শিরক বিষয়ক উপদেশ মুলক গুরুত্তপূর্ণ হাদিস
শিরক বিষয়ক উপদেশ মুলক গুরুত্তপূর্ণ হাদিস , এই অধ্যায়ে মোট (১৩৬-১৬২) ২৭ টি হাদীস >> উপদেশ হাদিস এর মুল সুচিপত্র দেখুন
অধ্যায়-১১ঃ শিরক
পরিচ্ছেদঃ শিরক
১৩৬. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করিল, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর নিকটে কোন গোনাহটি সবচেয়ে বড়? তিনি বলিলেন, আল্লাহর কোন সমকক্ষ সাব্যস্ত করা। অথচ তিনি তোমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। লোকটি বলল, তারপর কোনটি? তিনি বলিলেন, তোমার সন্তানকে হত্যা করা এই ভয়ে যে, সে তোমার সাথে খাবে [অর্থাৎ দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা]। সে বলল, তারপর কোনটি? তিনি বলিলেন, প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে তোমার ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া। রাসূল [সাঃআঃ]-এর একথারই সত্যায়ন করে আল্লাহ পাক [নেক্কার লোকদের প্রশংসায় আয়াত নাযিল করেন, আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহ্বান করে না এবং যারা অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করে না যাকে আল্লাহ হারাম করিয়াছেন এবং যারা ব্যভিচার করে না
[ফুরক্বান ৬৮; বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৪৯]। শিরক – এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩৭. আব্দুল্লাহ ইবনি আমর ইবনিল আছ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরশাদ করিয়াছেন যে, কাবীরা গোনাহ সমূহ হল- [১] আল্লাহর সাথে শরীক করা [২] পিতামাতার অবাধ্য হওয়া [৩] মানুষ হত্যা করা এবং [৪] মিথ্যা শপথ করা [বুখারী হাদিস/৬৬৭৫]। কিন্তু আনাস [রাদি.]-এর বর্ণনায় মিথ্যা শপথ-এর বদলে মিথ্যা সাক্ষ্য শব্দ এসেছে
[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫১]। শিরক – এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩৮. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসকারী বিষয় হইতে দূরে থাকিবে। ছাহাবীগণ বলিলেন, সেগুলি কী? আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, [১] আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করা [২] জাদু করা [৩] অন্যায়ভাবে কোন মানুষকে হত্যা করা, যা আল্লাহ হারাম করিয়াছেন [৪] সুদ খাওয়া [৫] ইয়াতীমের মাল [অন্যায়ভাবে] ভক্ষণ করা [৬] জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং [৭] সরলা নির্দোষ মুমিন মহিলাদের নামে ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া
[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫২]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৩৯. মুআয বিন জাবাল [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমাকে ১০টি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, [১] আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করিবে না। যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয় [২] তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হইবে না। যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার ও মাল-সম্পদ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন [৩] ইচ্ছাকৃতভাবে কখনো ফরয ছালাত ত্যাগ করিবে না। তার পক্ষে আল্লাহর যিম্মাদারী উঠে যাবে [৪] কখনোই মাদক সেবন করিবে না। কেননা এটিই হল সকল অশ্লীলতার মূল [৫] সর্বদা গোনাহ থেকে দূরে থাকিবে। কেননা গোনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয় [৬] সাবধান! জিহাদের ময়দান হইতে পলায়ন করিবে না। যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়। [৭] যদি কোথাও মহামারী দেখা দেয়, এমতাবস্থায় তুমি যদি সেখানে থাক, তাহলে তুমি সেখানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করিবে [মৃত্যুর ভয়ে পালাবে না]। [৮] তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করিবে [অযথা কৃপণতা করে তাদের কষ্ট দিবে না]। [৯] তাদের উপর থেকে শাসনের লাঠি তুলে নিবে না এবং [১০] তাদেরকে সর্বদা আল্লাহর ভয় দেখাবে [আহমাদ, মেশকাত হাদিস/৬১]।
এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪০. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করিবে সে জাহান্নামে যাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে বিন্দুমাত্র শরীক করিবে না সে জান্নাতে যাবে
[মুসলিম, মেশকাত, বাংলা মেশকাত ১ম খণ্ড হাদিস/৩৪, ঈমান অধ্যায় হাদিস/৩৮]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪১. আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব
[তিরমিজি, হাদিস ছহীহ, মেশকাত হাদিস/২৩৩৬]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪২. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার করিবে আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দিবেন না। আর যে কড়ি ব্যবহার করিবে আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না
[আহমাদ হাদিস/১৬৭৬৩, হাদিস ছহীহ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৩. উক্ববাহ ইবনি আমির [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
একদা রাসূল [সাঃআঃ]-এর খিদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। অতঃপর রাসূল [সাঃআঃ] দলটির ৯ জনকে বায়আত করালেন এবং একজনকে বায়আত করালেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল [সাঃআঃ]! আপনি ৯ জনকে বায়আত করালেন আর একজনকে ছেড়ে দিলেন? রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তার সাথে একটি তাবীয রয়েছে। তখন লোকটি হাত ভিতরে ঢুকিয়ে তাবীয ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর রাসূল [সাঃআঃ] তাকেও বায়আত করালেন এবং বলিলেন, যে ব্যক্তি তাবীয ব্যবহার করিল সে শির্ক করিল
[আহমাদ হাদিস/১৬৭৭১, হাদিস ছহীহ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৪. রুওয়াইফীআ ইবনি ছাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, হে রুওয়াইফা! হয়তো তুমি আমার পরেও অনেক দিন বেঁচে থাকিবে। সুতরাং তুমি লোকদেরকে এ কথা বলে দিও যে, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিট দিল অথবা তাবীয জাতীয় বেল্ট বা সুতা [ছেলে-মেয়ের বা প্রাণীর গলায়] পরাল কিংবা চতুষ্পদ জন্তুর গোবর অথবা হাড় দিয়ে ইসতেঞ্জা করিল, নিশ্চয়ই তার সাথে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর কোন সম্পর্ক নেই
[আবু দাউদ, মেশকাত হাদিস/৩৫১ সনদ ছহীহ, বাংলা মেশকাত ২য় খণ্ড, হাদিস/৩২৪ পেশাব-পায়খানার শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৫. হাফছাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট যাবে এবং তাকে কোন কথা জিজ্ঞেস করিবে ৪০ দিন তার ছালাত কবুল করা হইবে না
[মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৪৫৯৫; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৮ম খণ্ড হাদিস/৪৩৯৩ জ্যোতিষীর গণনা অনুচ্ছেদ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৬. আবু হুরাইরা ও হাসান [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
নবী [সাঃআঃ] বলেছেন, যে কোন গণক বা জ্যোতির্বিদদের নিকট আসল এবং তার বলা কথার প্রতি বিশ্বাস করিল সে মুহাম্মাদ [সাঃআঃ]-এর উপর যা [কুরআন মাজীদ] অবতীর্ণ হয়েছে তাকে অস্বীকার করিল [আহমাদ ২/৪২৯পৃঃ]।
অত্র হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হাতের রাশি দেখে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা, হাত চালিয়ে হারিয়ে যাওয়া বস্তুর সংবাদ দেয়া, টিয়া পাখির মাধ্যমে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ প্রকাশ করা গণকের নিকট হারিয়ে যাওয়া বস্তু জানতে চাওয়া এগুলো সবই শিরক।
এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৭. আবু ওয়াক্বিদ আল-লায়ছী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমরা রাসূল [সাঃআঃ]-এর সাথে হুনাইনের [যুদ্ধের] উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি। এক স্থানে পৌত্তলিকদের একটি কুল গাছ ছিল যার চারপাশে তারা বসত এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা [যাতুল আনওয়াত] বলত। আমরা একদিন একটি কুল গাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রাসূল [সাঃআঃ]-কে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের যেমন নির্ধারিত গাছ আছে আমাদের জন্যও তেমনি একটি গাছ নির্ধারণ করে দিন। তখন রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আল্লাহু আকবার তোমাদের এ দাবী পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যাঁর হাতে আমার জীবন তাহাঁর কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথা বলেছ যা বনী ইসরাঈলরা মূসা [আঃ]-কে বলেছিল। তারা বলেছিল, হে মূসা! মুশরিকদের যেমন মাবূদ আছে আমাদের জন্য তেমন মাবূদ বানিয়ে দাও। মূসা [আঃ] বলিলেন, তোমরা মূর্খের মত কথাবার্তা বলছ [আরাফ ১৩৮]। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতিই অবলম্বন করছ
[তিরমিজি হাদিস/২১০৬, হাদিস ছহীহ]। অত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, কোন কিছুর মাধ্যমে বরকত হাছিল করা শিরক। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৮. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মানত করে সে যেন তা পুরা করার মাধ্যমে আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত করে সে যেন আল্লাহর নাফরমানী না করে [মানত পূরণ না করে] [বুখারী, মেশকাত হাদিস/৩৪২৭, বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৭ম খণ্ড হাদিস/৩২৮১]।
অত্র হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর নামে বৈধ স্থানে মানত মানা যায় এবং তা পালন করা যরূরী [বাক্বারাহ ২৭]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৪৯. খাওলাহ বিনতে হাকীম [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি রাসূল [সাঃআঃ]-কে এ কথা বলিতে শুনিয়াছি, যে ব্যক্তি কোন বাড়িতে বা স্থানে অবতীর্ণ হয়ে বলবে,
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
আমি আল্লাহর পূর্ণ কালামের নিকট তাহাঁর সৃষ্টির সকল অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ স্থান ত্যাগ না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করিতে পারবে না
[মুসলিম, মেশকাত হাদিস/২৪২২, বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৫ম খণ্ড, হাদিস/২৩১০ বিভিন্ন সময়ের দোআ অনুচ্ছেদ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫০. ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
এগুলি হচ্ছে নূহ [আঃ]-এর সম্প্রদায়ের কতিপয় নেককার ব্যক্তিদের নাম, তারা যখন মৃত্যুবরণ করিল, তখন শয়তান তাদের সম্প্রদায়কে কুমন্ত্রণা দিয়ে বলল, যেসব জায়গায় তাদের মজলিস বসত সেসব জায়গায় তাদের মূর্তি স্থাপন কর এবং তাদের সম্মানার্থে তাদের নামেই মূর্তিগুলির নামকরণ কর। তখন তারা তাই করিল। তবে তাদের জীবদ্দশায় ঐ সমস্ত মূর্তির পূজা করা হয়নি, কিন্তু মূর্তি স্থাপনকারীরা যখন মৃত্যুবরণ করিল এবং মূর্তি স্থাপনের ইতিকথা ভুলে গেল তখনই এগুলির ইবাদত শুরু হল
[বুখারী ২/৭৩২ পৃঃ]। অত্র হাদীছে মূর্তিপূজার সূচনা প্রমাণিত হয়। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫১. আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] তাহাঁর জীবনের শেষ অসুখে বলেছিলেন, ইহুদী-খৃষ্টানদের উপর আল্লাহর অভিশাপ। তারা তাদের নবীদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়ে নিয়েছিল
[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৭১২ বঙ্গানুবাদ মেশকাত ২য় খণ্ড হাদিস/৬৫৯ মসজিদসমূহ ও ছালাতের স্থান অনুচ্ছেদ]।এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫২. জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
আমি রাসূল [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি। তিনি বলেছেন, মনে রেখ নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা তাদের নবী এবং নেককার লোকদের ক্ববরকে মসজিদ বানিয়েছিল। সাবধান! তোমরা ক্ববরকে মসজিদ বানাইওনা। আমি তোমাদেরকে ক্ববরকে মসজিদ বানাতে নিষেধ করছি
[মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৭১৩]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৩. আব্দুল্লাহ ইবনি মাসুদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
[মক্কা বিজয়ের দিন] রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] যখন মক্কায় প্রবেশ করিলেন, তখন কাবা ঘরের চারপাশে তিনশ ষাটটি মূর্তি ছিল। তখন তিনি তাহাঁর হাতের ছড়ি দিয়ে এগুলোকে ঠোকা দিতে লাগলেন এবং বলিতে লাগলেন, সত্য এসেছে আর মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ারই [বানী ইসরাঈল ৮১]। সত্য এসেছে আর অসত্য না পারে নতুন কিছু সৃষ্টি করিতে এবং না পারে পুনরাবৃত্তি করিতে
[বুখারী হাদিস/৪৭২০]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৪. আতা ইবনি ইয়াসার [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] প্রার্থনা করে বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার ক্ববরকে মূর্তিতে পরিণত করো না যার ইবাদত করা হইবে। আল্লাহ ঐ জাতির উপর রাগান্বিত হয়েছেন যারা তাদের নবীগণের ক্ববরকে মসজিদে পরিণত করেছে
[আবু দাউদ, মেশকাত হাদিস/৭৫০ সনদ ছহীহ, বঙ্গানুবাদ মেশকাত ২য় খণ্ড হাদিস/৬৯৪]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৫. আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক জিনিস থেকে বেঁচে থাক; তার একটি হচ্ছে যাদু
[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫২; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ১ম খণ্ড, হাদিস/৪৭ ঈমান অধ্যায়]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৬. বাজালাহ ইবনি আবাদাহ হইতে বর্ণিতঃ
ওমর [রাদি.] মুসলিম গভর্নরদের কাছে পাঠানো নির্দেশনামায় বলেছিলেন, তোমরা প্রত্যেক যাদুকর পুরুষ এবং যাদুকর নারীকে হত্যা কর
[বুখারী, বায়হাক্বী, আল-কাবায়ির ২৬ পৃঃ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৭. আবু মূসা আশআরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে যাবে না। [১] সর্বদা মদপানকারী, [২] আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী, [৩] যাদুর প্রতি বিশ্বাসকা
রী [আহমাদ, মেশকাত হাদিস/৩৬৫; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৭ম খণ্ড হাদিস/৩৪৮৯ মদের বিবরণ ও মদ্যপায়ীর প্রতি ভীতিপ্রদগণ অনুচ্ছেদ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৮. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, দীন ইসলামে সংক্রামক ব্যাধি, কুলক্ষণ, পেঁচা পাখির ডাকের মন্দ প্রতিক্রিয়া, পেটে পীড়াদায়ক সাপ, নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টিপাত ও ভুত বা দ্বৈত বলে কিছু নেই
[বুখারী, মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৪৫৭৮-৪৫৭৯; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৮ম খণ্ড, হাদিস/৪৩৭৬-৭৭ শুভ ও অশুভ লক্ষণ অনুচ্ছেদ]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৫৯. ইবনি মাসুদ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, অশুভ বা কুলক্ষণ ফল গ্রহণ করা শির্কী কাজ। কথাটি তিনি তিনবার বলিলেন
[আবু দাউদ, সনদ ছহীহ, মেশকাত হাদিস/৪৫৮৪; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৮ম খণ্ড হাদিস/৪৩৮২]। এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬০. ইবনি ওমর [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেছেন, কুলক্ষণ বা অশুভ ধারণা যে ব্যক্তিকে তার স্বীয় প্রয়োজন, দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে দূরে রাখল, সে মূলত শির্ক করিল। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, এর কাফ্ফারা কী? রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তোমরা এ দোআ পড়-
اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُكَ وَلاَ طَيْرَ إِلاَّ طَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ
হে আল্লাহ! তোমার মঙ্গল ব্যতীত কোন মঙ্গল নেই। তোমার অশুভ ছাড়া কোন অশুভ নেই এবং তুমি ছাড়া কোন মাবূদ নেই
ই [আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হাদিস/১০৬৫, ৩/৫৪ পৃষ্ঠা]। শিরক – এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬১. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি অংশীদারদের অংশীদারিত্ব হইতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যে ব্যক্তি কোন কাজ করে আর ঐ কাজে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে আমি ঐ অংশীদারকেও অংশীদারীকে প্রত্যাখ্যান করি। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আমি ঐ ব্যক্তির কর্ম হইতে মুক্ত
[মুসলিম, মেশকাত হাদিস/৫৩১৫ বঙ্গানুবাদ ৯ম খণ্ড হাদিস/৫০৮৪]। শিরক – এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
১৬২. আবু সাঈদ খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূল [সাঃআঃ] আমাদের নিকট আসলেন। এমতাবস্থায় আমরা দাজ্জাল সম্পর্কে পরস্পর আলোচনা করছিলাম। রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, আমি কি তোমাদের এমন বিষয়ে সংবাদ দিব না? যে বিষয়টি আমার কাছে দাজ্জালের চেয়েও ভয়ঙ্কর? ছাহাবীগণ বলিলেন, জ্বি হাঁ। রাসূল [সাঃআঃ] বলিলেন, তা হচ্ছে গোপন শির্ক । [আর এর উদাহরণ হচ্ছে] একজন মানুষ ছালাতে দাঁড়িয়ে এই খেয়ালে ছালাত আদায় করে যে, কোন মানুষ তার ছালাত আদায় করা দেখ
ছে [ইবনি মাজাহ, সনদ হাসান, মেশকাত হাদিস/৫৩৩৩; বঙ্গানুবাদ মেশকাত ৯ম খণ্ড হাদিস/৫১০১]। আলবানী হাদিসটি ছহীহ বলেছেন। মানুষের প্রশংসা এবং সম্মান অর্জনের জন্য কোন আমল করা। অথবা কেবলমাত্র পার্থিব কোন স্বার্থের জন্য কাজ করা, যা মানুষের খুলুছিয়াত এবং তাওহীদকে কলুষিত করে। লোক দেখানো, সুনাম অর্জন, নেতৃত্ব দান, দুনিয়ার স্বার্থ উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়গুলোর কোন একটি আল্লাহর ইবাদতের দ্বারা আশা করা শিরক। শিরক – এই হাদিসের তাহক্কিকঃ সহীহ হাদীস
Leave a Reply