মরণকে স্মরণ, কবর যিয়ারত, মৃত্যু কামনা ও হারাম বস্তু

মরণকে স্মরণ, কবর যিয়ারত, মৃত্যু কামনা ও হারাম বস্তু

মরণকে স্মরণ, কবর যিয়ারত, মৃত্যু কামনা ও হারাম বস্তু >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর কয়েকটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

মরণকে স্মরণ, কবর যিয়ারত, মৃত্যু কামনা ও হারাম বস্তু

পরিচ্ছদঃ ৬৫ -মরণকে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব
পরিচ্ছদঃ ৬৬ -পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব এবং তার দো‘আ
পরিচ্ছেদ -৬৭ঃ কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা করা বৈধ নয় – রিয়াদুস সালেহীন
পরিচ্ছেদ -৬৮ঃ হারাম বস্তু এর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন – রিয়াদুস সালেহীন

পরিচ্ছদঃ ৬৫ -মরণকে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]

অর্থাৎ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করিবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। যাকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশ্তে প্রবেশলাভ করিবে সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান ১৮৫ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ ﴾ [لقمان: ٣٤]

অর্থাৎ “কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করিবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে।” (সূরা লুকমান ৩৪ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

﴿فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ﴾ [الاعراف: ٣٤]

অর্থাৎ “অতঃপর যখন তাদের সময় আসে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব অথবা অগ্রগামী করতে পারে না।” (সূরা নাহ্‌ল ৬১ আয়াত)

তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُلۡهِكُمۡ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩ وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠ وَلَن يُؤَخِّرَ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِذَا جَآءَ أَجَلُهَاۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١١ ﴾ [المنافقون: ٩، ١١]

অর্থাৎ “হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হইতে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তোমরা তা হইতে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,) ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা মুনাফিকূন ৯-১১ আয়াত)

তিনি আরো বলেন,

﴿ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ٱرۡجِعُونِ ٩٩ لَعَلِّيٓ أَعۡمَلُ صَٰلِحٗا فِيمَا تَرَكۡتُۚ كَلَّآۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٠٠ فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ ١٠١ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٢ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ١٠٣ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَ‍ُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١ قَٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ عَدَدَ سِنِينَ ١١٢ قَالُواْ لَبِثۡنَا يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖ فَسۡ‍َٔلِ ٱلۡعَآدِّينَ ١١٣ قَٰلَ إِن لَّبِثۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلٗاۖ لَّوۡ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١٤ أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ ١١٥ ﴾ [المؤمنون: ٩٩، ١١٥]

অর্থাৎ “যখন তাদের (অবিশ্বাসী ও পাপীদের) কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) প্রেরণ কর। যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’ না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে বারযাখ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে না। সুতরাং যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করিবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো না? অথচ তোমরা সেগুলিকে মিথ্যা মনে করতে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন হইতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; অতঃপর আমরা যদি পুনরায় অবিশ্বাস করি তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালংঘনকারী হব।’ আল্লাহ বলবেন, ‘‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশ্বাস করেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও ও আমাদের উপর দয়া কর, তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” সূরা মুমিনূন ৯৯-১১৫ আয়াত)

তিনি অন্যত্র বলেন,

أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ١٦ ﴾ [الحديد: ١٦]

অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের সময় কি আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত তারা হবে না? বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর তাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।” (সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত)

