ফাজায়েলে রমজান
এ বিষয়ে আরও পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
রমযানের সাওম ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে
মহান আল্লাহর বাণীঃ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ
“হে মুমিনগন! তোমাদের জন্য সিয়াম ফরয করা হল, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী হইতে পার।”
(আল-বাকারাহঃ ১৮২)
মহান আল্লাহর বাণীঃ
أُحِلَّ لَكُمۡ لَيۡلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمۡۚ هُنَّ لِبَاسٞ لَّكُمۡ وَأَنتُمۡ لِبَاسٞ لَّهُنَّۗ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡتَخۡتَانُونَ أَنفُسَكُمۡ فَتَابَ عَلَيۡكُمۡ وَعَفَا عَنكُمۡۖ فَٱلۡـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبۡتَغُواْ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلۡخَيۡطُ ٱلۡأَبۡيَضُ مِنَ ٱلۡخَيۡطِ ٱلۡأَسۡوَدِ مِنَٱلۡفَجۡرِۖ ثُمَّ أَتِمُّواْ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيۡلِۚ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمۡ عَٰكِفُونَ فِي ٱلۡمَسَٰجِدِۗ تِلۡكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقۡرَبُوهَاۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَّقُونَ
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।
(আল-বাকারাহঃ ১৮৬)
রোযার চাঁদ দেখা ও রমযানের রোযা খোলার বর্ণনা
১৯০৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযানের কথা আলোচনা করে বললেনঃ চাঁদ না দেখে তোমরা সাওম পালন করিবে না এবং চাঁদ না দেখে ইফ্তার করিবে না। যদি মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে তার সময় (ত্রিশ দিন) পরিমাণ পূর্ণ করিবে।
১৯০৭. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ মাস ঊনত্রিশ রাত বিশিষ্ট হয়। তাই তোমরা চাঁদ না দেখে সাওম শুরু করিবে না। যদি আকাশ মেঘাবৃত থাকে তাহলে তোমরা ত্রিশ দিন পূর্ণ করিবে।
১৯০৮. ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) (দুহাতের আঙ্গুলি তুলে ইঙ্গিত করে) বলেনঃ মাস এত এত দিনে হয় এবং তৃতীয় বার বৃদ্ধাঙ্গুলিটি বন্ধ করে নিলেন।
১৯০৯. আবু হুরায়রা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) অথবা বলেন, আবুল কাসিম (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা চাঁদ দেখে সিয়াম আরম্ভ করিবে এবং চাঁদ দেখে ইফ্তার করিবে। আকাশ যদি মেঘে ঢাকা থাকে তাহলে শাবানের গণনা ত্রিশ দিন পুরা করিবে।
১৯১০.উম্মু সালামাহ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) এক মাসের মত তাহাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা করিলেন। ঊনত্রিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর সকালে বা সন্ধ্যায় তিনি তাঁদের নিকট গমন করিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হল, আপনি তো এক মাস পর্যন্ত না আসার শপথ করেছিলেন? তিনি বলিলেন, মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
১৯১১. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) তাহাঁর স্ত্রীদের সাথে ঈলা করিলেন। এ সময় তাহাঁর পা মচকে গিয়েছিল। তখন তিনি উপরের কামরায় ঊনত্রিশ রাত অবস্থান করেন। এরপর তিনি নেমে আসলে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো এক মাসের জন্য ঈলা করেছিলেন। তিনি বললেনঃ মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয়ে থাকে।
রোজার নিয়ত
নাফি [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
আবদুল্লাহ্ ইবনি উমার [রাদি.] বলিতেন, যে ফজরের পূর্বে নিয়ত করেনি, সে রোযা রাখবে না।
ইবনি শিহাব [রাহিমাহুল্লাহ] কর্তৃক নাবী সাঃআঃ-এর সহধর্মিনী আয়েশা [রাদি.] ও হাফসা [রাদি.] হইতে অনুরূপ [মত] বর্ণনা করা হয়েছে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মুয়াত্তা মালিক ৬২১ তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
সালমা ইবনু আকওয়া (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ
আশূরার দিন নাবী (সাঃআঃ) এক ব্যক্তিকে এ বলে লোকদের মধ্যে ঘোষণা দেয়ার জন্য পাঠালেন যে, যে ব্যক্তি খেয়ে ফেলেছে সে যেন পূর্ণ করে নেয় অথবা বলেছেন, সে যেন সাওম আদায় করে নেয় আর যে এখনো খায়নি সে যেন আর না খায়।
সহীহ বুখারী ১৯২৪
হাফসাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রাত থাকতে ফরদ রোযাহার নিয়াত করিল না তাহার রোযা হয়নি। {১৭০০}
ইবনে মাজাহ ১৭০০, {১৭০০} তিরমিজি ৭৩০,নাসাঈ ২৩৩১, ২৩৩২, ২৩৩৩, ২৩৩৪, ২৩৩৫, ২৩৩৬, ২৩৩৭, ২৩৩৮, ২৩৩৯, ২৩৪০, ২৩৪১, আবু দাউদ ২৪৫৪,মাজাহ ১৭০০, আহমাদ ২৫৯১৮, মুয়াত্তা মালিক ৬৩৭, দারেমী ১৬৯৮, ইরওয়াহ ৭১৪, সহীহ, আবু দাউদ ২১১৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. খালিদ বিন মাখলাদ আল-কাতওয়ানী সম্পর্কে আবু আহমাদ বিন আলী আল জুরজানী বলেন, ইনশাআল্লাহ্ আমার আমার নিকট তাহার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীলযোগ্য নয়। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে শীয়া মতাবলম্বী। ঈমাম যাহাবী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে তা দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হইবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৬৫২, ৮/১৬৩ নং পৃষ্ঠা] ২. ইসহাক বিন হাযিম সম্পর্কে আবুল ফাতহ আল আযদী বলেন, তিনি কাদিরিয়া মতাবলম্বী। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি সিকাহ। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তাহার হাদিস বর্ণনায় কোন সমস্যা নেই। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে তাহার কাদারিয়া মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ আছে। ঈমাম যাহাবী ও ইয়াহইয়া বিন মাঈন তাহাকে সিকাহ বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৪৮, ২/৪১৭ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
সেহরির খাওয়া শুরু করা
সামুরা্হ ইবনি জুনদুব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা সামুরা্হ ইবনি জুনদুব [রাদি.] খুত্ববাহ প্রদানের সময় বলিলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ বিলালের আযান যেন তোমাদেরকে পানাহার থেকে বিরত না রাখে, আর না [পূর্ব] আকাশের শুভ্র আলো যতক্ষন না পূর্ব দিগন্তে বিস্তৃত হয়।
আবু দাউদ ২৩৪৬, সহিহ,
তিরমিজি ৭০৬ -সহীহ্, সহীহ্ আবু দাঊদ [২০৩১], মুসলিম আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, বিলালের আযান যেন তোমাদের কাউকে তাহার সাহরী খাওয়া থেকে বিরত না রাখে। কেননা সে তোমাদের ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগাবার বা সতর্ক করার জন্য এবং তোমাদের সলাতীকে সলাতে রত বা অবসর হওয়ার জন্য আযান দিয়ে থাকে। আর এ সময়কে ফজর বলা হয় না, বরং উর্ধাকাশে আড়াআড়িভাবে সাদা আভা প্রকাশ পাওয়াই ফজর।
আবু দাউদ ২৩৪৭ সহিহ, ইবনে মাজাহ ১৬৯৬ সহিহ, {১৬৯৬} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ৬২১, ৫২৯৯, ৭২৪৭, মুসলিম ১০৯৩, নাসাঈ ৬৪১, ২১৭০,আবু দাউদ ২৩৪৭ আহমাদ ৩৬৪৬, ৩৭০৯, ৪১৩৬,
সেহরির সময়
আদী ইবনি হাতিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ
حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ
হাত্তা ইয়াতাবাইনা লাকুমুল খাইতুল আবইয়াদু মিনাল খাইতিল আসওয়াদ, তোমরা পানাহার করো যতক্ষণ না রাতের কালো সুতা থেকে ভোরের সাদা সুতা [রেখা] স্পষ্টরুপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত হয় [সুরাহ আল- বাক্বারাহঃ ১৮৭]।
لَكُمُ | يَتَبَيَّنَ | حَتَّى যতক্ষণ |
مِنَ | الأَبْيَضُ | الْخَيْطُ |
الأَسْوَدِ | الْخَيْطِ |
তখন আমি একটি কালো ও একটি সাদা রংয়ের সুতা নিয়ে আমার বালিশের নীচে রাখি। এরপর আমি তা দেখিতে থাকি কিন্তু স্পষ্টভাবে দেখিতে পেলাম না। আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর কাছে গিয়ে বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি হেসে উঠলেন এবং বলিলেন, বালিশ তো দৈর্ঘ্য প্রস্থকারী। বরং এটা হচ্ছে রাত ও দিন। উসমানের বর্ণনায় রয়েছেঃ তা তো রাতের অন্ধকার ও দিনের শুভ্রতা।
আবু দাউদ ২৩৪৯, সহিহ হাদিস
যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) এর সঙ্গে সাহরী খাই এরপর তিনি সলাতের জন্য দাঁড়ান। বর্ণনাকারী বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আযান ও সাহরীর মাঝে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বলিলেন, পঞ্চাশ আয়াত (পাঠ করা) পরিমাণ।
সহীহ বুখারী ১৯২১, তিরমিজি ৭০৩, সহীহ হাদীস, ইবনে মাজাহ ১৬৯৪
তাল্ক ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ খাও এবং পান করো। উর্ধাকাশে ভোরের যে লম্বা রেখা ফুটে উঠে, তা যেন তোমাদেরকে [সাহরী খাওয়া থেকে] বিরত না রাখে। সুতরাং আকাশের দিগন্তে লাল রঙ্গের ফর্সা উঠা পর্যন্ত তোমরা খাও এবং পান করো।
আবু দাউদ ২৩৪৮, হাসান সহিহ,
তিরমিজি ৭০৫ হাসান সহিহ,
-হাসান সহীহ, সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৩] আদী ইবনি হাতিম, আবু যার ও সামুরা [রাদি.] হইতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা তাল্ক ইবনি আলী [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে এই সূত্রে হাসান গারীব বলেছেন। এ হাদীস মোতাবেক আলিমগণ অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, রোযা পালনকারীর জন্য ফজরের লালচে আলো প্রস্থে বিস্তৃত না হওয়া পর্যন্ত পানাহার অবৈধ নয়। এটাই বেশিরভাগ আলিমের মত।
বিলম্ব করে সেহরি খাওয়া
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ যখন তোমাদের কেউ ফাজরের আযান শুনতে পায় অথচ খাবারের পাত্র তার হাতে থাকে, সে যেন তা রেখে না দেয় যতক্ষন না তার প্রয়োজন পূরণ হয়।
আবু দাউদ ২৩৫০, হাসান সহিহ
হুযায়ফাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
একদা আমি রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সঙ্গে বলিতে গেলে দিনেই সাহরী খেয়েছি, পার্থক্য এতটুকু যে, তখনও সূর্য উদিত হয়নি। {১৬৯৫}
ইবনে মাজাহ ১৬৯৫ {১৬৯৫} নাসাঈ ২১৫২, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। উক্ত হাদিসের রাবি আসিম বিন বাহদালাহ সম্পর্কে আবু বকর আল বাযযাহার বলেন, তিনি হাফিয ছিলেন না, তাহার হাদিস কেউ বর্জন করিয়াছেন এমন কাউকে পাওয়া যায় না। আবু জাফার আল উকায়লী বলেন, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল ছাড়া তাহার মাঝে অন্য কোন দোষ পায়নি। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সিকাহ। ইসমাইল বিন উলায়্যাহ বলেন, তাহার ব্যাপারে সমালোচনা রয়েছে, তাহার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। মুহাম্মাদ বিন সাদ বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩০০২, ১৩/৪৭৩ নং পৃষ্ঠা]।হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
তিরমিজি ৭০৪. হিশাম [রঃ] হইতে বর্ণীতঃ
উপরোক্ত হাদীসের ন্যায় বর্ণনা করিয়াছেন হান্নাদ ওয়াকী হইতে, তিনি হিশাম হইতে। তাতে আছে “পঞ্চাশ আয়াত পাঠের সমপরিমাণ”। হুযাইফা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা যাইদ ইবনি সাবিত [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। এরকম মতই ঈমাম শাফি, আহ্মাদ ও ইসহাকের। বিলম্ব করে সাহ্রী খাওয়াকে তাঁরা মুস্তাহাব বলেছেন।
রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
ইফতারের সময় দুআ পাঠ
আবু দাউদ ২৩৫৭. মাওয়ান ইবনি সালিম আল-মুকাফফা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
আমি ইবনি উমার [রাদি.] -কে তার দাড়ি মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে মুষ্টির বাড়তি অংশ কেটে ফেলতে দেখেছি। আর তিনি বলিয়াছেন, নাবী [সাঃআঃ] ইফতারের সময় বলিতেনঃ
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুকু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ।” পিপাসা দূরীভূত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সিক্ত হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ প্রতিদানও নির্ধারিত হয়েছে।
হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
আবু দাউদ ২৩৫৮. মুয়ায ইবনি যুহরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তাহাঁর নিকট হাদিস পৌঁছেছে যে, নাবী [সাঃআঃ] ইফতারের সময় বলিতেনঃ
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
“আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিক্বা আফতারতু”। অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উদ্দেশ্যেই সওম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দ্বারাই ইফতার করেছি। {২৩৫৮}
صُمْتُ | لَكَ | اللَّهُمَّ |
সওম | আপনার উদ্দেশ্যেই | হে আল্লাহ |
أَفْطَرْتُ | رِزْقِكَ | وَعَلَى |
ইফতার করেছি | আপনার দেয়া রিযিক | এবং তারপরে |
দুর্বলঃ মিশকাত [১৯৯৪], ইরওয়া [৪/৩৭]। ২৩৫৮ বায়হাক্বী। এর সনদ মুরসাল। এছাড়া সানাদে জাহালাত রয়েছে। মুআয বিন যুহরা সম্পর্কে হাফিয বলেনঃ মাক্ববূল। হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
শীঘ্র ইফতার করা
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন: লোকেরা যতদিন শীঘ্র ইফতার করিবে, ততদিন তারা কল্যাণের উপর থাকবে।
[সহীহ বুখারী ১৯৫৭, আবু দাউদ ২২৫৩, ইবনু মাজাহ ১৬৯৮] ইবনে মাজাহ ১৬৯৭, সহীহ, তিরমিজি ৬৯৯, মুয়াত্তা মালিক ৬২২ সহীহ
সাঈদ ইবনি মুসায়্যাব [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বলেছেন, মানুষ সর্বদা মঙ্গলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিবে যতদিন ইফতার সত্বর করিবে। [হাদীসটি ঈমাম মালিক [রাহিমাহুল্লাহ] একক ভাবে বর্ণনা করিয়াছেন]
মুয়াত্তা মালিক ৬২৩
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
নাবী [সাঃআঃ] বলেনঃ দ্বীন বিজয়ী থাকিবে যতদিন লোকেরা অবিলম্বে ইফতার করিবে। কেননা ইহুদী ও খৃস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে।
আবু দাউদ ২৩৫৩, হাসান হাদিস
ইবনে মাজাহ ১৬৯৮ {১৬৯৮} আবু দাউদ ২৩৫৩, আহমাদ ২৭২১৮, মিশকাত ১৯৯৫, সহীহ আবু দাউদ ২০৩৮। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবু আমর বিন মুহাম্মাদ বিন আমর বিন হুরায়স সম্পর্কে ইবনি হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে ঈমাম যাহাবী বলেন তাহার পরিচয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। আবু হাতিম বিন হিব্বান বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি হাদিসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। ঈমাম দারাকুতনী তাহাকে দুর্বল বলেছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৫১৩, ২৬/২১২ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ হাসান সহীহ
আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দাদের মাঝে যারা তাড়াতাড়ি ইফ্তার করে তারাই আমার বেশী প্রিয়।
তিরমিজি ৭০০, যঈফ, মিশকাত [১৯৮৯], তালীকুর রাগীব [২/৯৫], তালীকুল জিয়াদ। দুর্বল হাদীস
তিরমিজি ৭০১. আব্দুল্লাহ ইব্নু আবদুর রহমান হইতে বর্ণীতঃ যঈফঃ দেখুন পূর্বের হাদীস। আবু ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান গারীব। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ দুর্বল হাদীস
ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, এক সফরে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি সন্ধ্যা পর্যন্ত সাওম পালন করেন। এরপর এক ব্যক্তিকে বললেনঃ সওয়ারী হইতে নেমে ছাতু গুলে আন। লোকটি বলিল, আপনি যদি (পূর্ণ সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত) অপেক্ষা করিতেন। তিনি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) পুনরায় বললেনঃ নেমে আমার জন্য ছাতু গুলে আন। [তারপর আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলিলেন] যখন তুমি এদিক (পূর্বদিক) হইতে রাত্রির আগমন দেখিতে পাবে তখন সাওম পালনকারী ইফতার করিবে।
সহীহ বুখারী ১৯৫৮
