সালফে সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন
সালফে সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
আটত্রিশতম পরিচ্ছেদ- সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন
উবাদা ইবনু সামিত রাদি. আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ হইতে বর্ণিত, তিনি বলিয়াছেন: মু`মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। সাবিত, হুমাইদ, ইসহাক ইবনু আবদুল্লাহ্ ও শুআইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] আনাস রাদি. আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।[1]
আবূ হুরাইরা রাদি. আনহু থেকে বণিত, রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ বলিয়াছেন, মু`মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[2]
আবূ সাঈদ খুদরী রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃকে বলতে শুনেছেন, ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[3]
আনাস ইবনু মালিক রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ বলিয়াছেন, নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।[4]
আবূ হুরাইরা রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃকে বলতে শুনেছি, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি ছাড়া নবুওয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই।। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করিলেন, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি কি? তিনি বলিলেন, ভাল স্বপ্ন।[5]
হুযাইফাহ্ ইবনু ইয়ামান রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, আহলে কিতাবের এক ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাৎ হলে সে বললো, তোমরা কতই না উত্তম জাতি, যদি তোমরা শির্ক না করতে। তোমরা বলে থাকো, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন এবং মুহাম্মাদ যা ইচ্ছা করেন“। অতঃপর সে স্বপ্নের কথাটি রাঃসাঃ এর নিকট বর্ণনা করলো। তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ! শোনো, আমি তো তোমাদের এরূপ কিছু বলতে শিখাইনি। তোমরা বলবে, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, এরপর রাঃসাঃ যা চান“।[6]
যায়দ ইবনু সাবিত রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, [একদা] সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো- তারা যেন প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলে। তারপর যায়দ ইবনু সাবিত [রাঃ] এর স্বপ্লে এক আনসারী সাহাবী উপনীত হলে যায়দ রাদি. আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলা হল, তোমাদের কি রাঃসাঃ আদেশ করেছেন যে, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বলিলেন, তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে ২৫ বার করে পড়বে এবং তাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কেও অন্তর্ভুক্ত করে নিবে। যখন সকাল হল তিনি রাঃসাঃ এর কাছে এসে স্বপ্ন বৃত্তান্ত বর্ণনা করাতে তিনি বলিলেন, তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরূপভাবেই পড়বে।[7]
ইবনু উমর রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাঃসাঃ এর বেশ কয়েকজন সাহাবী রাঃসাঃ এর যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অত:পর তারা রাসূলুল্লাহর রাঃসাঃ এর কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রাঃসাঃ এর ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়স্ক যুবক। আর বিয়ের আগে মসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বলিলাম, যদি তোমার মধ্যে কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাদের ন্যায় স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বলিলাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত আছে তাহলে আমাকে কোনো একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই [ঘুমিয়ে] রইলাম। দেখলাম আমার কাছে দু`জন ফেরেশতা এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে [জাহান্নামের দিকে] অগ্রসর হচ্ছেন। আর আমি তাদের উভয়ের মাঝখানে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখান হল যে, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছেন। তাহাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোনো ভয় নেই। তুমি খুবই ভালো লোক। যদি বেশীকরে নামায আদায় করতে। তারা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তারা আমাকে জাহান্নামের [তীরে এনে] দাঁড় করাল, [যা দেখতে] কূপের ন্যায় গোলাকার। আর কূপের ন্যায় এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু`শিং এর মাঝখানে একজন ফেরেশতা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে [জাহান্নামে] শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের কতক ব্যক্তিকে তথায় আমি চিনে ফেললাম। অত:পর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে ফিরল। এ ঘটনা [স্বপ্ন] আমি হাফসা রাদি. `আনহার নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফসা রাদি. `আনহা তা রাঃসাঃ এর নিকট বর্ণনা করিলেন: তখন রাঃসাঃ বলিলেন, আবদুল্লাহ তো সত্কর্মপরায়ণ ব্যক্তি। নাফি [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা বেশী করে [নফল] নামায আদায় করতেন।[8]
ইবনু উমর রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী রাঃসাঃ এর যুগে অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমি মজদিদেই রাত্রি যাপন করতাম। আর যারাই স্বপ্নে কিছু দেখত তারা তা নাবী রাঃসাঃ এর কাছে বর্ণনা করত। আমি বলিলাম, হে আল্লাহ! যদি তোমার নিকট আমার জন্য কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো স্বপ্ন দেখাও, যাতে রাঃসাঃ আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আমি নিদ্রা গেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে দু`জন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে চলল, এরপর তাদের সাথে অপর একজন ফেরেশতার সাক্ষাত ঘটল। সে আমাকে বলল, তোমার কোনো ভয়ের কারণ নেই। তুমি তো একজন সত্কর্মপরায়ণ লোক। এরপর তারা আামকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলল, যেন কূপের ন্যায় গোলাকার নির্মিত। আর এর মধ্যে বেশ কিছু লোক রয়েছে। এদের কতককে আমি চিনতে পারলাম। এরপর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে চলল। যখন সকাল হল, আমি হাফসা রাদি. `আনহার নিকট সব ঘটনা উল্লেখ করলাম। পরে হাফসা রাদি. `আনহা বলিলেন যে, তিনি তা নাবী রাঃসাঃ এর কাছে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি বলিয়াছেন, আবদুল্লাহ সত্কর্মপরায়ণ লোক। [তিনি আরও বলিয়াছেন] যদি সে রাতে বেশী করে নামায আদায় করত। যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, এরপর থেকে আবদুল্লাহ [ইবনু উমর] রাদি. `আনহু রাতে বেশী করে নামায আদায় করতে লাগলেন।[9]
[1] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৮৭।
[2] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৮৮।
[3] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৮৯।
[4] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৮৩।
[5] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৯৯০।
[6] সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নম্বর ২১১৮। হাদীসটি সহিহ।
[7] সুনানে নাসায়ী, হাদিস নম্বর ১৩৫০। হাদীসটি সহিহ।
[8] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০২৮-৭০২৯।
[9] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৭০৩০-৭০৩১।