নবুওয়তের প্রমাণ: রাঃসাঃ এর সাথে জীব জন্তুর আচরণ
নবুওয়তের প্রমাণ: রাঃসাঃ এর সাথে জীব জন্তুর আচরণ << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ: নবুওয়তের প্রমাণ: রাঃসাঃ এর সাথে জীব জন্তুর আচরণ
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, এক যুদ্ধে আমি রাসূলূল্লাহ্ রাঃসাঃ এর সঙ্গে ছিলাম। আমার উটটি অত্যন্ত ধীরে চলছিল বরং চলতে অক্ষম হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় রাসূলূল্লাহ্ রাঃসাঃ আমার কাছে এলেন এবং বলিলেন, জাবির? আমি বলিলাম, জী। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমার অবস্থা কি? আমি বলিলাম, আমার উট আমাকে নিয়ে অত্যন্ত ধীরে চলছে এবং অক্ষম হয়ে পড়ছে। ফলে আমি পিছনে পড়ে গেছি। তখন তিনি নেমে চাবুক দিয়ে উটটিকে আঘাত করতে লাগলেন। তারপর বলিলেন, এবার আরোহন কর। আমি আরোহন করলাম। এরপর অবশ্য আমি উটটিকে এমন পেলাম যে, রাসূলূল্লাহ্ রাঃসাঃ থেকে অগ্রসর হওয়ায় বাধা দিতে হয়েছিল। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কি বিবাহ করেছ? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, কুমারী না বিবাহিতা? আমি বলিলাম, বিবাহিতা। তিনি বলিলেন, তরুনী বিবাহ করলেনা কেন? তুমি তার সাথে হাসি-তামাসা এবং সে তোমার সাথে পূর্নভাবে হাসি-তামাসা করত। আমি বলিলাম, আমার কয়েকটি বোন রয়েছে, ফলে আমি এমন মহিলাকে বিবাহ করতে পছন্দ করলাম, যে তাদেরকে মিল-মহব্বতে রাখতে, তাদের পরিচর্যা করতে এবং তাদের উপর উত্তমরুপে কর্তৃত্ব করতে সক্ষম হয়। তিনি বলিলেন, শোন, তুমি তো বাড়ীতে পৌঁছবে? যখন তুমি পৌঁছবে তখন তুমি বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেবে। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি বিক্রি করবে? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি তা এক উকীয়ার বিনিময়ে আমার নিকট থেকে কিনে নিলেন। তারপর রাসূলূল্লাহ্ রাঃসাঃ আমার আগে [মদীনায়] পৌঁছলেন এবং আমি [পরের দিন] ভোরে পৌঁছলাম। আমি মসজিদে নববীতে গিয়ে রাঃসাঃ কে দরজার সামনে পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, এখন এলে? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, তোমার উটটি রাখ এবং মসজিদে প্রবেশ করে দু`রাকাত নামায আদায় কর। আমি মসজিদে প্রবেশ করে নামায আদায় করলাম। তারপর তিনি বিলাল রাদি. আনহুকে উকীয়া ওযন করে আমাকে দিতে বলিলেন। বিলাল রাদি. আনহু ওযন করে দিলেন এবং আমার পক্ষে ঝুঁকিয়ে দিলেন। আমি রওনা হলাম। যখন আমি পিছন ফিরেছি তখন তিনি বলিলেন, জাবিরকে আমার কাছে ডাক। আমি ভাবলাম, এখন হয়তো উটটি আমাকে ফিরিয়ে দেবেন। আর আমার কাছে এর চাইতে অপছন্দনীয় আর কিছুই ছিলোনা। তিনি বলিলেন তোমার উটটি নিয়ে যাও এবং তার মূল্যও তোমার।[1]
আব্দুল্লাহ ইবনু `জাফর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত,তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ আমাকে তাহাঁর খচ্চরের পিঠে তাহাঁর পেছনে বসালেন। তারপর তিনি আমাকে গোপন একটি কথা বলিলেন, এবং তিনি বলিলেন, কাউকেও বলবে না। প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য রাঃসাঃ এর দু`টি স্থান খুবই পছন্দনীয় ছিল, কোনো উঁচু স্থান অথবা গাছের ঝাড়। একবার তিনি একজন আনসারীর বাগানে প্রবেশ করিলেন। তখন হঠাৎ একটি উট দেখা গেল। সেটি নাবী রাঃসাঃকে দেখার সঙ্গে হু হু শব্দে আওয়াজ করে কাঁদতে লাগলো। দু`চোখ হতে অশ্রুধারা বইতে লাগলো। নাবী রাঃসাঃ তার কাছে গেলেন এবং তার মাথার পেছন দিকে হাত রেখে দু`কানের গোড়া পর্যন্ত মুছে দিলেন। তাতে সে চুপ তরে গেল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, এ উটটি কার? এর মালিক কে? আনসার সম্প্রদায়ের এক যুবক বের হয়ে এসে উত্তর দিল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! এটি আমার উট। নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, আল্লাহ যে তোমাকে এ চতুষ্পদ জন্তুটির মালিক করেছেন, তুমি কি এর তত্ত্বাবধানের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না? সে আমার নিকট তোমার বিরূদ্ধে অভিযোগ করলো যে, তুমি তাকে অভূক্ত রাখ এবং তাকে কষ্ট দাও। [2]
[1] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ২০৯৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৭১৫।
[2] মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ১৭৪৫। হাদীসটি সহিহ।
Leave a Reply