রাঃসাঃ এর যুগে ও পরবর্তী তে যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল
রাঃসাঃ এর যুগে ও পরবর্তী তে যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন
একবিংশ পরিচ্ছেদ – রাঃসাঃ এর যুগে ও পরবর্তী যুগে যারা নবুওয়তের মিথ্যাদাবী করেছিল তাদের মিথ্যাচার তিনি উন্মুক্ত করেছেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাঃসাঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং আল্লাহ তাকে সাহায্য করেছেন ও তার নবুওয়তের স্বীকৃতি দিয়েছেন।
ইবনু `উমর রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, `উমর রাদি. আনহু কয়েকজন সাহাবীসহ রাঃসাঃ এর সঙ্গে ইবনু সাইয়াদের কাছে যান। তাঁরা তাকে বনী মাগালার টিলার উপর ছেলে-পেলেদের সঙ্গে খেলা-ধুলা করতে দেখতে পান। আর এ সময় ইবনু সাইয়াদ বালিগ হওয়ার নিকটবর্তী হয়েছিল। রাঃসাঃ এর [আগমন সম্পর্কে] সে কোনো কিছু টের না পেতেই নাবী রাঃসাঃ তার পিঠে হাত দিয়ে মৃদু আঘাত করিলেন। এরপর নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, [হে ইবনু সাইয়াদ!] তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল? তখন ইবনু সাইয়াদ তাহাঁর প্রতি তাকিয়ে বলল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি উম্মি লোকদের রসূল। ইবনু সাইয়াদ নাবী রাঃসাঃকে বলল, আপনি এ সাক্ষ্য দেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল? নাবী রাঃসাঃ তাকে বলিলেন, আমি আল্লাহ্ তা`আলা ও তাহাঁর সব রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি। নাবী রাঃসাঃ তাকে প্রশ্ন করিলেন, তুমি কি দেখ? ইবনু সাইয়াদ বলল, আমার নিকট সত্য সংবাদ ও মিথ্যা সংবাদ সবই আসে। নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, প্রকৃত অবস্থা তোমার নিকট সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত হয়ে আছে। নাবী রাঃসাঃ আরো বলিলেন, আচ্ছা! আমি আমার অন্তরে তোমার জন্য কিছু কথা গোপন রেখেছে [বলতো তা কি?] ইবনু সাইয়াদ বলল, তা হচ্ছে ধুয়া। নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, আরে থাম, তুমি তোমার সীমার বাইরে যেতে পার না। উমর রাদি. আনহু বলে উঠলেন, ইয়া রাঃসাঃ! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। নাবী রাঃসাঃ বলিলেন, যদি সে প্রকৃত দাজ্জাল হয়, তবে তুমি তাকে কাবু করতে পারবে না, আর যদি সে দাজ্জাল না হয়, তবে তাকে হত্যা করে তোমার কোনো লাভ নেই। [1]
আবু হুরাইরা রাদি. আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী রাঃসাঃ বলেন, কিয়ামতের সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্র রাসূল বলে দাবী করবে। [2]
ইবনু আব্বাস রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী রাঃসাঃ এর যামানায় মুসায়লামাতুল কাযযাব আসল এবং [সাহাবীদের নিকট] বলতে লাগল, মুহাম্মদ রাঃসাঃ যদি তাহাঁর পর আমাকে তাহাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন, তাহলে আমি তাহাঁর অনুসরণ করব। তার স্বজাতির এক বিরাট বাহিনী সঙ্গে নিয়ে সে এসেছিল। রাঃসাঃ তাহাঁর নিকট আসলেন। আর তার সাথী ছিলেন সাবিত ইবনু কায়েস ইবনু শাম্মাস রাদি. আনহু। রাঃসাঃ এর হাতে খেজুরের একটি ডাল ছিল। তিনি সাথী দ্বারা বেষ্টিত মুসায়লামার সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন এবং বলিলেন, তুমি যদি আমার নিকট খেজুরের এই ডালটিও চাও, তবুও আমি তা তোমাকে দিবো না। তোমার সম্বন্ধে আল্লাহর যা ফায়সালা তা তুমি লঙ্ঘন করতে পারবেনা। যদি তুমি কিছু দিন বেঁচেও থাক তবুও আল্লাহ তোমাকে অবশ্যই ধ্বংস করে দিবেন। নিঃসন্দেহে তুমি ঐ ব্যক্তি যার সম্বন্ধে স্বপ্নে আমাকে সব কিছু দেখানে হয়েছে। [ইবনু আব্বাস রাদি. আনহু বলেন] আবু হুরাইরা রাদি. আনহু আমাকে জানিয়েছেন, রাঃসাঃ বলিয়াছেন, [একদিন] আমি ঘুমিয়েছিলাম। স্বপ্নে দেখতে পেলাম আমার দু`হাতে সোনার দু`টি বালা শোভা পাচ্ছে। বালা দু`টি আমাকে ভাবিয়ে তুলল। স্বপ্নেই আমার নিকট অহী এলো, আপনি ফুঁ দিন। আমি তাই করলাম। বালা দুটি উড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা এভাবে করলাম, আমার পর দুজন কাযযাব [চরম মিথ্যাবাদী] আবির্ভূত হবে। এদের একজন আসওয়াদ আনসী, অপরজন ইয়ামামার বাসিন্দা মুসায়লামাতুল কাযযাব।[3]
আবু হুরাইরা রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সে পর্যন্ত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্র রাসূল বলে দাবী করবে। [4]
আবু হুরাইরা রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত সে পর্যন্ত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই আল্লাহ ও তাহাঁর রাসূলের ব্যাপারে মিথ্যা বলবে। [5]
[1] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩০৫৫, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২৯৩০।
[2] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৬০৯, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৫৭।
[3] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৬২০-৩৬২১।
[4] আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৪৩৩৩। হাদীসটি সহিহ লিগাইরিহি।
[5] আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ৪৩৩৪। হাদীসটি সহিহ লিগাইরিহি।
Leave a Reply