৫৭৯. ইবনে উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ (বুখারী, এটি ৪৭৫ নম্বরে গত হয়েছে।)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১৬, তিরমিজী ২৩৩৩, ইবনু মাজাহ ৪১১৪, আহমাদ ৪৭৫, ৪৯৮২, ৬১২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮০. উক্ত সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে মুসলমানের নিকট অসিয়ত করার মত কোন কিছু আছে, তার জন্য দু’ রাত কাটানো জায়েয নয় এমন অবস্থা ছাড়া যে, তার অসিয়ত-নামা তার নিকট লিখিত (প্রস্তুত) থাকা উচিত।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় তিন রাত কাটানোর কথা রয়েছে। ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি যখন থেকে রসুলুল্লাহ সাঃআঃকে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার উপর এক রাতও পার হয়নি এমন অবস্থা ছাড়া যে আমার অসিয়ত-নামা আমার নিকট প্রস্তুত আছে।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭, তিরমিজী ৯৭৪, ২১১৮, নাসাঈ ৩৬১৫, ৩৬১৬, ৩৬১৮, ৩৬১৯, আবু দাঊদ ২৮৬২, ইবনু মাজাহ ২৬৯৯, আহমাদ ৪৪৫৫, ৪৫৬৪, ৪৮৮৪, ৫০৯৮, ৫১৭৫, ৫৪৮৭, ৫৮৯৪, ৬০৫৫, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৯২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮১. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

একবার নবী সাঃআঃ কয়েকটি রেখা আঁকলেন এবং বললেন, ‘‘এটা হল মানুষ, (এটা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা) আর এটা হল তার মৃত্যু, সে এ অবস্থার মধ্যেই থাকে; হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (অর্থাৎ মৃত্যু) এসে পড়ে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১৮, তিরমিজী ২৩৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩২, আহমাদ ১১৮২৯, ১১৯৭৯, ১২০৩৬, ১৩২৮৫, ১৩৩৮৪) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮২. ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

, একদিন নবী সাঃআঃ একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন যেটি চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর দু পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে ভিতরের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বললেন, ‘‘এ মাঝামাঝি রেখাটা হল মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে বর্ধিত রেখাটি হল তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ছোট ছোট রেখাগুলো নানা রকম বিপদাপদ। যদি সে এর একটাকে এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাকেও যদি এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে।’’ (এর নক্সা নিম্নরূপঃ-মৃত্যু আপদ-বিপদ)

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৬৪১৭, তিরমিজী ২৪৫৪, ইবনু মাজাহ ৪২৩১, আহমাদ ৩৬৪৪, ৪১৩১, ৪৪২৩, দারেমী ২৭২৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮৩. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ এরশাদ করেছেনঃ সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হওঃ (১) তোমরা কি এমন দারিদ্রতার জন্য অপেক্ষা করছো যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, (২) অথবা এ রকম প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে ফেলে, (৩) অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা (শারিরীক সামর্থ্যকে) ধ্বংস করে দেয়, (৪) অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, (৫) অথবা এমন মৃত্যুর যা হঠাৎই উপস্থিত হয়, (৬) কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতর, (৭) অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর।

[তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন) হাদীসটিকে ইমাম তিরমিজী বর্ণনা করে বলেছেনঃ হাদীসটি হাসান। কিন্তু হাদীসটি হাসান নয় বরং দুর্বল। আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদে দুর্বলতা রয়েছে আর এ সম্পর্কে আমি ‘‘সিলসিলাহ্ য‘ঈফা’’ গ্রন্থে (নং ১৬৬৬) ব্যাখ্যা প্রদান করেছি। আমি এর কোন শাহেদ পাচ্ছি না। তিরমিজী কর্তৃক বর্ণিত সনদে মুহরিয ইবনু হারূন নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন তার সম্পর্কে ইমাম বুখারী বলেনঃ তিনি মুনকারুল হাদীস। অন্য একটি সূত্রে এ মুহরিয না থাকলেও সেটির মধ্যে নাম উল্লেখ না করা এক অজ্ঞাত ব্যক্তি হইতে মা‘মার বর্ণনা করিয়াছেন আর সে অজ্ঞাত ব্যক্তি মাকবূরী হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ফলে অন্য সূত্রটিও এ জহূল বর্ণনাকারীর কারণে দুর্বল। হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

৫৮৪. আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে)

[তিরমিজী ২৩০৬, আহমাদ ৮১০৪, ৮২৪১, ৮৬৩২, ৯০২৫, ১০২৬২) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

