গনক জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে

গনক জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে

গনক জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে যা বর্ণিত হয়েছে << নবুওয়তের মুজিযা হাদীসের মুল সুচিপত্র দেখুন

চতুর্থ পরিচ্ছেদ: গনক, জিন ও আহলে কিতাবদের থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের সাক্ষ্য দেওয়ার মধ্যে নবুওয়তের প্রমাণ

আবদুল্লাহ ইবনু উমর রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যখনই উমর রাদি. `আনহুকে কোনো ব্যাপারে একথা বলতে শুনেছি যে, আমার ধারণা হয় ব্যাপারটি এমন হবে, তবে তার ধারণা মত ব্যাপারটি সংঘটিত হয়েছে। একবার উমর রাদি. `আনহু বসা ছিলেন, এমন সময় একজন সুদর্শন ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। উমর রাদি. `আনহু বলিলেন, আমার ধারণা ভুল ও হতে পারে তবে আমার মনে হয় লোকটি জাহেলী ধর্মাবলম্বী অথবা ভবিষ্যৎ গণনাকারীও হতে পারে। লোকটিকে আমর কাছে নিয়ে এস। তাকে তাহাঁর কাছে ডেকে আনা হল। উমর রাদি. `আনহু তার ধারণার কথা তাকে শুনালেন। তখন সে বলল, একজন মুসলিমের পক্ষ থেকে বলা হল যা আজকার মত আর কোনো দিন দেখেনি। উমর রাদি. `আনহু বলিলেন, আমি তোমাকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি আমাকে তোমার ব্যাপারটা খুলে বল। সে বলল, জাহেলী যুগে আমি তাদের ভবিষ্যৎ গণনাকারী ছিলাম। উমর রাদি. `আনহু বলিলেন, জ্বিনেরা তোমাকে যে সব কথাবার্তা বলেছে, তন্মধ্যে কোনো কথটি তোমার নিকট সর্বাধিক বিষ্ময়কর ছিল। সে বলল, আমি একদিন বাজারে অবস্থান করছিলাম। তখন একটি মহিলা জ্বিন আমার নিকট আসল। আমি তাকে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখতে পেলাম। তখন সে বলল, তুমি কি জ্বিন জাতির অবস্থা দেখছনা, তারা কেমন দুর্বল হয়ে পড়ছে? তাদের মধ্যে হতাশা ও বিমূঢ় হওয়ার চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা ক্রমশঃ উটওয়ালাদের এবং চাদর জুব্বা পরিধানকারীদের [আরববাসী] অনুগত হয়ে পড়ছে। উমর রাদি. `আনহু বলিলেন, সে সত্য কথা বলেছে। আমি একদিন তাদের দেবতাদের কাছে ঘুমন্ত ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি একটি গরুর বাছুর নিয়ে হাযির হল এবং সেটা জবাই করে দিল। ঐ সময় এক ব্যক্তি এমন বিকট চীৎকার করে উঠল, যা আমি আর কখনও শুনিনি। সে চীৎকার করে বলছিল, হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক কল্যাণময় ব্যাপার অচিরেই প্রকাশ লাভ করবে। তা হল, একজন বিশুদ্ধভাষী লোক বলবেন, [এ ঘোষণা শুনে উপস্থিত] লোকজন ছুটাছুটি করে পলায়ন করল। আমি বলিলাম, এ ঘোষণার রহস্য উদঘাটন অবশ্যই করব। তারপর আবার ঘোষণা দেওয়া হল। হে জলীহ! একটি স্বাভাবিক ও কল্যাণময় ব্যাপার অতি সত্বর প্রকাশ পাবে। তাহল একজন বাগ্মী ব্যক্তি এর প্রকাশ্যে ঘোষণা দিবে। তারপর আমি উঠে দাড়ালাম। এর কিছুদিন পরেই বলা হল যে, তিনিই নাবী। [1]

