তাকবীর, হাত উঠানো ও জামাতে কাতার সোজা করার হাদিস

তাকবীর, হাত উঠানো ও জামাতে কাতার সোজা করার হাদিস

তাকবীর, হাত উঠানো ও জামাতে কাতার সোজা করার হাদিস >> বুখারী শরীফ এর মুল সুচিপত্র পড়ুন

পর্বঃ ১০, আযান, অধ্যায়ঃ (৭১-৯৪)=২৪টি

১০/৭১. অধ্যায়ঃ ইক্বামাতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করা ।
১০/৭২. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা করার সময় মুক্তাদীগণের প্রতি ইমামের ফিরে দেখা ।
১০/৭৩. অধ্যায়ঃ প্রথম কাতার ।
১০/৭৪. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অঙ্গ।
১০/৭৫. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা না করা গুনাহ।[১]
১০/৭৬. অধ্যায়ঃ কাতারে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো ।
১০/৭৭. অধ্যায়ঃ কেউ ইমামের বামপাশে দাঁড়ালে ইমাম তাকে পিছনে ঘুরিয়ে ডানপাশে দাঁড় করালে সালাত আদায় হইবে ।
১০/৭৮. অধ্যায়ঃ মহিলা একজন হলেও ভিন্ন কাতারে দাঁড়াবে ।
১০/৭৯. অধ্যায়ঃ মসজিদ ও ইমামের ডানদিক ।
১০/৮০. অধ্যায়ঃ ইমাম ও মুক্তাদীর মধ্যে দেয়াল বা সুতরা থাকলে ।
১০/৮১. অধ্যায়ঃ রাতের সালাত ।
১০/৮২. অধ্যায়ঃ ফরয তাকবীর বলা ও সালাত শুরু করা ।
১০/৮৩. অধ্যায়ঃ সালাত শুরু করার সময় প্রথম তাকবীরের সাথে সাথে উভয় হাত উঠানো ।
১০/৮৪. অধ্যায়ঃ তাকবীরে তাহরীমা, রুকূতে যাওয়া এবং রুকূ হইতে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো ।
১০/৮৫. অধ্যায়ঃ উভয় হাত কতটুকু উঠাবে ।
১০/৮৬. অধ্যায়ঃ দু রাকআত আদায় করে দাঁড়াবার সময় দু হাত উঠানো।
১০/৯০. অধ্যায়ঃ
১০/৯১. অধ্যায়ঃ সালাতে ইমামের দিকে তাকানো ।
১০/৯২. অধ্যায়ঃ সালাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো।
১০/৯৩. অধ্যায়ঃ সালাতে এদিক ওদিক তাকান ।
১০/৯৪. অধ্যায়ঃ সালাতের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে বা কোন কিছু দেখলে বা ক্বিবলাহর দিকে থুথু দেখলে, সে দিকে তাকান ।

১০/৭১. অধ্যায়ঃ ইক্বামাতের সময় এবং এর পরে কাতার সোজা করা ।

৭১৭. নুমান ইবনু বশীর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তাআলা তোমাদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।

৭১৮. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা কাতার সোজা করে নিবে। কেননা, আমি আমার পিছনে তোমাদেরকে দেখিতে পাই।

১০/৭২. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা করার সময় মুক্তাদীগণের প্রতি ইমামের ফিরে দেখা ।

৭১৯. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, সালাতের ইকামত হচ্ছে, এমন সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেনঃ তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। কেননা, আমি আমার পিছনে তোমাদেরকে দেখিতে পাই।

১০/৭৩. অধ্যায়ঃ প্রথম কাতার ।

৭২০. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে এবং ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ।

৭২১. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

যদি লোকেরা জানত যে, আওয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায়ের কী ফযীলত, তাহলে তারা এর জন্য প্রতিযোগিতা করে আগেভাগে আসার চেষ্টা করতো। আর ইশা ও ফজরের জামাতের কী ফযীলত যদি তারা জানত তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হতো। এবং সামনের কাতারের কী ফযীলত তা যদি জানত, তাহলে এর জন্য তারা কুরআ ব্যবহার করতো।

১০/৭৪. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অঙ্গ।

৭২২. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ অনুসরণ করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়। কাজেই তার বিরুদ্ধাচরণ করিবে না। তিনি যখন রুকূ করেন তখন তোমরাও রুকু করিবে। তিনি যখন

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলেন , তখন তোমরা

رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ

বলবে। তিনি যখন সিজদা করবেন তখন তোমরাও সিজদা করিবে। তিনি যখন বসে সালাত আদায় করেন, তখন তোমরাও সবাই বসে সালাত আদায় করিবে। আর তোমরা সালাতে কাতার সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

৭২৩. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নিবে, কেননা কাতার সোজা করা সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

১০/৭৫. অধ্যায়ঃ কাতার সোজা না করা গুনাহ।[১]

[১] জামাতে দাঁড়াবার সময় পায়ের গিটের সাথে পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর পায়ের গিট মিলিয়ে এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে পার্শ্ববর্তী মুসল্লীর বাহু মিলিয়ে কাতারবন্দী হয়ে সালাত আদায় করিতে হইবে। দুই মুসল্লীর মাঝখানে ফাঁক ফাঁক করে দাঁড়ানোর কথা কোন হাদীসে নাই ।

আবু দাউদে আছেঃ ——————— আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) বলেছেন, তোমরা তোমাদের কাতারসমূহের মধ্যে পরস্পর মিলে দাঁড়াও এবং কাতারসমূহের মধ্যে তোমরা পরস্পর নিকটবর্তী হও। এবং তোমাদের ঘাড়সমূহকে সমপর্যায়ে সোজা রাখ। সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! আমি শয়তানকে দেখি সে কাতারের ফাঁকসমূহে প্রবেশ করে যেন কালো কালো ভেড়ার বাচ্চা। (দেখুন বুখারী শরীফ ১০০ পৃষ্ঠা; মুসলিম শরিফ ১৮২ পৃষ্ঠা। আবুদাউদ ৯৭ পৃষ্ঠা, তিরমিযী ৫৩পৃষ্ঠা, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ৭১ পৃষ্ঠা। দারকুৎনী ১ম খণ্ড ২৮৩ পৃষ্ঠা, মেশকাত ৯৮ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ আযীযুল হক, ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪২৭। বুখারী শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড অনুচ্ছেদসহ হাদীস নং ৬৮২, ৬৮৬, ৬৮৭। মুসলিম শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৮৫১। আবু দাউদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৬২,৬৬৬। তিরমিযী শরীফ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২২৭। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ৩য় খণ্ড ও মেশকাত মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ১০১৭, ১০১৮, ১০২০, ১০২৫, ১০৩৩, ১০৩৪। বুলুগুল মারাম ১২৪ পৃষ্ঠা ।)

৭২৪. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার তিনি (আনাস) মদীনায় আসলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-এর যুগের তুলনায় আপনি আমাদের সময়ের অপছন্দনীয় কী দেখিতে পাচ্ছেন? তিনি বলিলেন, অন্য কোন কাজ তেমন অপছন্দনীয় মনে হচ্ছে না। তবে তোমরা (সালাতে) কাতার ঠিকমত সোজা কর না। উক্‌বাহ ইবনু উবাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বুশাইর ইবনু ইয়াসার (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণনা করেন যে, আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) আমাদের নিকট মদীনায় এলেন……… বাকী অংশ অনুরূপ।

১০/৭৬. অধ্যায়ঃ কাতারে কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলানো ।

নুমান ইবনু বশীর (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমাদের কাউকে দেখেছি পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির টাখ্‌নুর সাথে টাখ্‌নু মিলাতে ।

৭২৫. আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেনঃ তোমরা তোমাদের কাতার সোজা করে নাও। কেননা, আমি আমার পিছন হইতেও তোমাদের দেখিতে পাই। আনাস (রাদি.) বলেন আমাদের প্রত্যেকেই তার পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম।

১০/৭৭. অধ্যায়ঃ কেউ ইমামের বামপাশে দাঁড়ালে ইমাম তাকে পিছনে ঘুরিয়ে ডানপাশে দাঁড় করালে সালাত আদায় হইবে ।

৭২৬. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, কোন একরাতে আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সংগে সালাত আদায় করিতে গিয়ে তাহাঁর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথার পিছনের দিক ধরে তাহাঁর ডানপাশে নিয়ে আসলেন। অতঃপর সালাত আদায় করে শুয়ে পড়লেন। পরে তাহাঁর নিকট মুয়াজ্জিন এলে তিনি উঠে সালাত আদায় করিলেন, কিন্তু (নতুনভাবে) উযূ করলান না।

১০/৭৮. অধ্যায়ঃ মহিলা একজন হলেও ভিন্ন কাতারে দাঁড়াবে ।

৭২৭. আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন একবার আমাদের ঘরে আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে নাবী (সাঃআঃ) এর পিছনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করলাম। আর আমার মা উম্মু সুলাইম (রাদি.) আমাদের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

১০/৭৯. অধ্যায়ঃ মসজিদ ও ইমামের ডানদিক ।

৭২৮. ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, একরাতে আমি সালাত আদায়ের জন্য নাবী (সাঃআঃ)-এর বামপাশে দাঁড়ালাম। তিনি আমার হাত বা বাহু ধরে তাহাঁর ডানপাশে দাঁড় করালেন এবং তিনি তাহাঁর হাতের ইঙ্গিতে বলিলেন, আমার পিছনের দিক দিয়ে।

১০/৮০. অধ্যায়ঃ ইমাম ও মুক্তাদীর মধ্যে দেয়াল বা সুতরা থাকলে ।

হাসান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, তোমার ও ইমামের মধ্যে নহর থাকলেও ইকতিদা করিতে অসুবিধা নেই। আবু মিজলায (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, যদি ইমামের তাকবীর শোনা যায় তাহলে ইমাম ও মুকতাদীর মধ্যে রাস্তা বা দেয়াল থাকলেও ইকতিদা করা যায় ।

৭২৯. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রাতের সালাত তাহাঁর নিজ কামরায় আদায় করিতেন। কামরার দেওয়ালটি ছিল নীচু। ফলে একদা সাহাবীগণ নাবী (সাঃআঃ)-এর শরীর দেখিতে পেলেন এবং (দেয়ালের অন্য পাশে) সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করিলেন। সকালে তাঁরা এ কথা বলাবলি করছিলেন। দ্বিতীয় রাতে তিনি (সালাতে) দাঁড়ালেন। সাহাবীগণ দাঁড়িয়ে তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করিলেন। দু বা তিন রাত তাঁরা এরূপ করিলেন। এরপরে (রাতে) আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বসে থাকলেন, আর বের হলেন না। ভোরে সাহাবীগণ এ বিষয়ে আলোচনা করিলেন। তখন তিনি বললেনঃ আমার আশংকা হচ্ছিল যে, রাতের সালাত তোমাদের উপর ফরয করে দেয়া হইতে পারে।

১০/৮১. অধ্যায়ঃ রাতের সালাত ।

৭৩০. আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ)-এর একটি চাটাই ছিল। তিনি তা দিনের বেলায় বিছিয়ে রাখতেন এবং রাতের বেলা তা দিয়ে কামরা বানিয়ে নিতেন। সাহাবীগণ তাহাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়ান এবং তাহাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন।

৭৩১. যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) রমযান মাসে একটি ছোট কামরা বানালেন। তিনি (বুস্‌র ইবনু সায়ীদ) (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, মনে হয়, যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) কামরাটি চাটাই দিয়ে তৈরি ছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেখানে কয়েক রাত সালাত আদায় করেন। আর তাহাঁর সাহাবীগণের মধ্যে কিছু সাহাবীও তাহাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন। তিনি যখন তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারলেন, তখন তিনি বসে থাকলেন। পরে তিনি তাঁদের নিকট এসে বলিলেন, তোমাদের কার্যকলাপ দেখে আমি বুঝতে পেরেছি। হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের ঘরেই সালাত আদায় কর। কেননা, ফরয সালাত ছাড়া লোকেরা ঘরে যে সালাত আদায় করে তা-ই উত্তম। আফফান (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) যায়দ ইবনু সাবিত (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে একই রকম বলেছেন।

১০/৮২. অধ্যায়ঃ ফরয তাকবীর বলা ও সালাত শুরু করা ।

৭৩২. আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘোড়ায় চড়েন। ফলে তাহাঁর ডান পাঁজরে আঁচড় লাগে। আনাস (রাদি.) বলেন এ সময় কোন এক সালাত আমাদের নিয়ে তিনি বসে আদায় করেন। আমরাও তাহাঁর পিছনে বসে সালাত আদায় করি। সালাম ফিরানোর পর তিনি বললেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাঁকে অনুসরণ করার জন্যই। তাই তিনি যখন দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করিবে। আর তিনি যখন রুকূ করেন তখন তোমারাও রুকূ করিবে। তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করিবে। তিনি যখন

“سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه”

বলেন, তখন তোমরা

“رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ”

বলবে।

৭৩৩. আনাস ইবনু মালিক আনসারী (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) ঘোড়া হইতে পড়ে গিয়ে আহত হন। তাই তিনি আমাদের নিয়ে বসে সালাত আদায় করেন। আমরাও তাহাঁর সঙ্গে বসে সালাত আদায় করি। অতঃপর তিনি ফিরে বললেনঃ ইমাম অনুসরণের জন্যই বা তিনি বলেছিলেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাহাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন রুকূ করেন তখন তোমরাও রুকূ করিবে। যখন তিনি উঠেন তখন তোমরাও উঠবে। তিনি যখন

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলেন,তখন তোমরা

رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ

বলবে এবং তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করিবে।

৭৩৪. আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ ইমাম নির্ধারণ করা হয় তাহাঁর অনুসরণের জন্য। তাই যখন তিনি তাকবীর বলেন, তখন তোমরাও তাকবীর বলবে, যখন তিনি রুকূ করেন তখন তোমরাও রুকূ করিবে। যখন

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলেন তখন তোমরা বলবে

رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ

আর তিনি যখন সিজদা করেন তখন তোমরাও সিজদা করিবে। যখন তিনি বসে সালাত আদায় করেন তখন তোমরাও বসে সালাত আদায় করিবে।

১০/৮৩. অধ্যায়ঃ সালাত শুরু করার সময় প্রথম তাকবীরের সাথে সাথে উভয় হাত উঠানো ।

৭৩৫. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) যখন সালাত শুরু করিতেন, তখন উভয় হাত তাহাঁর কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলিতেন এবং রুকূ হইতে মাথা উঠাতেন তখনও একই ভাবে দুহাত উঠাতেন এবং

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ

বলিতেন। কিন্তু সিজদার সময় এরুপ করিতেন না।

১০/৮৪. অধ্যায়ঃ তাকবীরে তাহরীমা, রুকূতে যাওয়া এবং রুকূ হইতে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো ।

৭৩৬. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রুকূর জন্য তাকবীর বলিতেন তখনও এ রকম করিতেন। আবার যখন রুকূ হইতে মাথা উঠাতেন তখনও এমন করিতেন এবং

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলিতেন।তবে সিজদার সময় এরূপ করিতেন না।

৭৩৭. আবু কিলাবা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি মালিক ইবনু হুওয়ায়রিস (রাদি.)-কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করিতেন তখন তাকবীর বলিতেন এবং তাহাঁর দুহাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করিতেন তখনও তাহাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকু হইতে মাথা উঠাতেন তখনও তাহাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃআঃ) এরূপ করিয়াছেন।

১০/৮৫. অধ্যায়ঃ উভয় হাত কতটুকু উঠাবে ।

আবু হুমাইদ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর সাথীদের বলেছেন যে, নাবী (সাঃআঃ) কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন ।

৭৩৮. আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)–কে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করিতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলিতেন তখন তাহাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করিতেন। আর যখন রুকূর তাকবীর বলিতেন তখনও এ রকম করিতেন। আবার যখন

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলিতেন,তখনও এরূপ করিতেন এবং

رَبَّناَ وَلَكَ الحَمدُ

বলিতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করিতেন না। আর সিজদার থেকে মাথা উঠাবার সময়ও এরূপ করিতেন না।

১০/৮৬. অধ্যায়ঃ দু রাকআত আদায় করে দাঁড়াবার সময় দু হাত উঠানো।

৭৩৯. নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে বর্ণিতঃ

ইবনু উমর (রাদি.) যখন সালাত শুরু করিতেন তখন তাকবীর বলিতেন এবং দুহাত উঠাতেন আর যখন রুকু করিতেন তখনও দুহাত উঠাতেন। এরপর যখন

سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه

বলিতেন তখনও দু হাত উঠাতেন এবং দুরাকআত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দুহাত উঠাতেন। এ সমস্ত আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) হইতে বর্ণিত বলে ইবনু উমর (রাদি.) বলেছেন। এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনু সালাম ইবনু উমর (রাদি.) সূত্রে নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন। ইবনু তাহমান, আইয়ূব ও মূসা ইবনু উক্‌বাহ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করিয়াছেন। [১]

[১] আঃপ্রঃর ৬৯৫ নং হাদীসের বিশাল এক টীকা লেখা হয়েছে বহু মারফু হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করে মাযহাবী রসম রেওয়াজ চালু রাখার জন্য। হানাফী মাযহাবে তাক্‌বীরে তাহরীমা ছাড়া কোথাও রাফউল ইয়াদাঈন হয় না অথচ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) আজীবন সালাতে তাক্‌বীরে তাহরীমাহ ছাড়াও রাফউল ইয়াদাঈন বা হাত উত্তোলন করিয়াছেন। নিম্নের হাদীস তার জ্বলন্ত প্রমাণঃ

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃআঃ) কে দেখেছি তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। এবং যখন তিনি রূকুর জন্য তাকবীর বলিতেন তখনও এরূপ করিতেন। এবং যখন রূকু হইতে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করিতেন। ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করিয়াছেন। তাহাঁর অপর বর্ণনায় এটাও আছে যে, যখন তিনি [রাসুল (সাঃআঃ)] দ্বিতীয় রাকআত হইতে (তৃতীয় রাকআতের জন্য) দাঁড়াতেন তখনও দুহাত (কাঁধ বরাবর) উঠাতেন ।

(বুখারী ১ম খণ্ড ১০২ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৬৮ পৃষ্ঠা। আবু দাউদ ১ম খণ্ড ১০৪, ১০৫ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ১ম খণ্ড ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১, ১৫৮, ১৬২ পৃষ্ঠা। ইবনু খুযায়মাহ ৯৫, ৯৬। মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। ইবনে মাজাহ ১৬৩ পৃষ্ঠা। যাদুল মাআদ ১ম খণ্ড ১৩৭, ১৩৮, ১৫০ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১১৩-১১৫ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সায়াদাত ১ম খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠা। বুখারী আঃপ্রঃ ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯২, ৬৯৩, ৬৯৫। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩২-৪৩৪। বুখারী ইসলামীক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৭-৭০১ অনুচ্ছেদসহ। মুসলিম ইসলামীক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪৫-৭৫০। আবু দাউদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৮৪২-৮৪৪। তিরমিযী ইসলামিক ফাউন্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ২৫৫। মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৩৮-৭৩৯, ৭৪১, ৭৪৫। বুলূগুল মারাম ৮১ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ. হাদীস পর্ব ১২৬-১২৯ পৃষ্ঠা)

আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিত। রাসুল (সাঃআঃ) যখন সালাত শুরু করিতেন, যখন রুকু করিতেন এবং যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন হস্তদ্বয় উত্তোলন করিতেন কিন্তু সিজদার মধ্যে হস্তদ্বয় উত্তোলন করিতেন না। রাসুল (সাঃআঃ) মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ অর্থাৎ তাহাঁর মৃত্যু পর্যন্ত সর্বদাই তাহাঁর সালাত এরূপ করিতেন। (বায়হাকি, হেদায়াহ দেরায়াহ ১ম খণ্ড ১১৪ পৃষ্ঠা) আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাদি.) বলেন, রফউল ইয়াদাঈন হল সালাতের সৌন্দর্য, রুকুতে যাবার সময় ও রুকু হইতে উঠার সময় কেউ রফউল ইয়াদাঈন না করলে তিনি তাকে ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতেন। (নায়লুল আওত্বার ৩/১২, ফাতহুল বারী ২/২৫৭)

হাদীস জগতের শ্রেষ্ঠ ইমাম ইসমাঈল বুখারী জুযউর রফইল ইয়াদাইন নামক একটি স্বতন্ত্র হাদীস গ্রন্থই রচনা করিয়াছেন। যার মধ্যে ১৯৮টি হাদীস বিদ্যমান। (ছাপা তাওহীদ পাবলিকেশন্স, ঢাকা) যুগ শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস নাসিরুদ্দিন আল-আলবানী তাহাঁর সিফাতু সলাতুন্নবী গ্রন্থে বুখারী ও মুসলিমের হাদীস “তিনি রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানোর সময় দুহাত উঠাতেন” উল্লেখ করে টীকায় লিখেছেন- এ হস্ত উত্তোলন নাবী (সাঃআঃ) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যেস্ত। কিছু সংখ্যক হানাফী আলেম সহ বেশীরভাগ আলিম হাত উঠানোর পক্ষে মত পোষণ করেন ।

রফউল ইয়াদাইন ও খোলাফায়ে রাশিদ্বীন এবং আশরা মুবাশ্‌শারীনঃ ইমাম যায়লাঈ হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) , আল্লামা আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি), আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এবং হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সবাই ইমাম হাকেম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ

ইমাম হাকিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেনঃ “রফয়ে য়াদাইন ব্যতীত অন্য কোন সুন্নাতের বর্ণনার ক্ষেত্রে খোলাফায়ে রাশেদ্বীন, আশরা মোবাশ্‌শারা (জান্নাতের শুভসংবাদ প্রাপ্ত দশজন সাহাবা) এবং বড় বড় সাহাবীগণ (তাদের দূর দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরও) একত্রিত হয়েছেন বলে আমার জানা নেই। (নাসবুর রায়াহ ১/৪১৮ পৃষ্ঠা, নাইলুল ফারকাদাইন পৃষ্ঠা ২৬, তালখীছ আলহাবীর ১/৮২)

শায়খ আবদুল কাদের জীলানী ও রফউল ইয়াদাইনঃ শায়খ আবদুল কাদের জীলানী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) সালাতের সুন্নাতসমূহ বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেছেনঃ “সালাত শুরু করার সময়, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় রফউল ইয়াদাইন করা সুন্নাত ।” (গুনইয়াতুত ত্বালিবীন পৃষ্ঠা ১০)

হানাফী আলিমগণ ও রফউল ইয়াদাইনঃ শায়খ আবুত্বলিব মাক্কী হানাফী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) তাহাঁর কূতুল কূলুব নামক গ্রন্থে সালাতের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করিতে গিয়ে বলেনঃ “রুকুতে যাওয়ার সময় রফউল ইয়াদাইন করা এবং তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ বলে রফউল ইয়াদাইন করা সুন্নাত ।” (কূতুল কূলুব ৩/১৩৯) কাযী ছানাউল্লাহ পানিপত্তি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ “বর্তমান সময়ের অধিকাংশ আলেমের দৃষ্টিতে রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নাত। অধিকাংশ ফকীহ এবং মুহাদ্দিসগণ একে প্রমাণ করে থাকেন ।” (মালা বুদ্দা মিনহু পৃষ্ঠা ৪২, ৪৪)

ইমাম আবু ইউসুফ-এর শীষ্য ইছাম ও রফউল ইয়াদাইনঃ আল্লামা আবদুল হাই লাখনোভী বলেনঃ “এছাম ইবনু আবু ইউসুফ ইমাম আবু ইউসুফ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি)-এর শাগরিদ ছিলেন এবং হানাফী ছিলেন । তিনি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠার সময় দুহাত উঠাতেন ।” (আল ফাওয়ায়েদুল বাহিয়্যাহ ১১৬ নূর মোহাম্মদ প্রেস) আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক, সুফিয়ান ছাওরী এবং শুবাহ বলেনঃ “এছাম ইবনূ ইউসুফ মুহাদ্দিছ ছিলেন তাই তিনি রফউল ইয়াদাইন করিতেন ।” (আল ফাওয়ায়েদুল বাহিয়্যাহ ১১৬ নূর মোহাম্মদ প্রেস)

আল্লামা আবদুল হাই লক্ষ্ণৌবী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ “নাবী (সাঃআঃ) থেকে রফয়ে ইয়াদাইন এর প্রমাণ বেশী এবং অগ্রাধিকার যোগ্য ।” (আততালীকুল মুমাজ্জাদ ৯১ পৃষ্ঠা) তিনি আরও বলেনঃ

“সত্য কথা হলো রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় রফউল ইয়াদাইন করা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) এবং অনেক সাহাবী (রাদি.) থেকে শক্তিশালী সনদ এবং ছহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ।” (আসসিয়ায়াহ ১/২১৩) রুকুতে যাওয়া ও রুকু হইতে উঠার সময় রফউল ইয়াদাঈন করা সম্পর্কে চার খলীফাহ সহ প্রায় ২৫জন সাহাবী হইতে বর্ণিত সহীহ হাদীস বিদ্যমান। একটি হিসাব মতে রফউল ইয়াদাইন-এর হাদীসের রাবী সংখ্যা আশারায়ে মুবাশ্‌শরাহ সহ অন্যূন ৫০ জন সাহাবী- (ফিকহুস সুন্নাহ ১/১০৭, ফাতহুল বারী ২/২৫৮) এবং সর্বমোট সহীহ হাদীস আসারের সংখ্যা অন্যূন ৪০০ শত। ইমাম সুয়ূতী রফউল ইয়াদাঈন এর হাদীসকে মুতাওয়াতির পর্যায়ের বলে মন্তব্য করিয়াছেন ।

কতিপয় নির্বোধ লোকের কথা আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সময় যারা নতুন ঈমান এনেছিলেন তারা নাকি তাঁদের পুরাতন আচরণের বশবর্তী হয়ে বগলে পুতুল রাখতেন এবং এটা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) জানতে পারলে তিনি রফউল ইয়াদাঈনের নির্দেশ দেন। পরে তাঁদের ঈমান মজবুত হয়ে গেলে রফউল ইয়াদাঈন করার নির্দেশ মনসুখ হয়ে যায়। এ কথাটি নিতান্তই আল্লাহর রসূলের (সাঃআঃ) সাহাবীদের ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ। কারণ তাঁদের ঈমান আমাদের ঈমান অপেক্ষা অনেক দৃঢ় ও মজবুত ছিল। তাছাড়া এ কথাটি সাহাবীদের উপর মিথ্যা অপবাদেরই নামান্তর ।

রফউল ইয়াদাঈন সম্পর্কে সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদের হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় রফউল ইয়াদাঈন করা যাবে না। কিন্তু মুহাদ্দীসিনে কিরামের নিকট এ কথাটি প্রসিদ্ধ যে, তাহাঁর শেষ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে স্মৃতি ভ্রম ঘটে, ফলে হইতে পারে এ হাদীসটিও সে সবের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তিনি কয়েকটি বিষয়ে সকল সাহাবীগণের বিপরীতে কথা বলেছেন। যেমনঃ (১) মুয়াব্বিযাতাইন- সুরা নাস ও ফালাক সুরাদ্বয় কুরআনের অংশ নয় মনে করিতেন। (২) তাতবীক- রুকুতে তাতবীক বা দুহাতকে জোড় করে হাঁটু দ্বারা চেপে রাখতে বলিতেন। (৩) দুজন সালাতে দাঁড়ালে কিভাবে দাঁড়াবে। (৪) আরাফাহর ময়দানে কীভাবে তিনি (সাঃআঃ) দুওয়াক্ত একসাথে আদায় করিয়াছেন। (৫) হাত বিছিয়ে সিজদা করা। (৬) —– কিভাবে পড়েছেন। (৭) রফউল ইয়াদাঈন একবার করিয়াছেন। [নাসবুর রাইয়াহ (ইমাম যাইলায়ী) ৩৯৭-৪০১ পৃষ্ঠা, ফিকহুল সুন্নাহ ১/১৩৪] ১০/৮৭. অধ্যায়ঃ সালাতে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা ।

৭৪০

সাহল ইবনু সাদ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, লোকদের নির্দেশ দেয়া হত যে, সালাতে প্রত্যেকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখবে। [১] আবু হাযিম (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এ হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিতেন বলেই জানি। ইসমাঈল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, এ হাদীসটি নাবী (সাঃআঃ) হইতেই বর্ণনা করা হতো। তবে তিনি এমন বলেননি যে, সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাবী (সাঃআঃ) হইতে বর্ণনা করিতেন।

[১] ওয়ালিল বিন হুজর (রাদি.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাহাঁর বুকে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন । বুখারীর হাদীসের আরবী ইবারতে —- শব্দের অর্থ করিয়াছেন হাতের কব্জি। কিন্তু এমন কোন অভিধান নেই যেখানে —- অর্থ কব্জি করা হয়েছে। আরবী অভিধানগুলিতে —- শব্দের অর্থ পূর্ণ একগজ বিশিষ্ট হাত। অনুবাদক শুধুমাত্র সহীহ হাদীসকে ধামাচাপা দিয়ে মাযহাবী মতকে অগ্রাধীকার দেয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে অনুবাদে পূর্ণ হাতের পরিবর্তে কব্জি উল্লেখ করিয়াছেন। তথাপিও সংশয় নিরসনের লক্ষে এ সম্পর্কে খানিকটা বিশদ আলোচনা উদ্ধৃত করা হলঃ

ওয়াইল বিন হুজর (রাদি.) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নাবী (সাঃআঃ)-এর সাথে সালাত আদায় করেছি। (আমি দেখেছি) নাবী (সাঃআঃ) স্বীয় ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে বুকের উপর রাখলেন । (বুখারী ১০২ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ২০ পৃষ্ঠা। মুসলিম ১৭৩ পৃষ্ঠা। আবু দাউদ ১ম খণ্ড ১১০, ১২১, ১২৮ পৃষ্ঠা। তিরমিযী ৫৯ পৃষ্ঠা। নাসাঈ ১৪১ পৃষ্ঠা। ইবনু মাজাহ, ৫৮, ৫৯ পৃষ্ঠা, মেশকাত ৭৫ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মালিক ১৭৪ পৃষ্ঠা। মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৬০ পৃষ্ঠা। যাদুল মায়াদ ১২৯ পৃষ্ঠা। হিদায়া দিরায়াহ ১০১ পৃষ্ঠা। কিমিয়ায়ে সাআদাত ১ম খণ্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা। বুখারী আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৩৫। বুখারী আঃপ্রঃ ১ম খণ্ড হাদীস নং ৬৯৬। বুখারী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭০২; মুসলিম ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৮৫১। আবু দাউদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৫৯, তিরমিযী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড হাদীস নং ২৫২, মেশকাত নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদরাসা পাঠ্য ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৪১, ৭৪২। বুলুগুল মারাম বাংলা ৮২ পৃষ্ঠা) বুকের উপর হাত বাঁধা সম্বন্ধে একটি হাদীস বর্ণিত হলঃ সীনা বা বুকের উপর এরূপভাবে হাত বাঁধতে হইবে যেন ডান হাত উপরে এবং বাম হাত নিচে থাকে। (মুসলিম, আহমাদ, ও ইবনু খুযাইমাহ) হাত বাঁধার দুটি নিয়মঃ

প্রথম নিয়মঃ ডান হাতের কব্জি বাম হাতের কব্জির জোড়ের উপর থাকবে। (ইবনু খুযাইমাহ)

দ্বিতীয় নিয়মঃ ডান হাতের আঙ্গুলগুলি বাম হাতের কনুই-এর উপর থাকবে, অর্থাৎ সমস্ত ডান হাত বাম হাতের উপর থাকবে। (বুখারী)

এটাই যিরাআহর উপর যিরাআহ রাখার পদ্ধতি ।

বুকে হাত বাঁধা সম্পর্কে আলোচনাঃ

কে হাত বাঁধা সম্পর্কে আল্লামা হায়াত সিন্ধী একখানা আরবী রিসালা লিখে তাতে তিনি প্রমাণিত করিয়াছেন যে, সালাতে সীনার উপর হাত বাঁধতে হইবে। তাহাঁর পুস্তিকার নাম “ফতহুল গফূর ফী তাহকীকে ওযয়িল ইয়াদায়নে আলাস সদূর”। পুস্তিকা খানা ৮ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত। তা হইতে কয়েকটি দলিল উদ্ধৃত করছিঃ

১। ইমাম আহমাদ স্বীয় মসনদে কবীসহা বিন হোল্‌ব- তিনি স্বীয় পিতা (হোল্‌ব) হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, তিনি (হোল্‌ব) বলেন যে, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-কে (সালাত হইতে ফারেগ হইতে মুসল্লিদের দিকে) ডান ও বাম দিকে ফিরতে দেখেছি, আর দেখেছি তাঁকে স্বীয় সীনার উপর হাত বাঁধতে। উক্ত হাদীসে ইয়াহইয়া নামক রাবী স্বীয় দক্ষিণ হস্ত বাম হস্তের কব্জির উপর রেখে দেখালেন। আল্লামা হায়াত সিন্ধী বলেন যে, আমি তাহকীক কিতাবে —- তিনি স্বীয় সীনার উপর হাত রাখলেন, এ কথা দেখেছি। আর আমরা বলছি যে, হাফিয আবু উমর ইবনু আবদুল বর স্বীয় “আল ইসতিআব ফী মাআরিফাতিল আসহাব” কিতাবে উক্ত হাদীস হোলব সাহাবী হইতে তাহাঁর পুত্র কবীসা রিওয়ায়াত করিয়াছেন এ কথা উল্লেখ করে উক্ত হাদীস সহীহ বলেছেন। (২য় খণ্ড, ৬০০ পৃঃ)

২। ইমাম আবু দাউদ তাউস (তাবিঈ) হইতে সীনার উপর হাত বাঁধার হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন।

৩। ইমাম ইবনু আবদুল বর “আত তামহীদ লিমা ফীল মুয়াত্তা মিনাল মাআনী ওয়াল আসানীদ” কিতাবে উক্ত তাউস তাবিঈর হাদীস উল্লেখ করে সীনার উপর হাত বাঁধার কথা বলেছেন। এতদ্ব্যতীত ওয়ায়েল বিন হুজর হইতেও সীনার উপর হাত বাঁধার হাদীস উল্লেখ করিয়াছেন ।

৪। ইমাম বাইহাকী আলী “ফাসল্লি লি রাব্বিকা ওয়ানহার”, এর অর্থ এরূপ বর্ণনা করেছেনঃ তুমি নামায পড়ার সময় ডান হাত বাম হাতের উপর রাখ। (জওহারুন নকীসহ সুনানে কুবরা ২৪-৩২ পৃঃ)

৫। ইমাম বুখারী স্বীয় তারীখে উকবাহ বিন সহবান, তিনি (উকবাহ) আলী (রাদি.) হইতে রিওয়ায়াত করিয়াছেন যে, আলী (রাদি.) বাম হাতের উপর ডান হাত রেখে (হস্তদ্বয়) সীনার উপর বেঁধে “ফাসল্লি লি রব্বিকা ওয়ানহার” (আয়াতের) অর্থ বুঝালেন। অর্থাৎ উক্ত আয়াতের অর্থ তুমি সীনার উপর হাত বেঁধে সালাতে যাও। এর বাস্তব রূপ তিনি [আলী (রাদি.)} সীনার উপর হাত বেঁধে দেখালেন। উক্ত আয়াতের অর্থ আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাদি.) হইতেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। এখন নাভীর নীচে হাত বাঁধার কোন হাদীস আছে কিনা তা-ই দেখা যাক ।

নাভীর নিচে হাত বাঁধাঃ

ইমাম বাইহাকী আলী হইতে নাভীর নিচে হাত বাঁধার একটি হাদীস উল্লেখ করে তাকে যঈফ বলেছেন ।

নাভীর নিচে হাত বাঁধার কোন সহীহ হাদীস নেইঃ

আল্লামা সিন্ধী হানাফী বিদ্বানগণের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, যদি তুমি বল যে, ইবনু আবী শায়বার মুসান্নাফ (হাদীসের কিতাবের নাম) হইতে শায়খ কাসিম বিন কাতলুবাগা তাখরীজু আহাদিসিল এখতিয়ার কিতাবে ওকী মুসা বিন ওমায়রাহ হইতে, মূসা আলকামা বিন ওয়ায়িল বিন হুজর হইতে যে রিয়ায়াত করিয়াছেন তাতে নাভীর নিচে হাত বাঁধার কথা উল্লেখ আছে। তবে আমি (আল্লামা সিন্ধী) বলি যে, নাভির নীচে হাত বাঁধার হাদীস ভুল। মুসান্নাফ এর সহীহ গ্রন্থে উক্ত সনদের উল্লেখ আছে। কিন্তু নাভীর নিচে এই শব্দের উল্লেখ নেই। উক্ত হাদীস পরে (ইবরাহীম) নখয়ী এর আসার (সাহাবা ও তাবিঈদের উক্তি ও আচরণকে আসার বলে) উল্লেখ আছে। উক্ত আসার ও হাদীসের উক্তি প্রায় নিকটবর্তী। উক্ত আসার-এর শেষ ভাগে ফিস্‌সালাতে তাহতাস সুররাহ অর্থাৎ নামাযের মধ্যে নাভীর নিচে (হাত বাঁধার উল্লেখ আছে)। মনে হয় লেখকের লক্ষ্য এক লাইন হইতে অন্য লাইনে চলে যাওয়ায় মওকুফ (হাদিসকে) মরফু লিখে দিয়েছেন। (যে হাদীসের সম্বন্ধ-সাহাবার সাথে হয় তাকে মওকুফ আর যার সম্বন্ধ রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে হয় তাকে মরফু হাদীস বলে)। আর আমি যা কিছু বললাম আমার কথা হইতে এটাই প্রকাশ পায় যে, মুসান্নাফ এর সব খণ্ড মিলিতভাবে নাভীর নিচে হাত বাঁধা বিষয়ে এক নয় অর্থাৎ সবগুলোতে নাভীর নীচে হাত বাঁধার কথাটি উল্লেখ নাই। তাছাড়া বহু আহলে হাদীস (মুহাদ্দিস) উক্ত হাদীস রিওয়ায়াত করিয়াছেন। অথচ নাভির নীচে এর কেউই উল্লেখ করেননি। আর আমি তাঁদের মধ্যেকার কোন ব্যক্তি হইতে শুনিওনি। কেবল কাসেম বিন কাতলুবাগা ঐ কথার (নাভির নীচে) উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি তামহীদ কিতাবের কথা উল্লেখ করে লিখেছেন যে, (আহলে হাদীসদের মধ্যে প্রথম) ইবনু আব্দিল বর উক্ত কিতাবে বলেছেন যে, সওরী ও আবু হানীফা নাভির নীচের কথা বলেছেন। আর সেটা আলী ও ইবরাহীম নখঈ হইতে বর্ণিত হয়ে থাকে বটে, কিন্তু ঐ দুজন (আলী ও নখঈ) হইতে সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়নি। যদি সেটা হাদীস হতো তাহলে ইবনু আবদুল বর মুসান্নাফ হইতে ওটা অবশ্য উল্লেখ করিতেন। কেননা হাত বাঁধা সম্বন্ধে ইবনু আবী শায়বা হইতে তিনি বহু রিওয়ায়াত এনেছেন। ২য় ইবনু হজর আসকালানী, (আহলে হাদীস) ৩য় মুজদুদদ্বীন ফিরোজাবাদী (আহলে হাদীস) ৪র্থ আল্লামা সৈয়ূতী, (আহলে হাদীস) ৫ম আল্লামা যয়লয়ী, (মুহাক্কিক) ৬ষ্ঠ আল্লামা আয়নী (আহলে তাহকীক) ও ৭ম ইবনু আমীরিল হাজ্জ (আহলে হাদীস) প্রভৃতির উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন যে, যদি “নাভির নীচে”-এর কথা থাকত তাহলে সকলেই তা উল্লেখ করিতেন। কেননা তাঁদের সকলের কিতাব ইবনু আবী শায়বার বর্ণিত হাদীস দ্বারা পূর্ণ। তিনি এ সম্পর্কিত হাদীসদ্বয়ের আলোচনা করে বুকে হাত বাঁধাকে ওয়াজিব বলেছেন। সিন্ধী সাহেব উপসংহারে লিখেছেন “জেনে রাখ যে, নাভির নীচে-এ কথা প্রমাণের দিক দিয়ে না কতয়ী (অকাট্য), না যন্নী (বলিষ্ঠ ধারণামূলক)। বরং প্রমাণের দিক দিয়ে মওহূম (কল্পনা প্রসূত) আর যা মওহূম তদদ্বারা শরীয়তের হুকুম প্রমাণিত হয় না। …….কাজেই শুধু শুধু কল্পনা করে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর দিকে কোন বস্তুর সম্বন্ধ করা জায়েজ নয়। অর্থাৎ শুধু কল্পনার উপর নির্ভর করে নাভীর নীচে হাত রাখার নিয়মকে রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সম্পর্কিত করা জায়েজ নয়। যখন উপরিউক্ত আলোচনা হইতে স্পষ্টভাবে প্রকাশ হয়ে গেল যে, নামাযের মধ্যে সীনার উপর হাত বাঁধা নয় যে, ওটা হইতে মুখ ফিরিয়ে নেন। আর ঐ বস্তু হইতে কিরূপ মুখ ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব যা রাসুলুল্লাহ (সাঃআঃ) হইতে প্রমাণিত হয়েছে। কেননা রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেন যে, আমি যা এনেছি (অর্থাৎ আল্লাহর ব্যবস্থা), যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কেউ তার প্রবৃত্তিকে তার অনুগামী না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হইতে পারবে না। অতএব, প্রত্যেক মুসলমান (স্ত্রী-পুরুষের) উচিত তাহাঁর উপর আমল করা, আর কখনো কখনো এই দুআ করা- প্রভু হে, যে বিষয়ে মতভেদ করা হয়েছে তাতে আমাদেরকে সত্য পথের সন্ধান দাও। কেননা তুমিই তো যাকে ইচ্ছা সিরাতে মুস্তাকীমের পথ দেখিয়ে থাক”। (উক্ত কিতাব ২-৮ পৃঃ ও ইবকারুল মিনান ৯৭-১১৫ পৃঃ)

আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী তাহাঁর সীফাত গ্রন্থে হাত বাঁধা সম্পর্কে লিখতে গিয়ে শিরোনাম এসেছেনঃ —- বুকের উপর দুহাত রাখা। অতঃপর তিনি হাদীস উল্লেখ করে নিচে টীকা লিখেছেন। যা বন্ধনীর মধ্যে দেখানো হল। “নাবী (সাঃআঃ) বাম হাতের পিঠ, কব্জি ও বাহুর উপর হাত রাখতেন ।” [আবু দাউদ, নাসাঈ, ১/৪/২ সহীহ সনদে, আর ইবনু হিব্বানও সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। ৪৮৫ ]

“এ বিষয়ে স্বীয় সাহাবাগণকেও আদেশ প্রদান করিয়াছেন ।” (মালিক, বিখারী ও আবু আওয়ানাহ) তিনি কখনো ডান হাত দ্বারা বাম হাত আঁকড়ে ধরতেন ।” (নাসাঈ, দারাকুত্বনী, সহীহ সনদ সহকারে। এ হাদীস প্রমাণ করছে যে, হাত বাঁধা সুন্নাত। আর প্রথম হাদীস প্রমাণ করছে যে, হাত রাখা সুন্নাত। অতএব উভয়টাই সুন্নাত। কিন্তু হাত বাঁধা ও হাত রাখার মধ্যে সমন্বয় বিধান করিতে গিয়ে পরবর্তী হানাফী আলিমগণ যে পদ্ধতি পছন্দ করিয়াছেন তা হচ্ছে বিদআত; যার রূপ তারা এভাবে উল্লেখ করিয়াছেন যে, ডান হাতকে বাম হাতের উপর কনিষ্ঠ ও বৃদ্ধাঙ্গুলি দ্বারা আঁকড়ে ধরবে এবং অপর তিন আঙ্গুলি বিছিয়ে রাখবে (ইবনু আবিদ্বীন কর্তৃক দুররে মুখতারের টীকা (১/৪৫৪)। এতএব, হে পাঠক! পরবর্তীদের (মনগড়া) এ কথা যেন আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে ।

“তিনি হস্তদ্বয়কে বুকের উপর রাখতেন ।” [আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ স্বীয় সহীহ গ্রন্থে (১/৫৪/২) আহমাদ, আবুশ্‌ শাইখ স্বীয় “তারীখু আছবাহান” গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ১২৫) ইমাম তিরমিযীর একটি সনদকে হাসান বলেছেন। গভীরভাবে চিন্তা করলে এর বক্তব্য মুওয়াত্তা ইমাম মালিক এবং বুখারীতে পাওয়া যাবে। আলবানী বলেন, এ হাদীসের বিভিন্ন বর্ণনাসুত্রে নিয়ে আমি —- কিতাবের (১১৮) পৃষ্ঠায় বিস্তারিত আলোচনা করেছি ।

জ্ঞাতব্যঃ বুকের উপর হাত রাখাটাই সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত। এছাড়া অন্য কোথাও রাখার হাদীস হয় দুর্বল আর না হয় ভিত্তিহীন। এই সুন্নাতের উপর ইমাম ইসহাক বিন রাহভিয়া আমল করিয়াছেন। মারওয়াযী — গ্রন্থে ২২২ পৃষ্ঠাতে বলেন, ইসহাক আমাদেরকে নিয়ে বিতরের সালাত পড়তেন এবং তিনি কুনূতে হাত উঠাতেন আর রুকুর পূর্বে কুনূত পড়তেন। তিনি বক্ষদেশ উপর বা নীচে হাত রাখতেন। কাযী ইয়াযও —কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠায় (রিবাত্ব তৃতীয় সংস্করণ) এ —- সালাতের মুস্তাহাব কাজ বর্ণনার ক্ষেত্রে অনুরূপ কথা বলেছেন, ডান হাতকে বাম হাতের পৃষ্ঠের উপর বুকে রাখা। আবদুল্লাহ ইবনু আহমাদের বক্তব্যও এর কাছাকাছি, তিনি তাহাঁর —- এর ৬২ পৃষ্ঠায় বলেনঃ আমার পিতাকে দেখেছি যখন তিনি সালাত পড়তেন তখন তাহাঁর এক হাতকে অপর হাতের উপর নাভির উপরস্থলে রাখতেন, দেখুন —- (৩৫৩)।] (দেখুন নাসিরুদ্দীন আল-আলবানী কৃত সিফাতু সলাতুন্নবী সাঃআঃ)

১০/৮৮. অধ্যায়ঃ সালাতে খুশু (বিনয়, নম্রতা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও তন্ময়তা) ।

৭৪১

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার কিবলা শুধুমাত্র এদিকে? আল্লাহর শপথ, তোমাদের রুকু তোমাদের খুশু কোন কিছুই আমার নিকট গোপন থাকে না। আর নিঃসন্দেহে আমি তোমাদের দেখি আমার পিছন দিক হইতেও।

৭৪২

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ তোমরা রুকু ও সিজদাগুলোতে যথাযথভাবে আদায় করিবে। আল্লাহর শপথ! আমি আমার পিছন হইতে বা রাবী বলেন, আমার পিঠের পিছনে হইতে তোমাদের দেখিতে পাই, যখন তোমরা রুকু ও সিজদা কর।

১০/৮৯. অধ্যায়ঃ তাকবীরে তাহরীমার পরে কি পড়বে ।

৭৪৩

আনাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ), আবু বকর (রাদি.) এবং উমর (রাদি.) –الحَمدُ لِلَّهِ رَبِّ العالَمينَ  দিয়ে সালাত শুরু করিতেন।

৭৪৪

আবু হুরাইরা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) তাক্‌বীরে তাহরীমা ও কিরাআতের মধ্যে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকতেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতামাতা আপনার উপর কুরবান হোক, তাকবীর ও কিরাআত এর মধ্যে চুপ থাকার সময় আপনি কি পাঠ করে থাকেন? তিনি বললেনঃ এ সময় আমি বলি- “হে আল্লাহ! আমার এবং আমার গুনাহের মধ্যে এমন ব্যবধান করে দাও যেমন ব্যবধান করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ আমাকে আমার গুনাহ হইতে এমনভাবে পবিত্র কর যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার হয়। হে আল্লাহ আমার গোনাহকে বরফ, পানি ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও।”

১০/৯০. অধ্যায়ঃ

৭৪৫

আসমা বিনত আবু বক্‌র (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

নাবী (সাঃআঃ) একবার সালাতুল কুসূফ (সূর্য গ্রহণের সালাত) আদায় করিলেন। তিনি সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। অতঃপর আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। অতঃপর উঠলেন, পরে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় রইলেন। আবার সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। অতঃপর আবার দাঁড়ালেন এবং দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ রুকুতে থাকলেন। অতঃপর রুকু হইতে উঠে আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আবার রুকুতে থাকলেন। অতঃপর রুকু হইতে উঠে আবার দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন এবং আবার রুকুতে গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ থাকলেন। অতঃপর রুকু হইতে উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। অতঃপর উঠে সিজদায় গেলেন এবং দীর্ঘক্ষণ সিজদায় থাকলেন। অতঃপর সালাত শেষ করে ফিরে বললেনঃ জান্নাত আমার খুবই নিকটে এসে গিয়েছিল এমনকি আমি যদি চেষ্টা করতাম তাহলে জান্নাতের একগুচ্ছ আঙ্গুর তোমাদের এনে দিতে পারতাম। আর জাহান্নামও আমার একেবারে নিকটবর্তী এসে গিয়েছিল। এমনকি আমি বলে উঠলাম, ইয়া রব! আমিও কি তাদের সাথে? আমি একজন স্ত্রীলোককে দেখিতে পেলাম। আবু হুরাইরা (রাদি.) বলেন, আমার মনে হয়, তিনি বলেছিলেন, একটি বিড়াল তাকে খামচাচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এ স্ত্রী লোকটির এমন অবস্থা কেন? মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) জবাব দিলেন, সে একটি বিড়ালকে আটকিয়ে রেখেছিল, ফলে বিড়ালটি অনাহারে মারা যায়। উক্ত স্ত্রী লোকটি তাকে খেতেও দেয়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে আহার করিতে পারে। নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেন, আমার মনে হয়, ইবনু আবু মুলায়কাহ (রাদি.) বর্ণনা করেছিলেন, যাতে সে যমীনের পোকামাকড় খেতে পারে।

১০/৯১. অধ্যায়ঃ সালাতে ইমামের দিকে তাকানো ।

আয়েশা (রাদি.) বলেন, নাবী (সাঃআঃ) সালাতে কুসূফ বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেছেন, তোমরা যখন আমাকে পিছিয়ে আসতে দেখেছিলে তখন আমি জাহান্নাম দেখেছিলাম; তার এক অংশ অপর অংশকে বিচূর্ণ করছে ।

৭৪৬

আবু মামার (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমরা খাব্বাব (রাদি.) কে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) কি যুহর ও আসরের সালাতে কিরাআত পড়তেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কিভাবে বুঝতে পারতেন? তিনি বলিলেন, তাহাঁর দাড়ির নড়াচড়া দেখে।

৭৪৭

বারাআ (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তাঁরা যখন নাবী (সাঃআঃ)-এর সঙ্গে সালাত আদায় করিতেন, তখন রুকু হইতে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দেখিতেন যে, নাবী (সাঃআঃ) সিজদায় গেছেন।

৭৪৮

আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ)-এর যুগে একবার সূর্যগ্রহণ হয়েছিল। তখন তিনি এজন্য সালাত আদায় করেন। সাহাবা-ই-কিরাম (রাদি.) জিজ্ঞেস করিলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় আপনাকে দেখলাম যেন কিছু একটা ধরতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু পরে দেখলাম, আবার পিছিয়ে এলেন। তিনি বলিলেন, আমাকে জান্নাত দেখানো হয় এবং তারই একটি আঙ্গুরের ছড়া নিতে যাচ্ছিলাম। আমি যদি তা নিয়ে আসতাম, তাহলে দুনিয়া স্থায়ী থাকা পর্যন্ত তোমরা তা হইতে খেতে পারতে।

৭৪৯

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করিলেন। অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করিলেন এবং মসজিদের কিবলার দিকে ইশারা করে বলিলেন, এইমাত্র আমি যখন তোমাদের নিয়ে সালাত আদায় করছিলাম তখন এ দেওয়ালের সামনের দিকে আমি জান্নাত ও জাহান্নামের প্রতিচ্ছবি দেখিতে পেলাম। আজকের মতো এত ভাল ও মন্দ আমি আর দেখিনি, একথা তিনি তিনবার বলিলেন।

১০/৯২. অধ্যায়ঃ সালাতে আসমানের দিকে চোখ তুলে তাকানো।

৭৫০

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) বলেছেনঃ লোকদের কী হলো যে, তারা সালাতে আকাশের দিকে চোখ তুলে তাকায়? এ ব্যাপারে তিনি কঠোর বক্তব্য রাখলেন; এমনকি তিনি বললেনঃ যেন তারা অবশ্যই এ হইতে বিরত থাকে, অন্যথায় অবশ্যই তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়া হইবে।

১০/৯৩. অধ্যায়ঃ সালাতে এদিক ওদিক তাকান ।

৭৫১

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ)-কে সালাতে এদিক ওদিক তাকানো সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেনঃ এটা একধরনের ছিনতাই, যার মাধ্যমে শয়তান বান্দার সালাত হইতে অংশ বিশেষ অংশ ছিনিয়ে নেয়।

৭৫২

আয়েশা (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

একবার নাবী (সাঃআঃ) একটি নক্‌শা করা চাদর পরে সালাত আদায় করিলেন। সালাতের পরে তিনি বললেনঃ এ চাদরের কারুকার্য আমার মনকে আকর্ষিত করেছিল। এটি আবু জাহমের নিকট নিয়ে যাও এবং এর বদলে একটি আম্বজানিয়্যাহ (নকশা ছাড়া মোটা কাপড়) নিয়ে এসো।

১০/৯৪. অধ্যায়ঃ সালাতের মধ্যে কোন কিছু ঘটলে বা কোন কিছু দেখলে বা ক্বিবলাহর দিকে থুথু দেখলে, সে দিকে তাকান ।

সাহল (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন, আবু বক্‌র (রাদি.) তাকালেন এবং নাবী (সাঃআঃ)-কে দেখলেন ।

৭৫৩

ইবনু উমর (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, নাবী (সাঃআঃ) লোকদের সামনে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিলেন, এমতাবস্থায় মসজিদে কিবলার দিকে থুথু দেখিতে পেয়ে তা পরিষ্কার করে ফেললেন। অতঃপর তিনি সালাত শেষ করে বললেনঃ তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন আল্লাহ তার সামনে থাকেন। কাজেই সালাতে থাকা অবস্থায় কেউ সামনের দিকে থুথু ফেলবে না। মূসা ইবনু উক্‌বাহ ও ইবনু আবু রাওয়াদও (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) নাফি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হইতে হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন।

৭৫৪

আনাস ইবনু মালিক (রাদি.) হইতে বর্ণিতঃ

তিনি বলিলেন, মুসলমানগণ ফজরের সালাতে রত এ সময় আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) আয়েশা (রাদি.)-এর হুজরার পর্দা উঠালে তাঁরা চমকে উঠলেন। তিনি তাদের দিকে তাঁকিয়ে দেখলেন, তাঁরা কাতারবদ্ধ হয়ে আছেন। তা দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। আবু বকর (রাদি.) তাহাঁর ইমামতের স্থান ছেড়ে দিয়ে কাতারে শামিল হবার জন্য পিছিয়ে আসতে চাইলেন। তিনি মনে করেছিলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃআঃ) বের হইতে চান। মুসলিমগণও সালাত ছেড়ে দিতে উদ্যত হয়েছিলেন। তিনি ইঙ্গিতে তাঁদের বলিলেন, তোমরা তোমাদের সালাত পুরো কর। অতঃপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। এ দিনেরই শেষে তাহাঁর ওফাত হয়। [১]

[১] অর্থাৎ তাহাঁর ইনতিকালের বিষয়টি শেষ প্রহরে সকলের নিকট সুনিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান হয় । কেননা , ঐতি-হাসিকগণ এ ব্যাপারে একমত যে , রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দিনের প্রথম প্রহরে ইনতিকাল করিয়াছেন । তাই এ হাদীসের ব্যাখ্যা এভাবেই করা যায় ।


Posted

in

by

Comments

Leave a Reply