নিকটাত্মীয়ের বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য

নিকটাত্মীয়ের বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য

নিকটাত্মীয়ের বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য  >> রিয়াদুস সালেহীন  হাদিস শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে রিয়াদুস সালেহীন হাদিস শরীফ এর একটি পরিচ্ছেদের হাদিস পড়ুন

পরিচ্ছেদ – ৪২ : পিতা-মাতার ও নিকটাত্মীয়ের বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য তাহাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার মাহাত্ন্য

1/346. عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «إنّ أبَرَّ البرِّ أنْ يَصِلَ الرَّجُلُ وُدَّ أبيهِ».

وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ دِينَارٍ، عَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَجُلاً مِنَ الأعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ، فَسَلَّمَ عَلَيهِ عَبدُ الله بْنُ عُمَرَ، وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ، وَأعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأسِهِ، قَالَ ابنُ دِينَار : فَقُلْنَا لَهُ : أصْلَحَكَ الله، إنَّهُمُ الأعرَابُ وَهُمْ يَرْضَوْنَ باليَسير، فَقَالَ عبد الله بن عمر : إن أَبَا هَذَا كَانَ وُدّاً لِعُمَرَ بنِ الخطاب رضي الله عنه، وإنِّي سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ أبرَّ البِرِّ صِلَةُ الرَّجُلِ أهْلَ وُدِّ أبِيهِ».

وفي رِوِايَةٍ عَنِ ابنِ دِينَارٍ، عَنِ ابنِ عُمَرَ : أنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ الرَّاحِلةِ، وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأسَهُ، فَبيْنَا هُوَ يَوماً عَلَى ذلِكَ الحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أعْرابيٌّ، فَقَالَ : ألَسْتَ فُلاَنَ بْنَ فُلاَنٍ ؟ قَالَ : بَلَى . فَأعْطَاهُ الحِمَارَ، فَقَالَ : ارْكَبْ هَذَا، وَأعْطَاهُ العِمَامَةَ وَقالَ : اشْدُدْ بِهَا رَأسَكَ، فَقَالَ لَهُ بَعضُ أصْحَابِهِ : غَفَرَ الله لَكَ أعْطَيْتَ هَذَا الأعْرَابيَّ حِمَاراً كُنْتَ تَرَوَّحُ عَلَيهِ، وعِمَامةً كُنْتَ تَشُدُّ بِهَا رَأسَكَ ؟ فَقَالَ : إنِّي سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ مِنْ أبَرِّ البِرِّ أنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أهْلَ وُدِّ أبيهِ بَعْدَ أنْ يُولِّيَ».وَإنَّ أبَاهُ كَانَ صَديقاً لعُمَرَ رضي الله عنه. رَوَى هذِهِ الرواياتِ كُلَّهَا مسلم

১/৩৪৬। ইবনি উমার রাঃআঃ কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাঃআঃ বলেছেন, ‘‘যার সাথে পিতার মৈত্রী সম্পর্ক ছিল, তা অক্ষুণ্ণ রাখা সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ।’’

আব্দুল্লাহ ইবনি দীনার আব্দুল্লাহ রাঃআঃ ইবনি উমার রাঃআঃ থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, এক বেদুঈন মক্কার পথে তাহাঁর সাথে মিলিত হল। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনি উমার তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার উপর সওয়ার ছিলেন তার উপর চাপিয়ে নিলেন। আর যে পাগড়ী তাহাঁর মাথায় ছিল, তিনি তা তাকে দিয়ে দিলেন। ইবনি দীনার বলেন, আমরা বললাম, ‘আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, এরা তো বেদুঈন, এরা তো সবল্পেই তুষ্ট হয় [ফলে এর সাথে এত কিছু করার কী প্রয়োজন]?’ আব্দুল্লাহ ইবনি উমার রাঃআঃ বলিলেন, ‘এর পিতা উমার ইবনি খাত্তাব রাঃআঃ-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছি, ‘‘পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকী।’’

অন্য এক বর্ণনায় ইবনি দীনারের সূত্রে ইবনি উমার রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, ইবনি উমারের মক্কা যাওয়ার সময় তার সাথে একটি গাধা থাকত। তিনি যখন উটের উপরে চেপে বিরক্ত হয়ে পড়তেন, তখন [এক ঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য] ঐ গাধার উপর চেপে বিশ্রাম নিতেন। তাহাঁর একটি পাগড়ী ছিল, তিনি তা মাথায় বাঁধতেন। একদিন তিনি গাধার উপর সওয়ার ছিলেন, এমতাবস্থায় এক বেদুঈন তাহাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বলিলেন, ‘তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও?’ সে বলিল, ‘অবশ্যই!’ অতঃপর তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে বলিলেন, ‘এর উপর আরোহন কর’ এবং তাকে পাগড়ীটি দিয়ে বলিলেন, ‘এটি তোমার মাথায় বাঁধ।’ [এ দেখে] তাঁকে তাহাঁর কিছু সাথী-সঙ্গী বলিল, ‘আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনি এই বেদুঈনকে ঐ গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর চড়ে আপনি বিশ্রাম নিতেন এবং তাকে ঐ পাগড়ীটিও দিলেন, যেটি আপনি নিজ মাথায় বাঁধতেন?’ তিনি বলিলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-কে বলিতে শুনেছি, ‘‘পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ।’’ আর এর পিতা উমার রাঃআঃ-এর বন্ধু ছিলেন। [1]

এ বর্ণনাগুলো সবই ইমাম মুসলিম বর্ণনা করিয়াছেন।

2/347. وعن أبي  أُسَيْد – بضم الهمزة وفتح السين – مالكِ بنِ ربِيعَةَ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه قال : بَيْنا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رسول اللهِ ﷺ إذ جاءَهُ رجُلٌ مِنْ بني سَلَمة فقالَ : يارسولَ اللهِ هَلْ بقى مِن بِرِّ أَبويَّ شىءٌ أَبرُّهُمَا بِهِ بَعدَ مَوْتِهِمَا ؟ فقال: «نَعَمْ، الصَّلاَة  علَيْهِمَا، والاسْتِغْفَارُ لَهُما، وإِنْفاذُ عَهْدِهِما، وصِلةُ الرَّحِمِ التي لا تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا، وإِكَرَامُ صَدِيقهما» رواه أبو داود .

২/৩৪৭। আবূ উসাইদ মালিক ইবনু রাবী‘আহ রাঃআঃ হইতে বর্ণিত, কোনো একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ এর দরবারে বসা ছিলাম। এমন সময় বানী সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে বলিল, হে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাহাদের প্রতি সদাচারণ করার দায়িত্ব আছে কি? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, তুমি তাহাদের জন্য দু‘আ করিবে, তাহাদের গুনাহের মাগফিরাত প্রার্থনা করিবে, তাহাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করিবে, তাহাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ জন্যে উত্তম ব্যবহার করিবে যে, এরা তাহাদেরই আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধব এবং তাহাদেরকে সম্মান দেখাবে।[2]

3/348. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : مَا غِرْتُ عَلَى أحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبيِّ ﷺ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، وَمَا رَأيْتُهَا قَطُّ، وَلَكِنْ كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا، وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ، ثُمَّ يقَطِّعُهَا أعْضَاء، ثُمَّ يَبْعثُهَا في صَدَائِقِ خَديجَةَ، فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ : كَأنْ لَمْ يَكُنْ في الدُّنْيَا إلاَّ خَديجَةَ ‍! فَيَقُولُ: «إنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لي مِنْهَا وَلَدٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

وفي رواية : وإنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاءَ، فَيُهْدِي في خَلاَئِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ .

وفي رواية:كَانَ إِذَا ذبح الشاة، يقولُ: «أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أصْدِقَاءِ خَديجَةَ».

وفي رواية : قَالَت : اسْتَأذَنتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِد أُخْتُ خَدِيجَةَ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَعرَفَ اسْتِئذَانَ خَديجَةَ، فَارتَاحَ لِذَلِكَ، فَقَالَ: «اَللهم هَالةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ».

قولُهَا: «فَارتَاحَ» هُوَ بالحاء، وفي الجمعِ بَيْنَ الصحيحين للحُميدِي: «فَارتَاعَ» بالعينِ ومعناه : اِهتَمَّ بهِ.

৩/৩৪৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, ততটা ঈর্ষা নবী সাঃআঃ-এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি হতো না। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখিনি। কিন্তু নবী সাঃআঃ অধিকাংশ সময় তাহাঁর কথা আলোচনা করিতেন এবং যখনই তিনি ছাগল যবাই করিতেন, তখনই তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে খাদীজার বান্ধবীদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঠাতেন।

আমি তাঁকে মাঝে মধ্যে [রসিকতা ছলে] বলতাম, ‘মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজা ছাড়া আর কোন মেয়েই নেই।’ তখন তিনি [তাহাঁর প্রশংসা করে] বলিতেন, ‘‘সে এই রকম ছিল, ঐ রকম ছিল। আর তাহাঁর থেকেই আমার সন্তান-সন্তুতি।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাঃআঃ যখন বকরী যবাই করিতেন, তখন খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এতটা পরিমাণে মাংস পাঠাতেন, যা তাহাদের জন্য যথেষ্ট হত।’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাঃআঃ যখন বকরী যবাই করিতেন, তখন বলিতেন, ‘‘খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এই মাংস পাঠিয়ে দাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ বলেন, ‘একদা খাদীজার বোন হালা বিনতে খুআইলিদ রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করিলেন, সুতরাং তিনি আনন্দবোধ করিলেন এবং বলিলেন, ‘‘আল্লাহ! হালা বিনতে খুআইলিদ?’’

এ বর্ণনায় فَارتَاحَ [আনন্দবোধ করিলেন] শব্দ এসেছে। আর হুমাইদীর ‘আল-জাম‘উ বাইনাস সহীহাইন’-এ এসেছে فَارتَاعَ শব্দ। অর্থাৎ তার প্রতি যত্ন নিলেন ও আগ্রহ প্রকাশ করিলেন।[3]

4/349. وَعَن أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ : خَرَجتُ مَعَ جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ البَجَليّ رضي الله عنه في سَفَرٍ، فَكَانَ يَخْدُمُني، فَقُلْتُ لَهُ : لاَ تَفْعَل، فَقَالَ : إِنِّي قَدْ رَأيْتُ الأنْصَارَ تَصْنَعُ بِرَسُولِ اللهِ ﷺ شَيئاً آلَيْتُ عَلَى نَفسِي أنْ لاَ أصْحَبَ أحَداً مِنْهُمْ إلاَّ خَدَمْتُهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ

৪/৩৪৯। আনাস ইবনি মালিক রাঃআঃ বলেন, একদা আমি জারীর ইবনি আব্দুল্লাহ বাজালী রাঃআঃ-এর সাথে সফরে বের হলাম। [আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও] তিনি আমার খিদমত করিতেন। সুতরাং আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি এমন করিবেন না।’ তিনি বলিলেন, ‘আমি আনসারগণকে রাসূলুল্লাহ সাঃআঃ-এর সাথে [অনেক] কিছু করিতে দেখেছি। তাই আমি শপথ করেছি যে, তাঁদের মধ্যে যাঁরই সঙ্গী হব, তাহাঁরই খিদমত করব।’[মুসলিম] [4]


[1] মুসলিম ২৫৫২, তিরমিযী ১৯০৩, আবূ দাউদ ৫১৪৩, আহমাদ ৫৫৮০, ৫৬২১. ৫৬৮৮, ৫৮৬২

[2] আবূ দাউদ [হাঃ ৫১৪২], ইবনু মাজাহ [হাঃ ৩৬৬৪], মিশকাত [হাঃ ৪৯৩৬], হাদীসটি যঈফ, দুর্বল; দেখুন তাহক্বীক্ব আলবানী- আবূ দাউদ [হাঃ ১১০১]।

[3] সহীহুল বুখারী ৩৮১৬, ৩৮১৭, ৩৮১৮, ৫২২৯, ৬০০৪, ৭৪৮৪, মুসলিম ২৪৩৫, তিরমিযী ২০১৭, ৩৮৭৫, ইবনু মাজাহ ১৯৯৭, আহমাদ ২৩৭৮৯, ২৫১৩০, ২৫৮৪৭

[4] সহীহুল বুখারী ২৮৮৮, মুসলিম ২৫১৩

Leave a Reply