মুসীবত, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও গাইরুল্লাহ এর কাছে চাওয়া

৭ম অধ্যায় ঃ বালা মুসীবত দূর করা অথবা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা {সূতা} ইত্যাদি পরিধান করা শিরক
৮ম অধ্যায় ঃ ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ
৯ম অধ্যায় . গাছ, পাথর ইত্যাদি দ্বারা বরকত হাসিল করা
১০ম অধ্যায় : গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা
১১ তম অধ্যায়: যে স্থানে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে {পশু} যবেহ করা হয় সে স্থানে আল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা শরীয়ত সম্মত নয়।
১২ তম অধ্যায়: গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে মান্নত করা শিরক
১৩ তম অধ্যায়: গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক
১৪ তম অধ্যায় . গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

৭ম অধ্যায় ঃ বালা মুসীবত দূর করা অথবা
প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যে রিং, তাগা {সূতা} ইত্যাদি পরিধান করা শিরক


১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
{হে রসুল} “আপনি বলে দিন, তোমরা কি মনে করো, আল্লাহ যদি আমার কোন ক্ষতি করতে চান তাহলে তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে ডাকো, তারা কি তাঁহার {নির্ধারিত} ক্ষতি হতে আমাকে রক্ষা করতে পারবে?” [ঝূমারঃ ৩৮]।
২। সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, নবি করীম [সা:] তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এটা কি?” লোকটি বললো, এটা দুর্বলতা দূর করার জন্য দেয়া হয়েছে। তিনি বললেন, “এটা খুলে ফেলো। কারণ এটা তোমার দুর্বলতাকেই শুধু বৃদ্ধি করবে। আর এটা তোমার সাথে থাকা অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয়, তবে তুমি কখনো সফলকাম
হতে পারবে না।” [আহমাদ]
৩। উকবা বিন আমের রাদি. হতে একটি “মারফু” হাদীসে বর্ণিত আছে,
“যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলায় [পরিধান করে] আল্লাহ যেন তার আশা পূরণ না করেন। যে ব্যক্তি কড়ি, শঙ্খ বা শামুক ঝুলায় তাকে যেন আল্লাহ রক্ষা না করেন।” অপর একটি বর্ণনায় আছে,
“যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো সে শিরক করলো।”
৪। ইবনে আবি হাতেম হুযাইফা থেকে বর্ণনা করিয়াছেন, “জ্বর নিরাময়ের জন্য হাতে সূতা বা তাগা পরিহিত অবস্থায় তিনি একজন লোককে দেখতে পেয়ে তিনি সে সূতা কেটে ফেললেন এবং কুরআনের এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন,
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ [يوسف: ১০৬] [ইউসুফঃ ১০৬]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়,
১। রিং [বালা] ও সূতা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে পরিধান করার ব্যাপারে অত্যাধিক কঠোরতা।
২। স্বয়ং সাহাবিও যদি এসব জিনিস পরিহিত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন তাহলে তিনিও সফলকাম হতে পারবেন না। এতে সাহাবায়ে কেরামের এ কথারই প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ছোট শিরক কবিরা গুনাহর চেয়েও মারাত্মক।
৩। অজ্ঞতার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়।
৪। لا تزيدك إلا وهنا ইহা তোমার দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করবে না।” এ কথা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে রিং বা সূতা পরিধান করার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই বরং অকল্যাণ আছে।
৫। যে ব্যক্তি উপরোক্ত কাজ করে তার কাজকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
৬। এ কথা সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি [রোগ নিরাময়ের জন্য কোন কিছু {রিং সূতা} শরীরে লটকাবে তার কুফল তার উপরই বর্তাবে।
৭। এ কথাও সুস্পষ্ট যে, যে ব্যক্তি রোগ নিরাময়ের উদ্দেশ্যে তাবিজ ব্যবহার করলো সে মূলতঃ শিরক করলো।
৮। জ্বর নিরাময়ের জন্য সূতা পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
৯। সাহাবি হুযাইফা কর্তৃক কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়ে কেরাম শিরকে আসগরের দলীল হিসেবে ঐ আয়াতকেই পেশ করিয়াছেন যে আয়াতে শিরকে আকবার বা বড় শিরকের কথা রয়েছে। যেমনটি ইবনে আব্বাস [রাদি.] বাকারার আয়াতে উল্লেখ করিয়াছেন।
১০। নজর বা চোখ লাগা থেকে আরোগ্য লাভ করার জন্য শামুক, কড়ি, শঙ্খ ইত্যাদি লটকানো বা পরিধান করাও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
১১। যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করে তার উপর বদ দোয়া করা হয়েছে, ‘আল্লাহ যেন তার আশা পূরণ না করেন।’ আর যে ব্যক্তি শামুক, কড়ি বা শঙ্খ [গলায় বা হাতে] লটকায় তাকে যেন আল্লাহ রক্ষা না করেন।

৮ম অধ্যায় ঃ ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ

১। আবু বাসীর আনসারী রাদি. হইতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একবার রসুল সাঃআঃ এর সফর সঙ্গী ছিলেন। এ সফরে রসুল সাঃআঃ একটি নির্দিষ্ট এলাকায় একজন দূত পাঠালেন। এর উদ্দেশ্য ছিল কোন উটের গলায় যেন ধনুকের কোন রজ্জু লটকানো না থাকে অথবা এ জাতীয় রজ্জু যেন কেটে ফেলা হয়। [বুখারি]
২। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “আমি রসুল সাঃআঃকে একথা বলতে শুনেছি,
“ঝাড়-ফুঁক ও তাবিক- কবজ হচ্ছে শিরক” [আহমাদ, আবু দাউদ]
৩। আবদুল্লাহ বিন উকাইম থেকে মারফু’ হাদীসে বর্ণিত আছে,
“যে ব্যক্তি কোন জিনিস {অর্থাৎ তাবিজ- কবজ} লটকায় সে উক্ত জিনিসের
দিকেই সমর্পিত হয়”। {অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়} [আহমাদ, তিরমিজি]
تمائم বা তাবিজ হচ্ছে এমন জিনিস যা চোখ লাগা বা দৃষ্টি লাগা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সন্তানদের গায়ে ঝুলানো হয়। ঝুলন্ত জিনিসটি যদি কুরআনের অংশ হয় তাহলে সালাফে সালেহীনের কেউ কেউ এর অনুমতি দিয়াছেন। আবার কেউ কেউ অনুমতি দেননি বরং এটাকে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় বলে গণ্য করতেন। ইবনে মাসউদ রাদি. এ অভিমতের পক্ষে রয়েছেন। আর رقى বা ঝাড়-ফুঁককে عزائم নামে অভিহিত করা হয়। যে সব ঝাড়-ফুঁক শিরক মুক্ত তা দলিলের মাধ্যমে খাস করা হয়েছে। তাই রসুল সাঃআঃ চোখের দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষের ব্যাপারে ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি দিয়াছেন।
تولة এমন জিনিস যা কবিরাজদের বানানো। তারা দাবী করে যে, এ জিনিস {কবজ} দ্বারা স্ত্রীর অন্তরে স্বামীর ভালবাসা আর স্বামীর অন্তরে স্ত্রীর ভালবাসার উদ্রেক হয়। সাহাবি রুআইফি থেকে ইমাম আহমাদ বর্ণনা করেন, তিনি {রুআইফি} বলিয়াছেন, “রসুল সাঃআঃ আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“হে রুআইফি, তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে জানিয়ে দিও, “যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা দিবে, অথবা গলায় তাবিজ- কবজ ঝুলাবে অথবা পশুর মল কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাঃআঃ তার জিম্মাদারী থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।”
সাঈদ বিন জুবাইর হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলবে বা কেটে ফেলবে সে ব্যক্তি একটি গোলাম আযাদ করার মত কাজ করলো।” [ওয়াকী]
ইবরাহীম থেকে বর্নিত হাদীসে তিনি বলেন, তাঁহারা সব ধরনের তাবীজ- কবজ অপছন্দ করতেন, চাই তার উৎস কুরআন হোক বা অন্য কিছু হোক।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের ব্যাখ্যা।
২। [تولة] “তাওলাহ” এর ব্যাখ্যা।
৩। কোন ব্যাতিক্রম ছাড়াই উপরোক্ত তিনটি বিষয় শিরক এর অন্তর্ভূক্ত।
৪। সত্যবাণী তথা কুরআনের সাহায্যে {চোখের} দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষ নিরাময়ের জন্য ঝাড়Ñফুঁক করা শিরকের অন্তর্ভূক্ত নয়।
৫। তাবিজ- কবজ কুরআন থেকে হলে তা শিরক হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
৬। খারাপ দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য পশুর রশি বা অন্য কিছু বুঝলানো শিরকের অন্তর্ভূক্ত।
৭। যে ব্যক্তি ধনুকের রজ্জু গলায় ঝুলায় তার উপর কঠিন অভিসম্পাত।
৮। কোন মানুষের তাবিজ- কবজ ছিড়ে ফেলা কিংবা কেটে ফেলার ফজিলত।
৯। ইবরাহীমের কথা পূর্বোক্ত মতভেদের বিরোধী নয়। কারণ এর দ্বারা আব্দুল্লাহর সঙ্গী- সাহাবিদেরকে বুঝানো হয়েছে।

৯ম অধ্যায় . গাছ, পাথর ইত্যাদি দ্বারা বরকত
হাসিল করা

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“ তোমরা কি {পাথরের তৈরী মুর্তি} ‘লাত’ আর “উয্যা” দেখেছো?” [আন নাজমঃ ১৯]।
২। আবু ওয়াকিদ আল-লাইছী রাদি. হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, “আমরা রসুল সাঃআঃ এর সাথে হুনাইনের {যুদ্ধের} উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা তখন সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ করেছি {নও মুসলিম}। একস্থানে পৌত্তুলিকদের একটি কুলগাছ ছিল যার চারপাশে তারা বসতো এবং তাদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখতো। গাছটিকে তারা ذات أنواط {যাত আনওয়াত} বলতো। আমরা একদিন একটি কুলগাছের পার্শ্ব দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা রসুল সাঃআঃকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল মুশরিকদের যেমন “যাতু আনওয়াত” আছে আমাদের জন্যও অনুরূপ “যাতু আনওয়াত” {অর্থাৎ একটি গাছ} নির্ধারণ করে দিন। তখন রসুল সাঃআঃ বললেন,
“আল্লাহু আকবার, তোমাদের এ দাবীটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার জীবন তাঁহার কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছো যা বনী ইসরাইল মূসা আ. কে বলেছিলো। তারা বলেছিলো, “হে মূসা, মুশরিকদের যেমন মা’বুদ আছে আমাদের জন্য তেমন মা’বুদ বানিয়ে দাও। মুসা আ. বললেন, তোমরা মূর্খের মতো কথা বার্তা বলছো” [আরাফঃ ১৩৮]। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতিই অবলম্বন করছো। [তিরমিজি হাদীসটি বর্ণনা করিয়াছেন এবং সহীহ বলে আখ্যায়িত করিয়াছেন।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়ঃ-
১। সুরা নাজম এর أفرايتم اللات والعزى এর তাফসির।
২। সাহাবায়ে কেরামের কাংখিত বিষয়টির পরিচয়।
৩। তারা {সাহাবায়ে কেরাম} শিরক করেননি।
৪। তাঁহারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চেয়েছিলেন এ কথা ভেবে যে, আল্লাহ তা {কাংখিত বিষয়টি} পছন্দ করেন।
৫। সাহাবায়ে কেরামই যদি এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকেন তাহলে অন্য লোকেরা তো এ ব্যাপারে আরো বেশী অজ্ঞ থাকবে।
৬। সাহাবায়ে কেরামের জন্য যে অধিক সওয়াব দান ও গুনাহ মাফের ওয়াদা রয়েছে অন্যদের ব্যাপারে তা নেই।
৭। রসুল সাঃআঃ সাহাবায়ে কেরামের কাছে অপারগতার কথা বলেননি বরং তাঁদের কথার শক্ত জবাব এ কথার মাধ্যমে দিয়াছেনঃ
“আল্লাহু আকবার নিশ্চয়ই এটা পূর্ববর্তী লোকদের নীতি। তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের নীতি অনুসরণ করছো।” উপরোক্ত
তিনটি কথার দ্বারা বিষয়টি অধিক গুরুত্ব লাভ করেছে।
৮। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে “উদ্দেশ্য”। এখানে এ কথাও জানিয়ে দেয়া হইয়াছেযে, সাহাবায়ে কেরামের দাবী মূলতঃ মূসা [আঃ] এর কাছে বনী ইসরাইলের মা’বুদ বানিয়ে দেয়ার দাবীরই অনুরূপ ছিল।
৯। রসুল সাঃআঃ কর্তৃক না সূচক জবাবের মধ্যেই তাঁদের জন্য “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহর” মর্মার্থ অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে নিহিত আছে।
১০। রসুল সাঃআঃ ফতোয়া দানের ব্যাপারে “হলফ” করিয়াছেন।
১১। শিরকের মধ্যে ‘আকবার’ ও ‘আসগার’ রয়েছে। কারণ, তাঁহারা এর দ্বারা দীন থেকে বের হয়ে যাননি।
১২। “আমরা কুফরী যমানার খুব কাছাকাছি ছিলাম” {অর্থাৎ আমরা সবেমাত্র মুসলমান হয়েছি} এ কথার দ্বারা বুঝা যায় যে অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম এ ব্যাপারে অজ্ঞ ছিলেন না।
১৩। আশ্চর্যজনক ব্যাপারে যারা ‘আল্লাহু আকবার’ বলা পছন্দ করে না, এটা তাদের বিরুদ্ধে একটা দলীল।
১৪। পাপের পথ বন্ধ করা।
১৫। জাহেলী যুগের লোকদের সাথে নিজেদের সামঞ্জস্যশীল করা নিষেধ।
১৬। শিক্ষাদানের সময় প্রয়োজন বোধে রাগ করা।
১৭। إنها السنن “এটা পূর্ববর্তী লোকদের নীতি” এ বাণী একটা চিরন্তন নীতি।
১৮। রসুল সাঃআঃ যে সংবাদ বলিয়াছেন, বাস্তবে তাই ঘটেছে। এটা নবুয়তেরই নিদর্শন।
১৯। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তাআলা ইহুদী ও খৃষ্টানদের চরিত্র সম্পর্কে যে দোষ-ত্র“টির কথা বলিয়াছেন, তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যই বলিয়াছেন।
২০। তাদের {আহলে কিতাবের} কাছে এ কথা স্বীকৃত যে ইবাদতের ভিত্তি হচ্ছে {আল্লাহ কিংবা রাসুলের} নির্দেশ। এখানে কবর সংক্রান্ত বিষয়ে শর্তকতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
من ربك {তোমার রব কে?} দ্বারা যা বুঝানো হইয়াছেতা সুস্পষ্ট। {অর্থাৎ আল্লাহ শিরক করার নির্দেশ না দেয়া সত্বেও তুমি শিরক করেছো। তাহলে তোমার রব কে যার হুকুমে শিরক করেছো?}। من نبيك { তোমার নবি কে} এটা নবি কর্তৃক গায়েবের খবর {অর্থাৎ কবরে কি প্রশ্ন করা হবে এ কথা নবি ছাড়া কেউ বলতে পারেনা। এখানে এ কথার দ্বারা বুঝানো হচ্ছে কে তোমার নবী? তিনি তো শিরক করার কথা বলেননি। তারপর ও তুমি শিরক করেছো। তাহলে তোমার শিরক করার নির্দেশ দাতা নবি কে?}
ما دينك {তোমার দীন কি} এ কথা তাদের إجعل لنا آلهة {আমাদের জন্যও ইলাহ ঠিক করে দিন} এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন করা হবে। {অর্থাৎ তোমার দ্বীনতো শিরক করার নির্দেশ দেয়নি তাহলে তোমাকে শিরকের নির্দেশ দান কারী দ্বীন কি?}
২১। মুশরিকদের রীতি- নীতির মত আহলে কিতাবের {অর্থাৎ আসমানী কিতাব প্রাপ্তদের} রীতি-নীতিও দোষনীয়।
২২। যে বাতিল এক সময় অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো তা পরিবর্তনকারী একজন নওমুসলিমের অন্তর পূর্বের সে অভ্যাস ও স্বভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত নয়। ونحن حدثاء عهد بكفر {আমরা কুফরী যুগের খুব নিকটবর্তী ছিলাম বা নতুন মুসলমান ছিলাম} সাহাবিদের এ কথার দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয়।

১০ম অধ্যায় : গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ করা

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“আপনি বলুন, “আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ {সবই} আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত, যার কোন শরিক নেই” [আনআম : ১৬২]
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করিয়াছেন,
“আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানী করুন। [আল-কাউসার ঃ ২]
৩। আলী [রাদি.] থেকে বর্নিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, “রসুল [সাঃআঃ] চারটি বিষয়ে আমাকে অবহিত করিয়াছেন,
[ক]
“যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে [পশু] যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত।”
[খ]
“যে ব্যক্তি নিজ পিতা- মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।”
[গ]
“যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত।”
[ঘ]
“যে ব্যক্তি জমির সীমানা {চিহ্ণ} পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত”। [মুসলিম]
৪। তারিক বিন শিহাব কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে রসুল সাঃআঃ এরশাদ করিয়াছেন :
“এক ব্যক্তি একটি মাছির ব্যাপারে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছির ব্যাপারে জাহান্নামে গিয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ, এমনটি কিভাবে হলো? তিনি বললেন, ‘দু’জন লোক এমন একটি কওমের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল যার জন্য একটি মূর্তি নির্ধারিত ছিল। উক্ত মূর্তিকে কোন কিছু নযরানা বা উপহার না দিয়ে কেউ সে স্থান অতিক্রম করতোনা। উক্ত কওমের লোকেরা দু’জনের একজনকে বললো, ‘মূর্তির জন্য তুমি কিছু নযরানা পেশ করো’। সে বললো,
‘নযরানা দেয়ার মত আমার কাছে কিছুই নেই’ তারা বললো, ‘অন্ততঃ একটা মাছি হলেও নযরানা স্বরূপ দিয়ে যাও’। অতঃপর সে একটা মাছি মূর্তিকে উপহার দিলো। তারাও লোকটির পথ ছেড়ে দিলো। এর ফলে মৃত্যুর পর সে জাহান্নামে গেলো। অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, “মূর্তিকে তুমিও কিছু নযরানা দিয়ে যাও। সে বললো, ‘একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য আমি কাউকে কোন নযরানা দেইনা’ এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিলো। {শিরক থেকে বিরত থাকার কারণে} মৃত্যুর পর সে জান্নাতে প্রবেশ করলো।” [আহমদ]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায় ঃ
১। قل إن صلاتي ونسكي এর তাফসির।
২। فصل لربك وانحر এর তাফসির।
৩। প্রথম অভিশপ্ত ব্যক্তি হচ্ছে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহকারী।
৪। যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। এরমধ্যে এ কথাও নিহিত আছে যে তুমি কোন ব্যক্তির পিতা- মাতাকে অভিশাপ দিলে সেও তোমার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিবে।
৫। যে ব্যক্তি বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। বিদআতী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে দ্বীনের মধ্যে এমন কোন নতুন বিষয় আবিস্কার
বা উদ্ভাবন করে, যাতে আল্লাহর হক ওয়াজিব হয়ে যায়। এর ফলে সে এমন ব্যক্তির আশ্রয় চায় যে তাকে উক্ত বিষয়ের দোষ ত্র“টি বা অশুভ পরিণতি থেকে রক্ষা করতে পারে।
৬। যে ব্যক্তি জমির সীমানা বা চিহ্ণ পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নত। এটা এমন চিহ্ণিত সীমানা যা তোমার এবং তোমার প্রতিবেশীর জমির অধিকারের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। এটা পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে, তার নির্ধারিত স্থান থেকে সীমানা এগিয়ে আনা অথবা পিছনে নিয়ে যাওয়া।
৭। নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর লা’নত এবং সাধারণভাবে পাপীদের উপর লা’নতের মধ্যে পার্থক্য।
৮। এ গুরুত্বপূর্ণ কাহিনীটি মাছির কাহিনী হিসেবে পরিচিত।
৯। তার জাহান্নামে প্রবশে করার কারণ হচ্ছে ঐ মাছি, যা নযরানা হিসেবে মূর্তিকে দেয়ার কোন ইচ্ছা না থাকা সত্বেও কওমের অনিষ্টতা হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সে {মাছিটি নযরানা হিসেবে মূর্তিকে দিয়ে শিরকী} কাজটি করেছে।
১০। মোমিনের অন্তরে শিরকের {মারাত্মক ও ক্ষতিকর} অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ। নিহত {জান্নাতী} ব্যক্তি নিহত হওয়ার ব্যাপারে কি ভাবে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের দাবীর কাছে সে মাথা নত করেনি। অথচ তারা তার কাছে কেলমাত্র বাহ্যিক আমল ছাড়া আর কিছুই দাবী করেনি।
১১। যে ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে সে একজন মুসলমান। কারণ সে যদি কাফের হতো তাহলে এ কথা বলা হতোনা دخل النار فى ذباب একটি মাছির ব্যাপারে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। {অর্থাৎ মাছি সংক্রান্ত শিরকী ঘটনার পূর্বে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য ছিল}
১২। এতে সেই সহীহ হাদিসের পক্ষে সাক্ষ্য পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে, الجنة اقرب إلى أجدكم من شراك نعله والنار مثل ذلك
“জান্নাত তোমাদের কোন ব্যক্তির কাছে তার জুতার ফিতার চেয়েও নিকটবর্তী। জাহান্নামও তদ্রুপ নিকটবর্তী।”
১৩। এটা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, অন্তরের আমলই হচ্ছে মূল উদ্দেশ্য। এমনকি মূর্তি পূজারীদের কাছেও এ কথা স্বীকৃত।

১১ তম অধ্যায়: যে স্থানে গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে {পশু}

যবেহ করা হয় সে স্থানে আল্লাহর
উদ্দেশ্যে যবেহ করা শরীয়ত সম্মত নয়।
১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“হে নবী, আপনি কখনো সেখানে দাঁড়াবেন না।” তাওবাহ . ১০৮]
২। সাহাবি ছাবিত বিন আদ্দাহহাক [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন,
এক ব্যক্তি বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কুরবানী করার জন্য মান্নত করলো। তখন রসুল সাঃআঃ জিজ্ঞেস করলেন, “সে স্থানে
এমন কোন মূর্তি ছিল কি, জাহেলী যুগে যার পূজা করা হতো” সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ‘না,। তিনি বললেন, “সে স্থানে কি তাদের কোন উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হতো? “তাঁহারা বললেন, ‘না’ {অর্থাৎ এমন কিছু হতোনা} তখন রসুল সাঃআঃ বললেন, “তুমি তোমার মান্নত পূর্ণ করো।” তিনি আরো বললেন, “আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত পূর্ণ করা যাবে না। আদম সন্তান যা করতে সক্ষম নয় তেমন মান্নতও পূরা করা যাবে না। [আবু দাউদ]
এ অধ্যায় থেকে যে সব বিষয় জানা যায় তা নিম্নরূপঃ
১। لا تقم فيه أبدا এর তাফসির।
২। দুনিয়াতে যেমনি ভাবে পাপের {ক্ষতিকর} প্রভাব পড়তে পারে, তেমনিভাবে {আল্লাহর} আনুগত্যের {কল্যাণময়} প্রভাবও পড়তে পারে।
৩। দুর্বোধ্যতা দূর করার জন্য কঠিন বিষয়কে সুস্পষ্ট ও সহজ বিষয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।
৪। প্রয়োজন বোধে “মুফতী” জিজ্ঞাসিত বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ {প্রশ্ন কারীর কাছে} চাইতে পারেন।
৫। মান্নতের মাধ্যমে কোন স্থানকে খাস করা কোন দোষের বিষয় নয়, যদি তাতে শরিয়তের কোন বাধা-বিপত্তি না থাকে।
৬। জাহেলী যুগের মূর্তি থাকলে তা দূর করার পরও সেখানে মান্নত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৭। জাহেলী যুগের কোন উৎসব বা মেলা কোন স্থানে অনুষ্ঠিত হয়ে
থাকলে, তা বন্ধ করার পরও সেখানে মান্নত করা নিষিদ্ধ।
৮। এসব স্থানের মান্নত পূরণ করা জায়েজ নয়। কেননা এটা অপরাধমূলক কাজের মান্নত।
৯। মুশরিকদের উৎসব বা মেলার সাথে কোন কাজ সাদৃশ্যপূর্ণ ও সামঞ্জস্যশীল হওয়ার ব্যাপারে খুব সাবধান থাকতে হবে।
১০। পাপের কাজে কোন মান্নত করা যাবে না।
১১। যে বিষয়ের উপর আদম সন্তানের কোন হাত নেই সে বিষয়ে মান্নত পূরা করা যাবে না।

১২ তম অধ্যায়: গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে মান্নত করা শিরক

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“তারা মান্নত পূরা করে” [ইনসান ঃ ৭]
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করিয়াছেন,
“তোমরা যা কিছু খরচ করেছো আর যে মান্নত মেনেছো, তা আল্লাহ জানেন” [বাকারা : ২৭০]
৩। সহীহ বুখারীতে আয়েশা [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, রসুল সাঃআঃ এরশাদ করিয়াছেন,
“যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মান্নত করে সে যেন তা পূরা করার মাধ্যমে তাঁহার আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁহার নাফরমানী না করে।” {অথাৎ মান্নত যেন পূরা না করে।”
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১। নেক কাজে মান্নত পূরা করা ওয়াজিব।
২। মান্নত যেহেতু আল্লাহর ইবাদত হিসেবে প্রমাণিত, সেহেতু গাইরুল্লাহর জন্য মান্নত করা শিরক।
৩। আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত পূরণ করা জায়েয নয়।

১৩ তম অধ্যায়: গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“মানুষের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক লোক কতিপয় জ্বিনের কাছে আশ্রয় চাইতেছিল, এর ফলে তাদের {জ্বিনদের} গর্ব ও আহমিকা আরো বেড়ে গিয়েছিল।” [জিন . ৬]
২। খাওলা বিনতে হাকীম [রাদি.] হইতে বর্ণিত আছে, তিনি বলিয়াছেন, “আমি রসুল সাঃআঃকে এ কথা বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি কোন মঞ্জিলে অবতীর্ণ হয়ে বললো,
“আমি আল্লাহ তাআলার পূর্ণাঙ্গ কালামের কাছে তাঁহার সৃষ্টির সকল অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই।” তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সে ঐ মঞ্জিল ত্যাগ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। [মুসলিম]
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় ঃ
১। সুরা জ্বিনের ৬ নং আয়াতের তাফসির।
২। গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরকের মধ্যে গণ্য।
৩। হাদিসের মাধ্যমে এ বিষয়ের উপর {অর্থাৎ গাইরুল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক} দলীল পেশ করা। উলামায়ে কেরাম উক্ত হাদীস দ্বারা এ প্রমাণ পেশ করেন যে, কালিমাতুল্লাহ অর্থাৎ “আল্লাহর কালাম” মাখলুক {সৃষ্টি} নয়। তাঁহারা বলেন ‘মাখলুকের কাছে আশ্রয় চাওয়া শিরক।’
৪। সংক্ষিপ্ত হলেও উক্ত দোয়ার ফজিলত।
৫। কোন বস্তু দ্বারা পার্থিক উপকার হাসিল করা অর্থাৎ কোন অনিষ্ট থেকে তা দ্বারা বেঁচে থাকা কিম্বা কোন স্বার্থ লাভ, এ কথা প্রমাণ করে না যে, উহা শেরকের অন্তর্ভুক্ত নয়।

১৪তম অধ্যায় . গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া অথবা দোয়া করা শিরক

১। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সত্তাকে ডেকোনা, যা তোমার কোন উপকার করতে পারবে না এবং ক্ষতিও করতে পারবে না। যদি তুমি এমন কারো তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন বিপদে ফেলেন, তাহলে একমাত্র তিনি ব্যতীত আর কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না।” [ইউনুসঃ ১০৬, ১০৭]
২। আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করিয়াছেন,
“আল্লাহর কাছে রিযিক চাও এবং তাঁহারই ইবাদত করো”।
[আনকাবুত : ১৭]
৩। আল্লাহ তাআলা অন্য এক আয়াতে এরশাদ করিয়াছেন,
“তার চেয়ে অধিক ভ্রান্ত আর কে হতে পারে, যে ব্যক্তি আল্লাহকে ছাড়া এমন সত্তাকে ডাকে যে সত্তা কেয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিতে পারবে না”। [আহকাফ : ৫]
৪। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করিয়াছেন,
“বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ডাকে কে সাড়া দেয় যখন সে ডাকে ? আর কে তার কষ্ট দূর করে?” [নামল : ৬২]
৫। ইমাম তাবরানী বর্ণনা করিয়াছেন, নবি করীম সাঃআঃ এর যুগে এমন একজন মুনাফিক ছিলো, যে মোমিনদেরকে কষ্ট দিতো। তখন মুমিনরা পরস্পর বলতে লাগলো, চলো, আমরা এ মুনাফিকের অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রসুল সাঃআঃ এর সাহায্য চাই। নবি করীম সাঃআঃ তখন বললেন,
“আমার কাছে সাহায্য চাওয়া যাবে না। একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাইতে হবে।”
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায় ঃ
১। সাহায্য চাওয়ার সাথে দোয়াকে আত্ফ্ করার ব্যাপারটি কোন عام বস্তুকে خاص বস্তুর সাথে সংযুক্ত করারই নামান্তর।
২। ولا وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ আল্লাহর এ বাণীর তাফসির।
৩। গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া বা গাইরুল্লাহকে ডাকা ‘শিরকে আকবার।’
৪। সব চেয়ে নেককার ব্যক্তিও যদি অন্যের সন্তুষ্টির জন্য গাইরুল্লাহর কাছে সাহায্য চায় বা দোয়া করে , তাহলেও সে জালিমদের অন্তর্ভূক্ত।
৫। এর পরবর্তী আয়াত অর্থাৎ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ এর তাফসির।
৬। গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করা কুফরী কাজ হওয়া সত্ত্বেও দুনিয়াতে এর কোন উপকারিতা নেই। {অর্থাৎ কুফরী কাজে কোন সময় দুনিয়াতে কিছু বৈষয়িক উপকারিতা পাওয়া যায়, কিন্তু গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করার মধ্যে দুনিয়ার উপকারও নেই}
৭। ৩য় আয়াত فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ এর তাফসির।
৮। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে রিযিক চাওয়া উচিত নয়। যেমনিভাবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে জান্নাত চাওয়া উচিৎ নয়।
৯। ৪র্থ আয়াত অর্থাৎ
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
এর তাফসির।
১০। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করে, তার চেয়ে বড় পথভ্রষ্ট আর কেউ নয়।
১১। যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া করে সে গাইরুল্লাহ দোয়াকারী সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবচেতন থাকে, অর্থাৎ তার ব্যাপারে গাইরুল্লাহ সম্পূর্ণ অনবহিত থাকে।
১২। مدعو {মাদউ’} অর্থাৎ যাকে ডাকা হয় কিংবা যার কাছে দোয়া করা হয়, দোয়াকারীর প্রতি তার রাগ ও শত্র“তার কারণেই হচ্ছে ঐ দোয়া যা তার {গাইরুল্লাহার} কাছে করা হয়। {কারণ প্রকৃত মাদউ’} কখনো এরকম শিরকী কাজের অনুমতি কিংবা নির্দেশ দেয়নি}।
১৩। গাইরুল্লাহকে ডাকার অর্থই হচ্ছে তার ইবাদত করা।
১৪। ঐ ইবাদতের মাধ্যমেই কুফরী করা হয়।
১৫। আর এটাই তার {গাইরুল্লাহর কাছে দোয়া কারীর} জন্য মানুষের মধ্যে সবচেয়ে পাপী ব্যক্তি হওয়ার একমাত্র কারণ।
১৬। পঞ্চম আয়াত অর্থাৎ
أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ এর তাফসির।
১৭। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই যে, মূর্তি পূজারীরাও একথা স্বীকার করে যে, বিপদগ্রস্ত, অস্থির ও ব্যাকুল ব্যক্তির ডাকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সাড়া দিতে পারে না। এ কারণেই তারা যখন কঠিন মুসীবতে পতিত হয়, তখন ইখলাস ও আন্তরিকতার সাথে তারা আল্লাহকে ডাকে।
১৮। এর মাধ্যমে রসুল সাঃআঃ কর্তৃক তাওহীদের হেফাযত, সংরক্ষণ এবং আল্লাহ তাআলার সাথে আদব-কায়দা রক্ষা করে চলার বিষয়টি জানা গেলো।

Leave a Reply