ফাজায়েলে মজলিস
এ বিষয়ে সরাসরি মুল হাদিস শরীফ থেকে পড়ুন >> মুয়াত্তা মালিক >> সহীহ বুখারী >> আদাবুল মুফরাদ >> সহীহ মুসলিম >> আবু দাউদ >> ইবনে মাজাহ >> তিরমিজি >> নাসাঈ >> মিশকাত >> রিয়াদুস সালেহীন >> বুলুগুল মারাম হাদীস শরীফ হতে
পরিচ্ছেদ – ১২৯: কেউ কাউকে তার বসার স্থান থেকে উঠাবে না।
সুরা মুজাদালাহ ৫৮/১১
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَكُمۡ تَفَسَّحُواْ فِي ٱلۡمَجَٰلِسِ فَٱفۡسَحُواْ يَفۡسَحِ ٱللَّهُ لَكُمۡۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُواْ فَٱنشُزُواْ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١
হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।
ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) নিষেধ করিয়াছেন, যেন কেউ তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হইতে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমি নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুমার ব্যাপারে? তিনি বলিলেন, জুমা ও অন্যান্য (সালাতের) ব্যাপারেও।
বুখারী ৯১১, ৬২৬৯
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
ইবনু উমার (রাদি.) বর্ণিত যে, নাবী (সাঃআঃ) কোন লোককে তার বসার স্থান থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে অন্য লোক বসতে নিষেধ করিয়াছেন। তবে তোমরা বসার জায়গা প্রশস্ত করে দাও এবং ব্যবস্থা করে দাও। ইবনু উমার (রাদি.) কেউ তার জায়গা থেকে উঠে যাক এবং তার স্থানে অন্যজন বসুক তা পছন্দ করিতেন না।
বুখারী ৬২৭০ (আঃপ্রঃ- ৫৮২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৩)
বসা
ইবনু উমার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) –কে কাবার আঙ্গিনায় দু হাঁটু খাড়া করে দু হাত দিয়ে তা বেড় দিয়ে এভাবে উপবিষ্ট অবস্থায় পেয়েছি।
বুখারী ৬২৭২ (আঃপ্রঃ- ৫৮৩০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৫)
আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
যে, নাবী (সাঃআঃ) –এর নিকট আমার অধিক সওম পালন করার কথা উল্লেখ করা হলো। তখন তিনি আমার ঘরে আসলেন এবং আমি তাহাঁর উদ্দেশ্যে খেজুরের ছালে ভরা চামড়ার একটা বালিশ পেশ করলাম। তিনি মাটিতেই বসে গেলেন। আর বালিশটা আমার ও তাহাঁর মাঝে থেকে গেল। তিনি আমাকে বললেনঃ প্রত্যেক মাসে তিনদিন সওম পালন করা কি তোমার জন্যে যথেষ্ট নয়? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তা হলে পাঁচ দিন? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তবে সাতদিন? আমি আবার বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তবে নয়দিন? আমি পুনরায় বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেনঃ তা হলে এগার দিন? আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল! তখন তিনি বললেনঃ দাউদ (আঃ) –এর সওমের চেয়ে অধিক কোন (নাফ্ল) সওম নেই। তিনি প্রত্যেক মাসের অর্ধেক দিন সওম পালন করিতেন অর্থাৎ একদিন সওম পালন করিতেন আর একদিন পালন করিতেন না।
বুখারী ৬২৭৭ (আঃপ্রঃ- ৫৮৩৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭২৯)
সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
তিনি বলেনঃ আমরা জুমুআহর সলাতের পরেই কা-ইলাহ করতাম এবং দুপুরের খাদ্য গ্রহণ করতাম।
বুখারী ৬২৭৯ (আঃপ্রঃ- ৫৮৩৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৭৩১)
২১৯৬. আহনাফ ইবনি ক্বায়স [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি মাদীনায় আসার পর একদা কুরায়শদের এক সমাবেশে বসা ছিলাম। সেখানে তাদের [গোত্রীয় নেতা] দলপতিও উপস্থিত ছিল। এমন সময় মোটা কাপড় পরিহিত সুঠাম দেহের অধিকারী ও রুক্ষ চেহারার এক ব্যক্তি আসল। এসে দাঁড়িয়ে বলিল, সম্পদ কুক্ষিগতকারীদের সুসংবাদ দাও যে, একটি পাথর জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে, তাদের কারো বুকের মাঝখানে রাখা হইবে। এমনকি তার কাঁধের হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হলে তা স্তনের বোঁটা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং পাথরটি [আগুনের উত্তাপের ফলে] কাঁপতে থাকিবে। বর্ণনাকারী বলেন, উপস্থিত লোকেরা সবাই মাথা নত করে থাকল এবং তার বক্তব্যের প্রত্যুত্তরে কাউকে কিছু বলিতে দেখলাম না। অতঃপর সে পিছন ফিরে এসে একটি খুটির কাছে বসে পড়ল, আমিও তাকে অনুসরণ করলাম। অর্থাৎ তার কাছে এসে বসলাম। অতঃপর আমি বললাম যে, এরাতো তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছে বলে আমি দেখিতে পাচ্ছি। তিনি [উত্তরে] বলিলেন, এরা [দ্বীন সম্পর্কে] কিছুই বোঝে না বা জ্ঞান রাখে না। আমার বন্ধুবর আবুল ক্বাসিম [সাঃআঃ] একবার আমাকে ডাকলেন এবং আমি উপস্থিত হলাম। অতঃপর তিনি বলিলেন, “তুমি উহুদ পাহাড় দেখিতে পাচ্ছ? আমি তখন সূর্যের দিকে আমার দৃষ্টি নিবন্ধ করলাম এবং ধারণা করলাম তিনি হয়তো আমাকে কোন কাজে পাঠাবেন। আমি বললাম, হ্যাঁ দেখিতে পাচ্ছি। অতঃপর তিনি বলিলেন, আমি এটা চাই না যে, এ পাহাড় আমার জন্য সোনা হোক আর যদি এত অঢেল সম্পদের মালিক আমি হয়েও যাই তাহলে ঋন পরিশোধের জন্য, শুধু তিন দীনার রেখে বাকি সব খরচ করে দিব। অতঃপর এরা শুধু দুনিয়া সঞ্চয় করেছে, আর কিছুই বুঝছে না। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাকে বললাম তুমি ও তোমার কুরায়শ গোত্রীয় ভাইদের কী হয়েছে; তুমি তাদের কাছে প্রয়োজনে কেন যাওনা, মেলামেশা কর না আর কেন বা কোন কিছু গ্রহন করো না? উত্তরে সে বললো, তোমার প্রভুর শপথ! আমি আল্লাহ তাহাঁর রাসূলের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে [অর্থাৎ মৃত্যু পর্যন্ত] তাদের কাছে পার্থিব কোন কিছু চাই না এবং দ্বীন সম্পর্কেও কোন কিছু জিজ্ঞেস করব না।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ২১৭৫, ইসলামিক সেন্টার- ২১৭৭]
সালমান ফারসী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ
নাবী (সাঃআঃ) বলছেনঃ যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল হইতে ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর তার নির্ধারিত সালাত আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তা হলে তার সে জুমা হইতে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
বুখারী ৮৮৩, ৯১০
অনুচ্ছেদ-১৩ঃ রাস্তার পাশে বসা সম্পর্কে
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিয়াছেনঃ তোমরা রাস্তার মাঝে বসা সম্পর্কে সতর্ক হও। সাহাবীগণ বলিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাতে না বসে আমাদের উপায় নেই। আমরা তথায় [বসে] আলোচনা করে থাকি। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেনঃ যদি তোমাদের একান্তেই বসতে হয় তাহলে তোমরা রাস্তার হক আদায় করিবে। সাহাবীগণ প্রশ্ন করিলেন, হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি? তিনি বলিলেন, দৃষ্টি সংযত রাখা, কষ্ট দেয়া হইতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎ কাজ নিষেধ করা।
আবু দাউদ ৪৮১৫, সহিহ হাদিস
আনাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, এক মহিলা নাবী [সাঃআঃ]-এর নিকট এসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার নিকট একটি প্রয়োজনে এসেছি। তিনি বলিলেন, হে অমুকের মা! তোমার সুবিধা মতো রাস্তার যে কোন গলিপথে বসো এবং আমি তোমার নিকট বসে তোমার দরকার পূরণ করবো। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মহিলাটি বসলো এবং নাবী [সাঃআঃ] ও বসে থাকলেন যাবত না তার প্রয়োজন পূরণ হলো।
আবু দাউদ ৪৮১৮, ৪১৯, সহিহ হাদিস
আবু সাঈদ আল-খুদরী [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিতে শুনিয়াছি, বসার জন্য উত্তম হলো চওড়া স্থান।
আবু দাউদ ৪৮২০, সহিহ হাদিস
অনুচ্ছেদ-১৫ঃ রোদ ও ছায়ার মাঝামাঝি বসা সম্পর্কে
আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
আবুল ক্বাসিম [রাদি.] বলিয়াছেনঃ তোমাদের কেউ রোদে বসা অবস্থায় সেখানে ছায়া এলে তার দেহের কিছু অংশ রোদে এবং কিছু অংশ ছায়ায় পড়ে গেলে সে যেন সেখান হইতে উঠে যায়।
আবু দাউদ ৪৮২১, সহিহ হাদিস
ক্বাইস [রাদি.] হইতে তার পিতা হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর খুত্ববাহ দেয়া অবস্থায় রোদে এসে দাঁড়ালেন। তখন তিনি তাহাকে আদেশ দিলে তাহাকে ছায়ায় আনা হয়।
আবু দাউদ ৪৮২২, সহিহ হাদিস
২/৮৩০। আবূ হুরাইরা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘মজলিস থেকে কেউ উঠে গিয়ে আবার সেখানে ফিরে এলে সেই ঐ জায়গার বেশি হকদার।’’ [মুসলিম][2]
৩/৮৩১। জাবের ইবনি সামুরাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা যখন নবী সাঃআঃ এর দরবারে আসতাম, তখন যেখানে মজলিস শেষ হত সেখানে বসে যেতাম।’ [আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান][3]
৪/৮৩২। আবূ আব্দুল্লাহ সালমান ফারেসী রাঃআঃ হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমআর দিনে গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরের সুগন্ধি নিয়ে লাগায়। অতঃপর জুমআর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে প্রবেশ করে দু’জনের মধ্যে পৃথক করে না। তারপর তার ভাগ্যে যতটা লেখা হয়েছে, ততটা নামায আদায় করে, তারপর যখন ইমাম খুৎবা দেয় তখন সে চুপ থাকে, তাহলে তার জন্য এক জুমআহ থেকে অন্য জুমআহ পর্যন্ত কৃত পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’’ [বুখারী][4]
৫/৮৩৩। ‘আমর ইবনি শুয়াইব রাঃআঃ স্বীয় পিতা থেকে তিনি স্বীয় দাদা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে দু’জনের মধ্যে তাহাদের বিনা অনুমতিতে তফাৎ সৃষ্টি করিবে। [আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান ][5]
আবূ দাউদের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘দু’জনের মধ্যে তাহাদের বিনা অনুমতিতে বসা যাবে না।’’
৬/৮৩৪। হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রাঃআঃ হতে বর্ণিত, এমন লোককে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ অভিশাপ দিয়েছেন, যে লোক মাজলিশের মধ্যখানে গিয়ে বসে পড়ে। হাদীসটি আবূ দাউদ উত্তম সনদে বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম তিরমিযী আবূ মিজলায [রাহঃ] হতে বর্ণনা করিয়াছেন, এক মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফাহ রাঃআঃ বলিলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ [এ কাজটির উপর] অভিশাপ বর্ষণ করিয়াছেন অথবা সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর মুখ দিয়ে অভিশাপ বর্ষণ করেন যে মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়ে। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।[6]
৭/৮৩৫। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃকে বলিতে শুনেছি যে, ‘‘যে সভা সবচেয়ে বেশি প্রশস্ত সেটা সবচেয়ে উত্তম সভা।’’ [আবূ দাঊদ, বুখারীর শর্তে সহীহ][7]
৮/৮৩৬। আবূ হুরাইরা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশি হৈ-হল্লা হয়, অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে এই দো‘আ পড়ে,
سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إلَيْكَ
‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক্।’’ [অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা [প্রত্যাবর্তন] করছি।]
তাহলে উক্ত মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়। [তিরমিযী, হাসান সহীহ][8]
* [প্রকাশ থাকে যে, এই দো‘আকে ‘কাফফারাতুল মাজলিস’-এর দো‘আ বলা হয়।
৯/৮৩৭। আবূ বার্যাহ রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ যখন কোন সভা থেকে উঠে চলে যাবার ইচ্ছা করিতেন, তখন শেষের বেলায় এই দো‘আ পড়তেন
سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيكَ
‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইক।’’ অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা [প্রত্যাবর্তন] করছি।
একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে দো‘আ পড়লেন অতীতে তো তা পড়তেন না।’ তিনি বলিলেন, ‘‘এই দো‘আটি মজলিসে [সংঘটিত ভুল-ত্রুটি]র কাফ্ফারাস্বরূপ।’’ [আবূ দাঊদ, আবূ আব্দুল্লাহ হাকেম আয়েশা রাযিবয়াল্লাহ আনহা হতে তাহাঁর ‘মুস্তাদরাক’ নামক গ্রন্থে এই হাদীসটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করিয়াছেন।][9]
১০/৮৩৮। ইবনি উমার রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুব কম মজলিসই এমন হতো, যেখান থেকে নবী সাঃআঃ এই দো‘আ না পড়ে উঠতেন, [অর্থাৎ অধিকাংশ মজলিস থেকে উঠার আগে এই দো‘আ পড়তেন,]
اَللهم اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ، وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ، وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا، اَللهم مَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا، وَأَبْصَارِنَا، وَقُوَّتِنَا مَا أحْيَيْتَنَا، وَاجْعَلْهُ الوَارِثَ مِنَّا، وَاجْعَلْ ثَأرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا، وَلاَ تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا، وَلاَ تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا، وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا، وَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لاَ يَرْحَمُنَا
‘‘আল্লা-হুম্মাক্বসিম লানা মিন খাশ্য়্যাতিকা মা তাহূলু বিহী বাইনানা অবাইনা মা‘আ-স্বীক, অমিন ত্বা-‘আতিকা মা তুবাল্লিগুনা বিহী জান্নাতাক, অমিনাল য়্যাক্বীনি মা তুহাউবিনু বিহী আলাইনা মাস্বা-ইবাদ দুন্য়্যা। আল্লাহুম্মা মাত্তি‘না বিআসমা-‘ইনা অ আবস্বা-রিনা অ ক্বুউওয়াতিনা মা আহয়্যাইতানা, অজ্‘আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না। অজ‘আল সা’রানা আলা মান যালামানা, অনস্বুরনা ‘আলা মান ‘আ-দা-না, অলা তাজ‘আল মুস্বীবাতানা ফী দীনিনা। অলা তাজ‘আলিদ্দুন্য়্যা আকবারা হাম্মিনা অলা মাবলাগা ‘ইলমিনা, অলা তুসাল্লিত্ব ‘আলাইনা মাল লা য়্যারহামুনা।’’অর্থাৎ আল্লাহ গো! আমাদের জন্য তোমার ভীতি বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের ও তোমার অবাধ্যাচরণের মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি কর। তোমার আনুগত্য বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছাও। আমাদের জন্য এমন একীন [প্রত্যয়] বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের উপর দুনিয়ার বিপদসমূহকে সহজ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কর্ণ, চক্ষু ও শক্তি দবারা যতদিন আমাদেরকে জীবিত রাখ, ততদিন আমাদেরকে উপকৃত কর এবং তা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখ। যারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, তাহাদের নিকট আমাদের প্রতিশোধ নাও। যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে তাহাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। আমাদের দ্বীনে আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করো না। দুনিয়াকে আমাদের বৃহত্তম চিন্তার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা করো না, আর যারা আমাদের উপর রহম করে না, তাহাদেরকে আমাদের উপর ক্ষমতাসীন করো না। [তিরমিযী, হাসান][10]
১১/৮৩৯। আবূ হুরাইরা রাঃআঃ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে জনগোষ্ঠীই কোন সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকির না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। [অর্থাৎ যেন মৃত গাধার গোশ্ত ভক্ষণান্তে উঠে চলে যায়।] আর তাহাদের জন্য অনুতাপ হবে।’’ [আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে][11]
১২/৮৪০। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে কোন জনগোষ্ঠী কোন মজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকির না করে এবং তাহাদের নবী সাঃআঃ এর উপর দরূদ পাঠ না করে, তাহাদেরই নোকসান [দুর্ভোগ] হবে; আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তো তাহাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং যদি চান তো তাহাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। [তিরমিযী, হাসান][12]
১৩/৮৪১। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন বৈঠকে বসে তাতে আল্লাহর যিকির করল না, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ক্ষতি হবে। আর যে ব্যক্তি কোন শয্যায় শয়ন করে তাতে আল্লাহর যিকির করে না, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে তার ক্ষতি হবে।’’ [আবু দাঊদ][13]
[1] তিরমিযী ২৭৪৯, ২৭৫০, আবূ দাউদ ৪৮২৮, আহমাদ ৪৬৪৫, ৪৬৫০, ৪৭২১, ৪৮৫৬, ৫০২৬, ৫৫৪২, ৫৫৯৩, ৫৭৫১, ৫৯৮৮ , ৬০২৬, ৬০৪৯, ৬৩৩৫, দারেমী ২৬৫৩
[2] আবূ দাউদ ৪৮৫৩, মায ৩৭১৭, আহমাদ ৭৫১৪, ৭৭৫১, ৮৩০৪, ৮৮১০, ৯৪৬৩, ৯৪৮২, ৯৮৯৪, ১০৪৪২, ১০৫৫৯, দারেমী ২৬৫৪
[3] আবূ দাউদ ৪৮২৫, তিরমিযী ২৭২৫, আহমাদ ২০৪২৩, ২০৫৩৫
[4] নাসায়ী ১৪০৩, আহমাদ ২৩১৯৮, ২৩২০৬, ২৩২১৩, দারেমী ১৫৪১
[5] আবূ দাউদ ৪৮৪৪, ৪৮৪৫, তিরমিযী ২৭৫২, আহমাদ ৬৯৬০
[6] আমি [আলবানী] বলছিঃ আবূ মিজলায হচ্ছেন লাহেক ইবনু হুমায়েদ। তিনি হুযাইফাহ্ হতে শুনেননি। যেমনটি ইবনু মা‘ঈন প্রমুখ বলেছেন। এছাড়া অন্য সমস্যাও রয়েছে। বিস্তারিত জানতে দেখুন ‘‘য‘ঈফা’’ [৬৩৮]। আবূ দাউদ ৪৮২৬, তিরমিযী ২৭৫৩।
[7] আবূ দাউদ ৪৮২০, আহমাদ ১০৭৫৩, ১১২৬৬
[8] তিরমিযী ৩৪৩৩, আহমাদ ১০০৪৩
[9] আবূ দাউদ ৪৮৫৯, দারেমী ২৬৫৮
[10] তিরমিযী ৩৫০২
[11] আবূ দাউদ ৪৮৫৫, ৪৮৫৬, তিরমিযী ৩৩৮০, আহমাদ ৯৩০০, ৯৪৮২, ৯৮৮৪ , ৯৯০৭, ১০০৫০, ১০০৪৪
[12] তিরমিযী ৩৩৮০, আহমাদ ৯৩০০, ৯৪৭২, ৯৫৩৩, ৯৮৮৪, ৯৯০৭, ১০০৫০