দাওয়াত/ তাবলিগ কি
গাস্তের সংজ্ঞা ও এলান
গাস্তের আদব বলার পদ্ধতি
বয়ান এর সংজ্ঞা ও এলান
বয়ান দেওয়ার পদ্ধতি -৬ নম্বর
তালীম/মজলিস
মাশোয়ারা (পরামর্শ করে চলা)
তাবলিগ জামাতের মসজিদভিত্তিক পাঁচ কাজ ও ইসলাম
মোজাকারা (আমলের আলোচনা)
দাওয়াত/ তাবলিগ কি
পবিত্র কুরআনে ইসলাম ও দ্বীন প্রচারের দায়িত্বকে কখনো বলা হয়েছে ‘দাওয়াত’, কখনো বলা হয়েছে ‘সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ’, কখনো বলা হয়েছে ‘নসিহত’, কখনো বলা হয়েছে ‘তাবলিগ’ বলে। আল্লাহর দিকে যে ব্যক্তি ডাকে, তাকে আরবি ভাষায় বলা হয় দাই।
গাস্তের সংজ্ঞা ও এলান
গাস্তঃ গাস্ত ফারসি শব্দ, এর অর্থ হলো, দ্বিনের কাজে কিছু সময় ঘোরাফেরা করা।
গাস্তের এলানঃ যখন মসজিদের ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে সালাম ফিরাবেন, তখনই আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন এবং গাস্তের জন্য এলান দিবেন। পদ্ধতি টা হচ্ছে – ইনশাআল্লাহ বাদ দোয়া জামাত মহল্লায় গাস্তে যাবে এবং মসজিদে ঈমান একিন সম্বন্ধে গুরুত্তপূর্ণ কথা হবে। মেহেরবানী করে আমরা সবাই বসি, বসলে অনেক ফায়দা হবে।
গাস্তের আদব বলার পদ্ধতি
যেহেতু আর কোন নবী দুনিয়াতে আসবেন না তাই এই মেহনতের জিম্মাদারী এখন আমাদের সবার উপর | আমরা যদি এই দাওয়াতের মেহনত না করি কাল কিয়ামতের মাঠে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে | আর আমরা যদি এই মেহনত করি আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে ইজ্জত ও সম্মান দান করবেন | এই মেহনত করার জন্য সবাই তৈয়ার আছি না ভাই?
গাস্তের লাভ/ ফযিলতঃ ফাজায়েলে তাবলীগ হতে কুরআনের আয়াত ও হাদীস বলুন
তরতীবঃ জামাতের মধ্যে দুইটি অংশ থাকবে একটি মসজিদের ভিতরে থাকবে আর অন্যটি গাস্তে যাবে |
গাস্তের জামাতঃ যে জামাত গাস্তে যাবে তাতে থাকবে একজন রাহবার, একজন মুতাকাল্লিম, কয়েকজন মামুর এবং একজন যিম্মাদার।
রাহবারের কাজঃ রাহবার এলাকার লোক হইলে ভাল হয়। রাহবারের কাজ হলো মহল্লার ডান দিক দিয়ে প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে এক এক করে সকল লোকের নিকট জামাতকে নিয়ে যাওয়া এবং সালাম দিয়ে বলা যে আল্লাহ্র রাস্তার মেহমানেরা আসছে আপনার সাথে কথা বলবে | যদি তিনি কাজে ব্যস্ত থাকেন তবে কাজ থেকে ফারেক করে মুতাকাল্লিমের কাছে নিয়ে আসবেন |
মুতাকাল্লিমের কাজঃ মুতাকাল্লিম ভাই নরম নরম স্বরে তিন কথার উপর দাওয়াত দিবেন। তাওহীদ, রিসালাত এবং আখিরাতের উপর | দাওয়াত এমনভারে দিতে হবে যে যেন বয়ানও না হয় এবং এলানও না হয়।
চলার পথে নজরের হেফাজত করা | জিকির ফিকির করতে করতে যাওয়া। রাস্তার ডান দিক দিয়ে চলা। মহল্লার শেষ প্রান্ত থেকে শুরু করে মসজিদের দিকে ফিরে আসা। মসজিদেও আমল চলবে | এক ভাই ঈমান ও একীনের কথা বলবে, কিছু ভাই কথা শুনবে, ২/৩ ভাই এস্তেকবাল করবে, ২/৩ ভাই দোয়া ও জিকিরে লিপ্ত থাকবে।
বয়ান এর সংজ্ঞা ও এলান
বয়ান এর সংজ্ঞাঃ হাদীস কুরআনের ভিত্তিতে আলোচনা করাকেই বয়ান বলে। তাবলীগ জামাতে সাধারণত ৬ নং থেকে বয়ান করতে হয়।
বয়ানের এলান দেওয়ার পদ্ধতিঃ যখন মসজিদের ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে সালাম ফিরাবেন, তখনই আপনি দাঁড়িয়ে যাবেন এবং গাস্তের জন্য এলান দিবেন। পদ্ধতি টা হচ্ছে –
ইনশাআল্লাহ বাদ নামাজ মসজিদে ঈমান ও আমল এর উপর জরুরী বয়ান হবে, মেহেরবানী করে আমরা সবাই বসি, বসলে অনেক ফায়দা হবে।
বয়ান দেওয়ার পদ্ধতি -৬ নম্বর
সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু তায়ালা আনহুম, হুযুর পাক সাঃআঃ এর সহবতে থেকে অনেক গুণে গুণান্যিত হয়েছিলেন, তম্যধ্য থেকে কয়েকটি গুণের উপর মেহনত করে আমল করে চলতে পারলে দ্বীনের উপর চলা অতি সহজ, গুণ কয়টি হলো (১) কালেমা (২) নামায (৩) এলেম ও যিকির (৪) একরামুল মুসলিমীন (৫) তাসহীহে নিয়ত/সহিহ নিয়ত (৬) দাওয়াত ও তাবলিগ
তালীম/মজলিস
হাদীস কুরআনের ভিত্তিতে আলোচনা করাকে তালীম বলে। তা‘লীম মসজিদে নববীর বিশেষ একটি আমল। তালীম বা মজলিশে বসলে নিম্নের নাম সমুহ সুনলে যা বলতে হয় (১) আল্লাহর নাম শুনলে সুব্হানাহু ওয়াতা‘য়ালা বা জাল্লা শানুহু বলা (২) নবীজীর নাম শুনলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (৩) ফেরেশতাদের নাম শুনলে আলাইহিস্ সালাম (৪) সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তা‘য়ালা আনহু (৫)মহিলা সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তা‘য়ালা আনহা (৬) দুইজন পুরুষ বা মহিলা সাহাবীর নাম শুনলে রাযিয়াল্লহু তা‘য়ালা আনহুমা (৭) দুয়ের অধিক হলে রাযিয়াল্লহু তা‘য়ালা আনহুম (৮) মৃত বুযুর্গদের নাম শুনলে রহিমাহুমুল্লহ বা রহমাতুল্লহি আলাইহি (৯) আর জীবিত বুযুর্গদের নাম শুনলে দামাত বারকাতুহুম , হাফিজাহুল্লহু, উফিয়া আনহু বা বারকাল্লহু ফি হায়াতিহি (১০) আশ্চর্য্য জনক কোন কিছু শুনলে সুব্হানাল্লহ (১১) গুরুত্ব পূর্ণ বা বড় কোন বিষয় শুনলে আল্লাহু আকবার (১২) খারাপ কোন কিছু শুনলে নাউযুবিল্লাহ বলা (১৩) সু-সংবাদ শুনলে আলহামদুলিল্লাহ (১৪) দুঃখ সংবাদ শুনলে ইন্নালিল্লাহি ও ইন্নাইলাইহি রাযিউন বলা। সরাসরি হাদীস থেকে তালীম/ মজলিসের বসার আদব জানুন
মাশোয়ারা (পরামর্শ করে চলা)
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘যারা তাদের প্রতিপালকের ডাকে সাড়া দেয়, নামাজ পড়ে, নিজেদের মধ্যে পরামর্শের মাধ্যমে কর্মসম্পাদন করে…।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৮)
আহলে সুফফা/আসহাবে সুফফা
৪৪২. আবূ হুরাইরা হতে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আমি সত্তরজন আসহাবে সুফফাকে দেখেছি, তাঁদের কারো গায়ে বড় চাদর ছিল না। হয়ত ছিল কেবল লুঙ্গি কিংবা ছোট চাদর, যা তাঁরা ঘাড়ে বেঁধে রাখতেন। (নীচের দিকে) কারো নিস্ফে সাক বা অর্ধ হাঁটু পর্যন্ত আর কারো টাখনু পর্যন্ত ছিল। তাঁরা লজ্জাস্থান দেখা যাবার ভয়ে কাপড় হাত দিয়ে ধরে রাখতেন।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২৯)
২৩৭১. আব্বাস ইবন মুহাম্মাদ দূরী (রহঃ) ….. ফাযালা ইবন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নিয়ে সালাতে দাঁড়াতেন তখন কিছু লোক ক্ষুধার তীব্র জ্বালায় দাঁড়ানো থেকে সালাতের মাঝেই নীচে পড়ে যেতেন। এরা ছিলেন, ’সুফফার’ সদস্য।* এমনকি তাদের এই অবস্থা দেখে মরুবাসীারবরা বলতঃ এরা পাগল নাকি!
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত (নামায) শেষ করে এদের দিকে ফিরতেন। বলতেনঃ তোমরা যদি জানতে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য কি নেয়ামত আছে তাহলে তোমরা আরো ক্ষুধার্ত থাকতে আরো অভাবী থাকতে ভালবাসতে। ফায়ালা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি ঐ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গেই ছিলাম।
সহীহ, তা’লিকুর রাগীব ৪/১২০, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৩৬৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) হাদীসটি হাসান-সহীহ।
২৪৭৭। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুফফাবাসীগণ ছিলেন মুসলিমদের অতিথি, তাদের আশ্রয় লাভের মতো ধন-দৌলত, পরিবার-স্বজন কিছুই ছিল না। আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত আর কোন মা’বূদ নেই। আমি ক্ষুধার কষ্টে আমার পেট মাটিতে চেপে ধরে থাকতাম, আর কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। কোন একদিন আমি তাদের (সাহাবাদের) পথে বসে গেলাম।
এমন সময় আবূ বকর (রাঃ) আমাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি আল্লাহর কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন করলাম। উদ্দেশ্য ছিল তিনি আমাকে তার পিছনে যেতে বলেন (এবং কিছু খেতে দেন)। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না।
এরপর উমর (রাঃ) এই পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আমি তাকেও আল্লাহ্ তা’আলার কিতাবের একটি আয়াত প্রসঙ্গে সেই একই উদ্দেশে প্রশ্ন করলাম, কিন্তু তিনিও চলে গেলেন এবং কিছুই করলেন না।
তারপর আবূল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখা মাত্রই (আসল ব্যাপার বুঝতে পেরে) মুচকি হাসলেন এবং বললেন, হে আবূ হুরাইরাহ! আমি বললাম, লাব্বাইকা ইয়া (রাসূলাল্লাহ)। তিনি বললেন, চলো, তারপর তিনি চললেন, আমি তার অনুসরণ করলাম। তিনি তাঁর গৃহে প্রবেশ করলেন, আমিও ঢোকার অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে সম্মতি প্রদান করলেন। তিনি ঘরে এক পেয়ালা দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের জন্য এই দুধ কোথা হতে এসেছে? বলা হলো, আমাদের জন্য অমুক ব্যক্তি উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে আবূ হুরাইরাহ! আমি বললাম, লাব্বাইকা। তিনি বললেন, যাও সুফফাবাসীদেরকে ডেকে নিয়ে এসো, তারা তো মুসলিমদের অতিথি, তাদের নির্ভর করার মতো ধন-সম্পদ, পরিবার পরিজন বলতে কিছুই নেই।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট সাদাকাহর কোন মাল আসলে তিনি তার কোন অংশই না রেখে তাদের জন্য সবটুকু পাঠিয়ে দিতেন। আর উপহার আসলে তিনি তা হতে তাদের জন্য কিছু পাঠিয়ে দিতেন এবং নিজেও কিছু নিতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম এবং (মনে মনে) বললাম, এই এক পেয়ালা দুধ দিয়ে আসহাবে সুফফার কি হবে? অথচ আমাকে তাদের নিকট পাঠানো হচ্ছে। এই দুধ তাদের মধ্যে পরিবেশন করার জন্য তো তিনি আমাকেই আদেশ করবেন। তখন তার কোন অংশই আমার জন্য জুটবে না। অথচ আমি আশা করছিলাম যে, আমি এটুকু পান করতে পারলে আমার জন্য যথেষ্ট হবে। কিন্তু আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ পালন করা ব্যতীত আর কোন পথও নেই।
অতএব আমি তাদের নিকট এসে তাদেরকে ডাকলাম। তারা এসে ঘরে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলে তিনি বললেনঃ হে আবূ হুরাইরাহ! পেয়ালাটা নিয়ে তাদেরকে দুধ পরিবেশন কর। আমি পেয়ালাটি নিলাম তারপর আমি একজন করে দিতে থাকলাম। সে পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে পেয়ালাটি আমাকে ফিরত দিলে আমি অন্যজনকে দিতাম। সেও পরিতৃপ্ত হতো। এভাবে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌছলাম। সমবেত সকলেই পরিতৃপ্ত হলো।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেয়ালাটি তার হাতে নিয়ে মাথা তুলে আমার দিকে তাকিয়ে মুচুকি হাসলেন এবং বললেন, আবূ হুরাইরাহ্! এখন তুমি পান কর। আমি পান করলাম। তিনি আবার বললেন, পান কর। তারপর আমি পান করতেই থাকলাম আর তিনি বলতেই থাকলেন, পান কর। অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হলাম যে, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তারপর তিনি পেয়ালা হাতে নিয়ে আল্লাহ্ তা’আলার প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন।
সহীহঃ বুখারী (৬৪৫২)।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।
তাবলিগ জামাতের মসজিদভিত্তিক পাঁচ কাজ ও ইসলাম
১. প্রতিদিন মাশওয়ারা অথবা পরামর্শ করা।
২. প্রতিদিন মসজিদে এবং ঘরে তালিম করা।
৩. প্রতিদিন আড়াই ঘণ্টা আল্লাহর পথে আহ্বান/ ফিকির করা
৪. প্রতি সপ্তাহে নিজ মহল্লায় ও অন্য মহল্লায় গাশ্ত করা।
৫. প্রতি মাসে আল্লাহর রাস্তায় তিনদিন জামাতে সময় লাগানো।