সকাল সন্ধ্যায় মসজিদে যাবার ফযীলত ।
আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর ব্যবস্থা করে রাখেন।
বুখারী ৬৬২, [-মুসলিম] [1]
৬৫৫. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বললেনঃ হে বনী সালিমা! তোমরা কি (মসজিদে আসার পথে) তোমাদের পদক্ষেপের নেকী কামনা কর না? ——— “তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিখে রাখি” (সুরা ইয়া সীন ৩৬/১২) তাহাঁর এ বাণী সম্পর্কে মুজাহিদ বলেন। —– অর্থাৎ তোমাদের পদক্ষেপসমূহ।
৬৫৬. ইবনু মারইয়াম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
বনী সালিমা গোত্রের লোকেরা নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর নিকট এসে বসতি স্থাপন করিতে চেয়েছিল। আনাস (রাদি.) বলেন, কিন্তু মদীনার কোনো এলাকা একেবারে শূন্য হওয়াটা নাবী (সাঃআঃ) পছন্দ করেননি। তাই তিনি তোমরা কি (মসজিদে আসা যাওয়ায়) তোমাদের পদচিহ্নগুলোর সওয়াব কামনা কর না? মুজাহিদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, ——– অর্থাৎ যমীনে চলার পদচিহ্নসমূহ।
2/1061 وَعَنْه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ مَضَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، لِيَقْضِي فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللهِ، كَانَتْ خُطُواتُهُ، إحْدَاهَا تَحُطُّ خَطِيئَةً، وَالأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً». رواه مسلم
২/১০৬১। উক্ত রাবী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে ওযু করে আল্লাহর কোনো ঘরের দিকে এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে, আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরয ইবাদত [নামায] আদায় করিবে, তাহলে তার কৃত প্রতিটি দুই পদক্ষেপের মধ্যে একটিতে একটি করে গুনাহ মিটাবে এবং অপরটিতে একটি করে মর্যাদা উন্নত করিবে।” [মুসলিম] [2]
3/1062 وَعَنْ أُبيّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ لاَ أَعْلمُ أَحَداً أبْعَدَ مِنَ المَسْجِدِ مِنْهُ، وَكَانَتْ لاَ تُخْطِئُهُ صَلاَةٌ، فَقِيلَ لَهُ: لَوِ اشْتَرَيْتَ حِمَاراً لِتَرْكَبَهُ فِي الظَّلْمَاءِ وَفِي الرَّمْضَاءِ، قَالَ: مَا يَسُرُّنِي أَنَّ مَنْزِلِي إِلَى جَنْبِ المَسْجِدِ، إنِّي أُرِيدُ أَنْ يُكْتَبَ لِي مَمْشَايَ إِلَى المَسْجِدِ، وَرُجُوعِي إذَا رَجَعْتُ إِلَى أَهْلِي . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قَدْ جَمَعَ اللهُ لكَ ذَلِكَ كُلَّه» رواه مُسلِم
৩/১০৬২। উবাই ইবনি কা‘ব রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক আনসারী ছিল। মসজিদ থেকে তার চাইতে দূরে কোনো ব্যক্তি থাকত বলে আমার জানা নেই। তবুও সে কোনো নামায [মসজিদে জামাতসহ] আদায় করিতে ত্রুটি করত না। একদা তাকে বলা হল, ‘যদি একটা গাধা খরিদ করিতে এবং রাতের অন্ধকারে ও উত্তপ্ত রাস্তায় তার উপর আরোহণ করিতে, [তাহলে ভাল হত]।’ সে বলিল, ‘আমার বাসস্থান মসজিদের পাশে হলেও তা আমাকে আনন্দ দিতে পারত না। কারণ আমার মনস্কামনা এই যে, মসজিদে যাবার ও নিজ বাড়ি ফিরার সময় কৃত প্রতিটি পদক্ষেপ যেন লিপিবদ্ধ হয়।’ রসুলুল্লাহ সাঃআঃ [তার এহেন পুণ্যাগ্রহ দেখে] বলিলেন, “নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তোমার [ভাগ্যে] তা সমস্তই জুটিয়েছেন।” [মুসলিম][3]
4/1063 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَلَتِ البِقَاعُ حَولَ المَسْجِدِ، فَأَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَنْتَقِلُوا قُرْبَ المَسْجِدِ، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ لَهُمْ: «بَلَغَنِي أَنَّكُم تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ المَسْجِدِ ؟» قَالُوا: نَعَم، يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ أرَدْنَا ذَلِكَ . فَقَالَ: «بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُم تُكْتَبْ آثارُكُمْ، دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثارُكُمْ،» فَقَالُوا: مَا يَسُرُّنَا أَنَّا كُنَّا تَحَوَّلْنَا . رواه مسلم، وروى البخاري معناه من رواية أنس .
৪/১০৬৩। জাবের রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে নববীর আশে-পাশে কিছু জায়গা খালি হল। [এ দেখে] সালেমা গোত্র মসজিদে [নববী]এর নিকট স্থানান্তরিত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করিল। এ খবর নবী সাঃআঃ জানতে পারলে তিনি তাহাদেরকে বলিলেন, “আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাঁচ্ছ!” তারা বলিল, ‘জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বলিলেন, “হে সালেমা গোত্র! তোমরা নিজেদের [বর্তমান] বাড়িতেই থাক। তোমাদের [মসজিদের পথে] পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হইবে। তোমরা নিজেদের [বর্তমান] বাড়িতেই থাক। তোমাদের [মসজিদের পথে] পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হইবে।” তারা বলিল, ‘[মসজিদের নিকট] স্থানান্তরিত হওয়া আমাদেরকে আনন্দ দেবে না।’ [মুসলিম, ইমাম বুখারী ও আনাস রাঃআঃ হইতে এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন।] [4]
5/1064 وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ أَجْراً فِي الصَّلاةِ أَبْعَدُهُمْ إلَيْهَا مَمْشىً، فَأَبْعَدُهُمْ، وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلاَةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الإمَامِ أَعظَمُ أَجْراً مِنَ الَّذِي يُصَلِّيهَا ثُمَّ يَنَامُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১০৬৪। আবূ মুসা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাঃআঃ বলেছেন, “[মসজিদে জামাতসহ] নামায পড়ার ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বেশী নেকী পায়, যে ব্যক্তি সব চাইতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে। আর যে ব্যক্তি [জামাতের সাথে] নামাযের অপেক্ষা না করেই একা নামায পড়ে শুয়ে যায়, তার চাইতে সেই বেশী নেকী পায়, যে নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করে ও ইমামের সাথে জামাত সহকারে নামায আদায় করে।” [বুখারী, মুসলিম] [5]
6/1065 وَعَنْ بُرَيدَة رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَشِّرُوا المَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى المَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه أبُو دَاوُدَ وَالتِّرمِذِيُّ
৬/১০৬৫। বুরাইদাহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, “রাত্রির অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ জ্যোতির শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।” [আবূ দাউদ, তিরমিযী] [6]
7/1066 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «إِسْبَاغُ الوُضُوءِ عَلَى المَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الخُطَا إلَى المَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فذَلِكُمُ الرِّبَاطُ». رواه مسلِم
৭/১০৬৬। আবূ হুরায়রা রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাঃআঃ [একদা সমবেত সহচরদের উদ্দেশ্যে] বলিলেন, “তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না কি, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন করে দেবেন এবং [জান্নাতে] তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?” তাঁরা বলিলেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বলিলেন, “[তা হচ্ছে] কষ্টকর অবস্থায় পরি পূর্ণরূপে ওযু করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক অক্তের নামায আদায় করে পরবর্তী অক্তের নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করা। আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ। এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ।” [মুসলিম] [7]
8/1067 وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذا رَأَيْتُمُ الرَّجُلَ يَعْتَادُ المَسَاجِدَ فَاشْهِدُوْا لَهُ بِالْإِيْمَانِ» قال اللَّه عزَّ وجلَّ: { إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَن بِاللهِ والْيَومِ الآخِرِ } الآية . رواه الترمذي وقال: حديث حسن .
৮/১০৬৭। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন: কোনো ব্যক্তিকে তোমরা যখন মসজিদে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত দেখিতে পাও তখন তার ঈমানদারীর সাক্ষী দাও। কারণ মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে কেবল তারাই যারা আল্লাহর উপর এবং শেষ দিবসের [পরকালের] উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে…।” [সূরা আত্-তাওবাহ্ঃ ১৮] [তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন][8]
[1] সহীহুল বুখারী ৬৬২, মুসলিম ৪৬৭,৬৬৯,আহমাদ ১০২৩০
[2] মুসলিম ৬৬৬, ইবনু মাজাহ ৭৭৪
[3] মুসলিম ৬৬৩, আবূ দাউদ ৫৫৭, ইবনু মাজাহ ৭৮৩, আহমাদ ২০৭০৯, দারেমী ১২৮৪
[4] সহীহুল বুখারী ৬৫৫,৬৫৬,১৮৮৭, মুসলিম ৬৬৫, ইবনু মাজাহ ৭৮৪, আহমাদ ১১৬২২,১২৪৬৫, ১৩৩৫৯
[5] সহীহুল বুখারী ৬৫১, মুসলিম ৬৬২
[6] আবূ দাউদ ৫৬১, তিরমিযী ২২৩
[7] মুসলিম ২৫১, তিরমিযী ৫১, নাসায়ী ১৪৩, আহমাদ ৭১৬৮,৭৬৭২,৭৯৩৫,৭৯৬১,৯৩৬১, মুওয়াত্তা মালিক ৩৮৬
[8] আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি এরূপই বলেছেন। কিন্তু এর সনদটি দুর্বল যেমনটি আমি “আলমিশকাত” গ্রন্থে (নং ৭২৩) বর্ণনা করেছি। তবে এর ভাবার্থ সহীহ্। এর সনদে দার্রাজ ইবনু আবিস সাম্হ্ নামক এক বর্ণনাকারী রয়েছেন। তার সম্পর্কে হাফিয ইবনু হাজার “আত্তাক্বরীব” গ্রন্থে বলেনঃ তিনি তার হাদীসের ব্যাপারে সত্যবাদী, তবে আবুল হাইশাম হতে তার বর্ণনা করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। এ কারণেই হাফিয যাহাবী ইমাম হাকিমের সমালোচনা করে বলেছেনঃ দার্রাজ বহু মুনকারের অধিকারী। তিরমিযী ৩০৯৩