প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ …

প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ

প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ >> সহীহ মুসলিম শরীফ এর মুল সুচিপত্র দেখুন >> নিম্নে মুসলিম শরীফ এর একটি অধ্যায়ের হাদিস পড়ুন

৬. অধ্যায়ঃ প্রত্যেক শিশু ইসলামী স্বভাবের উপর জন্মানোর মর্মার্থ এবং কাফির ও মুসলিমদের মৃত শিশুর বিধান

৬৬৪৮. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেন, প্রতিটি নবজাতক স্বভাবজাত ইসলাম নিয়ে জন্মলাভ করে। অতঃপর তার বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয় এবং আগুনপূজারী বানিয়ে দেয়, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী পূর্ণাঙ্গ চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দেয় তোমরা কি তাতে কোন অঙ্গ কর্তিত বাচ্চা উপলব্ধি করছ? তারপর আবু হুরায়রা্ [রাদি.] বলিলেন, ইচ্ছা করলে তোমরা এ আয়াতটি পাঠ করিতে পারঃ

‏ فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ

“আল্লাহর ফিত্রাতে যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই”- [সূরাহ্ আর্ রূম ৩৩:৩০]৬

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৫]

৬ কেউ কেউ বলেন, পিতার মেরুদণ্ড থেকে রূহ বের করে তাদের কাছ থেকে যে অঙ্গীকার নেয়া হয়েছে তা-ই ফিত্রাত। কেননা তার উপরই বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেছে। পরবর্তীতে তার মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে তা পিতা-মাতার কারণে হয়েছে। অর্থাৎ পিতা-মাতার স্বভাব, নীতি-নৈতিকতা, কথা, চরিত্র ও আদর্শের কারণে সন্তানের চরিত্রে পরিবর্তন ঘটে থাকে।

কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর ফায়সালার উপর সে জন্মগ্রহণ করেছে। তার ফায়সালা সে জাহান্নামী বা হতভাগা, জান্নাতী বা সৌভাগ্যবান-তার উপরই সে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তার উপরই সে থাকিবে। তা রদবদল হইবে না।

৬৬৪৯. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। মামার [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বলেন, যেমন চতুষ্পদ প্রাণী চতুষ্পদ বাচ্চা জন্ম দিতে হয় এবং তিনি [আরবি] [পূর্ণাঙ্গ] শব্দটি উল্লেখ করেননি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৬]

৬৬৫০. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে। তারপর তিনি বলেছেন, তোমরা পাঠ করঃ

 فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ‏

“আল্লাহর ফিত্রাত যার উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করিয়াছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। এ-ই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন”-[সূরাহ্ আর্ রূম ৩০:৩০]।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৭]

৬৬৫১. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করছেন। তারপর পিতা-মাতা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং মুশরিক বানিয়ে দিয়েছে। অতঃপর জনৈক লোক বলিল। হে আল্লাহর রসূল! যদি সে এর পূর্বে ইন্তিকাল করে তার ব্যাপারে আপনার মত কি? তিনি বলিলেন, তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ ভাল জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৮]

৬৬৫২. আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

আমাশ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে এ সূত্রে হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন।

ইবনি নুমায়র বর্ণিত হাদীসে আছে- “প্রতিটি বাচ্চা স্বভাবজাত ইসলামের উপর ভূমিষ্ঠ হয়”।

আর আবু মুআবিয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে আবু বকর [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় আছে, “এ স্বভাবজাতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকে স্পষ্ট করে কথা বলা পর্যন্ত [তার উপর বহাল থাকে]”।

এবং আবু মুআবিয়াহ্ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সানাদে আবু কুরায়ব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর বর্ণনায় রয়েছে, “এমন কোন বাচ্চা নেই যা এ স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে না, যে পর্যন্ত না সে কথা ব্যক্ত করিতে পারে”।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৬৯]

৬৬৫৩. হাম্মাম ইবনি মুনাব্বিহ [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, এ হাদীসটি রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] হইতে আবু হুরায়রা্ [রাদি.] আমাদেরকে বর্ণনা করিয়াছেন। অতঃপর তিনি তার কিছু সংখ্যক হাদীস আলোচনা করেন। রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রতিটি শিশু স্বভাবজাত ইসলামের উপর জন্মলাভ করে তারপর বাবা-মা তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দেয়, না খ্রীষ্টান বানিয়ে দেয়, যেমন উষ্ট্রী চতুষ্পদ জন্ম দিয়ে থাকে। তোমরা কি তাদের মাঝে কানকাটা কোন প্রাণী দেখিতে পাও? এমনকি তোমরাই সেগুলোর কর্ণ ছিদ্র করে দাও। সহাবারা বলিল, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! যে শিশু ছোট বেলায়ই মারা যাবে, তার ব্যাপারে আপনারা কী মতামত? তিনি বলিলেন, তাদের কৃতকর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫১৯, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭০]

৬৬৫৪. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ প্রত্যেকটি মানুষের বাচ্চাকে তার মা ফিতরাতের উপর জন্ম দিয়েছেন। পরে তার পিতামাতাই তাকে ইয়াহূদী বানিয়ে দিয়েছে, খ্রীষ্টান বানিয়ে দিয়েছে এবং অগ্নিপূজ়ারী বানিয়ে দিয়েছে। যদি তার পিতা-মাতা মুসলিম হয় তবে বাচ্চাটিও মুসলিম হইবে। প্রত্যেক বাচ্চাকে মা জন্মদানের সময় শাইতান তার দুপাঁজরে খোঁচা দেয়। কেবলমাত্র মারইয়াম ও তার পুত্র ঈসা [আঃ]-কে শাইতান খোঁচা দিতে পারেনি।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২০, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭১]

৬৬৫৫. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের নিষ্পাপ বাচ্চার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলিলেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২১, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭২]

৬৬৫৬. যুহরী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ইউনুস ও ইবনি আবু যিব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্র হইতে বর্ণীতঃ

তাদের দুজনের [শুআয়ব ও মাকাল] হাদীসের হুবহু হাদীস বর্ণনা করিয়াছেন। তাছাড়া শুআয়ব ও মাকাল-এর বর্ণিত হাদীসে আছে।। তথায় [আরবি] এর স্থানে [আরবি] [মুশরিকদের সন্তান-সন্ততি] উল্লেখ আছে।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২২, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৩]

৬৬৫৭. আবু হুরাইরাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, মুশরিকদের ছোট সন্তান যারা শিশু অবস্থায় ইন্তিকাল করে, তাদের ব্যাপারে রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে জিজ্ঞেস করা হলো। জবাবে তিনি বলিলেন তারা কি আমাল করত সে সম্পর্কে আল্লাহই অধিক অবগত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৩, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৪]

৬৬৫৮. আবদুল্লাহ ইবনি আব্বাস [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ]-কে মুশরিকদের বাচ্চাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলিলেন, তাদের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহই অধিক পরিজ্ঞাত। কেননা তিনিই তাদের সৃষ্টি করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৪, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৫]

৬৬৫৯. উবাই ইবনি কাব [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলেছেনঃ নিশ্চয়ই যে ছেলেটিকে খাযির [আঃ] [আল্লাহর আদেশে] হত্যা করেছিলেন তাকে কাফিরের স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল। যদি সে জীবিত থাকত তাহলে সে তার পিতা-মাতাকে অবাধ্যতা ও কুফরি করিতে বাধ্য করত।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৫, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৬]

৬৬৬০. মুমিন জননী আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, একটি নাবালক ছেলে মারা গেল আমি বললাম, তার জন্যে সৌভাগ্য। সে তো জান্নাতের চড়ুই পাখিদের থেকে এক চড়ুই পাখি [অর্থাৎ-নির্দ্বিধায় চলাচল করিবে]। এরপর রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] বলিলেন, তুমি কি জান না যে, আল্লাহ তাআলা তৈরি করিয়াছেন জান্নাত এবং তৈরি করিয়াছেন জাহান্নাম। এরপর তিনি এ জান্নাতের জন্য যোগ্য নিবাসী এবং জাহান্নামের জন্য যোগ্য নিবাসী তৈরি করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৬, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৭]

৬৬৬১. উম্মুল মুমিন আয়িশাহ্ [রাদি.] হইতে বর্ণীতঃ

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [সাঃআঃ] একটি আনসার নাবালক বাচ্চার জানাযায় উপস্থিত হওয়ার জন্য আমন্ত্রিত হলেন। এরপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল [সাঃআঃ]! এ নাবালকটি তো সৌভাগ্যবান। সে তো জান্নাতে চড়ুই পাখিদের থেকে একটি চড়ুই পাখি। সে পাপকর্ম করেনি এবং পাপ তাকে স্পর্শ করেনি। তিনি বলিলেন, এছাড়া আরো কিছু আছে, হে আয়িশাহ্! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা জান্নাতের জন্য উপযুক্ত অধিবাসী সৃষ্টি করিয়াছেন তাদেরকে, যাদেরকে সে উদ্দেশ্যেই সৃষ্টি করা করেছে, অথচ তখন তারা বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল। আর তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন যাদেরকে জাহান্নামদের জন্য তাদের সে উদ্দেশ্যেই পয়দা করিয়াছেন আর তারা তখন তাদের বাপ দাদাদের ঔরসে ছিল।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৭, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৮]

৬৬৬২. তালহাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূ হইতে বর্ণীতঃ

তালহাহ্ ইবনি ইয়াহ্ইয়া [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে ওয়াকী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি]-এর সূত্রে তার হাদীসের হুবহু বর্ণনা করিয়াছেন।

[ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫২৮, ইসলামিক সেন্টার- ৬৫৭৯]

By ইমাম মুসলিম

এখানে কুরআন শরীফ, তাফসীর, প্রায় ৫০,০০০ হাদীস, প্রাচীন ফিকাহ কিতাব ও এর সুচিপত্র প্রচার করা হয়েছে। প্রশ্ন/পরামর্শ/ ভুল সংশোধন/বই ক্রয় করতে চাইলে আপনার পছন্দের লেখার নিচে মন্তব্য (Comments) করুন। “আমার কথা পৌঁছিয়ে দাও, তা যদি এক আয়াতও হয়” -বুখারি ৩৪৬১। তাই এই পোস্ট টি উপরের Facebook বাটনে এ ক্লিক করে শেয়ার করুন অশেষ সাওয়াব হাসিল করুন

Leave a Reply