ফাজায়েলে সানা ও বিসমিল্লাহ

ফাজায়েলে সানা ও বিসমিল্লাহ

এ বিষয়ে সরাসরি মুল হাদিস শরীফ থেকে পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে

অধ্যায়ঃ নামাজ শুরু করা।

আবু হুমায়দ আস-সাইদী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন সলাতে কিবলামুখী হইতেন তখন তাহাঁর দুহাত উত্তোলন করে

 اللَّهُ أَكْبَرُ

আল্লাহু আকবার [তাকবির তাহরীমা] অর্থঃ আল্লাহ মহান

বলিতেন।

ইবনে মাজাহ ৮০৩, বোখারি ৮২৮, তিরমিজি ৩০৪, আবু দাউদ ৭৩০, আহমাদ ২৩০৮৮, দারিমি ১৩৫৬। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ মিশকাত ৮১০। নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শুরু করে [তাকবীরে তাহরীমার পর] বলিতেনঃ

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

“সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা” [হে আল্লাহ! আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আপনার নাম বরকতপূর্ণ, আপনার মাহাত্ন সুউচ্চ এবং আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই]।

وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ سُبْحَانَكَ
আপনার সপ্রশংস হে আল্লাহআমি আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি
وَتَعَالَى اسْمُكَ وَتَبَارَكَ
আপনার নামবরকতপূর্ণ
غَيْرُكَوَلاَ إِلَهَ جَدُّكَ
কোন ইলাহ নেই

ইবনে মাজাহ ৮০৪, নাসায়ি ৮৯৯, ৯০০; আবু দাউদ ৭৭৫, আহমাদ ১১০৮১, দারিমি ১২৩৯। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৫১, মিশকাত ৮১৬, সহিহ আবু দাউদ ৭৪৮। নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

ইমাম তিরমিজি, আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণীত ২৪৩

ইমাম নাসাই ৮৯৯, আবু সাঈদ খুদরী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত, একই সানা উল্লেখ করেছেন, তবে তাবারক্তা এর আগে ওয়া শব্দটি যোগ করেন নি। নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

মিশকাত ৮১৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

মিশকাত ৮১৬. আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

আর ইবনি মাজাহও এ হাদিসটি আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ঈমাম তিরমিজি বলেছেন, এ হাদিসটি আমি হারিসাহ্‌ ছাড়া অন্য কারও সূত্রে শুনিনি। তার স্মরণশক্তি সমালোচিত। {১}

{১} সহীহ : ইবনি মাজাহ ৮০৪। আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেনঃ ঈমাম তিরমিজি ছাড়া অন্যরা হারিসাহ্ ছাড়াও অন্যদের সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন। যেমন- ঈমাম আবু দাউদ ও দারাকুত্বনী আয়িশাহ্ [রাদি.] থেকে অন্য সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করিয়াছেন যার রাবীগণ বিশ্বস্ত। আর এ উভয় সানাদে হাদিসটি শক্তিশালী হয়েছে। যেহেতু আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত এর একটি সহীহ শাহিদ রয়েছে। আবু দাউদ ও অন্যগুলোতে অতিরিক্ত রয়েছেঃ ثُمَّ يَقُوْلُ : لَا اِلهَ اِلَّا اللهُ ثَلَاثًا، ثُمَّ يَقُوْلُ اللهُ اَكْبَرُ ثَلَاثًا، اَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ حَمْزِه وَنَفْخِه وَنَفْثِه، ثُمَّ يَقْرأ; তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

২৪২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রাতে নামাজ আদায় করিতে উঠে প্রথমে তাকবীর

 اللَّهُ أَكْبَرُ

[আল্লাহু আকবার] অর্থঃ আল্লাহ মহান

বলিতেন, অতঃপর এই দুআ পাঠ করিতেনঃ

 سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা” অর্থাৎ “হে আল্লাহ! তুমি মহাপবিত্র, তোমার জন্যই প্রশংসা, তোমার নাম বারকাতপূর্ণ, তোমার মর্যাদা সর্বোচ্চ এবং তুমি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই।

” অতঃপর তিনি বলিতেনঃ

اللَّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا

আল্লাহু আকবার কাবীরা, মহান আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ

كَبِيرًاأَكْبَرُ اللَّهُ
সর্বশ্রেষ্ঠমহান আল্লাহ

অতঃপর বলিতেনঃ

 أَعُوذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ مِنْ هَمْزِهِ وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ ‏

আউযু বিল্লাহিস সামইয়িল আলিম মিনাস সাইতানির রাজিম মিন হামজিহি ওয়া নাফাসিহি। অর্থাৎ “অভিশপ্ত শাইত্বান এবং তার কুমন্ত্রণা, ঝাড়ফুঁক ও যাদুমন্ত্র হইতে আমি সর্বশ্রোতা ও সর্বময় জ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ তাআলার নিকটে আশ্রয় চাই”।

السَّمِيعِ بِاللَّهِ أَعُوذُ
সর্বশ্রোতাআল্লাহ তাআলার আশ্রয় চাই
الشَّيْطَانِ مِنَ الْعَلِيمِ
শাইত্বান নিকটেসর্বময় জ্ঞানের
هَمْزِهِ مِنْالرَّجِيمِ
নিকটেঅভিশপ্ত
وَنَفْثِهِ وَنَفْخِهِ

সহিহ। ইবনি মাজাহ হাদীস নং-[৮০৪]। আবু ঈসা বলেনঃ এ অনুচ্ছেদে আলী, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আয়েশা, জাবির, জুবাইর ইবনি মুতইম ও ইবনি উমার [রাদি.] হইতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আবু সাঈদের হাদীসটি অধিক মাশহুর। একদল বিদ্বান এ হাদীস অনুযায়ী আমল করেন। কিন্তু বেশিরভাগ বিদ্বান বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] সুবহানাকা……..ইলাহা গাইরুকা পর্যন্ত পড়তেন। উমার ইবনিল খাত্তাব ও ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে এরূপই বর্ণিত আছে। বেশিরভাগ তাবিঈ ও অন্যান্যরা এই হাদীস অনুযায়ী আমল করিয়াছেন। [তিরমিযী বলেন,] আবু সাঈদের হাদীসটি সমালোচিত হয়েছে। ইয়াহ্ইয়া ইবনি সাঈদ এ হাদীসের এক রাবী আলী ইবনি আলীর সমালোচনা করিয়াছেন [দুর্বল বলেছেন]। ঈমাম আহমাদ বলেছেন, এ হাদীসটি সহীহ নয়। নামাজ শুরু করার নিয়ম -এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস

আনাস [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেনঃরসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের নিয়ে নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে মসজিদে প্রবেশ করিল, নামাজের জন্য দৌড়ে আসার কারণে তার তার শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছিল। সে বলিল

‏‏‏‏ اللَّهُ أَكْبَرُ، ‏‏‏‏‏‏الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ

আল্ল-হু আকবার আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বইয়িবাম মুবা-রকান ফীহি, (সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যে ও তার জন্যে উত্তম ও প্রচুর প্রশংসা, তার প্রশংসার মধ্যে বরকত আছে)

الْحَمْدُ أَكْبَرُاللَّهُ
সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর
كَثِيرًا حَمْدًا لِلَّهِ
প্রচুরপ্রশংসাআল্লাহর
فِيهِمُبَارَكًا طَيِّبًا
মধ্যেবরকত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষ করে বলিলেন- তোমাদের মধ্যে কে এ বাক্যগুলো উচ্চারণ করিল? এতে উপস্থিত সকলে নির্বাক হয়ে গেল। তিনি বলিলেন, সে কোন ক্ষতিকর কথা বলেনি। সে ব্যক্তি বলিল- ইয়া রসূলুল্লাহ! আমি বলেছি। আমি এসে পড়লাম আর আমার তখন শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন আমি তা বলেছি। নাবী [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি বারজন ফেরেশতাকে দেখলাম, তারা প্রতিযোগিতা করছে, কে তা তুলে নেবে।

নাসাই ৯০১, নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

মিশকাত ৮১৪, সহীহ : মুসলিম ৬০০, নাসায়ী ৯০১, আবু দাউদ ৭৬৩, আহমাদ ১২৭১৩, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৬১, নাসায়ী ৯০১। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

আবু হুরাইরা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তখন কিছুক্ষণ চুপ থাকতেন। আমি বললামঃইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার মাতা-পিতা আপনার প্রতি কুরবান হোক, আপনি তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যস্থলে চুপ থেকে কি বলেন? তিনি বলিলেন আমি বলি,

 اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ، اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَايَ كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ، اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

আল্ল-হুম্মা বা-‘ইদ বাইনী ওয়া বাইনা খত্বা-ইয়া-ইয়া কামা- বা’আদতা বাইনাল মাশরিকি ওয়াল মাগরিব, আল্ল-হুম্মা নাকিনী মিনাল খত্বা-ইয়া- কামা- ইউনাক্কস্ সাওবুল আবইয়াযু মিনাদ দানাস, আল্ল-হুম্মাগসিলনি মিন খত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-য়ি ওয়াস্ সালজি ওয়াল বারদ, অর্থাৎ- হে আল্লাহ! আমার ও আমার পাপরাশির মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেমন পূর্ব পশ্চিমের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছ। হে আল্লাহ! আমাকে আমার পাপরাশি থেকে পবিত্র করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়ে থাকে। হে আল্লাহ! আমাকে পানি, বরফ, শিলা বৃষ্টির সাহায্যে ধৌত কর।

بَيْنِي بَاعِدْ اللَّهُمَّ
হে আল্লাহ্!
كَمَا خَطَايَاىَ وَبَيْنَ
যেরূপ আমার গুনাহের
الْمَشْرِقِ بَيْنَ بَاعَدْتَ
نَقِّنِي اللَّهُمَّ وَالْمَغْرِبِ
হে আল্লাহ্!
كَمَا خَطَايَاىَ مِنْ
আমার গুনাহেরথেকে
الْأَبْيَضُ الثَّوْبُ يُنَقَّى
اللَّهُمَّ الدَّنَسِمِنَ
خَطَايَايَ مِنْاغْسِلْنِي
وَالْبَرَدِوَالثَّلْجِ بِالْمَاءِ

মহানাবী [সাঃআঃ] আপন উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এরূপ দোয়া করেছিলেন।

ইমাম নাসাই, ৮৯৫, পরিচ্ছেদঃ তাকবীর ও কিরাআতের মধ্যবর্তী দোয়া নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

miSkat ৮১২, আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ। তবে মিস্কাত খত্বা-ইয়া-ইয়া বিলমা-য়ি ওয়াস্ সালজি ওয়াল বারদ এর আগে মিন শব্দটি যোগ করেন নি যেমন

اللّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ اللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

{১} সহীহ : বোখারী ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, আবু দাউদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনি মাজাহ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারিমি ১২৮০, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৭৫। তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

আবু হুরায়রা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকবীরে তাহরীমা বলার পর, তাকবীর ও কিরাআতের মাঝখানে কিছুক্ষণ নীরব থাকতেন। রাবি বলেন, আমি বললাম, আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গিত হোক, আপনি তাকবীর ও কিরাআতের মাঝখানে চুপ থাকেন কেন? তখন আপনি কী বলেন আমাকে বলুন! তিনি বলেনঃ আমি বলিঃ

اللَّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَاىَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللَّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ خَطَايَاىَ كَالثَّوْبِ الأَبْيَضِ مِنَ الدَّنَسِ اللَّهُمَّ اغْسِلْنِي مِنْ خَطَايَاىَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

আল্লাহুম্মা বাইদ বাইনি ওয়া বাইনা খাতাইয়াইয়া কামা বায়াদতা বাইনাল মাশরিক্বি ওয়াল মাগরিব। আল্লাহুম্মা নাক্কিনী মিন খাতাইয়াইয়া কাস-সাওবিল আবইয়াদু মিনাদ দানাস। আল্লাহুম্মাগসিলনী মিন খাতাইয়াইয়া বিল মায়ি ওয়াস-সালজি ওয়াল বারাদ। “হে আল্লাহ্! আপনি আমার ও আমার গুনাহের মাঝে এরূপ দূরত্ব সৃষ্টি করে দিন, যেরূপ আপনি পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করিয়াছেন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার পাপরাশি থেকে পবিত্র করুন, যেমন ময়লা থেকে ধবধবে সাদা কাপড় পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ হিমশীতল পানি দিয়ে ধৌত করুন।” {৮০৩}

بَيْنِي بَاعِدْ اللَّهُمَّ
হে আল্লাহ্!
كَمَا خَطَايَاىَ وَبَيْنَ
যেরূপ আমার গুনাহের
الْمَشْرِقِ بَيْنَ بَاعَدْتَ
نَقِّنِي اللَّهُمَّ وَالْمَغْرِبِ
হে আল্লাহ্!
كَالثَّوْبِ خَطَايَاىَ مِنْ
আমার গুনাহেরথেকে
الدَّنَسِ مِنَ الأَبْيَضِ
مِنْ اغْسِلْنِي اللَّهُمَّ
থেকে হে আল্লাহ্!
وَالثَّلْجِ بِالْمَاءِ خَطَايَاىَ
হিমশীতলপানি আমার গুনাহের
وَالْبَرَدِ

ইবনে মাজাহ ৮০৫, অধ্যায়-নামাজ শুরু করা। ইবনে মাজাহ ৮০৬, আয়িশা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ একই অধ্যায়ে এই সানাটির তাবারাকাসমুকার আগে ওয়া শব্দটুকু বাদঁ দিয়েচেন, যেমন  سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ

বোখারি ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, নাসায়ি ৮৯৪-৯৫, আবু দাউদ ৭৮১, আহমাদ ৭১২৪, ১০৩৬; দারিমি ১২৪৪। তাহকিক আলবানিঃ সহিহ। তাখরিজ আলবানিঃ ইরওয়াহ ৩৪১, মিশকাত ৮১৫, সহিহ আবু দাউদ ৭৪৯। নামাজের নিয়ম হাদিসের তাহকিকঃ সহিহ হাদিস

আলী [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নামাজ আরম্ভ করিতেন তাকবীর বলিতেন। তারপর বলিতেনঃ

وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِي وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي جَمِيعًا لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ وَاهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا إِلَّا أَنْتَ وَاصْرِفْ عَنِّي سَيِّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّي سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرُ كُلُّهُ فِي يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ إِلَيْكَ أَنَا بِكَ وَإِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাতারস সামাওয়াতি ওয়াল আরযি হানীফাওঁ ওয়ামা- আনা- মিনাল মুশরিকীনা ইন্না সালা-তী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীনা লা-শারীকা লাহু ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীনা, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু লা- ইলা-হা ইল্লা আনতা আনা- ‘আবদুকা যলামতু নাফসী ওয়া তারফতু বিযামবী ফাগফিরলী যুনূবী জামী’আন লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা ওয়াহদিনী লিআহসানিল আখলা-কি লা- ইয়াহদী লিআহসানিহা- ইন্না-আনতা ওয়াসরিফ আন্নী সাইয়িআহা- লা- ইয়াসরিফু ‘আন্নী সাইয়িআহা- ইল্লা আনতা লাব্বাইকা ওয়া সা’ দায়কা ওয়াল খয়রু কুল্লহু ফী ইয়াদায়কা ওয়াশ শাররু লায়সা ইলায়কা আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা তাবারকতা ওয়া তা’ আলা-লায়তা আসতাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা

অর্থঃআমি একনিষ্ঠভাবে তাহাঁর দিকে মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামাজ আমার ইবাদত [কুরবানী ও হজ্জ] আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে। তাহাঁর কোন শরীক নেই। আর এরই জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্গত। আল্লাহ, তুমিই বাদশাহ, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আমি নিজের উপর জুলুম করেছি এবং আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি- সুতরাং তুমি আমার সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয় তুমি ব্যতীত আর কেউ অপরাধসমূহ ক্ষমা করিতে পারে না এবং চালিত কর আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে তুমি ব্যতীত অপর কেউ চালিত করিতে পারে না উত্তম চরিত্রের পথে এবং দূরে রাখ আমা থেকে মন্দ আচরণকে- তুমি ব্যতীত আমা থেকে তা অপর কেউ দূরে রাখতে পারে না। আল্লাহ! হাজির আছি আমি তোমার দরবারে আর প্রস্তুত আছি তোমার আদেশ পালনে, কল্যাণ সমস্তই তোমার হাতে এবং কোনও অকল্যাণই তোমার প্রতি বর্তায় না। আমি তোমার সাহায্যেই প্রতিষ্ঠিত আছি এবং তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। তুমি মঙ্গলময়, তুমি সুমহান। আমি তোমার নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করছি এবং তোমার দিকে ফিরছি।

নাসাই, ৮৯৭. নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

bulgul ২৭০ – ‘আলী বিন আবী ত্বলিব [রাঃআঃ] থেকে বর্ণিতঃ

৮১২. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমার পরে ক্বিরাআত শুরু করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি কুরবান হোন। আপনি তাকবীর ও ক্বিরাআতের মধ্যবর্তী সময় চুপ থাকেন তাতে কি বলেন? উত্তরে রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেন, আমি বলি,

اللّهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِي وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اللّهُمَّ نَقِّنِي مِنْ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْأَبْيَضُ مِنْ الدَّنَسِ اللّهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

“হে আল্লাহ! আমি ও আমার গুনাহসমুহের মধ্যে দূরত্ব করে দাও, যেভাবে তুমি দূরত্ব করে দিয়েছ মাশরিক ও মাগরিবের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর গুনাহ হইতে, যেভাবে পরিষ্কার করা হয় সাদা কাপড়কে ময়লা হইতে। হে আল্লাহ্‌! তুমি পানি, বরফ ও মুষলধারে বৃষ্টি দিয়ে আমার গুনাহসমূহকে ধুয়ে ফেল।” {১}

{১} সহীহ : বোখারী ৭৪৪, মুসলিম ৫৯৮, আবু দাউদ ৭৮১, নাসায়ী ৬০, ইবনি মাজাহ ৮০৫, আহমাদ ৭১৬৪, দারিমি ১২৮০, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৭৭৫। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] সলাত আদায় করার জন্য দাঁড়াতেন, আর এক বর্ণনায় আছে সলাত শুরু করার সময়, সর্বপ্রথম তাকবীরে তাহরীমা বলিতেন। তারপর তিনি এই দুআ পাঠ করিতেনঃ

 وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَ السَّموتِ وَالاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ اِنَّ صَلَاتِىْ وَنُسُكِىْ وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِىْ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ- لَا شَرِيْكَ لَه وَبِذلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ. اللّهُمَّ اَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلهَ اِلَّا اَنْتَ رَبِّىْ وَاَنَا عَبْدُكَ ظَلَمْتُ نَفْسِىْ وَاعْتَرَفْتُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ ذُنْوْبِىْ جَمِيْعًا اِنَّه لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ. وَاهْدِنِىْ لاَحْسَنِ الاَخْلَاقِ لَا يَهْدِىْ لَاحْسَنِهَا اِلَّا اَنْتَ. وَاصْرِفْ عَنِّىْ سَيُّئَهَا لَا يَصْرِفُ عَنِّىْ سَيِّئَهَا اِلَّا اَنْتَ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيْرَ كُلُّه فِىْ يَدَيْكَ وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ تَبَارَكْتَ وَتَعَالَيْتَ. اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ 

“ওয়াজ্‌জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাজী ফাত্বারাস সামাওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা-আনা মিনাল মুশ্‌রিকীন, ইন্না সলা-তি ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন – লা- শারীকা লাহু, ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু, ওয়াআনা- মিনাল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা- ইলা-হা ইল্লা – আন্‌তা রব্বী, ওয়াআনা- আব্‌দুকা যলাম্‌তু নাফ্‌সী ওয়াতারাফ্‌তু, বিযাম্বী, ফাগ্‌ফিরলী যুনূবী জামীআ-, ইন্নাহু লা- ইয়াগ্‌ফিরুয যুনূবা ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আখলাক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিয়াহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা, ওয়াস্‌রিফ আন্নী সায়ইউয়াহা- লা- ইয়াস্‌রিফু আন্নী সায়য়্যইয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা লাব্বায়কা ওয়া সাদায়কা, ওয়াল খায়রা কুলুহু ফী ইয়াদায়কা, ওয়াশ্‌ শাররু লায়সা ইলায়কা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, তাবা-রাক্‌তা ওয়াতাআ-লায়তা, আস্‌তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলায়কা” –[অর্থাৎ -“আমি একনিষ্ঠভাবে আমার মুখ ফিরিয়েছি তাহাঁর দিকে, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি মুশরিকদের মধ্যে শামিল নই। নিশ্চয় আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ্‌ রব্বুল আলামীনের জন্য। তার কোন শারীক নেই। আর এ জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমি মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত। হে আল্লাহ্‌! তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই। তুমি আমার রব। আমি তোমার গোলাম। আমি আমার নিজের উপর যুল্‌ম [অত্যাচার] করেছি। আমি স্বীকার করছি আমার অপরাধ। তুমি আমার সব অপরাধ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া নিশ্চয় আর কেউ অপরাধ ক্ষমা করিতে পারে না। আমাকে পরিচালিত করে না। তুমি দূরে রাখ আমার নিকট হইতে মন্দ কাজ। তুমি ছাড়া মন্দ কাজ থেকে আর কেউ দূরে রাখতে পারে না। হে আল্লাহ্‌ আমি তোমার দরবারে তোমার আদেশ পালনে হাযির। সকল কল্যাণই তোমার হাতে। কোন অকল্যাণই তোমার উপর আরোপিত হয় না। আমি তোমার সাহায্যেই টিকে আছি। তোমার দিকেই ফিরে আছি। তুমি কল্যাণের আধার। আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই। তোমার দিকেই আমি প্রতাবর্তন করছি।”]

এরপর নবী [সাঃআঃ] যখন রুকূ করিতেন, তখন বলিতেন,

اللّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِىْ وَبَصَرِىْ وَمُخِّىْ وَعَظْمِىْ وَعَصَبِىْ

“আল্ল-হুম্মা লাকা রাকাতু ওয়াবিকা আ-মান্‌তু, ওয়ালাকা আস্‌লাম্‌তু, খাশাআ লাকা সাম্‌ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখ্‌খী ওয়া আয্‌মী ওয়া আসাবী” – [অর্থাৎ – হে আল্লাহ্‌! আমি তোমারই জন্য রুকূ করলাম। তোমাকেই বিশ্বাস করলাম। তোমার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করলাম। তোমার ভয়ে ভীত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, মগজ আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।]

এরপর নবী [সাঃআঃ] রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন, বলিতেনঃ

اللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْأَ السَّموتِ وَالاَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْأَ مَا شِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ

“আল্ল-হুম্মা রব্বানা- লাকাল হামদু, মিল্‌য়াস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যি ওয়ামা- বায়নাহুমা- ওয়ামিল্‌য়া মা- শিতা মিন শাইয়্যিন বাদু”-[অর্থাৎ হে আল্লাহ্‌! হে আমাদের প্রতিপালক! আসমান ও জমিন ও এতদুভয়ের ভিতর যা কিছু আছে, সবই তোমার প্রশংসা করছে। এরপরে যা কিছু সৃষ্টি করিবে তারাও তোমার প্রশংসা করিবে।]

এরপর তিনি সাজদায় গিয়ে পড়তেন,

اللّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ آمَنْتُ وَلَكَ اَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ خَلَقَه وَصَوَّرَه وَشَقَّ سَمْعَه وَبَصَرَه، تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

“আল্ল-হুম্মা লাকা সাজাত্তু ওয়াবিকা আমান্‌তু ওয়ালাকা আস্‌লামতু, সাজাদা ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী খালাক্বাহু ওয়াসাও্‌ ওয়ারাহু ওয়াশাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহু, তাবারাকাল্ল-হু আহ্‌সানুল খা-লিক্বীন ”– [অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! আমি তোমার জন্য সাজদাহ্‌ করছি। তোমার উপর ঈমান এনেছি। তোমার জন্য ইসলাম গ্রহণ করেছি। আমার মুখমন্ডল তার জন্য সাজদাহ্‌ করছে যিনি তাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তাকে আকার আকৃতি দিয়েছেন। তার কান ও চোখ খুলে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ খুবই বারাকাতপূর্ণ উত্তম সৃস্টিকারী।”]

এরপর সর্বশেষ দুআ যা আত্তাহিয়্যাতুর পর ও সালাম ফিরাবার আগে পড়তেন তা হল,

اللّهُمَّ اغْفِرْلِىْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا اَخَّرْتُ وَمَا اَسْرَرْتُ وَمَا اَعْلَنْتُ وَمَا اَسْرَفْتُ وَمَا اَنْتَ اَعْلَمُ بِه مِنِّىْ. اَنْتَا لْمُقَدِّمُ وَاَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لَا إِلهَ اِلَّا اَنْتَ

“আল্ল-হুম্মাগফিরলী মা- ক্বদ্দাম্‌তু ওয়ামা- আখ্‌খারতু ওয়ামা-আস্‌রারতু ওয়ামা- আলান্‌তু ওয়ামা– আস্‌রাফতু ওয়ামা- আন্‌তা আলামু বিহী মিন্নী, আন্‌তাল মুক্বদ্দিমু ওয়া আন্‌তাল মুআখ্‌খিরু, লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা”- [অর্থাৎ- “হে আল্লাহ্‌! তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি করেছি। আমার সেসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমি পূর্বে করেছি এবং যা আমি পরে করেছি। আমার ওইসব বাড়াবাড়িও ক্ষমা করে দাও যা আমি আমলে ও সম্পদ খরচে করেছি। আমার ওইসব গুনাহও তুমি ক্ষমা করে দাও যা আমার চেয়ে তুমি ভাল জান। তুমি তোমার বান্দাদের যাকে চাও মান সম্মানে এগিয়ে নাও। আর যাকে চাও পিছে হটিয়ে দাও। তুমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই।”] {১}

ঈমাম শাফিঈর এক বর্ণনায় প্রথম দুআয় ফী ইয়াদায়কা– এর পরে আছে,

وَالشَّرُّ لَيْسَ اِلَيْكَ وَالْمَهْدِىُّ مَنْ هَدَيْتَ اَنَا بِكَ وَاِلَيْكَ لَا مَنْجَاءَ مِنْكَ وَلَا مَلْجَاءَ اِلَّا اِلَيْكَ تَبَارَكْتَ

“ওয়াশ্‌ শার্‌রু লায়সা ইলায়কা ওয়াল মাহ্‌দীইউ মান হাদায়তা, আনা- বিকা ওয়া ইলায়কা, লা- মান্‌জা-আ মিন্‌কা ওয়ালা- মাল্‌জা-আ ইল্লা- ইলায়কা তাবা-রাক্‌তা” – [অর্থাৎ- মন্দ তোমার জন্য নয়। সে-ই পথ পেয়েছে যাকে তুমি পথ দেখিয়েছ। আমি তোমার সাহায্যে টিকে আছি। তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। তোমার পাকড়াও হইতে বাচাঁর কোন জায়গা নেই। তুমি ছাড়া আশ্রয়ের কোন স্থল নেই। তুমি বারাকাতময়।]। ঈমাম শাফিঈ [রহ.]- এর এ রিওয়ায়াতটিও সহীহ।

মিশকাত ৮১৩, {১} সহীহ : মুসলিম ৭৭১, মুসনাদে শাফিঈ ২০১, আবু দাউদ ৭৬০, তিরমিজি ৩৪২১, ইবনি মাজাহ ১০৫৪, আহমাদ ৭২৯, সহীহ ইবনি হিব্বান ১৯৭৮।তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

মুহাম্মদ ইবন মাসলামা [রাঃআঃ] হইতে বর্ণীত

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন নফল নামাজ আদায় করিতে দাঁড়াতেন তখন বলিতেনঃ

اللَّهِ أَكْبَرُ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ، إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ، اللَّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ

তারপর তিনি কুরআন পাঠ করিতেন।

নাসাই ৮৯৮, নামাজ শিক্ষা হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস

জুবায়র ইবনি মুত্বইম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে সলাত আদায় করিতে দেখেছেন। তিনি তাকবীর তাহরীমার পর বললেনঃ

اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا اللّهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَالْحَمْدُ لِلّهِ كَثِيرًا وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا

“আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, আল্ল-হু আকবার কাবীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-, ওয়া সুবহা-নাল্ল-হি বুক্‌রাতাওঁ ওয়াআসীলা-” তিনবার বললেন। তারপর বলেছেন,

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ، مِنْ نَفْخِه وَنَفْثِه وَهَمْزِه

“আঊযু বিল্লা-হি মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম মিন নাফ্‌খিহী ওয়া নাফ্‌সিহী ওয়া হাম্‌যিহী”। {৮৩৪] কিন্তু তিনি “ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি কাসীরা-” উল্লেখ করেননি। তাছাড়া তিনি শেষ দিকে শুধু “মিনাশ্‌ শাইত্ব-নির রজীম” বর্ণনা করিয়াছেন। উমার [রাদি.] বলেছেন, [আরবি] [নাফ্‌খ] অর্থ অহমিকা, [আরবি] [নাফ্‌স] অর্থ কবিতা, আর [আরবি] [হাম্‌য] অর্থ পাগলামী। {১}

মিশকাত ৮১৭, {১} জইফ : আবু দাউদ ৭৬৪, ইবনি মাজাহ ৮০৮। এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] তাকবীর তাহরীমা [আল্ল-হু আকবার] দ্বারা সলাত শুরু করিতেন। তারপর পাঠ করিতেন,

إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَه وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ اللّهُمَّ اهْدِنِي لِأَحْسَنِ الْأَعْمَالِ وَأَحْسَنِ الْأَخْلَاقِ لَا يَهْدِي لِأَحْسَنِهَا اِلَّا أَنْتَ وَقِنِي سَيِّئَ الْأَعْمَالِ وَسَيِّئَ الْأَخْلَاقِ لَا يَقِي سَيِّئَهَا اِلَّا أَنْتَ

“ইন্না সলা-তী ওয়ানুসুকী ওয়া মাহ্‌ইয়া-ইয়া ওয়ামামা-তী লিল্লা-হি রব্বিল আ-লামীন, লা- শারীকা লাহূ ওয়াবিযা-লিকা উমিরতু ওয়াআনা- আও্‌ওয়ালুল মুসলিমীন, আল্ল-হুম্মাহ্‌দিনী লিআহ্‌সানিল আমা-লি এবং আহ্‌সানিল আখলা-ক্বি লা- ইয়াহ্‌দী লিআহ্‌সানিহা- ইল্লা- আন্‌তা ওয়াক্বিনী সায়য়্যিয়াল আমা-লি ওয়া সায়য়্যিয়াল আখলা-ক্বি লা- ইয়াক্বী সায়য়্যিয়াহা- ইল্লা- আন্‌তা”– [অর্থাৎ- আমার সলাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু আল্লাহ তাআলার জন্য। তাহাঁর কোন শারীক নেই। আর এর জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি। আমিই হলাম এর প্রতি প্রথম আনুগত্যশীল। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে পরিচালিত কর উত্তম কাজ ও উত্তম চরিত্রের পথে। তুমি ছাড়া উত্তম পথে আর কেউ পরিচালিত করিতে পারবে না। আমাকে খারাপ কাজ ও বদ চরিত্র হইতে রক্ষা কর। তুমি ছাড়া এর খারাবি থেকে কেউ আমাকে বাঁচাতে পারবে না।]। {১}

মিশকাত ৮২০,{১} সহীহ : নাসায়ী ৮৯৬। এখানে নাসায়ীতে أَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ-এর পরিবর্তে وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ রয়েছে তবে প্রথমটিই সঠিক। দারাকুত্বনীর হাদিসের শেষাংশে রয়েছে শুআয়ব বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির সহ মাদীনার অন্যান্য ফকীহগণ আমাকে বলেছেন, যদি তুমি সেটি পরিবর্তন করে وَأَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ বলিতে চাও তাহলে আমার মতে এ পরিবর্তনের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং মুসল্লীদের وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ বলা আবশ্যক। হয় আয়াতের দৃষ্টিকোণ থেকে অথবা আল্লাহর আদিষ্ট বিষয় দ্রুত পালনার্থে। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

মুহাম্মাদ ইবনি মাসলামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রাসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নাফল সলাত আদায় করিতে দাঁড়ালে বলিতেন,

اللّهُ أَكْبَرُ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّموتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا وَمَا أَنَا مِنْ الْمُشْرِكِيْنَ

“আল্ল-হু আকবার, ওয়াজ্জাহ্‌তু ওয়াজ্‌হিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস্‌ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আর্‌যা হানীফাওঁ ওয়ামা আনা- মিনাল মুশ্‌রিকীন”– [অর্থাৎ- আল্লাহ বড় মহামহিম। আমি সে সত্তার দিকেই আমার মুখ ফিরিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করিয়াছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই”। ঈমাম নাসায়ী বলেন, অবশিষ্ট হাদিস তিনি [উল্লেখিত] জাবির-এর হাদিসের মতই বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তিনি পরিবর্তে বলেছেন, “আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত”। এরপর নবী [সাঃআঃ] বলিতেন,

اللّهُمَّ أَنْتَ الْمَلِكُ لَا إِلهَ اِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ

“আল্ল-হুম্মা আনতাল মালিকু, লা-ইলা-হা ইল্লা- আন্‌তা সুবহা-নাকা ওয়া বিহাম্‌দিকা”– [অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই বাদশাহ। তুমি ছাড়া সত্যিকার কোন মাবূদ নেই। তুমি পবিত্র। সব প্রশংসা তোমার জন্য।]। এরপর নবী [সাঃআঃ] ক্বিরাআত শুরু করিতেন। {১}

মিশকাত ৮২১, {১} সহীহ : নাসায়ী ৮৯৮। তাকবিরে তাহরিমার পর দোয়া -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply