সলাতে কথা বলা নিষেধ মাকরূহ ও বিধি সমুহ
সলাতে কথা বলা নিষেধ মাকরূহ ও বিধি সমুহ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
৫. অধ্যায়ঃ রুকূর সময় দুহাত হাঁটুতে রাখা উত্তম হওয়া এবং তাত্ববীক্ব[দু হাত জোড় করে দুপায়ের মাঝখানে] রাখা রহিত হওয়া
৬. অধ্যায়ঃ গোড়ালির উপর নিতম্ব রেখে বসা
৭. অধ্যায়ঃ সলাতে কথা বলা নিষেধ এবং এর পূর্ব অনুমতির বিধান রহিতকরণ
৮. অধ্যায়ঃ সলাতে শায়ত্বনকে লানাত করা, শয়তান হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং আমালে ক্বালীল [সামান্য কাজ] করা বৈধ
৯. অধ্যায়ঃ নামাজের শিশুদেরকে কাঁধে উঠানো যায়
১০.অধ্যায়ঃ সলাতে প্রয়োজনবশতঃ দু এক কদম চলা যায়
১১. অধ্যায়ঃ কোমরে হাত রেখে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১২. অধ্যায়ঃ সলাতে কঙ্কর সরানো এবং মাটি সমান করা মাকরূহ
১৩. অধ্যায়ঃ সলাতে হোক বা নামাজের বাইরে মাসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা নিষিদ্ধ
১৪.অধ্যায়ঃ জুতা পরিধান করে নামাজ আদায় করা বৈধ
১৫. অধ্যায়ঃ নকশা বিশিষ্ট কাপড়ে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১৬. অধ্যায়ঃ ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে আসলে এবং তৎক্ষণাৎ খাবার ইচ্ছা থাকলে তা না খেয়ে ও পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
৫. অধ্যায়ঃ রুকূর সময় দুহাত হাঁটুতে রাখা উত্তম হওয়া এবং তাত্ববীক্ব[দু হাত জোড় করে দুপায়ের মাঝখানে] রাখা রহিত হওয়া
১০৭৮. আসওয়াদ ও আলক্বামাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তারা [উভয়ে] বলেছেন, আমরা আবদুল্লাহ ইবনি মাসঊদ [রাদি.] -এর বাড়িতে তার কাছে গেলাম। তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, এসব আমীর-উমারাহ্ এবং তাদের অনুসারীগণ যারা তোমাদের পেছনে রয়েছে তারা কি নামাজ আদায় করেছে? জবাবে আমরা বললাম, না। তখন তিনি বলিলেন, তাহলে উঠে নামাজ আদায় করে নাও। [কারণ নামাজের সময় হয়ে গিয়েছে]। কিন্তু তিনি আমাদেরকে আযান কিংবা একামত দিতে বলিলেন না। {২} বর্ণনাকারী বর্ণনা করিয়াছেন যে, নামাজ আদায়ের জন্য আমরা তার পিছনে দাঁড়াতে গেলে তিনি আমাদের একজনকে ধরে তার ডানপাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন এবং অপরজনকে বাঁ পাশে দাঁড় করিয়ে দিলেন। {৩} তিনি রুকূতে গেলে আমরাও রুকূতে গিয়ে হাঁটুর উপর আমাদের হাত রাখলাম। তখন তিনি আমাদের হাত ধরলেন এবং হাতের দুতালু একত্রিত করে দুউরুর মাঝখানে স্থাপন করিলেন। পরে নামাজ শেষে বলিলেন, অচিরেই এমন সব আমীর –উমারাহ্ ও ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের আবির্ভাব ঘটবে যারা সময়মত নামাজ না পড়ে বিলম্ব করিবে এবং নামাজের সময় এত সংকীর্ণ করে ফেলবে যে, সূর্য অস্তমিত প্রায় হয়ে যাবে। তাদেরকে এরূপ করিতে দেখলে তোমরা সময়মত নামাজ আদায় করে নিবে। আর তাদের সাথে পুনরায় নফল হিসেবে পড়ে নিবে [ঈমামকে মাঝখানে রেখে]। তিনের অধিকজন থাকলে একজন ঈমাম হইবে [সামনে দাঁড়াবে] আর রুকূ করার সময় দুহাত উরুর উপর রেখে রুকূতে যাবে এবং উভয় [হাতের] তালু একত্রিত করে দু উরুর মাঝখানে রাখবে। [এসব কথা বলার পর তিনি বলিলেন, এ মুহূর্তে] আমি যেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর এক হাতের অঙ্গুলি অপর হাতের অঙ্গুলিতে ঢুকাতে দেখিতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি তা তাদেরকে দেখালেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭২, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮০]
{২} একাকী ফাজ্র নামাজ আদায় কালে আযান ও ইক্বামাতের বিধান সম্পর্কে ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জমহুর উলামাগণ মত দিয়েছেন যে, এক্ষেত্রে ইক্বামাত বলা সুন্নাত, বড় জামাআতের ইক্বামাতে এটা যথেষ্ট হইবে না। আর আযানের ব্যাপারে আমাদের সঠিক মত হল-জামাআতের আযান শুনা না গেলে আযান দিয়ে নিতে হইবে। [শারহে মুসলিম-১ম, ২০২ পৃঃ]
{৩} ইবনি মাসঊদ ও তাহাঁর সাথীদ্বয় ব্যতীত সহাবীগণের সকল উলামাহ্ এবং অদ্যাবধি কালের সকল আলিমের মতে ইমামের সাথে দুজন থাকলেই তারা ইমামের পিছনে দাড়াবে। এ মর্মে জাবির… থেকে সহীহ্ মুসলিমের অন্যত্র হাদীস বর্ণিত হয়েছে। [শারহে মুসলিম-১ম, ২০২ পৃঃ]
১০৭৯. মিনজাব ইবনিল হারিস আত্ তামীমী, উসমান ইবনি আবু শায়বাহ্ ও মুহাম্মাদ ইবনি রাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তারা [উভয়ে] আবদুল্লাহ [ইবনি মাসঊদ] -এর কাছে গেলেন। এরপর তারা মুআবিয়াহ্ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিলেন। তবে ইবনি মুসহির ও জারীর বর্ণিত হাদীসে এতটুকু অতিরিক্ত বর্ণনা করা হয়েছে যে, এ মুহূর্তে আমি যেন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে রাখা আঙ্গুলগুলো দেখিতে পাচ্ছি এবং তিনি রুকূ অবস্থায় আছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৩, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮১]
১০৮০. আবদুল্লাহ ইবনি আবদুর রহমান আদ্ দারিমী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আলক্বামাহ্ ও আসওয়াদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তারা [আলকামাহ্ ও আসওয়াদ] এক সময়ে আবদুল্লাহর কাছে গেলে আবদুল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, যারা [আমীর-উমারাগণ] থেকে গেল তারা কি নামাজ আদায় করেছে? তারা বলিলেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি [আবদুল্লাহ] তাদের দুজনের মাঝখানে দাঁড়ালেন। তখন তিনি তাদের দুজনের একজনকে ডানে এবং অপরজনকে বামে দাঁড় করালেন। এরপর আমরা [তার সাথে] রুকূ করলাম। এতে তিনি আমাদের হাত আমাদের হাঁটুর উপর রাখলেন। তিনি আমাদের হাত ধরে তা পরস্পর মিলিয়ে [একত্রিত করে] দিয়ে দুউরুর মাঝখানে স্থাপন করিলেন। নামাজ শেষে তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপ করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৪, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮২]
১০৮১. মুসআব ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি আমার পিতার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছি। তিনি বর্ণনা করিয়াছেন যে, ঐ সময় [পিতার সাথে নামাজ আদায়ের সময়] আমি আমার হাত দুটি দু হাঁটুর মাঝখানে রাখলে আমার পিতা আমাকে বলিলেন, তোমার হাত দুটি হাঁটুর উপর রাখো। কিন্তু আবারও ঐ রকম করলে তিনি আমার হাত দুটি ধরে বলিলেন, আমাদেরকে এরূপ করিতে নিষেধ করা হয়েছে এবং হাতের তালু হাঁটুর উপর রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৩]
১০৮২. আবু ইয়াফুর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি এ একই সানাদে [উপরে বর্ণিত হাদীসটি] “ফানুহীনা আনহু” পর্যন্ত বর্ণনা করিয়াছেন। তবে তারা উভয়েই [ফানুহীনা আনহু] পরবর্তী অংশটুকু বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৬, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৪]
১০৮৩. মুসআব ইবনি সাদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [কোন এক সময়ে নামাজ আদায় করিতে] আমি রুকূতে গিয়ে হাত দুটি একত্রে মিলিয়ে দু উরুর মাঝে রাখলাম। তখন আমার পিতা আমাকে বলিলেন, আমরাও এরূপ করতাম। কিন্তু এরপর আমাদেরকে হাঁটুর উপর হাত রাখতে আদেশ করা হয়েছে।
[ইফা ১০৭৭, ইসে ১০৮৫]
১০৮৪. মুসআব ইবনি সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আমার পিতা {সাদ ইবনি আবু ওয়াক্কাস [রাদি.] }-এর পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছি। রুকূতে গিয়ে আমি এক হাতের আঙ্গুলসমূহ অন্য হাতের আঙ্গুলসমূহের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে হাত দুটি হাঁটুর মাঝে রাখলে তিনি আমার হাতে মৃদু আঘাত করিলেন। নামাজ শেষে তিনি বলিলেন, প্রথমে আমরা এরূপই করতাম। কিন্তু পরে আমাদেরকে হাঁটুর উপর রাখার নির্দেশ করা হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৮, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৬]
৬. অধ্যায়ঃ গোড়ালির উপর নিতম্ব রেখে বসা
১০৮৫. ত্বাউস [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] -কে দুপায়ের উপর নিতম্ব রেখে বসা [ইক্বআ করা] সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, এরূপ করা সুন্নাত। [এ কথা শুনে] আমি তাকে বললাম, এভাবে বসা তো মানুষের জন্য কষ্টকর। আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস বলিলেন, এটা তো বরং তোমাদের নবী [সাঃআঃ] -এর সুন্নাত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৭৯, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৭]
৭. অধ্যায়ঃ সলাতে কথা বলা নিষেধ এবং এর পূর্ব অনুমতির বিধান রহিতকরণ
১০৮৬. মুআবিয়াহ্ ইবনিল হাকাম আস্ সুলামী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সময় আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সাথে নামাজ আদায় করছিলামভ। ইতোমধ্যে [নামাজ আদায়কারীদের মধ্যে] কোন একজন লোক হাঁচি দিলে [জবাবে] আমি “ইয়ার্হামুকাল্ল-হ” [অর্থাৎ- আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন] বললাম। এতে সবাই রুষ্ট দৃষ্টিতে আমার প্রতি তাকাতে থাকল। তা দেখে আমি বললামঃ আমার মা আমার বিয়োগ ব্যথায় কাতর হোক। [অর্থাৎ-এভাবে আমি নিজেকে ভৎসনা করলাম]। কি ব্যাপার! তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছ যে? তখন তারা নিজ নিজ উরুতে হাত চাপড়াতে থাকল। [আমার খুব রাগ হওয়া সত্ত্বেও] আমি যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চায় তখন আমি চুপ করে রইলাম। পরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ শেষ করলে আমি তাঁকে সবকিছু বললাম। আমার পিতা ও মাতা তাহাঁর জন্য কুরবান হোক। আমি ইতোপূর্বে বা এর পরে আর কখনো অন্য কোন শিক্ষককে তাহাঁর চেয়ে উত্তম পন্থায় শিক্ষা দিতে দেখিনি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি আমাকে ধমকালেন না বা মারলেন না কিংবা বকাঝকাও করিলেন না। বরং বললেনঃ নামাজের মধ্যে কথাবার্তা ধরণের কিছু বলা যথোচিত নয়। বরং প্রয়োজনবশতঃ তাসবীহ, তাকবীর বা কুরআন পাঠ করিতে হইবে অথবা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যেরূপ বলেছেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ! আমি সবেমাত্র জাহিলিয়াত বর্জন করেছি এবং এরপর আল্লাহ আমাকে ইসলাম গ্রহণের তাওফীক দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা গণকদের কথায় বিশ্বাস করে। তিনি [সাঃআঃ] [এ কথা শুনে] বললেনঃ তুমি গণকদের কাছে যেয়ো না। সে বললঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা শুভ অশুভ লক্ষণ নির্ধারণ করে থাকে। তিনি বললেনঃ এটা তাদের হৃদয়ের বদ্ধমূল বিশ্বাস। এটি তাদেরকে [ভাল কাজ করিতে] বাধা না দেয়। হাদীস বর্ণনাকারী সাববাহ বলেছেন, তা যেন তোমাকে বাধা না দেয়। লোকটি বর্ণনা করিয়াছেন- আমি আবারও বললামঃ আমাদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা রেখা টেনে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করে থাকে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ একজন নবী এভাবে রেখা টানতেন। সুতরাং কারো রেখা যদি [নবীর রেখা] অনুরূপ হয় তাহলে তা ঠিক হইবে।{৪}
বর্ণনাকারী মুআবিয়াহ্ বলেন, আমার এক দাসী ছিল সে উহুদ ও জাও্ওয়ানিয়্যাহ্ এলাকায় আমার বকরীপাল চরাত। একদিন আমি হঠাৎ সেখানে গিয়ে দেখলাম তার বকরীপাল থেকে বাঘে একটি বকরী নিয়ে গিয়েছে। আমি তো অন্যান্য আদম সন্তানের মত একজন মানুষ। তাদের মত আমিও ক্ষোভ ও চপেটাঘাত করলাম। এরপর আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে আসলাম [এবং সব কথা বললাম] কেননা বিষয়টি আমার কাছে খুবই গুরুতর মনে হলো। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে [দাসী] মুক্ত করে দিব? তিনি বললেনঃ তাকে আমার কাছে নিয়ে আসো। সুতরাং আমি তাকে এনে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কাছে হাজির করলাম। তিনি তাঁকে [দাসীকে] জিজ্ঞেস করলেনঃ [বলো তো] আল্লাহ কোথায়? সে বলিল- আকাশে। নবী [সাঃআঃ] বলিলেন, [বলো তো] আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহর রসূল। তখন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও, সে একজন মুমিনাহ্ নারী।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮০, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৮]
{৪} খাত্ত্বাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, সে নবীর জন্য রেখা বিদ্যা ইল্মে নবূওয়্যাতের একটা অংশ ছিল। হাদীসের মর্মানুসারে তার সাথে সামঞ্জস্য হইতে হইবে ইল্মুল ইয়াকীন বা সুদৃঢ় অবগতির মাধ্যমে কোন ধারণার ভিত্তিতে নয়। আর এ শর্ত পাওয়া অসম্ভবপর বিধায় প্রকারান্তরে এটা হারামের হুকুমভুক্ত হয়েছে। এমনকি রেখা বিদ্যা মুবাহ হওয়া আমাদের শারীআতে রহিত হয়ে গেছে- এ ব্যাপারে আলিমগণের ঐকমত্য রয়েছে।
[শারহে মুসলিম-১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা]
১০৮৭. ইয়াহ্ইয়া ইবনি আবু কাসীর হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮১, ইসলামিক সেন্টার- ১০৮৯]
১০৮৮. আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতেন সে অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিলে তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর জবাব দিতেন কিন্তু [হাবশায় হিজরাতের পর] নাজাশীর কাছ থেকে আমরা ফিরে এসে তাঁকে [নামাজরত অবস্থায়] সালাম দিলে তিনি জবাব দিলেন না। তখন [নামাজ শেষে] আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি নামাজ আদায় করিতেন এমন অবস্থায় আমরা আপনাকে সালাম দিলে তার জবাব দিতেন। [কিন্তু আজকে আমাদের সালামের জবাব দিলেন না!] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বললেনঃ নামাজের মধ্যে নির্ধারিত করণীয় থাকে।{৫}
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮২, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯০]
{৫} ঈমাম নাবাবী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ নামাজরত অবস্থায় শব্দ বিনিময়ে সালামের জবাব দান নিষিদ্ব, তবে ইশারা দ্বারা জবাব্দান নিষিদ্ব নয়; বরং মুস্তাহাব। জাবির [রাদি.] -এর হাদীসে এর সাবিত রয়েছে। [শারহে মুসলিম-১ম খণ্ড ২০৪ পৃষ্ঠা]
১০৮৯. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৩, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯১]
১০৯০. যায়দ ইবনি আরকাম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা নামাজরত অবস্থায় কথা বলতাম। লোকে নামাজরত অবস্থায় তার পাশে [সলাতে] দাঁড়ানো অপর ব্যক্তির সাথে কথা বলত। এরপর আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ [আরবি]
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
“আর তোমরা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ অনুগত ও একনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াও” – [সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ২৩৮]। এ হুকুম অবতীর্ণ হওয়ার পর আমাদেরকে নামাজের মধ্যে চুপ থাকতে আদেশ দেয়া হলো এবং কথা বলিতে নিষেধ করা হলো।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৪, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯২]
১০৯১. ইসমাঈল ইবনি আবু খালিদ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৫, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৩]
১০৯২. জাবির ইবনূ আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক সময়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে কোন একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখলাম সওয়ারীতে আরোহণ করে [নাফ্ল নামাজ আদায়রত] অতিক্রম করিয়াছেন। কুতায়বাহ্ বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করছিলেন। জাবির ইবনি আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি [ফিরে আসার পর ঐ অবস্থায়] তাঁকে সালাম দিলে তিনি [সাঃআঃ] আমাকে ইশারা করিলেন [ইশারা দ্বারা সালামের জবাব দিলেন]। নামাজ শেষ করে তিনি [সাঃআঃ] আমাকে ডেকে বললেনঃ তুমি এইমাত্র আমাকে সালাম দিয়েছ। তখন আমি নামাজ আদায় করছিলাম। ঐ সময় তিনি [সাঃআঃ] পূর্ব দিকে মুখ করে ছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৬, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৪]
১০৯৩. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, বানী মুস্ত্বালিক্ব গোত্রের দিকে যাওয়ার সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখলাম তিনি [সাঃআঃ] উটের পিঠে বসে নামাজ আদায় করছেন। আমি তাঁকে বললাম [অর্থাৎ- যে কাজে পাঠিয়েছিলেন সে সম্পর্কে] কিন্তু তিনি [সাঃআঃ] আমাকে হাত দ্বারা এভাবে ইশারা করিলেন। বর্ণনাকারী যুহায়র ইবনি হারয্ তাহাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে {তিনি [সাঃআঃ] } কিভাবে ইশারা করেছিলেন তা দেখালেন। জাবির ইবনি আবদুল্লাহ বলেনঃ আমি তখন শুনেছিলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কিছু পড়ছেন এবং মাথা দ্বারা ইশারা করছেন। নামাজ শেষ হলে তিনি [সাঃআঃ] আমাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি তোমাকে যে জন্য পাঠিয়েছিলাম তার কি করেছ? আমি শুধু এ কারনে তোমার সাথে কথা বলিনি যে, আমি তখন নামাজ আদায় করেছিলাম।
হাদীসটির বর্ণনাকারী যুহ্য়র ইবনি হার্ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেনঃ কথাগুলো বলার সময় আবুয্ যুবায়র কাবার দিকে মুখ করে বসে ছিলেন। কিন্তু যখন তিনি [আবুয্ যুবায়র] হাত দিয়ে ইশারা দেখাচ্ছিলেন তখন কাবার দিকে মুখ না করে বানী মুস্তালিকের দিকে মুখ করে বলছিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৭, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৫]
১০৯৪. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা নবী [সাঃআঃ] -এর সাথে ছিলাম। তিনি [সাঃআঃ] আমাকে একটি কাজে পাঠালেন। আমি ফিরে এসে দেখিতে পেলাম তিনি [সাঃআঃ] তাহাঁর সওয়ারীর পিছে বসে কিবলাহ্ ছাড়া অন্যদিকে মুখ করে নামাজ আদায় করছেন। আমি তাঁকে সালাম দিলাম। কিন্তু তিনি [সাঃআঃ] আমার সালামের কোন জবাব দিলেন না। নামাজ শেষ করে বললেনঃ আমি নামাজ আদায় করছিলাম তাই তোমার সালামের কোন জবাব দিতে পারিনি। এছাড়া আর কিছুই আমাকে তোমার সালামের জবাব দেয়া থেকে বিরত রাখেনি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৮, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৬]
১০৯৫. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [এক সময়ে] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে কোন একটি কাজে পাঠিয়েছিলেন। এরপর তিনি হাম্মাদ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৮৯, ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৬]
৮. অধ্যায়ঃ সলাতে শায়ত্বনকে লানাত করা, শয়তান হইতে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং আমালে ক্বালীল [সামান্য কাজ] করা বৈধ
১০৯৬. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ গত রাতে এক দুষ্ট জিন আমার নামাজ নষ্ট করার জন্য আমার উপর আক্রমন করিতে শুরু করিল। তবে আল্লাহ তাআলা আমাকে তাকে কাবু করার শক্তি দান করিলেন। আমি তাকে গলা টিপে ধরেছিলাম। আমার ইচ্ছে হলো তাকে মাসজিদের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে রাখি যাতে সকাল বেলা তোমরা সবাই তাকে দেখিতে পাও। কিন্তু তখনই আমার স্মরণ হল আমার ভাই নবী সুলায়মানের দুআর কথা। তিনি [আঃ] দুআ করেছিলেনঃ [আরবি] “হে প্রভু; তুমি আমাকে এমন রাজত্ব দান করো যা আমার পরে আর কার জন্য যেন না হয়”- [সূরাহ্ সোয়াদ ৩৮ : ৩৫]। [অর্থাৎ- জিন, বাতাস ও পশু-পাখির ওপর রাজত্ব করার ক্ষমতা। তাই আমি তাকে বেঁধে রাখা থেকে বিরত থাকলাম।] অতঃপর আল্লাহ তাআলা জিনটিকে [আমার হাতে] লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দিলেন। ইবনি মানসূর, শুবাহ্, মুহাম্মাদ ইবনি যিয়াদ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯০,ইসলামিক সেন্টার- ১০৯৮]
১০৯৭. শুবাহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
উপরোক্ত সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে মুহাম্মাদ ইবনি জাফার বর্ণিত হাদীসে নবী [সাঃআঃ] কথা [আরবি] অর্থাৎ- “আমি তাকে গলা টিপে ধরেছিলাম” বর্ণিত হয়নি। আর আবু বকর ইবনি আবু শায়াবাহ্ বর্ণিত হাদীসে নবী [সাঃআঃ] -এর কথা [আরবি] বর্ণিত হয়েছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯১, ই.স.১০৯৯]
১০৯৮. আবুদ্ দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালে আমরা শুনতে পেলাম, তিনি বলেছেনঃ
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ
“আউযু বিল্লা-হি মিন্কা” {অর্থাৎ- আমি তোমার [অনিষ্ট] থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [আমরা শুনলাম] এরপর তিনি বলছেনঃ
أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ
“আল্ আনুকা বি লানাতিল্লা-হি” [অর্থাৎ-আমি তাকে লানাত করছি যেমন আল্লাহ লানাত করেছিলেন]। তিনি এ কথাগুলো তিনবার বলিলেন। এ সময় [যে সময় তিনি লানাত করছিলেন] তিনি হাত বাড়ালেন যেন কিছু ধরতে যাচ্ছেন। নামাজ শেষ করলে আমরা তাঁকে বললামঃ হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ] ! [আজ] আমরা নামাজের মধ্যে আপনাকে এমন কিছু কথা বলিতে শুনেছি যা ইতিপূর্বে আর কোন দিন বলিতে শুনিনি। আর আমরা দেখলাম যে আপনি হাতও বাড়িয়ে দিলেন। [এর কারন কি?] তিনি বললেনঃ আল্লাহর দুশমন ইবলীশ আমার মুখের উপর নিক্ষেপ করার জন্য দগদগে অগ্নি-শিখা নিয়ে এসেছিল। তাই আমি তিনবারঃ [আরবি] বললাম। এরপর তিনবার [আরবি] বললাম। এ কথাটিও আমি তিনবার বললাম। কিন্তু তবু সে পিছু হটল না। অবশেষে আমি তাকে পাকড়াও করিতে ইচ্ছা করলাম | আল্লাহ্র শপথ করে বলছি, আমাদের ভাই নবী সুলায়মান যদি দুআ না করে থাকতেন তাহলে সে সকাল পর্যন্ত বাঁধা থাকত। আর সকালবেলা মাদীনাবাসীদের ছেলে সন্তানেরা তাকে নিয়ে আনন্দ করত বা মজা করে খেলত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯২, ইসলামিক সেন্টার- ১১০০]
৯. অধ্যায়ঃ নামাজের শিশুদেরকে কাঁধে উঠানো যায়
১০৯৯. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজরত অবস্থায় তাহাঁর নাতনী আবুল আস ইবনির রাবী –এর ঔরশজাত কন্যা উমামাহ্ বিনতু যায়নাবকে কাঁধে উঠিয়ে নামাজ আদায় করেছিলেন। তিনি যখন দাঁড়াচ্ছিলেন তাকে [উমামাহ্ বিনতু যায়নাবকে] উঠিয়ে নিচ্ছিলেন। আবার যখন সাজদাতে যাচ্ছিলেন তখন নামিয়ে রাখছিলেন। ইয়াহ্ইয়া ইবনি ইয়াহ্ইয়া বলেন, [আমি এ হাদীসটি সম্পর্কে মালিককে জিজ্ঞেস করলে] মালিক বলেনঃ হ্যাঁ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১০১]
১১০০. আবু ক্বাতাদাহ্ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি নবী [সাঃআঃ] -কে দেখেছি, তিনি [সাঃআঃ] সলাতে লোকদের ঈমামতি করছেন আর তাহাঁর নাতনী আবুল আস ইবনির রাবী-এর ঔরসজাত কন্যা উমামাহ্-কে [রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর কন্যা যায়নাবের গর্ভজাত মেয়ে] তাহাঁর কাধের উপর রেখে ঈমামতি করিতে দেখেছি। তিনি [সাঃআঃ] যখন রুকুতে যাচ্ছেন তখন তাকে [কাঁধ থেকে] নামিয়ে রাখছেন, আবার সাজদাহ্ থেকে উঠার পড় পুনরায় কাঁধে উঠিয়ে নিচ্ছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১০২]
১১০১. আবু ক্বাতাদাহ্ আল আনসারী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমি দেখেছি, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সলাতে লোকদের ঈমামতি করছেন আর [তাহাঁর নাতনী] আবুল আস্ ইবনি রাবী-এর কন্যা উমামাহ্ [বিনতু যায়নাব] তাহাঁর কাঁধে বসে আছে। এমতাবস্থায় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সাজদাহ্ করার সময় তাকে নামিয়ে রাখছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৩]
১১০২. আবু ক্বাতাদাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আমরা মাসজিদে বসেছিলাম এমন সময় রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাদের কাছে আসলেন। এরপর অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিলেন। তবে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] ঐ সলাতে ঈমামতি করছেন সে কথা তিনি এ হাদীসে উল্লেখ করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৪]
১০.অধ্যায়ঃ সলাতে প্রয়োজনবশতঃ দু এক কদম চলা যায়
১১০৩. আবু হাযিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [আবু হাযিম] বলেছেনঃ সাহ্ল ইবনি সাদ-এর কাছে একদল লোক আসল এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -এর মিম্বার কী কাঠের তৈরি তা নিয়ে ঝগড়া করিতে শুরু করিল। তখন সাহ্ল ইবনি সাদ বলিলেন, আল্লাহর সপথ করে বলছিঃ মিম্বার কী কাঠের তৈরি ছিল এবং কে তা তৈরি করেছিল। তা আমি জানি। আর প্রথম যেদিন রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] উক্ত মিম্বারের উপর বসেছিলেন সেদিন আমি তাঁকে দেখেছিলাম। আবু হাযিম বলেন, আমি তখন তাকে বললামঃ হে আবু আব্বাস [সাহল ইবনি সাদ] ! বিষয়টি আমাদের কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন একজন মহিলাকে বলে পাঠালেন যে, তোমার কাঠ-মিস্ত্রি গোলামকে বল সে আমাকে কিছু কাষ্ঠ-অর্থাৎ কাষ্ঠ-নির্মিত আসন তৈরি করে দিক। এর উপরে উঠে আমি মানুষের সামনে বক্তব্য পেশ করব। সে সময় আবু হাযিম উক্ত মহিলার নামও উল্ল্যেখ করেছিলেন। সুতরাং ঐ মহিলার গোলাম এ তিন স্তর বিশিষ্ট মিম্বরটি তৈরি করে দিয়েছিল | আসনটি ছিল [মাদীনার] গাবাহ্ নামক বনের বন্য- ঝাউ কাঠ দিয়ে তৈরি। অতঃপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নির্দেশ দিলে তা এ স্থানে [মাসজিদে] স্থাপন করা হলো। সাহল্ ইবনি সাদ বলেনঃ আমি দেখলাম রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] – এর উপর উঠে দাঁড়ালেন এবং তাকবীর বলিলেন নামাজের জন্য। তাহাঁর সাথে সাথে লোকেরাও তাকবীর বলিল। এ সময় তিনি মিম্বর এর উপর ছিলেন। এরপর তিনি রুকু থেকে মাথা উঠালেন এবং পিছনের দিকে হেঁটে মিম্বার থেকে নামলেন এবং মিম্বারের গোড়াতেই [পাশেই] সাজদাহ্ করিলেন। এরপর আবার গিয়ে মিম্বারে উঠলেন এবং এভাবে নামাজ শেষ করে লোকদের দিকে ঘুরে বললেনঃ হে লোকজন; আমি এরূপ এজন্য করলাম যাতে তোমরা আমাকে অনুসরণ করিতে পারো এবং আমি কিভাবে নামাজ আদায় করি তা শিখে নিতে পার।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৫]
১১০৪. আবু হাযিম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আবু হাযিম বলেছেনঃ কিছু সংখ্যক লোক সাহ্ল ইবনি সাদ-এর কাছে আসলো। [অন্য সানদে] আবু বকর ইবনি আবু শায়বাহ্, যুহায়র ইবনি হার্ব ও ইবনি আবু উমর সুফ্ইয়ান ইবনি উয়াইনাহ্-এর মাধ্যমে আবু হাযিম থেকে বর্ণনা করিয়াছেন। আবু হাযিম বলেছেন যে , তারা সাহ্ল ইবনি সাদ-এর কাছে এসে তাকে জিজ্ঞেস করিল, নবী [সাঃআঃ] -এর মিম্বার তৈরি ছিল? এতুকু বর্ণনা করার পর ইবনি আবু হাযিম পূর্ব বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৮, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৬]
১১. অধ্যায়ঃ কোমরে হাত রেখে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১১০৫
আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি [সাঃআঃ] কাউকে কোমরে হাত রেখে নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। আর আবু বকরের বর্ণনায় নবী [সাঃআঃ] -এর পরিবর্তে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] শব্দ উল্লেখ আছে , তিনি বলেছেনঃ রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাউকে কোমরে হাত রেখে নামাজ আদায় করিতে নিষেধ করিয়াছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১০৯৯, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৭]
১২. অধ্যায়ঃ নামাজে কঙ্কর সরানো এবং মাটি সমান করা মাকরূহ
১১০৬. মুআয়ক্বীব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, মাসজিদের মধ্যে অর্থাৎ- নামাজরত অবস্থায় পাথর-টুকরা সরানো সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ] আলোচনা করিলেন। তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ যদি তোমাকে এরুপ [পাথর-টুকরা সরানোর কাজ] করিতেই হয়, তাহলে একবার মাত্র করিতে পার।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০০, ইসলামিক সেন্টার- ১১০৮]
১১০৭. মুআয়ক্বীব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, অন্যান্যদের নামাজরত অবস্থায় পাথর টুকরা সরানো সম্পর্কে নবী [সাঃআঃ] কে জিজ্ঞেস করছিলেন। জবাবে নবী [সাঃআঃ] বলছিলেনঃ একবার মাত্র সরাতে পার।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০১, ই.সে ১১০৯]
১১০৮. হিশাম [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
একই সানাদে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ সানাদে বলা হয়েছে যে, আমার নিকট মুআইক্বীব বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০২, ই.সে ১১১০]
১১০৯. মুআয়ক্বীব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেন] রাসুল্লাহ [সাঃআঃ] জনৈক ব্যক্তিকে নামাজরত অবস্থায় সাজদার জায়গায় [থেকে পাথর-টুকরা ইত্যাদি সরিয়ে] সমান করিতে দেখে বললেনঃ তোমাকে যদি এরুপ [পাথর-টুকরা ইত্যাদি সরিয়ে সাজদার জায়গায় সমান] করিতেই হয় তাহলে মাত্র একবারের জন্য করিতে পার।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০২, ই.সে ১১১১]
১৩. অধ্যায়ঃ নামাজে হোক বা নামাজের বাইরে মাসজিদে থুথু নিক্ষেপ করা নিষিদ্ধ
১১১০. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মাসজিদের ক্বিবলার দিকে দেয়ালে কাশি লেগে থাকা দেখিতে পেলেন। তিনি নখ দিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে উঠালেন। এরপর লোকদের সামনে গিয়ে বললেনঃ তোমরা কেউ যখন নামাজ আদায় করো তখন সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করো না। কারণ কেউ যখন নামাজ আদায় করে তখন তার সম্মুখে থাকেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৩, ই.সে ১১১২]
১১১১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেনঃ [একদিন] নবী [সাঃআঃ] মাসজিদের ক্বিবলাতে কাশি বা শিকনি দেখিতে পেলেন কথাটা উল্লেখিত হয়েছে। এরপর তারা মালিক বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৪, ই.সে ১১১৩]
১১১২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেন:] নবী [সাঃআঃ] ক্বিবলায় [ক্বিবলার দিকের দেয়ালে গায়ে] কাশি বা থুথু লেগে আছে দেখিতে পেলেন। তিনি একটি পাথরের টুকরা দ্বারা ঘষে ঘষে তা উঠিয়ে ফেললেন। এরপর মাসজিদের মধ্যে তিনি কাউকে ডান দিকে কিংবা সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করিতে নিষেধ করিলেন এবং বললেনঃ [থুথু নিক্ষেপ প্রয়োজন হলে] সে যেন বা পায়ের নিচে নিক্ষেপ করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৫, ই.সে ১১১৪]
১১১৩. আবু হুরায়রাহ্ ও আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] থুথু বা কাশি দেখিতে পেলেন। [অবশিষ্ট] উয়াইনাহ্ বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৬, ই.সে ১১১৫]
১১১৪. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] নবী [সাঃআঃ] ক্বিবলার দেয়ালে [মাসজিদের ক্বিবলার দিকের দেয়ালে গাত্রে] থুথু অথবা শ্লেষ্মা অথবা কাশি দেখিতে পেলেন এবং ঘষে ঘষে তা উঠিয়ে ফেললেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৭, ই.সে ১১১৬]
১১১৫. আবু হুরায়রাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেন] , রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একদিন মাসজিদের ক্বিবলার দিকে [ক্বিবলার দিকে দেয়ালে] থুথু দেখিতে পেলেন। তিনি [সাঃআঃ] তখন লোকদের কাছে এসে বললেনঃ তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা কেউ তার প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে থুথু নিক্ষেপ করে। কেউ তোমাদের মুখের উপর দাঁড়িয়ে মুখের উপর থুথু নিক্ষেপ করুক এটা কি তোমরা পছন্দ করিবে? তোমাদের কাউকে [মাসজিদে] থুথু নিক্ষেপ করিতে হলে সে যেন বাঁ দিকে পায়ের নিচে থুথু নিক্ষেপ করে। আর যদি এরুপ করার অবকাশ না পায় তাহলে যেন এরূপ করে। ক্বাসিম ইবনি ইবরাহীম তা এভাবে করে দেখিয়ে দিলেন যে, তিনি কাপড়ে থুথু ফেললেন এবং কাপড়খানা ঘষলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৮, ই.সে ১১১৭]
১১১৬. আবু হুরায়রাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে ইবনি উলাইয়্যাহ্ বর্ণিত হাদিসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন, তবে হুশায়ম বর্ণিত হাদীসে কতটুকু কথা অতিরিক্ত আছে, আবু হুরায়রাহ [রাদি.] বললেনঃ আমি যেন এখনো দেখিতে পাচ্ছি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কাপড় ঘষছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১০৯, ই.সে ১১১৮]
১১১৭. .আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমরা কেউ যখন নামাজ আদায় করো তখন যেন সে তার রব বা প্রভুর সাথে কানে কথা বলে। সুতরাং সে যেন সামনে বা ডান দিকে থুথু নিক্ষেপ না করে। বরং বাঁ দিকে বাঁ পায়ের নীচে থুথু নিক্ষেপ করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১০, ই.সে ১১১৯]
১১১৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ মাসজিদের মধ্যে থুথু ফেলা পাপের কাজ। আর ঐ থুথু মাটিতে পুঁতে দেয়াই এর কাফফারাহ্।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১১, ই.সে ১১২০]
১১১৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কে বলিতে শুনেছি। তিনি [সাঃআঃ] বলেছেন মাসজিদের মধ্যে থুথু ফেলা পাপের কাজ। আর তা পুঁতে ফেলা হলো এর কাফফারাহ্।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১২, ই.সে ১১২১]
১১২০. আবু যার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, আমার উম্মাতের সমস্ত আমাল বা কাজ-কর্ম [ভাল-মন্দ উভয়ই] আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল। আমি দেখলাম তাদের সমস্ত উত্তম কাজের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দুরীকরণও একটা উত্তম কাজ। আর আমি এও দেখলাম যে, তাদের খারাপ আমালের মধ্যে রয়েছে মাসজিদের মধ্যে কাশি বা থুথু ফেলা এবং তা মিটিয়ে না ফেলা।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৩, ই.সে ১১২২]
১১২১. আবদুল্লাহ ইবনি শিখখীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর পিছনে নামাজ আদায় করেছি। আমি দেখলাম তিনি কাশি ফেলে তা জুতা দিয়ে ঘষে [মাটির সাথে মিশিয়ে] দিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৪, ই.সে ১১২৩]
১১২২. আবদুল্লাহ ইবনি শিখখীর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি নবী [সাঃআঃ] এর সাথে নামাজ আদায় করিয়াছেন। তিনি দেখেছেন, নবী [সাঃআঃ] কাশি ফেলেছেন এবং তা বাঁ পায়ের জুতা দিয়ে ঘষে দিয়েছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৫, ই.সে ১১২৪]
১৪.অধ্যায়ঃ জুতা পরিধান করে নামাজ আদায় করা বৈধ
১১২৩. আবু মাসলামাহ্ সাঈদ ইবনি ইয়াযীদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] -কে জিজ্ঞাস করলামঃ রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কি জুতা পরে নামাজ আদায় করিতেন? জবাবে তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৬, ই.সে ১১২৫]
১১২৪. আবু মাসলামাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেছেন, আনাস [ইবনি মালিক] [রাদি.] -কে অনুরূপ জিজ্ঞাস করলাম।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৭, ই.সে ১১২৬]
১৫. অধ্যায়ঃ নকশা বিশিষ্ট কাপড়ে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১১২৫. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদিন নবী [সাঃআঃ] একখানা নকশা অঙ্কিত কাপড়ের মধ্যে নামাজ আদায় করিলেন এবং [নামাজ শেষে] বলিলেন, এ কাপড়ের নকশা ও কারুকার্য আমার মনোযোগ আকর্ষণ করে নিয়েছে। এটা নিয়ে আবু জাহম-এর কাছে যাও এবং তার সাদামাটা মোটা চাদরখানা আমাকে এনে দাও।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৮, ই.সে ১১২৭]
১১২৬. আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একখানা নকশা ও কারুকার্য করা চাদরে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] নামাজ আদায় করিতে দাঁড়ালেন। নামাজের মধ্যে তিনি এর নকশার প্রতি দেখিতে থাকেলন। [অর্থাৎ–কাপড়খানার নকশা ও কারুকার্য নামাজে তার একাগ্রতা নষ্ট করে দিলো।] তাই নামাজ শেষে তিনি [সাঃআঃ] বললেনঃ এ চাদরখানা নিয়ে আবু জাহম ইবনি হুযায়ফাহ-এর কাছে যাও। আর আমাকে তার কম্বলখানা এনে দাও। কারণ এ চাদরখানা এখন নামাজের মধ্যে আমাকে অন্যমনস্ক করে ফেলছে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১১৯, ই.সে ১১২৮]
১১২৭. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
[তিনি বলেছেনঃ ] নবী [সাঃআঃ] -এর একখানা নক্শা করা চাদর ছিল। এ চাদর পরে নামাজ আদায় করিতে তাহাঁর মন সেদিকে আকৃষ্ট হত। সুতরাং তিনি উক্ত চাদর আবু জাহ্মকে দিয়ে তাহাঁর সাদামাটা চাদরখানা নিলেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২০, ইসলামিক সেন্টার- ১১২৯]
১৬. অধ্যায়ঃ ক্ষুধার্ত অবস্থায় খাবার সামনে আসলে এবং তৎক্ষণাৎ খাবার ইচ্ছা থাকলে তা না খেয়ে ও পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে নামাজ আদায় করা মাকরূহ
১১২৮. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রাতের খাবার উপস্থিত থাকিবে, এমন অবস্থায় যদি নামাজের ইক্বামাতও দেয়া হয় তাহলে প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২১, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩০]
১১২৯. আনাস ইবনি মালিক [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ খাবার যদি সামনে হাজির করা হয় আর মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেলেও নামাজ আদায়ের পূর্বেই খাবার খেয়ে নিবে। খাবার রেখে নামাজের জন্য ব্যস্ত হয়ো না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২২, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩১]
১১৩০. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে আনাস [রাদি.] বর্ণিত আনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২৩, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩২]
১১৩১. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ তোমাদের কারো সামনে রাতের খাবার এসে গিয়েছে নামাজের ইক্বামাত হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থা হলে সে খাবার দিয়েই শুরু করিবে। [অর্থাৎ- প্রথমে খাবার খেয়ে নিবে] আবার খাবার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজের জন্য ব্যস্ত হইবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২৪, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩৩]
১১৩২. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে পূর্বোক্ত হাদীসের অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২৫, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩৪]
১১৩৩. ইবনি আবু আতীক্ব [আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহ্মান ইবনি আবু বকর] [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, [একদিন] আমি এবং ক্বাসিম [ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আবু বকর] আয়িশাহ্ [রাদি.] -এর কাছে একটি হাদীস বর্ণনা করলাম। তবে ক্বাসিম বর্ণনায় অধিক ভুল-ত্রুটি করিতেন। তিনি ছিলেন উম্মু ওয়ালাদ বা দাসীর পুত্র। আয়িশাহ্ [রাদি.] তাকে বললেনঃ কি ব্যাপার ! আমার এ ভাতিজা আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদ ইবনি আবদুর রহ্মান ইবনি আবু বকর যেভাবে বর্ণনা করছে সেভাবে বর্ণনা করছ না কেন? তবে আমি জানি এরূপ কি করে হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনি মুহাম্মাদকে শিক্ষা দিয়েছে, তার মা [যিনি স্বাধীনা] আর তোমাকে তোমার মা [যিনি ক্রীতদাসী ছিলেন] শিক্ষা দিয়েছে। একথা শুনে ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এবং আয়েশাহ [রাদি.] -এর প্রতি তীব্র ঘৃণা বিদ্বেষ প্রকাশ করিলেন। এরপর আয়েশাহ [রাদি.] -এর খাবার [দস্তরখানা] আসা [প্রস্তুতি] দেখে উঠে দাঁড়ালেন। আয়েশাহ [রাদি.] তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কোথা যাচ্ছ? তিনি [ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ] বলিলেন, আমি নামাজ আদায় করব। আয়েশাহ [রাদি.] বললেনঃ বসো, অকৃতজ্ঞ কোথাকার। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] -কে বলিতে শুনেছি খাবার হাজির হলে কোন নামাজ আদায় চলবে না। কিংবা পায়খানা-পেশাবের বেগ নিয়ে নামাজ আদায় চলবে না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২৬, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩৫]
১১৩৪. আয়েশাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নবী [সাঃআঃ] থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তবে এ হাদীসে তিনি ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ সম্পর্কিত ঘটনাটি বর্ণনা করেননি।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১১২৭, ইসলামিক সেন্টার- ১১৩৬]
Leave a Reply