْعَالُهُمْ فِيمَا عَلِمَ مِنْهُمْ أَنْ يَفْعَلُوهُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
মহান আল্লাহ আগে থেকেই জানেন, সর্বমোট কত সংখ্যক লোক জান্নাতে যাবে আর কত সংখ্যক লোক জাহান্নামে যাবে। এ সংখ্যায় কোনো কমবেশী হবে না। অর্থাৎ এ সংখ্যা কমবেও না, বাড়বেও না। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের কাজকর্ম সম্পর্কে পূর্ব হতেই অবহিত।
৪৮. যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হয়। শেষ কর্ম দ্বারাই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। আর হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় হতভাগ্য বলে নির্ধারিত হয়েছে (وَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ، وَالْأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ، وَالسَّعِيدُ مَنْ سَعِدَ بِقَضَاءِ اللَّهِ، وَالشَّقِيُّ مَنْ شَقِيَ بِقَضَاءِ اللَّهِ)অনুচ্ছেদ ১ টি
যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হয়। শেষ কর্ম দ্বারাই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। আর হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় হতভাগ্য বলে নির্ধারিত হয়েছে।
৪৯. তাকদীর সম্পর্কে আসল কথা হলো, এটি সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহর একটি গোপন বিষয়; যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা কিংবা প্রেরিত কোনো নাবীও অবহিত নন। ……অনুচ্ছেদ ৫ টি
তাকদীর সম্পর্কে আসল কথা হলো, এটি সৃষ্টিকুলের ব্যাপারে আল্লাহর একটি গোপন বিষয়; যা নৈকট্যপ্রাপ্ত কোনো ফেরেশতা কিংবা প্রেরিত কোনো নাবীও অবহিত নন। এ সম্পর্কে গভীর চিন্তা-ভাবনা করা অথবা অনুরূপ আলোচনায় প্রবৃত্ত হওয়া ব্যর্থ হওয়ার কারণ, বঞ্চনার সিঁড়ি এবং সীমালংঘনের স্তর। অতএব সাবধান! এ সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা এবং কুমন্ত্রণা হতে সতর্ক থাকুন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তাকদীর সম্পর্কিত জ্ঞান তার সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন এবং তাদেরকে এর উদ্দেশ্যে অনুসন্ধান করতে নিষেধ করেছেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, لَا يُسْأَلُ عَمَّا يَفْعَلُ وَهُمْ يُسْأَلُونَ ‘তিনি যা করেন সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হবে না; বরং তারা তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। (সূরা আম্বিয়া: ২৩) অতএব, যে ব্যক্তি একথা জিজ্ঞাসা করবে তিনি কেন এ কাজ করলেন? সে আল্লাহর কিতাবের হুকুম অমান্য করল। আর যে ব্যক্তি কিতাবের হুকুম অমান্য করল, সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো।
ক্ষতিকর ও অপছন্দনীয় জিনিস সৃষ্টি করার তাৎপর্য বা হেকমত – ১
ক্ষতিকর ও অপছন্দনীয় জিনিস সৃষ্টি করার তাৎপর্য বা হেকমত – ২
ক্ষতিকর ও অপছন্দনীয় জিনিস সৃষ্টি করার তাৎপর্য বা হেকমত – ৩
আল্লাহর কর্ম সম্পর্কে এ কথা বলা যাবে না যে, তিনি কেন এটি করেছেন?
৫০. তাকদীর বিষয়ে যা জানা ও যার উপর ঈমান আনয়ন করা প্রয়োজন …….অনুচ্ছেদ ১ টি
তাকদীর বিষয়ে যা জানা ও যার উপর ঈমান আনয়ন করা প্রয়োজন উপরোক্ত আলোচনায় সংক্ষিপ্তভাবে তা বিধৃত হয়েছে। আল্লাহর অলীদের মধ্যে যার অন্তর জ্যোতিদীপ্ত তার জন্য এতটুকু জানাই প্রয়োজন। আর এটিই হচ্ছে জ্ঞানে সুগভীর প্রজ্ঞাবানদের স্তর। ইলম দু’প্রকার। (১) যে জ্ঞান সৃষ্ট জীবের নিকট বিদ্যমান। (২) যে জ্ঞান সৃষ্ট জীবের নিকট বিদ্যমান নয়। বিদ্যমান ইলমকে অস্বীকার করা যেমন কুফুরী, অবিদ্যমান জ্ঞানের দাবী করাও তেমনি কুফুরী। বিদ্যমান ইলম কবুল করা, আর অবিদ্যমান জ্ঞানের অন্বেষন করা হতে বিরত থাকা ব্যতীত কারো ঈমান সুদৃঢ় বিশুদ্ধ হবে না।
৫১. আর আমরা লাওহে মাহফুযে ঈমান রাখি, আরও ঈমান রাখি কলমের উপর। আর যা আল্লাহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তার সবকিছুতেই আমরা বিশ্বাস করি (وَنُؤْمِنُ بِاللَّوْحِ وَالْقَلَمِ، وَبِجَمِيعِ مَا فِيهِ قَدْ رُقِمَ)অনুচ্ছেদ ২ টি
আর আমরা লাওহে মাহফুযে ঈমান রাখি, আরও ঈমান রাখি কলমের উপর। আর যা আল্লাহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তার সবকিছুতেই আমরা বিশ্বাস করি।
কলম সর্বপ্রথম সৃষ্টি কি না এ ব্যাপারে আলেমদের মতভেদ
৫২. যা সংঘটিত হবে বলে আল্লাহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তা যদি সকল সৃষ্টি একত্রিত হয়েও রোধ করতে চায় তারা সেটা করতে সক্ষম হবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয় সংঘটিত হবার কথা তিনি লিখেননি, সমস্ত সৃষ্টি একত্রিত হয়েও তা ঘটাতে পারবে না ……অনুচ্ছেদ ৩ টি
যা সংঘটিত হবে বলে আল্লাহ লাওহে মাহফুযে লিখে রেখেছেন তা যদি সকল সৃষ্টি একত্রিত হয়েও রোধ করতে চায় তারা সেটা করতে সক্ষম হবে না। পক্ষান্তরে, তাতে যে বিষয় সংঘটিত হবার কথা তিনি লিখেননি, সমস্ত সৃষ্টি একত্রিত হয়েও তা ঘটাতে পারবে না। কিয়ামত দিবস পর্যন্ত যা ঘটবে তা লিপিবদ্ধ হয়ে কলমের কালি শুকিয়ে গেছে।
তাকদীর লিখার স্তরসমূহ:
আল্লাহর উপর ভরসা করা উপায়-উপকরণ অবলম্বন ও চেষ্টা করার পরিপন্থী নয়
৫৩. যা বান্দার ভাগ্যে-নসীবে লিখা হয়নি, তা সে কখনই পাবে না আর যা বান্দার নসীবে লেখা আছে, তা কখনই বাদ পড়বে না (وَمَا أَخْطَأَ الْعَبْدَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبَهُ، وَمَا أَصَابَهُ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَهُ)অনুচ্ছেদ ১ টি
যা বান্দার ভাগ্যে-নসীবে লিখা হয়নি, তা সে কখনই পাবে না আর যা বান্দার নসীবে লেখা আছে, তা কখনই বাদ পড়বে না।
৫৪. বান্দার একথা জেনে রাখা উচিত যে, তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় ঘটনাবলী সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ব হতে অবহিত ……অনুচ্ছেদ ১ টি
বান্দার একথা জেনে রাখা উচিত যে, তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত যাবতীয় ঘটনাবলী সম্পর্কে আল্লাহ পূর্ব হতে অবহিত। অতএব, তিনি সেটাকে অকাট্য ও অবিচল তাকদীর হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। আসমান ও যমীনের কোনো মাখলুক এটাকে বানচালকারী অথবা এর বিরোধিতাকারী নেই, অনুরূপ একে কেউ অপসারণ অথবা পরিবর্তন করতে পারবে না, একে সংকোচন কিংবা পরিবর্ধনও করতে পারবে না।
৫৫. আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দৃঢ়তা, মারেফতের মূলবস্তু এবং আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও রুবুবিয়াত সম্পর্কে স্বীকৃতি দান। ……অনুচ্ছেদ ২ টি
‘আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দৃঢ়তা, মারেফতের মূলবস্তু এবং আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও রুবুবিয়াত সম্পর্কে স্বীকৃতি দান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা তার কিতাবে ঘোষণা করেছেন, তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে যথাযথ অনুপাত অনুসারে পরিমিতি প্রদান করেছেন। (সূরা আল ফুরকান ২৫:২) আল্লাহ রাববুল আলামীন অন্যত্র বলেছেন, ‘‘আল্লাহর বিধান সুনির্ধারিত’ (সূরা আল আহযাব ৩৩:৩৮)
তাকদীরের মূলনীতিসমূহ
৫৬. ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস অনিবার্য যে ব্যক্তি তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে এবং রোগাক্রান্ত অন্তর নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছে। ……অনুচ্ছেদ ২ টি
অতএব ঐ ব্যক্তির জন্য ধ্বংস অনিবার্য যে ব্যক্তি তাকদীর সম্পর্কে আল্লাহর বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছে এবং রোগাক্রান্ত অন্তর নিয়ে এ ব্যাপারে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই সে স্বীয় ধারণা অনুসারে গায়েবের (অদৃশ্যের) একটি গুপ্ত রহস্য সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছে এবং এ সম্পর্কে সে যা মন্তব্য করেছে তার ফলে সে মিথ্যাবাদী ও পাপাচারীতে পরিণত হয়েছে।
অন্তরের জীবন, মরণ, রোগ ও সুস্থতা
Leave a Reply