৫৮৫. উবাই ইবনে কা‘ব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যেত, তখন রসুলুল্লাহ সাঃআঃ উঠে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর। কম্পনকারী (প্রথম ফুৎকার) এবং তার সহগামী (দ্বিতীয় ফুৎকার) চলে এসেছে এবং মৃত্যুও তার ভয়াবহতা নিয়ে হাজির।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি (আমার দো‘আতে) আপনার উপর দরূদ বেশি পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরূদ পড়ার জন্য (দো‘আর) কতটা সময় নির্দিষ্ট করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যতটা ইচ্ছা কর।’’ আমি বললাম, ‘এক চতুর্থাংশ?’ তিনি সাঃআঃ বললেন, ‘‘যতটা চাও। যদি তুমি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘অর্ধেক (সময়)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও; যদি বেশি কর, তাহলে তা ভাল হবে।’’ আমি বললাম, ‘দুই তৃতীয়াংশ?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও (তাই কর)। যদি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।’’ আমি বললাম, ‘আমি আমার (দো‘আর) সম্পূর্ণ সময় দরূদের জন্য নির্দিষ্ট করব!’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তো (এ কাজ) তোমার দুশ্চিন্তা (দূর করার) জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে।’’ (তিরমিজী, হাসান সূত্রে)

[তিরমিজী ২৪৫৭, আহমাদ ২০৭৩৫) হাদীসটির মানঃ হাসান হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৬৬ -পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব এবং তার দো‘আ

৫৮৬. বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে (পূর্বে) কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর।’’ (মুসলিম)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করতে চায়, সে যেন তা করে। কারণ তা আখেরাত স্মরণ করায়।’’ (মুসলিম ১৯৭৭, ৯৭৭, নাসাঈ ২০৩২, ২০৩৩, ৪৪২৯, ৫৬৫১, ৫৬৫২, আবু দাঊদ ৩২৩৫, ৩৬৯৮, আহমাদ ২২৪৪৯, ২২৪৯৪, ২২৫০৬, ২২৫২৯, ২২৫৪৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮৭. আয়েশাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ তাঁর বাড়িতে তাঁর পালাতে রাতের শেষভাগে বাকী‘ (নামক মদীনার কবরস্থান) যেতেন এবং বলতেন,

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ، غَداً مُؤَجَّلْونَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، اَللهم اغْفِرْ لأهْلِ بَقِيعِ الغَرْقَدِ

‘আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম মু’মিনীন অআতাকুম মা তূ‘আদূন, গাদাম মুআজ্জালূন। অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লাহিক্বুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকী‘ইল গারক্বাদ।’ অর্থাৎ হে মুসলমান কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের নিকট তা চলে এসেছে যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল, আগামী কাল (কিয়ামত) পর্যন্ত (বিস্তারিত পুরস্কার ও শাস্তি) বিলম্বিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! তুমি বাক্বী‘উল গারক্বাদবাসীদেরকে ক্ষমা কর।

[মুসলিম ৯৭৪, নাসাঈ ২০৩৭, ২০৩৯, ইবনু মাজাহ ১৫৪৬, আহমাদ ২৩৯০৪, ২৩৯৫৪, ২৪২৮০, ২৪৯৪৩, ২৫৩২৭, ২৫৪৮৭) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮৮. বুরাইদা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

যখন সাহাবীগণ কবরস্থান যেতেন, তখন নবী সাঃআঃ তাদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, তোমরা এ দো‘আ পড়ো,

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنينَ وَالمُسلمينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقونَ، أسْألُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ العَافِيَةَ 

‘আসসালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা অলমুসলিমীন, অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিক্বূন, আসআলুল্লা-হা লানা অলাকুমুল আ-ফিয়াহ।’ অর্থাৎ হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ! যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা চাচ্ছি।

[মুসলিম ৯৭৫, নাসাঈ ২০৪০, ইবনু মাজাহ ১৫৪৭, আহমাদ ২২৪৭৬, ২২৫৩০) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৮৯.ইবনু ‘আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

মাদীনার কিছু সংখ্যক কবর অতিক্রম করার সময় রসুলুল্লাহ সাঃআঃ সে দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ

السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُوْرِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ

‘‘হে কবরের অধিবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী। আমরা তোমাদের উত্তরসূরি।’’- (তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

আমি (আলবানী) বলছিঃ এ হাদীসের সনদটি দুর্বল। (আহকামুল জানায়েয’’ গ্রন্থে (পৃ ১৯৭) এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। উল্লেখ্য এর এক বর্ণনাকারী কাবূস ইবনু আবী যিবইয়ান, তার সম্পর্কে নাসাঈ বলেনঃ তিনি শক্তিশালী নন। ইবনু হিববান বলেনঃ তিনি মন্দ হেফযের অধিকারী, তিনি তার পিতার উদ্ধৃতিতে এমন কিছু বর্ণনা করিয়াছেন যার কোন ভিত্তি নেই। আর এ হাদীসটি তার পিতার উদ্ধৃতিতেই বর্ণনাকৃত। আবু হাতিম প্রমুখ বলেনঃ তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না। ‘‘য‘ঈফ আবী দাঊদ’’ (৫৩২ নং) এর ব্যাখ্যা দেখুন।

হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৬৭ -কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ

৫৯০.আবু হুরাইরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে পুণ্যবান হলে স‎ম্ভবতঃ সে পুণ্য বৃদ্ধি করিবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তাওবাহ করতে পারবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর)

মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে কেউ যেন তার জন্য দো‘আ না করে। কারণ, সে মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মু’মিনের আয়ু কেবল মঙ্গলই বৃদ্ধি করিবে।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৯, ৫৬৭৩, ৬৪৬৩, ৭২৩৫, মুসলিম ২৮১৬, ২৬৮২, নাসাঈ ৫০৩৪, ইবনু মাজাহ ৪২০১, আহমাদ ৭১৬২, ৭৪৩০, ৭৫৩৩, ২৭৪৭০, ৮১৩০, ৮৩২৪, ৮৮২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯১. আনাস রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তাহলে সে (মৃত্যু কামনা না করে দো‘আ করে) বলবে, ‘হে আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখ। আর যদি আমার জন্য মৃত্যুই মঙ্গলজনক হয়, তাহলে আমাকে মৃত্যু দাও।’’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৬৭১, ৬৩৫১, ৭২৩৩, মুসলিম ২৬৮০, তিরমিজী ৯৭১, নাসাঈ ১৮২০, ১৮২১, ১৮২২, আবু দাঊদ ৩১০৮, ইবনু মাজাহ ৪২৬৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯২. কাইস ইবনে আবী হাযেম হইতে বর্ণিতঃ

আমরা অসুস্থ খাব্বাব ইবন আরাত্ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দেখা করতে গেলাম। সে সময় তিনি (তাঁর দেহে চিকিৎসার জন্য) সাতবার দেগেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের সাথীরা যাঁরা (পূর্বেই) মারা গেছেন তাঁরা এমতাবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাদের আমলের সওয়াবে কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন (সম্পদ) লাভ করেছি, যা মাটি ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নবী সাঃআঃ আমাদেরকে মৃত্যু-কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে (রোগ-যন্ত্রণার কারণে) আমি মৃত্যুর জন্য দো‘আ করতাম।’ (কাইস বলেন,) অতঃপর আমরা অন্য এক সময় তাঁর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর (বাড়ির) দেওয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেন, ‘মুসলিম ব্যক্তিকে তার সকল প্রকার ব্যয়ের উপর সওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে ব্যয়কৃত জিনিস ব্যতীত।’

[সহীহুল বুখারী শরীফ ৫৬৭২, ৬৩৪৯, ৬৪৩০, ৬৪৩১, ৭২৩৪, মুসলিম ২৬৮১, তিরমিজী ২৪৮৩, নাসাঈ ১৮২৩, আহমাদ ২০৫৫০, ২০৫৬২, ২০৫৬৭, ২০৫৭৪, ২৬৬০২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

পরিচ্ছদঃ ৬৮ -হারাম বস্তুর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন এবং সন্দিহান বস্তু পরিহার করার গুরুত্ব

৫৯৩. নু‘মান ইবনে বাশীর রাঃআঃ হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই হালাল বিবৃত ও স্পষ্ট এবং হারাম বিবৃত ও স্পষ্ট, আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দিহান বস্তু; যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দিহান বস্তুসমূহ হইতে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে এবং যে ব্যক্তি সন্দিহানে পতিত হবে (সন্দিগ্ধ বস্তু ভক্ষণ করিবে), সে হারামে পতিত হবে। (এর উদাহরণ সেই) রাখালের মত, যে নিষিদ্ধ চারণভূমির আশেপাশে পশু চরায়, তার পক্ষে নিষিদ্ধ সীমানায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শোন! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত চারণভূমি থাকে। আর শোন! আল্লাহর সংরক্ষিত চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। শোন! দেহের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে; যখন তা সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহটাই সুস্থ হয়ে থাকে। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, তখন গোটা দেহটাই খারাপ হয়ে যায়। শোন! তা হল হৃৎপিন্ড (অন্তর)।’’

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (সহীহুল বুখারী শরীফ ৫২, ২০৫১, মুসলিম ১৫৯৯, তিরমিজী ১২০৫, নাসাঈ ৪৪৫৩, ৫৭১০, আবু দাঊদ ৩৩২৯, ইবনু মাজাহ ৩৯৮৪, আহমাদ ১৭৮৮৩, ১৭৯০৩, ২৭৬৩৮, ১৭৯৪৫, দারেমী ২৫৩১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৪. আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

একদা নবী সাঃআঃ পথে একটি খেজুর পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যদি আমার এর সাদকাহ হওয়ার আশঙ্কা না হত, তাহলে আমি এটি খেয়ে ফেলতাম।’’

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (সহীহুল বুখারী শরীফ ২০৫৫, ২৪৩১, ২৪৩৩, মুসলিম ১০৭১, আবু দাঊদ ১৬৫১, ১৬৫২, আহমাদ ২৭৪১৮, ১১৭৮০, ১১৯৩৪, ১২৫০২, ১২৫৯৩, ১৩১২১) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৫. নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

নবী সাঃআঃ বলেন, ‘‘পুণ্যবত্তা হল সচ্চরিত্রতার নাম এবং পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক—এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (মুসলিম ২৫৫৩, তিরমিজী ২৩৮৯, আহমাদ ১৭১৭৯, দারেমী ২৭৮৯) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৬. ওয়াবেস্বাহ ইবনে মা‘বাদ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খট্‌কা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।’’

[আহমাদ, দারেমী) (আহমাদ ১৭৫৩৮, ১৭৫৪০, ১৭৫৪৫, দারেমী ২৫৩৩) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৭. আবু সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনে হারেস রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

তিনি আবু ইহাব ইবনে ‘আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করলেন। অতঃপর তার নিকট এক মহিলা এসে বলল, ‘আমি উক্ববাহকে এবং তার স্ত্রীকে দুধপান করিয়েছি।’ ‘উক্ববাহ তাকে বললেন, ‘তুমি যে আমাকে দুধ পান করিয়েছ তা তো আমি জানি না, আর তুমি আমাকে তার খবরও দাওনি।’ অতঃপর উক্ববাহ (সওয়ারীর উপর) সওয়ার হয়ে আল্লাহর রসূল সাঃআঃ এর নিকট মদীনায় এলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রসুলুল্লাহ সাঃআঃ (সব বৃত্তান্ত শুনে) বললেন, ‘‘যখন এ কথা বলা হয়েছে, তখন তুমি কি করে বিবাহ বন্ধন অটুট রাখবে?’’ সুতরাং উক্ববাহ রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে ত্যাগ করলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামী গ্রহণ করল।

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (সহীহুল বুখারী শরীফ ৮৮, ২০৫২, ২৬৪০, ২৬৫৯, ২৬৬০, ৫১০৫, তিরমিজী ১১৫১, নাসাঈ ৩৩৩০, আবু দাঊদ ৩৬০৩, আবু দাঊদ ১৫৭১৫, ১৮৯৩০, দারেমী ২২৫৫) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৮. আলীর পুত্র হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

আমি রসুলুল্লাহ সাঃআঃ থেকে (এ হাদীস) স্মরণ রেখেছি, ‘‘তা বর্জন কর, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর, যাতে তোমার সন্দেহ নেই।’’ (তিরমিজী, সহীহ)

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (তিরমিজী ২৫১৮, নাসাঈ ৫৭১১, আবু দাঊদ ২৭৮১৯, দারেমী ২৫৩২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৫৯৯. আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা হইতে বর্ণিতঃ

আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর একজন ক্রীতদাস ছিল, যে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে ধার্যকৃত কর আদায় করত। আর আবু বকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সেই আদায়কৃত অর্থ ভক্ষণ করতেন। (অবশ্য প্রত্যহ সে অর্থ হালাল কি না, তা জিজ্ঞাসা করে নিতেন।) একদিনের ঘটনা, ঐ ক্রীতদাস কোন একটা জিনিস এনে তাঁর খিদমতে হাজির করল। আর তিনি (সেদিন ভুলে কিছু জিজ্ঞাসা না করে) তা থেকে কিছু খেয়ে ফেললেন। দাসটি বলল, ‘আপনি কি জানেন, এটা কী জিনিস (যা আপনি ভক্ষণ করলেন)?’ আবু বাক্‌র রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘তা কী?’ দাসটি বলল, ‘আমি জাহেলী যুগে একজন মানুষের ভাগ্য গণনা করেছিলাম। অথচ আমার ভাগ্য গণনা করার মত ভাল জ্ঞান ছিল না। আসলে আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে (পারিশ্রমিকস্বরূপ) এই জিনিস দিলো, যা আপনি ভক্ষণ করলেন।’ এ কথা শুনে আবু বাকর সিদ্দীক রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের হাত স্বীয় মুখের ভিতরে প্রবেশ করালেন এবং পেটের মধ্যে যা কিছু ছিল বমি করে বের করে দিলেন!

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৮৪২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬০০. নাফে’ হইতে বর্ণিতঃ

উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু সর্বপ্রথম হিজরতকারীদের জন্য চার হাজার করে ভাতা নির্দিষ্ট করলেন এবং তাঁর ছেলে (আব্দুল্লাহর) জন্য সাড়ে তিন হাজার নির্দিষ্ট করলেন। তাঁকে বলা হল যে, ‘তিনিও তো মুহাজিরদের একজন; অতএব আপনি তাঁর ভাতা কম করলেন কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তার পিতা তাকে সাথে নিয়ে হিজরত করেছে।’ উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘সে তার মত নয়, যে একাকী হিজরত করেছে।’

হারাম বস্তু সম্পর্কিত হাদিস (সহীহুল বুখারী শরীফ ৩৯১২) হাদীসটির মানঃ সহীহ হাদীস

৬০১. ‘আতিয়্যাহ্ ইবনু ‘উরওয়াহ্ আস-সা‘দী সাহাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু হইতে বর্ণিতঃ

, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেনঃ ঐ পর্যন্ত বান্দাহ্ মুত্তাক্বীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারে না, সে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ হয়ে বাঁচার জন্য নিষ্প্রয়োজনীয় বিষয়াদি পরিত্যাগ না করে। (তিরমিজী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

আমি (আলবানী) বলছিঃ এর সনদটি দুর্বল। ‘‘গায়াতুল মারাম ফী তাখরীজে আহাদীসিল হালাল অল হারাম’’ গ্রন্থে পৃ (১৭৮)তে এ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে ‘‘মিশকাত’’ গ্রন্থে (২৭৭৫) পূর্বে হাসান আখ্যা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পরে এটিকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কারণ সনদের বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ্ ইবনু ইয়াযীদ দেমাস্কী দুর্বল।

হাদীসটির মানঃ দুর্বল হাদীস

Comments

Leave a Reply

Discover more from HADIS QURAN

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading