তাফহিমুল কুরআন pdf download ১২ তম খন্ড – সুরা আহজাব, সাবা, ফাতির
তাফহিমুল কুরআন pdf download ১২ তম খন্ড – সুরা আহজাব, সাবা, ফাতির
বিষয়বন্তু ও মুল নক্তব্য
সূরা আহ্যাব নাধিল হবার সময় এ সমস্যাগুলোর উদ্ভব ঘটে এবং এখানে এগুলোই
আলোচিত হয়েছে।
এর বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করলে এবং এর পটভূমি সামনে রাখলে পরিফার
জানা যায়, এ সমগ্র সূরাটি একটি ভাষণ নয়। একই সময় একই সংগে এটি নাধিল হয়নি।
বরং এটি বিভিন্ন বিধান ও ফরমান সম্বলিত। এগুলো সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী
প্রসঘগে একের পর এক নাধিল হয় তারপর সবগুলোকে একত্র করে একটি সূরার
আকারে বিন্যস্ত করা হয়। এর নিম্নলিখিত অংশগুলোর মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়।
এক £ প্রথম রুকূঁ। আহ্যাব যুদ্ধের কিছু আগে নাধিল হয়েছে বলে মনে হয়।
ধ্রতিহাসিক পটভূমি সামনে রেখে এ রুকৃ’টি পড়লে পরিষ্কার অনুভূত হবে, এ অংশটি
নাধিল হবার আগেই হযরত যায়েদ (রা) হযরত যয়নবকে রো) ভালাক দিয়ে ফেলেছিলেন।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দত্তক সম্পর্কিত জাহেলী যুগের ধারণা, কুসংস্কার ও
রসম-রেওয়াজ খতম করে দেবার প্রয়োজন অনুভব করছিলেন। তিনি এও অনুভব
করছিলেন যে, লোকেরা “পালক” সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঘ্েফ আবেগের ভিত্তিতে যে ধরনের
স্পর্শকাতর ও কঠোর চিন্তাধারা পোষণ করে তা কোনক্রমেই খতম হয়ে যাবে না যতক্ষণ
না তিনি নিজে (অর্থাৎ নবী) অবর্তী হয়ে এ রেওয়াজটি খতম করে দেন। কিন্তু এ সত্ত্বেও
তিনি এ ব্যাপারেই বড় সন্দিহান ছিলেন এবং সামনে অথসর হতেও ইতস্তত করছিলেন।
কারণ যদি তিনি এ সময় হযরত যায়েদের তালাবপ্রাপ্ত স্ত্রীকে বিয়ে করেন তাহলে
ইসলামের বিরুদ্ধে হাংগামা সৃষ্টি করার জন্য পূর্বে যেসব মুনাফিক, ইহুদি ও মুশরিকরা
তৈরি হয়ে বসেছিল তারা এবার একটা বিরাট সুযোগ পেয়ে যাবে। এ সময় প্রথম রুকৃ’র
আয়াতগুলো নাযিল হয়?
| দুই £ দ্বিতীয় ও তৃতীয় রুকৃণতে আহযাব ও বনী কুরাইযার যুদ্ধ সম্পর্কে মন্তব্য করা
হয়েছে। এ দু’টি রুক্* যে সংশিষ্ট যুদ্ধ দু’টি হয়ে যাবার পর নাধিল হয়েছে এটি তার
সুস্পষ্ট প্রমাণ।
তিন ঃ চতুর্থ রুকু” থেকে শুরু করে ৩৫ আয়াত পর্যন্ত যে ভাষণ দেয়া হয়েছে তা দু’টি
বিষয়বস্তু সলিত। প্রথম অংশে আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণকে
নোটিশ দিয়েছেন। এ অভাব অনটনের যুগে তারা বেসবর হয়ে পড়ছিলেন। তাঁদেরকে বলা
হয়েছে, তোমরা একদিকে দুনিয়া ও দুনিয়ার শোভা সৌন্দর্য এবং অন্যদিকে আল্লাহ, তাঁর
রসল ও আখেরাত এ দু’টির মধ্য থেকে যে কোন একটিকে বেছে নাও। যদি প্রথমটি
তোমাদের কার্থবখত হয় তাহলে পরিষ্কার বনে দাও। তোমাদেরকে একদিনের জন্যও এ
অনটনের মধ্যে রাখা হবে না বরং সানন্দে বিদায় করে দেয়া হবে। আর যদি দ্বিতীয়টি
তোমাদের পছন্দ হয়, তাহলে সবর সহকারে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সহযোগিতা
করো। পরবতী অংশগুনোতে এমন সামাজিক সংস্কারের দিকে অগ্রণী পদক্ষেপ নেয়া
হয়েছে যার প্রয়োজনীয়তা ইসলামী ছাঁচে ঢালাই করা মন-মগজের অধিকারী ব্যক্তিগণ
স্বত্র্তভাবেই অনুভব করতে শুরু করেছিলেন। এ প্রসংগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লামের গৃহ থেকে সংস্কারের সূচনা করতে গিয়ে নবীর পবিত্র স্ত্রীগণকে হুকুম দেয়া
হয়েছে, তোমরা জাহেলী যুগের সাজসজ্জা পরিহার করো। আত্মমর্ধাদা নিয়ে গৃহে বসে
থাকো। বেগানা পুরুষদের সাথে কথা বলার ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবনথন করো। এ
ছিল পর্দার বিধানের সৃচনা।
চার £ ৪৬ থেকে ৪৮ পর্যন্ত আয়াতের বিষয়বন্ধু হচ্ছে হযরত যয়নবের সাথে নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে সম্পর্কিত। বিরোধীদের পক্ষ থেকে এ বিয়ের
ব্যাপারে যেসব আপত্তি উঠানো হচ্ছিল এখানে সেসবের জবাব দেয়া হয়েছে। মুসলমানদের
মনে যেসব সন্দেহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল সেগুলো সবই দূর করে দেয়া হয়েছে।
মুসলমানদেরকে নবীর (সা) মর্যাদা কি তা জানানো হয়েছে এবং খোদ নবীকে (সা)
কাফের ও মুনাফিকদের মিথ্যা প্রচারণার মুখে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেয়া হয়েছে।
পাঁচ ৪ ৪৯ আয়াতে তালাকের আইনের একটি ধারা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি একটি
একক আয়াত। সম্ভবত এসব ঘটনাবলী প্রসংগে কোন সময় এটি নাধিল হয়ে থাকবে।
ছয় £ ৫০ থেকে &২ আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বিয়ের
বিশেষ বিধান বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে একথা সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, দাম্পত্য
জীবনের ক্ষেত্রে সাধারণ মুসলমানদের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপিত হয়েছে নবীর
(সা) ব্যাপারে তা প্রযোজ্য হবে না।
সাত £ ৫৩৫৫ আয়াতে সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পদক্ষেপ উঠানো হয়েছে।
এগুলো নিম্নলিখিত বিধান সম্বলিত £
নবী সাল্লান্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গৃহাত্যন্তরে বেগানা পুরুষদের যাওয়া আসার
ওপর বিধি-নিষেধ, সাক্ষাত করা ও দাওয়াত দেবার নিয়ম-কানুন, নবীর পবিত্র স্ত্রীগণ
সম্পর্কিত এ আইন যে, (কেবলমাত্র তাঁদের নিকটতম আত্মীয়রাই আসতে
পারেন, বেগানা পুরুষদের যদি কিছু বলতে হয় বা কোন জিনিস চাইতে হয় তাহলে পর্দার
আড়াল থেকে বলতে ও চাইতে হবে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র
স্ত্রীদের ব্যাপারে এ হুকুম যে, তাঁরা মুসলমানদের জন্যে নিজেদের মায়ের মতো হারাম
এবং নবীর (সা) পরও তাঁদের কারো সাথে কোন মুসলমানদের বিয়ে হতে পারে না।
আট ৪ ৫৬ থেকে ৫৭ আয়াতে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিয়ে ও তাঁর
পারিবারিক জীবনের বিরুদ্ধে যেসব কথাবার্তা বলা হচ্ছিল সেগুলো সম্পর্কে সতর্ক করে
দেয়া হয়েছে। এই সংগে মু’মিনদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন শত্রুদের পরনিন্দা
ও অন্যের ছিদ্রাবেষণ থেকে নিজেদের দূরে রাখে এবং নিজেদের নবীর ওপর দরূদ পাঠ
করে। এ ছাড়া এ উপদেশও দেয়া হয় যে, নবী তো অনেক বড় কথা, ঈমানদারদের তো
সাধারণ মুসলমানদের বিরুদ্ধেও অপবাদ দেয়া ও দোষারোপ করা থেকে দূরে থাকা
উচিত।
নয় £ ৫৯ আয়াতে সামাজিক সংস্কারের ক্ষেত্রে তৃতীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে
সম মুসলিম নারী সমাজের যখনই বাইরে বের হবার প্রয়োজন হবে চাদর দিয়ে
নিজেদেরকে ঢেকে এবং ঘোমটা টেনে বের হবার হুকুম দেয়া হয়েছে।
এরপর থেকে নিয়ে সূরার শেষ পর্যন্ত গুজব ছড়ানোর অভিযানের (%727:78
০) বিরুদ্ধে কঠোর নিন্দাবাদ ও ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। মুনাফিক, অকাটমূর্খ ও
শিকৃষ্ট লোকেরা এ অভিযান চালাচ্ছিন।