শঙ্কার ভয়ের সময় নামাজ
শঙ্কার ভয়ের সময় নামাজ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন
২৫. অধ্যায়ঃ শঙ্কার ভয়ের সময় নামাজ
১৮২৭. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দুটি দলের এক দলের সাথে এক রাকআত সলাতুল খাওফ আদায় করেন, তখন অপর দলটি শত্রুবাহিনীর মুকাবিলায় রত ছিলেন। অতঃপর প্রথম দলটি দ্বিতীয় দলের স্থানে গিয়ে শত্রুর মুখোমুখি অবস্থান গ্রহন করে এবং শেষোক্ত দলটি আসলে নবী [সাঃআঃ] তাদের সাথে এক রাকআত নামাজ আদায় করে সালাম ফিরান। অতঃপর উভয় দল পৃথক পৃথকভাবে এক রাকআত করে নামাজ আদায় করে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১২, ইসলামিক সেন্টার- ১৮১৯]
১৮২৮. আবদুল্লাহ ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সলাতুল খাওফ সম্পর্কে বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেন, আমি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে এ নামাজ আদায় করেছি ….. পূর্বোক্ত হাদীসের সমার্থবোধক।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৩, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২০]
১৮২৯. ইবনি উমর [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] কোন এক যুদ্ধে সলাতুল খাওফ [শঙ্কাকালীন নামাজ] আদায় করিলেন। সামরিক বাহিনীর একাংশ তাহাঁর সাথে নামাজে দাঁড়াল এবং অপরাংশ শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থানে ছিল। তিনি তাহাঁর সঙ্গের দলটিকে নিয়ে এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তারা চলে গেল এবং অপর দলটি আসার পর তিনি তাদের নিয়ে আর এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর উভয় দল স্বতন্ত্রভাবে এক রাকআত করে নামাজ আদায় করে নিল। ইবনি উমর [রাদি.] বলেন, ভয়-ভীতি বা বিপদাশঙ্কা অধিক বৃদ্ধি পেলে আরোহী অবস্থায় বা দাঁড়ানো অবস্থায় ইশারায় নামাজ আদায় করিবে।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৪, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২১]
১৮৩০. জাবির ইবনি আবদুল্লাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেছি। তিনি আমাদেরকে দু দলে বিভক্ত করিলেন। একদল ছিল রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর পিছনে আর শত্রুবাহিনী ছিল আমাদের ও ক্বিবলার মাঝখানে। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমা বললে আমরাও সকলে তাকবীরে তাহরীমা বললাম। তিনি রুকূ করলে আমরা সকলেই রুকূ করলাম অতঃপর তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালে আমরা সকলেই মাথা উঠালাম। অতঃপর তিনি সাজদায় গেলেন এবং তার নিকটস্থ কাতারের লোকজনও, আর খানিক দূরের কাতারটি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নবী [সাঃআঃ] যখন সাজদাহ্ সমাপ্ত করিলেন এবং তাহাঁর নিকটস্থ কাতারও দাঁড়িয়ে গেল, তখন খানিক দূরের কাতারটি সাজাদায় গেল। আর এরা দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর পিছনের দলটি সামনে আসল এবং সামনের দলটি পিছনে সরে গেল। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] রুকূ করলে আমরাও সকলে রুকূ করলাম। অতঃপর তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠালে আমরাও সকলে মাথা উঠালাম। অতঃপর তিনি সাজদায় গেলেন এবং তাহাঁর নিকটবর্তী দলটি যারা প্রথম রাকআতে পিছনে ছিল, তারাও। আর খানিক দূরের দলটি শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকল। নবী [সাঃআঃ] তাহাঁর নিকটবর্তী দলটিসহ সাজদাহ্ সমাপ্ত করার পর খানিক দূরের দলটি সাজদায় গেল। এবং এভাবে নামাজ আদায় করিল। অতঃপর নবী [সাঃআঃ] সালাম ফিরালে আমরাও সালাম ফিরালাম। জাবির [রাদি.] বলেন, যেমন তোমাদের প্রহরীগণ তাদের আমীরগণকে পাহারা দেয়।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৫, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২২]
১৮৩১. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে জুহায়নাহ্ গোত্রের একদল লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলাম। তারা আমাদের সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হল। আমরা যখন যুহরের নামাজ আদায় করলাম তখন মুশরিকরা বলিল, আমরা যদি একযোগে আক্রমন করতাম তাহলে মুসলিমদেরকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারতাম। জিব্রীল [আঃ] বিষয়টি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে অবহিত করলে তিনিও আমাদের অবহিত করেন। তিনি বলেনঃ মুশরিকরা আরো বলেছে যে, মুসলিমদের নিকট শীঘ্রই এমন একটি নামাজের ওয়াক্ত উপস্থিত হচ্ছে যা তাদের নিকট তাদের সন্তানের চেয়েও অধিক প্রিয়। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, আস্র নামাজের ওয়াক্ত উপস্থিত হলে তিনি আমাদের দু কাতারে বিভক্ত করেন। আর মুশরিকরা আমাদের ও ক্বিবলার মধ্যখানে অবস্থানরত ছিল। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীরে তাহরীমাহ্ বললে আমরাও তাকবীর বললাম এবং তিনি রুকূ করলে আমরাও রুকূ করলাম। অতঃপর তিনি সাজদাহ্ করলে প্রথম কাতারটি সাজদায় গেল। অতঃপর তারা যখন দাঁড়াল তখন দ্বিতীয় কাতারটি সাজদায় গেল। অতঃপর প্রথম কাতার পিছনে সরে গেল এবং পিছনের কাতার সামনে এগিয়ে এসে প্রথম কাতারের স্থানে দাঁড়াল। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাকবীর দিলে আমরাও তাকবীর দিলাম এবং তিনি রুকূ করলে আমরাও রুকূ করলাম। অতঃপর প্রথম কাতার তাহাঁর সাথে সাজদায় গেল এবং দ্বিতীয় কাতার দাঁড়িয়ে থাকল। দ্বিতীয় কাতার সাজদাহ্ করার পর সকলে বসে গেল এবং রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করিলেন। আবুয্ যুবায়র [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরপর জাবির [রাদি.] বিশেষভাবে বলেন, যেমন তোমাদের বর্তমান কালের শাসকগণ নামাজ আদায় করেন।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৬, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৩]
১৮৩২. সাহ্ল ইবনি আবু হাসমাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] তাহাঁর সহচরদের নিয়ে সলাতুল খাওফ আদায়ের উদ্দেশে তাদেরকে তাহাঁর পিছনে দু কাতারে কাতারবন্দী করেন। তাহাঁর নিকটবর্তী কাতারের সাথে তিনি [সাঃআঃ] এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর দাঁড়ালেন। তিনি [সাঃআঃ] দাঁড়িয়ে থাকলেন যতক্ষণ যাবৎ না তাহাঁর পিছনের কাতার এক রাকআত নামাজ আদায় করিল, অতঃপর সামনে এগিয়ে আসল এবং তাহাঁর নিকটবর্তী দল পেছনে সরে গেল। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] এদের নিয়ে আরেক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] বসে থাকলেন যতক্ষণ যাবৎ না পিছনে সরে যাওয়া কাতার এক রাকআত নামাজ আদায় করিল। অতঃপর তিনি [সাঃআঃ] সালাম ফিরান।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৭, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৪]
১৮৩৩. সালিহ ইবনি খাও্ওয়াত [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] যাতুর্ রিক্বা যুদ্ধে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায়কারী এক সহাবীর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ
একটি দল কাতারবন্দী হয়ে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে নামাজ আদায় করিল এবং অপর দল শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকল। তাহাঁর সাথের দলটিকে নিয়ে তিনি [সাঃআঃ] এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং তারা নিজস্বভাবে আরেক রাকআত আদায় করিল। অতঃপর তারা সরে গিয়ে শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়াল। অতঃপর পরবর্তী দলটি এগিয়ে আসলে তিনি [সাঃআঃ] তাদেরকে নিয়ে অবশিষ্ট এক রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর বসে থাকলেন এবং তারা নিজস্বভাবে আরো এক রাকআত আদায় করিল।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৮, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৫]
১৮৩৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি বলেন, আমরা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে রওয়ানা হয়ে যাতুর্ রিক্বা নামক স্থানে পৌছে গেলাম। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা কোন ছায়াদার গাছের নিকট পৌছলে তা রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর জন্য [বিশ্রামের] ছেড়ে দিতাম। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর তরবারিখানা একটি গাছের সাথে ঝুলন্ত থাকা অবস্থায় এক মুশরিক ব্যক্তি এসে তাহাঁর তরবারিখানা হস্তগত করে তা কোষমুক্ত করিল। অতঃপর সে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে বলিল, তুমি কি আমাকে ভয় কর? তিনি বলেনঃ না। সে বলিল, কে তোমাকে আমার [আক্রমনের] থেকে রক্ষা করিবে? তিনি বলেনঃ আল্লাহ আমাকে তোমার থেকে রক্ষা করিবে। বর্ণনাকারী বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাহাবীগণ লোকটিকে হুমকি দিলে সে তরবারিখানা খাপের মধ্যে ঢুকিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখল। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নামাজের জন্য আযান দেয়া হলে তিনি [সাঃআঃ] এক দলের সাথে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। অতঃপর এ দলটি পিছনে সরে গেল এবং তিনি [সাঃআঃ] অপর দলের সাথে আরো দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, তাতে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর হল চার রাকআত এবং লোকদের হল দু রাকআত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮১৯, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৬]
১৮৩৫. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ
তিনি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-এর সাথে সলাতুল খাওফ আদায় করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] দু দলের একটির সাথে দু রাকআত নামাজ আদায় করিলেন, অতঃপর অপর দলের সাথে দু রাকআত আদায় করিলেন। অতএব, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] আদায় করিলেন চার রাকআত এবং অন্য সকলে আদায় করিলেন দু রাকআত।
[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ১৮২০, ইসলামিক সেন্টার- ১৮২৭]