আবু মূসা আল-আশ`আরী রাদি. আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালিব শামের উদ্দেশ্যে নাবী মুহাম্মদ রাঃসাঃকে সঙ্গে করে রওয়ানা হলেন, তাহাঁর সাথে কুরাইশদের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছিলেন। যখন তারা পাদ্রী বাহিরার নিকটবর্তী হলেন তখন যাত্রা বিরতি দিলেন। তাদের কাছে পাদ্রী আসলেনচ। কুরাইশ কাফেলা ইতোপূর্বে এ পথ দিয়ে অনেক বার আসা-যাওয়া করেছেন, কিন্তু তিনি তাদের সামনে বের হতেন না এবং কোনো কথা বার্তাও বলতেন না। তারা সেখানে যাত্রা বিরতি দিলেন এবং পাদ্রী তাদেরকে ঘুরে ঘুরে অবলোকন করছিলেন। তিনি মুহাম্মদ রাঃসাঃ এর হাত ধরে বলিলেন, ইনি সাইয়্যেদুল আলামীন, ইনি রাসূলু রাব্বিল আলামীন। আল্লাহ তাঁকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করবেন। তখন কুরাইশ প্রবীনরা বলল, আপনি কিভাবে তাঁকে চিনলেন? তিনি উত্তরে বলিলেন, তোমরা যখন মরুউপত্যাক্যা দিয়ে যাচ্ছিলে তখন সেখানকার সব গাছ ও পাথর তাঁকে সিজদা করছিল। আর নাবী ছাড়া কাউকে গাছপালা ও পাথর সিজদা করেনা। আমি তাহাঁর পিঠের দু`স্কন্ধের মাঝে নবুওয়তের সীলমোহর দেখেছি তা আপেলের মত। অতঃপর পাদ্রী ফিরে গিয়ে খাদ্য তৈরি করে নিয়ে আসল। তখন রাঃসাঃ উটের পালের কাছে ছিল। তিনি বলিলেন, তাঁকে ডেকে নিয়ে আসো। তিনি যখন আসছিলেন তখন মেঘ তাঁকে ছায়া দিচ্ছিল। তিনি যখন কাফেলার কাছে এলেন দেখলেন সবাই ছায়ায় গেছেন, ফলে তিনি রৌদ্রে বসলেন, কিন্তু তখন গাছের ছায়া তাহাঁর দিকে ঝুঁকে গেল। তখন পাদ্রী বলিলেন, দেখ গাছের ছায়া তাহাঁর দিকে ঝুঁকে গেছে। পাদ্রী তাঁকে নিয়ে রোমে যেতে বারবার নিষেধ করিলেন। বলিলেন, সেখানকার লোকেরা তাঁকে চিনতে পারলে হত্যা করবে। তখন তিনি দেখতে পেলেন যে, রোম থেকে সাতজন আরোহী তাদের দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি তাদেরকে অভ্যর্থনা জানালেন। জিজ্ঞেস করিলেন, তাদের আগমনের হেতু কি? তারা বলিলেন, একজন নাবী এ মাসে এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। আমরা এমন কোনো পথ বাকি রাখিনি সেখানে লোক পাঠাইনি। আমরা তাহাঁর খবর সকলের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়ে বের হয়েছেন। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমাদের পশ্চাতে উত্তম কেউ আছেন? তারা বলিলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, তিনি এ পথ দিয়েই আসছেন। তিনি বলিলেন, আল্লাহ কোনো কিছু করতে চাইলে তা বাস্তবায়ন হবে, কোনো মানুষ কি তা ঠেকাতে পারবে? তারা বলিলেন, না। কুরাইশ কাফেলা সেখানে রাত্রি যাপন করিলেন। পাদ্রী তাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, এ বালকের অবিভাভক কে? তারা বলিলেন, আবু তালিব। তিনি আবু তালিবকে বারবার বলতে লাগলেন যে, তাঁকে মক্কায় ফিরে যেতে। ফলে আবু বকর রাদি. আনহু রাঃসাঃকে  বিলাল রাদি. আনহুকে সাথে করে মক্কায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। পাদ্রী তাদের পথের খাবারের জন্য রুটি ও তেলের ব্যবস্থা করেন। [2]

ইবনু ইসহাক রহ. এর বর্ণনায় সিরাতে ইবনু হিশামে এসেছে, আসেম ইবনু `উমর ইবনু কাতাদা তাহাঁর গোত্রের লোকের থেকে বর্ণনা করেন, তারা বলেন, আমাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল, আল্লাহর রহমতে তিনি আমাদেরকে হিদায়েতও দান করেছেন। আমরা যখন ইয়াহুদিদের থেকে শুনতাম যে, –আমরা মুশরিক ছিলাম, আর তারা আহলে কিতাব- তাদের কাছে এমন ইলম আছে যা আমাদের কাছে নেই। ফলে আমাদের ও তাদের মাঝে ঝগড়া ও মতবিরোধ লেগেই থাকত। আমরা যখন তাদের কোনো প্রতিশোধ নিতাম যা তারা অপছন্দ করত তখন তারা বলত, শীঘ্রই একজন নাবীর আগমন ঘটবে, আমরা তাহাঁর সাথে জিহাদ করে তোমাদেরকে হত্যা করব যেমনিভাবে `আদ ও ইরাম জাতিকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা প্রায়ই তাদের থেকে এ ধরণের কথা শুনতাম। আল্লাহ যখন রাঃসাঃ কে প্রেরণ করিলেন আমরা তাহাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম। আর তখনই বুখতে পারলাম তারা কিসের ধমক দিত। আমরা দ্রুত রাঃসাঃ  এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলাম, কিন্তু তারা [ইয়াহুদিরা] রাঃসাঃকে কুফুরী [অস্বীকার] করল। এদের সম্পর্কেই কোরআনের সুরা আল-বাকারাহর নিন্মোক্ত আয়াত নাযিল হয়, “আর যখন তাদের কাছে, তাদের সাথে যা আছে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সত্যায়নকারী কিতাব এল, অথচ তারা পূর্বে কাফিরদের উপর বিজয় কামনা করত। সুতরাং যখন তাদের নিকট এল যা তারা চিনত, তখন তারা তা অস্বীকার করল। অতএব কাফিরদের উপর আল্লাহর লা`নত”।[কোরআনের সুরা আল-বাকারা: ৮৯] [3]

জারীর রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইয়ামানে ছিলাম। এ সময়ে একদা যুকালা ও যু`আমর নামে ইয়ামানের দু`ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হলো। আমি তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর হাদীস শোনাতে লাগলাম। [বর্ণনাকারী বলেন] এমন সময়ে যু`আমর, [রাবী] জারীর রাদি. `আনহুকে বলিলেন, তুমি যা বর্ণনা করছ তা যদি তোমার সাথীরই [রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর] কথা হয়ে থাকে তা হলে মনে রেখো যে, তিন দিন আগে তিনি মৃত্যু বরণ গেছেন। [জারীর বলেন, কথাটি শুনে আমি মদীনা অভিমুখে ছুটলাম]। তারা দু`জনেও আমার সাথে সম্মুখের দিকে চললেন। অবশেষে আমরা একটি রাস্তার ধারে পৌঁছলে মদীনার দিক থেকে আসা একদল সওয়ারীর সাক্ষাৎ পেলাম। আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলল, রাসূলুল্লাহ্ রাঃসাঃ এর মৃত্যু হয়ে গেছে। মুসলিমদের সম্মতিক্রমে আবু বকর রাদি. `আনহু খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন। তারপর তারা দু`জনে [আমাকে] বলল, [তুমি মদীনায় পৌঁছলে] তোমার সাথী [আবু বকর রাদি. `আনহু] কে বলবে যে, আমরা কিছুদূর পর্যন্ত এসেছিলাম। সম্ভবত আবার আসব ইনশাআল্লাহ্, এ কথা বলে তারা দু`জনে ইয়ামানের দিকে ফিরে গেল। এরপর আমি আবু বকর রাদি. `আনহুকে তাদের কথা জানালাম। তিনি [আমাকে] বলিলেন, তাদেরকে তুমি নিয়ে আসলে না কেন? পরে আরেক সময় [যু`আমরের সাথে সাক্ষাৎ হলে] তিনি আমাকে বলিলেন, হে জারীর! তুমি আমার চেয়ে অধিক সম্মানী। তবুও আমি তোমাকে একটি কথা জানিয়ে দিচ্ছি যে, তোমরা আরব জাতি ততক্ষন পর্যন্ত কল্যান ও সাফল্যের মধ্যে অবস্থান করতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত তোমরা একজন আমির মারা গেলে অপরজনকে [পরামর্শের মাধ্যম] আমির বানিয়ে নেবে। আর তা যদি তরবারির জোরে ফায়সালা হয়, তা হলে তোমাদের আমিরগন [জাগতিক] অন্যান্য রাজা বাদশাদের মতোই হয়ে যাবে। তারা রাজাসুলভ ক্রোধ, রাজাসুলভ সন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। [খলীফা ও খিলাফত আর অবশিষ্ট থাকবে না।] [4]

হাফেয ইবনু হাজার রহ. বলেন, যু`আমর একথা পূর্ববর্তী কিতাব থেকে বলিয়াছেন। কেননা ইয়ামেনে তখন অনেক ইহুদী বাস করতেন, ফলে অনেক ইয়ামেনী ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করেন এবং তাদের থেকে সে ধর্ম শিক্ষালাভ করেন। এটা রাঃসাঃ এর বাণীর অন্তর্ভুক্ত তিনি যখন মু`আয ইবনু জাবাল রাদি. `আনহুকে ইয়ামেনে পাঠিয়েছেন এবং তখন তাকে বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাবের এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। [5]

সালামাহ ইবনু সালামাহ ইবনু ওয়াকশ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী ছিলেন। তিনি বলেন, বনী আব্দুল আশহাল গোত্রে আমাদের একজন ইহুদী প্রতিবেশী ছিলেন। রাঃসাঃ  এর আবির্ভাবের কিছুদিন আগে তিনি একদিন ঘর থেকে আমাদের মাঝে বের হলেন এবং বনী আব্দুল আশহালের মসলিশে উপস্থিত হলেন। সালামাহ রাদি. আনহু বলেন, তখনকার উপস্থিত সকলের মাঝে আমি খুব অল্প বয়সী ছিলাম, আমার পড়নে একখানা চাদর ছিল, আমার পরিবারের আঙ্গিনায় শুয়ে ছিলাম। তখন তিনি মৃত্যুর পরে জীবিতকরণ, কিয়ামাহ, হিসাব নিকাশ, মিযান, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি সম্পর্কে ওয়াজ করছিল। তিনি বলিলেন, মুশরিকরা মনে করেন, মৃত্যুর পরে তাদের পুনরুত্থান হবেনা। তারা বলল, দুর্ভোগ, তারা মিথ্যা বলে। মৃত্যুর পরে মানুষ হয়তো জান্নাতের গৃহে যাবে অথবা তাদের আমলের ফলোস্বরূপ জাহান্নামে যাবে। তিনি বলিলেন, হ্যাঁ। আমি শপথ করে বলতে পারি, যে কারো জন্য দুনিয়ার চেয়েও বড় চুলা জাহান্নামে অপেক্ষা করতেছে, তাতে তারা প্রবেশ করবে, ইহা তাদেরকে রান্না করে ফেলবে, তবে আগামীতে তাদেরকে এ জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। তারা বলল, কিভাবে? এর নিদর্শন কি? তিনি বলিলেন, এই দেশ থেকে –তখন তিনি আঙ্গুল দিয়ে মক্কা ও ইয়ামেনের দিকে ইশারা করিলেন- একজন নাবীর আগমন ঘটবে। তারা বলল, কখন তাকে দেখা যাবে? তখন তিনি আমার দিকে তাকালেন, আর আমি তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলাম। তিনি বলিলেন, যদি তিনি আবির্ভাব হন তবে এখন তাহাঁর বয়স এ ছেলের মতই হবে। সালামাহ রাদি. আনহু বলেন, আল্লাহর শপথ, রাত দিন অতিবাহিত হতে লাগল একসময় আল্লাহ তাকে রাসূল হিসেবে প্রেরণ করিলেন। তিনি জীবিত, আমাদের আছেন। আমরা তাহাঁর প্রতি ঈমান আনলাম, আর সে ইয়াহুদি হিংসা ও বিদ্বেষবশত তাহাঁর কুফুরী করল। আমরা বলিলাম, হে অমুক! আপনার দুর্ভাগ্য, আপনি না সেদিন আমাদেরকে একথা বলিয়াছেন? তিনি বলিলেন, হ্যাঁ, অবশ্যই বলেছি। কিন্তু ইনি সে লোক নন। [6]

ফালতান ইবনু `আসিম রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাঃসাঃ  এর সাথে মসজিদে বসা ছিলাম। তখন তিনি এক ব্যক্তির দিকে তাকালেন, সে মসজিদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাঃসাঃ তাঁকে জিজ্ঞেস করিলেন, হে অমুক, তুমি কি সাক্ষ্য দিবে যে আমি আল্লাহর রাসূল? সে বলল, না। রাঃসাঃ বলিলেন, তুমি কি তাওরাত পড়? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, ইঞ্জিল পড়? উত্তরে বলিলেন, হ্যাঁ। বলিলেন, কুরআন পড়? বলল, আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার জীবন যদি আমি চাই তবে কুরআন পড়তে পারি। তিনি বলিলেন, তুমি তা পড়। তুমি কি আমাকে তাওরাত ও ইঞ্জিলে পাওনি? সে বলল, আপনার, আপনার উম্মত ও জন্মের কথা সবই পেয়েছি। আমরা আশা করেছিলাম আপনি আমাদের গোত্র থেকে আবির্ভূত হবেন। কিন্তু আপনি যখন আবির্ভাব হলেন ভেবেছিলাম আপনিই সে নাবী, কিন্তু দেখলাম আপনি সে নাবী নন। রাঃসাঃ বলিলেন, কেন তোমার এমন মনে হলো? সে বলল, আমরা পেয়েছি যে, তাহাঁর সাথে সত্তর হাজার উম্মত থাকবেন। তাদের কোনো হিসেব হবেনা ও তাদের কোনো আযাবও হবে না। অথচ আপনার সাথে গুঁটিকয়েক লোক দেখতে পাচ্ছি। তখন রাঃসাঃ বলিলেন, যে আল্লাহর কুদরতি হাতে আমার জীবন তাহাঁর শপথ, আমিই সে নাবী, এরাই আমার উম্মত, তারা সত্তর হাজারেরও অধিক, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি, এরা সত্তর হাজারেরও বেশি।[7]

আবূ মূসা রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাঃসাঃ আমাদেরকে জাফর ইবনু আবী তালিব রাদি. আনহুর সাথে নাজ্জাশীর দেশে হিজরত করতে আদেশ করিলেন। এ সংবাদ আমাদের গোত্রের লোকের কাছে পৌঁছে গেল। তারা `আমর ইবনু `আস ও `উমারাহ ইবনু ওয়ালিদকে অনেক উপঢৌকন সহকারে নাজ্জাশীর দরবারে পাঠালেন। আমরা নাজ্জাশীর দেশে আসলাম, তারা দু`জনও নাজ্জাশীর দেশে আসল। তারা নাজ্জাশীকে হাদিয়া পেশ করল, তিনি তা গ্রহণ করিলেন এবং তারা তাকে সিজদা করল। অতঃপর `আমর ইবনু `আস নাজ্জাশীকে বলল, আমাদের জাতির কিছু লোক নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে আপনার দেশে বসবাস করছে। তখন নাজ্জাশী বলল, তারা কি আমার দেশে আছে? তারা বলল হ্যাঁ। তখন নাজ্জাশী আমাদেরকে ডেকে পাঠালেন। জাফর রাদি. আনহু আমাদেরকে বলিলেন, তোমরা কেউ কোনো কথা বলবে না। আজকে আমি তোমাদের মুখপাত্র [বক্তা]। তিনি বলিলেন, আমরা নাজ্জাশীর কাছে আসলাম, তিনি তাহাঁর আসনে উপবিষ্ট ছিল। `আমর ইবনু `আস তাহাঁর ডান পাশে ও `উমারাহ তাহাঁর বাম পাশে ছিল। কিসসীস ও রুহবানরা খাদ্য সামনে দস্তরখানে বসা ছিল। `আমর ইবনু `আস ও `উমারাহ তাদেরকে বলল, তারা আপনাকে সিজদা করেনি। তখন যাজকেরা জোরপূর্বক সিজদা করানোর চেষ্টা করল। তারা বলল, তোমরা সম্রাটকে সিজদা কর। জাফর রাদি. আনহু বলিলেন, আমরা আল্লাহ ছাড়া কাউকে সিজদা করি না। আমরা যখন নাজ্জাশীর কাছে পৌঁছলাম তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমরা কেন আমাকে সিজদা করলে না? তিনি বলিলেন, আমরা একমাত্র আল্লাহকেই সিজদা করি। নাজ্জাশী তাদেরকে বলিলেন, তোমরা কি কর? তিনি [জাফর] বলিলেন, আল্লাহ আমাদের মাঝে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তিনি সে রাসূল যার সম্পর্কে ঈসা ইবনু মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন যে, “আমার পরে একজন রাসূল আসবেন যার নাম আহমদ”। [কোরআনের সুরা আস-সাফ: ৬] তিনি আমাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে ও তাহাঁর সাথে কোনো শরীক না করতে আদেশ দেন। তিনি নামায কায়েম, যাকাত আদায়, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, একথা শুনে নাজ্জাশী আশ্চর্য হলেন। `আমর ইবনু `আস যখন নাজ্জাশীর এ অবস্থা দেখল তখন সে বলল, আল্লাহ সম্রাটকে সংশোধন করুন। তারা ঈসা ইবনু মারইয়ামের বিরোধীতা করে। তখন নাজ্জাশী জাফর রাদি. আনহুকে জিজ্ঞেস করিলেন, তোমার সাথী ইবনু মারইয়ামের ব্যাপারে কি বলেন? তিনি বলিলেন, তিনি তাহাঁর সম্পর্কে আল্লাহ যা বলিয়াছেন তাই বলেন, তিনি রুহুল্লাহ, ও আল্লাহর কালিমা, সতীস্বাধ্বী রমনী মারইয়াম আলাইহিস সালাম যাকে কোনো মানুষ স্পর্শ করেনি তাহাঁর গর্ব থেকে তিনি ভুমিষ্ট হয়েছেন। একথা শুনে নাজ্জাশী মাটি থেকে একটি লাঠি নিয়ে বলতে লাগলেন, হে কিসসীস ও রুহবানের দল! তোমরা ইবনু মারইয়ামের ব্যাপারে যা যা বল এরা এর বেশি কিছু বাড়িয়ে বলেনি। তোমাদেরকে স্বাগতম ও তোমরা যার কাছ থেকে এসেছ তাকেও স্বাগতম। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর রাসূল। তাহাঁর সম্পর্কেই ঈসা ইবনু মারইয়াম আলাইহিস সালাম সুসংবাদ দিয়েছেন। আমি যদি এ রাষ্ট্রের বাদশাহের স্থানে না হতাম তবে আমি তাহাঁর কাছে যেতাম এবং তাহাঁর জুতো বহন করতাম। তোমরা আমার দেশে যতদিন খুশী বসবাস কর। তিনি আমাদের জন্য খাদ্য ও পোশাকের নির্দেশ দেন। `আমর ইবনু `আস ও `উমারাহর হাদিয়া ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, `আমর ইবনু `আস খাটো আর `উমারাহ ইবনু ওয়ালীদ সুদর্শন পুরুষ ছিল। তারা সমুদ্রে নাজ্জাশীর কাছে এলো। তিনি বলেন, তারা মদ্য পান করিলেন। `আমর ইবনু `আসের সাথে তার স্ত্রী ছিল। তারা যখন মদ পান করল তখন উমারাহ `আমরকে বলল, তোমার স্ত্রীকে আমাকে চুম্বন করতে বলো। `আমর তাকে বলল, তোমার লজ্জা করা উচিত। ফলে উমারাহ তাকে ধরে সাগরে ফেলে দেয়। `আমর অনেক কষ্ট করে নিজেকে সাগর থেকে উঠিয়ে নৌকায় তোলে। এতে `আমর তার উপর রাগান্বিত হয়। সে নাজ্জাশীকে বলল, আপনি যখন বের হয়েছেন `উমারাহ আপনার পিছনে আপনার পরিবারকে দেখেছে। ফলে নাজ্জাশী উমারাহকে ডাকলেন। তিনি তার মূত্রনালীতে ফুঁৎকার দিল, ফলে সে হিংস্র হয়ে গেল। [8]

আবদুল্লাহ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইহুদী আলিমদের থেকে জনৈক আলিম রাঃসাঃ  এর কাছে এসে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা [তাওরাতে দেখতে] পাই যে, আল্লাহ তা`আলা আকাশসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। যমীনকে এক আঙ্গুলের উপর, বৃক্ষসমূহকে এক আঙ্গুলের উপর, পানি এক আঙ্গুলের উপর, মাটি এক আঙ্গুলের উপর এবং অন্যান্য সৃষ্টি জগত এক আঙ্গুলের উপর স্থাপন করবেন। তারপর বলবেন, আমিই বাদশাহ্। রাঃসাঃ তা সমর্থনে হেসে ফেললেন; এমনকি তাহাঁর সামনের দাঁত প্রকাশ হয়ে পড়ে। এরপর রাঃসাঃ পাঠ করিলেন,

“আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাহাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাহাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে”। [কোরআনের সুরা আয্-যুমার: ৬৭] [9]

আবূ সাঈদ খুদরী রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, নাবী রাঃসাঃ বলিয়াছেন, কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন একটি রুটি হয়ে যাবে, আর আল্লাহ্ তা`আলা জান্নাতীদের মেহমানদারীর জন্য তাকে স্বহস্তে তুলে নেবেন, যেমন তোমাদের মাঝে কেউ সফরের সময় তার রুটি হাতে তুলে নেয়। এমন সময় একজন ইহুদী এলো এবং বলল, হে আবুল কাসিম! দয়াময় আপনাকে বরকত প্রদান করুন। কিয়ামতের দিন জান্নাতীদের অতিথেয়তা সম্পর্কে আপনাকে কি জানাব না? তিনি বলিলেন হ্যাঁ, লোকটি বলল, [সেই দিন] সমস্ত ভূ-মন্ডল একটি রুটি হয়ে যাবে। যেমন নাবী রাঃসাঃ বলিয়াছেন, [লোকটিও সেইরূপই বলল]। এবার নাবী রাঃসাঃ আমাদের দিকে তাকালেন এবং হাসলেন, এমনকি তাহাঁর চোয়ালের দাঁতসমূহ প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বলিলেন। তবে কি আমি তোমাদেরকে [সেই রুটির] তরকারী সম্পর্কে বলব না? তিনি বলিলেন, তাদের তরকারী হবে বালাম এবং নুন, সাহাবীগণ বলিলেন, সে আবার কি? তিনি বলিলেন, ষাঁড় এবং মাছ। এদের কলিজার গুরদা থেকে সত্তর হাজার লোক খেতে পারবে। [10]

কতিপয় জিনের ইসলাম গ্রহণ

আল্লাহ তা`আলা বলিয়াছেন,

“আর স্মরণ কর, যখন আমি জিনদের একটি দলকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। তারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার কাছে উপস্থিত হল, তখণ তারা বলল, `চুপ করে শোন। তারপর যখন পাঠ শেষ হল তখন তারা তাদের কওমের কাছে সতর্ককারী হিসেবে ফিরে গেল। তারা বলল, `হে আমাদের কওম, আমরা তো এক কিতাবের বাণী শুনেছি, যা মূসার পরে নাযিল করা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী কিতাবকে সত্যায়ন করে আর সত্য ও সরল পথের প্রতি হিদায়াত করে`। `হে আমাদের কওম, আল্লাহর দিকে আহবানকারীর প্রতি সাড়া দাও এবং তার প্রতি ঈমান আন, আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। আর তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবেন`। আর যে আল্লাহর দিকে আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেবে না সে যমীনে তাকে অপারগকারী নয়। আর আল্লাহ ছাড়া তার কোনো অভিভাবক নেই। এরাই স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে”। [কোরআনের সুরা আল্-আহকাফ: ২৯-৩২]

আল্লাহ তা`আলা আরো বলিয়াছেন,

“বল, `আমার প্রতি ওহী করা হয়েছে যে, নিশ্চয় জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে শুনেছে। অতঃপর বলেছে, `আমরা তো এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি, যা সত্যের দিকে হিদায়াত করে; অতঃপর আমরা তাতে ঈমান এনেছি। আর আমরা কখনো আমাদের রবের সাথে কাউকে শরীক করব না”। [কোরআনের সুরা আল্-জিন: ১-২]

আব্দুল্লাহ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলিয়াছেন,

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাহাঁর নিকটতর? [কোরআনের সুরা আল-ইসরা: ৫৭] একদা একদল জ্বিন মুসলিম হলো। তাদের পূজা করা হতো। কিন্তু ইবাদতকারী এ লোকগুলো তাদের ইবাদতই আকড়ে থাকলো। অথচ জ্বিনেরা ইসলাম গ্রহণ করেছেন। [11]

আব্দুল্লাহ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলিয়াছেন,

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [কোরআনের সুরা আল-ইসরা: ৫৭] একদল মানুষ কতিপয় জিনের পূজা করতো। অতঃপর জিনের দলটি ইসলাম গ্রহণ করলো। কিন্তু এ লোকগুলো তাদের ইবাদতের উপর আকড়ে থাকে। তখন নাযিল হয়েছে:

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [কোরআনের সুরা আল-ইসরা: ৫৭] [12]

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর নিন্মোক্ত বাণীর ব্যাখ্যায় বলিয়াছেন,

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে যে, তাদের মধ্যে কে তাহাঁর নিকটতর? [কোরআনের সুরা আল-ইসরা: ৫৭] এ আয়াতটি আরবের এক দল লোক সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। তারা কতিপয় জিনের পূজা করতো। অতঃপর জিনেরা তো মুসলিম হলো; কিন্তু তাদের ইবাদতকারী এ মানুষগুলো তা অনুধাবন করলো না। তখন নাযিল হলো,

“তারা যাদেরকে ডাকে, তারা নিজেরাই তো তাদের রবের কাছে নৈকট্যের মাধ্যমে অনুসন্ধান করে”। [কোরআনের সুরা আল-ইসরা: ৫৭] [13]

হিশাম ইবনু যুহরা [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] এর আযাদকৃত গোলাম আবু সাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] সাইফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত যে, তিনি [একদিন] আবু সাঈদ খূদরী রাদি. `আনহুর কাছে তাহাঁর ঘরে প্রবেশ করিলেন। তিনি বলেন, আমি তখন তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম এবং তাহাঁর নামায সমাপ্ত করা পর্যন্ত তাহাঁর অপেক্ষায় বসে রইলাম। তখন ঘরের কোণে রাখা খেজুর ডালের স্তূপের মাঝে কোনো নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। লক্ষ্য করে দেখতে পেলাম যে এটি একটি সাপ। আমি সেটিকে মেরে ফেলার জন্য লাফ দিতে উদ্যত হলাম। তখন তিনি [সালাতে থেকেই] ইশারা করিলেন যে, বসে থাক। নামায শেষে বাড়ির একটি ঘরের দিকে ইংগিত করে বলিলেন, তুমি কি এ ঘরটি দেখতে পাচ্ছ? আমি বলিলাম, হ্যাঁ। তিনি বলিলেন, সেখানে নতুন বিয়ে করা আমাদের এক তকণ থাকত। রাবী বলেন, এরপর আমরা রাঃসাঃ  এর সাথে খন্দক যুদ্ধে বেরিয়ে গেলাম। ঐ তরুণ দুপুরের দিকে রাসুলুল্লাহ [রাঃসাঃ এর কাছে অনুমতি চেয়ে নিত এবং তার পরিবারের কাছে ফিরে যেত। একদিন সে [যথারীতি] রাঃসাঃ  এর অনুমতি চাইলে তিনি তাকে বলিলেন, তোমার যুদ্ধাস্ত্র তোমার সাথে নিয়ে যাও। কেননা আমি তোমার উপরে বনূ কুরায়যা [ইহুদীদের আক্রমণ]-এর আশংকা করছি। লোকটি তার হাতিয়ার নিয়ে [বাড়িতে] ফিরে গেল। সেখানে সে তার [নব পরিনীতা] স্ত্রীকে দু`দরজার মাঝে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল এবং [তার প্রতি সন্দিহান হয়ে] বল্লম দিয়ে তাকে যখম করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে তা তার দিকে তাক করে ধরল। মর্যাদাবোধ তাকে পেয়ে বসেছিল। তখন সে [স্ত্রী] বলল, তোমার বল্লমটি নিজের কাছে থামিয়ে রাখ এবং ঘরে প্রবেশ কর। যাতে তুমি তা দেখতে পার, যা আমাকে বের করে দিয়েছে সে ঘরে ঢুকেই দেখতে পেল যে, এক বিরাটকায় সাপ বিছানার উপরে কুণ্ডলী পাকিয়ে রয়েছে। সে এর দিকে বল্লম তাক করে তার দ্বারা এটিকে গেথে ফেলল। তারপর বের হয়ে তা [বল্লমটি] বাড়ির মধ্যে গেঁড়ে রাখল। তখন সেটি নড়ে চড়ে তার দিকে ধাবিত হল এবং [মুহূর্তের মধ্যে] সাপ কিংবা তরুণ এ দু`জনের কে অধিক দ্রুত মৃত্যুবরণকারী ছিল, তা টের পাওয়া গেল না। রাবী আবু সাঈদ রাদি. `আনহু বলেন, আমরা রাঃসাঃ  এর নিকট গিয়ে ব্যাপারটি বর্ণনা করলাম এবং তাঁকে বলিলাম, আপনি আল্লাহর দরবারে দো`আ করুন, তিনি যেন আমাদের খাতিরে তাকে জীবিত করে দেন। তখন তিনি বলিলেন, তোমরা তোমাদের সাথীর জন্য ইসতিগফার কর। এরপর বলিলেন, মদীনায় কতক জিন রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে, তাই [সাপ ইত্যাদি রূপে] তাদের কোনো কিছু তোমরা দেখতে পেলে তাকে তিন দিন সতর্ক সংকেত দিবে; এরপরেও তোমাদের সামনে [তা] প্রকাশ পেলে তাকে মেরে ফেলবে। কেননা সে একটি [অবাধ্য] শয়তান, [অর্থাৎ সে মুসলিম নয়]। [14]

আবু সাইব [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আবু সাঈদ খুদরী রাদি. `আনহুর কাছে গেলাম। আমরা বসা ছিলাম, এমতাবস্থায় হঠাৎ তাহাঁর খাটের নীচে একটা নড়াচড়ার আওয়াজ শুনতে পেলাম। লক্ষ্য করে দেখি যে, সেটা একটা সাপ, কিসসাসহ হাদীসখানি পূর্বোল্লেখিত সায়ফী [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] থেকে মালিক [রহমাতুল্লাহি আলাইহি] বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বিবৃত করেছেন। তবে এতে বলিয়াছেন যে, রাঃসাঃ বলিয়াছেন, “এ সব বাড়ি-ঘরে আরও কতক বসবাসকারী রয়েছে। অতএব সে ধরনের কোনো কিছু তোমরা দেখতে পেলে তাদের প্রতি তিনবার সতর্ক সংকেত উচ্চারণ করবে। এতে যদি [তারা] চলে যায় তো উত্তম, অন্যথায় তাকে তোমরা মেরে ফেলবে। কেননা সে কাফির [অবাধ্য]। আর তিনি তাদের [মৃত ব্যক্তির অভিভাবকদের] বলিলেন, তোমরা চলে যাও এবং তোমাদের সাথীকে দাফন কর।[15]

আবু সাঈদ খুদরী রাদি. `আনহু হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাঃসাঃ বলিয়াছেন, মদীনায় জিনদের একটি দল রয়েছে, যারা ইসলাম কবুল করেছে। তাই যে ব্যক্তি এ সব বাড়ি-ঘরে বসবাসকারীদের [সাপ ইত্যাদির রূপধারী] কোন কিছু দেখতে পায়, সে যেন তাকে তিনবার সতর্ক সংকেত দেয়; এরপরও যদি তার সামনে তা প্রকাশ পায়, তবে সে যেন তাকে মেরে ফেলে, কেননা সে একটা [অবাধ্য] শয়তান।[16]


[1] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৩৮৬৬।

[2] তিরমিযি, হাদিস নম্বর ৩৬২০।

[3] সিরাতে ইবন হিশাম, ১/২১১, হাদীসের সনদটি হাসান।

[4] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৪৩৫৯।

[5] ফাতহুল বারী: ৮/৭৬।

[6] মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ১৫৮৪১, হাদীসটি হাসান।

[7] সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস নম্বর ৬৫৮০, হাদীসটি হাসান।

[8] মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবাহ, হাদিস নম্বর ৩৬৬৪০। হাদীসটি সহিহ এবং এর রিজাল শাইখাইনের রিজাল।

[9] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৪৮১১, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২৭৮৬।

[10] সহিহ বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৫২০, সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২৭৯২।

[11] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩০৩০।

[12] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩০৩০।

[13] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৩০৩০। হাদীসটি বুখারীতে সংক্ষেপে এসেছে, হাদিস নম্বর ৪৭১৫।

[14] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২২৩৬।

[15] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২২৩৬।

[16] সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ২২৩৬।

Leave a Reply