খাবারের পর ওজুর বিঁধান। মুসলিম অপবিত্র হয় না
মুসলিম অপবিত্র [নাপাক] হয় না >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২৩. অধ্যায়ঃ অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি থেকে [খাবার পর] ওযূ করা সম্পর্কে {৯৭}
২৪. অধ্যায়ঃ আগুনে রান্না খাবার খেয়ে ওযূ করার বিধান মানসুখ [রহিত] হওয়া সম্পর্কে
২৫. অধ্যায়ঃ উটের গোশ্ত খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে
২৬. অধ্যায়ঃ পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস থাকার পর ওযূ ভঙ্গের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে সে ওযূ দিয়ে নামাজ আদায় করা জায়িয হওয়ার দলীল
২৭. অধ্যায়ঃ মৃত জন্তুর চামড়া পাকা [দাবাগত] করার পর পবিত্র হয়ে যায়। {৯৯}
২৮. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম-এর বিবরণ {১০০}
২৯. অধ্যায়ঃ মুসলিম অপবিত্র [নাপাক] হয় না
৩০. অধ্যায়ঃ জুনুবী বা অন্য কারণে অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহ তাআলার যিক্র করা
৩১. অধ্যায়ঃ বিনা ওযূতে খাবার খাওয়া জায়িয, এরূপ করা মাকরূহ নয়; আর ওযূ নষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ ওযূ করাও অপরিহার্য নয়।
৩২. অধ্যায়ঃ শৌচাগারে প্রবেশ করলে কি বলিতে হইবে
৩৩. অধ্যায়ঃ বসে ঘুমালে ওযূ নষ্ট হয় না।
২৩. অধ্যায়ঃ অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি থেকে [খাবার পর] ওযূ করা সম্পর্কে {৯৭}
{৯৭} অগ্নি স্পৃষ্ট দ্রব্যাদি খাবার পর ওযূ করা। ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, ঈমাম মুসলিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এ অধ্যায়ে প্রথমে এ সকল হাদীসের উল্লেখ করিয়াছেন, যেগুলোর দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, আগুনের দ্বারা পাকানো খাদ্যবস্তু খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যায়। অতঃপর ঐ সকল হাদীসের বর্ণনা পেশ করিয়াছেন, যেগুলোর দ্বারা প্রমানিত হয়েছে যে, এ ধরনের খাবার খেলে ওযূ নষ্ট হয় না। সুতরাং প্রথমে উল্লেখিত হাদীসসমুহ মানসুখ [রহিত]। এ ব্যাপারে পূর্ববর্তী জমহুর উলামায়ে কিরাম, সাহাবায়ি কিরাম ও তাবিঈনে প্রায় ঐকমত্য ঘোষণা করিয়াছেন। তবে যে কোন জিনিস খাওয়ার পর কুলি করা এবং হাত-মুখ ভাল করে ধুয়ে ফেলা মুস্তাহাব [নাবাবী]
৬৭৪. যায়দ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি তিনি বলেছেন, আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করিতে হইবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩]
৬৭৫. ইবনি শিহাব বলেন, উমর ইবনি আবদুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] তাঁকে বলেছেন, আবদুল্লাহ ইবনি ইব্রাহীম ইবনি কারিয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একদিন আবু হুরায়রা [রাদি.]- কে মাসজিদের সামনে ওযূ করিতে দেখেছেন। আবু হুরায়রা[রাদি.] বলেন, আমি কয়েক টুকরো পনির খেয়েছি, তাই ওযূ করছি। কেননা, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি। তোমরা আগুনের রান্না করা খাবার খেলে ওযূ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩]
৬৭৬. ইবনি শিহাব হইতে বর্ণীতঃ
আমি সাঈদ ইবনি খালিদ ইবনি আম্র ইবনি উসমান –এর কাছে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলিলেন যে, তিনি আগুনে পাকানো খাবার খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে উরওয়াহ্ন ইবনি যুবায়রকে জিজ্ঞেস করিলেন, তিনি বলিলেন, আমি নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী আয়েশাহ [রাদি.]- কে বলিতে শুনেছি তিনি বলেছেন, তোমরা আগুনে রান্না করা খাবার খেয়ে ওযূ করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৩]
২৪. অধ্যায়ঃ আগুনে রান্না খাবার খেয়ে ওযূ করার বিধান মানসুখ [রহিত] হওয়া সম্পর্কে
৬৭৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] একটি বকরীর কাঁধের গোশ্ত খেলেন তারপর নামাজ আদায় করিলেন কিন্তু ওযূ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৪]
৬৭৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] একবার হাড়ে লাগানো গোশ্ত অথবা গোশ্ত খেলেন। তারপর নামাজ আদায় করিলেন; কিন্ত ওযূ করিলেন না এবং পানিও স্পর্শ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৫]
৬৭৯. আম্র ইবনি উমাইয়্যাহ্ আয্ যামরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একবার দেখলেন যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটী বকরীর কাঁধের গোশ্ত কেটে খাচ্ছেন। তারপর তিনি [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিলেন আর ওযূ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৬]
৬৮০. আম্র ইবনি উমাইয়্যাহ আয্ যামরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে দেখলাম তিনি একটী বকরীর কাঁধের গোশ্ত [ছুরি দিয়ে] কাটছেন। এরপর তিনি তা খেলেন। ইতিমধ্যেই নামাজের জন্যে ডাকা হল। তিনি তখন দাঁড়িয়ে গেলেন এবং ছুরিটি ফেলে দিলেন এবং নামাজ আদায় করিলেন; কিন্তু ওযূ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭]
ইবনি শিহাব বলেন, আলী ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস তাহাঁর পিতা আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস-এর মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭]
৬৮১. আম্র বলেন, বুকায়র ইবনি আল আশাজ্জ কুরায়ব-এর সূত্রে নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মাইমূনাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার তাহাঁর কাছে বসে কাঁধের গোশ্ত খেলেন, তারপর নামাজ আদায় করিলেন কিন্তু ওযূ করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭]
৬৮২. ইয়াকূব ইবনি আল আশাজ্জ কুরায়ব-এর সূত্রে হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ]-এর স্ত্রী মায়মুনাহ্ [রাদি.] থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭]
৬৮৩. আবু রাফি [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ]-এর জন্য বকরীর পেটের গোশ্ত ভুনা করতাম [তিনি তা খেতেন] তারপর পুনরায় ওযূ না করেই নামাজ আদায় করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৭]
৬৮৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার দুধ পান করিলেন। তারপর পানি আনালেন। এরপর কুলি করিলেন এবং বলিলেন, এতে তৈলাক্ত পদার্থ রয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৮]
৬৮৫. আহমাদ ইবনি ঈসা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি], যুহায়র ইবনি হার্ব, হারমালাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া প্রত্যেকেই হইতে বর্ণীতঃ
ইবনি শিহাব থেকে উকায়ল-এর সানাদে যুহরী থেকে অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৯৯]
৬৮৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার কাপড় পরে নামাজের জন্য বের হলেন। এমন সময় কিছু রুটি ও গোশ্ত উপঢৌকন এলো। এরপর তিনি [সেখান থেকে] তিনি লুকমা খেলেন। তারপর লোকদেরকে নিয়ে নামাজ আদায় করিলেন এবং পানি স্পর্শও করিলেন না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭০০]
৬৮৭. মুহাম্মাদ ইবনি আম্র ইবনি আতা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একদিন ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর সাথে ছিলাম। তারপর তিনি ইবনি হাল্হালাহ্-এর হাদীস [উপরোক্ত হাদীস]-এর অনুরূপ বর্ণনা করেন। সেখানে উল্লেখ আছে যে, ইবনি আব্বাস [রাদি.]রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে এমন করিতে দেখেছেন। আর এ হাদীসের রাবী শুধু নামাজ আদায়ের কথা উল্লেখ করিয়াছেন। লোকদেরকে নিয়ে কথাটির উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭০১]
২৫. অধ্যায়ঃ উটের গোশত খেয়ে ওযূ করা সম্পর্কে
৬৮৮. জাবির ইবনি সামুরাহ্ [রাযি:] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করিল, আমি কি বকরীর গোশ্ত খেয়ে ওযূ করব? তিনি বলিলেন, তোমার ইচ্ছা ওযূ করিতে পার আর নাও করিতে পার। সে বলিল,আমি কি উটের গোশ্ত খেয়ে ওযূ করব? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, উটের গোশ্ত খেয়ে তুমি ওযূ করিবে। সে বলিল, আমি কি বকরীর ঘরে নামাজ আদায় করিতে পারি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। সে বলিল, আমি কি উটের ঘরে নামাজ আদায় করিতে পারি? তিনি বলিলেন, না। {৯৮}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭০২]
{৯৮} যেহেতু অত্র হাদীসে স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, উটের গোশত খেলে ওযূ নষ্ট হয়ে যাবে। সেহেতু কোন প্রকার মন্তব্য ছাড়াই এ নির্দেশ মেনে নিতে হইবে। ওযূ অবস্থায় উটের গোশ্ত খেয়ে নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করলে অবশ্যই পুনরায় ওযূ করিতে হইবে। উটের আস্তাবলে নামাজ আদায়ের নিষেধের কারণ হচ্ছে, উট দুষ্ট প্রকৃতির বিরাট পশু। নামাজ আদায়কারীর ক্ষতিসাধন করিতে পারে। পক্ষান্তরে বকরীর ঘরে নামাজ আদায় করলে ক্ষতি সাধনের আশঙ্কা নেই। [নাবাবী]
৬৮৯. আবু বক্র ইবনি আবু শায়বাহ্ ও কাসিম ইবনি যাকারিয়্যা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
জাবির ইবনি সামুরাহ [রাদি.] হইতে আবু কামিল-এর অবিকল হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৩]
২৬. অধ্যায়ঃ পবিত্রতা সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস থাকার পর ওযূ ভঙ্গের মধ্যে সন্দেহ দেখা দিলে সে ওযূ দিয়ে নামাজ আদায় করা জায়িয হওয়ার দলীল
৬৯০. আব্বাদ ইবনি আত্ তামীম তার চাচা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ]-এর কাছে সে ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে চাইলেন নামাজের মধ্যে যার এমন মনে হয় যেন কিছু [বায়ু] বের হল। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, সে [নামাজ ছেড়ে] যাবে না যতক্ষণ না [বায়ু বের হবার] শব্দ শুনবে অথবা [তার] গন্ধ পাবে।
আবু বক্র ও যুহায়র ইবনি হার্ব তাদের বর্ণনায় উল্লেখ করেন যে, ঐ ব্যক্তি ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনি যায়দ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৪]
৬৯১. আবু হুরাইয়রা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তোমাদের কেউ যখন তার পেটের মধ্যে কিছু অনুভব করে তারপর তার সন্দেহ দেখা দেয় যে, পেট থেকে কিছু বের হল কি না। তখন সে যেন মাসজিদ থেকে কখনও বের না হয় যতক্ষন না শব্দ শোনে অথবা গন্ধ পায়। [অর্থাৎ ওযূ ভঙ্গের পূর্ণ বিশ্বাস না হওয়া পর্যন্ত যেন বের না হয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৫]
২৭. অধ্যায়ঃ মৃত জন্তুর চামড়া পাকা [দাবাগত] করার পর পবিত্র হয়ে যায়। {৯৯}
{৯৯} ঈমাম নববী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ যে সমস্ত বস্তুর দ্বারা ভিজা চামড়া শুকিয়ে যায় এবং তার দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায়। অতঃপর আর চামড়া পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ জাতীয় জিনিসের দ্বারা চামড়া পাকা [দাবাগত] করা বৈধ আছে। যেমন- আনারের [ডালিমের] ছাল ফিটকিরী, লবণ ইত্যাদি। শুধুমাত্র রোদ্রে শুকালে চামড়া দাবাগত তথা পাকা হইবে না। পাকা [দাবাগত দেয়া] চামড়া জীবিত পশুর হোক অথবা মৃত পশুরই হোক যে কোন কাজে ব্যবহার করা অথবা বিক্রি করা জায়িয আছে। [নাবাবী]
৬৯২. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাইমূনাহ্ [রাদি.]-এর দাসীকে কেউ একটি বকরী সদকাহ্ দিল। পরে সে বকরীটি মারা যায়। সে সময় রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] মরে পড়ে থাকা বকরীটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এ অবস্থা দেখে তিনি বলিলেন, তোমরা কেন চামড়া খুলে নিয়ে তা পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হও না? সাহাবাগণ বলিলেন, এটা যে মৃত। তিনি বলিলেন, [তাতে কি] এটা খাওয়া হারাম [চামড়া ব্যবহার করা তো হারাম নয়]।
আবু বাক্র ও ইবনি উমর মাইমূনাহ্ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। [অর্থাৎ রাবী মাইমূনাহ্ আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস নন]
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯১, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৬]
৬৯৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি মৃত বকরী দেখলেন যা মাইমূনাহ্ [রাদি.]-এর দাসীকে সদাকাহ্ হিসেবে দেয়া হয়েছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন? সাহাবাগণ বলিলেন, এটা তো মৃত। তিনি বলিলেন, এটা তো খাওয়া হারাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯২, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৭]
৬৯৪. হাসান আল হুলওয়ানী ও আব্দ ইবনি হুমায়দ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
সানাদে ইউনুস-এর রিওয়াতের অবিকল হাদীস বর্ণনা করেছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৮]
৬৯৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ফেলে দেয়া একটি মরা বকরীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন যা মাইমূনাহ্ [রাদি.]-এর দাসীকে সদকাহ হিসেবে দেয়া হয়েছিল। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তারা এর চামড়া কেন খুলে নিল না? চামড়াটি পাকা করে তা দিয়ে উপকৃত হত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭০৯]
৬৯৬. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মাইমূনাহ্ [রাদি.] তাঁকে জানান যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন এক স্ত্রীর একটি পালিত বকরী ছিল। সেটি মারা গেল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা কেন চামড়া খুলে নিচ্ছ না সেটা দিয়ে উপকৃত হইতে!
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭১০]
৬৯৭. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাইমূনাহ্ [রাদি.]-এর দাসীর একটি মরা বকরীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি বলিলেন, তোমরা এর চামড়া দিয়ে উপকৃত হও না কেন?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭১১]
৬৯৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, চামড়া যখন পাকা [দাবাগাত] করা হয় তখন তা পবিত্র হয়ে যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭১২]
৬৯৯. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়াহ্ইয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৩]
৭০০. আবুল খায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] [মারসাদ ইবনি আবদুল্লাহ আল ইয়াযানী] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, একদিন আমি ইবনি ওয়ালাহ্ আস্ সাবায়ীর গায়ে একটা নরম পশমের তৈরী জামা দেখে তা স্পর্শ করে দেখলাম। তখন তিনি বলিলেন, কি ব্যাপার স্পর্শ করে দেখছো যে? [নাপাক মনে করেছো নাকি!] আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাসকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বলেছিলাম, আমরা মাগরিবে [মরক্কো] বাস করি। আমাদের সাথে বার্বার এবং অগ্নিপূজকরাও বাস করে। তাদের যাবাহ করে মেষের পোশাক আমাদের কাছে আসে। অথচ আমরা তাদের যাবাহ করা পশুর গোশ্ত খাই না। তারা আমাদের জন্য চর্বি ভর্তি মশকও নিয়ে আসে। এ কথা শুনে আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলিলেন, আমরা এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, চামড়া পাকা করলে পবিত্র হয়ে যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৪]
৭০১. ইবনি ওয়ালাহ্ আস্ সাবায়ী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে জিজ্ঞেস করলাম যে, আমরা পশ্চিম দেশে থাকি। সেখানে আমাদের কাছে অগ্নিপূজকরা মশক নিয়ে আসে, সেটাতে পানি এবং চর্বি জাতীয় পদার্থ থাকে [আমরা সেগুলো ব্যবহার করব কি?]। তিনি বলিলেন, তা পান করে নাও। আমি বললাম, এটা কি আপনার নিজের অভিমত? ইবনি আব্বাস [রাদি.] বলিলেন, আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনেছি যে, চামড়া পাকা [দাবাগাত] করলেই তা পবিত্র হয়ে যায়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০০, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৫]
২৮. অধ্যায়ঃ তায়াম্মুম এর বিবরণ {১০০}
{১০০} তায়াম্মুম শব্দের অর্থ সংকল্প করা, ইচ্ছা করা। শরীআতের দৃষ্টিতে পবিত্রতা অর্জনের সংকল্পে পবিত্র মাটিতে হাত মেরে মুখমন্ডল এবং কব্জির উপরিভাগ মাসাহ করাই তায়াম্মুম। তবে তায়াম্মুমের নিয়্যাত করিবে এবং বিসমিল্লাহ বলবে।
৭০২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কোন এক সফরে আমরা তাহাঁর সাথে বের হলাম। আমরা যখন বাইদা অথবা যাতুল জায়শ নামক স্থানে পৌঁছলাম তখন আমার হার খুলে পড়ে গেল। রাসুলুল্লাহ[সাঃআঃ] তা খোঁজ করিতে সেখানে থামলেন। আর লোকজনও তাহাঁর সাথে সাথে থামালেন। তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি ছিল না এবং তাদের নিজেদের কাছেও পানি ছিল না। অতঃপর লোকজন আবু বক্র[রাদি.]-এর কাছে এসে বলিতে লাগল, আপনি দেখছেন না আয়েশাহ [রাদি.] কি করলো? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আটকে দিয়েছে এবং সে সাথে সমস্ত লোককে আটকে রেখেছে। অথচ তাদের কাছাকাছি কোথাও পানি নেই আর না তাদের নিজেদের কাছে পানি আছে। অতঃপর আবু বক্র[রাদি.] আমার কাছে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার উরুর উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিলেন। তিনি এসে বলিলেন, তুমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং সমস্ত লোকজনকে আটকে রেখেছ। অথচ না তারা পানির কাছাকাছি রয়েছে, আর না তদের নিজেদের কাছে পানি আছে। আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, অতঃপর আবু বকর [রাদি.] আমাকে ভৎসনা করিলেন এবং যতদূর বলার বলিলেন। তিনি তাহাঁর হাত দিয়ে আমার পাঁজরে আঘাত করিলেন। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার উরুর উপর থাকার কারণে আমি নড়তেও পারলাম না। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঘুমিয়েই রইলেন। এমনি করে পানি বিহীনভাবে সকাল হয়। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল করিলেন। অতঃপর তারা তায়াম্মুম করিলেন। তখন উসায়দ ইবনি হুযায়র যিনি ছিলেন নকীব [দলপতি]-দের অন্যতম বলিলেন, হে আবু বাক্র পরিবার। এটাই আপনার প্রথম বারাকাত নয়।” আয়েশাহ [রাদি.] বলেন, অতঃপর আমি যে উটের ওপর ছিলাম সেটিকে চলার জন্যে উঠালাম। তখন উক্ত হারটি তার নীচে পাওয়া গেল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০১, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৬]
৭০৩. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি আসমা [রাদি.] থেকে একটি হার ধার নিয়েছিলেন। অতঃপর তা হারিয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সাহাবাদের মধ্যে কিছু লোককে খুঁজতে পাঠালেন। [পথে] তাদের নামাজের সময় হয়ে গেল। তখন তারা ওযূ ছাড়াই নামাজ আদায় করিলেন। এরপর তারা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে এ ঘটনা জানালেন। তখন তায়াম্মুমের আয়াত নাযিল হল। এ সময় উসায়দ ইবনি হুযায়র বলিলেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে [আয়েশাহ] উত্তম বদলা দান করুন। আল্লাহর কসম! আপনার ওপর যখনই কোন সমস্যা এসেছে তখন আল্লাহ তাআলা আপনার জন্যে এর সমাধানের পথ করে দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য তাতে বারাকাত রেখেছেন। {১০১}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০২, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৭]
{১০১} কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীসের দ্বারা ওযূ ও গোসলের বিকল্প হিসেবে তায়াম্মুম সাব্যস্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রয়োজনের সময় পানি না পাওয়া গেলে অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোন অপ্রতিরোধ্য কারণে পানি ব্যবহার অসমর্থ হয়ে পড়লে পবিত্রতা অর্জনের জন্য তায়াম্মুম জায়িয। এ অধ্যায়ের ১১০ ও ১১১ নং হাদীসের দ্বারা তায়াম্মুমের পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে যে, “পবিত্র মাটিতে একবার হাত মেরে তা একবার ঝেড়ে ফেলে মুখমন্ডল এবং উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করিতে হইবে। মাটিতে দুবার হাত মারা বা হাতের কনুই পর্যন্ত মাসাহ করার কোন দলীল নেই। [নাবাবী]
৭০৪. শাকীক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার আবদুল্লাহ [ইবনি মাসঊদ] ও আবু মূসা [রাদি.]-এর কাছে বসেছিলাম। তখন আবু মূসা [রাদি.] বলিলেন, হে আবু আবদুর রহমান! কোন্ লোক যদি জুনুবী হয় [যার ফলে তার গোসল ফরয হয়] এবং সে এক মাস যাবৎ পানি না পায় তাহলে সে কিভাবে নামাজ আদায় করিবে? আবদুল্লাহ বলিলেন, সে তায়ম্মুম করিবে না যদিও একমাস পানি না পায়। আবু মূসা [রাদি.] বলিলেন, তাহলে সুরা মায়িদাহ্ এর এ আয়াত-……… “যদি তোমরা পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম কর”- [সূরাহ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৬] এর কি হইবে? আবদুল্লাহ বলিলেন, এ আয়াতের দ্বারা তাদেরকে যদি তায়াম্মুমের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে [ধীরে ধীরে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছবে যে] পানি ঠান্ডাবোধ হলে তারা মাটি দিয়ে তায়াম্মুম শুরু করিবে। আবু মূসা [রাদি.] তখন আবদুল্লাহ-কে বলিলেন, আপনি কি আম্মার-এর বর্ণনা শোনেননি [তিনি বলেন] যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে কোন এক প্রয়োজনে পাঠালেন। [পথিমধ্যে] আমি অপবিত্র হয়ে গেলাম এবং পানি পেলাম না। তখন আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম চতুস্পদ জন্তু যেভাবে মাটিতে গড়াগড়ি দেয়। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে এসে এ ঘটনা বললাম। তিনি [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার জন্যে দুহাত দিয়ে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তাহাঁর দুহাত একবার মাটিতে মারলেন। তারপর বামহাত দিয়ে ডানহাত মাসাহ করিলেন এবং উভয় হাতের কব্জির উপরিভাগ ও মুখমন্ডল মাসাহ করিলেন। আবদুল্লাহ বলিলেন, তুমি কি দেখোনি যে, উমর [রাদি.] আম্মার [রাদি.]-এর কথা যথেষ্ট মনে করেননি?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৮]
৭০৫. শাকীক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আবু মূসা আবদুল্লাহ [রাদি.]-কে বলিলেন, এরপর আবু মুআবিয়ার হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন। তবে তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমার জন্যে এরূপ করাই যথেষ্ট ছিল-এ বলে তিনি তাহাঁর উভয় হাত মাটিতে মারলেন। অতঃপর ঝেড়ে মুখমন্ডল এবং উভয় কব্জি মাসাহ করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭১৯]
৭০৬. আবদুর রহমান ইবনি আবযা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক উমর [রাদি.]-এর কাছে এসে বলিল, আমি অপবিত্র হয়েছি কিন্তু পানি পাইনি [তখন কি করব?]। তিনি বলিলেন, তুমি নামাজ আদায় করো না। তখন আম্মার [রাদি.] বলিলেন, আমীরুল মুমিনীন! আপনার কি স্মরণ নেই যে, আমি ও আপনি কোন এক অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলাম। অতঃপর আমরা উভয়েই অপবিত্র হয়ে পড়লাম। আর কোথাও পানি পেলাম না তখন আপনি নামাজ আদায় করিলেন না কিন্তু আমি মাটিতে গড়াগড়ি দিলাম এবং নামাজ আদায় করলাম। অতঃপর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে এ ঘটনা জানালে তিনি বলিলেন, তোমার জন্যে এটাই যথেষ্ট ছিল যে, তুমি দুহাত জমিনে মারতে তারপর ফুঁক দিয়ে আলগা ধুলা ফেলে দিতে তারপর উভয় হাতের কব্জি দ্বারা মাসাহ করিতে তোমার দুহাতে ও চেহারা”। উমর [রাদি.] বলিলেন, “আম্মার! আল্লাহকে ভয় কর”। তিনি {আম্মার [রাদি.]} বলিলেন, “আপনি চাইলে আমি এটা আর বর্ণনা করব না”।
হাকাম বলেন, আবদুর রহমান ইবনি আবযার পুত্র তার পিতা আবদুর রহমান থেকে আমার কাছে যার্-এর হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি বলিলেন, অতঃপর উমর [রাদি.] বলিলেন, তোমার বর্ণনায় দায়-দায়িত্ব তোমার উপর।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৫, ইসলামিক সেন্টার-৭২০]
৭০৭. আবদুর রহমান ইবনি আবযা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক লোক উমর [রাদি.]-এর কাছে এসে বলিল, আমি অপবিত্র হয়েছি এবং পানি পাইনি [তখন ক করব?]-[এরপর রাবী পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিয়াছেন। তাতে অতিরিক্ত আছে যে, আম্মার [রাদি.] বলিলেন, হে আমীরুল মুমিনীন আল্লাহ তাআলার আমার ওপর আপনার যে হক রেখেছেন [অর্থাৎ আপনাকে খলীফা বানিয়েছেন] তার প্রতি লক্ষ্য রেখে বলছিঃ আপনি চাইলে আমি আর কারও কাছে এটা বর্ণনা করব না এবং সালামাহ্ আমার কাছে যার্ থেকে হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন কথাটি উল্লেখ করেনি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭২১]
৭০৮. ইবনি আব্বাস [রাদি.]-এর মুক্তকৃত দাস উমায়র হইতে বর্ণীতঃ
তিনি ইবনি আব্বাস [রাদি.]-কে বলিতে শুনেছেন যে, আমি এবং উম্মুল মুমিনীন মাইমূনাহ্ [রাদি.]-এর মুক্তকৃত দাস আবদুর রহমান ইবনি ইয়াসার একবার আবুল জাহ্ম ইবনিল হারিস ইবনিস্ সিম্মা আল-আনাসারীর কাছে গেলাম। তখন আবুল জাহম [রাদি.] বলিলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার বিরি জামাল [মাদীনার নিকটবর্তী একটি স্থান]-এর দিক থেকে আসছিলেন, অতঃপর পথিমধ্যে এক ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাত করে সালাম দিল কিন্তু তিনি তার উত্তর দিলেন না বরং একটি দেয়ালের কাছে গিয়ে তাহাঁর মুখমন্ডল এবং উভয় হাত মাসাহ করিলেন। তারপর তার সালামের জবাব দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭২১]
৭০৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
এক ব্যক্তি পথ দিয়ে যাচ্ছিল। আর রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখন প্রস্রাব করছিলেন। সে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সালাম করিল। কিন্তু তিনি তার জবাব দিলান না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭২২]
২৯. অধ্যায়ঃ মুসলিম অপবিত্র [নাপাক] হয় না
৭১০. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি একবার মাদীনার কোন এক রাস্তায় নবী [সাঃআঃ]-এর সাথে সাক্ষাৎ করিলেন। তিনি [আবু হুরায়রা] তখন [জানাবাত] অপবিত্র অবস্থায় ছিলেন। এ কারণে তিনি আস্তে করে পাশ দিয়ে চলে গেলেন এবং গোসল করিলেন। নবী [সাঃআঃ] তাঁকে খোঁজ করিলেন। যখন তিনি আসলে নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, “হে আবু হুরায়রা! তুমি কোথায় ছিলে? তিনি বলিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]! আপনার সঙ্গে যখন আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি অপবিত্রাবস্থায় ছিলাম। তাই আমি গোসল না করে আপনার মাজলিসে বসা ভাল মনে করিনি। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, সুবহানাল্লাহ! মুমিন তো অপবিত্র হয় না। {১০২}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৩]
{১০২} এ হাদীসের দ্বারা বুঝা গেল যে, জানাবাত বা অন্য কোন কারণে অপবিত্র অবস্থায় তাসবীহ-তাহলীল ও তাকবীর তথা সকল প্রকার যিক্র করা জায়িয আছে। তবে কুরআনুল মাজীদের একটি আয়াতও তিলাওয়াত করা এবং নামাজ আদায় করা জায়িয নয়।
৭১১. হুযাইফাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদিন অপবিত্র থাকা অবস্থায় রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে তার সাক্ষাৎ হয়, ফলে তিনি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে পাশ কাটিয়ে চলে গেলেন এবং গোসল করে পরে এলেন এবং বলিলেন, আমি জানাবাত [গোসল ফারয হওয়ার কারণে নাপাক] অবস্থায় ছিলাম। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, মুসলিম তো নাপাক হয় না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭০৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৪]
৩০. অধ্যায়ঃ জুনুবী বা অন্য কারণে অপবিত্র অবস্থায় আল্লাহ তাআলার যিকর করা
৭১২. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিক্র করিতেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১০, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৫]
৩১. অধ্যায়ঃ বিনা ওযূ তে খাবার খাওয়া জায়িয, এরূপ করা মাকরূহ নয়; আর ওযূ নষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ ওযূ করাও অপরিহার্য নয়।
৭১৩. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] পায়খানা থেকে বের হলেন। ইতিমধ্যেই খাবার আনা হল। লোকজন তাঁকে ওযূর কথা আলোচনা করিল। তিনি বলিলেন, আমি কি নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করছি যে, ওযূ করব?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১১, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৬]
৭১৪. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর কাছে ছিলাম। তিনি পায়খানা থেকে এলেন। খাবার আনা হল। তাকে বলা হল, আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বলিলেন, কেন? আমি কি নামাজ আদায় করছি যে, ওযূ করব?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১২, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৭]
৭১৫. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] একবার পায়খানায় গেলেন। পরে তিনি যখন [পায়খানা সেরে ফিরে] এলেন তখন তাহাঁর সামনে খাবার দেয়া হল। অতঃপর তাঁকে বলা হল, হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি ওযূ করবেন না? তিনি বলিলেন, কেন? নামাজের জন্য?
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৩, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৮]
৭১৬. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা নবী [সাঃআঃ] পায়খানা থেকে তাহাঁর প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে আসলে তাহাঁর সামনে খাবার এনে দেয়া হল। তিনি তা খেলেন, কিন্তু পায়খানা থেকে বের হয়ে পানি স্পর্শও করেননি [অর্থাৎ ওযূ করিলেন না]। মুহাম্মাদ ইবনি মুসলিম বলিলেন, আম্র ইবনি দীনার সাঈদ ইবনি হুওয়াইরিসের মাধ্যমে আমার কাছে এতটুকু বর্ণনা করিয়াছেন যে, তখন নবী [সাঃআঃ]-কে বলা হল, আপনি তো ওযূ করিলেন না? জবাবে তিনি বলেছেনঃ আমি তো এখন নামাজ আদায় করি না যে ওযূ করিতে হইবে? আম্র ইবনি দীনার বলেছেন যে, তিনি হাদীসটি সাঈদ ইবনি হুওয়াইরিস-এর নিকট থেকে নিজে শুনেছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৭২৯]
৩২. অধ্যায়ঃ শৌচাগারে প্রবেশ করলে কি বলিতে হইবে
৭১৭. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুলাহ [সাঃআঃ] শৌচাগারে প্রবেশ করার সময় বলিতেন,
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
“আল্ল-হুম্মা আঊযুবিকা মিনাল খুব্সি ওয়াল খবা-য়িস” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুষ্ট পুরুষ ও জিন্ ও নারী জিন থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩০]
৭১৮. আবুল আযীয [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
অবিকল বর্ণিত রয়েছে। এ বর্ণনায়
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
“আঊযু বিল্লা-হি মিনাল খুব্সি ওয়াল খবা-য়িস” এর উল্লেখ আছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩১]
৩৩. অধ্যায়ঃ বসে ঘুমালে ওযূ নষ্ট হয় না
৭১৯. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, একদা নামাজের ইকামাত দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তখনও এক লোকের সঙ্গে চুপে চুপে আলাপ করছিলেন। লোকেরা বসে বসে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত তিনি সলাতে এসে দাঁড়াননি। সলাতে দাঁড়াতে দাঁড়াতে তাহাঁর দেরি হওয়ায় লোকেরা [বসে বসে] ঘুমিয়ে পড়েছিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩২]
৭২০. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, একদিন নামাজের জন্য ইকামাত দেয়া হয়ে গেল। কিন্তু নবী [সাঃআঃ] তখনও এক ব্যক্তির চুপে চুপে আলাপ করছিলেন। তিনি দীর্ঘক্ষণ আলাপ করিলেন। এমনকি সহাবারা সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। এরপর তিনি আসলেন এবং তাদের সাথে করে নামাজ আদায় করিলেন
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩৩]
৭২১. কাতাদাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-কে বলিতে শুনেছি যে, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সহাবাগণ ঘুমিয়ে যেতেন তারপর নামাজ আদায় করিতেন কিন্তু ওযূ করিতেন না। বর্ণনাকারী শুবাহ্ [রাদি.] বলেন, আমি কাতাদাহ্কে বললাম “আপনি কি নিজে আনাস [রাদি.]-এর কাছ থেকে শুনেছেন”? তিনি বলিলেন, “হ্যাঁ, আল্লাহর কসম!”
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩৪]
৭২২. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদা] ইশার জামাআত দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। তখন এক লোক বলিল, আমার কিছু প্রয়োজন আছে। পরে রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে তাহাঁর সাথে আলাপ করিতে লাগলেন। তিনি এতক্ষণ ধরে আলাপ করিলেন যে, উপস্থিত সকলেই অথবা কিছু লোক ঘুমিয়ে পড়ল [বসে বসে]। তারপর তারা নামাজ আদায় করিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৭২০, ইসলামিক সেন্টার- ৭৩৫]
Leave a Reply