ভয়কালিন সালাত

ভয়কালিন সালাত

ভয়কালিন সালাত >> মিশকাতুল মাসাবীহ এর মুল সুচিপত্র দেখুন

পর্বঃ ৪, অধ্যায়ঃ ৪৬

  • অধ্যায়ঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৪৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
  • অধ্যায়ঃ ৪৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

অধ্যায়ঃ ৪৬. প্রথম অনুচ্ছেদ

১৪২০. সালিম ইবনি আবদুল্লাহ ইবনি উমার [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে নাজ্‌দের দিকে যুদ্ধে গেলাম। আমরা শত্রু সেনাদের মুখোমুখি হয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে সলাত আদায় করাতে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমাদের একদল লোক তাহাঁর সাথে সলাতে দাঁড়ালেন। অন্য দল শত্রু সেনার সামনে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত থাকলেন। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাহাঁর সাথের লোকজনসহ একটি রুকূ ও দুটি সাজদাহ্ করিলেন। এরপর এরা, যারা সলাত আদায় করেনি তাদের জায়গায় চলে গেলেন। তারা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এর পেছনে এসে দাঁড়ালেন। এদেরকে নিয়ে তিনি একটি রুকূ ও দুটি সাজদাহ্ করিলেন। তারপর তিনি একাই সালাম ফিরালেন। তাদের প্রত্যেক দল পরপর উঠে নিজেদের জন্য একটি রুকূ ও দুটি সাজদাহ্ আদায় করিলেন। এ নিয়মে সকলে সলাত শেষ করিলেন। আব্দুল্লাহর আরেকজন ছাত্র নাফিও এ ধরনের বর্ণনা করিয়াছেন এবং তিনি আরো বেশি বর্ণনা করিয়াছেন। ভয় যদি আরো বেশি হয় তাহলে তারা পায়ের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সলাত আদায় করিবেন। অথবা সওয়ারীর উপর বসে ক্বিবলার দিকে অথবা উল্টা দিকে, যে দিকে ফিরতে সমর্থ হয় সে দিকে ফিরে সলাত আদায় করিবেন। এরপর নাফি বলেন, আমার মনে হয় আব্দুল্ললাহ ইবনি উমার এ কথাও রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] থেকে বর্ণনা করিয়াছেন।

[বোখারী] {১}, {১} সহীহ : বোখারী ৯৪২, নাসায়ী ১৫৩৯, আহমাদ ৬৩৭৮, দারিমী ১৫৬২, শারহুস্ সুন্নাহ্ ৩৭৯৯। ভয়কালিন-সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪২১. ইয়াযীদ ইবনি রূমান [রাহিমাহুল্লাহ] সালিহ ইবনি খাও্ওয়াত [রাহিমাহুল্লাহ] হইতে বর্ণীতঃ

যিনি রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে যাতুর রিক্বা যুদ্ধে সালাতুল খাওফ আদায় করেছিলেন। তিনি বলেন, [এ যুদ্ধে সলাতের সময়] একদল লোক রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে সারি বেঁধে ছিলেন। অন্যদল [তখন] শত্রুদের মুখোমুখি ছিলেন। তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] প্রথম দল নিয়ে এক রাক্আত আদায় করিলেন। তারপর তিনি দাঁড়িয়ে থাকলেন। মুসল্লিরা নিজেদের সলাত পূর্ণ করিলেন, অতঃপর শত্রু সেনাদের সামনে গিয়ে কাতারবন্দী হলেন। এরপর দ্বিতীয় দল এসে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে সালাতে যোগ দিলেন। যে রাক্আত বাকী ছিল তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এদের সাথে নিয়ে আদায় করিলেন। তারপর তিনি বসে থাকলেন। এ দল তাদের বাকী রাক্আত পূর্ণ করিলেন। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] এদের নিয়ে সালাম ফিরালেন।

[বোখারী, মুসলিম],কিন্তু ঈমাম বোখারী হাদিসটি অন্য সুত্রে ক্বাসিম ইবনি মুহাম্মাদ হইতে, তিনি সালিহ ইবনি খাও্ওয়াত হইতে, তিনি সাহল ইবনি আবু হাসমাহ্ হইতে এবং তিনি নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। {১}; {১} সহীহ : বোখারী ৪১৩০, মুসরিম ৮৪২, আবু দাউদ ১২৩৮, নাসায়ী ১৫৩৭, আহমাদ ২৩১৩৬, মুয়াত্ত্বা মালিক ৬৩২, শারহু মাআনির আসার ১৮৬৯, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০০৯, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৯৪, ইরওয়া ৫১৪। ভয়কালিন-সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪২২. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাথে এগিয়ে যেতে যেতে যাতুর রিক্বা পর্যন্ত পৌঁছালাম। এখানে একটি ছায়া বিশিষ্ট গাছের নিকট গেলে, তা আমরা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। তিনি বলেন, এ সময় মুশরিকদের একজন এখানে এসে দেখলো রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর তরবারিখানা গাছের সাথে লটকানো আছে। সে তখন ত্বরিত গতিতে তাহাঁর তরবারিখানা হাতে নিয়ে কোষমুক্ত করিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-কে বলিল, তুমি কি আমাকে ভয় পাও না? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, কখনো না। সে বলিল, এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করিবে? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, আল্লাহ আমাকে তোমার হাত থেকে রক্ষা করিবেন। বর্ণনাকারী [জাবির [রাদি.]] বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর সাহাবীগণ সে মুশরিককে ভয় দেখালে সে তরবারিখানা কোষবদ্ধ করে আবার ঝুলিয়ে রাখল। তিনি [জাবির [রাদি.]] আবার বলেন, এ সময় সলাতের আযান দেয়া হল। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] কিছুসংখ্যক লোক নিয়ে দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। এরপর এ দল পিছনে সরে গেলে তিনি অবশিষ্টদের নিয়ে দু রাক্আত সলাত আদায় করিলেন। তিনি [জাবির [রাদি.]] বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর চার রাক্আত হল। অন্যান্য লোকের হলো দু রাক্আত।

[বোখারী, মুসলিম] {১}; {১} সহীহ : বোখারী ২৯১০, মুসলিম ৮৪৩, আহমাদ ১৪৯২৮, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৯৫, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৬০৩৩। ভয়কালিন-সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

১৪২৩. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] আমাদেরকে নিয়ে সালাতুল খাওফ আদায় করিলেন। আমরা তাহাঁর পেছনে দুটি সারি বানালাম। শত্রুপক্ষ তখন আমাদের ও ক্বিবলার মাঝখানে ছিল। তাই নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] তাকবীরে তাহরীমা বাঁধলেন। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] রুকূ করিলেন। আমরাও তাহাঁর সাথে রুকূ করলাম। অতঃপর তিনি রুকূ হইতে মাথা উঠালেন। আমরা সবাই মাথা উঠালাম। এরপর তিনি [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ও তাহাঁর নিকটবর্তী সারি অর্থাৎ প্রথম রাকআতে যারা পেছনে ছিল সাজদায় গেলেন। আর পরবর্তী সারি শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে রইলেন। নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] ও তাহাঁর নিকটবর্তী সারি সাজদাহ্ শেষ করলে পরবর্তী সারি সাজদায় গেলেন। এরপর নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] সালাম ফিরালেন। আমরা সবাই সালাম ফিরালাম।

[মুসলিম] {১}, {১} সহীহ : মুসলিম ৮৪০, আহমাদ ১৪৪৩৬, সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ৫৬৩১, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৯৭। ভয়কালিন-সালাত -এই হাদিসটির তাহকীকঃ সহীহ হাদিস

অধ্যায়ঃ ৪৬. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ

১৪২৪. জাবির [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বাতনে নাখল যুদ্ধে লোকজন নিয়ে ভীতি অবস্থায় যুহরের সলাত আদায় করিলেন। তিনি একদল নিয়ে দু রাক্আত আদায় করিলেন এবং সালাম ফিরালেন। এরপর দ্বিতীয় দল আসলো। তিনি তাদেরকে নিয়েও দু রাক্আত আদায় করিলেন। তারপর সালাম ফিরালেন।

[শারহুস্ সুন্নাহ্] {১}; {১} জইফ : মুসনাদুশ্ শাফিঈ ৫০৬, শারহুস্ সুন্নাহ্ ১০৯৪, ইবনি খুযায়মাহ্ ১৩৫৩। শায়খ আলবানী [রাহিমাহুল্লাহ] বলেছেন, এর সানাদ হাসান আল বসরী [রাহিমাহুল্লাহ]-এর আন্আনা রয়েছে, সাথে সাথে সানাদটি মতভেদপূর্ণ বটে। ভয়কালিন-সালাত এই হাদিসটির তাহকীকঃ দুর্বল হাদিস

অধ্যায়ঃ ৪৬. তৃতীয় অনুচ্ছেদ

১৪২৫. আবু হুরাইরাহ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] একবার [জিহাদ করার লক্ষ্যে] যাজ্‌নান ও উসফান নামক স্থানের মধ্যবর্তী স্থানে উপস্থিত হলেন। মুশরিকরা তখন বলাবলি করিল। এ মুসলিম সম্প্রদায়ের এক সলাত আছে, যে সলাত তাদের নিকট তাদের পিতা-মাতা ও সন্তান-সন্ততি হইতেও অধিক প্রিয়। আর সে সলাতটা হল আসরের সলাত। তাই তোমরা দলবদ্ধ হও। এ আসরের সলাত আদায়ের সময় তাদের উপর আক্রমণ কর। ঠিক এ সময় নবী [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর নিকট জিবরিল [আঃ] আসলেন। তাকে হুকুম দিলেন তিনি যেন তাহাঁর সাথিদেরকে দুভাগে ভাগ করেন। একদলকে নিয়ে সলাত আদায় করিবেন। আর অপর দলটি তাদের অপর দিকে শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে থাকিবেন অটুটভাবে। এমনকি সলাতেও যেন তারা সম্ভাব্য সতর্কতা ও অস্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকে। এতে তাদের সলাতও এক রাক্আত হয়ে যাবে। আর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম]-এর হবে দু রাক্আত।

[তিরমিজি, নাসায়ী] {১}, {১} সানাদটি হাসান : আত তিরমিজি ৩০৩৫, নাসায়ী ১৫৪৪, ইবনি হিব্বান ২৮৭২, আহমাদ ১০৭৬৫। ভয়কালিন-সালাত : এই হাদিসটির তাহকীকঃ হাসান হাদিস

By মিশকাত মুহিউস সুন্নাহ

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply