তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা নোট ১০ম খ-সুরা ফুরকান, শুয়ারা, নামল, কাসাস
তাফহীমুল কুরআনের ভূমিকা নোট ১০ম খন্ড – সুরা ফুরকান, শুয়ারা, নামল, কাসাস
সুরা ফুরকান -বিষয্সবন্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষক্স
কুরআন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত এবং তাঁর পেশকৃত
(শিক্ষার বিরুদ্ধে মক্কার কাফেরদের পক্ষ থেকে যেসব সন্দেহ ও আপত্তি উথাপন করা
(হতো সেগুলো সম্পর্কে এখানে আলোচনা করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটি যথাযথ জবাব
দেয়া হয়েছে এবং সাথে–লাথে সত্যের দাওয়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবার খারাপ
পরিণামও পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে! শেষে সুরা. যু’মিনূনের মতো মু’মিনদের
নৈতিক গুণাবলীর একটি নকশা তৈরি করে সেই মানদণ্ডে যাচাই করে খাঁটি ও ভেজাল
নির্ণয় করার জন্য সাধারণ মানুষের সামনে রেখে দেয়া হয়েছে। একদিকে রয়েছে এমন
চরিত্র সম্পন্ন লোকেরা যারা এ পর্যন্ত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শিক্ষার
মাধ্যমে তৈরি হয়েছে এবং আগামীতে যাদেরকে তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে
রয়েছে এমন নৈতিক আদর্শ যা সাধারণ আরববাসীদের মধ্যে পাওয়া যায় এবং যাকে
অক্ষুণ্ন রাখার জন্য জাহেলিয়াতের পতাকাবাহীরা সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন
আরববাসীরা এ দুটি আদর্শের মধ্যে কোন্টি পছন্দ করবে তার ফায়সালা তাদের
নিজেদেরকেই করতে হবে। এটি ছিল একটি নিরব প্রশ্ন। আরবের প্রত্যেকটি অধিবাসীর
সামনে এ প্রশ্ন রেখে দেয়া হয়। খাত্র কয়েক বছরের মধ্যে একটি ক্ষুদ্রতম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী
ছাড়া বাকি সমথ জাতি এর যে জবাব দেয় ইতিহাসের পাতায় তা অন্লান হয়ে আছে।
সুরা শুয়ারা – বিষয়বন্তু ও আলোচ্য বিষয়
ভাষণের পটভূমি হচ্ছে, মন্ধার কাফেররা লাগাতার অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে !
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের মোকাবিলা করছিল। এ
জন্য তারা বিভিন্ন রকমের বাহানাবাজীর আশ্রয় নিচ্ছিল। কখনো বলতো, তুমি তো
আমাদের কোন চিহ্ন দেখালে না, তাহলে আমরা কেমন করে তোমাকে নবী বলে মেনে
নেবো। কখনো তাকে কবি ও গণক আখ্যা দিয়ে তাঁর শিক্ষা ও উপদেশাবলীকে কথার
মারপ্যাচে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করতো। আবার কখনো তার মিশনকে হালকা ও
গুরুত্বহীন করে দেবার জন্য বলতো, কয়েকজন মূর্খ ও অর্বাচীন যুবক অথবা সমাজের
নিম্ন শ্রেণীর লোক তাঁর অনুসারী হয়েছে, অথচ এ শিক্ষা যদি তেমন প্রেরণাদায়ক ও
প্রাণ্রবাহে পূর্ণ হতো তাহলে জাতির শ্রেষ্ঠ লোকেরা, পত্তিত, জ্ঞানী-গুণী ও সরদাররা
একে গ্রহণ করে নিতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বলিষ্ঠ যুক্তি
সহকারে তাদের আকীদা-বিশ্বাসের ভান্তি এবং তাওহীদ ও আখেরাতের সত্যতা বুঝাবার
চেষ্টা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন। কিন্তু তারা. হঠকারিতার নিত্য নতুন পথ
অবলব্ন করতে কখনোই ক্লান্ত হতো না। এ জিনিসটি রসূলুল্লাহ্র (সা) জন্য অসহ্য
মর্মযাতনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং এ দুঃখে তিনি চরম মানসিক পীড়ন অনুভব
করছিলেন। |
এহেন অবস্থায় এ সূরাটি নাধিল হয়। বক্তব্যের সৃচনা এভাবে হয় ৫ তুমি এদের জন্য
ভাবতে ভাবতে নিজের প্রাণ শক্তি ধ্বংস করে দিচ্ছো কেন? এরা কোন নিদর্শন দেখেনি,
এটাই এদের ঈমান না আনার কারণ নয়। বরং এর কারণ হচ্ছে, এরা একগুয়ে ও
হঠকারী। এরা বুঝালেও বুঝে না। এরা এমন কোন নিদর্শনের প্রত্যাশী, যা জোরপূর্বক
এদের মাথা নুইয়ে দেবে। আর এ নিদর্শন যথাসময়ে যখন এসে যাবে তখন তারা নিজেরাই
জানতে পারবে, যে কথা তাদেরকে বুঝানো হচ্ছিল তা একেবারেই সঠিক ও সত্য ছিন। এ
ভূমিকার পর দশ রুকু” পর্যস্ত ধারাবাহিকভাবে যে বিষয়বস্তুটি বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে এই
যে, সত্য প্রত্যাশীদের জন্য আল্লাহর দুনিয়ায় সবত্র নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। সেগুলো দেখে
তারা সত্যকে চিনতে পারে। কিন্তু হঠকারীরা কখনো বিশ্ব-জগতের নিদর্শনাদি এবং
নবীদের মুজিযাসমূহ তথা কোন জিনিস দেখেও ঈমান আনেনি। যতক্ষণ না আল্লাহর
আযাব এসে ভাদরেকে পাকড়াও করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেদের গোমরাহীর ওপর
অবিচল থেকেছে। এ সহদ্ধের প্রেক্ষিতে এখানে ইতিহাসের সাতটি জাতির অবস্থা পেশ
করা হয়েছে। মন্তার কাফেররা এ সময় যে হঠকারী নীতি অবল্ন করে চলছিল
ইতিহাসের এ সাতটি জাতিও সেকালে সেই একই নীতির আশ্রয় নিয়েছিল। এ
এ্রতিহাসিক্জ বর্ণনার আওতাধীনে কতিপয় কথা মানস পটে অংকিত করে দেয়া হয়েছে।
এক £ নিদর্শন দু’ ধরনের। এক ধরনের নিদর্শন আল্লাহর যমীনে চারদিকে ছড়িয়ে
রয়েছে। সেগুলো দেখে প্রত্যেক বুদ্ধিমান ব্যক্তি নবী যে জিনিসের দিকে আহবান জানাচ্ছেন
সেটি সত্য হতে পারে কিনা সে সম্পর্কে অনুসন্ধান ও গবেষণা করতে পারে। দ্বিতীয়
ধরনের নিদর্শন ফেরাউন ও তার সম্পদায় দেখেছে, নৃহের সম্প্রদায় দেখেছে, আদ ও
সামূদ দেখেছে, লূতের সম্প্রদায় ও আইকাবাসীরাও দেখেছে। এখন কাফেররা কোন্
ধরনের নিদর্শন দেখতে চায় এটা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।
দুই £ সকল যুগে কাফেরদের মনোভাব একই রকম ছিল। তাদের যুক্তি ছিল একই
প্রকার। তাদের আপত্তি ছিল একই। ঈমান না আনার জন্য তারা একই বাহানাবাজীর আশ্রয়
নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা একই পরিণতির সম্মুখীন হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যেক যুগে
প্রত্যেক নবীর শিক্ষা একই ছিল। তাদের চরিত্র ও জীবননীতি একই রঙে রঞ্জিত ছিল।
নিজেদের বিরোধীদের মোকাবিলায় তাঁদের যুক্তি-প্রমাণের ধরন ছিল একই। আর তাঁদের
সবার সাথে আল্লাহর রহমতও ছিল একই ধরনের। এ দুটি আদর্শের উপস্থিতি ইতিহাসের
পাতায় রয়েছে। কাফেররা নিজেরাই দেখতে পারে তাদের নিজেদের কোন্ ধরনের ছবি
পাওয়া যায় এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যক্তিসত্তায় কোন্ ধরনের
আদর্শের নিদর্শন পাওয়া যায়।
তৃতীয় যে কথাটির বারবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে সেটি হচ্ছে আল্লাহ একদিকে যেমন
অজেয় শক্তি, পরাক্রম ও ক্ষমতার অধিকারী অপরদিকে তেমনি পরম করাময়ও।
ইতিহাসে একদিকে রয়েছে তাঁর ক্রোধের দৃষ্টান্ত এবং অন্যদিকে রহমতেরও। এখন
লোকদের নিজেদেরকেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা নিজেদের তাঁর রহমতের যোগ্য
বানাবে না ক্রোধের।
শেষ রুকুতে এ আলোচনাটির উপসংহার টানতে গিয়ে বলা হয়েছে, তোমরা যদি
নিদর্শনই দেখতে চাও, তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলো যেসব ভয়াবহ নিদর্শন দেখেছিল
সেগুলো দেখতে চাও কেন? এ কুরআনকে দেখো। এটি তোমাদের নিজেদের ভাষায়
রয়েছে। মুহাম্মাদ সাললান্রাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখো। তাঁর সাথীদেরকে দেখো।
এটি কি কোন শয়তান বা জিনের বাণী হতে পারে? এ বাণীর উপস্থাপককে কি তোমাদের
গণৎকার বলে মনে হচ্ছে? মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদেরকে কি তোমরা কবি ও তাদের
সহযোগী ও সমমনারা যেমন হয় তেমনি ধরনের দেখেছো? জিদ ও হঠকারিতার কথা
আলাদা। কিন্তু নিজেদের অন্তরের অন্তস্থনে উকি দিয়ে দেখো সেখানে কি এর সমর্থন
পাওয়া যায়? যদি মনে মনে তোমরা নিজেরাই জানো গণকবৃত্তি ও কাব্চর্চার সাথে তীর
দূরতম কোন সম্পর্ক নেই, তাহলে এই সাথে একথাও জেনে নাও, তোমরা ভুলুম
করছো, কাজেই জালেমের পরিণামই তোমাদের ভোগ করতে হবে।