আবু আত্বিয়্যাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, একদা আমি ও মাসরূক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আয়িশাহ [রাদি.] -এর নিকট গিয়ে বলি, হে উম্মুল মুমিনীন! মুহাম্মাদ [সাঃআঃ] এর দুইজন সাহাবীর একজন সূর্যাস্তের সাথে সাথে ইফতার করেন এবং খুব তাড়াতাড়ি [মাগরিবের] সলাত আদায় করে নেন। আর দ্বিতীয়জন বিলম্বে ইফতার করেন এবং সলাতও বিলম্বে আদায় করেন। তিনি বলিলেন, তাহাদের মধ্যে কে ইফতার অনতিবিলম্বে করেন এবং সলাত তারাতারি আদায় করেন? আমরা বলিলাম, তিনি হচ্ছেন আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ [রাদি.]। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এরূপই করিতেন।
আবু দাউদ ২৩৫৪, সহিহ হাদিস
তিরমিজি ৭০২ -সহীহ্, সহীহ আবু দাঊদ [২০৩৯], মুসলিম। এই হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। আবু আতিয়্যার নাম মালিক, পিতা আবু আমির হামদানী, মতান্তরে ইবনি আমির এবং এটিই অধিকতর সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
ইফতার এর সময়
উমার ইবনু খাত্তাব (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যখন রাত্র সে দিক [পূর্বদিকে] হইতে ঘনিয়ে আসে ও দিন এ দিক [পশ্চিম দিক] হইতে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করিবে।
সহীহ বুখারী ১৯৫৪, আবু দাউদ ২৩৫১
আবদুল্লাহ ইবনু আবু আওফা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, কোন এক সফরে আমরা আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর সাথে ছিলাম। আর তিনি ছিলেন সওমের অবস্থায়। যখন সূর্য ডুবে গেল তখন তিনি দলের কাউকে বললেনঃ হে অমুক! উঠ। আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, হে আল্লাহর রাসুল! সন্ধ্যা হলে ভাল হতো। তিনি বললেনঃ নেমে যাও এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। সে বলিল, দিন তো এখনো রয়ে গেছে। তিনি বললেনঃ তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু গুলে আন। অতঃপর সে নামল এবং তাঁদের জন্য ছাতু গুলে আনল। আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তা পান করিলেন, অতঃপর বললেনঃ যখন তোমরা দেখবে, রাত একদিক হইতে ঘনিয়ে আসছে, তখন সাওম পালনকারী ইফতার করিবে।
সহীহ বুখারী ১৯৫৫, আবু দাউদ ২৩৫২ (সহীহ)
সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে
আসমা বিনতু আবু বাকর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] এর সময় রমযানে এক মেঘাচ্ছন্ন দিনে ইফতার করার পর সূর্য প্রকাশ হয়ে পড়লো। আবু উসামাহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, আমি হিশামকে বলিলাম, তাহাদেরকে কি তা কাযা করার নির্দেশ করা হয়েছিলো? তিনি বলিলেন, তা অবশ্যই করণীয়।
আবু দাউদ ২৩৫৯, সহিহ হাদিস
সফররত অবস্থায় রোযা রাখা।
ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) মাদীনাহ হইতে মক্কায় রওয়ানা হলেন। তখন তিনি সাওম পালন করছিলেন। উসফানে পৌঁছার পর তিনি পানি আনার জন্য আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি লোকদেরকে দেখানোর জন্য পানি হাতের উপর উঁচু করে ধরে সাওম ভঙ্গ করিলেন এবং এ অবস্থায় মক্কায় পৌঁছলেন। এ ছিল রমযান মাসে। তাই ইবনু আব্বাস (রাদি.) বলিতেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) সাওম পালন করিয়াছেন এবং সাওম ভঙ্গ করিয়াছেন। যার ইচ্ছা সাওম পালন করিতে পারে আর যার ইচ্ছা সাওম ভঙ্গ করিতে পারে।
সহীহ বুখারী ১৯৪৮
ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] কখনো সফররত অবস্থায় রোযা রাখতেন এবং কখনো রাখতেন না। {১৬৬১}
ইবনে মাজাহ ১৬৬১ {১৬৬১} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৯৪৪, ১৯৪৮, ২৯৫৪, ৪২৭৫, ৪২৭৬, ৪২৭৮, ৪২৭৯, মুসলিম ১১১৩, নাসাঈ ২২৮৬, ২২৮৮, ২২৮৯, ২২৯০, ২২৯১, ২৩১৩, ২৩১৪, আবু দাউদ ২৪০৪, আহমাদ ১৮৯৫, ২১৮৬, ২৩৫৯, ২৩৮৮, ৩০৭৯, ৩১৯৯, ২৩৪৮, ৩২৬৯, ২৪৫০, মুয়াত্তা মালিক ৬৫৩, দারেমী ১৭০৮ সহীহ আবু দাউদ ২০৮০। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
হামযাহ আল-আসলামী [রাদি.] রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করে বলেন, আমি রোযা রাখি। আমি কি সফররত অবস্থায়ও রোযা রাখবো? রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, তুমি চাইলে রোযা রাখো, আর যদি চাও না রাখো। {১৬৬২}
ইবনে মাজাহ ১৬৬২ {১৬৬২} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৯৪২, ১৯৪৩, মুসলিম ১১২১, তিরমিজি ৭১১, নাসাঈ ২৩০৫, ২৩০৭, ২৩০৬, ২৩০৮, ২৩৮৪, আবু দাউদ ২৪০২, আহমাদ ২৩৬৭৬, ২৫০৭৯, ২৫১৩৭, ২৫২০২, ১৭০৭ রওয়াহ ৯২৭, সহীহাহ ১৯৪, সহীহ আবু দাউদ ২০৭৯। ইরওয়াহ ৯২৭, সহীহাহ ১৯৪, সহীহ আবু দাউদ ২০৭৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে আসলাম গোত্রের হামযা ইবনি আমর [রাদি.] সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন। আর তিনি প্রায়ই রোযা পালন করিতেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকে বললেনঃ ইচ্ছা করলে তুমি রোযা পালন করিতেও পার আবার ইচ্ছা করলে ভাঙ্গতেও পার।
তিরমিজি ৭১১ -সহীহ, ইবনি মা-জাহ [১৬৬২], বুখারী, মুসলিম । আনাস ইবনি মালিক, আবু সাঈদ, আবদুল্লাহ ইবনি মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনি আমর, আবু দারদা ও হামযা ইবনি আমর আসলামী [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেন, আইশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত হামযা ইবনি আমর নাবী [সাঃআঃ]-কে প্রশ্ন করিয়াছেন হাদীসটি হাসান সহিহ। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
আবু দারদা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আমরা প্রচণ্ড গরমের মৌসুমে রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে এক সফরে প্রচণ্ড খরতাপের শিকার হলাম। গরমের তীব্রতাহার কারণে লোকেরা তাহাদের হাত মাথার উপর রাখছিল। রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] এবং আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহাহ [রাদি.] ব্যতীত দলের মধ্যে আর কেউ রোযাদার ছিলো না। {১৬৬৩}
ইবনে মাজাহ ১৬৬৩ {১৬৬৩} সহিহুল বুখারি হাদিস নং ১৯৪৫, মুসলিম ১১২২, আবু দাউদ ২৪০৯, আহমাদ ২১১৮৯ সহীহাহ ১৯১, সহীহ আবু দাউদ ২০৮৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি হিশাম বিন সাদ সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তাহার মুখস্তশক্তি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার হাদিস গ্রহন করা যায় কিন্তু দলীলযোগ্য নয়। ইবনি হাজার আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন। তাহার শীয়া মতাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৭৭, ৩০/২০৪ নং পৃষ্ঠা] ২. উসমান বিন হায়্যান আদ-দিমাশকী সম্পর্কে ইবনি হাজার আসকালনী বলেন, তিনি আল-ওয়ালীদ বিন আবদুল মালিক এর কর্মচারী। ইবনি হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৮০৬, ১৯/৩৬০ নং পৃষ্ঠা] ।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
কাব বিন আসিম [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সফরে রোযা রাখা সাওয়াবের কাজ নয়। {১৬৬৪}
ইবনে মাজাহ ১৬৬৪ {১৬৬৪} নাসাঈ ২২৫৫, আহমাদ ২৩১৬৭, ২৩১৬৮, ২৩১৬৯, দারেমী ১৭১০, ১৭১১, ইরওয়া ৪/৫৮, ৯২৫, তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলূল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ সফরে রোযা রাখা সাওয়াবের কাজ নয়। {১৬৬৫}
ইবনে মাজাহ ১৬৬৫ {১৬৬৫} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। ইরওয়াহ ৪/৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি মুহাম্মাদ বিন মুসাফফা আল-হিমসী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী ও ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হিব্বান তাহাকে সিকাহ বললেও অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবনি হাজার আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ ও তাদলীস করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৬১৩, ২৬/৪৬৫ নং পৃষ্ঠা]।হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
আবদুর রহমান বিন আওফ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সফরে রোযা রাখে সে আবাসে উপস্থিত রোযা ভঙ্গকারী ব্যক্তির অনুরূপ। আবু ইসহাক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, হাদিসটি নির্ভরযোগ্য নয়। {১৬৬৬}
ইবনে মাজাহ ১৬৬৬ {১৬৬৬} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। যঈফাহ ৪৯৮, তালীকুর রগীব ২/৯১। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি আবদুল্লাহ বিন মুসা আত-তায়মী সম্পর্কে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অধিক ভুল করেন। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩৫৯৭, ১৬/১৮৪ নং পৃষ্ঠা] ২. উসামাহ বিন যায়দ সম্পর্কে ইবনি হিব্বান তাহাকে সিকাহ উল্লেখ করে বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। আল-আজলী তাহাকে সিকাহ বলেছেন। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তাহার থেকে হাদিস গ্রহন করা যায় তবে দলীল হিসেবে নয়। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৩১৭, ২/৩৪৭ নং পৃষ্ঠা] হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রমযান মাসেও রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা সফরে গিয়েছি। কিন্তু রোযাদারকে সফরে রোযা পালনের কারণে কিংবা রোযা ভঙ্গকারীকে রোযা ভেঙ্গেফেলার কারণে কোনরকম দোষারোপ করিতেন না।
তিরমিজি ৭১২ -সহীহা [৩/১৪৩], মুসলিম। আবু ঈসা এ হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ নির্ণীত নয়
আবু সাঈদ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে আমরা সফরে যেতাম। আমাদের মধ্যে রোযাদার এবং রোযা ভঙ্গকারী উভয়েই থাকতেন। রোযাদারের বিরুদ্ধে রোযা ভঙ্গকারী এবং রোযা ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে রোযাদার কোনরকম অভিযোগ করেননি। তারা মনে করিতেন, শক্তিশালী লোক রোযা পালন করলে তা ভালই করেছে এবং দুর্বল লোক রোযা পালন না করলে তাও ভাল করেছে।
তিরমিজি ৭১৩, সহীহ, মুসলিম। আবু ঈসা এই হাদীসটিকে হাসান সহীহ্ বলেছেন।রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] আমার নিকট এসে বলেন, তোমাদের কাছে [আহার করার মত] কিছু আছে কি? আমরা বললাম, না। তিনি বলেন, তাহলে আমি রোযা রাখলাম। অতঃপর তিনি রোযা অবস্থায় থাকেন। আমাদের নিকট কিছু হাদিয়া এলে তিনি রোযা ভঙ্গ করেন। আয়িশা [রাদি.] বলেন, তিনি কখনো রোযা রাখতেন আবার কখনো রোযা রাখতেন না। রাবী মুজাহিদ [রাদি.] বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, তা কিভাবে? আয়িশা [রাদি.] বলেন, তাহার দৃষ্টান্ত এরূপ যে, কোন ব্যক্তি সদকার মাল নিয়ে দান করার উদ্দেশ্যে বের হয়ে এর কিছু অংশ দান করে, আর কিছু অংশ রেখে দেয়। {১৭০১}
ইবনে মাজাহ ১৭০১ {১৭০১} মুসলিম ১১৫৪, আবু দাউদ ২৪৫৫, ইরওয়াহ ৪/১৩৫, ১৩৬। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ হাসান। ইসমাইল বিন মুসা সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সত্যবাদী কিন্তু শিয়া মতাবলম্বী। ইবনি হিব্বান বলেন তিনি সিকাহ তবে হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। ইবনি হাজার আল-আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় সন্দেহ করেন ও তাহার রাফিদি মতাবলম্বী। হওয়ার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৪৯১, ৩/২১০ নং পৃষ্ঠা] ২. তালহাহ বিন ইয়াহইয়া বিন তালহাহ বিন উবায়দুল্লাহ সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, কোন সমস্যা নেই। আবু যুরআহ আর-রাযী বলেন, তিনি সালিহ। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, তিনি সিকাহ। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ২৯৮৪, ১৩/৪৪১ নং পৃষ্ঠা]হাদিসের তাহকিকঃ হাসান হাদিস
জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
মক্কা বিজয়ের বছর রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] মক্কার উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হন। তিনি রোযা রাখেন এবং লোকেরাও তাহাঁর সাথে রোযা রাখে। কুরাউল গামীমে পৌঁছানোর পর তাঁকে বলা হল, রোযা রাখা লোকদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে। আপনি কি করেন তারা সেই অপেক্ষায় আছে। আসরের নামাজ আদায়ের পর তিনি এক পেয়ালা পানি চেয়ে আনালেন এবং তা পান করিলেন। তখন লোকেরা তাহাঁর দিকে তাকিয়ে দেখছিল। ফলে তাহাদের মধ্যেকার কিছু লোক রোযা ভাঙ্গলো এবং কিছু লোক রোযা থাকল। তখনও কিছু লোক রোযা অবস্থায় আছে এ কথা তাহাঁর নিকটে পৌঁছলে তিনি বললেনঃ এরা হচ্ছে অবাধ্য নাফরমান।
তিরমিজি ৭১০, -সহীহ, ইরওয়া [৪/৫৭], মুসলিম। কাব ইবনি আসিম, ইবনি আব্বাস ও আবু হুরাইরা [রাদি.] হইতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণিত হাদীসটিকে আবু ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “সফরের মাঝে রোযা পালন করাটা সাওয়াবের কাজ নয়”।
আলিমদের মধ্যে সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা প্রসঙ্গে মতবিরোধ আছে। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর একদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্যদের মতানুযায়ী সফরে থাকা অবস্থায় রোযা পালন না করাই উত্তম। এমনকি কারো কারো মতানুযায়ী সফরে থাকাবস্থায় কোন লোক রোযা পালন করলে তাকে আবার সে রোযা কাযা করিতে হইবে। সফরে রোযা না পালনের পক্ষে ঈমাম আহ্মাদ ও ইসহাক অভিমত দিয়েছেন। রসুলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর অন্য আরেকদল বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও আলিম বলেছেন শক্তি-সামর্থ্যবান লোকে যদি সফরে রোযা পালন করে তাহলে তা ভাল এবং তাই উত্তম, রোযা আদায় না করলে তাকেও ভাল বলেছেন। সুফিয়ান সাওরী, মালিক ইবনি আনাস ও আবদুল্লাহ ইবনিল মুবারাকের.এই মত। ঈমাম শাফি বলেন, “সফরে থাকাবস্থায় রোযা পালন করা সাওয়াবের কাজ নয়” এবং “এরা নাফরমান” এই কথার তাৎপর্য হচ্ছে, যে লোকের অন্তর আল্লাহ্র দেয়া অবকাশ [রুখসাত] গ্রহণ করিতে প্রস্তুত নয় সে লোকের ক্ষেত্রে ঐ কথা প্রযোজ্য। কিন্তু সফরে রোযা ভেঙ্গে ফেলাকে যে লোক জায়িয মনে করে এবং রোযা রাখার সামর্থ্য থাকায় রোযা পালন করে, তা আমার নিকটে পছন্দনীয়। রোজার হাদীস – এই হাদীসটির তাহকিকঃ সহীহ হাদীস
রোযাদারের মিসওয়াক করা ও সুরমা লাগানো।
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ রোযাদারের উত্তম গুণাবলির একটি হলো দাঁতন করা। {১৬৭৭}
ইবনে মাজাহ ১৬৭৭ {১৬৭৭} যঈফাহ ৩৫৭৪। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ জইফ। উক্ত হাদিসের রাবি ১. আবু ইসমাইল আল-মুআদ্দিব সম্পর্কে আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি সিকাহ। আহমাদ বিন সালিহ আল জায়লী তাহাকে সিকাহ হিসেবে উল্লেখ করিয়াছেন। আব্দুর রহমান বিন ইউসুফ বলেন, তিনি সত্যবাদী। ইবনি হাজার আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় অপরিচিত। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ১৭৮, ২/৯৯ নং পৃষ্ঠা] ২. মুজালীদ বিন সাঈদ সম্পর্কে ঈমাম বুখারী ও ইয়াকুব বিন সুফইয়ান বলেন, তিনি সত্যবাদী। ঈমাম নাসাঈ বলেন, তিনি সিকাহ। ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল কাত্তান বলেন, তিনি দুর্বল। ইবনি মাঈন বলেন, তাহার হাদিস দ্বারা দলীল গ্রহন করা যাবে না। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৫৭৮০, ২৭/২১৯ নং পৃষ্ঠা] হাদিসের তাহকিকঃ দুর্বল হাদিস
আয়িশা [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রাসুলুল্লাহ [সাঃআঃ] রোযাহারত অবস্থায় সুরমা লাগিয়েছেন। {১৬৭৮}
ইবনে মাজাহ ১৬৭৮ {১৬৭৮} হাদিসটি ঈমাম ইবনি মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করিয়াছেন। রওদুন নাদীর ৭৫৯। তাহকিক নাসিরুদ্দিন আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবি আবুত তাকী হিশাম বিন আবদুল মালিক আল হিমসী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য। আবু হাতিম বিন হিব্বান তাহার সিকাহ গ্রন্থে তাহার নাম উল্লেখ করিয়াছেন। ইবনি হাজার আসকালনী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। [তাহজিবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৮৩, ৩০/২২৩ নং পৃষ্ঠা] হাদিসের তাহকিকঃ সহীহ হাদিস
Leave a Reply