সত্য মিথ্যা । উপদেশ মূলক হাদিস সমূহ

সত্য মিথ্যা । উপদেশ মূলক হাদিস সমূহ

সত্য মিথ্যা । উপদেশ মূলক হাদিস সমূহ , এই অধ্যায়ে মোট (৪৮-৬৯) =২২টি হাদীস >> উপদেশ হাদিস এর মুল সুচিপত্র দেখুন

অধ্যায়-৫ঃ সত্য-মিথ্যা

পরিচ্ছেদঃ সত্য-মিথ্যা

৪৮. বুরায়দা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা মুনাফিক মানুষকে নেতা হিসাবে গ্রহণ কর না। যদি নেতা মুনাফিক হয়, তাহলে তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করলে। অন্য বর্ণনায় আছে যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যুক মুনাফিক ব্যক্তিকে বলে, হে আমার নেতা! তখন সে তার প্রতিপালককে রাগান্বিত করিল

[আবু দাউদ হাদিস/৪৯৭৭; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৭৫]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৪৯. আবু উমামা বাহেলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম [সাঃআঃ] বলেছেন, আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘর নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে তর্ক পরিহার করে হক হলেও। আর একটি ঘর জান্নাতের মাঝামাঝিতে নিয়ে দেয়ার জন্য যামীন, যে মিথ্যা পরিহার করে মযাক করে হলেও এবং আরও একটি ঘর জান্নাতের সর্বোচ্চে নিয়ে দেয়ার জন্য যিম্মাদার, যে তার চরিত্রকে সুন্দর করিবে

[আবু দাউদ হাদিস/৪৮০০; বায়াহাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৭৯]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫০. আব্দুর রহমান ইবনি হারিছ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা একদা নবী করীম [সাঃআঃ]-এর নিকটে ছিলাম। তিনি ওযূর পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে হাত ডুবালেন এবং ওযূ করিলেন। আমরা তাঁকে অনুসরণ করলাম এবং তাহাঁর নিকট হইতে অঞ্জলী ভরে ওযূর পানি নিলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা এ কাজ করিতে উৎসাহিত হলে কেন? আমরা বললাম, এটা হল আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের ভালবাসা। তিনি বলিলেন, তোমরা যদি চাও যে, আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূল তোমাদেরকে ভালবাসবেন তাহলে তোমাদের নিকট আমানত রাখা হলে, তা প্রদান কর। কথা বললে, সত্য বল। তোমাদের প্রতিবেশীর সাথে ভাল আচরণ কর

[ত্বাবারাণী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৮০]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫১. আব্দুল্লাহ ইবনি ওমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যখন তোমার মাঝে চারটি জিনিস থাকিবে, তখন দুনিয়ার সবকিছু হারিয়ে গেলেও তোমার কোন সমস্যা নেই। [১] আমানত রক্ষা করা [২] সত্য কথা বলা [৩] সুন্দর চরিত্র [৪] বৈধ রুযী

[আহমাদ, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৮১]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫২. হাসান ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাঃআঃ] থেকে অবগত হয়েছি, তিনি বলেছেন, তুমি সন্দেহযুক্ত কথা ও কর্ম ছেড়ে যাতে সন্দেহ নেই সে দিকে ফিরে যাও। নিশ্চয়ই সত্য প্রশান্তির নাম এবং মিথ্যা সন্দেহ ও অশান্তির নাম

[তিরমিজি, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৮২]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৩. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ]-কে বলা হল, সবচেয়ে ভাল মানুষ কে? তিনি বলেন, প্রত্যেক হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তরের অধিকারী এবং সত্য কথার অধিকারী ব্যক্তি সবচেয়ে উত্তম মানুষ। ছাহাবীগণ বলিলেন, আমরা সত্য কথার অধিকারী জানি। কিন্তু হিংসা-বিদ্বেষ মুক্ত অন্তর কি জিনিস তা জানি না। তিনি বলিলেন, যে ব্যক্তি স্বচ্ছ ও পরহেযগার। যার মধ্যে [১] পাপ নেই, পাপ হলেই ক্ষমা চায় [২] সীমালংঘন নেই [৩] খিয়ানত নেই [৪] হিংসা নেই

[ইবনি মাজাহ হাদিস/৪২১৬]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৪. আবুবকর ছিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা সত্য গ্রহণ কর। সত্য নেকীর সাথে রয়েছে। আর উভয়টি জান্নাতে যাবে। আর মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। মিথ্যা পাপের সাথে রয়েছে। উভয়ই জাহান্নামে যাবে

[ইবনি হিব্বান, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪১৮৬]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৫. আবুবকর ছিদ্দীক [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয়ই মিথ্যা ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে

[বায়হাক্বী কুবরা হাদিস/২০৬১৫]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৬. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যে তার বাচ্চাকে বলল, আসো নাও। অতঃপর তাকে কিছু দিল না। সে একজন মিথ্যুক মহিলা

[আহমাদ হাদিস/৯৮৩৫; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪২০৭]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৭. আব্দুল্লাহ ইবনি আমের [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একদা আমার মা আমাকে ডাকলেন, তখন রাসূল [সাঃআঃ] আমাদের বাড়িতে বসেছিলেন, সে বলল, আস তোমাকে কিছু দিব। রাসূল [সাঃআঃ] তাকে বলিলেন, তুমি তাকে কি দিবে? সে বলল, আমি তাকে খেজুর দিব। তিনি বলিলেন, মনে রেখ, তুমি যদি তাকে কিছু না দাও, তাহলে তুমি একজন মিথ্যুক মহিলা বলে লেখা হইবে

[বায়হাক্বী, আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪২০৮; মেশকাত হাদিস/৪৮৮২]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৮. বাহয ইবনি হাকীম তার পিতা হইতে বর্ণিতঃ

তার দাদা বলেন, আমি রাসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, সেই ব্যক্তির জন্য ধ্বংস নিশ্চিত যে মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা কথা বলে। তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস

[তিরমিজি হাদিস/২৩১৫; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪২০৯; মেশকাত হাদিস/৪৮৩৪]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৫৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না। তাদের পবিত্র করবেন না। তাদের দিকে দয়ার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। [১] বৃদ্ধ ব্যভিচারকারী [২] মিথ্যুক শাসক [৩] অহংকারী গরীব

ব [মুসলিম হাদিস/১০৭; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪২১০; মেশকাত হাদিস/৫১০৯]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬০. আম্মার ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যার দুনিয়াতে দুটি মুখ হইবে, ক্বিয়ামতের মাঠে তার মুখে আগুনের দুটি জিহ্বা হইবে

[আবু দাউদ হাদিস/৪৮৭৩; আত-তারগীব ওয়াত তারহীব হাদিস/৪২১৫]। পরকালে আগুনের জিহ্বা হইবে তাদের, যারা মানুষের সাথে মিথ্যা কথা বলে, চোগলখুরী করে ও পরনিন্দা করে। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬১. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] রাসূল [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেছেন, বড় বড় কবীরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, পিতামাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম করা [বুখারী]। কিন্তু আনাসের বর্ণনায় মিথ্যা কসম-এর পরিবর্তে মিথ্যা সাক্ষ্য শব্দ রয়েছে

[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৪৬]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬২. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম [সাঃআঃ] বলেছেন, মুনাফিকের আলামত হচ্ছে তিনটা- যখন সে কথা বলে, মিথ্যা বলে, ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে এবং যখন তার নিকট কোন কিছু [জিনিস বা কথা] আমানত রাখা হয়, তাতে সে খিয়ানত করে। মুসলিমের বর্ণনায় এটাও রয়েছে যে, যদিও সে ছালাত আদায় করে, ছিয়াম পালন করে এবং মনে করে যে, সে মুসলমা

ন [মুত্তাফাক আলাইহ, মেশকাত হাদিস/৪৯]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৩. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নবী করীম [সাঃআঃ] বলেছেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে থাকিবে, সে পাক্কা মুনাফিক এবং যার মধ্যে এর একটা থাকিবে, তার মধ্যে মুনাফিকীর একটা স্বভাব থাকিবে, যে পর্যন্ত না সে তা পরিত্যাগ করিবে। [১] যখন তার নিকট কিছু আমানত রাখা হয়, তাতে সে খিয়ানত করে, [২] সে যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে, [৩] যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে এবং [৪] যখন কারো সাথে ঝগড়া করে, তখন সে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে

[মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মেশকাত হাদিস/৫০]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৪. সুফিয়ান ইবনি আব্দুল্লাহ ছাকাফী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] আমার জন্য যে জিনিসগুলি ভয়ের কারণ বলে আপনি মনে করেন তন্মধ্যে সর্বাধিক ভয়ংকর কোনটি? বর্ণনাকারী বলেন, তখন তিনি নিজের জিহ্বা ধরলেন এবং বলিলেন, এটা

[তিরমিজি, মেশকাত হাদিস/৪৮৪৩]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৫. উবাদাহ বিন ছামেত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা নিজেদের পক্ষ হইতে আমাকে ছয়টি বিষয়ের জামানত দাও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব। [১] তোমরা যখন কথাবার্তা বল, তখন সত্য বলবে। [২] যখন ওয়াদা কর, তা পূর্ণ করিবে। [৩] যখন তোমাদের কাছে আমানত রাখা হয়, তা আদায় করিবে। [৪] নিজেদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করিবে। [৫] স্বীয় দৃষ্টিকে অবনমিত রাখবে এবং [৬] স্বীয় হস্তকে [অন্যায় কাজ হইতে] বিরত রাখবে

[আহমাদ, বায়হাক্বী, মেশকাত হাদিস/৪৮৭০, সনদ হাসান]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৬. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, নিশ্চয়ই সত্য একটি পুণ্যময় কাজ। আর পুণ্য জান্নাতের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে, তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যনিষ্ঠ বলে লিখে নেয়া হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা হচ্ছে পাপকাজ। পাপাচার জাহান্নামের পথ দেখায়। যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লিখে নেয়া হয়

[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত বাংলা ৯ম খণ্ড হাদিস/৪৬১৩]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৭. সাহল ইবনি সাদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কাছে [এই অঙ্গীকার করিবে যে, সে] তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত বস্তুর এবং তার দুপায়ের মধ্যস্থিত বস্তুর যিম্মাদার হইবে, আমি তার জন্য জান্নাতের যিম্মাদার হব

[বুখারী, বঙ্গানুবাদ মেশকাত হাদিস/৪৬০১]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৮. হইতে বর্ণিতঃ

সামুরা ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ]-এর অভ্যাস ছিল তিনি ফজরের ছালাত শেষে প্রায় আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং জিজ্ঞেস করিতেন, তোমাদের কেউ আজ রাত্রে কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? বর্ণনাকারী বলেন, আমাদের কেউ স্বপ্ন দেখে থাকলে সে তাহাঁর নিকট বলত। আর তিনি আল্লাহর হুকুম মোতাবেক তার তাবীর বর্ণনা করিতেন। যথারীতি একদিন সকালে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের কেউ [আজ রাত্রে] কোন স্বপ্ন দেখেছে কি? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বলিলেন, কিন্তু আমি দেখেছি। আজ রাত্রে দুই ব্যক্তি আমার নিকট আসল এবং তারা উভয়ে আমার হাত ধরে একটি পবিত্র ভূমির দিকে [সম্ভবত তা শাম বা সিরিয়ার দিকে] নিয়ে গেল। দেখলাম, এক ব্যক্তি বসে আছে আর অপর এক ব্যক্তি লোহার সাঁড়াশি হাতে দাঁড়ানো। সে তা উক্ত বসা ব্যক্তির গালের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং তা দ্বারা চিরে গর্দানের পিছন পর্যন্ত নিয়ে যায়। অতঃপর তার দ্বিতীয় গালের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করে। ইত্যবসরে প্রথম গালটি ভাল হয়ে যায়। আবার সে [প্রথমে যেভাবে চিরেছিল] পুনরায় তাই করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। সম্মুখের দিকে চললাম।

অবশেষে আমরা এমন এক ব্যক্তির কাছে এসে পৌঁছলাম, যে ঘাড়ের উপর চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছে, আর অপর এক ব্যক্তি একখানা ভারী পাথর নিয়ে তার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। সে তার আঘাতে শায়িত ব্যক্তির মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করছে। যখনই সে পাথরটি নিক্ষেপ করে [মাথা চুর্ণ-বিচুর্ণ করে] তা গড়িয়ে দূরে চলে যায়, তখনই সে লোকটি পুনরায় পাথরটি তুলে আনতে যায় সে ফিরে আসার পূর্বে ঐ ব্যক্তির মাথাটি পূর্বের ন্যায় ঠিক হয়ে যায় এবং পুনরায় সে তা দ্বারা তাকে আঘাত করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। অবশেষে একটি গর্তের নিকট এসে পৌঁছলাম, যা তন্দুরের মত ছিল। তার উপর অংশ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশটি ছিল প্রশস্ত। তার তলদেশে আগুন প্রজ্জ্বলিত ছিল। আগুনের লেলিহান শিখা যখন উপরের দিকে উঠত, তখন তার ভিতরে যারা রয়েছে তারাও উপরে উঠে আসত এবং উক্ত গর্ত হইতে বাইরে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হত আর যখন অগ্নিশিখা কিছুটা শিথিল হত, তখন তারাও পুনরায় ভিতরের দিকে চলে যেত। তার মধ্যে রয়েছে কতিপয় উলঙ্গ নারী ও পুরুষ। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? তারা উভয়ে বলল, সামনে চলুন, সুতরাং সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম এবং একটি রক্তের নহরের নিকট এসে পৌঁছলাম। দেখলাম, তার মধ্যস্থলে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছে এবং নহরের তীরে একজন লোক দণ্ডায়মান। আর তার সম্মুখে রয়েছে প্রস্তরখণ্ড। নহরের ভিতরের লোকটি যখন তা থেকে বের হওয়ার উদ্দেশ্যে কিনারার দিকে অগ্রসর হইতে চায়, তখন তীরে দাঁড়ানো লোকটি ঐ লোকটির মুখ লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে এবং সে লোকটিকে ঐ স্থানে ফিরিয়ে দেয় যেখানে সে ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কি? সঙ্গীদ্বয় বলল, সামনে চলুন। আমরা সম্মুখে অগ্রসর হয়ে শ্যামল সুশোভিত একটি বাগানে পৌঁছলাম। বাগানে ছিল একটি বিরাট বৃক্ষ। আর উক্ত বৃক্ষটির গোড়ায় উপবিষ্ট ছিলেন, একজন বৃদ্ধ লোক এবং বিপুল সংখ্যক বালক। এ বৃক্ষটির সন্নিকটে আরেক ব্যক্তিকে দেখিতে পেলাম, যার সম্মুখে রয়েছে আগুন, যাকে সে প্রজ্বলিত করছে। এরপর আমার সঙ্গীদ্বয় আমাকে ঐ বৃক্ষের উপরে আরোহণ করালো এবং সেখানে তারা আমাকে বৃক্ষরাজির মাঝখানে এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যে, এরূপ সুন্দর ও মনোরম ঘর আমি আর কখনো দেখিনি। তার মধ্যে ছিল কতিপয় বৃদ্ধ, যুবক, নারী ও বালক। অনন্তর তারা উভয়ে আমাকে সে ঘর হইতে বের করে বৃক্ষের আরও উপরে চড়ালো এবং এমন একখানা গৃহে প্রবেশ করালো যা প্রথমটি হইতে সমধিক সুন্দর ও উত্তম। তাতেও দেখলাম, কতিপয় বৃদ্ধ ও যুবক। অনন্তর আমি উক্ত সঙ্গীদ্বয়কে বললাম, আপনারা উভয়েই তো আমাকে আজ সারা রাতে অনেক কিছু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখালেন। এখন বলেন, আমি যা কিছু দেখেছি তার তাৎপর্য কি? তারা উভয়ে বলল, হ্যাঁ, [আমরা তা জানাবো]। ঐ যে এক ব্যক্তিকে দেখেছেন সাঁড়াশি দ্বারা যার গাল চিরা হচ্ছে, সে মিথ্যাবাদী, সে মিথ্যা বলত এবং তার নিকট হইতে মিথ্যা রটানো হত। এমনকি তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত। অতএব তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণ করা হইবে, যা আপনি দেখেছেন। আর যে ব্যক্তির মস্তক পাথর মেরে ঘায়েল করিতে দেখেছেন, সে ঐ ব্যক্তি, আল্লাহ তাআলা যাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলেন, কিন্তু সে কুরআন হইতে গাফেল হয়ে রাত্রে ঘুমাতো এবং দিনেও তার নির্দেশ মোতাবেক আমল করত না। সুতরাং তার সাথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঐ আচরণই করা হইবে, যা আপনি দেখেছেন। আর [আগুনের] তন্দুরে যাদেরকে দেখেছেন, তারা হল যেনাকারী [নারী-পুরুষ]। আর ঐ ব্যক্তি যাকে [রক্তের] নহরে দেখেছেন, সে হল সুদখোর। আর ঐ বৃদ্ধ ব্যক্তি যাকে একটি বৃক্ষের গোড়ায় উপবিষ্ট দেখেছেন, তিনি হলেন হযরত ইবরাহীম [আঃ] তাহাঁর চতুস্পার্শ্বের শিশুরা হল মানুষের সন্তানাদি। আর যে লোকটিকে অগ্নিকুণ্ড প্রজ্বলিত করিতে দেখেছেন, সে হল দোযখের দারোগা মালেক। আর প্রথম যে ঘরটিতে আপনি প্রবেশ করেছিলেন, তা [জান্নাতের মধ্যে] সর্বসাধারণ মুমিনদের গৃহ। আর যে ঘর যে পরে দেখেছেন, তা শহীদদের ঘর। আর আমি হলাম, জিব্রাঈল এবং ইনি হলেন মীকাঈল। এবার আপনি মাথা উপরের দিকে তুলে দেখুন। তখন আমি মাথাটি তুলে দেখলাম, যেন আমার মাথার উপরে মেঘের মত কোন একটি জিনিস রয়েছে। অপর এক বর্ণনায় আছে, একের পর এক স্তরবিশিষ্ট সাদা মেঘের মত কোন জিনিস দেখলাম। তাঁরা বলিলেন, তা আপনারই বাসস্থান। আমি বললাম, আমাকে সুযোগ দিন আমি আমার ঘরে প্রবেশ করি। তারা বলিলেন, এখনও আপনার হায়াত বাকী আছে, যা আপনি এখনো পূর্ণ করেননি। আপনার যখন নির্দিষ্ট হায়াত পূর্ণ হইবে, তখন আপনি আপনার বাসস্থানে প্রবেশ করবেন [বুখারী, বাংলা মেশকাত হাদিস/৪৪১৬]। এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যারা মিথ্যা কথা বলবে, লোহার সাঁড়াশি দ্বারা তার গাল চিরে ফেলা হইবে।

সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস

৬৯. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তিনটি কাজ মানুষকে রক্ষা করে এবং তিনটি কাজ মানুষকে ধ্বংস করে। রক্ষাকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- [১] প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা [২] সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টিতে হক কথা বলা এবং [৩] সচ্ছলতায় ও অসচ্ছলতায় মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা। আর ধ্বংসকারী কাজ তিনটি হচ্ছে- [১] প্রবৃত্তির অনুসরণ করা [২] কৃপণতাকে মেনে নেওয়া এবং [৩] আত্ম-অহংকার করা। আর এটিই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন

[বায়হাক্বী, মেশকাত হাদিস/৫১২২, সনদ হাসান]। সত্য মিথ্যা -এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস


Posted

in

by

Comments

One response to “সত্য মিথ্যা । উপদেশ মূলক হাদিস সমূহ”

Leave a Reply