রাঃসাঃ এর উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।

রাঃসাঃ এর উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।

রাঃসাঃ এর উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে। << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন

অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ – রাঃসাঃ এর উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।

মিক্বদাদ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ও আমার দুই সাথী সামনে অগ্রসর হলাম এমন অবস্থায় প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে আমার ও আমার দু সঙ্গীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল। পরে আমরা রাঃসাঃ  এর সাহাবীদের কাছে নিজেদের পেশ করতে লাগলাম। কিন্তু তাহাঁদের কেউ আমাদেরকে গ্রহণ করিলেন না। অবশেষে আমরা নাবী রাঃসাঃ এর কাছে এলে তিনি আমাদের নিয়ে তাহাঁর পরিবারের কাছে গেলেন। সেখানে তিনটি মেষ ছিল। নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা ভাগ করে পান করব। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করতো। আর আমরা নাবী রাঃসাঃ এর জন্য তার অংশ তুলে রাখতাম। মিকদাদ রাদি. আনহু বলেন, রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয় আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। রাবী বলেন, এরপর তিনি মসজিদে এসে নামায আদায় করতেন ও ফিরে এসে দুধপান করতেন। এক রাতে আমার কাছে শয়তান আসলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বললো মুহাম্মাদ আননারীদের কাছে গেলে তারা তাঁকে তোহফা [উপটৌকন] দিবে এবং তাদের কাছে তাহাঁর এ সামান্য দুধের প্রয়োজনীয়তাও মিটে যাবে। এরপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন ভালভাবে আমার পেটে প্রবেশ করলো এবং আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই, তখন শয়তান আমার থেকে দূর সরে গিয়ে বললো, তোমার সর্বনাশ হোক তুমি কি কাণ্ড করলে! তুমি মুহাম্মাদ রাঃসাঃ এর দুধপান করে ফেলেছ? তিনি এসে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু`আ করবেন। তাতে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আমার গায়ে ছিল একটা চাদর। যদি আমি তা আমার পদযুগলের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদযুগল বেরিয়ে পড়ে। আমার ঘুম আসছিলো না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন, এরপর নাবী রাঃসাঃ এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। তারপর তিনি মসজিদে এসে নামায আদায় করিলেন। এরপর দুধের কাছে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি স্বীয় মাথা আসমানের দিকে তুললেন। আমি তখন [মনে মনে] বলিলাম, এখনই তিনি আমার ওপর বদ-দু`আ করবেন, আর আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বলিলেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাকে আহার করায়, তাকে তুমি আহার করাও। আর যে আমাকে পান করায়, তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ রাদি. আনহু বলেন, এ সময় আমি চাদরটি নিয়ে শরীরে বাধলাম, আর একটি ছুরি নিলাম, তারপর [এই ভেবে] মেষগুলির কাছে গেলাম যে, এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা, আমি সেটি রাঃসাঃ  এর জন্য যবেহ করবো। গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব মেষও দুধে পরিপূর্ণ। এরপর আমি মুহাম্মদ রাঃসাঃ এর পরিবারের একটি পাত্র নিয়ে এলাম যাতে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি মিকদাদ রাদি. আনহু বলেন, আমি তাতেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি পাত্রের উপরিভাগে ফেলা ভেসে উঠলো। এরপর আমি রাঃসাঃ  এর কাছে আসলাম। তিনি বলিলেন, তোমরা কি রাতের দুধ পান করেছেন? তিনি বলেন, আমি বলিলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করিলেন, এরপর আমাকে দিলেন। আমি বলিলাম, ইয়া রাঃসাঃ ! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আবার আমাকে দিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, নাবী রাঃসাঃ পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাহাঁর দো`আ পেয়ে গেছি, তখন আমি হাসতে হাসতে যমীনে পড়ে গেলাম। তিনি বলেন, নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, হে মিকদাদ! তুমি কি কোনো অপকর্ম করেছেন? তখন আমি বলিলাম, ইয়া রাঃসাঃ ! আমার এ ই কাণ্ড ঘটে গেছে। অথবা তিনি বলিয়াছেন, আমি এরূপ কাজ করে ফেলেছি। তখন নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, এটা একমাত্র আল্লাহর মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে অবহিত করলে না? আমরা আমাদের সাথীদ্বয়কে জাগ্রত করতাম, তাহলে তারাও এর ভাগ পেত! তিনি বলেন, আমি তখন বলিলাম, যে মহান স্বত্বা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন, তাহাঁর শপথ! আপনি যখন পেয়েছেন, অথবা বলিয়াছেন, আমি যখন আপনার সাথে ভাগ পেয়েছি, তখন অন্য কোন লোক পাওয়া না পাওয়ার আমি পরওয়া করি না।[1]


[1] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২০৫৫।

Comments

One response to “রাঃসাঃ এর উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।”

Leave a Reply